মেহেদী হাসান
৩৫ হাজার আইনজীবী এবং ১৯৭ টি আইনজীবী সংস্থা নিয়ে গঠিত বিশ্বের শীর্ষ স্থানীয় আইনজীবী সমিতি ‘ইন্টারন্যাশনাল বার এসোসিয়েশন’ (আইবিএ) ১৯৭৩ সালের আইনের বিশ্লেষন করে যুক্তরাজ্য সরকারের সংসদীয় মানবাধিকার গ্রুপের কাছে ১৭ দফা সুপারিশ পেশ করেছে ২০০৯ সালে।
আইবিএ’র সুপারিশ মালায় বলা হয়েছে, “আমাদের সবচেয়ে বড় উদ্বেগের বিষয় হল: এই আইনে অভিযুক্ত ব্যক্তির স্বার্থ ও অধিকার সংরক্ষন। আমরা মনে করি এই আইনে স্বীকৃত আন্তর্জাতিক মানদন্ডের অনেক গুরুত্বপূর্ণ বিষয় এড়িয়ে যাওয়া হয়েছে। নাগরিক ও রাজনৈতিক অধিকার সংরক্ষন বিষয়ক যে আন্তর্জাতিক চুক্তি আছে তার কিছু কিছু ১৯৭৩ সালের আইনে অন্তর্ভুক্ত হলেও অনেকগুলো মানদণ্ড এতে অনুপস্থিত রয়েছে যা ট্রাইব্যুনালকে সমালোচনার মুখোমুখি করবে।
আইবিএ ১৯৭৩ সালের আইনের বেশ কয়েকটি ধারা/উপধারা বাতিলের সুপারিশ করেছে যা ন্যায়বিচারকে বাধাগ্রস্ত করবে বলে উল্লেখ করা হয়েছে। এর মধ্যে একটি হল ১৮ নং ধারা। ১৯৭৩ সালের আইনের ১৮ ধারায় বলা হয়েছে, স্বাক্ষী তার নিজের বিরুদ্ধেও স্বাক্ষ্য দিতে বাধ্য থাকবে তা যদি তার নিজের বিরুদ্ধেও যায় । তার প্রদত্ত স্বাক্ষ্যে যদি প্রমানিত হয় যে সে নিজেও ঐ অপরাধের সাথে জড়িত ছিল তবু তাকে স্বাক্ষ্য দিতে হবে । সেক্ষেত্রে স্বাক্ষীকে তার অপরাধের জন্য অভিযুক্ত করা যাবেনা, গ্রেফতার এবং বিচারও করা যাবেনা।
আইনজীবীদের মতে এর মাধ্যমে একজন স্বাক্ষীকে মিথ্যা স্বাক্ষ্য প্রদানের অবাধ লাইসেন্স দেয়া হয়েছে এখানে। স্বাক্ষীকে দিয়ে আসামীর বিরুদ্ধে বলানো হবে “অমুককে হত্যা, অমুকের বাড়িতে অগ্নিসংযোগের সময় আমিও আসামীর সাথে ছিলাম”। এভাবে আসামী নিজেকে অপরাধের সাথে জড়িত করে স্বাক্ষ্য দিলেও ঐ অপরাধের জন্য তার বিচার হবেনা। ফলে তারা মিথ্যা স্বাক্ষ্য দেবে কাউকে ফাঁসানোর জন্য।
আইবিএ’র সুপারিশে ১৯ ধারার ১ উপধারাও বাতিল করার দাবি জানানো হয়েছে। ১৯ এর ১ উপধারায় স্বাক্ষ্য আইনের বিধান বাতিল করা হয়েছে। অর্থাৎ আদালতে উপস্থাপিত ডকুমেন্ট সত্য হিসেবে গৃহীত হবার যে শর্ত রয়েছে তা উঠিয়ে দেয়া হয়েছে। ফলে ম্যাগাজিন বা পত্রিকায় প্রকাশিত প্রতিবেদন, ছবি, চলচ্চিত্র এবং ক্যাসেটে রেকর্ড করা ডকুমেন্ট এর ওপর ভিত্তি করে আসামীকে অভিযুক্ত করা যাবে।
আইবিএ’র বাতিল তালিকার আরেকটি ধারা হল ১১ এর ২ উপধারা। এ ধারায় অভিযুক্ত ব্যক্তির নিরব থাকার অধিকার কেড়ে নেয়া হয়েছে। কোন প্রশ্নের উত্তর না দিলে ধরে নেয়া হবে সে দোষ স্বীকার করেছে। অথচ নিরব থাকার অধিকার আইনগতভাবে স্বীকৃত একটি বিষয়।
