মেহেদী হাসান
আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনালে আরো দুটি মামলার কার্যক্রম শেষের অপেক্ষায় রয়েছে। মামলা দুটি হল সালাহউদ্দিন কাদের চৌধুরী এবং আব্দুল আলিম এর বিরুদ্ধে। এরা দু’জনই বাংলাদেশ জাতীয়তাবাদী দল বিএনপি’র নেতা।
বেশ লম্বা বিরতির পর গত জুলাই মাসে মাত্র একদিনের ব্যবধানে দুটি মামলার রায় ঘোষনা করা হয়েছে। ১৫ জুলাই জামায়াতের সাবেক আমির অধ্যাপক গোলাম আযম এবং ১৭ জুলাই জামায়াতের বর্তমান সেক্রেটারি জেনারেল আলী আহসান মো : মুজাহিদ এর বিরুদ্ধে রায় ঘোষনা করা হয়।
আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনাল-১ এ সালাহউদ্দিন কাদের চৌধুরীর বিরুদ্ধে দায়ের করা মামলার কার্যক্রম একেবারে শেষ পর্যায়ে রয়েছে। এ মামলায় বর্তমানে আসামী পক্ষের যুক্তি উপস্থাপন চলছে। সোমবারের মধ্যে আসামী পক্ষকে যুক্তি উপস্থাপন শেষ করতে বলা হয়েছে ট্রাইব্যুাল কর্তৃক। এরপর রাষ্ট্রপক্ষ আরো কিছু সময় পাবে আসামী পক্ষের জবাব প্রদানের জন্য। উভয়পক্ষের যুক্তি উপস্থাপন শেষ হলে নিয়ম অনুযায়ী মামলাটির রায় ঘোষনার তারিখ নির্ধারন করে দেয়া হবে। সালাহউদ্দিন কাদের চৌধুরী মামলায় রাষ্ট্রপক্ষে ৪১ জন এবং আসামী পক্ষে তিনজন সাক্ষী হাজির করা হয়।
অপর বিএনপি নেতা আব্দুল আলিমের মামলায় বর্তমানে তদন্ত কর্মকর্তার জেরা চলছে। গত ২৯ জুলাই তদন্ত কর্মকর্তার জেরা শুরু হয়েছে। তদন্ত কর্মকর্তার জেরা শেষ হলে আসামী পক্ষের সাক্ষী হাজির করা হবে। রাষ্ট্রপক্ষে মোট ৩৫ জন সাক্ষী হাজির করা হয় এ মামলায়। তবে আসামী পক্ষের সাক্ষীর সংখ্যা এখনো নির্ধারন করে দেয়া হয়নি। আসামী পক্ষের সাক্ষ্য গ্রহণ শেষে দুই পক্ষে যুক্তি উপস্থাপন শুরু হবে এবং এরপর রায়ের তারিখ ঘোষনা করা হবে।
আব্দুল আলিমের মামলাটি আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনাল-২ এ প্রথম মামলা। ২০১২ সালের ১১ জুন এ মামলার চার্জ গঠন আদেশ দেয় ট্রাইব্যুনাল-২। তবে এটি প্রথম মামলা হলেও এ ট্রাইব্যুনাল থেকে ইতোমধ্যে অন্য চারটি মামলার রায় ঘোষনা করা হয়েছে। এগুলো হল মাওলানা আবুল কালাম আযাদ, আব্দুল কাদের মোল্লা, মুহাম্মদ কামারুজ্জামান এবং আলী আহসান মো : মুজাহিদ। অপরদিকে ট্রাইব্যুনাল-১ থেকে দুটি মামলার রায় ঘোষনা করা হয়েছে যথা অধ্যাপক