০১.০৯.২০১৩ ইং
মাওলানা নিজামীর বিরুদ্ধে ১৮ তম সাক্ষী জহুরুল হকের জবানবন্দী গ্রহণ করা হয় গত ২৯ আগস্ট। আজ তার জেরা সম্পন্ন হয়।
জেরা করেন মাওলানা নিজামীর পক্ষে আইনজীবী মিজানুল ইসলাম। জেরায় সাক্ষী যা বলেন তা নিম্নরূপ :
রাজনারায়নপুর অবৈতনিক প্রাথমিক বিদ্যালয়টি বর্তমানে রাজনরায়নপুরে সরকারী প্রাথমিক বিদ্যালয় এবং রাজনারায়নপুরে ঐ একটিমাত্র স্কুলই আছে।
আমার পিতার একটি মাত্র বোন আছে, তার কোন ভাই নাই। ১৯৭১ সালে আমার ফুফু ছেচানিয়াতে স্বামীর বাড়িতে থাকতেন। আমার এই ফুফুর কোন সন্তান, আমার কোন খালাতো ভাই ১৯৭১ সালে রুপসী, বাউশগাড়ি বা ডেমরা গ্রামে থাকতেন না।
আমি প্রাথমিক লেখাপড়া আমার গ্রামের হাড়িয়া প্রাথমিক বিদ্যালয়ে করেছি। আমি ১৯৬২ সালে বেড়া বিপিন বিহারী হাইস্কুল থেকে মেট্রিকুলেশন পাশ করেছি। আমি বি.এ পাশ করেছি। আমি ১৯৬২ সালের অক্টোবর মাসে শিক্ষকতা পেশায় যোগদান করি। আমি ছাত্রজীবনে কোন ছাত্র রাজনীতির সঙ্গে জড়িত ছিলাম না। ১৯৭০ সালে আমি কোন রাজনৈতিক দলের সদস্য ছিলাম না। পরবর্তীতে আমি কোন রাজনৈতিক দলে যোগদান করি নাই, তবে পরবর্তীতে শিক্ষকতা থেকে অবসর গ্রহনের পর বাংলাদেশ আওয়ামী লীগে যোগদান করি এবং এখন পর্যন্ত সেই দলেই আছি। ১৯৭০ সালে পাবনার রাজনীতি সম্পর্কে আমার পরিচ্ছন্ন ধারনা ছিল না। ১৯৭০ সালে নির্বাচনে আমি সহকারী পোলিং অফিসার হিসাবে কাজ করেছি। ১৯৭০ সালের এম,এন,এ নির্বাচনে সাথিয়া ও বেড়া থানার তিনটি ইউনিয়ন নিয়ে একটি নির্বাচনী এলাকা ছিল। ঐ নির্বাচনে এম,এন,এ প্রার্থী হিসাবে অধ্যাপক আবু সাঈদ সাহেব এবং এ্যাডভোকেট আনোয়ারুল হক সাহেব প্রতিদ্বন্দিতা করেছিলেন তবে মির্জা আব্দুর রশিদ সাহেব ঐ নির্বাচনে এম,এন,এ প্রার্থী ছিলেন কিনা তাহা আমার স্মরন নাই। রাজনারায়নপুর অধ্যাপক আবু সাঈদ সাহেবের নির্বাচনি এলাকার অন্তর্ভুক্ত ছিল না। আমি সাথিয়া থানার মেহেদীনগর সেন্টারে সহকারী পোলিং অফিসার হিসাবে কাজ করেছি। আমার এলাকার প্রাদেশিক পরিষদের আসন কোন কোন থানা বা ইউনিয়ন নিয়ে গঠিত ছিল তা এই মূহুর্তে স্মরন নাই। আমার এলাকার প্রাদেশিক পরিষদের আসন থেকে ১৯৭০ এর নির্বাচনে আওয়ামী লীগ প্রার্থী জনাব আহমেদ রফিক সাহেব নির্বাচিত হয়েছিলেন তবে তার প্রতিদ্বন্দি মাওলানা নিজাম উদ্দিন ছিলেন কিনা তাহা আমার স্মরন নাই। ১৯৭৩ সালের আমাদের এলাকায় জাতীয় সংসদের সদস্য হিসাবে অধ্যাপক আবু সাঈদ সাহেব নির্বাচিত হয়েছিলেন। তার প্রতিদ্বন্দ্বী হিসাবে মাওলানা নিজাম উদ্দিন সাহেব ছিলেন কিনা তাহা আমার স্মরন নাই। ১৯৭৯ সালের জাতীয় সংসদ নির্বাচনে আমাদের এলাকা থেকে কে নির্বাচিত হয়েছিলেন তা আমার স্মরনে আসছে না, তবে সম্ভবত মতিউর রহমান নিজামী সাহেব নির্বাচিত হয়েছিলেন। ১৯৭৯ সালের নির্বাচনে জাসদের প্রার্থী হিসাবে মাওলানা নিজাম উদ্দিন সাহেব নির্বাচন করেছিলেন কিনা তাহা আমার জানা নাই। মাওলানা নিজাম উদ্দিন নামে কোন রাজনৈতিক নেতাকে আমি চিনি না এবং তার নামও শুনি নাই। আহমেদ রফিক সাহেবের সাথে আমার ব্যক্তিগত কোন পরিচয় ছিল না। আহমেদ রফিক সাহেবের বাড়ি সাথিয়া থানায়, তবে তিনি পাবনা শহরে থাকতেন। আহমেদ রফিকের ভাই মুক্তিযোদ্ধা আহমেদ শফিককে আমি চিনি না। আহমেদ রফিক সাহেব স্বাধীনতার পূর্বেই মারা গিয়েছিলেন কিনা তাহা আমার স্মরন নাই। ১৯৭০ এর নির্বাচনের পরপরই পাবনা এলাকার কোন এম,এন,এ বা এম,পি,এ নকশালদের আক্রমনে নিহত হয়েছিলেন কিনা তাহা আমার জানা নাই। ১৯৭০ সালের নির্বাচনের পর ডিসেম্বর মাসে একটি জনসভায় বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান পাবনায় গিয়েছিলেন তবে আমি সেখানে গিয়েছিলাম কিনা তাহা আমার স্মরন নাই। বঙ্গবন্ধুর ঐ জনসভাটি কি উদ্দেশ্যে হয়েছিল তাহা আমার জানা নাই।
১৯৭১ সালে অসহযোগ আন্দোলন শুরু হলে আমার স্কুল বন্ধ হয়ে যায়। ১৯৭১ সালের ৭ই মার্চের পরে আমি আমার গ্রাম হাড়িয়াতে অবস্থান করতাম তবে মাঝে মাঝে সাথিয়ায় যেতাম। ১৯৭১ সালে সাথিয়া সদর একটি অনুন্নত এলাকা ছিল। ১৯৭১ সালের আগে থেকেই রুপসী, বাউশগাড়ি ও ডেমরা এই তিনটি গ্রামে আমার যাতায়াত ছিল। পাবনাগামী রাস্তার একদিকে ডেমরা গ্রাম ও অন্য দিকে বাউশগাড়ি গ্রামের কিছু অংশ। বাউশগাড়ি গ্রামের দক্ষিন দিকে লাগানো রুপসী গ্রাম। বাউশগাড়ি পাগাড় আমি দেখেছি। এটা পাবনাগামী সড়কের পাশেই অবস্থিত। ডেমরা গ্রামের বলরাম এবং জিতেন্দ্রনাথসহ আরো অনেককে আমি চিনতাম। রুপসী গ্রামে আমার দু:সম্পর্কের চাচা আব্দুর জব্বার, ইসমাইলদেরকে আমি চিনতাম। বাউশগাড়ি গ্রামের আব্দুর জব্বার নামে একজনকে আমি চিনতাম, তার পিতার নাম আমার স্মরন নাই। এই আব্দুর জব্বারের ছেলেমেয়ের নামও আমি বলতে পারবনা। আমি যে ঘরে