মেহেদী হাসান, ২২/৯/২০১৩
প্রবীন বিএনপি নেতা সাবেক মন্ত্রী আবদুল আলীমের বিরুদ্ধে মানবতাবিরোধী অপরাধের মামলার সমন্ত বিচার কার্যক্রম শেষ হয়েছে আজ। মামলাটি রায়ের জন্য অপেক্ষামান রাখা হয়েছে। যেকোন দিন এই মামলাটির রায় ঘোষণা করা হবে মর্মে আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনাল-২ আজ এ আদেশ দিয়েছে। একই সঙ্গে আবদুল আলীমের জামিন বাতিল করে তাকে কারাগারে পাঠানোর নির্দেশ দেয়া হয়েছে।
বার্ধক্যজনিত নানা জটিল রোগে আক্রান্ত হুইল চেয়ারে চলাফেরারত আব্দুল আলিম এতদিন পর্যন্ত জামিনে থেকে নিয়মিত হাজির হতেন ট্রাইব্যুনালে। আজ সে জামিন বাতিল করে তাকে কারাগারে পাঠানো হয়েছে।
আবদুল আলীমের পক্ষে জামিনের মেয়াদ বৃদ্ধির আবেদনটি খারিজ করে দিয়ে ট্রাইব্যুনাল বলেন, এই মামলাটির ট্রায়াল শেষ। ট্রাইব্যুনালের অন্যান্য মামলার রায় ঘোষণার পর ভায়োলেন্স হয়েছে। আলীমকে ইতিপূর্বে ট্রাইব্যুনাল জামিন দিয়েছে এবং তিনি জামিনের শর্ত লঙ্ঘন করেননি, এটা সত্য। মামলার কার্যক্রম শেষ হওয়ায় তার জামিন বাতিল করা হল এবং জেলে পাঠানোর নির্দেশ দেয়া হল। একই সঙ্গে আসামীকে প্রয়োজনীয় চিকিৎসা দেয়ার নির্দেশ দেয়া হল।
আদেশের পূর্বে আলীমের আইনজীবী আহসানুল হক হেনা বলেন, আলিম সাহেব গুরুতর অসুস্থ। আমি মানবিক দৃষ্টিকোন থেকে তার জামিনের মেয়াদ বৃদ্ধির আবেদন জানাচ্ছি।
আলীমের অপর আইনজীবী অ্যাডভোকেট তাজুল ইসলাম ট্রাইব্যুনালের আদেশের পর সাংবাদিকদের বলেন, আবদুল আলীম গুরুতর অসুস্থ। ডাক্তার তাকে হাসপাতালে ভর্তির নির্দেশ দিয়েছে। ট্রাইব্যুনাল বলেছেন, রায়ের পর ভায়োলেন্স হয়েছে। কিন্তু আলীমের পক্ষে কেউ কোন বিবৃতি দেয়নি। তার রায়ের পর রাজনৈতিক প্রতিক্রিয়া হওয়ার কোন সম্ভাবনা নেই। আসামীর বিরুদ্ধে আনা ১৭টি অভিযোগ রাষ্ট্রপক্ষ প্রমাণে ব্যর্থ হয়েছে। আমরা আশা করি তিনি অভিযোগ থেকে অব্যাহতি পাবেন।
অন্যদিকে আজ আলীমের বিরুদ্ধে মামলার যুক্তি উপস্থাপন করেন প্রসিকিউটর রানা দাসগুপ্ত ও ব্যারিস্টার তুরিন আফরোজ। রানা দাসগুপ্ত বলেন, আসামীর বয়স ৮৩ বছর এটা ঠিক। কিন্তু আমরা ৪২ বছরের টগবগে যুবক আলীমের বিরুদ্ধে মানবতাবিরোধী অপরাধের অভিযোগ এনেছি। এসময় ট্রাইব্যুনাল বলেন, ৪২ বছরে আর কেউ টগবগে যুবক থাকে না। এরপর রানা দাসগুপ্ত বলেন, আমরা মামলাটি সন্দেহাতিতভাবে প্রমাণ করতে সক্ষম হয়েছি। আমরা আবদুল আলীমের সর্বোচ্চ শান্তি কামনা করছি।
প্রসিকিউটর তুরিন আফরোজ ট্রাইব্যুনালে বলেন, আসামী আব্দুল আলীম একজন উচ্চ শিক্ষিত মানুষ। তিনি একজন আইনজীবী হিসেবেও প্যাকটিস করেছেন। এজন্য তার দায় আরো বেশি। এছাড়া তিনি মামলার বিভিন্ন আইনী বিষয়ে যুক্তি উপস্থাপন করেন।
