মেহেদী হাসান, ২৫/৯/২০১৩
আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনাল কর্তৃক প্রদত্ত রায়ের বিরুদ্ধে আপিল আবেদন শুনানীর জন্য গঠিত আপিল বেঞ্চ থেকে দু’জন বিচারপতির প্রতি অনাস্থা জানিয়ে তাদেরকে প্রত্যাহার করে নেয়ার আবেদন জানানো হয়েছে মাওলানা দেলাওয়ার হোসাইন সাঈদীর পক্ষ থেকে। এরা হলেন বিচারপত সুরেন্দ্র কুমার সিনহা এবং বিচারপতি এএইচএম শামসুদ্দীন চৌধুরী। আজ সকালে মাওলানা সাঈদীর পক্ষে আইনজীবী টিম আপিল বিভাগের সংশ্লিষ্ট শাখায় এ আবেদন জমা দিয়েছে।
বিচারপতি সুরেন্দ্র কুমার সিনহার বিরুদ্ধে অনাস্থা জ্ঞাপনের কারণ হিসেবে স্কাইপ সংলাপে তার নাম উঠে আসার বিষয়টি তুলে ধরা হয়েছে আবেদনে। ট্রাইব্যুনাল ১ এর সাবেক পদত্যাগী চেয়ারম্যান বিচারপতি নিজামুল হক নাসিমকে ট্রাইব্যুনালে রায় প্রদানের বিনিময়ে প্রমোশন দিয়ে আপিল বিভাগে নিয়ে আসার প্রলোভন দেখিয়েছেন মর্মে বিচারপতি সুরেন্দ্র কুমার সিনহার বিরুদ্ধে অভিযোগ আনা হয়েছে আসামী পক্ষ থেকে। অপর দিকে বিচারপতি এএইচএম শামসুদ্দীন চৌধুরী’র বিরুদ্ধে অনাস্থা প্রদর্শনের কারণ হিসেবে ট্রাইব্যুনালের বিচার নিয়ে আওয়ামী লীগ ও ঘাতক দালাল নির্মুল কমিটিতে যোগ দিয়ে বক্তব্য প্রদানের বিষয়টি তুলে ধরা হয়।
আবেদনে আসামী পক্ষ থেকে অভিযোগ করা হয় এ দুজন বিচারপতি আগে থেকেই এ বিচারে একটি পক্ষ নিয়েছেন। এর মাধ্যমে তারা দু’জনেই ট্রাইব্যুনালের রায়ের আপিল শুনানীতে অংশগ্রহণ বিষয়ে যোগ্যতা, নিরপেক্ষতা হারিয়েছেন এবং তাদের মাধ্যমে নিরপেক্ষ শুনানী এবং ন্যায় বিচার প্রাপ্তি সম্ভব নয়। আবেদনে তাদের বিরুদ্ধে আচরনবিধি ও শপথ লক্স ঘনেরও অভিযোগ করা হয়েছে।
একই প্রেক্ষাপটে এর আগে আব্দুল কাদের মোল্লার পক্ষ থেকেও প্রধান বিচারপতি বরাবর আবেদন করা হয়েছিল। সে আবেদন শুনানী শেষে খারিজ করে দেয়া হয়েছে।
বিচারপতি সুরেন্দ্র কুমার সিনহা’র বিরুদ্ধে অভিযোগ : ট্রাইব্যুনালের পদত্যাগী চেয়ারম্যান বিচারপতি নিজামুল হক নাসিম বেলজিয়ামের ড. আহমেদ জিয়াউদ্দিন এর সাথে দীর্ঘ আলোচনা করেছেন ট্রাইব্যুনালের চলমান বিচার নিয়ে। স্কাইপ এর মাধ্যমে তারা এ আলোচনা করেছেন। গত বছর ৬ ডিসেম্বর তাদের দুজনের এ সংলাপের ঘটনা ফাঁস হয়। দৈনিক আমার দেশ পত্রিকায় ৯ ডিসেম্বর ধারাবাহিকভাবে এ সংলাপ প্রকাশ শুরু করে। ১১ ডিসেম্বর বিচারপতি নিজামুল হক স্কাইপ কেলেঙ্কারির দায় নিয়ে পদত্যাগ করেন। বিচারপতি নিজামুল হক নাসিম এবং বেলজিয়ামের ড. আহমেদ জিয়াউদ্দিনের স্কাইপ সংলাপে উঠে এসেছে বিচারপতি সুরেন্দ্র কুমার সিনহার নাম যিনি এখন ট্রাইব্যুনালের মামলার আপিল নিষ্পত্তির জন্য গঠিত আপিল বেঞ্চের সদস্য। :
