শুক্রবার, ২০ সেপ্টেম্বর, ২০১৩

যুদ্ধাপরাধ বিচারে ভারতের সমর্থন এবং ১৯৭৪ সালে ১৯৫ যুদ্ধাপরাধীকে ক্ষমায় ভারতের ভূমিকা


মেহেদী হাসান
বাংলাদেশের  চলমান যুদ্ধাপরাধ বিচারের প্রতি পূর্ণ সমর্থন ব্যক্ত করেছে ভারত। দেশের সর্বোচ্চ আদালত যথা সুপ্রীম কোর্ট এর আপিল বিভাগ কর্তৃক আব্দুল কাদের মোল্লাকে মৃত্যুদন্ড প্রদানের একদিন পর ১৮ ফেব্রুয়ারি বুধবার ভারত তাদের সমর্থনের কথা প্রকাশ করেছে। বিবিসি বাংলা সার্ভিসের কাছে ভারতের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় থেকে জানানো হয়েছে ১৯৭১ সালে বাংলাদেশের মাটিতে যে ভয়াবহ অপরাধ সংঘটিত হয়েছিল  তার বিচার এবং ‘কোসার’ বা নিষ্পত্তি চাইবার অধিকার বাংলাদেশের মানুষের আছে।
বিবিসর খবরে উল্লেখ করা হয়েছে ‘এর আগে যুদ্ধাপরাধীদের সর্বোচ্চ শাস্তির দাবিতে ঢাকার শাহবাগে যে আন্দোলন শুরু হয়েছিল, তার প্রতি প্রকাশ্যেই সংহতি জানিয়েছিলেন ভারতের পররাষ্ট্রমন্ত্রী সলমন খুরশিদ কিংবা ভারতের জাতীয় নিরাপত্তা উপদেষ্টা শিবশঙ্কর মেনন।’

তবে আজ ভারত বাংলাদেশে যুদ্ধাপরাধ বিচারের পক্ষে প্রকাশ্য অবস্থান নিলেও আজ থেকে ৩৮ বছর আগে ১৯৭৪ সালে ত্রিদেশীয় দিল্লী চুক্তি সম্পাদনের মাধ্যমে ১৯৫ জন যুদ্ধাপরাধীকে ক্ষমা করে দেয়ার পক্ষে ভারতই মুখ্য ভূমিকা পালন করেছিল। সেদিন পাকিস্তানী  চিহ্নিত  যুদ্ধাপরাধীদের ক্ষমা করে দেয়া এবং আজ এদেশীয় পাকিস্তানী সহযোগীদের যুদ্ধাপরাধীদের বিচারের পক্ষে ভারতের অবস্থান গভীর তাৎপর্যপূর্ণ। 
স্বাধীনতা পরবর্তী তৎকালীন আওয়ামী লীগ সরকার যুদ্ধাপরাধী হিসেবে বাছাইকৃত ১৯৫ জন পাকিস্তানী সেনাকর্মকর্তার বিচারের জন্য জনতার কাছে সর্বাত্মক প্রতিশ্রুতি দিয়েছিল, সমস্ত প্রস্তুতি গ্রহণ করেছিল এবং সংসদে স্বতন্ত্র একটি আইন তৈরি করেছিল ১৯৭৩ সালে। কিন্তু ১৯৭৪ সালে তাদের সবাইকে ক্ষমা করে দিয়ে ৯২ হাজার পাকিস্তানী সৈন্যদের ভারত থেকে পাঠিয়ে দেয়া হয় পাকিস্তানে। কিন্তু আজ ভারত এতকাল পরে বাংলাদেশে যুদ্ধাপরাধীদের বিচারের পক্ষে প্রকাশ্যে মুখ খুলেছে এবং এর পক্ষে প্রকাশ্য অবস্থান ব্যক্ত করেছে।  কিন্তু কেন?

ভারত সেদিন কেন পাকিস্তানী ১৯৫ জন চিহ্নিত যুদ্ধাপরাধীকে ক্ষমার পক্ষে অবস্থান নিয়েছিল তা উপলব্ধির আগে জানা দরকার সেদিন যুদ্ধাপরাধীদের বিচারের জন্য তৎকালীন আওয়ামী লীগ সরকার কি উদ্যোগ গ্রহণ করেছিল এবং এ বিষয়ে তাদের অবস্থান কি ছিল।
এ বিষয়ে পরিষ্কার এবং স্পষ্ট ধারণা পেতে ১৯৭২ থেকে ১৯৭৪ সালে প্রকাশিত দৈনিক  ইত্তেফাক, দৈনিক বাংলা. দৈনিক গণকণ্ঠ এবং দৈনিক সংবাদ  এ প্রকাশিত কিছু খবরের শিরোনাম এবং প্রতিবেদন এখানে তুলে ধরা হল। এসব  খবরের আলোকে  ১৯৫ জন যুদ্ধপরাধীদের ক্ষমার প্রেক্ষাপট, দালাল আইন, যুদ্ধাপরাধীদের বিচার নিয়ে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান  এবং অন্যান্য আওয়ামী লীগ নেতৃবৃন্দ  সেদিন কি বলেছিলেন তা  বোঝা যাবে।