আবদুল আলীমের পরিচিতি: আবদুল আলীম ১৯৩০ সালের ১ নভেম্বর ভারতের পশ্চিমবঙ্গের হুগলি থানাধীন পাঁদুয়া গ্রামেগ্রন্মগ্রহণ করেন। ১৯৫০-৫১ সালে আলীমের পরিবার তৎকালীন পূর্ব পাকিস্তানের জয়পুরহাটে এসে বসবাস শুরু করেন। তিনি ১৯৫১ সালে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় থেকে মাস্টার্স পাশ এবং ১৯৫৩ সালে একই বিশ্ববিদ্যালয় থেকে এলএলবি পাশ করেন। ১৯৫৮ সালে তিনি মুসলিম লীগে যোগ দেন। ১৯৭১ সালে তিনি কনভেনশন মুসলিম লীগের নেতা ছিলেন। ১৯৭৫ ও ১৯৭৭ সালে তিনি জয়পুরহাট পৌরসভার চেয়ারম্যান নির্বাচিত হন। ১৯৭৯, ১৯৯৬ এবং ২০০১ সালে জয়পুরহাট পাঁচবিবি আসন থেকে আবদুল আলীম এমপি নির্বাচিত হন। আবদুল আলীম ১৯৭৮ সালে জিয়াউর রহমান সরকারের মন্ত্রী সাভার প্রথম বস্ত্রমন্ত্রী ও পরে যোগাযোগ মন্ত্রী ছিলেন।
গত বছরের ১১ জুন আলীমের বিরুদ্ধে ১৯৭১ সালে জয়পুরহাটের বিভিন্ন এলাকায় হত্যা, গনহত্যা লুটপাট, অগ্নিসংযোগ, দেশত্যাগে বাধ্য করাসহ মানবতাবিরোধী অপরাধে উস্কানি দেয়ার অভিযোগ আনা হয়।
মামলার বিবরণ: গত ১৯ সেপ্টেম্বর আবদুল আলীমের পক্ষে মামলার যুক্তি উপস্থাপন শেষ হয়। এরপর আজ রোববার রাষ্ট্রপকে মামলার আইনী বিষয়ে এক ঘন্টা যুক্তি খন্ডনের সময় নির্ধারণ করা হয়। গত ১৫ সেপ্টেম্বর থেকে আসামিপে যুক্তিতর্ক উপস্থাপন করছেন অ্যাডভোকেট তাজুল ইসলাম, অ্যাডভোকেট আহসানুল হক হেনা ও অ্যাডভোকেট আবু ইউসুফ মোঃ খলিলুর রহমান।
গত ৪ সেপ্টেম্বর আবদুল আলীমের বিরুদ্ধে রাষ্ট্রপক্ষের যুক্তি উপস্থাপন শুরু হয় এবং ১১ সেপ্টেম্বর রাষ্ট্রপক্ষ যুক্তি উপস্থাপন শেষ করেন। প্রসিকিউটর তুরিন আফরোজ ও রানা দাসগুপ্ত যুক্তি উপস্থাপন করেন।
গত বছরের ১১ জুন আলীমের বিরুদ্ধে ১৯৭১ সালে জয়পুরহাটের বিভিন্ন এলাকায় হত্যা, লুটপাট, অগ্নিসংযোগ, দেশত্যাগে বাধ্য করা এবং এসব অপরাধে উস্কানি ও সহযোগিতার করাসহ মানবতাবিরোধী অপরাধের অভিযোগে ১৭টি ঘটনার অভিযোগ গঠন করা হয়।
গত ২৭ আগস্ট থেকে ৩ সেপ্টেম্বর পর্যন্ত আলীমের পে তিনজন ডিফেন্স সাী স্যা দিয়েছেন। তারা হচ্ছেন মামুনুর রশিদ, মো. মোজাফফর হোসেন ও আলীমের ছেলে সাজ্জাদ বিন আলীম।
অন্যদিকে আলীমের বিরুদ্ধে গত বছরের ৬ আগস্ট থেকে এ বছরের ২২ আগস্ট পর্যন্ত তদন্ত কর্মকর্তা (আইও) এজেডএম আলতাফুর রহমানসহ রাষ্ট্রপরে সর্বমোট ৩৫ জন সাী স্যা দিয়েছেন।
গত ১৬ এপ্রিল আলীমের মামলাসহ তিনটি মামলা ট্রাইব্যুনাল-১ থেকে ট্রাইব্যুনাল-২-এ স্থানান্তর করা হয়। মানবতাবিরোধী অপরাধের অভিযোগে ২০১১ সালের ২৭ মার্চ জয়পুরহাটের বাড়ি থেকে আবদুল আলীমকে গ্রেফতার করা হয়। একই বছরের ৩১ মার্চ তাকে ১ লাখ টাকায় মুচলেকা এবং ছেলে ফয়সাল আলীম ও আইনজীবী তাজুল ইসলামের জিম্মায় তাকে জামিন দেন ট্রইব্যুনাল-২। এরপর বেশ কয়েক দফা এই জামিনের মেয়াদ বাড়ানো হয়েছে।
আলীমের বিরুদ্ধে অভিযোগ :
