মঙ্গলবার, ১৭ সেপ্টেম্বর, ২০১৩

আমরা ন্যায় বিচার হতে বঞ্চিত হয়েছি-রায়ের প্রতিকৃয়ায় কাদের মোল্লার স্ত্রী

১৭/৯/২০১৩
 বাংলাদেশ জামায়াতে ইসলামীর সহকারী সেক্রেটারী জেনারেল ও বিশিষ্ট সাংবাদিক আব্দুল কাদের মোল্লাকে সুপ্রীম কোর্টের আপীল বিভাগ কর্তৃক মৃত্যুদন্ড - প্রদান করায় গভীর উদ্বেগ প্রকাশ করে বিবৃতি দিয়েছেন তার স্ত্রী  স্ত্রী বেগম সানোয়ার জাহান । লিখিত বিবৃতিতে তিনি বলেন, আমরা ন্যায় বিচার থেকে বঞ্চিত হয়েছি। দেশের সর্বোচ্চ আদালতের এ রায়ে আমরা মর্মাহত। এ রায় ন্যায়বিচারের সম্পূর্ণ পরিপন্থী। আমার স্বামী রাজনৈতিক প্রতিহিংসার শিকার হয়েছেন।

বিবৃতিতে সানোয়ার জাহান বলেন, মহাামান্য সুপ্রীম কোর্টের আপীল বিভাগ সংখ্যাগরিষ্ঠের ভিত্তিতে আমার স্বামী জনাব আব্দুল কাদের মোল্লাকে মানবতা বিরোধী অপরাধের মিথ্যা অভিযোগে সরকার কর্তৃক দায়ের করা ষড়যন্ত্রমূলক মামলায় মৃত্যুদন্ড  প্রদান করেছেন। মহামান্য সুপ্রীম কোর্টের এই রায়ে আমরা মর্মাহত  হয়েছি। সুপ্রীম কোর্ট দেশের সর্বোচ্চ আদালত। এ আদালতের প্রতি আমরা সম্পূর্ণ শ্রদ্ধাশীল। কিন্তু আমরা মনে করি, এটি একটি ভুল রায়। এ রায়ের মাধ্যমে আমরা সংক্ষুব্ধ হয়েছি। এ রায় ন্যায়বিচারের সম্পূর্ণ পরিপন্থী। আমরা ন্যায়বিচার হতে বঞ্চিত হয়েছি। আমরা অত্যন্ত বিস্মিত যে, বিচারিক আদালত সম্পূর্ণ শুনা স্বাক্ষীর উপর ভিত্তি করে আমার স্বামীকে যাবজ্জীবন কারাদন্ড  দিয়েছিল। বিচার বিভাগের ইতিহাসে আমাদের জানামতে নি¤œ আদালতের সাজা বৃদ্ধি করে উচ্চ আদালতের রায় প্রদান করা এক নজিরবিহীন ঘটনা।
বিবৃতিতে তিনি বলেন, আমার স্বামী রাজনৈতিক প্রতিহিংসার শিকার। তিনি মুক্তিযুদ্ধের সময় নিজ গ্রামের বাড়ী ফরিদপুরে অবস্থান করছিলেন। তিনি ১৯৭২ সালে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের শহিদুল্লাহ হলে আবাসিক ছাত্র হিসেবে অবস্থান করে বিশ্ববিদ্যালয়ে অধ্যায়ন করেছেন। ১৯৭৪-৭৫ সালে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রাণকেন্দ্রে অবস্থিত উদয়ন উচ্চ বিদ্যালয়ে শিক্ষক হিসেবে কর্মরত ছিলেন। ১৯৭৭ সালে বাংলাদেশ রাইফেলস্ কলেজের সিনিয়র শিক্ষক ও ভারপ্রাপ্ত অধ্যক্ষ হিসেবে দায়িত্ব পালন করেছেন। ১৯৮২ ও ৮৩ সালে দু’বার ঢাকা সাংবাদিক ইউনিয়নের সহ-সভাপতি হিসেবে নির্বাচিত হয়েছেন। মরহুম শেখ মুজিবুর রহমানের সরকার আমার স্বামীকে ইসলামিক ফাউন্ডেশনের কর্মকর্তা হিসেবে নিয়োগ দিয়েছিলেন। ১৯৭১ সাল থেকে ২০১০ সাল পর্যন্ত আমার স্বামীর বিরুদ্ধে বাংলাদেশের কোন থানা বা আদালতে ১৯৭১ সালের কথিত অপরাধের ব্যাপারে একটি অভিযোগও দায়ের করা সম্ভব হয়নি। সম্পূর্ণ রাজনৈতিক প্রতিহিংসা চরিতার্থ করার জন্য আওয়ামী সরকার আমার স্বামীর বিরুদ্ধে মানবতা বিরোধী অপরাধের মিথ্যা অভিযোগে ষড়যন্ত্রমূলক মামলা দায়ের করে। আমার স্বামীর বিরুদ্ধে কোন প্রত্যক্ষদর্শী স্বাক্ষী আদালতে পেশ করা সম্ভব হয়নি। সম্পূর্ণ শুনা স্বাক্ষীর উপর ভিত্তি করে মাননীয় বিচারিক আদালত আমার স্বামীকে যাবজ্জীবন কারাদ-ে দন্ডিত করে।
যেহেতু আমার স্বামীকে রাজনৈতিকভাবে নিশ্চিহ্ন করাই সরকারের আসল উদ্দেশ্য  তাই মামলার রায় ঘোষণার ১২ দিন পর সরকারী পৃষ্ঠপোষকতায় গঠিত কথিত গণজাগরণ মঞ্চের চাপের মুখে আইন সংশোধন করে সংশোধিত আইনে সরকার আমার স্বামীকে মৃত্যুদন্ডে দন্ডিত  করার ব্যবস্থা করে। স্বাক্ষ্য প্রমাণ ও যুক্তি তর্কের মাধ্যমে আমাদের আইনজীবীগণ আদালতের সামনে যেসব বিষয় উপস্থাপন করেছিলেন তাতে জনাব আব্দুল কাদের মোল্লাকে দোষী সাব্যস্ত করার কোন সুযোগই নেই। কিন্তু অত্যন্ত দুঃখজনক যে, তাকে শুধু দোষী সাব্যস্ত করা হয়েছে তা-ই নয়, মৃত্যুদন্ডও দেয়া হয়েছে। দুনিয়ার বিচারের ইতিহাসে এটি অত্যন্ত দুর্ভাগ্যজনক, বেদনাদায়ক ও হতাশাব্যঞ্জক। আমার স্বামীর সাংবিধানিক অধিকার সংরক্ষনের জন্য পূর্ণাঙ্গ রায় পাওয়ার ৩০ দিনের মধ্যে রিভিউ পিটিশন দায়েরের সুযোগ রয়েছে। কিন্তু আমরা প্রচার মাধ্যমে মাননীয় আইনমন্ত্রী ও এটর্নি জেনারেলের বক্তব্য ‘রিভিউ করার কোন সুযোগ নেই’ শুনে হতবাক হয়েছি।
সানোয়ার জাহান বিবৃতিতে বলেন, মাননীয় আইনমন্ত্রী, এটর্নি জেনারেল ও আওয়ামী দলীয় নেতাদের বক্তব্যের মাধ্যমেই প্রমাণিত হয় আমার স্বামী আব্দুল কাদের মোল্লাকে হত্যা করাই সরকারের আসল উদ্দেশ্য। সংবিধান বর্ণিত অধিকার থেকে বঞ্চিত করে তড়িঘড়ি করে তাকে ফাঁসিতে ঝুলিয়ে দেয়ার বক্তব্যের মাধ্যমে এই ষড়যন্ত্র এবং চক্রান্ত স্পষ্টভাবে ফুটে উঠেছে।
আমরা দুনিয়ার আদালতে ন্যায়বিচার থেকে বঞ্চিত হয়েছি। কিন্তু আমরা বিশ্বাস করি, আখেরাতের আদালতে বিচার দিবসের প্রতিপালক মহান আল্লাহর নিকট অবশ্যই আমরা ন্যায়বিচার পাব।
তিনি বলেন, আমি আমার স্বামীর বিরুদ্ধে আওয়ামী লীগের সকল ষড়যন্ত্র এবং চক্রান্ত্রের বিরুদ্ধে রুখে দাঁড়ানোর জন্য দেশবাসীর প্রতি আহ্বান জানাচ্ছি।

