ইন্টারন্যাশনাল ক্রিমিনাল ট্রাইব্যুনাল ফর রুয়ান্ডা’র বিচারপতি টিইচ খান বলেছন, যেভাবেই হোক সাজা দেবই এ উদ্দেশ্যে যুদ্ধাপরাধ বিচারের আয়োজন চলছে। ন্যায় বিচারের নামে প্রহসন করতে তারা দৃঢপ্রতিজ্ঞ। কোরবানির গরুকে যেমন চার হাত পা বেঁধে জবাই দেয়া হয় এ আইনের মাধ্যমে তেমন বিচার হবে। এটাই ইন্টারন্যাশনাল ক্রাইমস ট্রাইব্যুনাল এ্যাক্টের সারমর্ম।
টিএইচ খান বলেন, এ বিচারের অবস্থা হবে নেকড়ের সেই গল্পের মত। অর্থাৎ তুই দোষ করিষনি তোর বাপে করেছে। এই অপরাধে যদি বিচার হয় তাহলে বলার আর কি আছে। মন্ত্রীরা আগেই বলছেন ফাঁসির দড়িতে ঝুলিয়ে বিচার করা হবে। এভাবে বিচারের আগে প্রগান্ডা চালাচ্ছেন।
২০১০ সালের ১৬ এপ্রিল হোটেল শেরাটনের উইন্টার গার্ডেনে ‘দি ন্যাশনাল ফোরাম ফর প্রটেকশন অব হিউম্যান রাইটস’ যুদ্ধাপরাধ আইন বিষয়ে একটি আন্তর্জাতিক কনফারেন্স এর আয়োজন করে। কনফারেন্সে প্রধান অতিথির বক্তব্যে আন্তর্জাতিক খ্যাতিমান আইনজীবী এবং বিচারপতি টিএইচ খান একথা বলেন।
১৯৭৩ সালের যুদ্ধাপরাধ আইনের সমালোচনা করে টি এইচ খান বলেন, স্বাক্ষীকে প্রশ্ন করলে তার জবাব তাকে দিতেই হবে । সে স্বাক্ষ্য যদি তার নিজের বিরুদ্ধেও যায় তবু তাকে উত্তর দিতে হবে। আর নিজের বিরুদ্ধে স্বাক্ষী দিলে স্বাক্ষীর কোন শাস্তি হবেনা। এর ফলে যে কারোর মিথ্যা স্বাক্ষী দেয়া অত্যন্ত সহজ হবে। সে বলবে আমি অমুকের সাথে অমুককে হত্যার সময়, ধর্ষনের সময় এবং অগ্নি সংযোগের সময় ছিলাম। কারণ এটি বলার জন্য তার কোন সমস্যা হবেনা।
ট্রাইট্যুনাল যদি অন্যায় রায় দেয় তাহলে আপনি আদালতে যেতে পারবেননা, চ্রালেঞ্জ করতে পারবেনন। তিনি বলেন, আইনের প্রতি সেকশনে গলদ আছে ।
যুগোশ্লাভিয়া, রূযান্ডসহ যেখানেই যুদ্ধাপরাধীদের বিচার হয়েছে তাতে সারা বিশ্ব থেকে নির্বাচনের মাধ্যমে বিচারক নিয়োগ করা হয়েছে এবং ন্যায় বিচার নিশ্চিত করা হয়েছে। যুগোশ্লাভিয়ায় নয়টি দেশ থেকে নয় জন বিচারক নিয়োগ দেয়া হয়েছে। রুয়ান্ডায় ৬ জন দিয়ে শুরু হয়েছিল। রোমের আন্তর্জাতিক অপরাধ আদালতে ১৮ জন বিচারপতি রয়েছে। আর বাংলাদেশের ট্রাইবিউনালের অবস্থা হল আমরাই জামাইর মা, আমরাই কইন্যার মা। একই দলের বিচারপতি, একই দলের আইনজীবী, একই দলের তদন্ত কর্মকর্তা। পত্রিকায় প্রকাশিত মতামত, ছবিও এখানে দলিল হিসেবে বিবেচিত সহবে। এটা হতে পারেনা। এর মাধ্যমে কি যে বিচার হবে তা আল্লাহই ভাল জানেন বলে মন্তব্য করেণ টিএইচ খান।
টিএইচ খান বলেন, আন্তর্জাতিক আইনের সাথে বাংলাদেশের ইন্টারন্যাশনাল ক্রাইমস এ্যাক্টের কোন মিল নেই। আকাশ আর পাতাল পার্থক্য। মিল আছে শুধু ইন্টারন্যাশনাল শব্দের মধ্যে।
আইনের সংশোধন বিষয়ে টিএইচ খান বলেন, ১৯৭৩ সালের মুল আইনে ছিল, শসস্ত্র বাহিনী, প্রতিরক্ষা বাহিনী এবং সহায়ক বাহিনীর সদস্যদের বিচারের কথা। ২০০৯ সালের জুলাইতে যে সংশোধনী করা হল তাতে ব্যক্তি এবং গ্রুপের কথা ঢুকিয়ে দেয়া হল। কারণ বাংলাদেশে তো আর পাকিস্তানী সেনাবাহিনীর লোক নেই। আছে এখানকার লোকজন। তাই তাদের ধরার জন্য এ ব্যবস্থা হল। সংশোধনীর উদ্দেশ্য মহত নয়।
কোন মন্তব্য নেই:
একটি মন্তব্য পোস্ট করুন