মেহেদী হাসান ২৯/৮/২০১৩
জামায়াতে ইসলামীর আমির মাওলানা মতিউর রহমান নিজামীর বিরুদ্ধে আজ ১৮ তম সাক্ষীর জবানবন্দী গ্রহণ করা হয়েছে আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনাল-১ এ। সাক্ষী তার জবানবন্দীতে বলেন, ১৯৭১ সালে তিনি রাজনারায়নপুর বালিকা বিদ্যালয়ে প্রধান শিক্ষক ছিলেন। আর জেরায় তিনি জানান, ১৯৭১ সালে রাজনারায়নপুরে একটি অবৈতনিক প্রাথমিক বিদ্যালয় ছিল। কোন সরকারি বালিকা বিদ্যালয় ছিলনা।
মাওলানা নিজামীর পক্ষে আইনজীবী মিজানুল ইসলাম তাকে প্রশ্ন করেন রাজনারায়নপুর সরকারি বালিকা বিদ্যালয়টি রাজনারায়নপুর সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় থেকে কতদূর এবং কোন দিকে।
জবাবে সাক্ষী বলেন, ১৯৭১ সালে রাজনারায়নপুর সরকারী বালিকা বিদ্যালয় নামে কোন বিদ্যালয় ছিল না। ১৯৭১ সালে রাজনারায়নপুরে একটি মাত্র অবতৈনিক প্রাথমিক বিদ্যালয় ছিল।
জবানবন্দী শেষে সাক্ষীকে একটি প্রশ্নের মাধ্যমে জেরা করা হয়। এরপর জেরা আগামী রোববার পর্যন্ত মুলতবি করা হয়।
জবানবন্দী :
আমার নাম মোঃ জহরুল হক। আমার বয়স আনুমানিক ৬৭/৬৮ বৎসর। আমার ঠিকানা গ্রাম- হাড়িয়া, থানা- সাথিয়া, জেলা- পাবনা।
আমি একজন বীর মুক্তিযোদ্ধা। বাংলাদেশ মুক্তিযোদ্ধা সংসদ সাথিয়া থানা কমান্ড-এর ভারপ্রাপ্ত কমান্ডার। আমি ১৯৭১ সালে বেড়া থানাধীন রাজ নারায়নপুর বালিকা বিদ্যালয়ে প্রধান শিক্ষক ছিলাম। ১৯৭১ সালে মহান মুক্তিযুদ্ধ শুরু হওয়ার পূর্বে ঐতিহাসিক ৭ই মার্চের বঙ্গবন্ধুর ঐতিহাসিক ভাষণ শুনার পর সাথিয়া থানায় আমি আমার বন্ধু বান্ধবদের নিয়ে সংগ্রাম পরিষদ গড়ে তুলি। ১৯৭১ সালের ২৫শে মার্চের মধ্যরাতের পর বঙ্গবন্ধু কর্তৃক বাংলাদেশের স্বাধীনতা আনুষ্ঠানিকভাবে ঘোষনা দেওয়ার এবং পাক হানাদার বাহিনী কর্তৃক বাঙ্গালীদের উপর নিধনযজ্ঞ শুরু করার পর ১৩-৫-১৯৭১ সালে আমার কয়েকজন বন্ধু তাদের মধ্যে মোতাহার হোসেন, রহিজ উদ্দিন, আলতাব হোসেন, আব্দুল খালেক আরো কয়েকজনকে সঙ্গে নিয়ে সাথিয়া থানাধীন বাউশগাড়ি গ্রামে শহীদ আব্দুল জব্বার সাহেবের বাড়িতে সংগ্রাম পরিষদের মাধ্যমে মুক্তিযুদ্ধের জন্য প্রস্তুতি গ্রহন করি। এই প্রস্তুতি গ্রহন কালে আমি রূপসী প্রাইমারী স্কুলের শিক্ষক আইনুল হকের নিকট জানতে পারি যে, ১০-৫-১৯৭১ তারিখে তৎকালীন ইসলামী ছাত্র সংঘের সভাপতি মাওলানা মতিউর রহমান নিজামী সহ ১০/১২ জন দালাল নিয়ে রুপসী প্রাথমিক বিদ্যালয়ে আসেন এবং ঐ বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষকসহ অন্যান্য লোকজন নিয়ে আলোচনা করেন যে, অতি শীঘ্র পাক হানাদার বাহিনী পিস কমিটি গঠন করার জন্য আসবে এবং