আব্দুল আলীমের বিরুদ্ধে আনা ১৭টি অভিযোগের মধ্যে ১৫টিতে বিভিন্ন ঘটনায় মোট ৫৮৫ জনকে হত্যার অভিযোগ রয়েছে। দু’টি অভিযোগ আনা হয়েছে অগ্নিসংযোগ, লুটপাট, আটক ও দেশান্তরে বাধ্য করার ঘটনায়।
১৫টি হত্যার অভিযোগে তিনটি গণহত্যার অভিযোগ রয়েছে যাতে মোট ৪০৬ জনকে হত্যা করা হয় বলে উল্লেখ করা হয়েছে। এদের অধিকাংশই হিন্দু সম্প্রদায়ের।
এছাড়া ‘সুপিরিয়র কমান্ড রেসপনসিবিলিটি’ বা উর্দ্ধতন নেতৃত্বের দায় এর জন্যও অভিযুক্ত করা হয়েছে তাকে।
১ নং অভিযোগ : ১৯৭১ সালের ২০ এপ্রিল বিকালে আব্দুল আলীম পাকিস্তানি সেনাদের নিয়ে জয়পুরহাটের পাঁচবিবি থানার দমদমা গ্রামের মেহের উদ্দিন চৌধুরীর (মৃত) বাড়িতে হামলা চালান। এসময় ওইবাড়িতে লুণ্ঠন ও অগ্নিসংযোগ করা হয়। যার ফলে তিনি দেশান্তরিত হতে বাধ্য হন।
২ : ১৯৭১ সালের ২৬ এপ্রিল আলীম পূর্বপরিকল্পনা অনুসারে মেজর আফজাল, পাকিস্তানি সেনা ও শান্তি কমিটির সদস্যদের নিয়ে কড়াই, কাঁদিপুর এলাকার হিন্দু অধ্যুষিত গ্রাম কডাই, কাঁদিপুর, চকপাড়া, সোনারপাড়া, পালপাড়া, মুন্সিপাড়া গ্রামে অতর্কিতে সশস্ত্র হামলা চালান। হামলায় হিন্দুদের বাড়িঘরে লুণ্ঠন ও অগ্নিসংযোগের পর ৩৭০ জন নিরস্ত্র হিন্দুকে সারিবদ্ধভাবে দাঁড় করিয়ে হত্যা করা হয়। অশ্বিনী কুমার দেবনাথ নামের এক ব্যক্তিকে জীবন্ত কবর দেওয়া হয়।
৩ : ১৮ জুন আলীমের নির্দেশ ও প্ররোচনা অনুসারে, শান্তি কমিটির সদস্য রিয়াজ মৃধা ১১ জন পাকিস্তানি সেনা নিয়ে জুমার নামাজের আগে ও পরে ২২ জন মুসল্লিকে ধরে আনেন। মসজিদের আশপাশ থেকে তারা আরও পাঁচশ নিরস্ত্র মানুষকে ধরে এনে জনৈক আফাজের বাড়ির উঠানে তিনটি সারিতে দাঁড় করায়। রিয়াজ মৃধা পাকিস্তানি সেনাদের একটি তালিকা দেন, যা অনুসরণ করে সেনারা মুক্তিযুদ্ধের পরে ও আওয়ামীপন্থী ২৮ জনকে চিহ্নিত করে। বাকিদের চলে যেতে দেয়া হয়। এরপর চিহ্নিত ২৮ জনকে হাত বেঁধে একটি মাটির ঘরে নিয়ে হত্যার চেষ্টা করা হয়। এতে ২২ জন মারা যান, বাকিরা পালিয়ে যায়।
৪ : মে মাসের প্রথম দিকে একদিন সকালে আলীমের নির্দেশ অনুসারে শান্তি কমিটি ও রাজাকার বাহিনীর সদস্যরা রেলগাড়ি করে বকুলতলা নামক স্থানে যান। সেখান থেকে তারা দু’টি ভাগে বিভক্ত হয়ে কোকতারা, ঘোড়াপা, বাগজানা, কোটাহারা গ্রামের নিরস্ত্র নিরীহ মানুষের ওপর হামলা ও লুটপাট চালায়। এ সময় ১৯ জন মুক্তিযুদ্ধের পরে লোককে হত্যা করা হয়।
৫ : ১৯৭১ সালের মে মাসের ৯ থেকে ১৫ তারিখের মধ্যে আলীমের নির্দেশ ও উস্কানিতে রাজাকার, শান্তি কমিটির সদস্য ও পাকিস্তানি সেনারা জয়পুরহাটের দণি পহুনন্দা গ্রামের মিশন স্কুলে যায়। সেখানে ৫০-৬০ জন থেকে যায়। বাকিরা পাগলা দেওয়ান নামক জায়গায় গিয়ে কয়েকজন গ্রামবাসীকে ডেকে তাদের দিয়ে কয়েকটি গর্ত খনন করায়। ওই গর্তে অপরিচিত ৬৭ জন নিরস্ত্র হিন্দু সম্প্রদায়ের লোককে কবর দেওয়া হয়। এর মধ্যে সাতজনকে গ্রামবাসীর উপস্থিতিতে হত্যা করা হয়েছিল।
