সোমবার, ৯ সেপ্টেম্বর, ২০১৩

মাওলানা নিজামীর বিরুদ্ধে ২০ তম সাক্ষীর জেরা সম্পন্ন//// জেরায় একের পর এক প্রশ্নে জানা নেই উত্তর দেন সাক্ষী

মেহেদী হাসান, ৯/৯/২০১৩
মাওলানা মতিউর রহমান নিজামীর বিরুদ্ধে ২০ তম সাক্ষী আলহাজ তহুরুল আলম মোল্লার  জেরা আজ  সম্পন্ন হয়েছে। আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনাল-১ এ গতকাল রোববার তার জবানবন্দী গ্রহণ করা হয়। সাক্ষীকে আজ  জেরা করেন মাওলানা নিাজমীর পক্ষে আইনজীবী মিজানুল ইসলাম। জেরায় সাক্ষীর কাছে ১৯৭১ সালে পাবনা জেলা ও মহকুমার  বিভিন্ন দল ও ছাত্র সংগঠনের  নেতা, শান্তি কমিটির নেতার  নাম জানতে চাওয়া হয়। কিন্তু এজাতীয় প্রশ্নের জবাবে সাক্ষী একের পর এক উত্তর দেন জানা নেই বলে।
১৯৭১ সালে পাবনা জেলা ও মহকুমা আওয়ামী লীগ,  মুসলিম লীগ, ন্যাপ এর সভাপতি সেক্রেটারি কে ছিলেন, শান্তি কমিটির সভাপতি কে ছিলেন,  পাবনা ছাত্রসংঘের সভাপতি সেক্রেটারি কারা ছিলেন, কেন্দ্রীয় ছাত্র ইউনিয়নের সভাপতি সেক্রেটারি কারা ছিলেন, কেন্দ্রীয় ছাত্রসংঘের সেক্রেটারি কে ছিলেন এসব প্রশ্নের জবাবে জানা নেই, স্মরন নেই বলে জবাব দেন সাক্ষী।
অ্যাডভোকেট মিজানুল ইসলাম বলেন, এদের কারোর নাম সাক্ষীর জানা  নেই। কিন্তু ১৯৭১ সালে মতিউর রহমান নিজামী  ছাত্রসংঘের সভাপতি ছিলেন তা তার                                        মনে আছে। তিনি তার জবানবন্দীতে ছাত্রসংঘের সভাপতি হিসেবে মতিউর রহমান নিজামীর নাম বলেছেন ঘটনা প্রসঙ্গে।

