মেহেদী হাসান, ১৩/১২/২০১২
যে স্কাইপি সংলাপ নিয়ে বর্তমানে দেশজুড়ে তোলপাড় চলছে তা সর্বপ্রথম পাবার দাবি করে লন্ডন থেকে প্রকাশিত বিশ্বখ্যাত সাময়িকী দি ইকনোমিস্ট।
ইকনোমিস্ট তাদের চলতি অনলাইন সংস্করনে স্কাইপি সংলাপ পর্যালোচনা করে একটি দীর্ঘ বিশ্লেষনমূলক প্রতিবেদন প্রকাশ করেছে। আগামী ১৫ ডিসেম্বর প্রিন্ট এডিশনে এটি প্রকাশিত হবে। ট্রাইব্যুনালের পদত্যাগী চেয়ারম্যান বিচারপতি নিজামুল হক ও বেলজিয়াম প্রবাসী ড. আহমেদ জিয়াউদ্দিনের মধ্যকার স্কাইপি সংলাপ, ইমেইল বিশ্লেষন করে ইকনোমিস্ট তাদের প্রতিবেদনে মন্তব্য করেছে এই বলে যে, ট্রাইব্যুনালের বিচার কার্যক্রম সম্পূর্ণ পুনর্বিচার প্রয়োজন হতে পারে । বাংলাদেশ সরকারের উচিত এটি বিশদভাবে তদন্ত করে দেখা। বিচারপতি নিজামুল হকের পদত্যাগের প্রেক্ষিতে এটি এখন অধিকতর জরুরি হয়ে পড়েছে। যেসব তথ্য প্রমান উদ্ধার হয়েছে তাতে বিচারের উপযুক্ত প্রকৃয়া নিয়ে আইনগত প্রশ্ন দেখা দিয়েছে। ট্রাইব্যুনালের বিচার কার্যক্রমে কিভাবে সরকার এবং বাইরের মহলের প্রভাব বিস্তার করেছে এবং এর ফলে এ বিচারের নিরপেক্ষতা কোন পর্যায়ে পৌছেছে তা দফা অনুসারে বিশ্লেষন করে দেখিয়েছে ইকনোমিস্ট।
বিচারপতি নিজামুল হকের কাছে গত ৫ ডিসেম্বর রাতে ফোন করে ইকনোমিস্ট কর্তৃপক্ষ জানায় তাদের কাছে স্কাইপি সংলাপ এবং ২৩০টি ইমেইল ডকুমেন্ট রয়েছে। পরের দিন ৬ ডিসেম্বর ট্রাইব্যুনাল-১ এ গোপন ডকুমেন্ট প্রকাশের ওপর নিষেধাজ্ঞা আরোপ করে ইকনোমিস্টের প্রতি রুল জারি করে। ৮ ডিসেম্বর ইকনোমিস্ট এ বিষয়ে একটি সংক্ষিপ্ত রিপোর্ট প্রকাশ করে জানায় তারা বিষয়টি তদন্ত করছে। যদি বিষয়টি বৃহত্তর জনগনের স্বার্থ সংশ্লিষ্ট হয় তাহলে তারা এটি প্রকাশ করবে। সে আলোকে ইকনোমিস্ট চলতি সংখ্যায় এ বিষয়ে তারা তাদের বিশ্লেষনমূলক রিপোর্ট প্রকাশ করল। রিপোর্টটির শিরোনাম ‘দি ট্রায়াল অব দি বার্থ অব এ নেশন’।
ইকনোমিস্টের প্রতি নিষেধাজ্ঞা আরোপ করে ট্রাইব্যুনালের রুল জারির পর অনেকে অপেক্ষা করছিল ইকনোমিস্টের পদক্ষেপ বিষয়ে। তারা এ রিপোর্ট আদৌ প্রকাশ করে কি-না এবং করলে কতটুকু কিভাবে করবে তা নিয়ে। তবে বাংলাদেশে দৈনিক আমার দেশ গত ৯ ডিসেম্বর থেকে স্কাইপি সংলাপ হুহবু প্রকাশ করে সারা দেশে হৈচৈ ফেলে দিয়েছে।
৬ ডিসেম্বর ট্রাইব্যুনাল -১ যখন ইকনোমিস্টের ওপর রুল জারি করে আদেশ দেন তখনই স্কাইপি সংলাপ হ্যাক হওয়ার বিষয়টি গোটা জাতি এবং বিশ্ববাসীর সামনে প্রকাশ হয় । স্বয়ং ট্রাইব্যুনাল সর্বপ্রথমন বিষয়টি সবার সামনে উন্মুক্ত করেছেন জাতির সামনে।