গোলাম আযম এবং মাওলান দেলাওয়ার হোসাইন সাঈদী। এছাড়া ট্রাইব্যুনাল -২ এ আরো দুটি মামলার কার্যক্রম দ্রুত এগিয়ে চলছে আসামীদের অনুপস্থিতিতে। এ দুটি হল চৌধুরী মাঈনুদ্দীন এবং আশরাফুজ্জামান খানের বিরুদ্ধে মামলা। এছাড়া ট্রাইব্যুনাল-১ সালাহউদ্দিন কাদের চৌধুরী বিরুদ্ধে মামলার পর অপর যে মামলার কার্যক্রম এগিয়ে রয়েছে সেটা হল মাওলানা মতিউর রহমান নিজামী মামলা। মাওলানা নিজামীর বিরুদ্ধে এ পর্যন্ত ১৫ জন সাক্ষীর সাক্ষ্য গ্রহণ করা হয়েছে। আগামী ১৯ আগস্ট ১৬ তম সাক্ষীর সাক্ষ্য গ্রহনের জন্য নির্ধারিত রয়েছে।
ট্রাইব্যুনাল-১ এ ব্রাক্ষ্মনবাড়িয়ার হাজী মোবারক হোসেন নামে অপর এক আসামীর বিরুদ্ধে রাষ্ট্রপক্ষের সাক্ষীদের সাক্ষ্য গ্রহণ ছলছে। এছাড়া জামায়াতের ভারপ্রাপ্ত সেক্রেটারি জেনারেল এটিএম আজহার, নায়েবে আমির মাওলানা আব্দুস সোবহানসহ জামায়াতের বেশ কয়েকজন নেতা এ ট্রাইব্যুনালের অধীনে বন্দী থাকলেও তাদের কারো বিচার কার্যক্রম এখনো শুরু হয়নি।
২০১০ সালের ২৫ মার্চ ট্রাইব্যুনাল গঠনের পর এ পর্যন্ত মোট ছয়টি মামলার রায় ঘোষনা করা হয়েছে। গত ২১ জানুয়ারি ট্রাইব্যুনাল -২ সর্বপ্রথম মাওলানা আবুল কালাম আযাদ এর বিরুদ্ধে রায় ঘোষনা করে। আসামীর অনুপস্থিতিতে এ মামলার বিচার কার্যক্রম সম্পন্ন হয়েছে। মাওলানা আবুল কালাম আযাদ এর মামলার রায় ঘোষনার পর গত ৫ ফেব্রুয়ারি একই ট্রাইব্যুনাল আব্দুল কাদের মোল্লার মামলার রায় ঘোষনা করে। এরপর ১৮ ফেব্রুয়ারি ট্রাইব্যুনাল -১ মাওলানা সাঈদীর বিরুদ্ধে রায় ঘোষনা করে। ট্রাইব্যুনাল-২ মুহাম্মদ কামারুজ্জামানের বিরুদ্ধে ৯ মে রায় ঘোষনা করে। এরপর বেশ লম্বা বিরতির পর অধ্যাপক গোলাম আযমের বিরুদ্ধে রায় ঘোষনা করা হয় ১৫ জুলাই।
ট্রাইব্যুনাল থেকে এ পর্যন্ত যে ছয়জনের বিরুদ্ধে রায় ঘোষনা করা হয়েছে তাদের মধ্যে পাঁচজনই গ্রেফতার হওয়ার পূর্ব পর্যন্ত জামায়াতের নেতৃস্থানীয় পদে বহাল ছিলেন। যুদ্ধাপরাধের অভিযোগে এখন পর্যন্ত দু’জন বিএনপি নেতাকে ট্রাইব্যুনালের অধীনে গ্রেফতার করা হয়েছে। এর মধ্যে সালাহউদ্দিন কাদের চৌধুরীর মামলার কার্যক্রম যেহেতু একেবারে শেষের দিকে রয়েছে তাই ট্রাইব্যুনাল কর্তৃক এর পরের রায়টি হতে পারে বিএনপি’র কোন নেতার বিরুদ্ধে।
কোন মন্তব্য নেই:
একটি মন্তব্য পোস্ট করুন