শুক্রবার, ২৭ সেপ্টেম্বর, ২০১৩

ট্রাইব্যুনাল চেয়ারম্যানের কথপোকথন রেকর্ড ইকনোমিস্টের কাছে // চিফ এডিটরসহ দুইজনের বিরুদ্ধে রুল জারি


মেহেদী হাসান, 6/12/2012  
আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনাল -১ এর চেয়ারম্যান বিচারপতি নিজামুুল হক  কর্তৃক বিদেশে একজনের সাথে কথপোকথনের  রেকর্ড এবং ইমেইলের  ডকুমেন্ট চলে গেছে লন্ডনভিত্তিক বিশ্বখ্যাত ম্যাগাজিন  ইকনোমিস্টের কছে।  বিচারপতি নিজামুল  হক এর  স্কাইপি ও  ইমেইল একাউন্টস এবং কম্পিউটর হ্যাক করে  ইকনোমিস্ট  এসব তথ্য হস্তগত করেছে বলে ট্রাইব্যুনাল উল্লেখ করেছেন।

ট্রাইব্যুনাল চেয়ারম্যান বিচারপতি নিজামুল হক আজ নিজেই বিষয়টি ওপেন কোর্টে প্রকাশ করে  একটি আদেশ পাশ করেছেন।

ট্রাইব্যুনাল চেয়ারম্যানের যেসব পোগনীয় তথ্য হ্যাকিংয়ের মাধ্যমে ইকনোমিস্ট  সংগ্রহ করেছে তা প্রকাশের ওপর নিষেধাজ্ঞা আরোপ করা হয়েছে। একই সাথে ইকনোমিস্টের চিফ এডিটর রব গিফর্ড এবং দণি এশিয়া ব্যুরো চিফ এ্যাডাম রবার্টের  প্রতি রুল জারি করা হয়েছে এ বিষয়ে ব্যাখ্যা দাবি   করে। ট্রাইব্যুনালের আদেশ লঙ্ঘন করে যদি তারা সংগৃহীত  গোপন তথ্য ফাঁস করে তাহলে তাদের বিরুদ্ধে আইনানুগ ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে বলে আদেশে উল্লেখ করা হয়েছে।

বিচারপতি নিজামুল হক বলেন,   ব্রাসেলসে বসবাসরত আন্তর্জাতিক অপরাধ আইন বিশেষজ্ঞ ড. আহমেদ জিয়াউদ্দিনের কাছ থেকে ট্রাইব্যুনালের  বিচার প্রকৃয়া চলাকালে এবং বিভিন্ন আদেশের  সময় সহায়তা নিয়েছেন তিনি। এ উপলক্ষে তাদের দুজনের মধ্যে স্কাইপির মাধ্যমে কথপোকথন হয়েছে। এ  তথ্য হ্যাক করে ইকনোমিস্ট হস্তগত করেছে বলে   উল্লেখ করেন তিনি। 
গত বুধবার রাত দশটায় ইকনোমিস্ট থেকে বিচারপতি নিজামুল হককে জানানো হয় ড. আহমেদ আহমেদ জিয়াউদ্দিনের সাথে তিনি  যেসব কথাবার্তা বলেছেন এবং  ইমেইলের মাধ্যমে যেসব জিনিস গ্রহণ করেছেন তার সবকিছুই তাদের কাছে রয়েছে। এ বিষয়ে তারা চেয়ারম্যানকে আরো কিছু প্রশ্ন করেন।

ইকনোমিস্টের প্রতি আদালত অবমাননার অভিযোগে কেন  ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবেনা মর্মে জারি করা নোটিশের জবাব তিন সপ্তাহের মধ্যে দিতে বলা হয়েছে।