১৯৭১ সালে মুক্তিযুদ্ধে  মানবতার বিরুদ্ধে সংঘটিত অপরাধের দায়ে যুদ্ধাপরাধীদের বিচারের উদ্যোগ নেয়  স্বাধীনতা পরবর্তী  বাংলাদেশ সরকার। যুদ্ধাপরাধীদের  বাছাই  করার জন্য একটি তদন্ত কমিটি গঠন করা হয়।   কমিটি বিচার বিশ্লেষন করে যুদ্ধাপারধীদের একটি তালিকা তৈরি করে। প্রথমে ৪০০ এবং পরে তা থেকে ১৯৫  জন যুদ্ধাপরাধীর  একটি চূড়ান্ত তালিকা তৈরি করে। এরা সকলেই ছিল পাকিস্তানী উচ্চ পদস্থ সেনা কর্মকর্তা যারা বাংলাদেশে যুদ্ধ পরিচালনার দায়িত্বে ছিল।   বেসামরিক নাগরিক হত্যা, ধর্ষন, লুটাপাট এবং  অগ্নিসংযোগের মত  মানবতার বিরুদ্ধে অপরাধের জন্য ১৯৫ জন পাকিস্তানী সেনা কর্মকর্তাকে যুদ্ধাপরাধী হিসেবে সাব্যস্ত করা হয়। তাদের বিচারের জন্য তৎকালীন প্রধানমন্ত্রী শেখ মুজিবুর রহমান এবং আওয়ামী লীগের অন্যান্য কেন্দ্রীয় নেতৃবৃন্দ বারবার বিভিন্ন জনসভায় এবং আন্তর্জাতিক অঙ্গনে   দৃঢ  প্রতিশ্রুতি ব্যক্ত করেন । 

১৯৭৩ সালের ১৭ এপ্রিল এক প্রেস বিজ্ঞপ্তির মাধ্যমে  সরকার যুদ্বাপরাধী হিসেবে ১৯৫ জন পাকিস্তানী সেনা কর্মকর্তার চূড়ান্ত তালিকা  তৈরি এবং তাদের বিচারের কথা ঘোষনা করে। ১৮  এপ্রিল দৈনিক  বাংলা পত্রিকায় এ বিষয়ে পরিবেশিত খবরে বলা হয়- “তদন্ত শেষে স্বাক্ষী প্রমানের ভিত্তিতে ১৯৫ জন ব্যক্তির বিচার অনুষ্ঠানের সিদ্ধান্ত   হয়েছে।  তাদের   অপরাধের মধ্যে  রয়েছে গণহত্যা, যুদ্ধাপরাধ, মানবতার বিরুদ্ধে অপরাধ, জেনেভা কনভেনশনের ৩ নং ধারা লঙ্ঘন, নরহত্য, বলাৎকার ও বাড়িঘর পোড়ানো। ঢাকার বিশেষ ট্রাইব্যুনাল তাদের বিচার করবে। মে মাসের শেষের দিকে তাদের  ট্রাব্যুনালের সামনে হাজির করা হতে পারে।”
মানবতার বিরুদ্ধে অপরাধের জন্য এসব যুদ্ধাপরাধীদের বিচারের দাবিতে সে সময়ে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানসহ অন্যান্য নেতৃবৃন্দ যে দাবি এবং প্রতিশ্রুতি ব্যক্ত করেছিলেন তার কয়েকটি উদাহরণ  সে সময়ের সংবাদপত্র থেকে এখানে  তুলে ধরা হল।

দৈনিক বাংলায় ১৯৭২ সালের  ৩ জুলাই একটি খবরের  হেডলাইন হল “যুদ্ধবন্দীদের বিচার হবেই-কুষ্টিয়া জনসভায় বঙ্গবন্ধু।” ঐ বছর ৩০ নভেম্বর একই  পত্রিকার আরেকটি  খবরের শিরোনাম হল “হত্যা ধর্ষণ লুন্ঠনকারী যুদ্ধাপরাধীদের রেহাই দেয়া হবেনা-পাবনার জনসভায় মনসুর আলী।”  খবরে লেখা হয় যোগাযোগমন্ত্রী ক্যাপ্টন মনসুর   আলী বলেন, পাকিস্তানী বর্বর সৈন্যরা এখানে মানবতা বিরোধী জঘন্যতম অপরাধেথ লিপ্ত হয়েছিল। মানবতার স্বার্থেই তাদের বিচার করা উচিত।

