২৫/৯/২০১৩
জামায়াতে ইসলামীর আমির মাওলানা মতিউর রহমান নিজামীর বিরুদ্ধে ২৬ তম সাক্ষী হিসেবে তদন্ত কর্মকর্তা আব্দুর রাজ্জাক খানের সাক্ষ্য গ্রহণ শুরু হয়েছে আজ।
জবানবন্দী
আমার নাম মোঃ আব্দুর রাজ্জাক খান, আমার বয়স আনুমানিক ৫৯ বৎসর।
আমি বাংলাদেশ পুলিশের একজন এএসপি। আমি অত্র মামলার তদন্তকারী কর্মকর্তা। গণপ্রজাতন্ত্রী বাংলাদেশ সরকারের স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয় স্মারক নং- স্বঃ মঃ (আইন-২)/তদন্তকারী সংস্থা/১-৫/২০১০/১০১ তারিখ ২৫-০৩-২০১০ইং এর প্রজ্ঞাপনের মাধ্যমে আমাকে তদন্তকারী কর্মকর্তা হিসাবে নিয়োগ প্রদান করা হয়। সেই মোতাবেক আমি ২৮-০৩-২০১০ইং তারিখে আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনাল তদন্ত সংস্থায় যোগদান করি এবং বর্তমানে কর্মরত আছি। তদন্ত সংস্থায় কর্মরত থাকিয়া মামলার তদন্তের প্রস্তুতিকালে বাংলাদেশের মুক্তিযুদ্ধের ইতিহাস ও পটভূমি সংক্রান্তে বিভিন্ন বই ও পত্রিকার সংশ্লিষ্ট অংশ পাঠ পূর্বক সংগ্রহ করি। ২১-০৭-২০১০ইং তারিখে মাননীয় আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনালের রেজিষ্ট্রার মহোদয়ের অফিসের মাধ্যমে পল্লবী থানা (ডিএমপি) মামলা নং- ৬০ তারিখ ২৫-০১-২০০৮ ধারা ১৪৮/৪৪৮/৩০২/৩৪/২০১/৩২৬/৩০৭/৪৩৬ দঃ বিঃ এর জুডিসিয়াল নথি পৃষ্ঠা ০১-৮৮ পর্যন্ত প্রাপ্ত হইয়া তদন্ত সংস্থা ডাইরী নং- ১০১(১) তারিখ ২১-০৭-২০১০ইং মোতাবেক পত্র পাপ্তি রেজিষ্ট্রারে অন্তর্ভূক্ত করা হয়। অতঃপর আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনালে এর ১৫ জুলাই ২০১০ এর বিধি ০৫ এর বিধান অনুযায়ী তদন্ত সংস্থায় রক্ষিত কমপ্লেইন্ট রেজিষ্ট্রারে ক্রমিক নং- ০১ তারিখ ২১-০৭-২০১০ হিসাবে অন্তর্ভূক্ত করা হয় এবং ঐ তারিখে আমাকে তদন্ত সংস্থা থেকে অত্র মামলার তদন্ত ভার দেওয়া হয়। জুডিসিয়াল নথি প্রাপ্তির পর নথিতে থাকা পল্লবী থানার মামলা নং- ০৬(১)২০০৮ এর এজাহার নিবিড়ভাবে পর্যালোচনা করিয়া আসামী ১। মতিউর রহমান নিজামী, ২। আলী আহসান মোহাম্মদ মুজাহিদ, ৩। মুহাম্মদ কামারুজ্জামান এবং ৪। আব্দুল কাদের মোল্লাদের বিরুদ্ধে আন্তর্জাতিক অপরাধ (ট্রাইব্যুনালস্) আইন, ১৯৭৩ এর ৩(২) ধারার উপাদান বিদ্যমান থাকায় আমি উক্ত আইন ও বিধি মোতাবেক অত্র মামলার তদন্ত কাজ শুরু করি।
২৫-০৭-২০১০ইং তারিখে মাননীয় আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনালের রেজিষ্ট্রার অফিসের স্মারক নং- আন্তঃ অপঃ ট্রাইঃ/৯৮/১০ তারিখ ২২-০৭-২০১০ইং মোতাবেক কেরানীগঞ্জ থানা (ঢাকা) মামলা নং- ৩৪ তারিখ ৩১-১২-২০০৭ ধারা ৪৪৭/৪৪৮/৪৩৬/৩০২/১০৯/১১৪ দঃ বিঃ এর জুডিসিয়াল নথি পৃষ্ঠা ০১-৩০ পর্যন্ত প্রাপ্ত হইয়া তদন্ত সংস্থার ডাইরী নং- ১০৮ তারিখ ২৫-০৭-২০১০ইং মোতাবেক পত্র প্রাপ্তি