১২/৭/০১২
মাওলানা দেলাওয়ার হোসাইন সাঈদীর মামলায় ১৫ সাক্ষী বিষয়ে দাখিল করা রিভিউ আবেদন খারিজ করে দিয়েছেন ট্রাইব্যুনাল । রিভিউ আবেদনে কোন মেরিট নেই বলে আদেশে উল্লেখ করা হয়েছে। সেফ হাউজের ডকুমেমেন্টর যে ফটোকপি আসামী পক্ষ থেকে দাখিল করা হয়েছে তাও প্রমানিত নয় বলে উল্লেখ করেছেন ট্রাইব্যুনাল। দাখিলকৃত ডকুমেন্টের সত্যতা আসামী পক্ষকেই প্রমান করতে হবে বলে মন্তব্য করেছেন ট্রাইব্যুনাল চেয়ারম্যান।
আদেশ বিষয়ে ডিফেন্স টিমের প্রধান আইনজীবী ব্যারিস্টার আব্দুর রাজ্জাক বলেছেন, এবার কাদম্বিনীকে মরিয়া প্রমান করতে হবে যে, সে মরে নাই।
গত ১২ জুন ১৫ সাক্ষী বিষয়ে শুনানী শেষে আদেশ মুলতবি রাখা হয়। এক মাসের মাথায় আজ এ বিষয়ে আদশে পাশ করা হয়েছে আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনাল-১ এ।
আদেশ পাঠ করে শোনানোর পর ট্রাইব্যুনাল চেয়ারম্যান বিচারপতি নিজামুল হক ব্যারিস্টার আব্দুর রাজ্জাকের প্রশ্নের জবাবে বলেন, আপনারা যে ডকুমেন্ট দাখিল করেছেন তার সত্যতা আপনাদেরই প্রমান করতে হবে।
ব্যারিস্টার রাজ্জাক বলেন, আমরা সমস্ত ডকুমেন্ট জমা দিয়েছি। এটা যে সত্য সে বিষয়ে আমরা যুক্তি উপস্থাপন করেছি। এখন আর কেমন করে আমরা প্রমান করব ?
জবাবে বিচারপতি নিজামুল হক বলেন, আপনি সিনিয়র আইনজীবী। আপনি জানেন কিভাবে প্রমান করতে হবে। প্রমান করতে পারলে এটা নি:সন্দেহে গ্রহণ করা হবে। তবে ডকুমেন্ট এখনো প্রমানিত হয়নি। আপনার কথা অনুযায়ী ৫০ ভাগ তো প্রমানিত। বাকীটুকু করে ফেলেন। তাহলে বেনিফিট পাবেন।
একজন বিচারপতি অনুপস্থিত ছিলেন:
আদেশ পাশের সময় ট্রাইব্যুনালে দুজন সদস্য উপস্থিত ছিলেন। এরা হলেন চেয়ারম্যান বিচারপতি নিজামুল হক এবং সদস্য বিচারপতি আনোয়ারুল হক। অপর সদস্য বিচারপতি একেএম জহির আহমেদ উপস্থিতি ছিলেননা।
আদেশ পাশের পর ব্যারিস্টার আব্দুর রাজ্জাক ট্রাইব্যুনালকে বলেন, আমরা ধরে নিতে পারি এটা দুই সদস্যের আদেশ।
জবাবে বিচারপতি নিজামুল হক বলেন, না, এটা ট্রাইব্যুনালের আদেশ। এটা সত্য যে, একজন নেই। কিন্তু সর্বসম্মত নয় তা বলা যাবেনা। কারন ভিন্ন মত তো আসেনি।
ব্যারিস্টার রাজ্জাক বলেন, আপনারা তিনজন আবেদনের শুনানীতে অংশ নিলেন। কাজেই তিনজন মিলেই আদেশ দিলে ভাল হতনা? একজন যেহেতু নেই তাই আরেকটু অপেক্ষা করতে পারতেন।
এ আদেশে আমরা মারাত্মকভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছি।
ব্যারিস্টার রাজ্জাকের প্রতিকৃয়া:
