মেহেদী হাসান
২৭/৯/২০১৩
শুধু বাংলাদেশ নয়, নানা কারনে গোটা বিশ্বে একটি আলোচিত এবং ঘটনাবহুল মামলা হিসেবে স্থান করে নিয়েছে আব্দুল কাদের মোল্লা মামলাটি। ট্রাইব্যুনাল কর্তৃক কাদের মোল্লার রায়কে কেন্দ্র করে গড়ে ওঠে শাহবাগকেন্দ্রিক আন্দোলন, গণজাগরন মঞ্চ। যার প্রতিকৃয়া হিসেবে উত্থান হয় হেফাজতে ইসলাম এবং শেষ পর্যন্ত যা গড়ায় অপারেশন শাপলা পর্যন্ত। যুদ্ধাপরাধ ইস্যু, আব্দুল কাদের মোল্লা মামলা এবং এরই ধারাবাহিকতায় একের পর এক ঘটে যাওয়া বিভিন্ন ঘটনা শেষ পর্যন্ত বাংলাদেশের রাজনীতির গতি প্রকৃতির অন্যতম নির্ধারক হিসেবে আবির্ভূত হয়। শাহবাগের ধারাবাহিকতায় অপারেশন শাপলা এবং এর পরে অনুষ্ঠিত চারটি সিটি নির্বাচনে সরকারের ধরাশয়ী হবার ঘটনা একই সূত্রে গাঁথা বলেই প্রতীয়মান হয়েছে। যুদ্ধাপরাধ ইস্যু তথা আব্দুল কাদের মোল্লা মামলা তাই বাংলাদেশের নির্বাচন কেন্দ্রিক রাজনীতিতে ভোটের বাক্স নিয়ন্ত্রকের ভূমিকায় পরিণত হয়েছে শেষ পর্যন্ত। এটি ছাড়াও আইনী কারনে এ মামলা বাংলাদেশ তথা বিশ্বের বিচার বিভাগের ইতিহাসে একটি আলোচিত ঘটনা হিসেবে স্থান করে নেবে ভবিষ্যতে। কারণ এই বিচারের রায় হয়ে যাবার পর আইন সংশোধন করা হয়েছে। বিচারিক আদালতের সাজা বাড়িয়ে আসামীকে সর্বোচ্চ শাস্তি মৃত্যুদণ্ড দেয়া হয়েছে যা অতীতে সুপ্রীম কোর্টে কখনো হয়নি বলে জানিয়েছে আসাসী পক্ষ।
চলতি বছর পাঁচ ফেব্রুয়ারি ট্রাইব্যুনাল কর্তৃক আব্দুল কাদের মোল্লার বিরুদ্ধে যাবজ্জীন দণ্ড দেয়া হয়। এ রায়কে কেন্দ্র করে শাহবাগকেন্দ্রিক আন্দোলন গড়ে ওঠে । আন্দোলনকারীদের দাবি আব্দুল কাদের মোল্লাকে ফাঁসি দিতে হবে। ফাঁসি ছাড়া অন্য কোন রায় তারা মেনে নিতে রাজি নয়। কাদের মোল্লার যে অপরাধ তাতে ফাঁসিই একমাত্র তার উপযুক্ত শাস্তি। এ দাবির প্রেক্ষিতে ১৮ ফেব্রুয়ারি ট্রাইব্যুনাল আইন সংশোধন করা হয় সরকার পক্ষের জন্য আপিলের বিধান রেখে। আইন সংশোধনের পর সরকার আব্দুল কাদের মোল্লার সর্বোচ্চ শাস্তি মৃত্যুদণ্ড দাবি করে আপিল আবেদন করে সুপ্রীম কোর্টের আপিল বিভাগে।
ট্রাইব্যুনাল আইনে পূর্বের বিধান ছিল আসামী পক্ষ সাজার বিরুদ্ধে আপিল করতে পারবে। আসামীর সাজা হলে রাষ্ট্রপক্ষের জন্য আপিলের বিধান ছিলনা। আসামীকে খালাস দেয়া হলে সেক্ষেত্রে রাষ্ট্রপক্ষের জন্য আপিলের বিধান ছিল। ১৮ ফেব্রুয়ারি আইন সংশোধন করে উভয় পক্ষকে আপিলের সমান সুযোগ দেয়া হয় এবং আইনের সংশোধনীকে ২০০৯ সাল থেকে কার্যাকারিতা প্রদান করা হয়। অর্থাৎ ধরে নিতে হবে এই সংশোধনী এবং সরকার পক্ষের জন্য আপিলের বিধান ২০০৯ সাল থেকে কার্যকর রয়েছে।
আইনের সংশোধনীর কারনে আব্দুল কাদের মোল্লার আপিল শুনানী শেষ পর্যন্ত অ্যামিকাস কিউরি পর্যন্ত গড়ায়। ১৮ ফেব্রুয়ারি আইনের যে সংশোধন করা হয়েছে তা আব্দুল কাদের মোল্লার ক্ষেত্রে প্রযোজ্য কি-না জানতে চেয়ে ২০ জুলাই সুপ্রীম কোর্টের সাতজন বিশিষ্ট আইনজীবীকে অ্যামিকাস কিউরি হিসেবে নিয়োগ দেয় আপিল বিভাগ। কারণ আইনটি আব্দুল কাদের মোল্লার রায়কে কেন্দ্র করে সংশোধন করা হলেও তা আব্দুল কাদের মোল্লার ক্ষেত্রে প্রযোজ্য হবে না সামনে যেসব মামলার রায় দেয়অ হবে ট্রাইব্যুনাল থেকে সেক্ষেত্রে প্রযোজ্য হবে তার কোন কিছু নির্দিষ্টভাবে উল্লেখ ছিলনা। সংশোধনীর ভূমিকায় চলমান বিচার কথাটি উল্লেখ ছিল। সেকারনে শুনানীর সময় একজন বিচারপতি এ বিষয়টির প্রতি দৃষ্টি আকর্ষণ করেন এবং তখন থেকে প্রশ্নটি সামনে আসে এ সংশোধনী কাদের মোল্লার ক্ষেত্রে প্রযোজ্য হবে কি-না। এ প্রশ্নকে কেন্দ্র করে শেষ পর্যন্ত এ্যামিকাস কিউরি নিয়োগ দেয়া হয়। এরা হলেন, সাবেক বিচারপতি টি এইচ খান, সাবেক এটর্নি জেনারেল প্রবীন আইনবিদ ব্যারিস্টার রফিক-উল হক, ব্যারিস্টার এম আমীর উল ইসলাম, সাবেক অ্যাটর্নি জেনারেল মাহমুদুল ইসলাম, সাবেক অ্যাটর্নি জেনারেল এএফ হাসান আরিফ, ব্যারিস্টার রোকনউদ্দিন মাহমুদ ও ব্যারিস্টার আজমালুল হোসেন কিউসি । এসব নানা কারনে আব্দুল কাদের মোল্লা মামলাটি গোটা দেশজুড়ে আলোচিত একটি মামলায় পরিণত হয়।
রায়ে আসামী পক্ষের প্রতিকৃয়া :