তিনি আরো আলোচনা করেন যে, রাজাকার আলবদর বাহিনীও গঠন করতে হবে। তিনি আরো নির্দেশ দেন যে, পাক হানাদার বাহিনীকে সবাই মিলে সার্বিকভাবে সহযোগিতা করবেন। অতঃপর ১৪-৫-১৯৭১ সালে ফজরের নামাজের পর অতর্কিত গোলাগুলির শব্দে আমার ঘুম ভেঙ্গে যায়। আমি তখন রাস্তার দিকে অগ্রসর হই। রাস্তার পাশে এসে একটি ঝোপের আড়াল থেকে দেখতে পাই মতিউর রহমান নিজামী সাহেব, আসাদ, কাদের, ছাত্তারসহ কিছু দালাল এবং পাক বাহিনীর একটি দল নির্বিচারে গুলি চালিয়ে রাস্তা দিয়ে দক্ষিন দিকে অগ্রসর হচ্ছে। এ অবস্থা দেখে আমি অতি দ্রুত আমার সঙ্গীদের নিয়ে গ্রামের পূর্ব পাশের বিলের দিকে পালিয়ে যাই। আনুমানিক ৬/৭ ঘন্টা পর আবার আমরা রূপসী বাউশগাড়িতে ফিরে আসি। সেখানে এসে দেখতে পাই যে রাস্তার পাশে হিন্দু মুসলমান আনুমানিক চারশত নারী পুরুষের লাশ পড়ে আছে এবং উপস্থিত জনতার কাছে শুনতে পাই যে মতিউর রহমান নিজামী সাহেবের উপস্থিতিতে এই সকল নিরীহ নিরস্ত্র মানুষগুলোকে একত্রে জড়ো করে নিজামী সাহেবের নির্দেশে পাক হানাদার বাহিনী বৃষ্টির মত গুলি করে হত্যা করে। এই অবস্থা দেখে বিভিন্ন লাশের নিকট গিয়ে দেখি শহীদ আব্দুর জব্বার, শহীদ আজগর আলী, শহীদ মুকসেদ আলী, শহীদ ইদ্রিস আলী, শহীদ একেন আলী, শহীদ মলম প্রামানিক, তার ভাই কলম প্রামানিক, শহীদ ওয়াজ উদ্দিন, শহীদ শ্রী বলরাম দাস, শহীদ উপেন্দ্র নাথ, শহীদ যিতেন্দ্র নাথসহ প্রায় ৫০/৬০ জনের লাশ সনাক্ত করি।
এরপর দেশে থাকা নিরাপদ নয় মনে করে আমি, আলতাফ, খালেদ, রহিজ, মোতাহার, মান্নান মকবুলসহ আরো কয়েকজনকে নিয়ে মুক্তিযুদ্ধে অংশ গ্রহন করার সিদ্ধান্ত গ্রহন করি। আনুমানিক জুন মাসের মাঝামাঝি আমি এদেরকে সঙ্গে নিয়ে বেড়া থেকে ভারতের বালুরঘাট এলাকায় মালঞ্ছি ইয়্যূথ রিসেপশন ক্যাম্পে যাই এবং ভর্তি হই। তারপর সেখান থেকে আমাদেরকে উচ্চতর প্রশিক্ষনের জন্য দেরাদুনে পাঠানো হয়। সেখানে ৪১ দিন প্রশিক্ষণ নেওয়ার পর ৩৩ জনের একটি দল নিয়ে অস্ত্র শস্ত্রসহ ভারতের মানকার চর হয়ে রংপুর বর্ডার দিয়ে বাংলাদেশে প্রবেশ করি। বাংলাদেশে প্রবেশ করে সিরাজগঞ্জ জেলার বেলকুচি থানার মালীপাড়া রাজাকার, আলবদর ও আর্মি ক্যাম্প আক্রমন করি। এখানে যুদ্ধে দুইজন পাক হানাদার বাহিনীসহ পাঁচ জন রাজাকার নিহত হয়, অন্যরা গোলাবারুদ ফেলে প্রাণ ভয়ে পালিয়ে যায়।
১৯৭১ সালের মে মাসের আরেকটি ঘটনা, সম্ভবত ১১/১২ মে তৎকালীন ইসলামী ছাত্র সংঘের সভাপতি জনাব মতিউর রহমান নিজামী সাহেব ও ইছাক মাওলানা আনুমানিক ১০০/১৫০ রাজাকার আলবদর নিয়ে সাথিয়া পাইলট উচ্চ বিদ্যালয়ে রাজাকার ক্যাম্প উদ্বোধন করেন। সেখানে উদ্বোধনী ভাষণে নিজামী সাহেব বলেন যে, মুক্তিযোদ্ধা ও মুক্তিযুদ্ধের স্বপক্ষের লোকদের হত্যা করতে হবে এবং স্থানীয় যুবকদের রাজাকার, আলবদরে ভর্তি করাতে হবে। এই ঘটনা সাথিয়া পাইলট উচ্চ বিদ্যালয়ের শিক্ষক মোঃ তোফাজ্জল হোসেন ও আরো অনেকের নিকট থেকে শুনতে পাই।