ট্রাইব্যুনালের আদেশ শেষে ব্যারিস্টার আব্দুর রাজ্জাক সাংবাদিকদের বলেন, এখন কাদিম্বনীকে মরিয়া প্রমান করতে হবে যে, সে মরে নাই। আমরা যে ডকুমেন্ট জমা দিয়েছি তা প্রমানের সুযোগ থেকে আমাদের বঞ্চিত করা হয়েছে। প্রমানের সুযোগ তো দেয়া হয়নি। আমরা বলেছি ডকুমেন্টে যাদের নাম আছে তাদের সবাইকে কোর্টের ডকে এনে জিজ্ঞাসাবাদ করা হোক। হাতের লেখা পরীক্ষা করানো হোক বিশেষজ্ঞ ডেকে। তাহলে প্রমান হবে ডকুমেন্টের প্রতিটি শব্দ, প্রতিটি তথ্য সত্য। আমরা সেটি প্রমান করতে পারব ।
ব্যারিস্টার রাজ্জাক বলেন, ট্রাইব্যুনালের প্রতি সম্মান রেখেই বলছি এ আদেশ সঠিক হয়নি। রোমান সম্রাটের আদেশের মত হয়েছে এ আদেশ। কারণ আমাদের আর আপীল বিভাগে যাওয়ার সুযোগ নেই এর বিরুদ্ধে। তাই আমরা কোর্টের আদেশ মানতে বাধ্য।
ট্রাইব্যুনাল আবেদন খারিজ বিষয়ে আদেশে আরো উল্লেখ করা হয়েছে, আসামী পক্ষ সেফ হাউজের যে ডকুমেন্ট দাখিল করছেন তার সত্যতা প্রমান বা অপ্রমানের দিকে আমরা যাচ্ছিনা। বিচার চলাকালে এটি আসামী পক্ষ চাইলে প্রমানের সুযোগ পাবেন। তখন আমরা বিবেচনা করব বিষয়টি।
আদেশে বলা হয়েছে ১৫ সাক্ষীর জবানবন্দী গ্রহণ বিষয়ে আমরা উল্লেখ করেছি যেহেতু জেরা ছাড়া এটি আমরা গ্রহণ করেছি তাই এর মূল্য কম এবং সেভাবেই বিবেচনা করা হবে। ’এছাড়া উষারানী মালাকার, সুখরঞ্জন বালী বিষয়ে জমাকৃত দিগন্ত এবং ইসলামিক টিভির রিপোর্ট বিষয়ে আদেশে বলা হয়েছে মূল যে ডকুমেন্ট জমা দেয়া হয়েছে তার সাথে এর বৈষাদৃশ্য রয়েছে।
ট্রাইব্যুনালের আদেশে বারবার দৈনিক নয়া দিগন্তে প্রকাশিত ২৭ মার্চের রিপোর্ট এবং দৈনিক আমার দেশে প্রকাশিত ২৪ এপ্রিলের রিপোর্ট উল্লেখ করা হয়েছে। সাক্ষীদের সাথে কথোপকথন বিষয়ে নয়া দিগন্তের রিপোর্ট এবং সেফ হাউজের ডায়েরি নিয়ে দৈনিক আমার দেশের রিপোর্ট বিষয়ে বলা হয়েছে এ রিপোর্ট নি:সন্দেহে বিচার প্রকৃয়াকে বাঁধা গ্রস্ত করার শামিল।
রাষ্ট্রপক্ষের আইনজীবীদের প্রতিকৃয়া: রাষ্ট্রপক্ষের আইনজীবী সৈয়দ হায়দার আলী বলেন, সেফ হাউজের নামে যে ডকুমেন্ট আসামী পক্ষ জমা দিয়েছেন তা জাল। এটি তারা নিজেরা তৈরি করে জমা দিয়েছেন এই রিভিউ আবেদন করার উদ্দেশে।
এ বিষয়ে আসামী পক্ষের আইনজীবী তাজুল ইসলাম বলেন, কোর্ট সেফ হাউজের ডকুমেন্টকে জাল বা জাল নয় সে বিষয়ে কিছুই বলেননি। কোর্ট বলেছে এটির সত্যাসত্য প্রমানের দিকে তারা যাচ্ছেননা। তাজুল ইসলাম বলেন, প্রসিকিউশনের পর্বত প্রমান জাল জালিয়াতি এবং প্রতারনার বিরুদ্ধে আমরা সমস্ত ডকুমেন্ট হাজির করেছি। তার প্রতিটি শব্দ সত্য তা আমরা প্রমান করতে সক্ষম। এটি যে জাল তা তারা প্রমান করতে পারেননি। না পেরে এখন আবার তারা মিথ্যার আশ্রয় নিয়ে অপপ্রচার চালাচ্ছে।