বিচারপতি নিজামুল হক ও আহমেদ জিয়াউদ্দিনের মধ্যকার সংলাপের এক পর্যায়ে বিচারপতি নিজামুল হক জানান ট্রাইব্যুনালে তিনি তিনটা মামলার রায় দিতে পারলে বিচারপতি সুরেন্দ্র কুমার সিনহা তাকে আপিল বিভাগে নিয়ে যাওয়ার বিষয়ে আশ্বাস দিয়েছেন।
আসামী পক্ষ থেকে বলা হয় বিচারপতি সুরেন্দ্র কুমার সিনহা ট্রাইব্যুনালের চেয়ারম্যান বিচারপতি নিজামুল হক নাসিমের সাথে এ ধরনের কথাবার্তা বলেননি এ ধরনের কোন দাবি আজ পর্যন্ত তিনি করেননি। স্কাইপ সংলাপে সরকারের মন্ত্রী থেকে শুরু করে যাদের নামই উঠে এসেছে তাদের কেউ এখন পর্যন্ত এ বিষয়ে অস্বীকার করেননি।
আবেদনে বলা হয় স্কাইপ সংলাপ থেকে এটি স্পষ্ট যে, বিচারপতি সুরেন্দ্র কুমার সিনহা বিচারপতি নিজামুল হককে আপিল বিভাগে নিয়ে আসার প্রলোভন দেখিয়েছেন ট্রাইব্যুনালে তিনটি রায় প্রদানের বিনিময়ে। এটি বিচারে হস্তক্ষেপের সুস্পষ্ট প্রমান এবং একজন সিটিং বিচারপতি হিসেবে তিনি এর মাধ্যমে ট্রাইব্যুনালের যেকোন আপিল শুনানীর যোগ্যতা হারিয়েছেন।
বাংলাদেশের সংবিধানের ৯৬ (৪) (এ) ধারা মোতাবেক বিচারপতিদের জন্য প্রণীত আচরন বিধি তিনি লঙ্ঘন করেছেন এবং আপিল বিভাগের মর্যাদা ও স্বাধীনতাকেও তিনি প্রশ্নবিদ্ধ করেছেন। এছাড়া সংবিধানের ১৪৮ ধারা অনুযায়ী তিনি তার নিজের শপথও ভঙ্গ করেছেন বলে আসামী পক্ষ অভিযোগ করা হয়। স্কাইপ সংলাপে তার বিষয়ে যে আলোচনা উঠে এসেছে তাতে এটি স্পষ্ট যে তিনি নিরপেক্ষতার যে নূন্যতম যোগ্যতা দরকার তা হারিয়ে ফেলেছেন। এজন্য ন্যায় বিচারের স্বার্থে তাকে মাওলানা দেলাওয়ার হোসাইন সাঈদীর আপিল শুনানীর জন্য গঠিত বেঞ্চ থেকে প্রত্যাহার করে নেয়ার আবেদন জানায় আসামী পক্ষ।
বিচারপতি এএইচএম শামসুদ্দীন চৌধুরী মানিকের বিরুদ্ধে অভিযোগ :
আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনাল কর্তৃক প্রদত্ত রায়ের বিরুদ্ধে আপিল শুনানীর জন্য চলতি বছর ৩১ মার্চ প্রধান বিচারপতি মো : মোজাম্মেল হোসেন এর নেতৃত্বে ছয় সদস্যের আপিল বেঞ্চ গঠন করা হয়।