আমি আরো শুনেছি যে পাবনায় অবস্থানরত পাক বাহিনীর সহিত মাওলানা নিজাম উদ্দিন সাহেবের ঘনিষ্ট সম্পর্ক ছিল, পরে বলে মাওলানা নিজামী (ডিফেন্সের জোরালো আপত্তি সহকারে)। মতিউর রহমান নিজামী সাহেবের পরিকল্পনায়, পরামর্শে প্রত্যক্ষ মদদে পাক হানাদার বাহিনী, রাজাকার ও আলবদররা বেড়া ও সাথিয়া থানায় বহু নিরস্ত্র ও নিরিহ লোকজনকে হত্যা করে। মুক্তিযোদ্ধা ও মুক্তিযুদ্ধের স্বপক্ষের মানুষের বাড়ি-ঘর জ্বালিয়ে পুড়িয়ে দেয় ও লুন্ঠন করে এবং নারী ধর্ষণের কথা শুনা যায়। এই তথ্যগুলো ধৃত রাজাকার, আলবদরদের জিজ্ঞাসাবাদের ফলে জানা যায়। আমি অত্র মামলার তদন্তকারী কর্মকর্তার নিকট জবানবন্দি প্রদান করেছি ১৭-৫-২০১৩ ইং তারিখে। অদ্য ট্রাইব্যুনালে অত্র মামলার আসামী মতিউর রহমান নিজামী সাহেব কাঠগড়ায় উপস্থিত আছেন (সনাক্তকৃত)।
জেরা-
১৯৭১ সালে রাজনারায়নপুর সরকারী বালিকা বিদ্যালয় নামে কোন বিদ্যালয় ছিল না, তবে রাজনারায়নপুরে অবৈতনিক প্রাথমিক বিদ্যালয় নামে একটি বিদ্যালয় ছিল। (চলবে)
জামায়াতে ইসলামীর আমির মাওলানা মতিউর রহমান নিজামীর বিরুদ্ধে আজ ১৮ তম সাক্ষীর জবানবন্দী গ্রহণ করা হয়েছে আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনাল-১ এ। সাক্ষী তার জবানবন্দীতে বলেন, ১৯৭১ সালে তিনি রাজনারায়নপুর বালিকা বিদ্যালয়ে প্রধান শিক্ষক ছিলেন। আর জেরায় তিনি জানান, ১৯৭১ সালে রাজনারায়নপুরে একটি অবৈতনিক প্রাথমিক বিদ্যালয় ছিল। কোন সরকারি বালিকা বিদ্যালয় ছিলনা।
মাওলানা নিজামীর পক্ষে আইনজীবী মিজানুল ইসলাম তাকে প্রশ্ন করেন রাজনারায়নপুর সরকারি বালিকা বিদ্যালয়টি রাজনারায়নপুর সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় থেকে কতদূর এবং কোন দিকে।
জবাবে সাক্ষী বলেন, ১৯৭১ সালে রাজনারায়নপুর সরকারী বালিকা বিদ্যালয় নামে কোন বিদ্যালয় ছিল না। ১৯৭১ সালে রাজনারায়নপুরে একটি মাত্র অবতৈনিক প্রাথমিক বিদ্যালয় ছিল।
জবানবন্দী শেষে সাক্ষীকে একটি প্রশ্নের মাধ্যমে জেরা করা হয়। এরপর জেরা আগামী রোববার পর্যন্ত মুলতবি করা হয়।
জবানবন্দী :
আমার নাম মোঃ জহরুল হক। আমার বয়স আনুমানিক ৬৭/৬৮ বৎসর। আমার ঠিকানা গ্রাম- হাড়িয়া, থানা- সাথিয়া, জেলা- পাবনা।