ছিলাম সেই ঘর থেকে আমি যে ঝোপের আড়ালে লুকিয়ে ছিলাম সেই ঝোপের দূরত্ব ৮/১০ ফুট। ঝোপটি পাবনাগামী রাস্তার পাশেই অবস্থিত। ১৯৭১ সালের ১৪ই মে ডেমড়া, বাউশগাড়ি ও রুপসী গ্রাম আক্রমনকারীরা পাবনাগামী সড়কের উত্তর দিক থেকে এসেছিল। আক্রমনকারীরা কোন যানবাহনে চড়ে আসে নাই। ঐ পাবনাগামী সড়কটি ডেমরা থেকে আতাইকুলা পর্যন্ত কাচা রাস্তা ছিল। পাবনাগামী সড়কের পাশেই রুপসী গ্রাম ছিল। ঝোপের আড়ালে আশ্রয় নেওয়ার পর আক্রমনকারীদের কোন গুলির আওয়াজ আমি শুনতে পাই নাই। ঐ ঝোপের আড়াল থেকে নিজামী সাহেবদেরকে দেখার পর আমরা বাউশগাড়ি বিল এলাকায় গিয়ে আশ্রয় নিয়েছিলাম। বাউশগাড়ি বিল থেকে ঐ ঝোপের দূরত্ব আনুমানিক আধা মাইলের একটু বেশী হবে। ভোর রাত্রীর ফজরের আযানের পর আমি ঘটনা দেখি এবং বিলে আশ্রয় নেয়া লোকদের নিকট থেকে জানতে পারি যে, আমি ঘটনা দেখার আগে থেকেই ঘটনা শুরু হয়েছিল। আমি যখন বিলে উপস্থিত হই তখন সেই বিলে আনুমানিক আড়াই থেকে তিন হাজার লোক আশ্রয় নিয়েছিল। শামছুল হক নান্নুকে ঐ বাউশগাড়ি গ্রামে বা বিলে দেখেছিলাম কিনা তাহা আমার স্মরন নাই।
১৯৭১ সালের ১৩ই মে তারিখে আমি শুনেছিলাম যে, পিস কমিটি আলবদর ও রাজাকার বাহিনী গঠন করার জন্য পাকিস্তান আর্মি আসার কথা ছিল কিন্তু পরবর্তীতে এ উদ্দেশ্যে তারা এসেছিল কিনা তাহা আমার জানা নাই। মতিউর রহমান নিজামী সাহেবকে আমি চিনতাম তবে তিনি আমাকে চিনতেন কিনা তাহা আমি জানি না। সম্ভবত ১৯৭৯ সালের নির্বাচনে এবং পরবর্তীতেও মতিউর রহমান নিজামী সাহেবের সঙ্গে আমার কথাবার্তা হয়েছে। ১৯৭১ সালে বা তার পূর্বে মতিউর রহমান নিজামী সাহেবের সঙ্গে আমার কথাবার্তা হয় নাই, তবে তাকে আমি দেখেছি।
ঘাড়িয়া গ্রামে আমি ছাড়া জহুরুল হক নামে অন্য কোন মুক্তিযোদ্ধা নেই। মতিউর রহমান নিজামী সাহেবের বিরুদ্ধে ১৯৭১ সালের সংঘটিত অপরাধের বিষয়ে ২০১০ সালে থেকে তদন্ত হচ্ছিল তাহা আমি শুনেছি। এই মামলার তদন্তকারী কর্মকর্তা এই মামলার তদন্তের সহায়তার জন্য সাথিয়া থানা মুক্তিযোদ্ধা সংসদকে চিঠি দিয়েছিলেন কিনা তাহা আমার জানা নাই। আমি ২০০৯ সাল থেকে সাথিয়া উপজেলা মুক্তিযোদ্ধা কমান্ড এর ভারপ্রাপ্ত কমান্ডার হিসাবে দায়িত্ব পালন করছি। ১৭ই মে ২০১৩ তারিখের আগে তদন্তকারী কর্মকর্তা আব্দুর রাজ্জাক সাহেবের সঙ্গে আমার দেখা হয় নাই। আমি ২৮-১২-২০১০ইং তারিখে আমার সাক্ষরে সাথিয়া থানার আলবদর, আলশামস ও রাজাকার বাহিনীর পূর্ণ তালিকা তদন্ত সংস্থাকে সরবরাহ করা হয়েছিল। ঐ তালিকায় আমাদের হাড়িয়া গ্রামের কোন রাজাকার আলবদর ও আলশামসদের নাম নাই। ঐ তালিকায় মফিজ উদ্দিন মোল্লা নামে সাথিয়ার কোন স্বাধীনতা বিরোধী লোকের নাম নাই। আমি যে তালিকা সরবরাহ করেছিলাম তাহার ২ এবং ৩ নং নাম্বারে যথাক্রমে মওলানা সোবহান এবং মওলানা ইসহাকের নাম আছে। এই দুইজনের বাড়ি পাবনা থানাতে অবস্থিত, সাথিয়া থানায় নয়, আমি পূর্ববর্তী কমান্ডারের রেখে যাওয়া তথ্য অনুযায়ী এই তালিকা সরবরাহ করেছি। ২০০৯ সালের পূর্বের সাথিয়া থানার মুক্তিযোদ্ধা কমান্ড এর যে কমিটি ছিল আমি তার সদস্য ছিলাম না। আমার সরবরাহকৃত সাথিয়া থানার রাজাকার আলবদর ও আলশামসদের তালিকাটি কোন তারিখে তৈরি হয় তাহা আমার স্মরন নাই। যে তালিকাটি আমি সরবরাহ করেছি সেটি আমি নিজে যাচাই করি নাই, আমি অফিসে সংরক্ষিত রেকর্ড দেখে তালিকা প্রেরন করেছি। ইতিপুর্বেও আমি মুক্তিযোদ্ধা সংসদ সাথিয়া থানার সদস্য ছিলাম তবে সময়কাল স্মরন নাই।
১৯৭১ সালে মুক্তিযুদ্ধের ট্রেনিং নেওয়ার সময় ভারতে যাওয়া ছাড়া অন্য কোন দেশে এ পর্যন্ত যাই নাই। ১৯৭১ সালের ১৩ই মে এর পূর্বেও আমি স্বাধীনতা বিরোধী তৎপরতা সম্পর্কে অবহিত ছিলাম। ১৯৭১ সালে সাথিয়া স্বাধীনতা সংগ্রাম পরিষদের আমি অহবায়ক ছিলাম। ১৯৭১ সালে সাথিয়া থানা আওয়ামী লীগের সভাপতি ছিলেন সম্ভবত আব্দুল জব্বার এবং সেক্রেটারী ছিলেন আবুল কাশেম সরদার। স্বাধীনতা যুদ্ধ শুরু হওয়ার আগে পর্যন্ত সাথিয়া থানায় স্বাধীনতার পক্ষে ছাত্রদের মধ্যে কে নেতৃত্ব দিতেন তাহা আমার স্মরন নাই। আমার বাড়ি ছিল নাগডেমরা ইউনিয়নে। ১৯৭১ সালে ঐ ইউনিয়নের চেয়ারম্যান ছিলেন ফায়েজ উদ্দিন আহমেদ, তিনি পরবর্তীতে পিস কমিটির চেয়ারম্যান ছিলেন, তিনি মুসলিম লীগ করতেন। আমাদের গ্রামের হালিমুর জামান বাচ্চু, মোঃ সেলিম সহ আরো অনেকে ১৯৭১ সালে কলেজে লেখাপড়া করতো। মোতাহার হোসেন, রহিজ উদ্দিন, আলতাফ হোসেন, আব্দুল মান্নান প্রমুখ সংগ্রাম পরিষদের সদস্য ছিল। এরা সকলেই জীবিত আছেন। বেড়া থানার বিভিন্ন এলাকাতেও আমি মুক্তিযুদ্ধে অংশ নিয়েছি। ১৯৭১ সালের ৭ই মার্চ থেকে ২৫শে মার্চ পর্যন্ত সাথিয়া পাইলট স্কুলের ফুটবল খেলার মাঠে মুক্তিযুদ্ধের ট্রেনিং