১৫ সাক্ষী বিষয়ে রিভিউ আবেদনের প্রেক্ষাপট:
গত ২০ মার্চ রাষ্ট্রপক্ষ থেকে একটি আবেদন দাখিল করা হয় ট্রাইব্যুনালে। সে দরখাস্তে বলা হয়েছে মাওলানা সাঈদীর বিরুদ্ধে ৪৬ জন সাক্ষীকে হাজির করা তাদের পক্ষে আদৌ সম্ভব নয়। তাই ৪৬ জন সাক্ষীর জবানবন্দী তাদের অনুপস্থিতিতে আদালতে সাক্ষ্য হিসেবে গ্রহন করা হোক।
পাঁচজন সাক্ষী হাজির করতে না পারা বিষয়ে আবেদনে বলা হয়েছে তারা নিখোঁজ। ১৪জনকে খুঁজে পাওয়া যাচ্ছেনা। নিখেঁাঁজ পাঁচ জনের তিনজন গোপনে ভারতে পালিয়ে গেছে।
আদৌ হাজির করা সম্ভব নয় হিসেবে যে ৪৬ জনের তালিকা দেয়া হয়েছে তাদের মধ্যে ঘাতক দালাল নির্মুল কমিটির সভাপতি শাহরিয়ার কবির, লেখক প্রফেসর জাফর ইকবাল (হুমায়ুন আহমেদের ভাই), খ্যাতিমান জাদুশিল্পী জুয়েল আইচ, পিরোজপুর সাবসেক্টর কমান্ডার মেজর (অব) জিয়াউদ্দিন আহমেদের নামও রয়েছে।
যে ৪৬ জন সাক্ষীর অনুপস্থিতিতে তাদের সাক্ষ্য গ্রহনের আবেদন জানানো হয়েছে তাদের সবার নামের তালিকা দেয়া হয়েছে এবং ১৯ জন সাক্ষী হাজির করতে না পারার কারণ তাদের নামের পাশে উল্লেখ করা হয়েছে। তালিকার এক নম্বরে থাকা ঊষারানী মালাকারকে হাজির করতে না পারা বিষয়ে বলা হয়েছে তিনি অসুস্থ, স্মরনশক্তি লোপ, ভ্রমনে মুত্যু ঝুকি রয়েছে।
তালিকায় দ্বিতীয় স্থানে থাকা সুখরঞ্জন বালী সম্পর্কে বলা হয়েছে চার মাস আগে নিজ বাড়ি থেকে বের হবার পর নিখোঁজ। তালিকার ৩ থেকে পাচ নম্বরে থাকা আশিষ কুমার মন্ডল, সুমীত রানী মন্ডল এবং সমর মিস্ত্রী সম্পর্কে বলা হয়েছে তারা ফেব্রুয়ারির প্রথম সপ্তাহ থেকে নিখোঁজ। সম্ভবত তারা গোপনে ভারতে পালিয়ে গেছে।
তালিকায় ৬ থেকে ১৯ নম্বর মোট ১৪ জন সাক্ষী সম্পর্কে বলা হয়েছে তাদের খুঁজে পাওয়া যাচ্ছেনা। আসামীর পক্ষ অবলম্বনকারী পিরোজপুরের অস্ত্রধারী সন্ত্রাসী গ্রুপ কর্তৃক সাক্ষীদের বাড়িতে গিয়ে হুমকির কারনে তারা বাড়িছাড়া।
এ আবেদন বিষয়ে শুনানী শেষে গত ২৯ মার্চ রায় দেন ট্রাইব্যুনাল। তাতে ১৫ জন সাক্ষী তদন্ত কর্মকর্তার কাছে যে জবানবন্দী দিয়েছেন তা তাদের অনুপস্থিতিতে সাক্ষ্য হিসেবে গ্রহণ করা হয়েছে।