দৈনিক বাংলা, ৭ জুন ১৯৭২: “শীঘ্রই যুদ্ধাপরাধীদের প্রকাশ্যে বিচার করা হবে। কুয়লালামপুরে সাংবাদিকদের পররাষ্ট্রমন্ত্রী সামাদ আজাদ।”
১৯৭৩ সালের ১৩ ফেব্রুয়ারি দৈনিক বাংলা পত্রিকার  আরেকটি  খবরের শিরোনাম হল “বাংলার মাটিতে যুদ্ধাপরাধীদের বিচার হবেই- টাঙ্গাইলে বঙ্গবন্ধু।” একই বছর ঐ পত্রিকার  আরেকটি খবরের শিরোনাম হল “১৯৫ জন যুদ্ধাপরাধীর বিচার হবেই-নয়া দিল্লীতে বঙ্গবন্ধু।” 

এভাবে ১৯৭২ এবং ১৯৭৩ সালের বিভিন্ন পত্রিকায় থেকে  যুদ্ধাপরাধীদের বিচার  বিষয়ে তৎকালীন আওয়ামী লীগ নেতৃবৃন্দের অসংখ্য দৃঢ় প্রতিশ্রুতি ব্যক্ত করার উদাহরণ দেয়া যায়। সেমময়কার পত্রিকার পাতায়  পাতায় এর স্বাক্ষর রয়েছে। 

পাকিস্তানী ১৯৫ জন  সেনা কর্মকর্তার  বিচারের জন্য ১৯৭৩ সালের ১৮ জুলাই   ‘ইন্টারন্যাশনাল ওয়ার ক্রাইমস (ট্রাইবিউনালস ) এ্যাক্ট  আইন পাশ হয় সংসদে। কিন্তু এত আয়োজন, এত প্রশ্রুতি সত্ত্বেও

১৯৭৪ সালের ৯ এপ্রিল দিল্লীতে  ভারত-পাকিস্তান এবং বাংলাদেশের মধ্যে স্বাক্ষরিত ত্রিদেশীয় চুক্তির মাধ্যমে মানবতার বিরুদ্ধে অপরাধের সাথে জড়িত এসব যুদ্ধাপরাধীদের ক্ষমা ঘোষনা করা হয়।
চুক্তির ১৩, ১৪ এবং ১৫ দফায় বলা হয়েছে “পাকিস্তান স্বীয় সামরিক বাহিনীর অপরাধের নিন্দা জ্ঞাপন ও উহার জন্য  গভীর অনুশোচনা ও দুংখ প্রকাশ  করেছে।  ইসলামাবাদ সরকারের এই মনোভাব এবং পাকিস্তানের প্রধানমন্ত্রী জুলফিকার আলী ভুট্টোর ‘ক্ষমা করো এবং ভুলে যাও’ আবেদনের প্রেক্ষিতে  বাংলাদেশ সরকার ১৯৫ জন পাকিস্তানী যুদ্ধপারাধীর বিচার  না করে  ক্ষমা প্রদর্শনের সিদ্ধান্ত নিয়েছে।  অত:পর অন্যান্য যুদ্ধবন্দীদের সাথে তাদেরও ভারত হতে পাকিস্তানে ফেরত পাঠানো হবে।  উপমাহাদেশে শান্তি,  স্থিতি এবং অগ্রগতির লক্ষ্যে  এ চুক্তি করা   হয়েছে।”

১৯৭৪ সালের ১২ এপ্রিল  দৈনিক ইত্তেফাক  পত্রিকায় প্রকাশিত এ বিষয়ক একটি খবরের শিরোনাম ছিল “ক্ষমা প্রদর্শন করিয়া আমরা বিশ্বের  প্রশংসা অর্জন করিয়াছি-ড. কামাল হোসেন”। প্রতিবেদনটিতে লেখা হয়-“পররাষ্ট্র মন্ত্রী ড. কামাল হোসেন বলিয়াছেন,  বাংলাদেশের জনগণের উপর সামরিক বাহিনী যে অত্যাচার করিয়াছে পাকিস্তান সরকার সেজন্য দোষ স্বীকার করিয়া লইয়াছেন, ক্ষমার আবেদন জানাইয়াছেন। ঐ দেশের প্রধানমন্ত্রী সমগ্র বাঙ্গালী জাতির  কাছে ক্ষমা  চাহিয়াছেন। আমরা সুবিচার প্রতিষ্ঠা করিতে চাহিয়াছিলাম, প্রতিহিংসা চাইনা। ক্ষমা চাওয়া হইয়াছে ক্ষমা দেওয়া হইয়াছে।