দেওয়া হতো এটা আমি শুনেছি। কে ট্রেনিং দিত তার নাম মনে নাই। ২৫শে মার্চের আগে আমরা বাউশগাড়ি গ্রামে নাগডেমরা এবং ধূলাউড়ির কিছু ছেলেদেরকে নিয়ে মুক্তিযুদ্ধের প্রস্তুতি নেই। ঐ সময় থানার ওসির সাথে আমাদের কোন যোগাযোগ ছিল না। সাথিয়া থানা থেকে মুক্তিযুদ্ধের প্রস্তুতির জন্য অস্ত্র সংগ্রহ করা হয়েছিল কিনা তাহা আমার জানা নাই। ১৯৭১ সালের জুলাই মাসের পূর্বে আমি কোন এলাকায়ই সম্মুখ যুদ্ধে অংশ নেই নাই। ১৯৭১ সালের ২৫শে মার্চ থেকে ১১ই এপ্রিল পর্যন্ত আমি সাথিয়া থানা এলাকাতেই ছিলাম। এই সময়েকালের মধ্যে সাথিয়া এলাকায় পাকিস্তান আর্মিদের দেখেছিলাম কিনা তাহা আমার মনে পড়ে না। এই সময়ের মধ্যে নিজামী সাহেব ও অধ্যাপক আবু সাঈদ সাহেবদেরকে দেখেছিলাম কিনা তাহাও আমারা স্মরন নাই। আমার জানা নাই যে, ১৯৭১ সালের ২৭শে মার্চ তারিখে পাবনা শহরে উল্লেখযোগ্য কোন ঘটনা সংঘটিত হয়েছিল কিনা। ২৫শে মার্চ ১৯৭১ সালের পূর্বে পাবনাতে আর্মিরা কোথায় থাকতো তাহা আমার জানা নাই। মুক্তিযুদ্ধ শুরুর পর ১৯৭১ সালের ১৯শে এপ্রিল আমি সর্বপ্রথম পাকিস্তান আর্মিদের দেখেছিলাম। ঐদিনই পাক আর্মিরা সর্বপ্রথম কাশিনাথপুর হয়ে পাবনা এবং ডাববাগান হয়ে বগুড়া যাওয়ার চেষ্টা করেছিল কিনা তাহা আমার জানা নাই। আমার বাড়ি থেকে ডাববাগানের দূরত্ব ৭/৮ মাইল।
পূনরায় জেরা ঃ
১৯৭১ সালের ২০শে এপ্রিল আমি কোথায় ছিলাম তাহা আমার স্মরন নাই। মালঞ্চ ভারতের কোন জেলায় তাহা আমি বলতে পারব না। আবু সাঈদ সাহেবকে আমি মালঞ্চ ক্যাম্পে দেখি নাই। দেরাদুন ভারতের কোন প্রদেশে তাহা এই মূহুর্তে আমার স্মরন নাই। মালঞ্চ ক্যাম্প থেকে দেরাদুন যেতে একদিনের মতো সময় লেগেছে। ১৯৭১ সালে নগরবাড়ী ঘাটে পাকিস্তান আর্মিদের ক্যাম্প ছিল তবে মূল ক্যাম্প ছিল পাবনা সার্কিট হাউজে। ১৯৭১ সালে পাবনা সার্কিট হাউজে আর্মিদের দায়িত্বে কে ছিলেন তাহা আমি বলতে পারব না। পাবনা শহরে আর অন্য স্থানে আর্মিদের ক্যাম্প ছিল কিনা তাহা আমি জানি না। পাবনা রাজাকার বাহিনীর কমান্ডার ঘেটু রাজাকারের নাম আমি শুনি নাই। পাবনা জেলা শান্তি কমিটির সভাপতি কে ছিলেন তাহা এ মূহুর্তে আমার স্মরন নাই। সাথিয়া থানার শান্তি কমিটির চেয়ারম্যান ছিলেন আফছার উদ্দিন। তার বাড়ি ছিল সাথিয়া থানাধীন গোপিনাথপুর গ্রামে তবে তার অফিস কোথায় ছিল তাহা আমি জানি না। তিনি কোন দল করতেন তাহা আমি বলতে পারব না। সাথিয়া থানার রাজাকারের কমান্ডার ছিলেন সাত্তার, তবে তিনি কিসের ক্যাপ্টেন ছিলেন তাহা জানি না। তাকে ১৯৭১ সালের আগেও আমি দেখেছিলাম। ১৯৭১ সালের পূর্বে তার পেশা কি ছিল তাহা আমি জানি না। একই ক্যাম্পে আলবদর ও রাজাকার বাহিনী ছিল। আলবদর ও রাজাকারদের সম্পর্কে আমাদের কোন ধারনা ছিল না, ধৃত করার পর তারা কেউ আলবদর ও কেউ রাজাকার বলে পরিচয় দিত। আমার গ্রুপের উপস্থিতিতে ভিটাপাড়া থেকে পাঁচজন এবং সোলাবাড়িয়া থেকে ৪/৫ জন রাজাকার আলবদরকে ধৃত করেছিলাম। তাদের নাম বা ঠিকানা আমার স্মরন নাই। সোলাবাড়িয়ার ঘটনাটি কোন মাসে ঘটেছিল তাহা আমার মনে নাই। সোলাবাড়িয়ায় রাজাকার ও আলবদররা যখন ব্রীজ পাহারা দিচ্ছিল তখন ব্রীজের উত্তর দিক থেকে আক্রমণ করে তাদের ধৃত করা হয়েছিল। তাদেরকে ঐ ধৃত করার স্থান থেকে গ্রামে নিরাপদ স্থানে এনে জিজ্ঞাসাবাদ করে ছেড়ে দেই। তাদের কাছ থেকে রাইফেল উদ্ধার করি। সোলাবাড়িয়া ও ভিটাপাড়া দুইটি ঘটনার মধ্যে ভিটাপাড়ার অপারেশনটি আগে হয়েছিল। ভিটাপাড়া ব্রীজটি ওয়াপদার পানি নিষ্কাশন খালের উপর অবস্থিত। সোলাবাড়িয়া ব্রীজটি নগরবাড়ি পাবনা রাস্তার উপর নীচু জলাভূমির পানি নিষ্কাশনের জন্য। ১৯৭১ সালে পাবনা বেড়া/সাথিয়া অঞ্চলে অধিকাংশ সময় আমরা নৌকায় চলাফেরা করতাম। ভিটাপাড়া ব্রীজটি কোনাকোনি উত্তর-দক্ষিণে লম্বা। ভিটাপাড়া গ্রামটি ছিল ব্রীজের পূর্ব দিকে এবং পশ্চিম দক্ষিণে একটু দূরে সরিষা গ্রাম ছিল। সোলাবাড়িয়া ব্রীজ আক্রমনের সময় ও আমরা ব্রীজের উভয় পাশ থেকে রাস্তা হেটে এবং জলাভূমি দিয়ে নৌকায় এসেছিলাম। এই ধৃত রাজাকারদের সঙ্গে পরবর্তীতে আর কোন দিন দেখা হয় নাই। এই দুইটি ব্রীজ ব্যতিত অন্য কোন ব্রীজ আমাদের গ্রুপ থেকে অপারেশন করা হয় নাই। মুক্তিযোদ্ধা জামাল উদ্দিনের সাথে আমার ভিটাপাড়া এবং সোলাবাড়িয়া উভয় ব্রীজ অপারেশনের সময় আমার সাথে দেখা হয়েছিল তিনি ভিন্ন গ্রুপে ছিলেন। বেলকুচি থানার মালীপাড়া এলাকায় আমরা আগষ্ট মাসের মাঝামাঝি সময়ে বা শেষের দিকে ভারত থেকে আসার পরে গিয়েছিলাম। ভারত থেকে আসার পরে আর্মিদেরকে বিভিন্ন অপারেশন করার পূর্বে দুইজন আর্মি নিহত হয়।