বিচারপতি এএইচএম শামসুদ্দীন চৌধুরী চলতি বছর ৩১ মার্চ আপিল বিভাগের বিচারপতি হিসেবে শপথ গ্রহণ করেন। একই দিন ট্রাইব্যুনালের মামলার আপিল নিষ্পত্তির জন্য গঠিত আপিল বেঞ্চের সদস্য করা হয় তাকে।
আসামী পক্ষের অভিযোগ : বিচারপতি এএইচএম শামসুদ্দীন চৌধুরীকে প্রত্যাহারের আবেদনে আসামী পক্ষ তার নিরপেক্ষতা লঙ্ঘনের পক্ষে কয়েকটি ঘটনা উল্লেখ করেছে। এর মধ্যে রয়েছে বিচারপতি শামসুদ্দীন চৌধুরী ২০১০ সালের ১ এপ্রিল লন্ডনে আওয়ামী লীগ এবং ঘাতক দালাল নির্মূল কমিটির একটি বৈঠকে যোগদান করেন। এ বিষয়ে ৯ এপ্রিল দৈনিক আমার দেশ পত্রিকায় খবর প্রকাশিত হয়েছে। এছাড়া তিনি ২০১১ সালের ২১ জুন লন্ডনে আরেকটি বৈঠকে যোগ দিয়ে ট্রাইব্যুনাল আইনের পক্ষে বক্তব্য রাখেন।
আসামী পক্ষ থেকে বলা হয় ঘাতক দালাল নির্মুল কমিটি যুদ্ধাপরাধ বিচারের জন্য দীর্ঘদিন ধরে প্রচার এবং দাবি করে আসছে। তারা ট্রাইব্যুনালের অধীনে বন্দী নেতাদের শাস্তি দাবি করে আসছে। আওয়ামী লীগও এ বিচারের পক্ষে আন্দোলন করছে এবং তারা বর্তমানে এ বিচারের আয়োজন করেছে। তাদের মতে বন্দীরা যুদ্ধাপরাধী। ২০১০ সালের ১ এপ্রিল বিচারপতি শামসুদ্দীন চৌধুরী যে বৈঠকে যোগ দেন সেখানে ঘাতক দালাল কমিটির সভাপতি শাহরিয়ার কবিরও উপস্থিত ছিলেন। এ ধরনের বৈঠকে যোগ দিয়ে বিচারপতি শামসুদ্দীন চৌধুরী নিরপেক্ষতা হারিয়েছেন এবং তিনি একটি পক্ষ নিয়েছেন। আর এখন সেই বিচারপতিকেই সদস্য করা হয়েছে আব্দুল কাদের মোল্লার আপিল নিষ্পত্তি করে গঠিত আপিল বেঞ্চের। এ ধরনের পরিস্থিতিতে কখনো ন্যায় বিচার আশা করতে পারেনা আসামী।
২০১১ সালের ২১ জুন লন্ডনের বৈঠকে বিচারপতি শামসুদ্দীন চৌধুরী আসামী পক্ষের আইনজীবীদের আক্রমন করে বক্তব্য দেন। সেখানে তিনি বিচার প্রকৃয়া, আইন, লিগ্যাল ফ্রেমওয়ার্ক বিষয়ে যেসব মন্তব্য করেন তার মাধ্যমে তিনি সুস্পষ্টভাবে সরকার এবং একটি দলের পক্ষ অবলম্বন করেছেন এবং নিরপেক্ষতা হারিয়েছেন। ট্রাইব্যুনালের বিরুদ্ধে দেশী এবং বিদেশী আইনজ্ঞ মহলের সমালোচনার জবাবে বিচারপতি শামসুদ্দীন চৌধুরী বিচার প্রকৃয়া আন্তর্জাতিক মান বজায় রেখে হচ্ছে বলে মন্তব্য করেন। একজন সিটিং বিচারপতি হিসেবে বিচারাধীন বিষয়ে মন্তব্য করেছেন।