পররাষ্ট্র  মন্ত্রী  বলিয়াছেন, যুদ্ধাপরাধীদের বিচার করিলে তিনটি বিষয় প্রতিষ্ঠা করা যায়। প্রথমত ইতিহাসে ইহার স্থান দেওয়া, দ্বিতীয়ত যে দেশের লোক এই অন্যায় করিয়াছে তাহা প্রমান করা এবং তৃতীয়ত আমাদের অবর্ণনীয় ক্ষয়ক্ষতির প্রমান দেওয়া। যেহেতু এ ব্যাপারে পাকিস্তান সরকার কোন চ্যালেঞ্জ করেনাই বরং সকল অন্যায় স্বীকার করিয়া নিয়াছে তখন আর বিচার করার সঙ্গত কোন কারণ নাই।  এতে কোন লাভ হইবে না। যুদ্ধাপরাধীদের বিচার বন্ধ করায় বাংলাদেশ বিশ্বের প্রশংসা অর্জন করিয়াছে। এর ফলে উপমহাদেশে স্বাভাবিকতা ফিরিয়া আসিবে। এটা সকলে চায়। দিল্লী চুক্তি সকলে গ্রহণ করিয়াছে।”

যুদ্ধাপরাধীদের ক্ষমা করা বিষয়ক ১৬ দফার ত্রিপাক্ষিক চুক্তির তিনটি মূল কপি  দিল্লী, ইসলামাবাদ এবং ঢাকা থেকে  একযোগে  পূর্ণ বিবরণসহ প্রকাশিত হয়।

ত্রিদেশীয় দিল্লী চুক্তিতেও মূলত পাকিস্তানী ১৯৫ জন সেনা কর্মকর্তাকে যুদ্ধাপরাধী তথা মানবতার বিরুদ্ধে অপরাধী হিসেবে আখ্যায়িত করা হয়েছে।  চুক্তির ১৩ দফায় লেখা হয়েছে-“বাংলাদেশের পররাষ্ট্রমন্ত্রী (ড. কামালা হোসেন) বলেন যে,  পাকিন্তানী  যুদ্ধাপরাধীরা  বিভিন্ন ধরণের অপরাধ যেমন যুদ্ধাপরাধ, মানবতার বিরুদ্ধে অপরাধ এবং গণহত্যার মত অপরাধ করেছে।”

১৯৫ জন যুদ্ধাপরাধীকে ক্ষমার পেক্ষাপট
১৯৭৪ সালের ৯ এপ্রিল বাংলাদেশ ভারত এবং পাকিস্তানেবর মধ্যে  ত্রিদেশীয় দিল্লী চুক্তি স্বাক্ষরিত হয়।   চুক্তি অনুযয়ী বাংলাদেশে  ১৯৭১ সালের যুদ্ধে  গণহত্যা,   মানবতার বিরুদ্ধে অপরাধ এবং  যুদ্ধাপরাধের দায়ে অভিযুক্ত ১৯৫ জন পাকিস্তানী সেনাকর্মকর্তাকে ক্ষমা করে বাংলাদেশ।  চুক্তিতে বলা হয়েছে, ১৯৭১ সালের বেদনায়ক  ঘটনার কারণে পাকিস্তানের প্রধানমন্ত্রীর পক্ষ থেকে বাংলাদেশের কাছে  ‘ক্ষমা কর এবং ভুলে যাও’ আবেদনের প্রেক্ষিতে বাংলাদেশ তাদের বিচার না করে   ক্ষমা করে দিয়েছে। যুদ্ধের কারণে  ভারতে আটক ৯২ হাজার পাকিস্তানী সৈন্যসহ ৩০ লাখের উপরে বেসামরিক নাগরিক তখন তিন দেশে  আটকা পড়ে ছিল ।  ১৯৭১ সালের যুদ্ধের পরপরই ১৯৭২ সালে ভারত- পাকিস্তানের মধ্যে সিমলা চুক্তি স্বাক্ষর হয় এবং চুক্তিতে   দুই দেশের মধ্যে বন্ধুত্বপূর্ণ সম্পর্ক এবং  সম্প্রীতি  স্থাপনে সব ধরণের প্রতিশ্রুতির কথা ব্যক্ত করা হয় উভয় দেশের পক্ষ থেকে।   কিন্তু তার কোনটিই বাস্তবায়ন সম্ভব হয়না  বাংলাদেশকেন্দ্রিক যুদ্ধউত্তর সমস্যার সমাধান না হওয়ায় । যুদ্ধউত্তর সমস্যার সমাধান এবং তা নিয়ে তিন দেশের মধ্যে উত্তেজনাকর পরিস্থিতি নিরসনে ১৯৭২ সাল থেকে  দফায় দফায় আলোচনাসহ নানামুখী উদ্যোগ নেয়া হয় এবং সবশেষে তা পূর্ণতা পায়  ১৯৭৪ সালের  ত্রিদেশীয় চুক্তির মাধ্যমে। 