১৯৭১ সালের মে মাসের ১৭ তারিখে আমি আমাদের গ্রামে ছিলাম এবং ভারতে যাওয়ার জন্য লোকজনদের সংঘটিত করেছিলাম। মে মাসের ১৭ তারিখে বাউশগাড়ি ও ডেমরায় পাকিস্তান আর্মিরা পূনরায় আক্রমণ করেছিল কিনা এই মর্মে আমার কিছু জানা নাই। ডেমরা ফরিদপুর থানার অন্তর্গত। ডেমড়ার এককালীন ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান মলয় কুমার কুন্ডকে আমি চিনিনা। টেলিফোন বিভাগের বিভাগীয় ইঞ্জিনিয়ার বিকাশ কুমার দত্তকে আমি চিনিনা। মুক্তিযোদ্ধা জহুরুল ইসলাম বিশুর বাড়ি পাবনা তাকে আমি চিনি। পাবনার মুক্তিযুদ্ধের ঘটনা নিয়ে অনেকে প্রবন্ধ, নাটক এবং বই পুস্তক লিখেছে তাহা আমি শুনেছি।
১৯৭১ সালের আগে থেকেই তোফাজ্জল হোসেন মাষ্টারকে আমি চিনি। তিনি আমাকে বলেছিলেন যে, সাথিয়া পাইলট স্কুলে রাজাকার ক্যাম্প উদ্বোধনের সময় তিনি সেখানে উপস্থিত ছিলেন। মওলানা ইছহাক সাহেবকে আমি চিনতাম, তিনি কোন দল করতেন তাহা আমি বলতে পারব না। আমি ভারতে যাওয়ার আগ পর্যন্ত সাথিয়া পাইলট স্কুল খোলা ছিল কিনা বা কাশ হতো কিনা তাহা আমি বলতে পারব না। স্বাধীনতা যুদ্ধ চলাকালীন সময়ে সাথিয়া পাইলট স্কুল মাঠে আমি কোন দিন যাই নাই, যেহেতু সেখানে রাজাকার, আলবদর ক্যাম্প ছিল। ১৯৭১ সালের ডিসেম্বর মাসের প্রথম দিকে পাকিস্তান আর্মি, রাজাকার ও আলবদরদের সঙ্গে মুক্তিবাহিনীর যুদ্ধের পর পাক বাহিনী, রাজাকার ও আলবদর পালিয়ে যায়। ৯ই ডিসেম্বর সাথিয়া থানা শত্রুমুক্ত হয়। এই যুদ্ধে আমি এবং আমার বাহিনী অংশগ্রহন করেছিলাম। এই যুদ্ধটি ৯ই ডিসেম্বর পর্যন্ত স্থায়ী হয়েছিল পাকিস্তান আর্মি, রাজাকার ও আলবদররা সেখানে ফেরত আসার জন্য চেষ্টা করেছিল তবে তাদের ফেরত আসা সম্ভব হয় নাই। ফিরতি আক্রমণ করার সময় পাকিস্তান আর্মি, রাজাকার ও আলবদররা পাবনা থেকে মাধপুর, কোনাবাড়িয়া ও নন্দনপুর ব্রীজ পর্যন্ত এসেছিল এবং মুক্তিযোদ্ধাদের প্রচন্ড বাধার মুখে তারা ফিরে যায়। সাথিয়া থানা থেকে মাধপুর পশ্চিম দক্ষিণ কোণে আনুমানিক ১২ কি.মি দূরে। সাথিয়া থেকে এক/দেড় কিলোমিটার পশ্চিমে কোনাবাড়িয়া অবস্থিত। সাথিয়া থেকে আনুমানিক ৪ কি:মি: পশ্চিমে নন্দনপুর ব্রীজ অবস্থিত।
বাউশগাড়ি বিল থেকে বিলে অবস্থানকালীন সময়ে বাউশগাড়ি ও ডেমরা গ্রামে গুলির শব্দ শুনতে পেয়েছি। এই গোলাগুলি সূর্য উঠার পর পরই বন্ধ হয়ে যায়। গোলাগুলি বন্ধ হওয়ার পরে যখন আমরা নিশ্চিত হলাম পাকিস্তান আর্মি ও তাদের সহযোগীরা চলে গেছে তখন আমরা বাউশগাড়ী ও ডেমড়া গ্রামে ফিরে আসি।
দুপুর আনুমানিক ১২.০০/১.০০ টার দিকে গোলাগুলি বন্ধ হওয়ার পর বাউশগাড়ি ও ডেমরা গ্রামে ফিরত আসার আগ পর্যন্ত পাকিস্তান আর্মিদের কোন তৎপরতা আমার নজরে পড়ে নাই। ঐ দিন বিল থেকে ফেরত আসার পর আয়নাল মাষ্টারের সাথে ঐ দিন গ্রামে আমার দেখা হয় নাই। বাউশগাড়ি বিলে যাওয়ার আগে ঐ ঘটনায় কেউ নিহত হয়েছিল কিনা তাহা আমার জানা নাই। বাউশগাড়ি থেকে পাবনাগামী রাস্তার পশ্চিম পাশে একটি মসজিদ ছিল। রূপসী প্রাইমারী স্কুলটি রূপসী গ্রামেই অবস্থিত, বাউশগাড়ি গ্রামে নয়।
মতিউর রহমান নিজামী সাহেব ১৯৭১ সাল সহ সব সময়ই বেসামরিক ব্যক্তি। মতিউর রহমান নিজামী সাহেব ইসলামী ছাত্রসংঘের সভাপতি ছিলেন এটা আমি আয়নাল হক সাহেবের কাছ থেকে জেনেছি তা নয়, আমি আগে থেকেই জানতাম। ১৯৭১ সালে ইসলামী ছাত্র সংঘ ছাড়া অন্য কোন ছাত্র সংগঠনের সভাপতি ও সেক্রেটারীর নাম আমি বলতে পারব না। ১৯৭০ বা ১৯৭১ সালে ইসলামী ছাত্রসংঘের সেক্রেটারী কে ছিল তাহা আমি এ মূহুর্তে মনে করতে পারছিনা। মতিউর রহমান নিজামী সাহেব কোন তারিখ পর্যন্ত ইসলামী ছাত্র সংঘের সভাপতি ছিলেন তাহা আমি বলতে পারবনা। সামরিক সংগঠন বলতে সামরিক বাহিনীতে যারা ভর্তি হয় তাদেরকে বুঝায়। যারা অস্ত্র বহন করে তারা সকলেই সামরিক সংগঠনের লোক নহে।
১৯৭১ সালে মাতিউর রহমান নিজামী সাহেব পাবনা সাথিয়াসহ বাংলাদেশের বিভিন্ন জায়গায় থাকতেন তবে স্থায়ীভাবে কোথায় থাকতেন তাহা আমি জানিনা।
মতিউর রহমান নিজামী সাহেব বাংলাদেশের একজন পরিচিত ব্যক্তি।
মতিউর রহমান নিজামী সাহেবের পরিকল্পনায় এবং প্রত্যক্ষ মদদে নারী ধর্ষনের কথা শোনা যায় এরূপ বক্তব্য আমি তদন্তকারী কর্মকর্তার নিকট দেই নাই, ইহা সত্য নহে।
ধৃত রাজাকার ও আলবদরদের নিকট শুনেছি যে, মতিউর রহমান নিজামী সাহেব পাবনায় বসে পাক আর্মিদের সাথে পরিকল্পনা করতো।
১৯৭১ সালের ১৪ই মে বাউশগাড়ি গ্রামে আব্দুর জব্বার সাহেবের বাড়িতে আমি ছিলাম না, ইহা সত্য নহে। ১৯৭১ সালের ১৪ই মে বাউশগাড়ি গ্রামে আব্দুর জব্বার নামে কেউ শহীদ হন নাই, ইহা সত্য নহে।
আমি একজন নব্য আওয়ামী লীগার হওয়ার কারণে অতি উৎসাহী হয়ে অন্যান্য আওয়ামী লীডারদের পরামর্শে মতিউর রহমান নিজামী সাহেবের বিরুদ্ধে অসত্য সাক্ষ্য দিলাম, ইহা সত্য নহে। (জেরা সমাপ্ত)