১৫ সাক্ষী বিষয়ে এ আদেশ পুনরায় বিবেচনার জন্য গত ৯ মে রিভিউ আবেদন দাখিল করেন মাওলানা সাঈদীর আইনজীবী। ২২ মে এ বিষয়ে প্রথম শুনানী অনুষ্ঠিত হয়। ৩রা জুন পুনরায় শুনানীর সময় আসামী পক্ষের আইনজীবীরা সেফ হাউজের (ঢাকায় যেখানে সাক্ষী এনে রাখা হত) সমস্ত কাগজপত্র ট্রাইব্যুনালে দাখিল করে বলেন, সাক্ষী হাজির করতে না পারা বিষয়ে রাষ্ট্রপক্ষ যে কারণ দেখিয়েছে তা সম্পূর্ণ মিথ্যা। তারা কার্টে মিথ্যা তথ্য দিয়ে আদালতকে প্রতারিত করেছেন। অনেক সাক্ষী তাদের হেফাজতেই ছিল এবং সেফহাউজের এসব কাগজপত্রে তার প্রমান রয়েছে। কোন সাক্ষী কবে ঢাকায় আসে, কতদিন সেফ হাউজে ছিল, কবে কাকে সেফ হাউজ থেকে কোর্টে হাজির করা হয়, কে কয়বেলা খাবার খেয়েছেন, কোন সাক্ষী কবে বাড়ি গেছেন, কোন দিন কার কোন আত্মীয় বেড়াতে এসেছেন, কোন দোকান থেকে জিনিসপত্র কেনা হয়েছে, কোন কোন পুলিশ ইন্সপেক্ট, সাব-ইন্সপেক্টর এবং কনস্টেবল কোনদিন সেখানে দায়িত্ব পালন করেছেন তার সমস্ত কিছু লিখে রাখা হয়েছে যে ডায়েরিতে ত আসামী পক্ষ থেকে ট্রাইব্যুনালে হাজির করা হয়।
সেফ হাউজের যে রেজিস্ট্রার খাতা আসামী পক্ষ থেকে জমা দেয়া হয়েছে তাতে সাক্ষী এবং অতিথি হাজিরা খাতা, খাদ্য বই এবং সাধারন ডায়েরি বই রয়েছে।
মাওলানা দেলাওয়ার হোসাইন সাঈদীর মামলায় ১৫ সাক্ষী বিষয়ে দাখিল করা রিভিউ আবেদন খারিজ করে দিয়েছেন ট্রাইব্যুনাল । রিভিউ আবেদনে কোন মেরিট নেই বলে আদেশে উল্লেখ করা হয়েছে। সেফ হাউজের ডকুমেমেন্টর যে ফটোকপি আসামী পক্ষ থেকে দাখিল করা হয়েছে তাও প্রমানিত নয় বলে উল্লেখ করেছেন ট্রাইব্যুনাল। দাখিলকৃত ডকুমেন্টের সত্যতা আসামী পক্ষকেই প্রমান করতে হবে বলে মন্তব্য করেছেন ট্রাইব্যুনাল চেয়ারম্যান।
আদেশ বিষয়ে ডিফেন্স টিমের প্রধান আইনজীবী ব্যারিস্টার আব্দুর রাজ্জাক বলেছেন, এবার কাদম্বিনীকে মরিয়া প্রমান করতে হবে যে, সে মরে নাই।
গত ১২ জুন ১৫ সাক্ষী বিষয়ে শুনানী শেষে আদেশ মুলতবি রাখা হয়। এক মাসের মাথায় আজ এ বিষয়ে আদশে পাশ করা হয়েছে আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনাল-১ এ।
আদেশ পাঠ করে শোনানোর পর ট্রাইব্যুনাল চেয়ারম্যান বিচারপতি নিজামুল হক ব্যারিস্টার আব্দুর রাজ্জাকের প্রশ্নের জবাবে বলেন, আপনারা যে ডকুমেন্ট দাখিল করেছেন তার সত্যতা আপনাদেরই প্রমান করতে হবে।
ব্যারিস্টার রাজ্জাক বলেন, আমরা সমস্ত ডকুমেন্ট জমা দিয়েছি। এটা যে সত্য সে বিষয়ে আমরা যুক্তি উপস্থাপন করেছি। এখন আর কেমন করে আমরা প্রমান করব ?