১৯৭২ থেকে ১৯৭৪ সাল পর্যন্ত ১৯৫ জন  পাকিস্তানী যুদ্ধাপরাধীদের বিচারের উদ্যোগ; বিচার, যুদ্ধবন্দী বিনিময়, বাংলাদেশকে স্বীকৃতিদানসহ সেময়কার এবিষয়ক অন্যান্য ইস্যুগুলো নিয়ে বাংলাদেশ, ভারত এবং পাকিস্তানের তৎকালীন নেতৃবৃন্দের বক্তব্য বিবৃতি এবং অবস্থান বিশ্লেষন করলে ১৯৫ জন চিহ্নিত যুদ্ধাপরাধীদের ছেড়ে দেয়া এবং ত্রিদেশীয় চুক্তির প্রেক্ষাপট স্পষ্টভাবে ফুটে ওঠে।

এসব বিষয় বিশ্লেষন থেকে এটি অনুমেয় যে, যুদ্ধাপরাধী হিসেবে বাছাইকৃত ১৯৫ জন সেনা কর্মকর্তাদের ছেড়ে দেয়ার বিষয়ে বাংলাদেশের  দিক থেকে বিবেচ্য বিষয় ছিল  পাকিস্তানসহ মুসলিম বিশ্বের ¯ীকৃতি আদায় এবং  পাকিস্তানে আটকে পড়া বাংলাদেশী সামরিক ও বেসামরিক নাগরিকদের ফিরিয়ে আনা।

বাংলাদেশ পাকিস্তান থেকে আলাদা হয়েছে, পাকিস্তান ভেঙ্গে গেছে; এটি ছিল তখন ভারতের কাছে পরম পাওয়া। বিশ্বেষন থেকে এটি অনুমেয় যে, পাকিস্তান ভাঙ্গতে পারার আনন্দে ভারত তখন বিভোর ছিল।  যুদ্ধাপরাধের বিচার  নিয়ে আর বেশি ঘাটাঘাটি  করে পরিস্থিতি ঘোলাটে করে বিজয়কে ভিন্ন খাতে প্রবাহিত করার ঝুকি তারা নিতে চায়নি।   ভারতয় সেনাবাহিনী এবং সোভিয়েত ইউনিয়নও তখন যুদ্ধাপরাধীদের বিচার নিয়ে পরিস্থিতি ঘোলাটে করার পক্ষে ছিলনা।  তাছাড়া পাকিস্তান বাংলাদেশকে দীর্ঘদিন ধরে স্বীকৃতি না দেয়ায় পরাজয়ের প্রতিশোধ হিসেবে পাকিস্তানের পক্ষ থেকে পুনরায় হামলার আশঙ্কাও  করেছিল ভারত। সর্বোপরি শত্রু রাষ্ট্রে পাকিস্তানের ৯৩ হাজার বন্দী সৈন্যের বিশাল বোঝা নিয়ে ভারত তখন এক   বিরূপ পরিস্থিতির  মুখোমুখি অবস্থানে এসে দাড়ায়।  সেসময়কার সংবাদপত্রের খবর বিশ্লেষন করলে এসব চিত্র  বেরিয়ে আসে।

পাকিস্তান বাংলাদেশকে ১৯৭৪ সাল পর্যন্ত  স্বীকৃতি দেয়নি। পরাজিত  এবং ুব্ধ পাকিস্তান বাংলাদেশকে নিজের দেশ দাবি করে আবার যুদ্ধ বাঁধিয়ে দিতে পারে এমন আশঙ্কা ছিল ভারত এবং বাংলাদেশ উভয়ের পক্ষ থেকে।

যেমন ১৯৭৩ সালের ২ এপ্রিল দৈনিক বাংলা পত্রিকার একটি  খবরের হেডলাইন “পিন্ডির যুদ্ধ উন্মাদনা এখনো শেষ হয়নি। আবার আঘাত হানতে পারে-  ভারতীয় সমর বিশেষজ্ঞদের অভিমত।”   প্রকাশিত খবরে বলা হয়েছে “ তাদের পক্ষ থেকে এখনো বিপদের আশঙ্কা রয়েছে । ভারতের দুর্বল  স্থানে আঘাত হানতে পারে। চন্ডীগড় থেকে ইউএনআই পরিবেশিত খবরে বলা হয়- ফিল্ড মার্শাল মানকেশ আজ এখানে বলেন, ১৯৭১ সালের যুদ্ধে ভারতের নিকট পরাজয়কে পাকিস্তান যে এখনো স্বীকার করতে পারেনি সে বিষয়ে তিনি একমত।”
১৯৭৩ সালের ১৭ এপ্রিল  ঢাকা দিল্লী যৌথ ঘোষনায় বলা হয়- উপমহাদেশের বাস্তবতাকে স্বীকৃতিদানে ব্যর্থতার দরুণ  উপমহাদেশে বন্ধুত্ব ও সম্প্রীতির কাজে কোন অগ্রগতি হয়নি। পাকিস্তান এখনো বাংলাদেশের প্রতি শত্রুতা অব্যাহ রেখেছে। ভারতের প্রতিও সে শত্রুতা বহাল রেখেছে। (সূত্র দৈনিক বাংলা ১৮ এপ্রিল)