আসামী পক্ষের আবেদনে আরেকটি ঘটনা তুলে ধরে বলা হয় ২০১২ সালের ১ মার্চ হাইকোর্ট এ বিচারপতি থাকা অবস্থায় একটি মামলার শুনানীর সময় বিচারপতি এএইচএম শামসুদ্দীন চৌধুরী মন্তব্য করেছেন স্বাধীনতাবিরোধী রাজাকারদের এদেশে থাকার অধিকার নেই। এদেশকে রাজাকার আলবদর মুক্ত করতে হবে । শুনানীর সময় গফরগাও থানার অসিকে তিনি নির্দেশ দিয়েছেন একটি মাদ্রাসার অধ্যক্ষকে জাহাজে করে পাকিস্তান পাঠানোর জন্য । ওই মাদ্রাসার অধ্যক্ষ জামায়াতে ইসলামীর সাথে যুক্ত। এই মামলায় আবেদনকারী মাওলানা সাঈদীও জামায়াতে ইসলামীর একজন কেন্দ্রীয় নেতা। ট্রাইব্যুনালের রায়ে মাওলানা সাঈদীসহ জামায়াতের অন্যান্য নেতৃবৃন্দকেও রাজাকার এবং আলবদর নেতা হিসেবে আখ্যায়িত করা হয়েছে। স্বাধীনতাবিরোধী রাজাকারদের এদেশে থাকার অধিকার নেই এবং তাদের পাকিস্তান পাঠিয়ে দেয়ার বিষয়ে মন্তব্য করার মাধ্যমে বিচারপতি শামসুদ্দীন চৌধুরী’র প্রচন্ড জামায়াত বিদ্বেষী মনোভাব প্রকাশ পেয়েছে।
আসামী পক্ষের আবেদনে বলা হয়েছে এ অবস্থায় জামায়াতে ইসলামীর একজন কেন্দ্রীয় নেতা হিসেবে এ ধরনের পক্ষগ্রহণকারী একজন বিচারপতির অধীনে আপিল শুনানী হলে সেখানে আসামী ন্যায় বিচার পাওয়া নিয়ে গভীরভাবে শঙ্কিত । তাই তাকে আপিল শুনানী থেকে প্রত্যাহার করা উচিত।
আবেদনে বাংলাদেশের সংবিধান, বিচারপতিদের জন্য প্রণীত আচরনবিধি এবং দেশি বিদেশি প্রচলিত আইনের উদাহরন তুলে ধরা হয়েছে আবেদনের যৌক্তিকতার পক্ষে।
আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনাল কর্তৃক প্রদত্ত রায়ের বিরুদ্ধে আপিল আবেদন শুনানীর জন্য গঠিত আপিল বেঞ্চ থেকে দু’জন বিচারপতির প্রতি অনাস্থা জানিয়ে তাদেরকে প্রত্যাহার করে নেয়ার আবেদন জানানো হয়েছে মাওলানা দেলাওয়ার হোসাইন সাঈদীর পক্ষ থেকে। এরা হলেন বিচারপত সুরেন্দ্র কুমার সিনহা এবং বিচারপতি এএইচএম শামসুদ্দীন চৌধুরী। আজ সকালে মাওলানা সাঈদীর পক্ষে আইনজীবী টিম আপিল বিভাগের সংশ্লিষ্ট শাখায় এ আবেদন জমা দিয়েছে।
বিচারপতি সুরেন্দ্র কুমার সিনহার বিরুদ্ধে অনাস্থা জ্ঞাপনের কারণ হিসেবে স্কাইপ সংলাপে তার নাম উঠে আসার বিষয়টি তুলে ধরা হয়েছে আবেদনে। ট্রাইব্যুনাল ১ এর সাবেক পদত্যাগী চেয়ারম্যান বিচারপতি নিজামুল হক নাসিমকে ট্রাইব্যুনালে রায় প্রদানের বিনিময়ে প্রমোশন দিয়ে আপিল বিভাগে নিয়ে আসার প্রলোভন দেখিয়েছেন মর্মে বিচারপতি সুরেন্দ্র কুমার সিনহার বিরুদ্ধে অভিযোগ আনা হয়েছে আসামী পক্ষ থেকে। অপর দিকে বিচারপতি এএইচএম শামসুদ্দীন চৌধুরী’র বিরুদ্ধে অনাস্থা প্রদর্শনের কারণ হিসেবে ট্রাইব্যুনালের বিচার নিয়ে আওয়ামী লীগ ও ঘাতক দালাল নির্মুল কমিটিতে যোগ দিয়ে বক্তব্য প্রদানের বিষয়টি তুলে ধরা হয়।