৬ : মে মাসের প্রথম দিকে আক্কেলপুরের আবদুস সালাম ও আরও নয়জন নিরস্ত্র ব্যক্তি ভারত যাওয়ার পথে নূরপুর গ্রামে পৌঁছানোর পরে বেলা ১১টার দিকে স্থানীয় ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান, শান্তি কামিটির সদস্য ও রাজাকাররা তাদের ধরে স্থানীয় সৈয়দ আলীর বাড়িতে আটকে রাখে। পরে তাদের আক্কেলপুর রেলস্টেশনের বিশ্রামকে নিয়ে যাওয়ার বিষয়টি আব্দুল আলীমকে জানানো হলে তিনি তাদের শেষ করে দেওয়ার নির্দেশ দেন। তাদের পাকিস্তানি সেনাদের হাতে তুলে দেয়া হলে কোকতারা গ্রামের বকুলতলা এলাকায় নয়জনকে হত্যা করা হয়। মোফাজ্জল নামের এক ব্যক্তি পালিয়ে যেতে সম হন।
৭ : ১৯৭১ সালেল ২৬ মে আব্দুল আলীমের পরামর্শ ও নির্দেশ অনুসারে রাজাকার ও পাকিস্তানি সেনারা জয়পুরহাটের পাঁচবিবি থানার নওদা গ্রামে অভিযান চালিয়ে ইলিয়াস উদ্দিন সর্দার, ইউসুফ উদ্দিন সর্দার, ইউনুস উদ্দিন সর্দার এবং আবদুল কাদের মণ্ডল নামের চারজন নিরস্ত্র মানুষকে ধরে বালিঘাটা ইউনিয়ন পরিষদের (ইউপি) কার্যালয়ে আটকে রাখে। পরে তাদের কালীপুকুরের পাশে নিয়ে হত্যা করা হয়।
9 : মে মাসের প্রথম দিকে আব্দুল আলীম পাকিস্তানি মেজর আফজালকে সঙ্গে নিয়ে তেলাল থানার উত্তরহাট শহর নামের একটি স্থানে পাঁচ-সাতশ’ জনের একটি সমাবেশে যান। সেখানে তিনি বলেন, ‘হিন্দুদের মা করা যাবে না। এদের যা পাও লুট করে নাও।’ এই উস্কানিমূলক বক্তব্যের পরে মে মাসের শেষদিকে হিন্দুপল্লী, উত্তরহাট শহর, হারুনজাহাট এলাকায় হিন্দু জনগণের ওপর হামলা ও লুটপাট চালানো হয়। ওই এলাকা থেকে হিন্দু সম্প্রদায়ের ১০ জন লোককে ধরে শাওনলাল বাজলার গদিঘরে স্থাপিত শান্তি কমিটির কার্যালয়ে নিয়ে যাওয়া হলে আলীম তাঁদের হত্যার নির্দেশ দেন। পরে ওই ১০ জনকে খঞ্জনপুর কুঠিবাড়ি ঘাট এলাকায় নিয়ে হত্যা করা হয়।
৯ : ১৪ জুন শান্তি কমিটির সদস্যরা মুক্তিযোদ্ধা সন্দেহে ১৫ জন যুবককে শাওনলাল বাজলার গদিঘরে ধরে নিয়ে যায় ও সেখানে আটকে রাখেন। সেখানে মেজর আফজালের সঙ্গে পরামর্শ করে আলীম তাদের হত্যার সিদ্ধান্ত নেন। পরে ওই সিদ্ধান্ত অনুসারে তাঁদের পশ্চিম আমাত্রা গ্রামে নিয়ে নির্যাতন শেষে হত্যা করে গণকবর দেওয়া হয়।
১০ : ১৯৭১ সালেল জুনের শেষ দিকে আব্দুল আলীমের সিদ্ধান্ত অনুসারে রাজাকার ও শান্তি কমিটির সদস্যরা ২৬ জন ব্যক্তিকে মুক্তিযোদ্ধা সন্দেহে ধরে এবং একটি ট্রাকে করে জয়পুরহাট রেলস্টেশনে নিয়ে যায়। এ সময় আলোখেলা স্টুডিওর মালিক মোতাসিম বিল্লাহ নামের এক ব্যক্তিকে আলীম নিয়ে আসেন এবং তিনি ওই ২৬ জন আটক ব্যক্তির সঙ্গে আলীমের ছবি তোলেন। পরে তাদের জয়পুরহাট কলেজে নিয়ে হত্যা করা হয়।