এমনকি  পাকিস্তানের কাছ থেকে বাংলাদেশের স্বীকৃতি আদায় ছাড়াই ভারত পাকস্তানী যুদ্ধাপরাধীদের ক্ষমা করার পক্ষপাতি ছিল। ১৯৭৩ সালের ২২ জানুয়ারি দৈনিক বাংলা পত্রিকায় এ মর্মে একটি খবর বের হয়। পাকিস্তানী সাংবাদিকদের সাথে সাক্ষাৎকারে ভারতের পররাষ্ট্রমন্ত্রী শরন সিং বলেছেন “যদি ভারত-পাকিস্তান বাংলাদেশ সমঝোতা সম্ভব হয় তবে বাংলাদেশকে পাকিস্তানের স্বীকতি ছাড়াই যুদ্ধবন্দীদের স্বদেশে প্রত্যাবর্তন সম্ভব।” অবশ্য নয়াদিল্লীতে অবস্থানরত বাসসের তখনকার প্রতিনিধি আতাউস সামাদের কাছে প্রদত্ত একটি সাক্ষাতকারে শরণ সিং এ কথা  অস্বীকার করেন। ২৪ জানুয়ারি দৈনিক বাংলায় এ খবর প্রচারিত হয়। কিন্তু পরবর্তীতে ইন্দিরা গান্ধীর অন্য এক বিবৃতিতে শরন সিং যে একথা বলেছিলেন তার সত্যতা ধরা পড়ে। ১৯৭৩ সালের ২৮ মে নয়াদিল্লীতে অস্ট্রেলীয় ব্রডকাস্টিং
করপোরেশনের সাথে সাক্ষাৎকারে ইন্দিরা গান্ধী বলেন, “বাংলাদেশ ইতোমধ্যে অনেকখানি ছাড় দিয়েছে। আগে স্বীকৃতি দিতে হবে সে শর্তও বাদ দিয়েছে” ।

যুদ্ধবন্দীদের নিয়ে ভারতও তখন যে বিব্রতকর পরিস্থিতির মুখে পড়ে তাতে তাদের অবস্থান ছিল ছেড়ে দিতে পারলেই যেন বাঁচি অবস্থা। বিষয়টি সুরাহা করার জন্য মুসলিম বিশ্বসহ অনেক দেশ থেকে তাদের ওপর চাপ আসে।   ভারত বাংলাদেশ মিলে তাদের বিচারের উদ্যোগ নিলে  উপমহাদেশ দীর্ঘস্থায়ী সংঘাত এবং অশান্তির দিকে পা বাড়াবে বলে মনে করে ভারত।

তখনকার খবরগুলো বিশ্লেষন করলে দেখা যায় যুদ্ধবন্দীদের বিচারের বিষয়ে বাংলাদেশের সামনে প্রধানত তিনটি সমস্যার উদ্ভব হয় তখন। প্রথমত পাকিস্তান থেকে স্বীকৃতি না পাওয়া, দ্বিতীয়ত পাকিস্তানে আটকে পড়া সামরিক ও বেসামরিক লোকদের ফেরত আনা এবং  তৃতীয়ত সৌদী আরবসহ  মুসলিম বিশ্ব থেকে স্বীকৃতি না পাওয়ার সমস্যা।

পাকিস্তান বাংলাদেশের  জাতিসংঘের  সদস্য হবার বিরুদ্ধে লবিং করছে বলে অভিযোগ করা হয় বাংলাদেশ সরকারের পক্ষ থেকে। এছাড়া পাকিস্তানে আটক বাংলাদেশী সেনা সদস্যদের প্রতি নির্মম আচরণের পথ বেছে নেয় পাকিস্তান। ১৯৭৩ সালে ১০ এপ্রিল খবর বের হয়- পাকিস্তান সরকার সেখানে আটক ৫ জন বাঙ্গালী সেনা অফিসারকে গুলি করে হত্যা করেছে। বাংলাদেশ যুদ্ধবন্দীদের বিচার করলে পাকিস্তানও সেখানে আটক বাংলাদেশীদের বিচার করবে বলে হুমকি দেয় ভুট্টো। ১৯৭২ সালে ২ জুলাই  ভারতের সিমলায় তিনি বলেন“ বাংলাদেশে পাকিস্তানের যুদ্ধাপরাধীদের বিচার শুরু হলে পরিস্থিতি এমন এক পর্যায়ে পৌছব যেখান থেকে আর ফিরে আসা সম্ভব হবেনা।