আবেদনে আসামী পক্ষ থেকে অভিযোগ করা হয় এ দুজন বিচারপতি আগে থেকেই এ বিচারে একটি পক্ষ নিয়েছেন। এর মাধ্যমে তারা দু’জনেই ট্রাইব্যুনালের রায়ের আপিল শুনানীতে অংশগ্রহণ বিষয়ে যোগ্যতা, নিরপেক্ষতা হারিয়েছেন এবং তাদের মাধ্যমে নিরপেক্ষ শুনানী এবং ন্যায় বিচার প্রাপ্তি সম্ভব নয়। আবেদনে তাদের বিরুদ্ধে আচরনবিধি ও শপথ লক্স ঘনেরও অভিযোগ করা হয়েছে।
একই প্রেক্ষাপটে এর আগে আব্দুল কাদের মোল্লার পক্ষ থেকেও প্রধান বিচারপতি বরাবর আবেদন করা হয়েছিল। সে আবেদন শুনানী শেষে খারিজ করে দেয়া হয়েছে।
বিচারপতি সুরেন্দ্র কুমার সিনহা’র বিরুদ্ধে অভিযোগ : ট্রাইব্যুনালের পদত্যাগী চেয়ারম্যান বিচারপতি নিজামুল হক নাসিম বেলজিয়ামের ড. আহমেদ জিয়াউদ্দিন এর সাথে দীর্ঘ আলোচনা করেছেন ট্রাইব্যুনালের চলমান বিচার নিয়ে। স্কাইপ এর মাধ্যমে তারা এ আলোচনা করেছেন। গত বছর ৬ ডিসেম্বর তাদের দুজনের এ সংলাপের ঘটনা ফাঁস হয়। দৈনিক আমার দেশ পত্রিকায় ৯ ডিসেম্বর ধারাবাহিকভাবে এ সংলাপ প্রকাশ শুরু করে। ১১ ডিসেম্বর বিচারপতি নিজামুল হক স্কাইপ কেলেঙ্কারির দায় নিয়ে পদত্যাগ করেন। বিচারপতি নিজামুল হক নাসিম এবং বেলজিয়ামের ড. আহমেদ জিয়াউদ্দিনের স্কাইপ সংলাপে উঠে এসেছে বিচারপতি সুরেন্দ্র কুমার সিনহার নাম যিনি এখন ট্রাইব্যুনালের মামলার আপিল নিষ্পত্তির জন্য গঠিত আপিল বেঞ্চের সদস্য। :
বিচারপতি নিজামুল হক ও আহমেদ জিয়াউদ্দিনের মধ্যকার সংলাপের এক পর্যায়ে বিচারপতি নিজামুল হক জানান ট্রাইব্যুনালে তিনি তিনটা মামলার রায় দিতে পারলে বিচারপতি সুরেন্দ্র কুমার সিনহা তাকে আপিল বিভাগে নিয়ে যাওয়ার বিষয়ে আশ্বাস দিয়েছেন।
আসামী পক্ষ থেকে বলা হয় বিচারপতি সুরেন্দ্র কুমার সিনহা ট্রাইব্যুনালের চেয়ারম্যান বিচারপতি নিজামুল হক নাসিমের সাথে এ ধরনের কথাবার্তা বলেননি এ ধরনের কোন দাবি আজ পর্যন্ত তিনি করেননি। স্কাইপ সংলাপে সরকারের মন্ত্রী থেকে শুরু করে যাদের নামই উঠে এসেছে তাদের কেউ এখন পর্যন্ত এ বিষয়ে অস্বীকার করেননি।
আবেদনে বলা হয় স্কাইপ সংলাপ থেকে এটি স্পষ্ট যে, বিচারপতি সুরেন্দ্র কুমার সিনহা বিচারপতি নিজামুল হককে আপিল বিভাগে নিয়ে আসার প্রলোভন দেখিয়েছেন ট্রাইব্যুনালে তিনটি রায় প্রদানের বিনিময়ে। এটি বিচারে হস্তক্ষেপের সুস্পষ্ট প্রমান এবং একজন সিটিং বিচারপতি হিসেবে তিনি এর মাধ্যমে ট্রাইব্যুনালের যেকোন আপিল শুনানীর যোগ্যতা হারিয়েছেন।