জবাবে বিচারপতি নিজামুল হক বলেন, আপনি সিনিয়র আইনজীবী। আপনি জানেন কিভাবে প্রমান করতে হবে। প্রমান করতে পারলে এটা নি:সন্দেহে গ্রহণ করা হবে। তবে ডকুমেন্ট এখনো প্রমানিত হয়নি। আপনার কথা অনুযায়ী ৫০ ভাগ তো প্রমানিত। বাকীটুকু করে ফেলেন। তাহলে বেনিফিট পাবেন।
একজন বিচারপতি অনুপস্থিত ছিলেন:
আদেশ পাশের সময় ট্রাইব্যুনালে দুজন সদস্য উপস্থিত ছিলেন। এরা হলেন চেয়ারম্যান বিচারপতি নিজামুল হক এবং সদস্য বিচারপতি আনোয়ারুল হক। অপর সদস্য বিচারপতি একেএম জহির আহমেদ উপস্থিতি ছিলেননা।
আদেশ পাশের পর ব্যারিস্টার আব্দুর রাজ্জাক ট্রাইব্যুনালকে বলেন, আমরা ধরে নিতে পারি এটা দুই সদস্যের আদেশ।
জবাবে বিচারপতি নিজামুল হক বলেন, না, এটা ট্রাইব্যুনালের আদেশ। এটা সত্য যে, একজন নেই। কিন্তু সর্বসম্মত নয় তা বলা যাবেনা। কারন ভিন্ন মত তো আসেনি।
ব্যারিস্টার রাজ্জাক বলেন, আপনারা তিনজন আবেদনের শুনানীতে অংশ নিলেন। কাজেই তিনজন মিলেই আদেশ দিলে ভাল হতনা? একজন যেহেতু নেই তাই আরেকটু অপেক্ষা করতে পারতেন।
এ আদেশে আমরা মারাত্মকভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছি।
ব্যারিস্টার রাজ্জাকের প্রতিকৃয়া:
ট্রাইব্যুনালের আদেশ শেষে ব্যারিস্টার আব্দুর রাজ্জাক সাংবাদিকদের বলেন, এখন কাদিম্বনীকে মরিয়া প্রমান করতে হবে যে, সে মরে নাই। আমরা যে ডকুমেন্ট জমা দিয়েছি তা প্রমানের সুযোগ থেকে আমাদের বঞ্চিত করা হয়েছে। প্রমানের সুযোগ তো দেয়া হয়নি। আমরা বলেছি ডকুমেন্টে যাদের নাম আছে তাদের সবাইকে কোর্টের ডকে এনে জিজ্ঞাসাবাদ করা হোক। হাতের লেখা পরীক্ষা করানো হোক বিশেষজ্ঞ ডেকে। তাহলে প্রমান হবে ডকুমেন্টের প্রতিটি শব্দ, প্রতিটি তথ্য সত্য। আমরা সেটি প্রমান করতে পারব ।
ব্যারিস্টার রাজ্জাক বলেন, ট্রাইব্যুনালের প্রতি সম্মান রেখেই বলছি এ আদেশ সঠিক হয়নি। রোমান সম্রাটের আদেশের মত হয়েছে এ আদেশ। কারণ আমাদের আর আপীল বিভাগে যাওয়ার সুযোগ নেই এর বিরুদ্ধে। তাই আমরা কোর্টের আদেশ মানতে বাধ্য।
ট্রাইব্যুনাল আবেদন খারিজ বিষয়ে আদেশে আরো উল্লেখ করা হয়েছে, আসামী পক্ষ সেফ হাউজের যে ডকুমেন্ট দাখিল করছেন তার সত্যতা প্রমান বা অপ্রমানের দিকে আমরা যাচ্ছিনা। বিচার চলাকালে এটি আসামী পক্ষ চাইলে প্রমানের সুযোগ পাবেন। তখন আমরা বিবেচনা করব বিষয়টি।