আমি একজন বীর মুক্তিযোদ্ধা। বাংলাদেশ মুক্তিযোদ্ধা সংসদ সাথিয়া থানা কমান্ড-এর ভারপ্রাপ্ত কমান্ডার। আমি ১৯৭১ সালে বেড়া থানাধীন রাজ নারায়নপুর বালিকা বিদ্যালয়ে প্রধান শিক্ষক ছিলাম। ১৯৭১ সালে মহান মুক্তিযুদ্ধ শুরু হওয়ার পূর্বে ঐতিহাসিক ৭ই মার্চের বঙ্গবন্ধুর ঐতিহাসিক ভাষণ শুনার পর সাথিয়া থানায় আমি আমার বন্ধু বান্ধবদের নিয়ে সংগ্রাম পরিষদ গড়ে তুলি। ১৯৭১ সালের ২৫শে মার্চের মধ্যরাতের পর বঙ্গবন্ধু কর্তৃক বাংলাদেশের স্বাধীনতা আনুষ্ঠানিকভাবে ঘোষনা দেওয়ার এবং পাক হানাদার বাহিনী কর্তৃক বাঙ্গালীদের উপর নিধনযজ্ঞ শুরু করার পর ১৩-৫-১৯৭১ সালে আমার কয়েকজন বন্ধু তাদের মধ্যে মোতাহার হোসেন, রহিজ উদ্দিন, আলতাব হোসেন, আব্দুল খালেক আরো কয়েকজনকে সঙ্গে নিয়ে সাথিয়া থানাধীন বাউশগাড়ি গ্রামে শহীদ আব্দুল জব্বার সাহেবের বাড়িতে সংগ্রাম পরিষদের মাধ্যমে মুক্তিযুদ্ধের জন্য প্রস্তুতি গ্রহন করি। এই প্রস্তুতি গ্রহন কালে আমি রূপসী প্রাইমারী স্কুলের শিক্ষক আইনুল হকের নিকট জানতে পারি যে, ১০-৫-১৯৭১ তারিখে তৎকালীন ইসলামী ছাত্র সংঘের সভাপতি মাওলানা মতিউর রহমান নিজামী সহ ১০/১২ জন দালাল নিয়ে রুপসী প্রাথমিক বিদ্যালয়ে আসেন এবং ঐ বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষকসহ অন্যান্য লোকজন নিয়ে আলোচনা করেন যে, অতি শীঘ্র পাক হানাদার বাহিনী পিস কমিটি গঠন করার জন্য আসবে এবং তিনি আরো আলোচনা করেন যে, রাজাকার আলবদর বাহিনীও গঠন করতে হবে। তিনি আরো নির্দেশ দেন যে, পাক হানাদার বাহিনীকে সবাই মিলে সার্বিকভাবে সহযোগিতা করবেন। অতঃপর ১৪-৫-১৯৭১ সালে ফজরের নামাজের পর অতর্কিত গোলাগুলির শব্দে আমার ঘুম ভেঙ্গে যায়। আমি তখন রাস্তার দিকে অগ্রসর হই। রাস্তার পাশে এসে একটি ঝোপের আড়াল থেকে দেখতে পাই মতিউর রহমান নিজামী সাহেব, আসাদ, কাদের, ছাত্তারসহ কিছু দালাল এবং পাক বাহিনীর একটি দল নির্বিচারে গুলি চালিয়ে রাস্তা দিয়ে দক্ষিন দিকে অগ্রসর হচ্ছে। এ অবস্থা দেখে আমি অতি দ্রুত আমার সঙ্গীদের নিয়ে গ্রামের পূর্ব পাশের বিলের দিকে পালিয়ে যাই। আনুমানিক ৬/৭ ঘন্টা পর আবার আমরা রূপসী বাউশগাড়িতে ফিরে আসি। সেখানে এসে দেখতে পাই যে রাস্তার পাশে হিন্দু মুসলমান আনুমানিক চারশত নারী পুরুষের লাশ পড়ে আছে এবং উপস্থিত জনতার কাছে শুনতে পাই যে মতিউর রহমান নিজামী সাহেবের উপস্থিতিতে এই সকল নিরীহ নিরস্ত্র মানুষগুলোকে একত্রে জড়ো করে নিজামী সাহেবের নির্দেশে পাক হানাদার বাহিনী বৃষ্টির মত গুলি করে হত্যা করে। এই অবস্থা দেখে বিভিন্ন লাশের নিকট গিয়ে দেখি শহীদ আব্দুর জব্বার, শহীদ আজগর আলী, শহীদ মুকসেদ আলী, শহীদ ইদ্রিস আলী, শহীদ একেন আলী, শহীদ মলম প্রামানিক, তার ভাই কলম প্রামানিক, শহীদ ওয়াজ উদ্দিন, শহীদ শ্রী বলরাম দাস, শহীদ উপেন্দ্র নাথ, শহীদ যিতেন্দ্র নাথসহ প্রায় ৫০/৬০ জনের লাশ সনাক্ত করি।