আজ  সকালে  মাওলানা দেলাওয়ার হোসাইন সাঈদীর মামলায় আসামী পক্ষের যুক্তি উপস্থাপন চলছিল। এর এক পর্যায়ে বিচারপতি নিজামুল হক বলেন মিজান সাহেব আমরা আপনার কাছ থেকে দশ মিনিট সময় নিতে চাই একটি অর্ডার পাসের জন্য। বিচারপতি নিজামুল হক বেঞ্চ অফিসারকে ডেকে  অর্ডার ডিকটেট করতে থাকেন।   আদেশের সময়  বিষয়টির ভেতরে প্রবেশের সাথে সাথে ট্রাইব্যুনালে পিনপতন নিরবতা  নেমে আসে।  উপস্থিত  সাংবাদিকরাও বিষয়টি তখনই অবহিত হন।
ট্রাইব্যুনাল চেয়ারম্যান বিচারপতি নিজামুল হক আদেশ পাশের সময় ট্রাইব্যুনালের অপর দুই সদস্য বিচারপতি জাহাঙ্গীর হোসেন এবং বিচারপতি আনোয়ারুল হক উপস্থিত ছিলেন।

আদেশ : 
ট্রাইব্যুনাল চেয়ারম্যান বিচারপতি নিজামুল হক আদেশ ঘোষনা করে বলেন, এই  ট্রাইব্যুনালের চেয়ারম্যান এবং অপর দুই সদস্য বাংলাদেশ সুপ্রীম কোর্টের বিচারপতি। ট্রাইব্যুনাল গঠনের পর চেয়ারম্যান এবং অপর দুই সদস্য নিয়োগের পর তারা   ওপেন কোর্টে বলেছেন যে, ইন্ট্রারন্যানশনাল ক্রাইমস ট্রাইব্যুনাল অ্যাক্ট ১৯৭৩ তাদের কাছে একটি নতুন আইন। আইনটি বোঝার জন্য  রাষ্ট্রপক্ষের আইনজীবী, আসামী পক্ষের আইনজীবী এবং বিশেষজ্ঞদের পরামর্শ গ্রহনের পাশাপাশি বিভিন্ন ট্রাইব্যুনালের  বিচার প্রকৃয়া, আদেশ এবং সেগুলো পরীক্ষা  নিরীক্ষার প্রয়োজন আছে। দেশে এবং বিদেশে গবেষকদের কাছ থেকে তারা সহায়তা নিতে পারেন এবং এভাবে   ট্রাইব্যুনালের বিচার প্রকৃয়া চলছিল।

আদেশে বলা হয়, ট্রাইব্যুনালের চেয়ারম্যানের সুযোগ হয়েছে আন্তর্জাতিক অপরাধ আইন বিশেষজ্ঞ ড. আহমেদ জিয়াউদ্দিন এবং আরো  কয়েকজন বাংলাদেশী যারা ব্রাসেলসহ অন্যান্য  জায়গায় বাস করেন তাদের সহায়তা গ্রহনের । বিশ্বব্যাপী আন্তর্জাতিক অপরাধ আইনের উন্নয়ন বিষয়ে ড. আহমেদ জিয়াউদ্দিনের সাথে চেয়ারম্যানের প্রায়ই আলোচনা হত এবং তার কাছ থেকে  চেয়ারম্যান এ বিষয়ে সহায়তা গ্রহণ করেছেন। এই বিচার প্রকৃয়া চলাকালে এবং বিভিন্ন আদেশের  সময় চেয়ারম্যান তার কাছ থেকে সহায়তা নিয়েছেন। এ উপলক্ষে তাদের দুজনের মধ্যে স্কাইপির মাধ্যমে কথপোকথন হয়েছে।