প্রবীন বিএনপি নেতা সাবেক মন্ত্রী আবদুল আলীমের বিরুদ্ধে মানবতাবিরোধী অপরাধের মামলার সমন্ত বিচার কার্যক্রম শেষ হয়েছে আজ। মামলাটি রায়ের জন্য অপেক্ষামান রাখা হয়েছে। যেকোন দিন এই মামলাটির রায় ঘোষণা করা হবে মর্মে আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনাল-২ আজ এ আদেশ দিয়েছে। একই সঙ্গে আবদুল আলীমের জামিন বাতিল করে তাকে কারাগারে পাঠানোর নির্দেশ দেয়া হয়েছে।
বার্ধক্যজনিত নানা জটিল রোগে আক্রান্ত হুইল চেয়ারে চলাফেরারত আব্দুল আলিম এতদিন পর্যন্ত জামিনে থেকে নিয়মিত হাজির হতেন ট্রাইব্যুনালে। আজ সে জামিন বাতিল করে তাকে কারাগারে পাঠানো হয়েছে।
আবদুল আলীমের পক্ষে জামিনের মেয়াদ বৃদ্ধির আবেদনটি খারিজ করে দিয়ে ট্রাইব্যুনাল বলেন, এই মামলাটির ট্রায়াল শেষ। ট্রাইব্যুনালের অন্যান্য মামলার রায় ঘোষণার পর ভায়োলেন্স হয়েছে। আলীমকে ইতিপূর্বে ট্রাইব্যুনাল জামিন দিয়েছে এবং তিনি জামিনের শর্ত লঙ্ঘন করেননি, এটা সত্য। মামলার কার্যক্রম শেষ হওয়ায় তার জামিন বাতিল করা হল এবং জেলে পাঠানোর নির্দেশ দেয়া হল। একই সঙ্গে আসামীকে প্রয়োজনীয় চিকিৎসা দেয়ার নির্দেশ দেয়া হল।
আদেশের পূর্বে আলীমের আইনজীবী আহসানুল হক হেনা বলেন, আলিম সাহেব গুরুতর অসুস্থ। আমি মানবিক দৃষ্টিকোন থেকে তার জামিনের মেয়াদ বৃদ্ধির আবেদন জানাচ্ছি।
আলীমের অপর আইনজীবী অ্যাডভোকেট তাজুল ইসলাম ট্রাইব্যুনালের আদেশের পর সাংবাদিকদের বলেন, আবদুল আলীম গুরুতর অসুস্থ। ডাক্তার তাকে হাসপাতালে ভর্তির নির্দেশ দিয়েছে। ট্রাইব্যুনাল বলেছেন, রায়ের পর ভায়োলেন্স হয়েছে। কিন্তু আলীমের পক্ষে কেউ কোন বিবৃতি দেয়নি। তার রায়ের পর রাজনৈতিক প্রতিক্রিয়া হওয়ার কোন সম্ভাবনা নেই। আসামীর বিরুদ্ধে আনা ১৭টি অভিযোগ রাষ্ট্রপক্ষ প্রমাণে ব্যর্থ হয়েছে। আমরা আশা করি তিনি অভিযোগ থেকে অব্যাহতি পাবেন।
অন্যদিকে আজ আলীমের বিরুদ্ধে মামলার যুক্তি উপস্থাপন করেন প্রসিকিউটর রানা দাসগুপ্ত ও ব্যারিস্টার তুরিন আফরোজ। রানা দাসগুপ্ত বলেন, আসামীর বয়স ৮৩ বছর এটা ঠিক। কিন্তু আমরা ৪২ বছরের টগবগে যুবক আলীমের বিরুদ্ধে মানবতাবিরোধী অপরাধের অভিযোগ এনেছি। এসময় ট্রাইব্যুনাল বলেন, ৪২ বছরে আর কেউ টগবগে যুবক থাকে না। এরপর রানা দাসগুপ্ত বলেন, আমরা মামলাটি সন্দেহাতিতভাবে প্রমাণ করতে সক্ষম হয়েছি। আমরা আবদুল আলীমের সর্বোচ্চ শান্তি কামনা করছি।
প্রসিকিউটর তুরিন আফরোজ ট্রাইব্যুনালে বলেন, আসামী আব্দুল আলীম একজন উচ্চ শিক্ষিত মানুষ। তিনি একজন আইনজীবী হিসেবেও প্যাকটিস করেছেন। এজন্য তার দায় আরো বেশি। এছাড়া তিনি মামলার বিভিন্ন আইনী বিষয়ে যুক্তি উপস্থাপন করেন।