ন্যায়বিচার পাইনি--কাদের মোল্লার পরিবার

জামায়াত নেতা আবদুল কাদের মোল্লাকে আপিল বিভাগ কর্তৃক মৃত্যুদণ্ড প্রদানের পর তার পরিবারের পক্ষে তার বড় ছেলে হাসান জামিল প্রতিক্রিয়া ব্যক্ত করে বলেছেন, আমরা ন্যায়বিচার পাইনি। এ রায়ে আমরা মর্মাহত ও হতবাক হয়েছি। এটি একটি জুডিশিয়াল কিলিং।

আজ  মঙ্গলবার আবদুল কাদের মোল্লার পরিবারের সাথে যোগযোগ করা হলে তার বড় ছেলে হাসান জামিল  এভাবেই তার প্রতিক্রিয়া ব্যক্ত করেন।

হাসান জামিল বলেন, এই রায়ে আমরা পরিবারের পক্ষ থেকে মর্মাহত ও হতবাক। আমরা যে সমস্ত সাক্ষী হাজির করেছিলাম তাদের মাধ্যমে আমরা প্রমাণ করতে পেরেছি যে, আব্বুকে (কাদের মোল্লা) জড়িযে যে সমস্ত অভিযোগ আনা হয়েছে এবং অভিযোগে ঘটনাগুলোর যে সময় উল্লেখ করা হয়েছে, সে সময়কালে তিনি নিজ গ্রামের বাড়ি ফরিদপুরে অবস্থান করছিলেন। পক্ষান্তরে প্রসিকিউশন যে সমস্ত সাক্ষীদের আদালতে হাজির করেছে, তারা বিভিন্ন পত্রপত্রিকা মতে সন্ত্রাসী, চাঁদাবাজ ও বিচারকের জমি দখলকারী হিসাবে পরিচিত। তাদের সাক্ষ্যকে আদালত বিবেচনায় এনে যে রায় আজ (মঙ্গলবার) প্রদান করলো, তা বিচার বিভাগের জন একটি কালো অধ্যায়ের সূচনা করবে।

তিনি বলেন, এই রায়ের পর আমরা মনে করছি- এই বিচার ব্যবস্থা একটি জুডিশিয়াল কিলিং সিস্টেমে পরিণত হয়েছে। আমরা মনে করি- আমার আব্বা ভিন্ন রাজনৈতিক আদর্শে বিশ্বাসী হওয়ার কারণেই তাকে আজ এই পরিণতির শিকার হতে হয়েছে। তিনি যদি জামায়াতে ইসলামীর নেতা না হলে তার বিরুদ্ধে উদ্যোগ নেয়া হতো না বলে আমরা বিশ্বাস করি। এখন আমরা সর্বশক্তিমান আল্লাহ তাআলার কাছেই ন্যায়বিচার প্রার্থনা করছি।

কোন মন্তব্য নেই:

একটি মন্তব্য পোস্ট করুন