রেজিষ্ট্রারে অন্তর্ভূক্ত করা হয়। উক্ত মামলার এজাহার পর্যালোচনায় দেখা যায় যে, এজাহারের ক্রমিক নং-১ এ আসামী মতিউর রহমান নিজামীর নাম উল্লেখ আছে। তদন্তকালে পল্লবী ও কেরানীগঞ্জ থানার এজাহার দুটি নিবিড়ভাবে পর্যালোচনা কালে এবং তদন্তের পূর্ব প্রস্তুতিকালে বাংলাদেশের মুক্তিযুদ্ধের ইতিহাস ও পটভূমি এবং দৈনিক সংগ্রামসহ অন্যান্য পত্রিকা পর্যালোচনা কালে প্রতিভাত হয় যে, ১৯৭১ সালের ২৫শে মার্চ-এর পর থেকে ১৬ই ডিসেম্বর ১৯৭১ পর্যন্ত দখলদার পাকিস্তান সেনাবাহিনীর সহযোগীতায় অত্র মামলার আসামী মতিউর রহমান নিজামী পাকিস্তান ইসলামী ছাত্র সংঘের সভাপতি পদে থাকিয়া বিভিন্ন জেলায় গমন করিয়া উষ্কানিমূলক বক্তব্য প্রদান করিয়া শান্তি কমিটি, রাজাকার, আলবদর ও আলশামস বাহিনীর সদস্যদের মনে ঘৃণা ও প্রতিহিংসার উদ্রেক করাইয়া আলবদর বাহিনীর প্রধান হিসাবে পাবনা জেলাসহ সমগ্র বাংলাদেশে হত্যা, গণহত্যাসহ মানবতা বিরোধী সকল অপরাধের সহিত সরাসরি জড়িত ছিলেন।
ইতিপূর্বে আসামী মতিউর রহমান নিজামী কেরানীগঞ্জ থানার মামলা নং- ৩৪(১২)২০০৭ এবং পল্লবী থানার মামলা নং- ৬-(১)২০০৮ সংক্রান্তে গ্রেফতার হইয়া জেলখানায় আটক থাকায় তাহার কর্তৃক আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনাল আইনের ৩(২) ধারার অপরাধ সংঘটিত হওয়ায় মামলার সুষ্ঠু ও কার্যকর তদন্তের স্বার্থে ২২-০৭-২০১০ইং তারিখে আসামী ১। আলী আহসান মোহাম্মদ মুজাহিদ, ২। মুহাম্মদ কামারুজ্জামান, ৩। আব্দুল কাদের মোল্লার সহিত ৪। আসামী মতিউর রহমান নিজামীকে গ্রেফতার দেখানোর প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহনের জন্য বিজ্ঞ চীফ প্রসিকিউটর, আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনাল, ঢাকা বাংলাদেশ বরাবরে আবেদন করি। তৎপ্রেক্ষিতে মাননীয় ট্রাইব্যুনাল ০২-০৮-২০১০ইং সংশ্লিষ্ট আসামীগণকে মামলায় গ্রেফতার দেখাইয়া জেল হাজতে আটক রাখার নির্দেশ প্রদান করেন।
আন্তর্জাতিক অপরাধ (ট্রাইব্যুনালস্) আইন, ১৯৭৩-এ ৩(২) ধারা মোতাবেক আসামী মতিউর রহমান নিজামীর বিরুদ্ধে তাহার অপরাধ সম্পর্কে ০৪-১১-২০১০ইং তারিখে পাবনা ওয়াপদা পাওয়ার হাউজ ও পাবনা আলিয়া মাদ্রাসা পরিদর্শন করি এবং তদন্তকালে সাক্ষীদের জিজ্ঞাসাবাদ করিয়া ১। মোঃ হাবিবুর রহমান ওরফে হাবিব, ২। মোঃ শহিদুল্লাহ এবং ৩। জি এস এম এ চিশতীদের জবানবন্দি লিপিবদ্ধ করি। ০৫-১১-২০১০ইং তারিখে ঈশ্বরদী থানার ভূতের গাড়ি ও আড় পাড়া গ্রাম পরিদর্শন করি এবং তদন্তকালে সাক্ষীদের জিজ্ঞাসাবাদ করিয়া সাক্ষী ১। মোঃ আব্দুল হক, ২। লালন শেখ, ৩। মোস্তাক মল্লি, ৪। বজলুর রহমান এবং ৫। মোঃ আফজাল মালদের জবানবন্দি লিপিবদ্ধ করি। ০৬-১১-২০১০ইং তারিখে সাথিয়া থানার বাউশগাড়ি, ধুলাউড়ি, করমজা গ্রামের বধ্যভূমি এবং সাথিয়া পাইলট উচ্চ বিদ্যালয় পরিদর্শন করি এবং তদন্তকালে বাউশগাড়ি, ধুলাউড়ি ও করমজা গ্রামে ১৯৭১ সালে সংগঠিত ঘটনা সম্পর্কে সাক্ষীদের জিজ্ঞাসাবাদ করিয়া সাক্ষী আইনুল হকসহ মোট ১৭ জন সাক্ষীদের জবানবন্দি লিপিবদ্ধ করি।