এরপর দেশে থাকা নিরাপদ নয় মনে করে আমি, আলতাফ, খালেদ, রহিজ, মোতাহার, মান্নান মকবুলসহ আরো কয়েকজনকে নিয়ে মুক্তিযুদ্ধে অংশ গ্রহন করার সিদ্ধান্ত গ্রহন করি। আনুমানিক জুন মাসের মাঝামাঝি আমি এদেরকে সঙ্গে নিয়ে বেড়া থেকে ভারতের বালুরঘাট এলাকায় মালঞ্ছি ইয়্যূথ রিসেপশন ক্যাম্পে যাই এবং ভর্তি হই। তারপর সেখান থেকে আমাদেরকে উচ্চতর প্রশিক্ষনের জন্য দেরাদুনে পাঠানো হয়। সেখানে ৪১ দিন প্রশিক্ষণ নেওয়ার পর ৩৩ জনের একটি দল নিয়ে অস্ত্র শস্ত্রসহ ভারতের মানকার চর হয়ে রংপুর বর্ডার দিয়ে বাংলাদেশে প্রবেশ করি। বাংলাদেশে প্রবেশ করে সিরাজগঞ্জ জেলার বেলকুচি থানার মালীপাড়া রাজাকার, আলবদর ও আর্মি ক্যাম্প আক্রমন করি। এখানে যুদ্ধে দুইজন পাক হানাদার বাহিনীসহ পাঁচ জন রাজাকার নিহত হয়, অন্যরা গোলাবারুদ ফেলে প্রাণ ভয়ে পালিয়ে যায়।
১৯৭১ সালের মে মাসের আরেকটি ঘটনা, সম্ভবত ১১/১২ মে তৎকালীন ইসলামী ছাত্র সংঘের সভাপতি জনাব মতিউর রহমান নিজামী সাহেব ও ইছাক মাওলানা আনুমানিক ১০০/১৫০ রাজাকার আলবদর নিয়ে সাথিয়া পাইলট উচ্চ বিদ্যালয়ে রাজাকার ক্যাম্প উদ্বোধন করেন। সেখানে উদ্বোধনী ভাষণে নিজামী সাহেব বলেন যে, মুক্তিযোদ্ধা ও মুক্তিযুদ্ধের স্বপক্ষের লোকদের হত্যা করতে হবে এবং স্থানীয় যুবকদের রাজাকার, আলবদরে ভর্তি করাতে হবে। এই ঘটনা সাথিয়া পাইলট উচ্চ বিদ্যালয়ের শিক্ষক মোঃ তোফাজ্জল হোসেন ও আরো অনেকের নিকট থেকে শুনতে পাই।
আমি আরো শুনেছি যে পাবনায় অবস্থানরত পাক বাহিনীর সহিত মাওলানা নিজাম উদ্দিন সাহেবের ঘনিষ্ট সম্পর্ক ছিল, পরে বলে মাওলানা নিজামী (ডিফেন্সের জোরালো আপত্তি সহকারে)। মতিউর রহমান নিজামী সাহেবের পরিকল্পনায়, পরামর্শে প্রত্যক্ষ মদদে পাক হানাদার বাহিনী, রাজাকার ও আলবদররা বেড়া ও সাথিয়া থানায় বহু নিরস্ত্র ও নিরিহ লোকজনকে হত্যা করে। মুক্তিযোদ্ধা ও মুক্তিযুদ্ধের স্বপক্ষের মানুষের বাড়ি-ঘর জ্বালিয়ে পুড়িয়ে দেয় ও লুন্ঠন করে এবং নারী ধর্ষণের কথা শুনা যায়। এই তথ্যগুলো ধৃত রাজাকার, আলবদরদের জিজ্ঞাসাবাদের ফলে জানা যায়। আমি অত্র মামলার তদন্তকারী কর্মকর্তার নিকট জবানবন্দি প্রদান করেছি ১৭-৫-২০১৩ ইং তারিখে। অদ্য ট্রাইব্যুনালে অত্র মামলার আসামী মতিউর রহমান নিজামী সাহেব কাঠগড়ায় উপস্থিত আছেন (সনাক্তকৃত)।
জেরা-
১৯৭১ সালে রাজনারায়নপুর সরকারী বালিকা বিদ্যালয় নামে কোন বিদ্যালয় ছিল না, তবে রাজনারায়নপুরে অবৈতনিক প্রাথমিক বিদ্যালয় নামে একটি বিদ্যালয় ছিল। (চলবে)
কোন মন্তব্য নেই:
একটি মন্তব্য পোস্ট করুন