জেরায় ২০ তম সাক্ষী বলেন,
১৯৭১ সালের ৩১শে ডিসেম্বর আমরা ঈশ্বরদীতে ফেরত আসি কিন্তু রাজাকার, বিহারীরা আমাদের বাড়ী পুড়িয়ে দেওয়ার কারণে ঐ সময় আমরা বাড়িতে উঠতে পারি নাই। ঈশ্বরদী এলাকা ১৯শে ডিসেম্বর মুক্ত হয়। কোম্পানী কমান্ডার সিরাজুল ইসলাম এবং সদরুল হক সুধাদের নেতৃত্বে ঈশ্বরদী মুক্ত হয়। ঈশ্বরদী মুক্ত হওয়ার পর তিন বাড়িতে তিনটি মুক্তিযোদ্ধা ক্যাম্প স্থাপন করি। একটি কলেজ রোডে, আরেকটি পাবনা রোডে এবং তৃতীয়টি ঈশ্বরদী বাজারে। পাবনা রোডের ক্যাম্পটি থানার নিকটবর্তী ছিল। পাবনা রোডের ক্যাম্পের দায়িত্বে ছিলেন মুক্তিযোদ্ধা ওয়াছেফ। আমি আমার আসার আগে ১৯শে ডিসেম্বর ১৯৭১ এর পরে অনেক স্বাধীনতা বিরোধীকে হত্যা করা হয়েছে এবং অনেককে গ্রেফতার করা হয়েছিল। যাদেরকে গ্রেফতার করা হয়েছিল তাদের মধ্যে অনেকের বিরুদ্ধে ঈশ্বরদী কেন্দ্রীয় জামে মসজিদ থেকে সাধারন জনগনকে নিয়ে যেয়ে হত্যা করার অভিযোগ ছিল। যারা ঈশ্বরদী এলাকায় বাড়ি ঘর পুড়িয়ে দিয়েছিল গ্রেফতারকৃতদের মধ্যে তারা কেউ ছিল না। আমি ১৯৭১ সালের ৩১শে ডিসেম্বর ঈশ্বরদী আসার পরে ভারতীয় আর্মিদের নিকট বেশ কিছু স্বাধীনতা বিরোধী লোক আত্মসমর্পন করেছিল। আমি ঈশ্বরদীতে আসার পরে থানায় কোন দিন যাই নাই। আমি শুনি নাই যে, ঈশ্বরদী এলাকায় হত্যা, লুটপাট এবং অগ্নিসংযোগের অভিযোগে কোন স্বাধীনতা বিরোধীর বিরুদ্ধে মামলা হয়েছিল কিনা। ভারতীয় আর্মিদের নিকট যারা আত্মসমর্পণ করেছিল তাদেরকে পাবনা জেলখানায় পাঠিয়ে দেয়া হয়েছিল। যাদেরকে জেলখানায় পাঠানো হয়েছিল তাদের মধ্যে খোদা বক্স খাঁর নাম মনে আছে। অন্য কারো নাম মনে নাই। খোদা বক্স খাঁ বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান সাহেব জীবিত থাকা অবস্থায় মুক্তি পান নাই। তার বিরুদ্ধে কি অভিযোগ ছিল এবং কে অভিযোগ করেছিল তাহা আমার জানা নাই। ঐ সময় কতজন গ্রেফতার হয়েছিল এবং কতজন আত্মসমর্পন করেছিল দীর্ঘদিন হয়ে যাওয়ার কারণে তাহা আমার মনে নাই। ১৯৭৫ সাল পর্যন্ত আমার পিতা শহীদ মোয়াজ্জেম হোসেন এবং মামা শহীদ হাবিবুর রহমান হত্যাকান্ডের বিষয়ে মামলা করতে কেউ বাধা দেয় নাই। বর্তমানে আমি ঈশ্বরদী উপজেলা মুক্তিযোদ্ধা সংসদের অর্থ সম্পাদক। ১৯৭৫ সালের আগে বর্তমান জেলা মুক্তিযোদ্ধা সংসদের কমান্ডার জনাব হাবিবুর রহমানকে আমার পিতা এবং মামা হত্যাকান্ডের বিষয়টি জানাই নাই তবে তিনি তাহা জানতেন। মতিউর রহমান নিজামী সাহেব এই মামলায় গ্রেফতার হওয়ার বিষয়টি গ্রেফতার হওয়ার সময় থেকেই আমি জানি। দেলাওয়ার হোসেন সাঈদী সাহেবের যুদ্ধাপরাধের মামলায় গ্রেফতার হওয়ার বিষয়টিও আমি শুনেছি। যেদিন গ্রেফতারের বিষয়টি টেলিভিশনে প্রচার করা হয় সেদিনই আমি গ্রেফতারের বিষয়টি জেনেছি। সাঈদী সাহেবের গ্রেফতারের পরপরই জেলা প্রশাসনের পক্ষ থেকে আমাদের উপজেলা মুক্তিযোদ্ধা সংসদের সংশ্লিষ্ট এলাকায় কে কে যুদ্ধাপরাধী ও অপরাধের ধরন উল্লেখ পূর্বক প্রতিবেদন দেওয়ার জন্য বলা হয়েছিল কিনা তাহা আমি শুনি নাই। ঈশ্বরদী উপজেলা মুক্তিযোদ্ধা সংসদের বর্তমান কমান্ডারের নাম আব্দুর রাজ্জাক। তিনিও এই বিষয়ে আমাকে কোন কিছু অবহিত করেন নাই। আজ থেকে প্রায় বছর তিনেক আগে আমি জানতে পারি যে, আমি এই মামলার সাক্ষী।
