স্বাধীনতার পর আয়েশা ফয়েজ শহীদ পরিবার হিসেবে বাবর রোডে একটি পরিত্যক্ত বাড়ি বরাদ্দ পেয়েছিলেন। সে বাড়ি বরাদ্দ পেতে তাকে অশেষ লজ্জা, অপমান, হেনস্থা এবং হয়রানির মুখোমুখি হতে হয়েছিল সরকারি অফিসে। দিনের পর দিন ঘুরতে হয়েছে এক অফিস থেকে আরেক অফিসে। এক অফিসার থেকে আরেক অফিসারের টেবিলে । কিন্তু বহু কষ্টে বরাদ্দ পাওয়া সেই বাড়ি থেকে মাত্র দিন দিনের মাথায় তাদেরকে রী বাহিনী অস্ত্রের মুখে তাড়িয়ে দেয়। তাড়িয়ে দেয়ার আগে আয়েশা ফয়েজ রুখে দাড়াতে চেয়েছিলেন। কিন্তু এক পর্যায়ে শত শত রীবাহিনী তাদের বাড়ি ঘিরে ফেলে বাড়ি অবরোধ করে। কিন্তু সে অবস্থায়ও তারা বাড়ি ছেড়ে চলে না যাওয়ায় তাদেরকে গুলি করতে উদ্যত হয় রীবাহিনীর সদস্যরা। শেষ পর্যন্ত ছেলে মেয়ের জীবন বাঁচাতে শূণ্য হাতে ছেলে মেয়েদের হাত ধরে রাতের অন্ধকারে বের হয়ে আসেন রাস্তায়।
আয়েশা ফয়েজের লেখা বই ‘জীবন যে রকম’ অবলম্বনে এ পর্যন্ত হয়ত অনেকে জেনেছেন। কিন্তু রাস্তায় বের হয়ে আসার পরে কি হয়েছিল? আসুন সে বিষয়ে জেনে নেয়া যাক।
প্রথমে হুমায়ূন আহমেদের লেখা থেকেই জানা যাক।
“সদ্য দেশ স্বাধীন হয়েছে। বাংলাদেশ সরকার দয়াপরবশ হয়ে আমার মাকে বাবর রোডে একটি পরিত্যক্ত বাড়ি বরাদ্দ দিয়েছে। আমরা সেই বাড়িতে বাস করি। আসবাবপত্র খাট পালঙ্ক কিছু নেই। কম্বলের ওপর শোয়া, কম্বলের ওপর বসা। বাড়িতে পানি নেই। তাতে কী? মাথার ওপর একটা ছাদ তো আছে! আমরা ভাগ্যবান, রাস্তায় বসে নেই। আমাদের সৌভাগ্য স্থায়ী হলনা। এক মধ্যরাতে আমাদের বাড়ি থেকে বের করে দিল।
কম্বল এবং হাড়িপাতিলসহ আমি, ভাইবোল, মা, একটা আট বছর বয়সী কাজের ছেলেকে নিয়ে রাস্তায় বসে রইলাম। তিন বোনের মধ্যে দুজন ফিচ ফিচ করে কাঁদছে। মা কাঁদছেন। আমাদের কাজের চেলে জিতু মিয়া কাঁদছে চিৎকার করে। আমি অধিক শোকে পাথর। এক সময় রাত কাটবে। সকাল হবে। এদেরকে নিয়ে কোথায় যাব? জলে ভেসে যাওয়া একটি শহীদ পরিবারকে কে আশ্রয় দেবে?
আমরা সারা রাত পথে বসে রইলাম। সকাল হল। হঠাৎ দেখি রিক্সা করে ছফা ভাই এসে উপস্থিত। তার সঙ্গে একটি কেরোসিনের টিন। মুখ অত্যন্ত গম্ভীর। আমাকে বললেন, হুমায়ূন রিক্সায় উঠুন।
আমি বললাম, কোথায় যাব?