আবদুল আলীমের পরিচিতি: আবদুল আলীম ১৯৩০ সালের ১ নভেম্বর ভারতের পশ্চিমবঙ্গের হুগলি থানাধীন পাঁদুয়া গ্রামেগ্রন্মগ্রহণ করেন। ১৯৫০-৫১ সালে আলীমের পরিবার তৎকালীন পূর্ব পাকিস্তানের জয়পুরহাটে এসে বসবাস শুরু করেন। তিনি ১৯৫১ সালে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় থেকে মাস্টার্স পাশ এবং ১৯৫৩ সালে একই বিশ্ববিদ্যালয় থেকে এলএলবি পাশ করেন। ১৯৫৮ সালে তিনি মুসলিম লীগে যোগ দেন। ১৯৭১ সালে তিনি কনভেনশন মুসলিম লীগের নেতা ছিলেন। ১৯৭৫ ও ১৯৭৭ সালে তিনি জয়পুরহাট পৌরসভার চেয়ারম্যান নির্বাচিত হন। ১৯৭৯, ১৯৯৬ এবং ২০০১ সালে জয়পুরহাট পাঁচবিবি আসন থেকে আবদুল আলীম এমপি নির্বাচিত হন। আবদুল আলীম ১৯৭৮ সালে জিয়াউর রহমান সরকারের মন্ত্রী সাভার প্রথম বস্ত্রমন্ত্রী ও পরে যোগাযোগ মন্ত্রী ছিলেন।
গত বছরের ১১ জুন আলীমের বিরুদ্ধে ১৯৭১ সালে জয়পুরহাটের বিভিন্ন এলাকায় হত্যা, গনহত্যা লুটপাট, অগ্নিসংযোগ, দেশত্যাগে বাধ্য করাসহ মানবতাবিরোধী অপরাধে উস্কানি দেয়ার অভিযোগ আনা হয়।
মামলার বিবরণ: গত ১৯ সেপ্টেম্বর আবদুল আলীমের পক্ষে মামলার যুক্তি উপস্থাপন শেষ হয়। এরপর আজ রোববার রাষ্ট্রপকে মামলার আইনী বিষয়ে এক ঘন্টা যুক্তি খন্ডনের সময় নির্ধারণ করা হয়। গত ১৫ সেপ্টেম্বর থেকে আসামিপে যুক্তিতর্ক উপস্থাপন করছেন অ্যাডভোকেট তাজুল ইসলাম, অ্যাডভোকেট আহসানুল হক হেনা ও অ্যাডভোকেট আবু ইউসুফ মোঃ খলিলুর রহমান।
গত ৪ সেপ্টেম্বর আবদুল আলীমের বিরুদ্ধে রাষ্ট্রপক্ষের যুক্তি উপস্থাপন শুরু হয় এবং ১১ সেপ্টেম্বর রাষ্ট্রপক্ষ যুক্তি উপস্থাপন শেষ করেন। প্রসিকিউটর তুরিন আফরোজ ও রানা দাসগুপ্ত যুক্তি উপস্থাপন করেন।
গত বছরের ১১ জুন আলীমের বিরুদ্ধে ১৯৭১ সালে জয়পুরহাটের বিভিন্ন এলাকায় হত্যা, লুটপাট, অগ্নিসংযোগ, দেশত্যাগে বাধ্য করা এবং এসব অপরাধে উস্কানি ও সহযোগিতার করাসহ মানবতাবিরোধী অপরাধের অভিযোগে ১৭টি ঘটনার অভিযোগ গঠন করা হয়।
গত ২৭ আগস্ট থেকে ৩ সেপ্টেম্বর পর্যন্ত আলীমের পে তিনজন ডিফেন্স সাী স্যা দিয়েছেন। তারা হচ্ছেন মামুনুর রশিদ, মো. মোজাফফর হোসেন ও আলীমের ছেলে সাজ্জাদ বিন আলীম।
অন্যদিকে আলীমের বিরুদ্ধে গত বছরের ৬ আগস্ট থেকে এ বছরের ২২ আগস্ট পর্যন্ত তদন্ত কর্মকর্তা (আইও) এজেডএম আলতাফুর রহমানসহ রাষ্ট্রপরে সর্বমোট ৩৫ জন সাী স্যা দিয়েছেন।
গত ১৬ এপ্রিল আলীমের মামলাসহ তিনটি মামলা ট্রাইব্যুনাল-১ থেকে ট্রাইব্যুনাল-২-এ স্থানান্তর করা হয়। মানবতাবিরোধী অপরাধের অভিযোগে ২০১১ সালের ২৭ মার্চ জয়পুরহাটের বাড়ি থেকে আবদুল আলীমকে গ্রেফতার করা হয়। একই বছরের ৩১ মার্চ তাকে ১ লাখ টাকায় মুচলেকা এবং ছেলে ফয়সাল আলীম ও আইনজীবী তাজুল ইসলামের জিম্মায় তাকে জামিন দেন ট্রইব্যুনাল-২। এরপর বেশ কয়েক দফা এই জামিনের মেয়াদ বাড়ানো হয়েছে।
আলীমের বিরুদ্ধে অভিযোগ :
