বৃহস্পতিবার, ১ আগস্ট, ২০১৩

সেফ হাউজে ডায়েরি প্রদর্শন করতে দেয়া হয়নি

১৬/১০/২০১২
মাওলানা দেলাওয়ার হোসাইন সাঈদীর মামলায় আলোচিত সেফ হাউজ ডায়েরি বা রেজিস্ট্রার বই প্রদর্শনী করতে দেয়া হযনি।    ট্রাইব্যুনাল এ বিষয়ে আপত্তি জানিয়ে বলেছেন যার কাছ থেকে এ  ডায়েরি বা বই সংগ্রহ করা হয়েছে তাকে ট্রাইব্যুনালে আসতে হবে এবং তার মাধ্যমে এগুলো উপস্থাপন করতে  হবে।

আজ আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনাল -১ এ  মাওলানা সাঈদীর ছেলে মাসুদ সাঈদী ১৩ তম সাক্ষী হিসেবে সাক্ষ্য দেয়ার সময় আসামী পক্ষ  সেফ হাউজ সংক্রান্ত তিনটি রেজিস্ট্রার বই  ট্রাইব্যুনাল কর্তৃক   চিহ্নিতকরনের উদ্যোগ নিলে  ট্রাইব্যুনাল আপত্তি উত্থাপন করেন।  তবে সেফহাউজ সংক্রান্ত দুটি জিডির ফটোকপি  পদর্শন মার্ক করা হয়েছে।

গত সোমবার প্রথমে সেফ হাউজ রেজিস্ট্রার বই চিহ্নিতকরন করতে চাইলে ট্রাইব্যুনাল  সাক্ষীর কাছে জানতে চান এটি তিনি  কিভাবে পেয়েছেন। তখন সাক্ষী  মাসুদ সাঈদী  জানান, দৈনিক আমার দেশ পত্রিকায় এ বিষয়ে রিপোর্ট ছাপা হওয়ার পর আমরা সংশ্লিষ্ট রিপোর্টারের সাথে যোগাযোগ করি এবং তিনি এটি আমাদের দিয়েছেন। তখন ট্রাইব্যুনাল বলেন, তাহলে ওই রিপোর্টরকে আসতে  হবে। এরপর   এ বিষয়টি নিয়ে ভবিষ্যতে যাতে  জটিলতা না দেখা দেয় সেজন্য আসামী পক্ষকে আরো চিন্তা করার পরামর্শ দেন ট্রাইব্যুনাল। আসামী পক্ষ তখন এ বিষয়টি বাদ দিয়ে অন্যান্য বিষয় প্রদশর্ন করান।

আজ   ট্রাইব্যুনালের কার্যক্রম শুরু হলে মাওলানা সাঈদীর আইনজীবী  প্যানেল ট্রাইব্যুনালকে জানান তারা সিদ্ধান্ত নিয়েছেন এটি তারা প্রদর্শন করাবেন । তখন ট্রাইব্যুনাল চেয়ারম্যান বিচারপতি নিজামুল হক বলেন, আমরা এটি তার (মাসুদ সাঈদী)  কাছ থেকে নেবনা। এটি তার কাছে কিভাবে এসেছে সেটি আগে ঠিক করেন। আমরা বুঝতে পারছিনা তিনি (মাসুদ সাঈদী)  কিভাবে এর সাথে  জড়িত হলেন। আপনাদের দাবি অনুযায়ী এটা সরকারি ডকুমেন্ট। সরকারি ডকুমেন্ট কি যে কেউ প্রদর্শন করতে পারে ? তিনি এটা বলতে পারেননা যে তিনি এটা সংগ্রহ করেছেন।  এটা যে পুলিশের ডকুমেন্ট তা বলার তিনি কে? তিনি এটা অন্য আরেকজনের কাছ থেকে সংগ্রহ করেছেন । তাকে আসতে হবে।
তারপরও আমরা আপনাদের সতর্ক করে বলছি যদি দেখা যায় এটা  জাল   তাহলে কিন্তু মারাত্মক পরিণতি হবে। সেই ঝামেলায় আপনারা ওনার ছেলেকে টেনে আনছেন কেন?