স্বাধীনতা পূর্বকালে পাবনা এবং ঈশ্বরদী এলাকার রাজনীতি তিনটি ধারায় বিভক্ত ছিল, একটি ছিল স্বাধীনতা পন্থী আওয়ামী লীগ, অন্য ধারায় ছিল ডানপন্থী দল সমুহ যথা- জামায়াতে ইসলামী, পিডিপি, মুসলিম লীগ এবং আরেকটি ধারা ছিল টিপু বিশ্বাসের নেতৃত্বাধীন নকশালপন্থী। টিপু বিশ্বাসের নেতৃত্বাধীন নকশাল পন্থীরা স্বাধীনতার পক্ষে যোগ দেয় নাই। টিপু বিশ্বাসের নকশাল ধারার কমরেড বাতেন আলবদরের কমান্ডার ছিল কিনা তাহা আমি জানি না। কমরেড বাতেনকে আমি চিনতাম না। পাবনা জেলা মুক্তিযোদ্ধা সংসদের কমান্ডার হাবিবুর রহমান সাহেবের পিতাকে আমি চিনতাম না। স্বাধীনতা যুদ্ধের শুরুতে তাকে হত্যা করা হয়েছে তাহা আমি জানি তবে কারা কি কারনে তাকে হত্যা করেছে তাহা আমি জানি না। ১৯৭০ সালের নির্বাচনে পাকিস্তান জাতীয় পরিষদের পাবনা-৬ নির্বাচনি এলাকা পাবনা সদর, ঈশ্বরদী এবং আটঘরিয়া থানা এলাকা নিয়ে গঠিত ছিল। প্রাদেশিক পরিষদে পাবনা-১১ নির্বাচনি এলাকা ঈশ্বরদী এবং আটঘরিয়া থানা এলাকা নিয়ে গঠিত ছিল। প্রাদেশিক পরিষদের পাবনা-১১ নির্বাচনি এলাকা থেকে আওয়ামী লীগের প্রার্থী আমিন উদ্দিন সাহেব নির্বাচিত হয়েছিলেন। তার নিকটতম প্রতিদ্বন্দী ছিলেন স্বতন্ত্র প্রার্থী ইউসুফ আলী। জামায়াতে ইসলামীর প্রার্থী খোদা বক্স খাঁ এক হাজারেরও কম ভোট পেয়েছিলেন কিনা তাহা আমার জানা নাই। আমাদের নির্বাচনি এলাকায় আনুমানিক হাজার দশেক বিহারী বসবাস করতো। ১৯৭১ সালে ঈশ্বরদী এবং পাকশী দুটিই ইউনিয়ন কাউন্সিল ছিল। ঈশ্বরদী ইউনিয়ন কাউন্সিলের চেয়ারম্যান ছিলেন একজন বিহারী, তিনি আওয়ামী লীগ করতেন না, তিনি মুসলিম লীগ করতেন। প্রাদেশিক পরিষদে মুসলিম লীগের কোন প্রার্থী ছিল না, কেন্দ্রীয় পরিষদে মুসলিম লীগের কোন প্রার্থী ছিল কিনা তাহা আমার মনে পড়ছে না। পাবনা জেলা ও পাবনা মহকুমা মুসলিম লীগের সভাপতি বা সেক্রেটারী কে ছিলেন তাহা আমার মনে পড়ছে না। ১৯৭১ সালে পাবনা জেলা ও পাবনা মহকুমার পিস কমিটির সভাপতি কে ছিল তাহা আমার জানা নাই। মুজাফফর ন্যাপ এর পাবনা জেলা বা মহকুমার সভাপতি কে ছিলেন তাহা আমার স্মরন নাই। পাবনা জেলা ও মহকুমার আওয়ামী লীগের সভাপতি ও সেক্রেটারী কে ছিলেন তাহা আমার জানা নাই। আমি কলেজে ভর্তি হওয়ার পর ছাত্র সংসদের ভোট হয়েছিল। আমার কলেজে ছাত্র সংসদ নির্বাচনে ছাত্রলীগ, ছাত্র ইউনিয়ন এবং ইসলামী ছাত্র সংঘ অংশ গ্রহন করেছিল। আমি কোন পদে প্রার্থী ছিলাম না। ছাত্র ইউনিয়নের জিএস পদে কে প্রার্থী ছিল তাহা আমার মনে পড়ছে না। আমার কাস থেকে ইসলামী ছাত্র সংঘের এজিএস পদে একজন প্রার্থী ছিল কিন্তু তার নাম আমার মনে পড়ছে না। ঐ কলেজের আমাদের আই.এস.সি ১ম বর্ষের ছাত্র সংখ্যা ছিল ৫৭ জন। পাবনা জেলা ছাত্রসংঘের সভাপতি বা সেক্রেটারীর নাম আমি বলতে পারব না। ঐ সময় পাবনা এডওয়ার্ড কলেজের ভি.পি বা জি.