মাওলানা নিজামীর বিরুদ্ধে ১৮ তম সাক্ষী জহুরুল হকের জবানবন্দী গ্রহণ করা হয় গত ২৯ আগস্ট। আজ তার জেরা সম্পন্ন হয়।
জেরা করেন মাওলানা নিজামীর পক্ষে আইনজীবী মিজানুল ইসলাম। জেরায় সাক্ষী যা বলেন তা নিম্নরূপ :
রাজনারায়নপুর অবৈতনিক প্রাথমিক বিদ্যালয়টি বর্তমানে রাজনরায়নপুরে সরকারী প্রাথমিক বিদ্যালয় এবং রাজনারায়নপুরে ঐ একটিমাত্র স্কুলই আছে।
আমার পিতার একটি মাত্র বোন আছে, তার কোন ভাই নাই। ১৯৭১ সালে আমার ফুফু ছেচানিয়াতে স্বামীর বাড়িতে থাকতেন। আমার এই ফুফুর কোন সন্তান, আমার কোন খালাতো ভাই ১৯৭১ সালে রুপসী, বাউশগাড়ি বা ডেমরা গ্রামে থাকতেন না।
আমি প্রাথমিক লেখাপড়া আমার গ্রামের হাড়িয়া প্রাথমিক বিদ্যালয়ে করেছি। আমি ১৯৬২ সালে বেড়া বিপিন বিহারী হাইস্কুল থেকে মেট্রিকুলেশন পাশ করেছি। আমি বি.এ পাশ করেছি। আমি ১৯৬২ সালের অক্টোবর মাসে শিক্ষকতা পেশায় যোগদান করি। আমি ছাত্রজীবনে কোন ছাত্র রাজনীতির সঙ্গে জড়িত ছিলাম না। ১৯৭০ সালে আমি কোন রাজনৈতিক দলের সদস্য ছিলাম না। পরবর্তীতে আমি কোন রাজনৈতিক দলে যোগদান করি নাই, তবে পরবর্তীতে শিক্ষকতা থেকে অবসর গ্রহনের পর বাংলাদেশ আওয়ামী লীগে যোগদান করি এবং এখন পর্যন্ত সেই দলেই আছি। ১৯৭০ সালে পাবনার রাজনীতি সম্পর্কে আমার পরিচ্ছন্ন ধারনা ছিল না। ১৯৭০ সালে নির্বাচনে আমি সহকারী পোলিং অফিসার হিসাবে কাজ করেছি। ১৯৭০ সালের এম,এন,এ নির্বাচনে সাথিয়া ও বেড়া থানার তিনটি ইউনিয়ন নিয়ে একটি নির্বাচনী এলাকা ছিল। ঐ নির্বাচনে এম,এন,এ প্রার্থী হিসাবে অধ্যাপক আবু সাঈদ সাহেব এবং এ্যাডভোকেট আনোয়ারুল হক সাহেব প্রতিদ্বন্দিতা করেছিলেন তবে মির্জা আব্দুর রশিদ সাহেব ঐ নির্বাচনে এম,এন,এ প্রার্থী ছিলেন কিনা তাহা আমার স্মরন নাই। রাজনারায়নপুর অধ্যাপক আবু সাঈদ সাহেবের নির্বাচনি এলাকার অন্তর্ভুক্ত ছিল না। আমি সাথিয়া থানার মেহেদীনগর সেন্টারে সহকারী পোলিং অফিসার হিসাবে কাজ করেছি। আমার এলাকার প্রাদেশিক পরিষদের আসন কোন কোন থানা বা ইউনিয়ন নিয়ে গঠিত ছিল তা এই মূহুর্তে স্মরন নাই। আমার এলাকার প্রাদেশিক পরিষদের আসন থেকে ১৯৭০ এর নির্বাচনে আওয়ামী লীগ প্রার্থী জনাব আহমেদ রফিক সাহেব নির্বাচিত হয়েছিলেন তবে তার প্রতিদ্বন্দি মাওলানা নিজাম উদ্দিন ছিলেন কিনা তাহা আমার স্মরন নাই। ১৯৭৩ সালের আমাদের এলাকায় জাতীয় সংসদের সদস্য হিসাবে অধ্যাপক আবু সাঈদ সাহেব নির্বাচিত হয়েছিলেন। তার প্রতিদ্বন্দ্বী হিসাবে মাওলানা নিজাম উদ্দিন সাহেব ছিলেন কিনা তাহা আমার স্মরন নাই। ১৯৭৯ সালের জাতীয় সংসদ নির্বাচনে আমাদের এলাকা থেকে কে নির্বাচিত হয়েছিলেন তা আমার স্মরনে আসছে না, তবে সম্ভবত মতিউর রহমান নিজামী সাহেব নির্বাচিত হয়েছিলেন। ১৯৭৯ সালের নির্বাচনে জাসদের প্রার্থী হিসাবে মাওলানা নিজাম উদ্দিন সাহেব নির্বাচন করেছিলেন কিনা তাহা আমার জানা নাই। মাওলানা নিজাম উদ্দিন নামে কোন রাজনৈতিক নেতাকে আমি চিনি না এবং তার নামও শুনি নাই। আহমেদ রফিক সাহেবের সাথে আমার ব্যক্তিগত কোন পরিচয় ছিল না। আহমেদ রফিক সাহেবের বাড়ি সাথিয়া থানায়, তবে তিনি পাবনা শহরে থাকতেন। আহমেদ রফিকের ভাই মুক্তিযোদ্ধা আহমেদ শফিককে আমি চিনি না। আহমেদ রফিক সাহেব স্বাধীনতার পূর্বেই মারা গিয়েছিলেন কিনা তাহা আমার স্মরন নাই। ১৯৭০ এর নির্বাচনের পরপরই পাবনা এলাকার কোন এম,এন,এ বা এম,পি,এ নকশালদের আক্রমনে নিহত হয়েছিলেন কিনা তাহা আমার জানা নাই। ১৯৭০ সালের নির্বাচনের পর ডিসেম্বর মাসে একটি জনসভায় বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান পাবনায় গিয়েছিলেন তবে আমি সেখানে গিয়েছিলাম কিনা তাহা আমার স্মরন নাই। বঙ্গবন্ধুর ঐ জনসভাটি কি উদ্দেশ্যে হয়েছিল তাহা আমার জানা নাই।
১৯৭১ সালে অসহযোগ আন্দোলন শুরু হলে আমার স্কুল বন্ধ হয়ে যায়। ১৯৭১ সালের ৭ই মার্চের পরে আমি আমার গ্রাম হাড়িয়াতে অবস্থান করতাম তবে মাঝে মাঝে সাথিয়ায় যেতাম। ১৯৭১ সালে সাথিয়া সদর একটি অনুন্নত এলাকা ছিল। ১৯৭১ সালের আগে থেকেই রুপসী, বাউশগাড়ি ও ডেমরা এই তিনটি গ্রামে আমার যাতায়াত ছিল। পাবনাগামী রাস্তার একদিকে ডেমরা গ্রাম ও অন্য দিকে বাউশগাড়ি গ্রামের কিছু অংশ। বাউশগাড়ি গ্রামের দক্ষিন দিকে লাগানো রুপসী গ্রাম। বাউশগাড়ি পাগাড় আমি দেখেছি। এটা পাবনাগামী সড়কের পাশেই অবস্থিত। ডেমরা গ্রামের বলরাম এবং জিতেন্দ্রনাথসহ আরো অনেককে আমি চিনতাম। রুপসী গ্রামে আমার দু:সম্পর্কের চাচা আব্দুর জব্বার, ইসমাইলদেরকে আমি চিনতাম। বাউশগাড়ি গ্রামের আব্দুর জব্বার নামে একজনকে আমি চিনতাম, তার পিতার নাম আমার স্মরন নাই। এই আব্দুর জব্বারের ছেলেমেয়ের নামও আমি বলতে পারবনা। আমি যে ঘরে ছিলাম সেই ঘর থেকে আমি যে ঝোপের