মাওলানা সাঈদীর আইনজীবী মিজানুল ইসলাম বলেন, এটা আপনারা বিবেচনা করবেন কি করবেননা সেটি পরের বিষয় কিন্তু প্রদর্শন হতে আপত্তি কোথায়।
এরপর  এটি পদশর্নীর পরিবর্তে সাক্ষী মাসুদ সাঈদী সেফ  হাউজের তিনটি রেজিস্ট্রার   বই দেখেছেন এবং তার মধ্যে  কি আছে তার  সংক্ষিপ্ত একটি বিবরন রেকর্ড করা হয় ট্রাইব্যুনালে। এছ্ড়াা সেফ জাউজ সংক্রান্ত দুটি জিডি প্রদশর্ন করা হয়।

সাক্ষী মাসদু সাঈদী এ জুডি দুটি বিষয়ে নয়া দিগন্তকে জানান, সেফ  হাউজের রেজিস্ট্রার  বইতে  ৮ ডিসেম্বর ১১২ নং নোটে যাত্রা বাড়ি থানায় তিনটি জিডি করার কথা উল্লেখ আছে। সেফ হাউজে অবস্থানরত রাষ্ট্রপক্ষের সাক্ষী মাহবুবুল আলম হাওলাদারকে কে বা কারা হুমকি দেয়। সে কারনে সেফ হাউজের ইনচার্জ   আমজাদ  গত ৮/১২/২০১১ তারিখ যাত্রাবাড়ি থানায় গিয়ে সাক্ষীকে হুমকির বিষয়ে জিডি করেন।  যাত্রাবাড়ি থানায় জিডি করার এ বিষয়টি সেফ হাউজের রেজিস্ট্রার বইতে নোট করে রাখা হয় ১৯/১২/২০১১ তারিখ। সেখানে জিডির নম্বরও উল্লেখ করা হয়। সেই সূত্র ধরে আমরা যাত্রাবাড়ি থানা থেকে জিডির ২টি কপি সংগ্রহ করি।

মাওলানা সাঈদীর আইনজীবী মিজানুল ইসলাম নয়া দিগন্তকে বলেন, এ জিডির কপি প্রদর্শনীর মাধ্যমে সেফ হাউজের অস্তিত্ব্ স্বীকার করে নেয়া হল।

এ জিডি কপি প্রদর্শনের সময় ট্রাইব্যুনাল সাক্ষী মাসুদ সাঈদীকে কয়েকটি প্রশ্ন করেন। সেগুলো হল-
প্রশ্ন : আপনি জিডি হিসেবে যে দুটি  ফটোকপি  হিসেবে দাখিল করেছেন তা যে জিডি তা আপনাকে কে  বলেছে?
উত্তর : কেউ বলেনি। দেখে বুঝেছি এটা জিডির কপি।
প্রশ্ন : থানায় জিডি হয়েছে তা আপনি কিভাবে জানলেন?
উত্তর : সেফ হাউজের ডকুমেন্টে জিডি করা হয়েছে মর্মে উল্লেখ করা হয়েছে। সেটা দেখে আমার মরহুম বড় ভাই রাফিক বিন সাঈদী ও জিডি কপি সংগ্রহ করেছেন।
প্রশ্ন : এ কুপি দুটি আপনার ভাই কিভাবে কার  কাছ থেকে সংগ্রহ করেছেন তা আপনার জানা আছে?
উত্তর : আমার ভাইয়ের কাছে শুনেছি তিনি থানার মুন্সির কাছ থেকে সংগ্রহ করেছেন। আরো শুনেছি  জিডির  নম্বর বলতে পারলে এভাবে থানা থেকে জিডি কপি  সংগ্রহ করা যায় ।

এছাড়া জিডির কপি দুটি রেকর্ড করা বিষয়ে আরো কয়েকটি কথা রেকর্ড  করেন ট্রাইব্যুনাল।  সেটি হল- এই ডকুমেন্ট দুইটি থানায়প্রদত্ত দুটি জি,ডি এন্ট্রির ফটোকপি, যখন আসামী পক্ষের বিজ্ঞ আইনজীবিদের এর দায়দায়িত্ব ও সঠিকতা সম্পর্কে স্মরন করিয়ে দেওয়া হয় তখন তাহারা বলেন যে, এর দায় ও সঠিকতা সম্পর্কে চিন্তা ভাবনা করে তাহারা এই ডকুমেন্ট ট্রাইব্যুনালে জমা দেওয়ার সিদ্ধান্ত নিয়েছেন

এরপর সেফ হাউজের  যে  তিনটি রেজিস্ট্রার বই মাওলানা সাঈদীর পক্ষে দাখিল করা হয়েছে তা নিম্নোক্ত উপায়ে ট্রাইব্যুনালে রেকর্ড করা হয়-