এছাড়া ট্রাইব্যুনালের রায়ের বিরুদ্ধে স্বতন্ত্র আদালতে (স্রপ্রীম কোর্টের আপীল বিভাগ ব্যতীত) আপীল করার অধিকার প্রদান , ট্রাইব্যুনালের গঠন, চেয়ারম্যান বা অন্য যেকোন সদস্যের নিয়োগ চ্যালেঞ্জ করার অধিকার প্রদান এবং স্বাক্ষ্য আইন সংযোজনের দাবি জানিয়েছে আইবিএ।
যুদ্ধাপরাধীদের বিচারের জন্য ১৯৭৩ সালে যে আইন প্রণয়ন করা হয় তা সংসদে পাশ করার জন্য সংবিধানে সংশোধনী আনতে হয়েছিল। কারণ, আইন বিশেষজ্ঞদের মতে সংবিধানে স্বীকৃত কতিপয় মৌলিক অধিকার হরন করা হয়েছে ১৯৭৩ সালের আইনে। সেজন্য সংবিধান সংশোধন করে করে ৪৭ (৩) ও ৪৭ (ক) অনুচ্ছেদ সংযোজন করা হয় । ১৯৭৩ সালের আইনে যে মৌলিক অধিকার হরণের বিষয় রয়েছে তাকে সাংবিধানিক স্বীকৃতি দেয়া হয়েছে এ দুটি সংযোজনীর মাধ্যমে । সংবিধানে ৪৭ (ক) অনুচ্ছেদ সংযোজনের ফলে জুডিশিয়াল রিভিউর অধিকার কেড়ে নেয়া হয়েছে। অর্থাৎ যুদ্ধাপরাধের জন্য গঠিত আদালতের রায়ের বিরুদ্ধে উচ্চ আদালতে যেতে পারবেনা অভিযুক্ত ব্যক্তি। শুধুমাত্র বিচার হয়ে গেলে পরে সুপ্রীম কোর্টের আপীল বিভাগে যাওয়া যাবে। সংবিধান বিশেষজ্ঞদের মতে আপীল বিভাগে বিস্তারিতভাবে যুক্তিতর্ক উপস্থাপন এবং খন্ডনের সুযোগ নেই। এটি থাকে হাই কোর্টে। কিন্তু সেখানে যাবার সুযোগ নাই অভিযুক্তের। বাংলাদেশ সংবিধানের অষ্টম সংশোধনী বিষয়ে যে ঐতিহাসিক রায় প্রদান করা হয়েছে তাতে এই জুডিশিয়াল রিভিউকে সংবিধানের মূল কাঠামো হিসেবে আখ্যায়িত করা হয়েছে। আর এই জুৃডিশিয়াল রিভিউর বিধান রাখা হয়নি ১৯৭৩ সালের আইনে। এছাড়া সংবিধান সংশোধন করে ১৯৭৩ সালের আইনকে প্রটেকশন দেয়ার ফলে ট্রাইব্যুনাল গঠন, বিচারক নিয়োগ এবং রায় নিয়ে কোন আদালতে কোন প্রশ্ন উত্থাপন করা যাবেনা।
যুক্তরাজ্য রানীর সাবেক কাউন্সেলর এবং বিচারপতি মাইকেল জে বেলফ ১৯৭৩ সালের আইনে জুডিশিয়াল রিভিউ’র ক্ষমতা খর্ব করে সংবিধানে যে প্রটেকশন দেয়া হয়েছে তাকে অসাংবিধানিক হিসেবে আখ্যায়িত করেছেন। মাইকেল বেলফের মতে ১৯৭৩ সালের আইনের ৬ নং ধারার ৮ উপধারা অনুযায়ী ট্রাইব্যুনালের গঠনকে চ্যালেঞ্জ করতে না পারার যে বিধান রাখা হয়েছে তাতে এ ট্রাইব্যুনাল পক্ষপাতদুষ্ট হওয়ার সম্ভাবনা রয়েছে। মাইকেলের মতে ১৯৭৩ সালের আইনে সুনির্দিষ্ট কিছু বিধানের অনুপস্থিতি আইনটিকে আন্তর্জাতিক মানবাধিকার ঘোষনাপত্র ও আন্তর্জাতিক নাগরিক ও রাজনৈতিক অধিকার সম্পর্কিত চুক্তি বিধানের সাথে অসামঞ্জস্যপূর্ণ করেছে।
