শুক্রবার, ২৩ আগস্ট, ২০১৩

অভিযুক্ত’র অধিকার রক্ষায় সংবিধানে ধারা সংযোজন করতে হবে

১৮/৪/১১  
মেহেদী হাসান
স্টিফেন জে র‌্যাপের চিঠিতে সুপারিশ  করে বলা হয়েছে,  কোন ব্যক্তি যত বড় অপরাধের অভিযোগেই অভিযুক্ত হোকনা কেন অভিযুক্ত ব্যক্তির অধকার  রক্ষা করতে হবে। তাকে তার  সকল আইনী সুরক্ষার ভোগ করার নিশ্চয়তা দিতে হবে।

র‌্যাপ তার চিঠিতে মোটা হরফে উল্লেখ করেছেন, আইসিসিপিআরসহ বিভিন্ন আন্তর্জাতিক চুক্তি এবং আইনে অভিযুক্ত ব্যক্তিকে যেসব আইনী সুরক্ষা এবং অধিকার  প্রদান করা হয়েছে সেগুলো যাতে অভিযুক্ত ব্যাক্তিরা পেতে পারেন তার নিশ্চয়তা বিধান করে সংবিধানে একটি ধারা সংযোজন করা উচিত। যুদ্ধাপরাধের অভিযোগে যাদের বিরুদ্ধে  তদন্ত চলছে এবং যাদের বিরুদ্ধে  চার্জশিট প্রদান করা হয়েছে তাদের সকলের ক্ষেত্রেই এ অধিকার প্রযোজ্য হবে।

বাংলাদেশ সরকারের আমন্ত্রনে  গত জানুয়ারি মাসে যুদ্ধাপরাধ বিচার প্রকৃয়া বিষয়ে    জানার জন্য  ঢাকা সফরে আসেন মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের যুদ্ধাপরাধ বিষয়ক বিশেষ দূত স্টিফেন জে র‌্যাপ।   আইনমন্ত্রী, পরারাষ্ট্রমন্ত্রী, যুদ্ধাপরাধ ট্রাইব্যুনালসহ আইনজ্ঞ এবং বিভিন্ন শ্রেণী পেশার লোকজনের সাথে আলোচনা শেষে ওয়াশিংটন ফিরে  একটি প্রতিবেদন তৈরি করেণ র‌্যাপ। বিভিন্ন সুপারিশ সংবলিত সে প্রতিবেদন গত মার্চ মাসে পররাষ্ট্র এবং আইনমন্ত্রীকে পাঠিয়েছেন র‌্যাপ।
এছাড়া র‌্যাপের চিঠিতে আরো একটি বিষয় মোটা দাগে উল্লেখ করে বলা হয়েছে বাংলাদেশে ১৯৭৩ সালের আইনে অপরাধের সুনির্দিষ্ট সংজ্ঞা এবং ব্যাখা নেই। তাই আন্তর্জাতিক আইন অনুসারে বাংলাদেশের ১৯৭৩ সালের আইনে  অপরাধকে সুনির্দিষ্টভাবে চিহ্নিত করার  নিশ্চয়তা বিধানের জন্যও সংবিধানে ধারা সংযুক্ত করা উচিত। ট্রইব্যুনালের জন্য আলাদা একটি আপীল বিভাগ গঠনেরও প্রস্তাব  করেছেন র‌্যাপ।

 ‘অভিযুক্তর অধিকার রক্ষা করতে হবে’ শিরোনামে র‌্যাপ তার চিঠিতে বলেন, কোন ব্যক্তি যত বড় অপরাধের অভিযোগেই অভিযুক্ত হোকনা কেন অভিযুক্ত ব্যক্তির অধকার  রক্ষা করতে হবে। অভিযুক্ত ব্যক্তির যেসব আইনী সুরক্ষা এবং অধিকার পাবার  কথা সেগুলো যদি যথাযথভাবে তাদের না দেয়া হয় এবং এ কারনে যদি  ট্রাইব্যুনালের বিচারের বিরুদ্ধে প্রশ্ন তোলা হয় তাহলে অভিযুক্তরা  রেহাই পেয়ে যাবে । ভুক্তভোগীর জন্যও এটি সুখকর হবেনা। অভিযুক্ত ব্যক্তির কি কি অধিকার রয়েছে সেগুলো আইসিসিপিআর এ বর্ণিত আছে। বাংলাদেশ যার একটি পক্ষ।

র‌্যাপ বলেন, ১৯৭৩ সালের আইনে বিভিন্ন অপরাধের সুনির্দিষ্ট সংজ্ঞা এবং ব্যাখা নেই। কোন অপরাধে কাউকে অভিযুক্ত করার আগে  যাতে সে অপরাধকে সুনির্দিষ্টভাবে চিহ্নিত করা হয় সে বিধান রেখে সংবিধানে একটি ধারা  সংযোজন করা দরকার। সংবিধানে এ বিষয়টিও অন্তর্ভুক্ত করা দরকার যাতে ট্রাইব্যুনালের বিচারকরা আইসিসির ‘এলিমেন্টস অব  ক্রাইমস’ থেকে গাইডলাইন গ্রহণ করেন অপরাধকে সংজ্ঞায়িত করার ব্যাপারে।