সেইফ হাউজের ১৮-১০-২০১১ইং তারিখ হতে ২০-০৩-১২ ইং তারিখ পর্যন্ত সময়ে সাক্ষীদের আসা যাওয়া সংক্রান্ত রেজিস্ট্রার খাতা, উক্ত সেইফ হাউজের ১৮-১০-২০১১ইং তারিখ হতে ২০-০৩-২০১২ইং তারিখের সাধারন ডায়রী বই এবং উক্ত সেইফ হাউজের ১৮-১০-২০১১ইং তারিখ হতে৩০-০৩-২০১২ ইং তারিখের খাদ্য রেজিস্ট্রারগুলির ফটোকপি যা আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনাল আইন অনুযায়ী ১৫ জন সাক্ষীর তদন্তকারী অফিসারের নিকট প্রদত্ত জবানবন্দী গ্রহন    করে   মাননীয় ট্রাইব্যুনাল যে আদেশ প্রদান করেন তা রিভিউ দরখাস্ত শুনানীকালে আমার পিতার পক্ষ হতে ০৩-০৬-১২ইং তারিখ দাখিল করা হয়েছে, তা আমি দেখেছি। ঐ সমস্ত রেজিস্ট্রার প্রসিকিউশনের সাক্ষীদের আসা যাওয়া, খাওয়া দাওয়া, তাদের সঙ্গীয় মেহমানদের বর্ণনা, মোবাইল নম্বর কে কয়দিন থেকেছে ইত্যাদির বর্ণনা আছে। ঐ রেজিস্টারে উল্লেখযোগ্য যে সমস্ত বিষয় সমুহ লিপিবদ্ধ ছিল তার মধ্যে সাক্ষী আশীষ কুমার মন্ডল এবং তাহার মাতা এবং অপর সাক্ষী সমর মিস্ত্রি উল্লেখিত সেইফ হাউজে ২০১২ সালের মার্চ মাস পর্যন্ত অবস্থান করেছেন।
গতকাল সাক্ষী মাসুদ সাঈদীর  জবানবন্দী শেষে জেরা শুরু হয়েছে।

গত ২০ মার্চ রাষ্ট্রপক্ষ থেকে আবেদন করে বলা হয় মাওলানা সাঈদীর পক্ষে  অনুপস্থিত  ৪৬ সাক্ষী হাজির করা তাদের পক্ষে আদৌ সম্ভব নয়।   রাষ্ট্রপক্ষের আবেদনের প্রেক্ষিতে ট্রাইব্যুনাল ১৫ জন সাক্ষী তদন্ত কর্মকর্তার কাছে যে জবানবন্দী প্রদান করেন তা সাক্ষ্য হিসেবে গ্রহণ করে আদেশ দেন ২৯ মার্চ। এ বিষয়ে রিভিউ আবেদনের শুনানীর সময় মাওলানা সাঈদীর আইনজীবীদের পক্ষ থেকে  কিছু ডকুমেন্ট উপস্থাপন করা হয়। মাওলানা সাঈদীর আইনজীবীরা ট্রাইব্যুনালে বলেন, রাষ্ট্রপক্ষের সাক্ষীদের ঢাকায় এনে রাখা হত যেখানে সেই সেফ হাউজের তিনটি রেজিস্ট্রার বই তারা উদ্ধার করেছেন। সেখানে কোন সাক্ষী কবে আসছে, কবে গেছে, কতদিন ছিল  তার সমস্ত তথ্য লিপিবদ্ধ আছে।  তারা সে তথ্য উপস্থাপন করে বলেন,  সাক্ষী হাজির করতে না পারা বিষয়ে রাষ্ট্রপক্ষ যে কারন দেখিয়েছে তা মিথ্যা।   যেসব সাক্ষী তারা খুঁজে পাচ্ছেনা বলে দাবি করছেন তার অনেক সাক্ষী ঢাকায় সেফ হাউজে ছিল তাদেরই তত্তাবধানে।
মাওলানা সাঈদীর পক্ষে অ্যাডভোকেট মিজানুল ইসলাম, মনজুর আহমদ আনসারী, ব্যারিস্টার তানভির আহমেদ আল আমিন প্রমুখ উপস্থিত ছিলেন।

কোন মন্তব্য নেই:

একটি মন্তব্য পোস্ট করুন