আসামী পক্ষের প্রধান আইনজীবী ব্যারিস্টার আব্দুর রাজ্জাক রায়ের পর বলেছেন, বিচারিক আদালত কর্তৃক প্রদত্ত যাবজ্জীবন সাজা বাড়িয়ে সুপ্রীম কোর্টের আপিল বিভাগ কর্র্তৃক মৃত্যুদণ্ড প্রদানের ঘটনা বাংলাদেশের ইতিহাসে এই প্রথম এবং বিচার বিভাগের জন্য এটি একটি দুর্ভাগ্যজনক অধ্যায়।
আপিল বিভাগে আবদুল কাদের মোল্লার রায় ঘোষণার পরপরই সুপ্রিম কোর্ট বার ভবনের মিলনায়তনে আয়োজিত এক সংবাদ সম্মেলনে তিনি একথা বলেন।
ব্যারিস্টার আবদুর রাজ্জাক লিখিত বক্তব্যে বলেন, সুপ্রিম কোর্টের আপিল বিভাগ সংখ্যাগরিষ্ঠের ভিত্তিতে আবদুল কাদের মোল্লাকে মানবতাবিরোধী অপরাধের দায়ে মৃত্যুদণ্ড প্রদান করেছেন। একটি প্রতিষ্ঠান হিসাবে দেশের সর্বোচ্চ আদালতের প্রতি আমরা শ্রদ্ধাশীল, কিন্তু এটি একটি ভুল রায়। আমরা এ রায়ে সংুব্ধ। আমরা বিস্মিত। আমরা মনে করি- এ রায় ন্যায় বিচারের পরিপন্থি।
বিচারিক আদালত যেখানে মৃত্যুদণ্ড দেননি সেখানে প্রথমবারের মতো সুপ্রিম কোর্টের আপিল বিভাগের মৃত্যুদণ্ড প্রদান বাংলাদেশের ইতিহাসে নজিরবিহীন। তাছাড়া স্কাইপ কেলেঙ্কারির পরও ট্রাইব্যুনাল কর্তৃক যাবজ্জীবন কারাদণ্ডপ্রাপ্ত ব্যক্তিকে মৃত্যুদণ্ড প্রদান আইনের শাসনের পরিপন্থি। আমাদের সমাপনী বক্তব্যে আমরা বলেছিলাম- যে সাক্ষ্য প্রমাণ আদালতের সামনে উপস্থাপন করা হয়েছে, তার ভিত্তিতে আবদুল কাদের মোল্লাকে দোষী সাব্যস্ত করার কোনো সুযোগ নেই। কিন্তু এটা দুর্ভাগ্যজনক যে, আজ তাকে শুধু দোষী সাব্যস্তই করা হয়নি, মৃত্যুদণ্ডও দেয়া হয়েছে। বিচারের ইতিহাসে এটি একটি দুঃখজনক অধ্যায়।
রিভিউ বিতর্ক
আবদুল কাদের মোল্লাকে আপিল বিভাগ কর্তৃক মৃত্যুদণ্ড প্রদানের পরপরই শুরু হয় রিভিউ আবেদন নিয়ে বিতর্ক। রায় ঘোষণার পরপরই অ্যাটর্নি জেনারেল মাহবুবে আলম সাংবাদিকদের বলেন, এই রায়ের বিরুদ্ধে রিভিউ আবেদন দায়ের করার কোন সুযোগ নেই। আপিল বিভাগের রায়ের মধ্য দিয়েই এই মামলার বিচারিক প্রক্রিয়া শেষ হয়েছে।
এরপর আবদুল কাদের মোল্লার আইনজীবীরা সুপ্রিম কোর্ট বার অডিটোরিয়ামে রায় বিষয় অনুষ্ঠানিক প্রতিক্রিয়া প্রদান করেন। তখন সাংবাদিকরা কাদের মোল্লার প্রধান আইনজীবী ব্যারিস্টার আবদুর রাজ্জাকের কাছে অ্যাটর্নি জেনারেলের অভিমতের বিষয়ে জানতে চাইলে তিনি বলেন, সংবিধান আসামীকে রিভিউ আবেদন দায়ের করার সুযোগ দিয়েছে। সংবিধান দেশের সর্বোচ্চ আইন। সুপ্রিম কোর্ট সংবিধানের অধীনে চলে। আর ট্রাইব্যুনাল আইনের উপরে সংবিধান। সুপ্রীম কোর্ট ট্রাইব্যুনালের আইন দিয়ে চলেনা। আমরা সংবিধান ও ট্রাইব্যুনাল আইনে আপিল দায়ের করেছি। একজন যাবজ্জিবন সাজাপ্রাপ্ত ব্যক্তিকে মৃত্যুদণ্ড দেয়া হয়েছে। মৃত্যুদন্ডের রায়ের বিরুদ্ধে তার রিভিউয়েরও যদি সুযোগ না থাকে তাহলে সে যাবে কোথায়? কাজেই রিভিউ আবেদনের সুযোগ নেই এটা সঠিক নয়।
ব্যারিস্টার রাজ্জাকের এই যুক্তি সম্পর্কে জানতে চাইলে অ্যাটর্নি জেনারেল মাহবুবে আলম সাংবাদিকদের বলেন, আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনাল একটি বিশেষ আইন। এ রায়কে সংবিধান সুরক্ষা দিয়েছে। এ আইনে ট্রাইব্যুনালের রায়ের বিরুদ্ধে আপিল করার বিধান আছে, তবে রিভিউ দায়েরের কোন সুযোগ নেই। আপিল বিভাগের রায়ের মধ্য দিয়েই এই মামলার বিচারিক প্রক্রিয়া শেষ। এখন আসামী চাইলে রাষ্ট্রপতির কাছে মা চাইতে পারেন। রাষ্ট্রপতির কাছে মার আবেদন নাকচ হলে রায় কার্যকর করা যাবে।
তিনি বলেন, আমার অভিমত আমি দিয়েছি। রাজ্জাক সাহেব তার অভিমত দিয়েছেন। সেেেত্র রিভিউ করা যাবে কি-না, সেটি সিদ্ধান্ত নেবে আদালত।
অন্যদিকে আইনমন্ত্রী ব্যারিস্টার শফিক আহমেদ রায়ের পার মন্ত্রণালয়ে এক ব্রিফিংয়ে বলেছেন, রায় রিভিউ হওয়ার কোনো সুযোগ নেই। অন্যদেশে এ ধরনের অপরাধে আপিলেরও সুযোগ থাকে না। বিচার বিভাগ বিশেষ আইনে না চললেও আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনাল আইনে আপিল হয়েছিল।
বাংলাদেশ সংবিধানের ১০৫ অনুচ্ছেদে সুপ্রিম কোর্টের আপিল বিভাগ কর্তৃক ঘষিত রায় বা আদেশ পুনর্বিবেচনা করা বিধান রয়েছে। রিভিউ আবেদন বিষয়ে সংবিধানের ওই অনুচ্ছেদে বলা হয়েছে ‘আপিল বিভাগের কোন ঘোষিত রায় বা প্রদত্ত আদেশ পুনর্বিবেচনার ক্ষমতা উক্ত বিভাগের থাকিবে।’