বাংলাদেশের সংবিধানের ৯৬ (৪) (এ) ধারা মোতাবেক বিচারপতিদের জন্য প্রণীত আচরন বিধি তিনি লঙ্ঘন করেছেন এবং আপিল বিভাগের মর্যাদা ও স্বাধীনতাকেও তিনি প্রশ্নবিদ্ধ করেছেন। এছাড়া সংবিধানের ১৪৮ ধারা অনুযায়ী তিনি তার নিজের শপথও ভঙ্গ করেছেন বলে আসামী পক্ষ অভিযোগ করা হয়। স্কাইপ সংলাপে তার বিষয়ে যে আলোচনা উঠে এসেছে তাতে এটি স্পষ্ট যে তিনি নিরপেক্ষতার যে নূন্যতম যোগ্যতা দরকার তা হারিয়ে ফেলেছেন। এজন্য ন্যায় বিচারের স্বার্থে তাকে মাওলানা দেলাওয়ার হোসাইন সাঈদীর আপিল শুনানীর জন্য গঠিত বেঞ্চ থেকে প্রত্যাহার করে নেয়ার আবেদন জানায় আসামী পক্ষ।
বিচারপতি এএইচএম শামসুদ্দীন চৌধুরী মানিকের বিরুদ্ধে অভিযোগ :
আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনাল কর্তৃক প্রদত্ত রায়ের বিরুদ্ধে আপিল শুনানীর জন্য চলতি বছর ৩১ মার্চ প্রধান বিচারপতি মো : মোজাম্মেল হোসেন এর নেতৃত্বে ছয় সদস্যের আপিল বেঞ্চ গঠন করা হয়।
বিচারপতি এএইচএম শামসুদ্দীন চৌধুরী চলতি বছর ৩১ মার্চ আপিল বিভাগের বিচারপতি হিসেবে শপথ গ্রহণ করেন। একই দিন ট্রাইব্যুনালের মামলার আপিল নিষ্পত্তির জন্য গঠিত আপিল বেঞ্চের সদস্য করা হয় তাকে।
আসামী পক্ষের অভিযোগ : বিচারপতি এএইচএম শামসুদ্দীন চৌধুরীকে প্রত্যাহারের আবেদনে আসামী পক্ষ তার নিরপেক্ষতা লঙ্ঘনের পক্ষে কয়েকটি ঘটনা উল্লেখ করেছে। এর মধ্যে রয়েছে বিচারপতি শামসুদ্দীন চৌধুরী ২০১০ সালের ১ এপ্রিল লন্ডনে আওয়ামী লীগ এবং ঘাতক দালাল নির্মূল কমিটির একটি বৈঠকে যোগদান করেন। এ বিষয়ে ৯ এপ্রিল দৈনিক আমার দেশ পত্রিকায় খবর প্রকাশিত হয়েছে। এছাড়া তিনি ২০১১ সালের ২১ জুন লন্ডনে আরেকটি বৈঠকে যোগ দিয়ে ট্রাইব্যুনাল আইনের পক্ষে বক্তব্য রাখেন।
আসামী পক্ষ থেকে বলা হয় ঘাতক দালাল নির্মুল কমিটি যুদ্ধাপরাধ বিচারের জন্য দীর্ঘদিন ধরে প্রচার এবং দাবি করে আসছে। তারা ট্রাইব্যুনালের অধীনে বন্দী নেতাদের শাস্তি দাবি করে আসছে। আওয়ামী লীগও এ বিচারের পক্ষে আন্দোলন করছে এবং তারা বর্তমানে এ বিচারের আয়োজন করেছে। তাদের মতে বন্দীরা যুদ্ধাপরাধী। ২০১০ সালের ১ এপ্রিল বিচারপতি শামসুদ্দীন চৌধুরী যে বৈঠকে যোগ দেন সেখানে ঘাতক দালাল কমিটির সভাপতি শাহরিয়ার কবিরও উপস্থিত ছিলেন। এ ধরনের বৈঠকে যোগ দিয়ে বিচারপতি শামসুদ্দীন চৌধুরী নিরপেক্ষতা হারিয়েছেন এবং তিনি একটি পক্ষ নিয়েছেন। আর এখন সেই বিচারপতিকেই সদস্য করা হয়েছে আব্দুল কাদের মোল্লার আপিল নিষ্পত্তি করে গঠিত আপিল বেঞ্চের। এ ধরনের পরিস্থিতিতে কখনো ন্যায় বিচার আশা করতে পারেনা আসামী।