এস কে ছিলেন তাহা আমি বলতে পারব না। ঐ সময় সম্ভবত পাবনা জেলা ছাত্রলীগের সভাপতি ছিলেন চুপ্পু সাহেব তবে সেক্রেটারী সহেবের নাম আমার স্মরণ নাই, সেই সাথে পাবনা মহকুমা ছাত্রলীগের সভাপতি ও সেক্রেটারীর নামও আমার স্মরণ নাই। ১৯৭১ সালে ছাত্র ইউনিয়নের কেন্দ্রীয় সভাপতি ও সেক্রেটারীর নাম আমি বলতে পারব না। ১৯৭১ সালে ইসলামী ছাত্র সংঘের কেন্দ্রীয় সেক্রেটারীর নাম আমি বলতে পারব না। ঈশ্বরদী বিহারী পাড়ার ভোট কেন্দ্রের নাম ছিল নাজিম উদ্দিন উচ্চ বিদ্যালয়। ১৯৭০ সালে এই কেন্দ্রেও আওয়ামী লীগ নির্বাচিত হয়েছিল। বিহারীদের মধ্যে আওয়ামী লীগের পক্ষে নেতৃত্ব দিয়েছিলেন আজিম উদ্দিন এবং নেছার আহম্মেদসহ আরো অনেকে। ১৯৭১ সালের ৭ই মার্চের পরে বিহারীদের সাথে আমাদের কোন বিরোধ ছিল না। ১৯৭১ সালের ৭ই মার্চের পর ২৫শে মার্চের আগে আমাদের এলাকায় কোন বিহারী হত্যাকান্ড ঘটে নাই, তবে ঈশ্বরদী পাকশী এলাকায় কিছু বিহারী হত্যাকান্ডের ঘটনা ঘটেছিল ব্যক্তিগত আক্রোশের কারণে। ১৯৭১ সালের ২৫শে মার্চের আগ পর্যন্ত পাবনাতে কোন পাকিস্তান আর্মি ছিল কিনা তাহা আমি জানি না, তবে ঈশ্বরদী এয়ারপোর্টে আর্মিদের একটি ক্যাম্প ছিল। আমাদের বাড়ি থেকে ঈশ্বরদী এয়ারপোর্ট উত্তর-পশ্চিম দিকে আনুমানিক ৪ মাইল দূরে। আমার বাড়ি থেকে ঈশ্বরদী কেন্দ্রীয় জামে মসজিদ পশ্চিম দিকে প্রায় ১ কিলোমিটার দূরে। ১৯৭১ সালে আমাদের বাড়ি এবং কেন্দ্রীয় জামে মসজিদের আশেপাশে অন্য কোন জামে মসজিদ ছিল না। রামনাথপুর যে বাড়িতে আমার মা এবং ভাই বোনরা চলে গিয়েছিল সেই বাড়িটি আমাদের বাড়ি থেকে আনুামনিক ৬/৭ মাইল দক্ষিণ দিকে। ঐ বাড়ির মালিকের নাম ছিল শরবত সিনহা। আমি ১৯৭১ সালের ২৫শে মার্চ থেকে ৩১শে মার্চ সময়কালের মধ্যে পাবনায় যাই নাই। পাবনা পুলিশ লাইন আক্রমনের ঘটনা কার নিকট থেকে শুনেছি এই মূহুর্তে তা বলতে পারছিনা। ঈশ্বরদী থেকে পাবনা যাওয়ার রোডে আমরা বেরিকেড দিয়েছিলাম। কাশিনাথপুর পাবনা রোডে বা নাটোর পাবনা রোডে কারা বেরিকেড দিয়েছিল তাহা আমি বলতে পারব না। ১৯৭১ সালের ২৫শে মার্চের পূর্বে পাকিস্তান আর্মিতে কর্মরত আমাদের এলাকায় কোন সদস্য ছিল এরকম কোন বাঙ্গালীর নাম আমার মনে নাই। ১৯৭১ সালের ২০শে মার্চ থেকে ৩০শে মার্চের মধ্যে পাবনা এলাকায় কর্মরত কোন পাকিস্তানী বাঙ্গালী আর্মি মুক্তিযোদ্ধাদের সাথে যোগ দিয়েছিলেন কিনা তাহা আমার জানা নাই। ঈশ্বরদী সুগার ক্যান রিসার্চ এলাকায় আমাদের মুক্তিযোদ্ধা ক্যাম্প ছিল। এই ক্যাম্পে আমি ১৯৭১ সালের ১১ই এপ্রিল পর্যন্ত অবস্থান করেছিলাম। তারপর রামনাথপুর গ্রামে যাই।
১৯৭১ সালের ১১ই এপ্রিল পাবনা এলাকায় আর্মির বা পাকিস্তান বিমান বাহিনীর কোন উড়োজাহাজ উড়তে দেখি নাই বা শুনিও নাই। ১৯৭১ সালের ১১ই এপ্রিল পর্যন্ত নগরবাড়ি ঘাট মুক্তিযোদ্ধাদের দখলে ছিল কিনা বা ঘাটের পাশে মুক্তিযোদ্ধাদের ক্যাম্প ছিল কিনা তাহা আমার জানা নাই। ১৯৭১ সালে বা পরবর্তী সময় পর্যন্ত নগরবাড়ি হয়ে সাঁথিয়ায় কাশিমপুর হয়ে পাবনায় গাড়ি যাতায়াত করতো। পাবনা থেকে ঈশ্বরদীর দূরত্ব ১৬ মাইল। পাবনা থেকে ঈশ্বরদী গামী সড়কের পুরোটাই গাছের গুড়ি দিয়ে বেরিকেড দেওয়া ছিল।
শেরশাহ রোডের আমাদের বাড়ি থেকে রামনাপথপুর রাস্তার কিছু অংশ পাকা ছিল এবং কিছু অংশ কাচা ছিল। রামনাথপুরে পাকিস্তান আর্মিরা এপ্রিল মে ও মাসে যায় নাই।
ভারতের জলঙ্গী ক্যাম্পটি কোন জেলায় অবস্থিত তাহা আমি বলতে পারব না। শিলং এলাকাটি সম্ভবত দার্জিলিং এ অবস্থিত।