এসব বিতর্কের কারনে এখন সবশেষে আইনজ্ঞদের মতে যেহেতু আইনমন্ত্রী, এটর্নি জেনারেল বলেছেন রিভিউ’র সুযোগ নেই এবং বিরোধী পক্ষ বলছে সুযোগ আছে তাই এখন এ বিষয়ে আপিল বিভাগকেই সুরাহা করতে হবে।
মোমেনা বেগমের জবানবন্দী এবং যাদুঘরে রক্ষিত ডকুমেন্টে যা রয়েছে
জামায়াতে ইসলামীর সহকারী সেক্রেটারি জেনারেল আবদুল কাদের মোল্লাকে ট্রাইব্যুনাল যে দুটি অভিযোগে যাবজ্জীবন কারাদণ্ড প্রদান করা হয়েছে তার মধ্যে একটি অভিযোগ হল মিরপুরে কালাপানি লেনে হযরত আলী, তার ছেলে, মেয়ে, স্ত্রীকে হত্যা ও মেয়েদের ধর্ষনের ঘটনা। এ ঘটনাটিতেই আপিল বিভাগের রায়ে আব্দুল কাদের মোল্লাকে মৃত্যুদণ্ড প্রদান করা হয়েছে।
এবার দেখা যাক মোমেনা বেগম ট্রাইব্যুনালে এসে কি বলেছেন এবং মুক্তিযুদ্ধ যাদুঘরে তার নামে রক্ষিত ডকুমেন্ট এ কি রয়েছে ।
হযরত আলী লস্কর পরিবার হত্যাকান্ড ঘটনায় বেঁচে যায় হযরতী আলী লস্করের বড় মেয়ে মোমেনা বেগম। মোমেনা বেগম ট্রাইব্যুনালে এসে আব্দুল কাদের মোল্লার বিরুদ্ধে সাক্ষ্য দিয়েছেন এ ঘটনা বিষয়ে । এই সাক্ষী মোমেনা বেগম তাদের পরিবারের সদস্যদের হত্যা এবং ধর্ষনের ঘটনা বিষয়ে ২০০৭ সালে মুক্তিযুদ্ধ যাদঘর কর্তৃপক্ষের কাছে জবানবন্দী দিয়েছেন। ট্রাইবু্যুনালে মোমেনা বেগম বলেছেন ঘটনার সময় তিনি ঘটনাস্থলে উপস্থিত ছিলেন এবং পরিবারের সদস্যদের হত্যা এবং ধর্ষনের ঘটনা দেখেছেন। তিনি নিজেও ধর্ষন/ লাঞ্ছনার শীকার হন এবং এক পর্যায়ে অচেতন হয়ে পড়েন। অপর দিকে মুক্তিযুদ্ধ যাদুঘরে কাছে তিনি ঘটনার বর্ননা দিয়ে বলেছেন ঘটনার দুই দিন আগে তিনি শশুরবাড়ি চলে যাওয়ায় প্রানে বেঁচে যান। কোর্টে তিনি বললেন ঘটনাস্থলে উপস্থিত ছিলেন আর মুক্তিযুদ্ধ যাদুঘরে রক্ষিত বক্তব্যে দেখা যায় তিনি ঘটনার দুই দিন আগে শশুর বাড়ি চলে যান।
ক্যামেরা ট্রায়ালের মাধ্যমে (রুদ্ধদ্বার কক্ষে বিচার পরিচালনা) মোমেন বেগমের সাক্ষ্য গ্রহণ করা হয় ট্রাইব্যুনালে। ফলে সেসময় মোমেনা বেগমের সাক্ষ্য সংবাদ মাধ্যমে প্রচার বা প্রকাশিত হয়নি। তবে মোমেনা বেগম কোর্টে যে জবানবন্দী দিয়েছেন তা আব্দুল কাদের মোল্লার রায়ে বর্ননা করা হয়েছে বিস্তারিতভাবে।
ট্রাইব্যুনালে মোমেনা বেগমের জবানবন্দীর উদ্ধৃতি দিয়ে রায়ে বলা হয়েছে, ১৯৭১ সালের ২৬ মার্চ ঘটনা ঘটে। মোমেনা বেগমরা তখন মিরপুর ১২ নম্বর সেকশনের ৫ নং কালাপানি লেনে ২১ নম্বর বাসায় থাকতেন। মোমেনা বেগম কোর্টে সাক্ষ্য দিয়ে ঘটনা বিষয়ে বলেন, সন্ধ্যার সময় তার পিতা হযরত আলী হন্তদন্ত হয়ে ঘরে আসলেন এবং বললেন কাদের মোল্লা তাকে মেরে ফেলবে। কাদের মোল্লা এবং তার বিহারী সাগরেদ আক্তার গুন্ডা তার পিতাকে হত্যার জন্য ধাওয়া করছে। তার পিতা ঘরে ঢুকে দরজা বন্ধ করে দিল। এরপর তারা বাইরো বোমা ফাটাল। দরজা খোলার জন্য গালিগালাজ করল। তার মা দাও হাতে নিয়ে দরজা খুলল। তারা ঘরে ঢুকে গুলি করে হত্যা করল তার মাকে। কাদের মোল্লা তার পিতাকে কলার ধরে টেনে বাইরে নিয়ে গেল। তার সঙ্গীরা তার বোন খাদিজা এবং তাসলিমাকে জবাই করল। দুই বছরের ভাইকে আছড়িয়ে হত্যা করে।
মোমেনা জানায় সে এবং তার ১১ বছর বয়স্ক অপর বোন আমেনা খটের নিচে আশ্রয় নেয় ঘটনার সময়। আমেনা ভয়ে চিৎকার দেয়ায় তাকে খটের নিচ থেকে টেনে বের করে জামাকাপড় ছিড়ে ফেলে এবং এক পর্যায়ে তার কান্না থেমে যায়। এক পর্যায়ে তাকেও টেনে বের করে এবং ধারাল অস্ত্র দিয়ে আঘাত করে। এক পর্যায়ে সে জ্ঞান হারায় এবং জ্ঞান ফিরে পেটে প্রচন্ড ব্যর্থা অনুভব করে। তার পরনের প্যাণ্ট ছিন্নভিন্ন অবস্থায় পান তিনি। পরে এক ঘরে গিয়ে আশ্রয় নেন এবং তাদের সেবার মাধ্যমে কিছুটা সুস্থ হন। পরে তার শশুর খবর পেয়ে তাকে এসে নিয়ে যান।
রয়ে মোমেনা বেগমের বরাদ দিয়ে তাদের পরিবারের ঘটনার বর্ননা করা হয়েছে তার সংক্ষিপ্ত চিত্র এটি।
মুক্তিযুদ্ধ যাদুঘরে রক্ষিত ডকুমেন্ট :