আড়ালে লুকিয়ে ছিলাম সেই ঝোপের দূরত্ব ৮/১০ ফুট। ঝোপটি পাবনাগামী রাস্তার পাশেই অবস্থিত। ১৯৭১ সালের ১৪ই মে ডেমড়া, বাউশগাড়ি ও রুপসী গ্রাম আক্রমনকারীরা পাবনাগামী সড়কের উত্তর দিক থেকে এসেছিল। আক্রমনকারীরা কোন যানবাহনে চড়ে আসে নাই। ঐ পাবনাগামী সড়কটি ডেমরা থেকে আতাইকুলা পর্যন্ত কাচা রাস্তা ছিল। পাবনাগামী সড়কের পাশেই রুপসী গ্রাম ছিল। ঝোপের আড়ালে আশ্রয় নেওয়ার পর আক্রমনকারীদের কোন গুলির আওয়াজ আমি শুনতে পাই নাই। ঐ ঝোপের আড়াল থেকে নিজামী সাহেবদেরকে দেখার পর আমরা বাউশগাড়ি বিল এলাকায় গিয়ে আশ্রয় নিয়েছিলাম। বাউশগাড়ি বিল থেকে ঐ ঝোপের দূরত্ব আনুমানিক আধা মাইলের একটু বেশী হবে। ভোর রাত্রীর ফজরের আযানের পর আমি ঘটনা দেখি এবং বিলে আশ্রয় নেয়া লোকদের নিকট থেকে জানতে পারি যে, আমি ঘটনা দেখার আগে থেকেই ঘটনা শুরু হয়েছিল। আমি যখন বিলে উপস্থিত হই তখন সেই বিলে আনুমানিক আড়াই থেকে তিন হাজার লোক আশ্রয় নিয়েছিল। শামছুল হক নান্নুকে ঐ বাউশগাড়ি গ্রামে বা বিলে দেখেছিলাম কিনা তাহা আমার স্মরন নাই।
১৯৭১ সালের ১৩ই মে তারিখে আমি শুনেছিলাম যে, পিস কমিটি আলবদর ও রাজাকার বাহিনী গঠন করার জন্য পাকিস্তান আর্মি আসার কথা ছিল কিন্তু পরবর্তীতে এ উদ্দেশ্যে তারা এসেছিল কিনা তাহা আমার জানা নাই। মতিউর রহমান নিজামী সাহেবকে আমি চিনতাম তবে তিনি আমাকে চিনতেন কিনা তাহা আমি জানি না। সম্ভবত ১৯৭৯ সালের নির্বাচনে এবং পরবর্তীতেও মতিউর রহমান নিজামী সাহেবের সঙ্গে আমার কথাবার্তা হয়েছে। ১৯৭১ সালে বা তার পূর্বে মতিউর রহমান নিজামী সাহেবের সঙ্গে আমার কথাবার্তা হয় নাই, তবে তাকে আমি দেখেছি।
ঘাড়িয়া গ্রামে আমি ছাড়া জহুরুল হক নামে অন্য কোন মুক্তিযোদ্ধা নেই। মতিউর রহমান নিজামী সাহেবের বিরুদ্ধে ১৯৭১ সালের সংঘটিত অপরাধের বিষয়ে ২০১০ সালে থেকে তদন্ত হচ্ছিল তাহা আমি শুনেছি। এই মামলার তদন্তকারী কর্মকর্তা এই মামলার তদন্তের সহায়তার জন্য সাথিয়া থানা মুক্তিযোদ্ধা সংসদকে চিঠি দিয়েছিলেন কিনা তাহা আমার জানা নাই। আমি ২০০৯ সাল থেকে সাথিয়া উপজেলা মুক্তিযোদ্ধা কমান্ড এর ভারপ্রাপ্ত কমান্ডার হিসাবে দায়িত্ব পালন করছি। ১৭ই মে ২০১৩ তারিখের আগে তদন্তকারী কর্মকর্তা আব্দুর রাজ্জাক সাহেবের সঙ্গে আমার দেখা হয় নাই। আমি ২৮-১২-২০১০ইং তারিখে আমার সাক্ষরে সাথিয়া থানার আলবদর, আলশামস ও রাজাকার বাহিনীর পূর্ণ তালিকা তদন্ত সংস্থাকে সরবরাহ করা হয়েছিল। ঐ তালিকায় আমাদের হাড়িয়া গ্রামের কোন রাজাকার আলবদর ও আলশামসদের নাম নাই। ঐ তালিকায় মফিজ উদ্দিন মোল্লা নামে সাথিয়ার কোন স্বাধীনতা বিরোধী লোকের নাম নাই। আমি যে তালিকা সরবরাহ করেছিলাম তাহার ২ এবং ৩ নং নাম্বারে যথাক্রমে মওলানা সোবহান এবং মওলানা ইসহাকের নাম আছে। এই দুইজনের বাড়ি পাবনা থানাতে অবস্থিত, সাথিয়া থানায় নয়, আমি পূর্ববর্তী কমান্ডারের রেখে যাওয়া তথ্য অনুযায়ী এই তালিকা সরবরাহ করেছি। ২০০৯ সালের পূর্বের সাথিয়া থানার মুক্তিযোদ্ধা কমান্ড এর যে কমিটি ছিল আমি তার সদস্য ছিলাম না। আমার সরবরাহকৃত সাথিয়া থানার রাজাকার আলবদর ও আলশামসদের তালিকাটি কোন তারিখে তৈরি হয় তাহা আমার স্মরন নাই। যে তালিকাটি আমি সরবরাহ করেছি সেটি আমি নিজে যাচাই করি নাই, আমি অফিসে সংরক্ষিত রেকর্ড দেখে তালিকা প্রেরন করেছি। ইতিপুর্বেও আমি মুক্তিযোদ্ধা সংসদ সাথিয়া থানার সদস্য ছিলাম তবে সময়কাল স্মরন নাই।
১৯৭১ সালে মুক্তিযুদ্ধের ট্রেনিং নেওয়ার সময় ভারতে যাওয়া ছাড়া অন্য কোন দেশে এ পর্যন্ত যাই নাই। ১৯৭১ সালের ১৩ই মে এর পূর্বেও আমি স্বাধীনতা বিরোধী তৎপরতা সম্পর্কে অবহিত ছিলাম। ১৯৭১ সালে সাথিয়া স্বাধীনতা সংগ্রাম পরিষদের আমি অহবায়ক ছিলাম। ১৯৭১ সালে সাথিয়া থানা আওয়ামী লীগের সভাপতি ছিলেন সম্ভবত আব্দুল জব্বার এবং সেক্রেটারী ছিলেন আবুল কাশেম সরদার। স্বাধীনতা যুদ্ধ শুরু হওয়ার আগে পর্যন্ত সাথিয়া থানায় স্বাধীনতার পক্ষে ছাত্রদের মধ্যে কে নেতৃত্ব দিতেন তাহা আমার স্মরন নাই। আমার বাড়ি ছিল নাগডেমরা ইউনিয়নে। ১৯৭১ সালে ঐ ইউনিয়নের চেয়ারম্যান ছিলেন ফায়েজ উদ্দিন আহমেদ, তিনি পরবর্তীতে পিস কমিটির চেয়ারম্যান ছিলেন, তিনি মুসলিম লীগ করতেন। আমাদের গ্রামের হালিমুর জামান বাচ্চু, মোঃ সেলিম সহ আরো অনেকে ১৯৭১ সালে কলেজে লেখাপড়া করতো। মোতাহার হোসেন, রহিজ উদ্দিন, আলতাফ হোসেন, আব্দুল মান্নান প্রমুখ সংগ্রাম পরিষদের সদস্য ছিল। এরা সকলেই জীবিত আছেন। বেড়া থানার বিভিন্ন এলাকাতেও আমি মুক্তিযুদ্ধে অংশ নিয়েছি। ১৯৭১ সালের ৭ই মার্চ থেকে ২৫শে মার্চ পর্যন্ত সাথিয়া পাইলট স্কুলের ফুটবল খেলার মাঠে মুক্তিযুদ্ধের ট্রেনিং দেওয়া হতো এটা আমি শুনেছি। কে