১৯৭১ সালের ১১ই এপ্রিল পর্যন্ত আমি আমার ঈশ্বরদী এলাকায় অবস্থানকালীন সময় পর্যন্ত স্বাধীনতা বিরোধীদের কোন তৎপরতা আমার নজরে আসে নাই। আমি ভারত থেকে ফেরত আসার পরেই শান্তি কমিটি, রাজাকার ও আলবদর শব্দগুলো শুনেছি। বিহারীদের মধ্যে মুজাহিদ বাহিনীর কোন সদস্য ছিল কিনা তাহা আমার জানা নাই। আমাদের এলাকায় ১৯৭১-এ সংঘটিত ঘটনার তদন্তের জন্য জনাব শাহরিয়ার কবির, জনাব মুনতাসির মামুন এবং জনাব এম এ হাসান সাহেবরা নিজেরাই গিয়েছিলেন। আমি নিজেও আমার বাবার হত্যাকান্ড বিষয়ে তাদের নিকট বক্তব্য দিয়েছিলাম বছর তিনেক আগে। ১৯৭১ সালে সংঘটিত অপরাধ সমূহ তদন্তের জন্য স্বাধীনতার পরে সার্কেল অফিসারকে আহ্বায়ক এবং সংশ্লিষ্ট থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তাকে সদস্য সচিব করে কোন তদন্ত টীম গঠিত হয়েছিল কিনা তাহা আমার জানা নাই। আমাদের থানার রাজাকার কমান্ডার ছিলেন ইসমাইল হোসেন, যার বাড়ি বখতিয়ারপুর, যাকে স্বাধীনতার পর পরই গ্রেফতার করা হয়েছিল। তিনি এখনও জীবিত আছেন। পাবনা জেলার রাজাকার বাহিনীর প্রধান কে ছিলেন তাহা আমার জানা নাই। ঘেটু রাজাকারের নাম শুনেছি কিনা তাহা আমার মনে পড়ছে না। পাবনার মুসলিম লীগের জায়েদীর নাম আমি শুনেছি। সম্ভবত তিনি পিস কমিটির উর্ধ্বতন কর্মকর্তা ছিলেন। আমাদের এলাকায় শান্তি কমিটি, রাজাকার, আলবদরদের বিচার হয়েছিল কিনা তাহা আমার জানা নাই।
ভাগলু ঘোষ নামে কোন ব্যক্তির নাম আমি শুনি নাই। ঈশ্বরদী থানার মাছদিয়া গ্রামের জয়েন উদ্দিন নামে ব্যক্তির নাম আমি শুনি নাই। ঈশ্বরদী পূর্ব পাড়ার আব্দুল্লাহ খান নামে কোন ব্যক্তির নাম আমি শুনি নাই। ঈশ্বরদী পশ্চিম টেংরীর দীপক প্রসাদ গুপ্ত নামে কোন ব্যক্তির নাম আমি শুনি নাই। ১৩ এবং ১৭ এপ্রিল ১৯৭১ সালের যে ঘটনার বর্ণনা আমি দিয়েছি সেই সময়ে ঐ গ্রামের যাদের বয়স ১৫ বা তার বেশি ছিল তাদের অনেকেই এখনো জীবিত আছেন। আমার সাথে ঐ সময় ঐ ঘটনার কোন প্রত্যক্ষদর্শী তদন্তকারী কর্মকর্তার নিকট জবানবন্দী দেওয়ার সময় যায় নাই। তবে ফজলুর রহমান ফান্টু নামে এক ব্যক্তি আমার সাথে গিয়েছিল। ফজলুর রহমান ফান্টুর পিতার নাম আমার মনে পড়ছে না, তার বাড়ি আমাদের বাড়ির পাশে। এই মামলায় তিনি জবানবন্দী তদন্তকারী কর্মকর্তার নিকট দেন নাই। মাস পাচেক আগে তদন্তকারী কর্মকর্তা আব্দুর রাজ্জাক সাহেব আমাদের এলাকায় গিয়েছিলেন। উনি মুক্তিযোদ্ধা সংসদ অফিসে বসে আমার জবানবন্দী নিয়েছিলেন। কেন্দ্রীয় জামে মসজিদের নিকটস্থ আমার ফুফাতো ভাই আমিনুল হক ও ফজলুল হক জীবিত আছেন।
১৯৭১ সালের ১৭ই এপ্রিল আমার বাবাকে মারার পর আর্মিদের গাড়ি ও সাদা জীপ চলে যাওয়ার পর আনুমানিক ১০ মিনিট পর্যন্ত জঙ্গলে ছিলাম।
স্বাধীনতার পরে এসে কেন্দ্রীয় মসজিদের ইমাম সাহেবের নিকট থেকে জানতে পারি যে, আমার বাবার লাশসহ ১৮/২০টি লাশ পাক বাহিনীর লোকেরা গাড়িতে করে নিয়ে গিয়েছিল। ১৯৭১ সালের ১লা বৈশাখ তারিখে পাকিস্তান আর্মিরা ঈশ্বরদীতে প্রবেশ করেছেন কিনা তাহা আমার জানা নাই, কারণ বাংলা তারিখ সম্পর্কে আমার ধারণা নাই। কেন্দ্রীয় জামে মসজিদের এলাকাটি বিহারী অধ্যূষিত এলাকা ছিল না। এই লিস্ট তৈরির কথা আমি দেশ স্বাধীন হওয়ার পর আব্দুল মতিন সাহেবের নিকট থেকে শুনেছি, তিনি রাজাকার, আলবদর বা পিস কমিটির সদস্য ছিলেন না।