২৯-০৩-২০১১ইং তারিখ সাক্ষী মিজবাহুর রহমান চৌধুরীকে তদন্ত সংস্থার অফিসে জিজ্ঞাসাবাদ করিয়া তাহার জবানবন্দি লিপিবদ্ধ করি এবং ঐ তারিখেই ০১-০৮-১৯৭১ইং তারিখ সিরাজুল ইসলাম মতলিব সভাপতি ইসলামী ছাত্র সংঘ কর্তৃক তাহাকে লিখা চিঠি উপস্থাপন করিলে সাক্ষীদের মোকাবেলায় তাহা জব্দ করিয়া হেফাজতে নেই। অত্র জব্দ তালিকা ১০ম খন্ডে আছে। এই সেই জব্দ তালিকা যাহা প্রদর্শনী- ১৪ এবং উহাতে আমার দস্তখত ১৪/১ হিসাবে চিহ্নিত হইর। ০২-০৬-২০১১ইং তারিখে সাক্ষী ডাঃ রথীন্দ্র নাথ কুন্ডুকে তদন্ত সংস্থার অফিসে জিজ্ঞাসাবাদ করিয়া তাহার জবানবন্দি লিপিবদ্ধ করি। ২৭-০৭-২০১১ইং তারিখে মোহাম্মদপুরের শারীরিক শিক্ষা কলেজ যাহা ১৯৭১ সালে ফিজিক্যাল ট্রেনিং ইন্সটিটিউট ছিল তাহা পরিদর্শন করি এবং তদন্তকালে সাক্ষী মোঃ রুস্তম আলীকে জিজ্ঞাসাবাদ করিয়া তাহার জবানবন্দি লিপিবদ্ধ করি। ১৮-০৮-২০১১ইং তারিখে সাক্ষী জহির উদ্দিন জালালকে সাথে নিয়া নাখালপাড়াস্থ পুরাতন এমপি হোস্টেল পরিদর্শন করি এবং তদন্ত সংস্থার অফিসে তাকে জিজ্ঞাসাবাদ করিয়া তাহার জবানবন্দি লিপিবদ্ধ করি। ২৬-০৮-২০১১ইং তারিখে পাবনা জেলার বেড়া থানাধীন বৃশালিখা গ্রামের সোহরাব আলী প্রামানিক, পিতা- মৃত নয়ন উদ্দিন প্রামানিককে হত্যার স্থান পরিদর্শন করি এবং ০২ জন সাক্ষীর জবানবন্দি লিপিবদ্ধ করি। ২৭-০৮-২০১১ইং তারিখে সাক্ষী সমর চন্দ্র কুন্ডুকে তাহার বাড়িতে জিজ্ঞাসাবাদ করিয়া জবানবন্দি লিপিবদ্ধ করি। ০৩-০৪-২০১১ইং তারিখে আসামী মতিউর রহমান নিজামীকে মামলার সুষ্ঠু ও কার্যকর তদন্তের স্বার্থে ০৩ দিনের হেফাজতে নিয়া জিজ্ঞাসাবাদ করি।
আমার তদন্তকাজে সহায়তা করার জন্য তদন্তকারী কর্মকর্তা মনোয়ার বেগমকে দেওয়ার অধীযাচন পত্র মোতাবেক তিনি ০৩-০৩-২০১১ইং তারিখে মুক্তিযুদ্ধ যাদুঘর হইতে একাত্তর সিভিল ও সামরিক প্রশাসন নেত্রকোনা সাব ডিভিশন ফাইল-০২ এর ফটোকপি জব্দ করেন। আমি তদন্তকারী কর্মকর্তা মনোয়ারা বেগমের হাতের লেখা এবং তাহার দস্তখত চিনি। এই সেই জব্দনামা প্রদর্শনী-১৫ এবং উহাতে মনোয়ার বেগমের দস্তখত যাহা প্রদর্শনী-১৫/১ হিসাবে চিহ্নিত হইল। সেই জব্দকৃত ফাইলের ফটোকপিটি প্রসিকিউশন পক্ষের দাখিলী জব্দতালিকা ও দালিলিক প্রমান পত্রের ১ম খন্ডে ২৯ পৃষ্ঠা থেকে ২৭৪ পৃষ্ঠায় সন্নিবেশিত আছে। এই গেন জব্দকৃত ফটোকপি গুলি যাহা প্রদর্শনী-১৬ হিসাবে চিহ্নিত হইল। উক্ত জব্দকৃত ফাইলে আলবদরদের অস্ত্র ও গুলি সরবরাহের কথা উল্লেখ আছে। (চলবে)
কোন মন্তব্য নেই:
একটি মন্তব্য পোস্ট করুন