হযরত আলী হত্যাকান্ডসহ আরো অনেক হত্যাকান্ড বিষয়ে শহীদ পরিবারের আত্মীয় স্বজনদের সাক্ষাতকার, লিখিত বক্তব্যের মূল কপি, অডিও ভিডিও বক্তব্য সংরক্ষিত আছে মুক্তিযুদ্ধ যাদুঘর কর্তৃপক্ষের কাছে। এছাড়া লিখিত বক্তব্যের ডুপ্লিকেট কপি সংরক্ষিত আছে মিরপুর জল্লাদখানা যাদুঘরে। মিরপুর ১০ নম্বরে অবস্থিত পাম্প হাউজে এনে ১৯৭১ সালে বিহারীরা বাঙ্গালীদের হত্যা করত। হত্যার পর তাদের লাশ ফেলে দিত পানির ট্যাংকি এবং পার্শবর্তী ডোবায়। ১৯৯০ দশকে এখানকার বধ্যভূমিটি আবিষ্কার হয় এবং অসংখ্য শহীদদের কঙ্কাল উদ্ধার করা হয়। এরপর পাম্প হাউজটিকে জল্লাদখানা যাদুঘর করা হয় এবং এটি বর্তমানে মুুক্তিযুদ্ধ যাদু ঘরের অংশ। জল্লাদখানায় ১৯৭১ সালে যাদের হত্যা করা হয়েছে যাদুঘর কর্তৃপক্ষ তাদের পরিবারে অনেক আত্মীয় স্বজনকে খুঁজে বের করে বিভিন্ন সময়ে তাদের সাক্ষাতকার বক্তব্য রেকর্ড করে তা যাদুঘরে সংরক্ষন করে মুক্তিযুদ্ধ যাদুঘর কর্তৃপক্ষ।
যে হযরত আলী হত্যাঘটনায় আব্দুল কাদের মোল্লাকে যাবজ্জীবন কারাদণ্ড প্রদান করা হয়েছে সেই ঘটনার একটি বিবরন রক্ষিত আছে মুক্তিযুদ্ধ যাদুঘরের কাছে। হযরত আলীর বেঁচে যাওয়া একমাত্র মেয়ে মোমেনা বেগমের বরাত দিয়েই সে ঘটনার বর্ননা লিপিবদ্ধ এবং সংরক্ষন করা হয়েছে। মোমেনা বেগমের সাক্ষাতকার গ্রহনের মাধ্যমে এ ঘটনার বিবরন তারা সংগ্রহ করে। মুক্তিযুদ্ধ যাদুঘরের কাছে রক্ষিত সে ডকুমেন্টে লেখা আছে ঘটনার দুই দিন আগে মোমেনা বেগম তার শশুর বাড়ি চলে যান।
হযরত আলী হত্যাকান্ড বিষয়ে তার মেয়ে মোমেনা বেগমের সাক্ষাতকার যাদুঘর কর্তৃপক্ষ গ্রহণ করে ২৮/৯/২০৭ তারিখ। তিনি তখন তাদের কাছে ঘটনার যে বিবরন দেন তা নিম্নরূপ। ‘ঘটনার বিবরণ : ১৯৭১ সালে মিরপুরের কালাপানি এলাকায় বিহারিদের সঙ্গে কিছু বাঙালি পরিবারও বাস করতো। ৭ মার্চ এর পর থেকে দেশের অবস্থা আশঙ্কাজনক দেখে কিছু কিছু বাঙালি পরিবার এলাকা ছেড়ে নিরাপদ আশ্রয়ে চলে যায়। অনেকের অন্যত্র যাওয়ার অবস্থা ছিল না ফলে এলাকায় রয়ে গেলেন। যে কয়েকটি পরিবার অন্যত্র যেতে পারলেন না তাদের মধ্যে একটি হযরত আলী লস্কর-এর পরিবার।
হযরত আলী লস্কর ছিলেন একজন দর্জি/খলিফা। মিরপুরেই তার দোকান ছিল। সকলে যখন এলাকা ছেড়ে চলে যাচ্ছিলেন তখন হযরত আলী লস্করকেও তারা চলে যেতে বলেছিলেন। কিন্তু তাঁর যাওয়ার জায়গা ছিল না। ২৫ মার্চ রাতে গণহত্যা শুরু হয়ে গেলে ২৬ মার্চ সকাল সাতটার দিকে বিহারির হযরত আলী লস্কর-এর বাড়ি ঘিরে ফেলে এবং তাকে ধরে নিয়ে যায়। কিছুক্ষণ পরই তারা তাঁর স্ত্রী, দুই কন্যা ও শিশু পুত্রকে ধরে নিয়ে যায় এবং সকলকে এক সঙ্গে নির্মমভাবে হত্যা করে পাশের বাড়ির কুয়োতে সব লাশ ফেলে যায়। বিহারিরা তার দ্বিতীয় কন্যা আমেনা বেগমকে ঘরের ভতর সারাদিন আটকে রেখে ধর্ষণ করে। পরে তাকেও হত্যা করে সেই কুয়োতে ফেলে। হযরত আলীর বড় মেয়ে মোমেনা বেগম মাত্র দুইদিন আগে শ্বশুরবাড়িতে চলে যাওয়ায় একমাত্র সেই প্রানে বেঁচে যায়। এখানে উল্লেখ্য যে, হযরত আলী স্ত্রী সে সময় অন্তঃসত্বা ছিল।
কয়েকদিন পরই এ খবর হযরত আলীর বড় মেয়ে মোমেনা বেগম জানতে পারেন। কিন্তু মিরপুরের অবস্থা আশঙ্কাজনক বলে তিনি বাড়ি আসতে পারলেন না। দেশ স্বাধীন হওয়ার পর নিজ বাড়িতে এসে তিনি আর কিছুই অবশিষ্ট পেলেন না। ভগ্নহৃদয়ে ফিরে গেলেন শ্বশুরবাড়িতে।”
রায়ের পর্যালোচনায় বলা হয়েছে মোমেনা বেগম তার পিতামাতা এবং ভাইবোনকে হত্যার ঘটনাটি যে স্বচক্ষে দেখেছেন তা সন্দেহাতীতভাবে প্রমানিত হয়েছে। তার বয়স ছিল তখন ১৩ বছর এবং অলৌকিকভাবে সে বেঁচে যায়। তাকে অবিশ্বাস করার কোন কারণ নেই।
আসামী পক্ষ থেকে জানানো হয়েছে মোমেনা বেগমের যে জবানবন্দী মুক্তিযুদ্ধ যাদুঘরের কাছে রক্ষিত রয়েছে তা তারা ট্রাইব্যুনালে জমা দিয়েছিলেন। ট্রাইব্যুনাল তখন তা নথিভুক্ত করে জানিয়েছিলেন বিষয়টি তারা রায়ের সময় বিবেচনা করবেন। তবে রায়ে এ ডকুমেন্ট বিষয়ে কিছু উল্লেখ করা হয়নি। রায়ে আসামী পক্ষের দাবি উল্লেখ করে বলা হয়েছে, আসামী পক্ষ দাবি করেছে মোমেনা বেগম হযরত আলী লস্করের মেয়ে নন। তিনি যে হযরত আলী রস্করের মেয়ে সে মর্মে রাষ্ট্রপক্ষ তা তিনি কোন ডকুমেন্ট হাজির করেনি। তাছাড়া জেরায় আসামী পক্ষ মোমেনা বেগমের যেসব দুর্বল বিষয় বের করে আনে তাও উল্লেখ করা হয়নি রায়ে।