এ পর্যন্ত জেরার পর অ্যাডভোকেট মিজানুল ইসলাম সাক্ষীকে সাজেশন দিয়ে বলেন, আমি বলছি ১৯৭১ সালের ১লা বৈশাখ তারিখে পাকিস্তান আর্মিরা ঈশ্বরদীতে প্রবেশ করেছিলেন।
জবাবে  সাক্ষী বলেন, তা  আমার জানা নাই, কারণ বাংলা তারিখ সম্পর্কে আমার ধারণা নাই।

এরপর মিজানুল ইসলাম সাজেশন দিয়ে বলেন,  মার্চের পর স্থানীয় লোকেরা বিহারীদেরকে হত্যা করে। তারই প্রতিশোধে বিহারীরা ১৯৭১ সালের ১লা বৈশাখ শুধু একদিন পাকিস্তান আর্মিদেরকে নিয়ে এসে ব্যাপক হত্যাকান্ড এবং ধ্বংসযজ্ঞ চালায়, ঈশ্বরদীতে।
সাক্ষী বলেন, এটা সত্য নয়।

আরেক প্রশ্নের জবাবে সাক্ষী বলেন, এপ্রিল মাসের যে সময় লোকজন মসজিদে আশ্রয় নিয়েছিল ঐ সময়ে মসজিদে নিয়মিত নামাজ হতো, তবে মসজিদে যারা ছিল তারাই নামাজ পড়তো, আশেপাশে বৃদ্ধ লোকরা নামাজ পড়তো, আর্মিরা আসার পর ঈশ্বরদীর সব যুবকরা এলাকা ছেড়ে পালিয়ে গিয়েছিল।