ছফা ভাই বললেন, গণভবনে যাব। নিজের গায়ে কেরোসিন ঢেলে আগুন লাগিয়ে দেব। একটি শহীদ পরিবারের প্রতি যে অপমান করা হয়েছে তার প্রতিবাদ স্বরূপ এ কাজটা করব। আত্মহুতি।
কি বলছেন ছফা ভাই?
কথা বলে সময় নষ্ট করবেননা। উঠে আসুন। সঙ্গে ভারী চাদর নিয়ে এসেছি। আপনি আমার গায়ে ভালমতো চাদরটা জড়িয়ে দেবেন। যেন আগুনটা ঠিকমত লাগে।
ছফা ভাই গায়ে কেরোসিন ঢেলে জীবন বিসর্জন দিতে যাচ্ছেন। এ খবর চারদিকে দ্রুত ছড়িয়ে পড়ল। কবি সিকান্দার আবু জাফর ব্যস্ত হয়ে ছুটে আসলেন ছফা ভাইয়ের কাছে। তাকে ধমক দিয়ে বললেন, আমি ব্যবস্থা করছি। কথা দিচ্ছি এই শহীদ পরিবারের জন্য থাকার একটা ব্যবস্থা করব। তুমি কেরোসিন টিন আমার বাসায় দিয়ে এসো। আমি ভাইবোন নিয়ে আগের বাড়িতেই ওঠার সুযোগ পেলাম।”
(পুরো বাড়ি আয়েশা ফয়েজকে ফিরিয়ে দেয়া হয়নি। একটি তলা দেয়া হল আয়েশা ফয়েজকে এবং নিচের তলা দেয়া হল দখলদার রীবাহিনীর মেজর হাফিজকে। এভাবে এর সমাধান করা হল এবং আয়েশা ফয়েজ তা মেনে নিলেন)।
বাড়ি থেকে বের করে দেয়ার পরের দৃশ্য বিষয়ে আয়েশা ফয়েজ যা লিখেছেন: হুমায়ূন আহমেদের মা আয়েশা ফয়েজ তার জীবন যে রকম বইয়ে লিখেছেন,
“রী বাহিনীর এই গোলমালের মাঝে যারা সাহায্যের জন্য ছুটে এলেন তার মাঝে একজন হলেন আহমদ ছফা। এই খেয়ালী মানুষটি রীবাহিনীর এমন আচরনে একেবারে েেপ গেল। চেনাজানা সমস্ত মানুষকে সে টেনে নিয়ে এল বাবর রোডে। প্রাণ নিয়ে আমরা বাসা থেকে বের হয়ে আসার পর রীবাহিনীর বীর জওয়ানেরা আমাদের বাসার সমস্ত জিনিসপত্র টেনে রাস্তায় ফেলে দিয়েছে। তার মাঝে চেয়ার টেবিলও আছে। রাত্রিবেলা সেখানেই সবাই বসেছে। খোলা আকাশের নিচে রাত্রিবেলায় এক রাউন্ড চাও খেয়ে নিল সবাই। সরকারি যে দলিলটির জন্য আমার আজ এতবড় লজ্জা সেটি ছফা যাবার সময় হাতে করে নিয়ে গেল। পরদিন গণকণ্ঠ পত্রিকার প্রথম পৃষ্ঠায় শহীদ পরিবারের ওপর নির্যাতনের এই খবরটি ছবিসহ ছাপা হল। সাথে সরকারি এলটমেন্ট বরাদ্দের ডকুমেন্টের একটি ছবি (যেটি ছফা নিয়ে গিয়েছিল হাতে করে)। আওয়ামী লীগ সরকার তখন প্রবল প্রতাপে রাজত্ব করছে। তাদের কিংবা রীবাহিনীর বিরুদ্ধে কথা বলে সেরকম সাহস কারোর নেই। গণকণ্ঠ একমাত্র কাগজ যারা সাহস করে কিছু বলত। ”