২০১১ সালের ২১ জুন লন্ডনের বৈঠকে বিচারপতি শামসুদ্দীন চৌধুরী আসামী পক্ষের আইনজীবীদের আক্রমন করে বক্তব্য দেন। সেখানে তিনি বিচার প্রকৃয়া, আইন, লিগ্যাল ফ্রেমওয়ার্ক বিষয়ে যেসব মন্তব্য করেন তার মাধ্যমে তিনি সুস্পষ্টভাবে সরকার এবং একটি দলের পক্ষ অবলম্বন করেছেন এবং নিরপেক্ষতা হারিয়েছেন। ট্রাইব্যুনালের বিরুদ্ধে দেশী এবং বিদেশী আইনজ্ঞ মহলের সমালোচনার জবাবে বিচারপতি শামসুদ্দীন চৌধুরী বিচার প্রকৃয়া আন্তর্জাতিক মান বজায় রেখে হচ্ছে বলে মন্তব্য করেন। একজন সিটিং বিচারপতি হিসেবে বিচারাধীন বিষয়ে মন্তব্য করেছেন।
আসামী পক্ষের আবেদনে আরেকটি ঘটনা তুলে ধরে বলা হয় ২০১২ সালের ১ মার্চ হাইকোর্ট এ বিচারপতি থাকা অবস্থায় একটি মামলার শুনানীর সময় বিচারপতি এএইচএম শামসুদ্দীন চৌধুরী মন্তব্য করেছেন স্বাধীনতাবিরোধী রাজাকারদের এদেশে থাকার অধিকার নেই। এদেশকে রাজাকার আলবদর মুক্ত করতে হবে । শুনানীর সময় গফরগাও থানার অসিকে তিনি নির্দেশ দিয়েছেন একটি মাদ্রাসার অধ্যক্ষকে জাহাজে করে পাকিস্তান পাঠানোর জন্য । ওই মাদ্রাসার অধ্যক্ষ জামায়াতে ইসলামীর সাথে যুক্ত। এই মামলায় আবেদনকারী মাওলানা সাঈদীও জামায়াতে ইসলামীর একজন কেন্দ্রীয় নেতা। ট্রাইব্যুনালের রায়ে মাওলানা সাঈদীসহ জামায়াতের অন্যান্য নেতৃবৃন্দকেও রাজাকার এবং আলবদর নেতা হিসেবে আখ্যায়িত করা হয়েছে। স্বাধীনতাবিরোধী রাজাকারদের এদেশে থাকার অধিকার নেই এবং তাদের পাকিস্তান পাঠিয়ে দেয়ার বিষয়ে মন্তব্য করার মাধ্যমে বিচারপতি শামসুদ্দীন চৌধুরী’র প্রচন্ড জামায়াত বিদ্বেষী মনোভাব প্রকাশ পেয়েছে।
আসামী পক্ষের আবেদনে বলা হয়েছে এ অবস্থায় জামায়াতে ইসলামীর একজন কেন্দ্রীয় নেতা হিসেবে এ ধরনের পক্ষগ্রহণকারী একজন বিচারপতির অধীনে আপিল শুনানী হলে সেখানে আসামী ন্যায় বিচার পাওয়া নিয়ে গভীরভাবে শঙ্কিত । তাই তাকে আপিল শুনানী থেকে প্রত্যাহার করা উচিত।
আবেদনে বাংলাদেশের সংবিধান, বিচারপতিদের জন্য প্রণীত আচরনবিধি এবং দেশি বিদেশি প্রচলিত আইনের উদাহরন তুলে ধরা হয়েছে আবেদনের যৌক্তিকতার পক্ষে।
কোন মন্তব্য নেই:
একটি মন্তব্য পোস্ট করুন