মানবতার বিরুদ্ধে অপরাধ, গণহত্যা প্রভৃতি টার্মগুলো  আইসিসিতে সুনির্দিষ্ট করে সংজ্ঞায়িত করা হয়েছে। ১৯৭১ সালে যেসব অপরাধ সংঘটিত হয়েছে সেসব অপরাধ সুনির্দিষ্ট করে ব্যাখার জন্য বাংলাদেশের ট্রাইব্যুনালের উচিত সাম্প্রতিক সময়ের সংজ্ঞা থেকে গাইডলাইন নেয়া। যেমন আইসিসিতে অপরাধের উপদানা ব্যাখ্যা করা আছে।
অতীত ক্ষেত্রে প্রযোজ্য আইন নিয়ে প্রশ্ন: স্টিফেন জে র‌্যাপের চিঠিতে   বলা হয়েছে, ১৯৭৩ সালে প্রণীত  আইনের ওপর ভিত্তি করে ১৯৭১ সালে সংঘটিত অপরাধের বিচারের জন্য ২০১০ সালে যে আদালত গঠন করা হয়েছে তাতে বেশি কিছু প্রশ্নের উদ্রেক হয়েছে।  তার মধ্যে একটি হল অতীতের ক্ষেত্রে প্রযোজ্য এ আইনের গ্রহণযোগ্যতা।

কারণ নাগরিক এবং রাজনৈতিক অধিকার রক্ষা বিষয়ক আন্তর্জাতিক চুক্তি আইসিসিপিআর, (ইন্টারন্যাশনাল কনভেন্ট অন সিভিল এন্ড পলিটিক্যাল রাইটস ) এর ১৫ (১) ধারায় বলা হয়েছে, “জাতীয় বা আন্তর্জাতিকভাবে প্রণীত কোন আইনে কোন ব্যক্তিকে ফৌজদারি অপরাধে অভিযুক্ত করতে পারবেনা যদি ঐ ব্যক্তি আইন প্রণয়নের পূর্বে অপরাধ করে থাকে।” অর্থাৎ পরে আইন প্রণয়ন করে পূর্বের অপরাধের বিচার করতে পারবেনা।  বাংলাদেশের কর্মকর্তাদের উচিত ১৯৭৩ সালের আইনের পর্যালোচনা করা যাতে বাংলাদেশ যেসব আন্তর্জাতিক চুক্তি, আইন এবং সনদে স্বাক্ষর করেছে সেসব বিষয় ট্রাইব্যুনালে বজায় থাকে। ১৯৭৩ সালের আইনের যে রুলস অব প্রসিডিউর রয়েছে তা আইসিসিপিআর এর ১৫ ধারার সাথে সাযুজ্য কিনা তাও মিলিয়ে দেখা দরকার।

র‌্যাপের চিঠিতে বলা হয়েছে যুদ্ধাপরাধের বিচারের লক্ষ্যে প্রণীত  ট্রাইব্যুনাল কোন আন্তর্জাতিক আদালত নয়। একটি দেশীয় আদালত। তাই অতীতের আইনকে কার্যকর করতে হলে অবশ্যই বাংলাদেশের সংবিধানের অধীনে হতে হবে।  ঢাকা সফরের সময় আমি অনেকে যুক্তি দিয়ে বলেছেন, ১৯৭৩ সালের এ আইন এবং ২০০৯ সালের সংশোধন বাংলাদেশের সংবিধানের আলোকে প্রয়োগযোগ্য কিনা। ১৯৭৩ সালের আইনের বিধি বিধান এবং ২০০৯ সালের সংশোধনী আন্তর্জাতিক আইন অনুযায়ী হয়েছে কিনা অথবা আন্তর্জাতিক আইন লঙ্ঘন করেছে কিনা সে বিষয়ে প্রশ্ন তোলার অধিকার রয়েছে  যে কোন পক্ষের।

ট্রাইব্যুনালে পৃথক আপীল বিভাগ গঠন করা উচিত:  রাপের চিঠিতে বলা হয়েছে বাংলাদেশে আন্তর্জাতিক অপরাধ আদালতের ক্ষেত্রে আলাদা কোন আপীল বিভাগ  রাখা হয়নি ।  বিভিন্ন আন্তর্জাতিক এবং বিশেষ আদালতে  এ ব্যবস্থা রাখা হয়। ট্রাইব্যুনাল চূড়ান্ত রায় দেয়ার পর আসামী পক্ষ সুপ্রীম কোর্টের আপীল বিভাগে শুনানীর জন্য যেতে পারবে। সে ব্যবস্থা রাখা হয়েছে ১৯৭৩ সালের আইনে। আন্তর্জাতিক অপরাধ আদালতের জন্য একটি পৃথক এবং স্বতন্ত্র আপীল বিভাগ গঠন সম্ভব সুপ্রীম কোর্টের বিধানের সাথে সমন্বয় করে। পৃথক এ আপীল বিভাগের রুলস অব প্রসিডিউর সুপ্রীম কোর্টের রুলস অব প্রসিডিউর থেকে আলাদা হবে।

কোন মন্তব্য নেই:

একটি মন্তব্য পোস্ট করুন