আদেশে বলা হয়েছে ১৫ সাক্ষীর জবানবন্দী গ্রহণ বিষয়ে আমরা উল্লেখ করেছি যেহেতু জেরা ছাড়া এটি আমরা গ্রহণ করেছি তাই এর মূল্য কম এবং সেভাবেই বিবেচনা করা হবে। ’এছাড়া উষারানী মালাকার, সুখরঞ্জন বালী বিষয়ে জমাকৃত দিগন্ত এবং ইসলামিক টিভির রিপোর্ট বিষয়ে আদেশে বলা হয়েছে মূল যে ডকুমেন্ট জমা দেয়া হয়েছে তার সাথে এর বৈষাদৃশ্য রয়েছে।
ট্রাইব্যুনালের আদেশে বারবার দৈনিক নয়া দিগন্তে প্রকাশিত ২৭ মার্চের রিপোর্ট এবং দৈনিক আমার দেশে প্রকাশিত ২৪ এপ্রিলের রিপোর্ট উল্লেখ করা হয়েছে। সাক্ষীদের সাথে কথোপকথন বিষয়ে নয়া দিগন্তের রিপোর্ট এবং সেফ হাউজের ডায়েরি নিয়ে দৈনিক আমার দেশের রিপোর্ট বিষয়ে বলা হয়েছে এ রিপোর্ট নি:সন্দেহে বিচার প্রকৃয়াকে বাঁধা গ্রস্ত করার শামিল।
রাষ্ট্রপক্ষের আইনজীবীদের প্রতিকৃয়া: রাষ্ট্রপক্ষের আইনজীবী সৈয়দ হায়দার আলী বলেন, সেফ হাউজের নামে যে ডকুমেন্ট আসামী পক্ষ জমা দিয়েছেন তা জাল। এটি তারা নিজেরা তৈরি করে জমা দিয়েছেন এই রিভিউ আবেদন করার উদ্দেশে।
এ বিষয়ে আসামী পক্ষের আইনজীবী তাজুল ইসলাম বলেন, কোর্ট সেফ হাউজের ডকুমেন্টকে জাল বা জাল নয় সে বিষয়ে কিছুই বলেননি। কোর্ট বলেছে এটির সত্যাসত্য প্রমানের দিকে তারা যাচ্ছেননা। তাজুল ইসলাম বলেন, প্রসিকিউশনের পর্বত প্রমান জাল জালিয়াতি এবং প্রতারনার বিরুদ্ধে আমরা সমস্ত ডকুমেন্ট হাজির করেছি। তার প্রতিটি শব্দ সত্য তা আমরা প্রমান করতে সক্ষম। এটি যে জাল তা তারা প্রমান করতে পারেননি। না পেরে এখন আবার তারা মিথ্যার আশ্রয় নিয়ে অপপ্রচার চালাচ্ছে।
১৫ সাক্ষী বিষয়ে রিভিউ আবেদনের প্রেক্ষাপট:
গত ২০ মার্চ রাষ্ট্রপক্ষ থেকে একটি আবেদন দাখিল করা হয় ট্রাইব্যুনালে। সে দরখাস্তে বলা হয়েছে মাওলানা সাঈদীর বিরুদ্ধে ৪৬ জন সাক্ষীকে হাজির করা তাদের পক্ষে আদৌ সম্ভব নয়। তাই ৪৬ জন সাক্ষীর জবানবন্দী তাদের অনুপস্থিতিতে আদালতে সাক্ষ্য হিসেবে গ্রহন করা হোক।
পাঁচজন সাক্ষী হাজির করতে না পারা বিষয়ে আবেদনে বলা হয়েছে তারা নিখোঁজ। ১৪জনকে খুঁজে পাওয়া যাচ্ছেনা। নিখেঁাঁজ পাঁচ জনের তিনজন গোপনে ভারতে পালিয়ে গেছে।
আদৌ হাজির করা সম্ভব নয় হিসেবে যে ৪৬ জনের তালিকা দেয়া হয়েছে তাদের মধ্যে ঘাতক দালাল নির্মুল কমিটির সভাপতি শাহরিয়ার কবির, লেখক প্রফেসর জাফর ইকবাল (হুমায়ুন আহমেদের ভাই), খ্যাতিমান জাদুশিল্পী জুয়েল আইচ, পিরোজপুর সাবসেক্টর কমান্ডার মেজর (অব) জিয়াউদ্দিন আহমেদের নামও রয়েছে।