আসামী পক্ষ কর্তৃক মোমেনা বগমের জেরার পর্যালোচা করে রায়ে বলা হয়েছে, জেরায় এক প্রশ্নের জবাবে মোমেনা বেগম জানান, পাকিস্তান আর্মি এবং বিহারীদের সাথে যে বাঙ্গালী এসেছিল তিনি বাংলায় কথা বলছিলেন এবং তার বাবার কলার ধরে যিনি নিয়ে যাচ্ছিলেন তিনি হলে কাদের মোল্লা। তিনি খাটের নিচে লুকিয়ে থেকে এ ঘটনা দেখেন। কাদের মোল্লা যে সেখানে উপস্থিত ছিলেন তা এর মাধ্যমে প্রতিষ্ঠিত হয়েছে বলে রায়ে মন্তব্য করা হয়েছে।
রায়ে বলা হয়েছে মোমেনা বেগমের মা বাবা ভাই বোনকে কাদের মোল্লা নিজে হত্যা করেছে চার্জে সে অভিযোগ করা হয়েছে বলে মনে হয়না। তবে রায়ে বলা হয়েছে কাদের মোল্লার উপস্থিতিতে, সহায়তায় এবং নৈতিক সমর্থনে এ হত্যার ঘটনা ঘটে। মানবতা বিরোধী এ ধরনের হত্যা ঘটনা ব্যক্তি সরাসরি ঘটিয়েছে তা প্রতিষ্ঠার প্রয়োজন হয়না।
রায়ে আরো বলা হয়েছে এ ঘটনায় একজনমাত্র প্রত্যক্ষদর্শী জীবিত সাক্ষী এবং ক্ষতিগ্রস্ত হলেন মোমেনা বেগম। তার এভিডেন্সেকে পাশ কাটানো যায়না বা সন্দেহ পোশন করা যায়না।
আব্দুল কাদের মোল্লার বিরুদ্ধে মোট ছয়টি অভিযোগে চার্জ গঠন করা হয় এবং এর মধ্যে পাঁচটি অভিযোগে কারাদান্ড প্রদান করা হয় আব্দুল কাদের মোল্লাকে। দুটি হযরত আলী হত্যা ঘটনাটি ছিয় ছয় নম্বর অভিযোগ এবং এ অভিযোগসহ আরো একটি অভিযোগে যাবজ্জীবন প্রদান করা হয়। হযরত আলী লস্কর আওয়ামী লীগ করার কারনে এবং স্বাধীনতার পক্ষে অবস্থান নেয়ার কারনে আব্দুল কাদের মোল্লা বিহারী এবং আর্মিদের সাথে নিয়ে তাকেসহ পরিবারের লোকজনকে হত্যা করে মর্মে অভিযোগ করা হয় রাষ্ট্রপক্ষ থেকে।
আপিল বিভাগেও আসামী পক্ষ থেকে মুক্তিযুদ্ধ যাদুঘরে রক্ষিত মোমেনা বেগমের জবানবন্দীর বরাতে তৈরি করা প্রতিবেদন জমা দেয়া হয়েছিল। শুনানীর সময় আদালত এ রিপোর্টের সত্যতা নিয়ে প্রশ্ন তুলেছেন। যাদুঘরের যে এ প্রতিবেদন তৈরি করেছে তাকে হাজির করা হয়েছিল কিনা জানতে চেয়েছেন। জবাবে আসামী পক্ষের প্রধান আইনজীবী ব্যারিস্টার আব্দুর রাজ্জাক বলেছেন আমারা এ রিপোর্ট সংগ্রহ করেছি। এখন এ রিপোর্ট সত্য কি-না তা প্রমানের দায়িত্ব কোর্টের। কোর্ট এ বিষয়ে উদ্যোগ নিতে পারেন। কোর্ট যাদুঘর কর্তৃপক্ষকে তলব করতে পারেন এবং তাদের কাছে জানতে চাইতে পারেন যে, তাদের কাছে এ ধরনের রিপোর্ট আছে কি-না। তাহলেই বের হয়ে যাবে আমাদের রিপোর্ট সত্য কি মিথ্যা।
কিন্তুআদালত মন্তব্য করেছেন মোমেনা বেগম কোর্টে এসে যে সাক্ষ্য দিয়েছেন সেটাই আসল বিবেচ্য। পরিবারের সবই নিহত হয়েছে এবং বেঁচে যাওয়া একমাত্র মেয়ে ভুক্তভোগী সাক্ষীর কথা তারা অস্বীকার করে কি করে বলে মন্তব্য করেছেন কোর্ট।
শেষ পর্যন্ত এ ঘটনাতেই আব্দুল কাদের মোল্লাকে মৃত্যুদন্ড প্রদান করা হয়েছে।
অভিযোগ : ট্রাইব্যুনাল এবং আপিল বিভাগের রায়
রাষ্ট্রপক্ষ আব্দুল কাদের মোল্লার বিরুদ্ধে ছয়টি অভিযোগ এনেছি। ট্রাইব্যুনাল এর মধ্যে পাঁচটি অভিযোগে তাকে সাজা দেয়া হয়। এসব অভিযোগ বিষয়ে ট্রাইব্যুনাল এবং আপিল বিভাগ কর্তৃক সাজা বিষয়ে নিম্নে সংক্ষিপ্ত আকারে তুলে ধরা হল।
১ নং অভিযোগ পল্লব হত্যা :
১৯৭১ সালের এপ্রিল মাসে মিরপুর বাংলা কলেজের ছাত্র পল্লব হত্যা ঘটনা। অভিযোগে বলা হয় আব্দুল কাদের মোল্লার নির্দেশে তার সাঙ্গপাঙ্গরা মিরপুর বাংলা কলেজের ছাত্র পল্লবকে নওয়াবপুর থেকে ধরে এনে নির্যাতন করে হত্যা করে।
ট্রাইব্যুনালের রায় : ট্রাইব্যুনালের রায়ে এ হত্যা ঘটনার সাথে আব্দুল কাদের মোল্লার সংশ্লিষ্টতার অভিযোগে তাকে ১৫ বছরের জেল দেয়া হয়েছে।
ট্রাইব্যুনালের রায়ে পল্লব হত্যার ঘটনা বিশ্লেষন করে উল্লেখ করা হয়েছে এ হত্যা ঘটনার অভিযোগের ভিত্তি হল শোনা কথা। ট্রাইব্যুনালের হাতে যা এসেছে তাতে দেখা যায় আব্দুল কাদের মোল্লা ব্যক্তিগতভাবে কোন অপরাধ সংঘটন করেছেন এমন অভিযোগে তিনি অভিযুক্ত নন।
আপিল বিভাগের রায় : আপিল বিভাগের রায়ে পল্লব হত্যা বিষয়ে ট্রাইব্যুনাল কর্তৃক প্রদত্ত ১৫ বছরের সাজা বহাল রাখা হয়েছে।
২ নং অভিযোগ কবি মেহের হত্যাকান্ড :
১৯৭১ সালের ২৭ মার্চ আব্দুল কাদের মোল্লা তার সহযোগীদের নিয়ে মিরপুর ৬ নং সেকশনে নিজ ঘরে থাকা অবস্থায় স্বাধীনতাপন্থী কবি মেহেরুননিসা, তার মা এবং দুই ভাইকে হত্যা করে মর্মে অভিযোগ আনা হয় রাষ্ট্রপক্ষ থেকে।
ট্রাইব্যুনালের রায় : ট্রাইব্যুনালের রায়ে এ অভিযোেেগ আব্দুল কাদের মোল্লাকে ১৫ বছর করে কারাদণ্ড প্রদান করা হয়েছে ।