কোর্টের সে আদেশ থেকে জানা যায় বিচারপতি নিজামুল হক ব্রাসেলসে বসবাস রত ড. আহমেদর জিয়া উদ্দিনের কাছে বিচার প্রক্রিয়ার বিভিন্ন বিষয়, আদেশ নিয়ে বিভিন্ন সময়ে আলোচনা করেছেন স্কাইপির মাধ্যমে। সে স্কাইপি সংলাপ এবং তাদের দুজনের মধ্যকার আদান প্রদানকৃত সমস্ত ইমেইল হ্যাক বা আক্রান্ত হয়েছে। ইকনোমিস্টের কাছে সেসব রয়েছে বলে দাবি করেছে তারা।
ইকনোমিস্ট লিখেছে ২৮ আগহস্ট থেকে ২০ অক্টোবর পর্যন্ত ১৭ ঘন্টার কথোপকথন হয়েছে দুজনের মধ্যে। দৈনিক গড়ে ২০ মিনিট। বিচারপতি নিজামুল হক এবং ড. আহমেদ জিয়াউদ্দিনের আদান প্রদান করা ইমেইল এবং টেলিফোনে কথোপকথনের যতটুকু আমরা এখন পর্যন্ত পর্যালোচনা করেছি তাতে এ বিচার নিয়ে গুরুতর প্রশ্ন রয়েছে। এসব বিষয় থেকে এটা স্পষ্ট যে সরকার জনাব নিজামুল হকের ওপর চাপ সৃষ্টির চেষ্টা করেছে।
ইকনোমিস্ট বলেছে প্রাপ্ত তথ্য থেকে তিনটি বিষয় পরিস্কার যেমন রাষ্ট্রপক্ষ কিভাবে কেস সাজাবে এবং কোর্ট কিভাবে চার্জ গঠন করবে সে বিষয়ে জিয়া উদ্দিনের প্রভাব ছিল। সর্বশেষ হল সাঈদীর মামলা বিষয়ে ‘সাঈদী জাজমেন্ট’ নামে একটি ডকুমেন্ট আহমেদ জিয়াউদ্দিন নিজামুল হকের কাছে পাঠিয়েছেন। ১৪ অক্টোবর এটি সর্বশেষ এডিট করা হয়েছে বলে উল্লেখ করা হয়েছে ইমেইলে। এ ডকুমেন্টের চূড়ান্ত হেডলাইন ছিল ‘কনভিকশন/বেসিস’ বা দণ্ডাদেশ এবং ‘সেনটেন্সিং’ বা শাস্তি।
ইকনোমিস্ট বলছে অথচ তখনো মাওলানা সাঈদীর পক্ষের সাক্ষীদের সাক্ষ্য গ্রহণ চলছিল। তাহলে দেখা যাচ্ছে মাওলানা সাঈদীর বিরুদ্ধে মামলায় আসামী পক্ষের সাক্ষীদের সাক্ষ্য গ্রহনের আগেই নিজামুল হক তাকে অপরাধী সাব্যস্ত করে রায় দেয়ার বিষয়ে আশা প্রকাশ করেছেন।
আরেকটি উদাহরন পেশ করে ইকনোমিস্ট লিখছে মে মাসে আহমেদ জিয়াউদ্দিন গোলাম আযমের বিরুদ্ধে চার্জ গঠন বিষয়ে একটি ফাইনাল ড্রাফট তৈরি করে পঠিয়েছেন নিজামুল হকের কাছে। এর ছয় দিন পর ১৩ মে নিজামুল হক গোলাম আযমের বিরুদ্ধে চার্জ গঠনের যে আদেশ দিয়েছেন তা ওই ড্রাফটেরই হুবহু একটি ভার্সন ছিল মাত্র।
ইকনোমিস্ট মন্তব্য করেছে এই বলে যে, এটা অতিশয় গুরুতর একটি উদ্বেগের বিষয় । কারণ এতে যে শুধুমাত্র ন্যায় বিচার নস্যাত হওয়া ঝুকি রয়েছে এবং কোন ব্যক্তি বিশেষের ক্ষতিগ্রস্ত হওয়ার সম্ভবনা রয়েছে তা নয় বরং ত্রুটিপূর্ণ এ বিচার বাংলাদেশকে আরো অনেক ভোগান্তির মধ্যে টেনে নেবে। ইতোমধ্যে এ ভুলের কারনে বাংলাদেশ অনেক ভোগান্তির শীকার হয়েছে এবং এভাবে এগিয়ে গেলে তা বাংলাদেশের ক্ষত সারাবেনা বরং আরো বৃদ্ধি করবে।
কোন মন্তব্য নেই:
একটি মন্তব্য পোস্ট করুন