যে ৪৬ জন সাক্ষীর অনুপস্থিতিতে তাদের সাক্ষ্য গ্রহনের আবেদন জানানো হয়েছে তাদের সবার নামের তালিকা দেয়া হয়েছে এবং ১৯ জন সাক্ষী হাজির করতে না পারার কারণ তাদের নামের পাশে উল্লেখ করা হয়েছে। তালিকার এক নম্বরে থাকা ঊষারানী মালাকারকে হাজির করতে না পারা বিষয়ে বলা হয়েছে তিনি অসুস্থ, স্মরনশক্তি লোপ, ভ্রমনে মুত্যু ঝুকি রয়েছে।
তালিকায় দ্বিতীয় স্থানে থাকা সুখরঞ্জন বালী সম্পর্কে বলা হয়েছে চার মাস আগে নিজ বাড়ি থেকে বের হবার পর নিখোঁজ। তালিকার ৩ থেকে পাচ নম্বরে থাকা আশিষ কুমার মন্ডল, সুমীত রানী মন্ডল এবং সমর মিস্ত্রী সম্পর্কে বলা হয়েছে তারা ফেব্রুয়ারির প্রথম সপ্তাহ থেকে নিখোঁজ। সম্ভবত তারা গোপনে ভারতে পালিয়ে গেছে।
তালিকায় ৬ থেকে ১৯ নম্বর মোট ১৪ জন সাক্ষী সম্পর্কে বলা হয়েছে তাদের খুঁজে পাওয়া যাচ্ছেনা। আসামীর পক্ষ অবলম্বনকারী পিরোজপুরের অস্ত্রধারী সন্ত্রাসী গ্রুপ কর্তৃক সাক্ষীদের বাড়িতে গিয়ে হুমকির কারনে তারা বাড়িছাড়া।
এ আবেদন বিষয়ে শুনানী শেষে গত ২৯ মার্চ রায় দেন ট্রাইব্যুনাল। তাতে ১৫ জন সাক্ষী তদন্ত কর্মকর্তার কাছে যে জবানবন্দী দিয়েছেন তা তাদের অনুপস্থিতিতে সাক্ষ্য হিসেবে গ্রহণ করা হয়েছে।
১৫ সাক্ষী বিষয়ে এ আদেশ পুনরায় বিবেচনার জন্য গত ৯ মে রিভিউ আবেদন দাখিল করেন মাওলানা সাঈদীর আইনজীবী। ২২ মে এ বিষয়ে প্রথম শুনানী অনুষ্ঠিত হয়। ৩রা জুন পুনরায় শুনানীর সময় আসামী পক্ষের আইনজীবীরা সেফ হাউজের (ঢাকায় যেখানে সাক্ষী এনে রাখা হত) সমস্ত কাগজপত্র ট্রাইব্যুনালে দাখিল করে বলেন, সাক্ষী হাজির করতে না পারা বিষয়ে রাষ্ট্রপক্ষ যে কারণ দেখিয়েছে তা সম্পূর্ণ মিথ্যা। তারা কার্টে মিথ্যা তথ্য দিয়ে আদালতকে প্রতারিত করেছেন। অনেক সাক্ষী তাদের হেফাজতেই ছিল এবং সেফহাউজের এসব কাগজপত্রে তার প্রমান রয়েছে। কোন সাক্ষী কবে ঢাকায় আসে, কতদিন সেফ হাউজে ছিল, কবে কাকে সেফ হাউজ থেকে কোর্টে হাজির করা হয়, কে কয়বেলা খাবার খেয়েছেন, কোন সাক্ষী কবে বাড়ি গেছেন, কোন দিন কার কোন আত্মীয় বেড়াতে এসেছেন, কোন দোকান থেকে জিনিসপত্র কেনা হয়েছে, কোন কোন পুলিশ ইন্সপেক্ট, সাব-ইন্সপেক্টর এবং কনস্টেবল কোনদিন সেখানে দায়িত্ব পালন করেছেন তার সমস্ত কিছু লিখে রাখা হয়েছে যে ডায়েরিতে ত আসামী পক্ষ থেকে ট্রাইব্যুনালে হাজির করা হয়।
সেফ হাউজের যে রেজিস্ট্রার খাতা আসামী পক্ষ থেকে জমা দেয়া হয়েছে তাতে সাক্ষী এবং অতিথি হাজিরা খাতা, খাদ্য বই এবং সাধারন ডায়েরি বই রয়েছে।
কোন মন্তব্য নেই:
একটি মন্তব্য পোস্ট করুন