কবি মেহেরুন্নেসা হত্যাকান্ডের সাথে জড়িত থাকার অভিযোগে আব্দুল কাদের মোল্লাকে দন্ডিত করে ট্রাইব্যুনাল কর্তৃক প্রদত্ত রায়ে বলা হয়েছে অভিযুক্ত কাদের মোল্লা কবি মেহেরুন্নেসার ঘরে নিজে প্রবেশ করেননি হত্যাকান্ডের সময় । হত্যাকান্ডে কাদের মোল্লা নিজে সশরীরে অংশগ্রহণও করেননি। তবে যারা এ হত্যাকান্ড ঘটিয়েছে তাদেরকে তিনি নেতৃত্ব দিয়ে ঘটনাস্থলে নিয়ে গেছেন এবং এ কাজে তার নৈতিক সমর্থন ছিল। কাদের মোল্লা নিজে এ অপরাধে অংশ নিয়েছেন সে মর্মে প্রমান নেই।
রায়ে আরো বলা হয়েছে এ হত্যাকান্ডের অভিযোগের বিষয়ে রাষ্ট্রপক্ষ তিনজন শোনা সাক্ষীর ওপর নির্ভর করেছে। অর্থাৎ অভিযোগের ভিত্তি হল সাক্ষীদের শোনা কথা।
আপিল বিভাগের রায় : আপিল বিভাগের রায়ে ট্রাইব্যুনাল কর্তৃক প্রদত্ত ১৫ বছরের সাজা বহাল রাখা হয়েছে।
৩ নং অভিযোগ সাংবাদিক আবু তালেব হত্যা :
১৯৭১ সালে ২৯ মার্চ সাংবাদিক আইনজীবী খন্দকার আবু তালেব তার মিরপুর ১০ নং সেকশনে অবস্থিত বাসা থেকে আরামবাগ যাচ্ছিলেন। তিনি মিরপুর ১০ নং বাস স্ট্যান্ডে পৌছার পর আব্দুল কাদের মোল্লা অন্যান্য আল বদর সদস্যা, রাজাকার, দৃষ্কৃতকারী এবং বিহারীদের সাথে নিয়ে তাকে ধরে মিরপুর জল্লাদখানা পাম্প হাউজে নিয়ে যাওয়া হয়। এরপর তাকে সেখানে হত্যা করা হয়।
ট্রাইব্যুনালের রায় : এ অভিযোগে ট্রাইব্যুনালের রায়ে আব্দুল কাদের মোল্লাকে ১৫ বছরের সাজা দিয়েছে। এ ঘটনায়ও আব্দুল কাদের মোল্লাকে কারাদণ্ড প্রদান করা হয়েছে দুজন সাক্ষীর শোনা কথার ওপর ভিত্তি করে।
আপিল বিভাগের রায় : আপিল বিভাগের রায়ে ট্রাইব্যুনালের এ সাজা বহাল রাখা হয়েছে।
৪ নং অভিযোগ ঘাটারচরে শতাধিক মানুষ হত্যা:
১৯৭১ সালের ২৫ নভেম্বর আব্দুল কাদের মোল্লা ৬০-৭০ জন রাজাকার বাহিনী সদস্য নিয়ে কেরানীগঞ্জের ঘাটারচ এবং ভাওয়ালখান বাগ্রিণামক দুটি গ্রামে হামলা চালিয়ে দুজন মুক্তিযোদ্ধাসহ শতাধিক গ্রামবাসীকে নির্বিচারে গুলি চালিয়ে হত্যা করে। সকাল সাড়ে সাতটা থেকে বেলা ১১টা পর্যন্ত শতাধিক নিরস্ত্র গ্রামবাসীকে হত্যা করা হয়।
ট্রাইব্যুনালের রায় : এ অভিযোগ থেকে ট্রাইব্যুনালের রায়ে আব্দুল কাদের মোল্লাকে খালাস দেয়া হয়েছে।
রাষ্ট্রপক্ষ এ ঘটনায় তিনজন সাক্ষী হাজির করে। এদের একজন প্রত্যক্ষদর্শী দাবি করা হয়। বাকী দুজন শোনা সাক্ষী। প্রত্যক্ষদর্শী সাক্ষী আব্দুল মজিদ পালওয়ান সাক্ষ্য দিয়ে বলেছেন ঘটনার দিন যখন গ্রামের উত্তর দিক থেকে গুলি আসতে শুরু করে তখন তিনি যেদিক থেকে গুলি আসে সেদিকে এগিয়ে যান ।
ট্রাইব্যুনালের রায়ে এ সাক্ষীর সাক্ষ্য পর্যালোচনায় বলা হয়েছে একবার সাক্ষী বলেছেন সকাল ১১টার দিকে ঘটনাস্থল থেকে অপরাধীরা চলে যাবার পর তিনি জানতে পারেন দুস্কৃতকারীদের সাথে পাজামা পাঞ্জাবী পরা লোকটা ছিল আব্দুল কাদের মোল্লা। আবার আরেক জায়গায় বলেছেন তিনি ঘটনা স্থলে গিয়ে আব্দুল কাদের মোল্লাকে রাইফেল হাতে দেখেছেন। একবার বলেছেন ঘটনা ঘটার পর জানতে পেরেছেন পাজামা পাঞ্জাবী পরা লোকটা ছিল কাদের মোল্লা আবার আরেকবার বলেছেন তিনি তাকে রাইফেল হাতে দেখেছেন। ট্রাইব্যুনাল প্রশ্ন করেছেন কোনটা সত্য? তাছাড়া এ ধরনের অভিযানের সময় যখন সাধারনত মানুষ জীবন বাঁচাতে পেছনের দিকে পালিয়ে যায় তখন সাক্ষী বলছেন তিনি গুলির দিকে এগিয়ে যাচ্ছিলেন। এটিও একটি অস্বাভাবিক ঘটনা এবং আপিল বিভাগের শুনানীর সময়ও এ সাক্ষীর সাক্ষ্য নিয়ে প্রশ্ন তোলা হয়েছিল।
আপিল বিভাগের রায় : ট্রাইব্যুনালের রায়ে এ অভিযোগ থেকে আব্দুল কাদের মোল্লাকে খালাস দেয়া হলেও আপিল বিভাগের রায়ে এ অভিযোগে আব্দুল কাদের মোল্লাকে যাবজ্জীবন সাজা দেয়া হয়েছে।
৫ নং অভিযোগ আলুবদি হত্যাকান্ড :
এতে বলা হয়- ১৯৭১ সালের ২৪ এপ্রিল সকাল সাড়ে চারটার সময় আব্দুল কাদের মোল্লার সদস্যরা (মেম্বারস) পাকিস্তান আর্মি সাথে নিয়ে মিরপুর পল্লবীর আলুবদি গ্রামে নিরীহ বেসামরিক লোকজনের ওপর আক্রমন পরিচালনা করে । আক্রমনের অংশ হিসেবে তারা নির্বিচারে গুলি চালায় এবং এতে ৩৪৪ জন বেসামরিক ব্যক্তি নিহত হয়।
ট্রাইব্যুনালের রায় : ট্রাইব্যুনালের রায়ে এ অভিযোগে কাদের মোল্লাকে যাবজ্জীবন কারাদণ্ড প্রদান করা হয়।