আব্দুল আলীমের বিরুদ্ধে আনা ১৭টি অভিযোগের মধ্যে ১৫টিতে বিভিন্ন ঘটনায় মোট ৫৮৫ জনকে হত্যার অভিযোগ রয়েছে। দু’টি অভিযোগ আনা হয়েছে অগ্নিসংযোগ, লুটপাট, আটক ও দেশান্তরে বাধ্য করার ঘটনায়।
১৫টি হত্যার অভিযোগে তিনটি গণহত্যার অভিযোগ রয়েছে যাতে মোট ৪০৬ জনকে হত্যা করা হয় বলে উল্লেখ করা হয়েছে। এদের অধিকাংশই হিন্দু সম্প্রদায়ের।
এছাড়া ‘সুপিরিয়র কমান্ড রেসপনসিবিলিটি’ বা উর্দ্ধতন নেতৃত্বের দায় এর জন্যও অভিযুক্ত করা হয়েছে তাকে।
১ নং অভিযোগ : ১৯৭১ সালের ২০ এপ্রিল বিকালে আব্দুল আলীম পাকিস্তানি সেনাদের নিয়ে জয়পুরহাটের পাঁচবিবি থানার দমদমা গ্রামের মেহের উদ্দিন চৌধুরীর (মৃত) বাড়িতে হামলা চালান। এসময় ওইবাড়িতে লুণ্ঠন ও অগ্নিসংযোগ করা হয়। যার ফলে তিনি দেশান্তরিত হতে বাধ্য হন।
২ : ১৯৭১ সালের ২৬ এপ্রিল আলীম পূর্বপরিকল্পনা অনুসারে মেজর আফজাল, পাকিস্তানি সেনা ও শান্তি কমিটির সদস্যদের নিয়ে কড়াই, কাঁদিপুর এলাকার হিন্দু অধ্যুষিত গ্রাম কডাই, কাঁদিপুর, চকপাড়া, সোনারপাড়া, পালপাড়া, মুন্সিপাড়া গ্রামে অতর্কিতে সশস্ত্র হামলা চালান। হামলায় হিন্দুদের বাড়িঘরে লুণ্ঠন ও অগ্নিসংযোগের পর ৩৭০ জন নিরস্ত্র হিন্দুকে সারিবদ্ধভাবে দাঁড় করিয়ে হত্যা করা হয়। অশ্বিনী কুমার দেবনাথ নামের এক ব্যক্তিকে জীবন্ত কবর দেওয়া হয়।
৩ : ১৮ জুন আলীমের নির্দেশ ও প্ররোচনা অনুসারে, শান্তি কমিটির সদস্য রিয়াজ মৃধা ১১ জন পাকিস্তানি সেনা নিয়ে জুমার নামাজের আগে ও পরে ২২ জন মুসল্লিকে ধরে আনেন। মসজিদের আশপাশ থেকে তারা আরও পাঁচশ নিরস্ত্র মানুষকে ধরে এনে জনৈক আফাজের বাড়ির উঠানে তিনটি সারিতে দাঁড় করায়। রিয়াজ মৃধা পাকিস্তানি সেনাদের একটি তালিকা দেন, যা অনুসরণ করে সেনারা মুক্তিযুদ্ধের পরে ও আওয়ামীপন্থী ২৮ জনকে চিহ্নিত করে। বাকিদের চলে যেতে দেয়া হয়। এরপর চিহ্নিত ২৮ জনকে হাত বেঁধে একটি মাটির ঘরে নিয়ে হত্যার চেষ্টা করা হয়। এতে ২২ জন মারা যান, বাকিরা পালিয়ে যায়।
৪ : মে মাসের প্রথম দিকে একদিন সকালে আলীমের নির্দেশ অনুসারে শান্তি কমিটি ও রাজাকার বাহিনীর সদস্যরা রেলগাড়ি করে বকুলতলা নামক স্থানে যান। সেখান থেকে তারা দু’টি ভাগে বিভক্ত হয়ে কোকতারা, ঘোড়াপা, বাগজানা, কোটাহারা গ্রামের নিরস্ত্র নিরীহ মানুষের ওপর হামলা ও লুটপাট চালায়। এ সময় ১৯ জন মুক্তিযুদ্ধের পরে লোককে হত্যা করা হয়।
৫ : ১৯৭১ সালের মে মাসের ৯ থেকে ১৫ তারিখের মধ্যে আলীমের নির্দেশ ও উস্কানিতে রাজাকার, শান্তি কমিটির সদস্য ও পাকিস্তানি সেনারা জয়পুরহাটের দণি পহুনন্দা গ্রামের মিশন স্কুলে যায়। সেখানে ৫০-৬০ জন থেকে যায়। বাকিরা পাগলা দেওয়ান নামক জায়গায় গিয়ে কয়েকজন গ্রামবাসীকে ডেকে তাদের দিয়ে কয়েকটি গর্ত খনন করায়। ওই গর্তে অপরিচিত ৬৭ জন নিরস্ত্র হিন্দু সম্প্রদায়ের লোককে কবর দেওয়া হয়। এর মধ্যে সাতজনকে গ্রামবাসীর উপস্থিতিতে হত্যা করা হয়েছিল।