আদেশে বিচারপতি নিজামুল হক বলেন, দুই বা তিনদিন আগে চেয়ারম্যানের ইমেইল, স্কাইপি  একাউন্টস এবং কম্পিউটার  হ্যাক হয়। গতকাল (বুধবার) রাত দশটায় ৯১৯৮১০০১৬৬২ নম্বর থেকে চেয়ারম্যানের কাছে ফোন আসে। ফোন নম্বরটি  লন্ডনভিত্তিক ইকনোমিস্ট  ম্যাগাজিনের। ফোন করে চেয়ারম্যানকে বলা হয় চেয়ারম্যান ড. আহমেদ জিয়াউদ্দিনের সাথে যেসব কথাবার্তা বলেছেন তা তাদের কাছে আছে। এবং এ বিষয়ে চেয়ারম্যানকে   কিছু প্রশ্ন করা হয়। ফোনে তিনি  আরো জানান  যে, চেয়ারম্যান নিয়মতি ড. আহমেদ জিয়া উদ্দিনের সাথে কথা বলেন এবং তার কাছ থেকে  উপদেশ  গ্রহণ করেন।  তিনি জানান, চেয়ারম্যান ড. আহমেদ জিয়া উদ্দিনের কাছ থেকে ইমেইলের মাধ্যমে যেসব জিনিস গ্রহণ করেছেন তার সবকিছুই তাদের কাছে রয়েছে। এভাবে চেয়ারম্যান এ উদ্বেগজনক বিষয়টি জানতে পারেন।

আদেশে বলা হয়, ইমেইল, স্কাইপি, কম্পিউটার হ্যাক করা, চেয়ারম্যানের কাছ থেকে অবৈধভাবে ব্যক্তিগত গোপনীয় তথ্য সংগ্রহ করা   ব্যক্তিগত গোপনীয়তার লঙ্ঘন এবং  বাংলাদেশের সুপ্রীম কোর্টের একজন বিচারপতিকে প্রভাবিত করার শামিল। টেলিফোনে চেয়ারম্যানের সাথে যিনি এ বিষয়ে কথা বলেছেন তিনি  নিজেকে চেয়ারম্যানের সাথে কথপোকথনে লিপ্ত করেছেন এবং আইন অনুযায়ী তিনি এটি পারেননা। চেয়্যাারম্যান আরো জানতে পেরেছেন যে, ড. আহমেদ জিয়াউদ্দিনের ইমেইল, স্কাইপি এবং কম্পিউটারও হ্যাক হয়েছে। এতে এটি পরিষ্কার যে, যারা এ  ট্রাইব্যুনালের চলমান  বিচার কার্যক্রমকে ব্যহত করার কাজে লিপ্ত তারা এর সাথে জড়িত । এটা কোনমতেই  মেনে নেয়া যায়না। কাজেই  ইকনোমিস্টের  সাউথ এশিয়া ব্যুরো চিফ এ্যাডাম রবার্টস এবং ইকনোমিস্টের চিফ এডিটর রব গিফর্ডের প্রতি আমরা নোটিশ জারি করছি। আন্তর্জাতিক অপরাধ আইনের ১১(৪) ধারা মোতাবেক কেন তাদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা গ্রহণ প্রকৃয়া শুরু করা হবেনা  সে মর্মে তিন সপ্তাহের মধ্যে  জবাব দিতে হবে। তারা  ইমেইল, স্কাইপি একাউন্টস এবং  চেয়ারম্যানের কম্পিউটর  থেকে যেসব তথ্য সংগ্রহ করেছেন তাও গোপন রাখার নির্দেশ দেয়া হল। এটি প্রকাশ করলে চেয়ারম্যানের ব্যক্তিগত গোপনীয়তা লঙ্ঘিত হবে এবং চেয়ারম্যানের ব্যক্তিগত পোগনীয়তা রক্ষা করা দরকার। তারা যদি এটি ভঙ্গ  এসব প্রকাশ  করে তাহলে আইন অনুযায়ী তাদের বিরুদ্ধে যথাযথ ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে।

যথাযথ পদক্ষেপ গ্রহনের জন্য আদেশের কপি ইনেসপেক্টর  জেনারেল অব পুলিশ এবং বিটিআরসির চেয়ারম্যান বরাবর পাঠানোর নিদের্শ  দেয়া হয় হয়েছে।
(স্কাইপি : ইন্টারনেট সংযোগ ব্যবহার করে কম্পিউটার বা ল্যাপটপের মাধ্যমে দুজনের কথপোকথন যেখানে পরস্পরের ছবি দেখারও ব্যবস্থা থাকে। ) 

কোন মন্তব্য নেই:

একটি মন্তব্য পোস্ট করুন