আপিল বিভাগের রায় : আপিল বিভাগের রায়ে এ সাজা বহাল রাখা হয়েছে।
৬ নং অভিযোগ হযরত আলী হত্যাকান্ড : ১৯৭১ সালের ২৬ মার্চ ঘটনা ঘটে। মিরপুর ১২ নম্বর সেকশনের ৫ নং কালাপানি লেনে ২১ নম্বর বাসায় হযরত আলী, তার ছেলে, মেয়ে, স্ত্রীকে হত্যা ও মেয়েদের ধর্ষনের ঘটনা ঘটে আব্দুল কাদের মোল্লার নেতৃত্বে।
ট্রাইব্যুনালের রায় : এ অভিযোগে ট্রাইব্যুনাল কাদের মোল্লাকে যাবজ্জীবন কারাদণ্ড প্রদান করে। রায়ে বলা হয়েছে কাদের মোল্লার উপস্থিতিতে, সহায়তায় এবং নৈতিক সমর্থনে এ হত্যার ঘটনা ঘটে।
আপিল বিভাগের রায় : আপিল বিভাগের রায়ে ট্রাইব্যুনালের যাবজ্জীবন সাজা বাড়িয়ে কাদের মোল্লাকে মৃত্যুদণ্ড প্রদান করা হয়।
মামলার সংক্ষিপ্ত বিবরন :
ট্রাইব্যুনাল কর্তৃক কাদের মোল্লার বিরুদ্ধে রায় প্রদানের এক মাসের মাথায় আসামী পক্ষ এবং রাষ্ট্রপক্ষ থেকে রায়ের বিরুদ্ধে আপিল আবেদন করা হয়। গত ২৩ জুলাই দীর্ঘ শুনানী শেষে আপিল বিভাগ মামলার রায় অপেক্ষমান ঘোষনা করে।
এর আগে গত ৩১ মার্চ প্রধান বিচারপতি মো : মোজাম্মেল হোসেন এর নেতৃত্বে ছয় সদস্যের আপিল বেঞ্চ গঠন করা হয় আপিল আবেদন শুনানীর জন্য। ১ এাপ্রিল থেকে শুনানী শুরু হয়। তবে বিচারপতি সিদ্দিকুর রহমান আব্দুল কাদের মোল্লা মামলার শুনানী শেষ হবার আগেই অবসরে চলে গেছেন। প্রধান বিচারপতির নেতৃত্বে পাঁচ সদস্যের আপিল বেঞ্চ কাদের মোল্লা মামলার আপিল শুনানী গ্রহণ করেন শেষ পর্যন্ত। প্রধান বিচারপতি ছাড়া অপর চার বিচারপতি হলেন বিচারপতি সুরেন্দ্র কুমার সিনহা, বিচারপতি আব্দুল ওয়াহ্হাব মিঞা, বিচারপতি সৈয়দ মাহমুদ হোসেন এবং বিচারপতি এএইচএম শামসুদ্দীন চৌধুরী।
২০১০ সালের ১৩ জুলাই সুপ্রিমকোর্টের প্রধান গেট থেকে কাদের মোল্লাকে পুলিশ গ্রেফতার করে। ট্রাইব্যুনালে তদন্তকারী সংস্থার এক আবেদনের পরিপ্রেক্ষিতে ওই বছরের ২ আগষ্ট কাদের মোল্লাকে মানবতাবিরোধী অপরাধ মামলায় আটক রাখার আদেশ দেয়া হয়।
২০১২ সালের গত ২৮ মে কাদের মোল্লার বিরুদ্ধে ছয়টি অভিযোগের ঘটনায় চার্জ গঠন করে আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনাল-২। ৩ জুলাই কাদের মোল্লার বিরুদ্ধে সাক্ষ্য গ্রহণ শুরু হয়। রাষ্ট্রপক্ষে ১২ জন এবং আসামী পক্ষে ছয় জন সাক্ষী সাক্ষ্য প্রদান করে।
এর আগে ২০১২ সালের ৭ মার্চ আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনাল-১-এ কাদের মোল্লার বিরুদ্ধে অভিযোগ গঠনের শুনানি শুরু হয়। এরপর ২০১২ সালের ২৫ মার্চ দ্বিতীয় ট্রাইব্যুনাল গঠনের পর এ মামলাটি সেখানে স্থানান্তর করা হয়।
বাংলাদেশ এর সর্বোচ্চ আদালত যথা সুপ্রীম কোর্ট এর আপিল বিভাগ আব্দুল কাদের মোল্লাকে সর্বোচ্চ শাস্তি মৃত্যুদণ্ড দিয়েছে। প্রধান বিচারপতি মো: মোজাম্মেল হোসেন এর নেতৃত্বে পাঁচ সদস্যের আপিল বেঞ্চ আলোচিত এবং ঘটনাবহুল এ মামলার রায় ঘোষনা করেন ১৭ সেপ্টেম্বর ।
আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনাল-২ গত ৫ ফেব্রুয়ারি জামায়াতে ইসলামীর সহকারি সেক্রেটারি জেনারেল আব্দুল কাদের মোল্লাকে যাবজ্জীবন কারাদণ্ড দিয়েছিল । আপিল বিভাগ ট্রাইব্যুনালের যাবজ্জীবন সাজার মেয়াদ বাড়িয়ে মৃত্যুদণ্ড দিল। রাষ্ট্রপক্ষ ট্রাইব্যুনালে আব্দুল কাদের মোল্লার বিরুদ্ধে ১৯৭১ সালে মানবতাবিরোধী অপরাধের মোট ছয়টি অভিযোগ এনেছিল। ট্রাইব্যুনাল একটি অভিযোগ থেকে আব্দুল কাদের মোল্লাকে খালাস দিয়েছিল। কিন্তু আপিল বিভাগ ছয়টি অভিযোগেই তাকে সাজা দিয়েছে।
পাঁচ সদস্যের আপিল বেঞ্চ সংখ্যাগরিষ্ঠের ভিত্তিতে (৪ : ১) আব্দুল কাদের মোল্লাকে মৃত্যুদন্ড দিয়েছে।
অর্থাৎ চার জন বিচারপতি মৃত্যুদন্ডের পক্ষে এবং একজন বিচারপতি মৃত্যুদন্ডের বিপক্ষে রয়েছেন। এছাড়া অপর যে পাঁচটি অভিযোগে আপিল বিভাগ কাদের মোল্লাকে সাজা দিয়েছে তার প্রত্যেকটিতেই একজন বিচারপতি ভিন্নমত পোষন করেছেন। অর্থাৎ ছয়টি অভিযোগেই সাজা দেয়া হয়েছে ৪ অনুপাত ১ এর ভিত্তিতে।