আজ  দুপুরের দিকে ২০ তম সাক্ষীর জেরা শেষ হয়ে যায়। এরপর  রাষ্ট্রপক্ষ নতুন সাক্ষী হাজির না করায় বিচার কার্যক্রম আজ মঙ্গলবার  পর্যন্ত মুলতবি করা হয়। আজ  নতুৃন সাক্ষী হাজির করা হবে বলে ট্রাইব্যুনালকে অবহিত করেন রাষ্ট্রপক্ষের আইনজীবী মোহাম্মদ আলী।

২০ তম সাক্ষীকে জেরায় মিজানুল ইসলামকে  সহায়তা করেন অ্যাডভোকেট মনজুর আহমেদ আনসারী, তাজুল ইসলাম, ব্যারিস্টার নাজিব মোমেন, তারকিুল ইসলাম, আসাদ উদ্দিন প্রমুখ।

ট্রাইব্যুনাল চেয়ারম্যান বিচারপতি এটিএম ফজলে কবির, সদস্য বিচারপতি জাহাঙ্গীর হোসেন ও বিচারপতি আনোয়ারুল হক বিচার কার্যক্রম পরিচালনা করেন।

চার্জের নাম জানাতে পারেনি রাষ্ট্রপক্ষ : ২০ তম সাক্ষী তহুরুল আলম মোল্লা যে জবানবন্দী দিয়েছেন তা কত নম্বর চার্জে বর্নিত আছে তা রাষ্ট্রপক্ষের কাছে জানতে চেয়েছিলেন ট্রাইব্যুনাল। কিন্তু আজ ট্রাইব্যুনালের কার্যক্রমের শুরুতে অনুপস্থিত থাকেন সংশ্লিষ্ট আইনজীবী মোহাম্মদ আলী। অন্য যারা উপস্থিত ছিলেন তারাও কেউ বলতে পারেননি। ট্রাইব্যুনাল বলেন, এ কারনেই মনে হয় মোহাম্মদ আলী সাহেব অনুপস্থিত।
আজ  ২০ তম সাক্ষীর সাক্ষ্য  গ্রহণ শেষ হলে ট্রাইব্যুনাল  জানতে চান আগামীকাল নতুন যে সাক্ষী আসবে  সে কত নম্বর চার্জের ওপর বলবে। মোহাম্মদ আলী বলেন, কাল তা জানাব। ট্রাইব্যুনাল চেয়ারম্যান এটিএম ফজলে কবির বলেন, গুরুত্বপূর্ণ কিছু না থাকলে সাক্ষী আনা বন্ধ করে দেন। বিচারপতি জাহাঙ্গীর হোসেন বলেন, চার্জের সাথে না মিললে আমরা নতুন সাক্ষী নেবনা।

এর আগে আজ জেরার সময় ট্রাইব্যুাল চেয়ারম্যান মিজানুল ইসলামকে লক্ষ্য করে বলেন, মিজান সাহেব আর কত কষ্ট করবেন। মিজানুল ইসলাম বলেন, আপনারা যদি নিশ্চিত করতেন এ সাক্ষী আপনারা নেবেননা তাহলে আমি  জেরা করতামনা।
চেয়ারম্যান বলেন, আমরা নতুন সাক্ষীর অনুমতি দিয়েছি রাষ্ট্রপক্ষকে কিন্তু নতুন চার্জ এর অনুমতি দেইনি। এটি আপনাকে মনে রাখতে হবে।





কোন মন্তব্য নেই:

একটি মন্তব্য পোস্ট করুন