যুদ্ধাপরাধ বিচার বিষয়ে ঢাকায় নিযুক্ত ইউরোপীয় বিভিন্ন দেশের কূটনীতিকদের মধ্যে বিভক্তি দেখা দিয়েছে। বিশেষ করে যুদ্ধাপরাধীদের বিচারের জন্য ১৯৭৩ সালে প্রণীত ইন্টারন্যাশনাল ক্রাইমস (ট্রাইবিউনাল) এ্যাক্ট নিয়ে এ বিভক্তি দেখা দিয়েছে। যুদ্ধাপরাধীদের বিচারের জন্য বিদ্যমান এ আইনটি কতটুকু যথার্থ এবং আইনটি বিষয়ে ইঊরোপী ইউনিয়নের প্রকাশ্যে কি অবস্থান নেয়া উচিত তা নিয়ে তাদের মধ্যে মতভেদ তৈরি হয়েছে ।
জানুয়ারি ২০১১ সালে ঢাকা থেকে প্রকাশিত ইংরেজি দৈনকি নিউএজ পত্রিকায় এ বিষয়ে একটি প্রতিবেদন প্রকাশিত হয়েছে।
ডেভিড বার্গম্যানের এ প্রতিবেদনে বলা হয়েছে যুদ্ধাপরাধীদের বিচারের জন্য প্রণীত আইনটি নিয়ে আন্তর্জাতিক বিভিন্ন সংগঠন, বিচারক এবং আইনজীবীদের কাছ থেকে ইতোমধ্যে যে সমালোচনা এসেছে তার সাথে ইউরোপের অনেক দেশ একমত পোষন করেছে। ইউরোপীয় ইউনিয়নভুক্ত কোন কোন দেশের কূটনীতিকরা শুধু আইনটি নয় বরং পুরো বিচার প্রকৃয়াকেই অসচ্ছ হিসেবে মনে করেণ। আইনটির সমালোচনা করে আন্তর্জাতিক আইনজীবীরা আইনটির যেসব সমালোচনা করেছেন বিট্রিশ দূতাবাস তা সঠিক মনে করে।
ইন্টারন্যাশনাল বার এসোসিয়েশনস ওয়ার ক্রাইমস কমিটি (আইবিএ)সহ আরো যেসব সংস্থা আইনটির সমালোচনা করে এর সংশোধনের জন্য যেসব প্রস্তাব দিয়েছে তার সাথে অনেক দেশের রাষ্ট্রদূত একমত পোষন করেছে।
আবার কোন কোন দেশের কূটনীতিক মনে করেণ বিদ্যমান আইনের মাধ্যমে বিচার কাজ করা সম্ভব এবং তাতে ন্যায় বিচার প্রতিষ্ঠায় সমস্যা হবেনা। এ নিয়ে ঢাকায় নিযুক্ত ইউরোপীয় দেশগুলোর কূটনীতিকদের মধ্যে বিতর্ক চলছে।
আন্তর্জাতিক মহল থেকে আসা আইনটির সমালোচনার সাথে সূর মিলিয়ে ঢাকায় নিযুক্ত ইউরোপীয় উইনিয়নভুক্ত কোন কোন কূটনীতিকের প্রচার করা মন্তব্য বিতর্কে নতুন মাত্রা যোগ করেছে।
ঢাকাস্থ ইউরোপীয় ইউনিয়নভুক্ত দেশগুলোর সংগঠন হিউম্যান রাইটস টাস্কফোর্সের চেয়ারম্যান এন্ড্রু বার্ণার্ড দৈনিক নিউএজের সাথে এক সাক্ষাৎকারে সম্প্রতি বলেছেন, আইনটিতে কিছু টেকনিক্যাল সমস্যা আছে কিন্তু এর মাধ্যমে বিচার করলে তাতে ন্যায় বিচার বাঁধাগ্রস্ত হবেনা। তিনি আরো বলেন হিউম্যান রাইটস টাস্কফোর্স একটি অনানুষ্ঠানিক সংগঠন এবং যুদ্ধপরাধ বিচার বিষয়ে এ সংগঠনের অবস্থান এখনো পরিষ্কার নয়।
সংগঠনের চেয়ারম্যানের কাছ থেকে এ ধরনের মন্তব্য আসার পর অন্যান্য সদস্যভুক্ত অনেক দেশের কূটনীতিক এন্ড্রা বার্নার্ডের বক্তব্যের সাথে ভিন্নতা প্রকাশ করে কড়া প্রতিকৃয়া ব্যক্ত করেণ। জার্মান দূতাবাসের একজন সিনিয়র কূটনীতিক (ইউ’র রাজনীতি, বানিজ্য এবং তথ্য বিভাগের প্রধান) এন্ড্র বার্নাডের সাথে যোগাযোগ করেণ এবং তাকে তার বক্তব্য সংশোধন করে আরেকটি বিবৃতি প্রদানের অনুরোধ করেণ।
ফলে এন্ড্র বার্ণার্ড আরেকটি বিবৃতি প্রদান করে বলেন, যুদ্ধাপরাধ বিচারের বিষয়টি বাংলাদেশের বিষয়। তবে ইউরোপী ইউনিয়নের অনুরোধ থাকবে বিচার যেন আন্তর্জাতিক মানের হয় তা নিশ্চিত করার বিষয়ে।
ইউ রাজনৈতিক এবং বৈশ্বিক বিষয়ক সেক্রেটারী জন রায়ান বলেন, ১৯৭৩ সালের আইনের সমালোচনা করে আইবিএ যে মতামত প্রদান করেছে তার সাথে আমরা একমত। তারা আইনটিকে আন্তর্জাতিক মানে উন্নীত করার জন্য ১৭ দফা প্রস্তাব দিয়েছে এবং আমরা চাই তার ভিত্তিতে আইনটি সংশোধন করা হোক।
ডেভিড বার্গম্যানের প্রতিবেদনে বলা হয়েছে যুদ্ধাপরাধীদের বিচার নিয়ে ইউরোপীয় ইউনিয়নভুক্ত কূটনীতিকদের মধ্যে এমন সময় এ বিতর্ক দেখা দিল যখন যুদ্ধাপরাধ বিচার বিষয়ে আলোচনার জন্য বাংলাদেশ সরকারের আমন্ত্রনে যুক্তরাষ্ট্রের স্টিফেন জে র্যাপ বাংলাদেশে আসছেন। বাংলাদেশ সরকার কর্তৃক স্টিফেনকে ঢাকা সফরের আমন্ত্রণ জানানোর মানে হল যুদ্ধাপরাধ বিচার আইন নিয়ে আন্তর্জাতিক অঙ্গনে যে সমালোচনা চলছে তা বাংলাদেশ সরকার মেনে নিয়েছে। ইউরোপীয় অনেক কূটনীতিকগণ অন্তত তাই মনে করেন।
২০০৯ সালের ২৫ মার্চ যুদ্ধাপরাধ বিচার আদালগ গঠন করা হয়েছে এবং জামায়াতের সব শীর্ষ নেতাদের গ্রেফতার করা হয়েছে। বিএনপি স্ট্যান্ডিং কমিটির সদস্যা সালাহউদ্দিন কাদের চৌধুরীকেও যুদ্ধাপরাধ বিষয়ে গ্রেফতার করা হয়েছে ।
কোন মন্তব্য নেই:
একটি মন্তব্য পোস্ট করুন