ট্রাইব্যুনাল আব্দুল কাদের মোল্লাকে দুইটি অভিযোগে যাবজ্জীবন, তিনটি অভিযোগে ১৫ বছর করে কারাদন্ড এবং একটি অভিযোগ থেকে খালাস দিয়েছিল। আপিল বিভাগের রায়ে একটি যাবজ্জীবনের সাজা বাড়িয়ে আব্দুল কাদের মোল্লাকে মৃত্যুদন্ড দিয়েছে। এ অভিযোগটি হল মিরপুরে কালাপানি লেনে হযরত আলী, তার ছেলে, মেয়ে, স্ত্রীকে হত্যা ও মেয়েদের ধর্ষনের ঘটনা । এটি ছিল আব্দুল কাদের মোল্লার বিরুদ্ধে রাষ্ট্রপক্ষের আনীত ছয় নং অভিযোগ।
ট্রাইব্যুনালের রায়ে চার নং অভিযোগ (কেরানীগঞ্জের ঘাটারচর হত্যাকান্ড) থেকে আব্দুল কাদের মোল্লাকে খালাস দেয়া হয়েছিল। আপিল বিভাগের রায়ে খালাস দেয়া এ অভিযোগটিতে কাদের মোল্লাকে যাবজ্জীবন সাজা দেয়া হয়েছে।
এছাড়া অপর যে চারটি অভিযোগে ট্রাইব্যুনাল সাজা দিয়েছিল তা বহাল রাখা হয়েছে আপিল বিভাগের রায়ে। ট্রাইব্যুনাল কর্তৃক প্রদত্ত যে চারটি সাজা আপিল বিভাগের রায়ে বহাল রাখা হয়েছে সেগুলো হল অভিযোগ নং ১, ২, ৩ এবং ৫।
সরকার পক্ষ আব্দুল কাদের মোল্লার সর্বোচ্চ সাজা মৃত্যুদণ্ড এবং ট্রাইব্যুনাল যে অভিযোগ থেকে তাকে খালাস দিয়েছে সেই অভিযোগে সাজা প্রদানের জন্য আপিল আবেদন করেছিল। আপিল বিভাগের রায়ের মাধ্যমে সরকার পক্ষের আবেদন পুরোপুরি গৃহীত হল। অপর দিকে আসামী পক্ষ আব্দুল কাদের মোল্লার খালাস চেয়ে আবেদন করেছিল আপিল বিভাগে। রায়ে তাদের আবেদন বাতিল বা নামঞ্জুর হল।
আব্দুল কাদের মোল্লার বিরুদ্ধে আপিলের রায়ের মাধ্যমে এই প্রথম মানবতাবিরোধী অপরাধের দায়ে ট্রাইব্যুনাল কর্তৃক সাজাপ্রাপ্ত কোন আসামীর বিরুদ্ধে চূড়ান্ত রায় দেয়া হল।
কাদের মোল্লার সংক্ষিপ্ত পরিচিতি :
আব্দুল কাদের মোল্লার জন্ম ১৯৪৮ সালে ফরিদপুর জেলার সদরপুর উপজেলায়। তিনি প্রথম বিভাগে এসএসসি পাশ করার পর ১৯৬৬ সালে ফরিদপুর রাজেন্দ্র কলেজ থেকে আইএসসি পাশ করেন। একই কলেজ থেকে ১৯৬৮ সালে বিএসসি পাশ করেন। ১৯৬৯ সালে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে পদার্থ বিজ্ঞান বিভাগে এমএসসি কাসে ভর্তি হন । মেধাবী ছাত্র আব্দুল কাদের মোল্লা প্রাইমারী এবং জুনিয়র স্কুল পরীক্ষায় বৃত্তি লাভ করেন যথাক্রমে ১৯৫৯ এবং ১৯৬১ সালে।
১৯৭৪ সালে তিনি ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের আইইআর (ইন্সটিটিট অব এডুকেশন এন্ড রিসার্চ) এ ডিপ্লোমা ইন এডুকেশন (সোস্যাল সাইন্স) এ ভর্তি হই। ১৯৭৫ সালে প্রথম শ্রেণীতে প্রথম স্থান অধিকার করেন এ কোর্সে। এরপর তিনি ১৯৭৭ সালে এডুকেশনাল এডমিনিস্ট্রেশন তেকে প্রথম শ্রেণীতে প্রথম স্থান অধিকার করে এম এ ডিগ্রি অর্জন করেন।
আব্দুল কাদের মোল্লা স্কুল জীবনে কমিউনিস্ট পার্টির ছাত্র সংগঠন ছাত্র ইউনিয়নের সাথে সম্পৃক্ত হন এবং ১৯৬৬ সাল পর্যন্ত এ সংগঠনের সাথে সম্পৃক্ত থাকেন। ১৯৬৬ সালে তিনি তৎকালীন ইসলামী ছাত্রসংঘের সাথে জড়িত হন। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে অধ্যয়নকালে তিনি ড. মুহম্মদ শহীদুল্লাহ হলের আবাসিক ছাত্র ছিলেন।
বিডিআর সেন্ট্রাল পাবলিক স্কুল এন্ড কলেজে ভারপ্রাপ্ত অধ্যক্ষ হিসেবে দায়িত্ব পালন করেন। উদয়ন বিদ্যালয়ে ১৯৭৪-১৯৭৫ সালে শিক্ষকতা করেন। এছাড়া বাইশরশি শিব সুন্দরী একাডেমীতে শিক্ষকতা এবং ইসলামী ফাউন্ডেশনেও চাকুরী করেছেন তিনি।
আব্দুল কাদের মোল্লা ১৯৮২-৮৩ সালে পরপর দুই বার ঢাকা ইউনিয়ন অব জার্নালিস্ট (ডিউজে) সহ-সভাপতির দায়িত্ব পালন করেন।
রাজনৈতিক জীবনে আব্দুল কাদের মোল্লা ১৯৮৩ সালে ঢাকা মহানগর জামায়াতের সাধারণ সম্পাদক এবং ১৯৮৭ একই শাখার আমির নির্বাচিত হন। ২০০০ সালে তিনি জামায়াতে ইসলামীর সহকারি সেক্রেটারি জেনারেল নির্বাচিত হন। জামায়াতের নেতৃত্ব পর্যায়ের ভূমিকা পালনের সময় তিনি বিভিন্ন পর্যায়ে জোটগদ রাজনীতির কারনে রাজনৈতিক সমস্যা সমাধানে মধ্যস্থতার ভূমিকাও পালন করেছেন। ১৯৬৪ সালে আইউব বিরোধী আন্দোলন থেকে শুরু করে বিভিন্ন সময় রাজনৈতিক কারনে তাকে চারবার কারাবরন করতে হয়েছে।
আব্দুল কাদের মোল্লার চার মেয়ে এবং দুই পুত্র সন্তানের পিতা।
আব্দুল কাদের মোল্লা মামলায় আসামী পক্ষে প্রধান আইনজীবী ছিলেন ব্যারিস্টার আব্দুর রাজ্জাক। এছাড়া অ্যাডভোকেট ফরিদ উদ্দিন খান, তাজুল ইসলাম, শিশির মো: মনির, সাজ্জাদ আলী চৌধুরী প্রমুখ দায়িত্ব পালন করেন।
রাষ্ট্রপক্ষে ছিলেন এটর্নি জেনারেল মাহবুবে আলম, মোহাম্মদ আলী প্রমুখ।
কোন মন্তব্য নেই:
একটি মন্তব্য পোস্ট করুন