পরবর্তীতে রী বাহিনী র্র্র্কর্তৃপ এর একটা সুরাহা করতে এগিয়ে আসে। রীবাহিনী প্রধান নুরুজ্জামান ওপরের তলা দিলেন আয়েশা ফয়েজকে এবং নিচের তলা দিলেন রী বাহিনীর মেজর সুবেদার হাফিজকে।
কাজল (হুমায়ূন আহমেদ) ঝামেলা মোটে সহ্য করেনা। এসব ঝামেলা দেখে সে মহসিন হলে পাকাপাকিভাবে আশ্রয় নিল। প্রতিদিন সকালে উঠে সে কাগজে খঁজত রীবাহিনী কাউকে বাসা থেকে উচ্ছেদ করেছে এরকম কোন খবর আছে কি-না। যদি না থাকে মাঝে মাঝে দেখা করতে আসে।
আয়েশা ফয়েজের লেখা বই ‘জীবন যে রকম’ অবলম্বনে এ পর্যন্ত হয়ত অনেকে জেনেছেন। কিন্তু রাস্তায় বের হয়ে আসার পরে কি হয়েছিল? আসুন সে বিষয়ে জেনে নেয়া যাক।
প্রথমে হুমায়ূন আহমেদের লেখা থেকেই জানা যাক।
“সদ্য দেশ স্বাধীন হয়েছে। বাংলাদেশ সরকার দয়াপরবশ হয়ে আমার মাকে বাবর রোডে একটি পরিত্যক্ত বাড়ি বরাদ্দ দিয়েছে। আমরা সেই বাড়িতে বাস করি। আসবাবপত্র খাট পালঙ্ক কিছু নেই। কম্বলের ওপর শোয়া, কম্বলের ওপর বসা। বাড়িতে পানি নেই। তাতে কী? মাথার ওপর একটা ছাদ তো আছে! আমরা ভাগ্যবান, রাস্তায় বসে নেই। আমাদের সৌভাগ্য স্থায়ী হলনা। এক মধ্যরাতে আমাদের বাড়ি থেকে বের করে দিল।
কম্বল এবং হাড়িপাতিলসহ আমি, ভাইবোল, মা, একটা আট বছর বয়সী কাজের ছেলেকে নিয়ে রাস্তায় বসে রইলাম। তিন বোনের মধ্যে দুজন ফিচ ফিচ করে কাঁদছে। মা কাঁদছেন। আমাদের কাজের চেলে জিতু মিয়া কাঁদছে চিৎকার করে। আমি অধিক শোকে পাথর। এক সময় রাত কাটবে। সকাল হবে। এদেরকে নিয়ে কোথায় যাব? জলে ভেসে যাওয়া একটি শহীদ পরিবারকে কে আশ্রয় দেবে?
আমরা সারা রাত পথে বসে রইলাম। সকাল হল। হঠাৎ দেখি রিক্সা করে ছফা ভাই এসে উপস্থিত। তার সঙ্গে একটি কেরোসিনের টিন। মুখ অত্যন্ত গম্ভীর। আমাকে বললেন, হুমায়ূন রিক্সায় উঠুন।
আমি বললাম, কোথায় যাব?
ছফা ভাই বললেন, গণভবনে যাব। নিজের গায়ে কেরোসিন ঢেলে আগুন লাগিয়ে দেব। একটি শহীদ পরিবারের প্রতি যে অপমান করা হয়েছে তার প্রতিবাদ স্বরূপ এ কাজটা করব। আত্মহুতি।
কি বলছেন ছফা ভাই?