ট্রেনিং দিত তার নাম মনে নাই। ২৫শে মার্চের আগে আমরা বাউশগাড়ি গ্রামে নাগডেমরা এবং ধূলাউড়ির কিছু ছেলেদেরকে নিয়ে মুক্তিযুদ্ধের প্রস্তুতি নেই। ঐ সময় থানার ওসির সাথে আমাদের কোন যোগাযোগ ছিল না। সাথিয়া থানা থেকে মুক্তিযুদ্ধের প্রস্তুতির জন্য অস্ত্র সংগ্রহ করা হয়েছিল কিনা তাহা আমার জানা নাই। ১৯৭১ সালের জুলাই মাসের পূর্বে আমি কোন এলাকায়ই সম্মুখ যুদ্ধে অংশ নেই নাই। ১৯৭১ সালের ২৫শে মার্চ থেকে ১১ই এপ্রিল পর্যন্ত আমি সাথিয়া থানা এলাকাতেই ছিলাম। এই সময়েকালের মধ্যে সাথিয়া এলাকায় পাকিস্তান আর্মিদের দেখেছিলাম কিনা তাহা আমার মনে পড়ে না। এই সময়ের মধ্যে নিজামী সাহেব ও অধ্যাপক আবু সাঈদ সাহেবদেরকে দেখেছিলাম কিনা তাহাও আমারা স্মরন নাই। আমার জানা নাই যে, ১৯৭১ সালের ২৭শে মার্চ তারিখে পাবনা শহরে উল্লেখযোগ্য কোন ঘটনা সংঘটিত হয়েছিল কিনা। ২৫শে মার্চ ১৯৭১ সালের পূর্বে পাবনাতে আর্মিরা কোথায় থাকতো তাহা আমার জানা নাই। মুক্তিযুদ্ধ শুরুর পর ১৯৭১ সালের ১৯শে এপ্রিল আমি সর্বপ্রথম পাকিস্তান আর্মিদের দেখেছিলাম। ঐদিনই পাক আর্মিরা সর্বপ্রথম কাশিনাথপুর হয়ে পাবনা এবং ডাববাগান হয়ে বগুড়া যাওয়ার চেষ্টা করেছিল কিনা তাহা আমার জানা নাই। আমার বাড়ি থেকে ডাববাগানের দূরত্ব ৭/৮ মাইল।
পূনরায় জেরা ঃ
১৯৭১ সালের ২০শে এপ্রিল আমি কোথায় ছিলাম তাহা আমার স্মরন নাই। মালঞ্চ ভারতের কোন জেলায় তাহা আমি বলতে পারব না। আবু সাঈদ সাহেবকে আমি মালঞ্চ ক্যাম্পে দেখি নাই। দেরাদুন ভারতের কোন প্রদেশে তাহা এই মূহুর্তে আমার স্মরন নাই। মালঞ্চ ক্যাম্প থেকে দেরাদুন যেতে একদিনের মতো সময় লেগেছে। ১৯৭১ সালে নগরবাড়ী ঘাটে পাকিস্তান আর্মিদের ক্যাম্প ছিল তবে মূল ক্যাম্প ছিল পাবনা সার্কিট হাউজে। ১৯৭১ সালে পাবনা সার্কিট হাউজে আর্মিদের দায়িত্বে কে ছিলেন তাহা আমি বলতে পারব না। পাবনা শহরে আর অন্য স্থানে আর্মিদের ক্যাম্প ছিল কিনা তাহা আমি জানি না। পাবনা রাজাকার বাহিনীর কমান্ডার ঘেটু রাজাকারের নাম আমি শুনি নাই। পাবনা জেলা শান্তি কমিটির সভাপতি কে ছিলেন তাহা এ মূহুর্তে আমার স্মরন নাই। সাথিয়া থানার শান্তি কমিটির চেয়ারম্যান ছিলেন আফছার উদ্দিন। তার বাড়ি ছিল সাথিয়া থানাধীন গোপিনাথপুর গ্রামে তবে তার অফিস কোথায় ছিল তাহা আমি জানি না। তিনি কোন দল করতেন তাহা আমি বলতে পারব না। সাথিয়া থানার রাজাকারের কমান্ডার ছিলেন সাত্তার, তবে তিনি কিসের ক্যাপ্টেন ছিলেন তাহা জানি না। তাকে ১৯৭১ সালের আগেও আমি দেখেছিলাম। ১৯৭১ সালের পূর্বে তার পেশা কি ছিল তাহা আমি জানি না। একই ক্যাম্পে আলবদর ও রাজাকার বাহিনী ছিল। আলবদর ও রাজাকারদের সম্পর্কে আমাদের কোন ধারনা ছিল না, ধৃত করার পর তারা কেউ আলবদর ও কেউ রাজাকার বলে পরিচয় দিত। আমার গ্রুপের উপস্থিতিতে ভিটাপাড়া থেকে পাঁচজন এবং সোলাবাড়িয়া থেকে ৪/৫ জন রাজাকার আলবদরকে ধৃত করেছিলাম। তাদের নাম বা ঠিকানা আমার স্মরন নাই। সোলাবাড়িয়ার ঘটনাটি কোন মাসে ঘটেছিল তাহা আমার মনে নাই। সোলাবাড়িয়ায় রাজাকার ও আলবদররা যখন ব্রীজ পাহারা দিচ্ছিল তখন ব্রীজের উত্তর দিক থেকে আক্রমণ করে তাদের ধৃত করা হয়েছিল। তাদেরকে ঐ ধৃত করার স্থান থেকে গ্রামে নিরাপদ স্থানে এনে জিজ্ঞাসাবাদ করে ছেড়ে দেই। তাদের কাছ থেকে রাইফেল উদ্ধার করি। সোলাবাড়িয়া ও ভিটাপাড়া দুইটি ঘটনার মধ্যে ভিটাপাড়ার অপারেশনটি আগে হয়েছিল। ভিটাপাড়া ব্রীজটি ওয়াপদার পানি নিষ্কাশন খালের উপর অবস্থিত। সোলাবাড়িয়া ব্রীজটি নগরবাড়ি পাবনা রাস্তার উপর নীচু জলাভূমির পানি নিষ্কাশনের জন্য। ১৯৭১ সালে পাবনা বেড়া/সাথিয়া অঞ্চলে অধিকাংশ সময় আমরা নৌকায় চলাফেরা করতাম। ভিটাপাড়া ব্রীজটি কোনাকোনি উত্তর-দক্ষিণে লম্বা। ভিটাপাড়া গ্রামটি ছিল ব্রীজের পূর্ব দিকে এবং পশ্চিম দক্ষিণে একটু দূরে সরিষা গ্রাম ছিল। সোলাবাড়িয়া ব্রীজ আক্রমনের সময় ও আমরা ব্রীজের উভয় পাশ থেকে রাস্তা হেটে এবং জলাভূমি দিয়ে নৌকায় এসেছিলাম। এই ধৃত রাজাকারদের সঙ্গে পরবর্তীতে আর কোন দিন দেখা হয় নাই। এই দুইটি ব্রীজ ব্যতিত অন্য কোন ব্রীজ আমাদের গ্রুপ থেকে অপারেশন করা হয় নাই। মুক্তিযোদ্ধা জামাল উদ্দিনের সাথে আমার ভিটাপাড়া এবং সোলাবাড়িয়া উভয় ব্রীজ অপারেশনের সময় আমার সাথে দেখা হয়েছিল তিনি ভিন্ন গ্রুপে ছিলেন। বেলকুচি থানার মালীপাড়া এলাকায় আমরা আগষ্ট মাসের মাঝামাঝি সময়ে বা শেষের দিকে ভারত থেকে আসার পরে গিয়েছিলাম। ভারত থেকে আসার পরে আর্মিদেরকে বিভিন্ন অপারেশন করার পূর্বে দুইজন আর্মি নিহত হয়।