৬ : মে মাসের প্রথম দিকে আক্কেলপুরের আবদুস সালাম ও আরও নয়জন নিরস্ত্র ব্যক্তি ভারত যাওয়ার পথে নূরপুর গ্রামে পৌঁছানোর পরে বেলা ১১টার দিকে স্থানীয় ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান, শান্তি কামিটির সদস্য ও রাজাকাররা তাদের ধরে স্থানীয় সৈয়দ আলীর বাড়িতে আটকে রাখে। পরে তাদের আক্কেলপুর রেলস্টেশনের বিশ্রামকে নিয়ে যাওয়ার বিষয়টি আব্দুল আলীমকে জানানো হলে তিনি তাদের শেষ করে দেওয়ার নির্দেশ দেন। তাদের পাকিস্তানি সেনাদের হাতে তুলে দেয়া হলে কোকতারা গ্রামের বকুলতলা এলাকায় নয়জনকে হত্যা করা হয়। মোফাজ্জল নামের এক ব্যক্তি পালিয়ে যেতে সম হন।
৭ : ১৯৭১ সালেল ২৬ মে আব্দুল আলীমের পরামর্শ ও নির্দেশ অনুসারে রাজাকার ও পাকিস্তানি সেনারা জয়পুরহাটের পাঁচবিবি থানার নওদা গ্রামে অভিযান চালিয়ে ইলিয়াস উদ্দিন সর্দার, ইউসুফ উদ্দিন সর্দার, ইউনুস উদ্দিন সর্দার এবং আবদুল কাদের মণ্ডল নামের চারজন নিরস্ত্র মানুষকে ধরে বালিঘাটা ইউনিয়ন পরিষদের (ইউপি) কার্যালয়ে আটকে রাখে। পরে তাদের কালীপুকুরের পাশে নিয়ে হত্যা করা হয়।
9 : মে মাসের প্রথম দিকে আব্দুল আলীম পাকিস্তানি মেজর আফজালকে সঙ্গে নিয়ে তেলাল থানার উত্তরহাট শহর নামের একটি স্থানে পাঁচ-সাতশ’ জনের একটি সমাবেশে যান। সেখানে তিনি বলেন, ‘হিন্দুদের মা করা যাবে না। এদের যা পাও লুট করে নাও।’ এই উস্কানিমূলক বক্তব্যের পরে মে মাসের শেষদিকে হিন্দুপল্লী, উত্তরহাট শহর, হারুনজাহাট এলাকায় হিন্দু জনগণের ওপর হামলা ও লুটপাট চালানো হয়। ওই এলাকা থেকে হিন্দু সম্প্রদায়ের ১০ জন লোককে ধরে শাওনলাল বাজলার গদিঘরে স্থাপিত শান্তি কমিটির কার্যালয়ে নিয়ে যাওয়া হলে আলীম তাঁদের হত্যার নির্দেশ দেন। পরে ওই ১০ জনকে খঞ্জনপুর কুঠিবাড়ি ঘাট এলাকায় নিয়ে হত্যা করা হয়।
৯ : ১৪ জুন শান্তি কমিটির সদস্যরা মুক্তিযোদ্ধা সন্দেহে ১৫ জন যুবককে শাওনলাল বাজলার গদিঘরে ধরে নিয়ে যায় ও সেখানে আটকে রাখেন। সেখানে মেজর আফজালের সঙ্গে পরামর্শ করে আলীম তাদের হত্যার সিদ্ধান্ত নেন। পরে ওই সিদ্ধান্ত অনুসারে তাঁদের পশ্চিম আমাত্রা গ্রামে নিয়ে নির্যাতন শেষে হত্যা করে গণকবর দেওয়া হয়।
১০ : ১৯৭১ সালেল জুনের শেষ দিকে আব্দুল আলীমের সিদ্ধান্ত অনুসারে রাজাকার ও শান্তি কমিটির সদস্যরা ২৬ জন ব্যক্তিকে মুক্তিযোদ্ধা সন্দেহে ধরে এবং একটি ট্রাকে করে জয়পুরহাট রেলস্টেশনে নিয়ে যায়। এ সময় আলোখেলা স্টুডিওর মালিক মোতাসিম বিল্লাহ নামের এক ব্যক্তিকে আলীম নিয়ে আসেন এবং তিনি ওই ২৬ জন আটক ব্যক্তির সঙ্গে আলীমের ছবি তোলেন। পরে তাদের জয়পুরহাট কলেজে নিয়ে হত্যা করা হয়।
কোন মন্তব্য নেই:
একটি মন্তব্য পোস্ট করুন