৩৫ হাজার আইনজীবী এবং ১৯৭ টি আইনজীবী সংস্থা নিয়ে গঠিত বিশ্বের শীর্ষ স্থানীয় আইনজীবী সমিতি ‘ইন্টারন্যাশনাল বার এসোসিয়েশন’ (আইবিএ) ১৯৭৩ সালের আইনের বিশ্লেষন করে যুক্তরাজ্য সরকারের সংসদীয় মানবাধিকার গ্রুপের কাছে ১৭ দফা সুপারিশ পেশ করেছে ২০০৯ সালে।
আইবিএ’র সুপারিশ মালায় বলা হয়েছে, “আমাদের সবচেয়ে বড় উদ্বেগের বিষয় হল: এই আইনে অভিযুক্ত ব্যক্তির স্বার্থ ও অধিকার সংরক্ষন। আমরা মনে করি এই আইনে স্বীকৃত আন্তর্জাতিক মানদন্ডের অনেক গুরুত্বপূর্ণ বিষয় এড়িয়ে যাওয়া হয়েছে। নাগরিক ও রাজনৈতিক অধিকার সংরক্ষন বিষয়ক যে আন্তর্জাতিক চুক্তি আছে তার কিছু কিছু ১৯৭৩ সালের আইনে অন্তর্ভুক্ত হলেও অনেকগুলো মানদণ্ড এতে অনুপস্থিত রয়েছে যা ট্রাইব্যুনালকে সমালোচনার মুখোমুখি করবে।
আইবিএ ১৯৭৩ সালের আইনের বেশ কয়েকটি ধারা/উপধারা বাতিলের সুপারিশ করেছে যা ন্যায়বিচারকে বাধাগ্রস্ত করবে বলে উল্লেখ করা হয়েছে। এর মধ্যে একটি হল ১৮ নং ধারা। ১৯৭৩ সালের আইনের ১৮ ধারায় বলা হয়েছে, স্বাক্ষী তার নিজের বিরুদ্ধেও স্বাক্ষ্য দিতে বাধ্য থাকবে তা যদি তার নিজের বিরুদ্ধেও যায় । তার প্রদত্ত স্বাক্ষ্যে যদি প্রমানিত হয় যে সে নিজেও ঐ অপরাধের সাথে জড়িত ছিল তবু তাকে স্বাক্ষ্য দিতে হবে । সেক্ষেত্রে স্বাক্ষীকে তার অপরাধের জন্য অভিযুক্ত করা যাবেনা, গ্রেফতার এবং বিচারও করা যাবেনা।
আইনজীবীদের মতে এর মাধ্যমে একজন স্বাক্ষীকে মিথ্যা স্বাক্ষ্য প্রদানের অবাধ লাইসেন্স দেয়া হয়েছে এখানে। স্বাক্ষীকে দিয়ে আসামীর বিরুদ্ধে বলানো হবে “অমুককে হত্যা, অমুকের বাড়িতে অগ্নিসংযোগের সময় আমিও আসামীর সাথে ছিলাম”। এভাবে আসামী নিজেকে অপরাধের সাথে জড়িত করে স্বাক্ষ্য দিলেও ঐ অপরাধের জন্য তার বিচার হবেনা। ফলে তারা মিথ্যা স্বাক্ষ্য দেবে কাউকে ফাঁসানোর জন্য।
আইবিএ’র সুপারিশে ১৯ ধারার ১ উপধারাও বাতিল করার দাবি জানানো হয়েছে। ১৯ এর ১ উপধারায় স্বাক্ষ্য আইনের বিধান বাতিল করা হয়েছে। অর্থাৎ আদালতে উপস্থাপিত ডকুমেন্ট সত্য হিসেবে গৃহীত হবার যে শর্ত রয়েছে তা উঠিয়ে দেয়া হয়েছে। ফলে ম্যাগাজিন বা পত্রিকায় প্রকাশিত প্রতিবেদন, ছবি, চলচ্চিত্র এবং ক্যাসেটে রেকর্ড করা ডকুমেন্ট এর ওপর ভিত্তি করে আসামীকে অভিযুক্ত করা যাবে।
আইবিএ’র বাতিল তালিকার আরেকটি ধারা হল ১১ এর ২ উপধারা। এ ধারায় অভিযুক্ত ব্যক্তির নিরব থাকার অধিকার কেড়ে নেয়া হয়েছে। কোন প্রশ্নের উত্তর না দিলে ধরে নেয়া হবে সে দোষ স্বীকার করেছে। অথচ নিরব থাকার অধিকার আইনগতভাবে স্বীকৃত একটি বিষয়।