যুদ্ধবন্দীদের বিচারের জন্য ভারত যাতে পাকিস্তানী   সৈন্যদের বাংলাদেশের কাছে হস্তান্তর  না করে সেজন্য ভারতের কাছে  পাকিস্তান জোরালো লবিং করে আসছিল।

১৯৭৪ সালের ১৬ ফেব্রুয়ারি লাহোরে এক সংবাদ সম্মেলনে জুলফিকার আলী ভুট্টো বলেন, “ যুদ্ধাপরাধের দয়ে ১৯৫ জন যুদ্ধবন্দীর পরিকল্পিত বিচার বাতিল করা হইবে এই মর্মে  দৃঢ় আশ্বাসের বিনিময়ে তিনি বাংলাদেশকে স্বীকৃতি দান করিবেন। এই প্রতিশ্রুতি কেবল বাংলাদেশকই দিতে হইবে এমন কোন কথা নয়। যেকোন দেশ এই প্রতিশ্রুতি দিতে পারে।” সূত্র ইত্তেফাক, ১৭ ফেব্রুয়ারি ১৯৭৪)।

যুদ্ধাপরাযুদ্ধাপরাধীদের ক্ষমা করার বিষয়টি যে ভারতের নিয়ন্ত্রনে ছিল সে বিষয়ে সাবেক সচিব আসাফ্  উদ্দৌলাহ  একটি  প্রবন্ধে লিখেছেন, “১৯৭৪ সালে মে মাসে দিল্লীর রাষ্ট্রপতি ভবনে  যখন মুজিব-ইন্দিরা চুক্তি স্বাক্ষরিত হয় তখন সেই ঐতিহাসিক সভায় যোগদানের সুযোগ আমার হয়েছিল।...... সে  সময় হঠাৎ করে ভারতের পররাষ্ট্রমন্ত্রী সর্দার সরওয়ান সিং বঙ্গবন্ধুকে বললেন, লাহোরে তার ওআইসির সম্মেলনে যোগদান নিয়ে ভারতের জনমনে কিছু বিভ্রান্তি সৃষ্টি  হয়েছে। মুক্তিযুদ্ধকালীন বাংলাদেশ সরকারের সাথে ভারত সরকার এরকম একটি সমঝোতায় পৌছায় যে, উভয় সরকার তাদের বৈদেশিক নীতি অনুসরনে একে অন্যের সাথে আলোচনা ও সমন্বয় সাধন করবে। সরওয়ান সিং জানান, বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রীর লাহোরে ওআইসি সম্মেলনে যোগদান করার বিষয়ে সেই সমন্বয় সাধন হয়নি। বঙ্গবন্ধু এর জবাবে ইন্দিরা গান্ধীকে বললেন, “আমিও তাহলে আপনাকে একটি কথা জিজ্ঞেস করব। বাংলার জনমানুষকে  আমি জোরগলায় জসসভায় প্রতিশ্রুতি দিয়েছিলাম  পাকিস্তানী যুদ্ধাপরাধীদের বিচার করা হবে বাংলার মাটিতেই। অথচ আপনি ও ভুট্টো সিমলায় স্থির করলেন যে, চিহ্নিত ১৯৫ জন সহ সব পাকিস্তানী সৈনিককে বিনা বিচারে পাকস্তানে চলে যেতে দেয়া হবে। আর এ সিদ্ধান্ত নেয়া হল আমাকে না জানিয়ে।” (সূত্র- বিবেচনা ও বিদ্বেষ, দৈনিক নয়া দিগন্ত, ৮ এপ্রিল ২০১০।