কথা বলে সময় নষ্ট করবেননা। উঠে আসুন। সঙ্গে ভারী চাদর নিয়ে এসেছি। আপনি আমার গায়ে ভালমতো চাদরটা জড়িয়ে দেবেন। যেন আগুনটা ঠিকমত লাগে।
ছফা ভাই গায়ে কেরোসিন ঢেলে জীবন বিসর্জন দিতে যাচ্ছেন। এ খবর চারদিকে দ্রুত ছড়িয়ে পড়ল। কবি সিকান্দার আবু জাফর ব্যস্ত হয়ে ছুটে আসলেন ছফা ভাইয়ের কাছে। তাকে ধমক দিয়ে বললেন, আমি ব্যবস্থা করছি। কথা দিচ্ছি এই শহীদ পরিবারের জন্য থাকার একটা ব্যবস্থা করব। তুমি কেরোসিন টিন আমার বাসায় দিয়ে এসো। আমি ভাইবোন নিয়ে আগের বাড়িতেই ওঠার সুযোগ পেলাম।”
(পুরো বাড়ি আয়েশা ফয়েজকে ফিরিয়ে দেয়া হয়নি। একটি তলা দেয়া হল আয়েশা ফয়েজকে এবং নিচের তলা দেয়া হল দখলদার রীবাহিনীর মেজর হাফিজকে। এভাবে এর সমাধান করা হল এবং আয়েশা ফয়েজ তা মেনে নিলেন)।
বাড়ি থেকে বের করে দেয়ার পরের দৃশ্য বিষয়ে আয়েশা ফয়েজ যা লিখেছেন: হুমায়ূন আহমেদের মা আয়েশা ফয়েজ তার জীবন যে রকম বইয়ে লিখেছেন,
“রী বাহিনীর এই গোলমালের মাঝে যারা সাহায্যের জন্য ছুটে এলেন তার মাঝে একজন হলেন আহমদ ছফা। এই খেয়ালী মানুষটি রীবাহিনীর এমন আচরনে একেবারে েেপ গেল। চেনাজানা সমস্ত মানুষকে সে টেনে নিয়ে এল বাবর রোডে। প্রাণ নিয়ে আমরা বাসা থেকে বের হয়ে আসার পর রীবাহিনীর বীর জওয়ানেরা আমাদের বাসার সমস্ত জিনিসপত্র টেনে রাস্তায় ফেলে দিয়েছে। তার মাঝে চেয়ার টেবিলও আছে। রাত্রিবেলা সেখানেই সবাই বসেছে। খোলা আকাশের নিচে রাত্রিবেলায় এক রাউন্ড চাও খেয়ে নিল সবাই। সরকারি যে দলিলটির জন্য আমার আজ এতবড় লজ্জা সেটি ছফা যাবার সময় হাতে করে নিয়ে গেল। পরদিন গণকণ্ঠ পত্রিকার প্রথম পৃষ্ঠায় শহীদ পরিবারের ওপর নির্যাতনের এই খবরটি ছবিসহ ছাপা হল। সাথে সরকারি এলটমেন্ট বরাদ্দের ডকুমেন্টের একটি ছবি (যেটি ছফা নিয়ে গিয়েছিল হাতে করে)। আওয়ামী লীগ সরকার তখন প্রবল প্রতাপে রাজত্ব করছে। তাদের কিংবা রীবাহিনীর বিরুদ্ধে কথা বলে সেরকম সাহস কারোর নেই। গণকণ্ঠ একমাত্র কাগজ যারা সাহস করে কিছু বলত। ”
পরবর্তীতে রী বাহিনী র্র্র্কর্তৃপ এর একটা সুরাহা করতে এগিয়ে আসে। রীবাহিনী প্রধান নুরুজ্জামান ওপরের তলা দিলেন আয়েশা ফয়েজকে এবং নিচের তলা দিলেন রী বাহিনীর মেজর সুবেদার হাফিজকে।
কাজল (হুমায়ূন আহমেদ) ঝামেলা মোটে সহ্য করেনা। এসব ঝামেলা দেখে সে মহসিন হলে পাকাপাকিভাবে আশ্রয় নিল। প্রতিদিন সকালে উঠে সে কাগজে খঁজত রীবাহিনী কাউকে বাসা থেকে উচ্ছেদ করেছে এরকম কোন খবর আছে কি-না। যদি না থাকে মাঝে মাঝে দেখা করতে আসে।
কোন মন্তব্য নেই:
একটি মন্তব্য পোস্ট করুন