১৯৭১ সালের মে মাসের ১৭ তারিখে আমি আমাদের গ্রামে ছিলাম এবং ভারতে যাওয়ার জন্য লোকজনদের সংঘটিত করেছিলাম। মে মাসের ১৭ তারিখে বাউশগাড়ি ও ডেমরায় পাকিস্তান আর্মিরা পূনরায় আক্রমণ করেছিল কিনা এই মর্মে আমার কিছু জানা নাই। ডেমরা ফরিদপুর থানার অন্তর্গত। ডেমড়ার এককালীন ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান মলয় কুমার কুন্ডকে আমি চিনিনা। টেলিফোন বিভাগের বিভাগীয় ইঞ্জিনিয়ার বিকাশ কুমার দত্তকে আমি চিনিনা। মুক্তিযোদ্ধা জহুরুল ইসলাম বিশুর বাড়ি পাবনা তাকে আমি চিনি। পাবনার মুক্তিযুদ্ধের ঘটনা নিয়ে অনেকে প্রবন্ধ, নাটক এবং বই পুস্তক লিখেছে তাহা আমি শুনেছি।
১৯৭১ সালের আগে থেকেই তোফাজ্জল হোসেন মাষ্টারকে আমি চিনি। তিনি আমাকে বলেছিলেন যে, সাথিয়া পাইলট স্কুলে রাজাকার ক্যাম্প উদ্বোধনের সময় তিনি সেখানে উপস্থিত ছিলেন। মওলানা ইছহাক সাহেবকে আমি চিনতাম, তিনি কোন দল করতেন তাহা আমি বলতে পারব না। আমি ভারতে যাওয়ার আগ পর্যন্ত সাথিয়া পাইলট স্কুল খোলা ছিল কিনা বা কাশ হতো কিনা তাহা আমি বলতে পারব না। স্বাধীনতা যুদ্ধ চলাকালীন সময়ে সাথিয়া পাইলট স্কুল মাঠে আমি কোন দিন যাই নাই, যেহেতু সেখানে রাজাকার, আলবদর ক্যাম্প ছিল। ১৯৭১ সালের ডিসেম্বর মাসের প্রথম দিকে পাকিস্তান আর্মি, রাজাকার ও আলবদরদের সঙ্গে মুক্তিবাহিনীর যুদ্ধের পর পাক বাহিনী, রাজাকার ও আলবদর পালিয়ে যায়। ৯ই ডিসেম্বর সাথিয়া থানা শত্রুমুক্ত হয়। এই যুদ্ধে আমি এবং আমার বাহিনী অংশগ্রহন করেছিলাম। এই যুদ্ধটি ৯ই ডিসেম্বর পর্যন্ত স্থায়ী হয়েছিল পাকিস্তান আর্মি, রাজাকার ও আলবদররা সেখানে ফেরত আসার জন্য চেষ্টা করেছিল তবে তাদের ফেরত আসা সম্ভব হয় নাই। ফিরতি আক্রমণ করার সময় পাকিস্তান আর্মি, রাজাকার ও আলবদররা পাবনা থেকে মাধপুর, কোনাবাড়িয়া ও নন্দনপুর ব্রীজ পর্যন্ত এসেছিল এবং মুক্তিযোদ্ধাদের প্রচন্ড বাধার মুখে তারা ফিরে যায়। সাথিয়া থানা থেকে মাধপুর পশ্চিম দক্ষিণ কোণে আনুমানিক ১২ কি.মি দূরে। সাথিয়া থেকে এক/দেড় কিলোমিটার পশ্চিমে কোনাবাড়িয়া অবস্থিত। সাথিয়া থেকে আনুমানিক ৪ কি:মি: পশ্চিমে নন্দনপুর ব্রীজ অবস্থিত।
বাউশগাড়ি বিল থেকে বিলে অবস্থানকালীন সময়ে বাউশগাড়ি ও ডেমরা গ্রামে গুলির শব্দ শুনতে পেয়েছি। এই গোলাগুলি সূর্য উঠার পর পরই বন্ধ হয়ে যায়। গোলাগুলি বন্ধ হওয়ার পরে যখন আমরা নিশ্চিত হলাম পাকিস্তান আর্মি ও তাদের সহযোগীরা চলে গেছে তখন আমরা বাউশগাড়ী ও ডেমড়া গ্রামে ফিরে আসি।
দুপুর আনুমানিক ১২.০০/১.০০ টার দিকে গোলাগুলি বন্ধ হওয়ার পর বাউশগাড়ি ও ডেমরা গ্রামে ফিরত আসার আগ পর্যন্ত পাকিস্তান আর্মিদের কোন তৎপরতা আমার নজরে পড়ে নাই। ঐ দিন বিল থেকে ফেরত আসার পর আয়নাল মাষ্টারের সাথে ঐ দিন গ্রামে আমার দেখা হয় নাই। বাউশগাড়ি বিলে যাওয়ার আগে ঐ ঘটনায় কেউ নিহত হয়েছিল কিনা তাহা আমার জানা নাই। বাউশগাড়ি থেকে পাবনাগামী রাস্তার পশ্চিম পাশে একটি মসজিদ ছিল। রূপসী প্রাইমারী স্কুলটি রূপসী গ্রামেই অবস্থিত, বাউশগাড়ি গ্রামে নয়।
মতিউর রহমান নিজামী সাহেব ১৯৭১ সাল সহ সব সময়ই বেসামরিক ব্যক্তি। মতিউর রহমান নিজামী সাহেব ইসলামী ছাত্রসংঘের সভাপতি ছিলেন এটা আমি আয়নাল হক সাহেবের কাছ থেকে জেনেছি তা নয়, আমি আগে থেকেই জানতাম। ১৯৭১ সালে ইসলামী ছাত্র সংঘ ছাড়া অন্য কোন ছাত্র সংগঠনের সভাপতি ও সেক্রেটারীর নাম আমি বলতে পারব না। ১৯৭০ বা ১৯৭১ সালে ইসলামী ছাত্রসংঘের সেক্রেটারী কে ছিল তাহা আমি এ মূহুর্তে মনে করতে পারছিনা। মতিউর রহমান নিজামী সাহেব কোন তারিখ পর্যন্ত ইসলামী ছাত্র সংঘের সভাপতি ছিলেন তাহা আমি বলতে পারবনা। সামরিক সংগঠন বলতে সামরিক বাহিনীতে যারা ভর্তি হয় তাদেরকে বুঝায়। যারা অস্ত্র বহন করে তারা সকলেই সামরিক সংগঠনের লোক নহে।
১৯৭১ সালে মাতিউর রহমান নিজামী সাহেব পাবনা সাথিয়াসহ বাংলাদেশের বিভিন্ন জায়গায় থাকতেন তবে স্থায়ীভাবে কোথায় থাকতেন তাহা আমি জানিনা।
মতিউর রহমান নিজামী সাহেব বাংলাদেশের একজন পরিচিত ব্যক্তি।
মতিউর রহমান নিজামী সাহেবের পরিকল্পনায় এবং প্রত্যক্ষ মদদে নারী ধর্ষনের কথা শোনা যায় এরূপ বক্তব্য আমি তদন্তকারী কর্মকর্তার নিকট দেই নাই, ইহা সত্য নহে।
ধৃত রাজাকার ও আলবদরদের নিকট শুনেছি যে, মতিউর রহমান নিজামী সাহেব পাবনায় বসে পাক আর্মিদের সাথে পরিকল্পনা করতো।
১৯৭১ সালের ১৪ই মে বাউশগাড়ি গ্রামে আব্দুর জব্বার সাহেবের বাড়িতে আমি ছিলাম না, ইহা সত্য নহে। ১৯৭১ সালের ১৪ই মে বাউশগাড়ি গ্রামে আব্দুর জব্বার নামে কেউ শহীদ হন নাই, ইহা সত্য নহে।
আমি একজন নব্য আওয়ামী লীগার হওয়ার কারণে অতি উৎসাহী হয়ে অন্যান্য আওয়ামী লীডারদের পরামর্শে মতিউর রহমান নিজামী সাহেবের বিরুদ্ধে অসত্য সাক্ষ্য দিলাম, ইহা সত্য নহে। (জেরা সমাপ্ত)
কোন মন্তব্য নেই:
একটি মন্তব্য পোস্ট করুন