১৯৭৪ সালে পাকিস্তানী  যুদ্ধাপরাধীদের ক্ষমার পক্ষে এবং আজ দেশীয় সহযোগীদের যুদ্ধাপরাধী হিসেবে বিচারের পক্ষে ভারতের প্রকাশ্য অবস্থান গভীর তাৎপর্যপূর্ণ বলে উল্লেখ করেছিলাম লেখার শুরুতে। ইতিহাস বিষয়ে পাঠ আছে এমন সকলেই জানেন, ১৯৪০ সালের লাহোর প্রস্তাবের আলোকে ১৯৪৭ সালে পূর্ববঙ্গ, পশ্চিম বঙ্গ এবং আসামসহ অন্যান্য বাংলাভাষী অঞ্চল  নিয়ে বৃহৎ অখন্ড স্বাধীন বাংলা প্রতিষ্ঠার পক্ষে মত দিয়েছিলেন মোহাম্মদ আলী জিন্নাহ। অপর দিকে এর বিপক্ষে অবস্থান নিয়েছিনে কংগ্রেসের নেতৃবৃন্দ। স্বাধীন ভারতের পাশে এতবড় একটি স্বাধীন দেশকে মেনে নিতে তারা অপরাগ ছিল। তাছাড়া  অতীতের বিভিন্ন নির্বাচনে দেখা গেছে অখন্ড স্বাধীন বঙ্গে হিন্দু মুসলমানদের ভোটের যে অনুপাত তাতে সবসময় মুসলমানদের মধ্য থেকে নেতৃত্ব নির্বাচিত হয়েছেন। কাজেই এ  অখন্ড স্বাধীন বাংলা যে আরেকটি পাকিস্তান হবে কংগ্রেস নেতৃবৃন্দ সেটা তখনই খুব ভাল করে বুঝতে পেরেছিল। তাই তারা এর বিপক্ষে  অবস্থান নেয়। পূর্ববাংলা তথা বাংলাদেশকে পশ্চিম পাকিস্তানের সাথে  একত্র করে এক  পাকিস্তান এর পক্ষে ভারত অবস্থান নিয়েছিল ভিন্ন একটি আশাবাদ থেকে। তাহল ভারত তখনই বুঝতে পেরেছিল মাঝখানে হাজার মাইলের ব্যবধানে অবস্থিত দুটি ভূখন্ড খুব বেশিদিন একত্র থাকতে পারবেনা এবং অচিরেই পূর্ব বাংলা ভারতের সাথে একাকার হয়ে যাবে। যাহোক ভারতের তৎকালীন সে আশাবাদ আজো বাস্তবায়িত হয়নি।
১৯৭১ সালে স্বাধীনতা যুদ্ধের সময় ভারত কর্তৃক বাংলাদেশের পক্ষে প্রকাশ্য অবস্থান, কার্যকরি অবদান এবং শেষ পর্যন্ত যুদ্ধে জড়িয়ে পড়া বিষয়ে  একটি প্রতিষ্ঠিত অভিযোগ হল স্বাধীনতা যুদ্ধে বাংলাদেশের পাশে দাড়ানো এবং সহযোগিতার বিষয়টি  যতটা না গরুত্বপূর্ণ তার চেয়ে বেশি জরুরি ছিল পাকিস্তান ভাঙ্গার আকাঙ্খা এবং পরিকল্পনা বাস্তবায়ন।  সে কারনে পাকিস্তান ভাঙ্গতে পারা ছিল তখন তাদের জন্য  গৌরবময় অধ্যায়। স্বাধীনতা যুদ্ধের সময় কোটি কোটি ক্ষতিগ্রস্ত মানুষ, পিতা মাতা ভাই বোন সন্তান আপনজন হারানো  লক্ষ লক্ষ মানুষের দু:খ বেদনা, ইজ্জত হারানো অগনিত মা বোন আত্মীয় স্বজনদের বুকফাঁটা ক্রন্দন এবং তাদের বিচার পাবার আকঙ্খা তখন ভারতের কাছে কোন বিষয় ছিলনা। কিন্তু আজ বাংলাদেশের মানুষের বিচার পাবার আকঙ্খার তাদের কাছে গুরুত্বপূর্ণ হয়ে দেখা দিয়েছে, তাদের বিচার পাবার আকাঙ্খার  প্রতি তারা অবস্থান নিয়েছে এবং চলমান বিচারকে তারা বাংলাদেশের সেইসব ক্ষত বিক্ষত বেদনাহত কোটি কোটি  মানুষের বিচার পাবার আকঙ্খার বাস্তবায়ন বলে মনে করছে।  বাংলাদেশের পক্ষ থেকে ভারতের বিরুদ্ধে আরেকটি প্রতিষ্ঠিত অভিযোগ হচ্ছে গত ৪২ বছরে দুই দেশের মধ্যে যে বিরাজমান সম্পর্ক তাতে এটি স্পষ্ট যে, মাথা উচু করে স্বগৌরবে দাড়ানো একটি শক্তিশালী বাংলাদেশ তাদের কাছে কাম্য নয়। তাদের কাছে কাম্য সদা অস্থির, দুর্বল, অস্থিতিশীল, নতজানু একটি দেশ এবং এর মাধ্যমে ফায়দা হাসিল করা। এই অভিযোগের মধ্যেই হয়ত নিহিত রয়েছে আজকের চলমান যুদ্ধাপরাধ বিচারের প্রতি তাদের প্রকাশ্য অবস্থান। তাছাড়া বর্তমান চলমান রাজনৈতিক সঙ্কট এর দিক বিবেচনায়ও এর আরো অনেক তাৎপর্য রয়েছে । বাংলাদেশের যুদ্ধাপরাধ বিচার যে বিচ্ছিন্ন  কোন বিষয় নয় এবং এর সাথে যে আরো অনেক যোগসূত্র রয়েছে তাও প্রতিষ্ঠিত হয়েছে ভারতের এ প্রকাশ্য অবস্থান ব্যক্ত করার মধ্য দিয়ে। 20/9/2013.

কোন মন্তব্য নেই:

একটি মন্তব্য পোস্ট করুন