এছাড়া ট্রাইব্যুনালের রায়ের বিরুদ্ধে স্বতন্ত্র আদালতে (স্রপ্রীম কোর্টের আপীল বিভাগ ব্যতীত) আপীল করার অধিকার প্রদান , ট্রাইব্যুনালের গঠন, চেয়ারম্যান বা অন্য যেকোন সদস্যের নিয়োগ চ্যালেঞ্জ করার অধিকার প্রদান এবং স্বাক্ষ্য আইন সংযোজনের দাবি জানিয়েছে আইবিএ।
যুদ্ধাপরাধীদের বিচারের জন্য ১৯৭৩ সালে যে আইন প্রণয়ন করা হয় তা সংসদে পাশ করার জন্য সংবিধানে সংশোধনী আনতে হয়েছিল। কারণ, আইন বিশেষজ্ঞদের মতে সংবিধানে স্বীকৃত কতিপয় মৌলিক অধিকার হরন করা হয়েছে ১৯৭৩ সালের আইনে। সেজন্য সংবিধান সংশোধন করে করে ৪৭ (৩) ও ৪৭ (ক) অনুচ্ছেদ সংযোজন করা হয় । ১৯৭৩ সালের আইনে যে মৌলিক অধিকার হরণের বিষয় রয়েছে তাকে সাংবিধানিক স্বীকৃতি দেয়া হয়েছে এ দুটি সংযোজনীর মাধ্যমে । সংবিধানে ৪৭ (ক) অনুচ্ছেদ সংযোজনের ফলে জুডিশিয়াল রিভিউর অধিকার কেড়ে নেয়া হয়েছে। অর্থাৎ যুদ্ধাপরাধের জন্য গঠিত আদালতের রায়ের বিরুদ্ধে উচ্চ আদালতে যেতে পারবেনা অভিযুক্ত ব্যক্তি। শুধুমাত্র বিচার হয়ে গেলে পরে সুপ্রীম কোর্টের আপীল বিভাগে যাওয়া যাবে। সংবিধান বিশেষজ্ঞদের মতে আপীল বিভাগে বিস্তারিতভাবে যুক্তিতর্ক উপস্থাপন এবং খন্ডনের সুযোগ নেই। এটি থাকে হাই কোর্টে। কিন্তু সেখানে যাবার সুযোগ নাই অভিযুক্তের। বাংলাদেশ সংবিধানের অষ্টম সংশোধনী বিষয়ে যে ঐতিহাসিক রায় প্রদান করা হয়েছে তাতে এই জুডিশিয়াল রিভিউকে সংবিধানের মূল কাঠামো হিসেবে আখ্যায়িত করা হয়েছে। আর এই জুৃডিশিয়াল রিভিউর বিধান রাখা হয়নি ১৯৭৩ সালের আইনে। এছাড়া সংবিধান সংশোধন করে ১৯৭৩ সালের আইনকে প্রটেকশন দেয়ার ফলে ট্রাইব্যুনাল গঠন, বিচারক নিয়োগ এবং রায় নিয়ে কোন আদালতে কোন প্রশ্ন উত্থাপন করা যাবেনা।
যুক্তরাজ্য রানীর সাবেক কাউন্সেলর এবং বিচারপতি মাইকেল জে বেলফ ১৯৭৩ সালের আইনে জুডিশিয়াল রিভিউ’র ক্ষমতা খর্ব করে সংবিধানে যে প্রটেকশন দেয়া হয়েছে তাকে অসাংবিধানিক হিসেবে আখ্যায়িত করেছেন। মাইকেল বেলফের মতে ১৯৭৩ সালের আইনের ৬ নং ধারার ৮ উপধারা অনুযায়ী ট্রাইব্যুনালের গঠনকে চ্যালেঞ্জ করতে না পারার যে বিধান রাখা হয়েছে তাতে এ ট্রাইব্যুনাল পক্ষপাতদুষ্ট হওয়ার সম্ভাবনা রয়েছে। মাইকেলের মতে ১৯৭৩ সালের আইনে সুনির্দিষ্ট কিছু বিধানের অনুপস্থিতি আইনটিকে আন্তর্জাতিক মানবাধিকার ঘোষনাপত্র ও আন্তর্জাতিক নাগরিক ও রাজনৈতিক অধিকার সম্পর্কিত চুক্তি বিধানের সাথে অসামঞ্জস্যপূর্ণ করেছে।
কোন মন্তব্য নেই:
একটি মন্তব্য পোস্ট করুন