মেহেদী হাসান, ১৬/৯/২০১৩
জামায়াতে ইসলামীর আমির মাওলানা মতিউর রহমান নিজামীর বিরুদ্ধে ২৩ তম সাক্ষীর জবানবন্দী গ্রহণ করা হয়েছে। সাক্ষীর নাম সৈয়দা সালমা মাহমুদ। আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনাল-১ এ গতকাল তিনি জবানবন্দী প্রদান করেন।
জবানবন্দী :
আমার নাম সৈয়দা সালমা মাহমুদ ওরফে সৈয়দা সালমা হক। আমার বয়স আনুমানিক ৬৪ বৎসর। আমার ঠিকানা- ৩৫৮ এলিফ্যান্ট রোড, ঢাকা।
১৯৭০ সালের ১৫ই ফেব্রুয়ারী শহীদ ডাঃ আজহারুল হকের সহিত আমার বিয়ে হয়। আমার স্বামী শহীদ ডাঃ আজহারুল হক ১৯৪০ সালের ২রা মার্চ ঢাকা সেন্ট্রাল জেল খানায় আমার শ্বশুরের সরকারী বাসভবনে জন্ম গ্রহন করেন। সেই সময় আমার শ্বশুর ঢাকা সেন্ট্রাল জেলের জেলার ছিলেন। আমার স্বামী শহীদ ডাঃ আজহারুল হক ১৯৬৮ সালে ঢাকা স্যার সলিমুল্লাহ মেডিকেল কলেজ থেকে এম,বি,বি,এস পাশ করেন। ১৯৬৯ সালে জুন মাসে ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে সহকারী সার্জন হিসাবে যোগদান করেন। আমার বিয়ের পরপরই ১৯৭০ সালে ২২নং ফ্রি স্কুল স্ট্রিট, হাতিরপুল, ঢাকায় হাকিম সাহেবের বাড়িতে বসবাস শুরু করি। ১৯৭১ সালে মহান মুক্তিযুদ্ধ চলাকালীন সময়ে আমার স্বামী ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে কর্মরত ছিলেন। ১৯৭১ সালের ২৩শে মার্চ আমি অসুস্থ হয়ে ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে ৩১ নং কেবিনে ভর্তি ছিলাম। ১৯৭১ সালের ২৫শে মার্চ দিবাগত রাত্রে অনুমান সাড়ে এগারোটার দিকে প্রচন্ড গোলাগুলির শব্দে আমার ঘুম ভেঙ্গে যায়, তখন আমি হাসপাতালের কেবিনেই ছিলাম। তখন আমি মেশিন গান, রাইফেল এবং কামানের তোপের শব্দ শুনতে পাই। এরপর আমি জানালা দিয়ে দেখতে পাই যে, ঢাকাতে চারদিকে শুধু আগুনের শিখা আর শুনতে পাই প্রচন্ড গোলাগুলির শব্দ। ২৩শে মার্চ থেকে আমার স্বামী আমার সঙ্গে কেবিনই ছিলেন। ১৯৭১ সালের ২৬শে মার্চ ভোরে আমার স্বামী কেবিন থেকে হাসপাতালের নিচে চলে যান হাসপাতালের বিভিন্ন ওয়ার্ডের খোঁজ খবর নিতে। তিনি ঐ দিন সকাল ১০/১১ টার সময় আমার কেবিনে ফিরে আসেন। তখন আসতে কেন দেরি করলেন এটা জিজ্ঞাসা করলে আমার স্বামী আমাকে জিজ্ঞাসা করেন যে, মদিরা খালার স্বামীর নাম কি? তখন আমি তাকে বলি যে, মদিরা খালার স্বামী লেঃ কমান্ডার মোয়াজ্জেম হোসেন নেভীর অফিসার ছিলেন এবং আগরতলা ষড়যন্ত্র মামলার একজন আসামী ছিলেন। তাকে ২৬শে মার্চ সকালে হত্যা করা হয়। তিনি আরো জানান যে, ইকবাল হক, জগন্নাথ হল সহ ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের অনেক শিক্ষক এবং ছাত্রদেরকে হত্যা করা হয়েছে তন্মধ্যে ড. জি,সি দেব, প্রফেসর ড. মনিরুজ্জামান, ড. জ্যোতির্ময় গূহ ঠাকুর প্রমুখ ছিলেন এবং গোটা ঢাকা শহরে অনেক সাধারন মানুষদেরকে হত্যা করা হয়েছে। ঐ মহান মুক্তিযুদ্ধ চলাকালীন সময়ে আমার স্বামী আমাদের বাসার নিকটে সাইদা ফার্মেসী নামক একটি ফার্মেসীতে প্রাইভেট প্র্যাকটিসও করতেন। আমাদের মহান মুক্তিযুদ্ধ চলাকালীন সময়ে আমার স্বামী আহত মুক্তিযোদ্ধাদেরকে উক্ত ফার্মেসীতে চিকিৎসা করতেন এবং মাঝে মাঝে মুক্তিযোদ্ধা ক্যাম্পে গিয়েও চিকিৎসা সেবা দিতেন। ঐ সাইদা ফার্মেসীর বিপরীতে আলী ফার্মেসী নামে জনৈক বিহারীর একটি ফার্মেসী ছিল। ঐ ফার্মেসীর মালিক বিহারী আলী সবসময় আমার স্বামীর গতিবিধি ও চলাফেরা লক্ষ্য রাখতো এবং কোথায় যেতেন, কি করতেন এসব তথ্য গুলো পাকিস্তান আর্মিদের দিতেস বলে আমাদের সন্দেহ হতো। বেলা ২ টার পরে ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালেও আমার স্বামী আহত মুক্তিযোদ্ধাদের গোপনে চিকিৎসা দিতেন।
১৯৭১ সালের ১৫ই ফেব্রুয়ারী, পরে বলেন ১৫ ই নভেম্বর ভোর ৬টার আমার স্বামী হাসপাতালে যাবেন সেই জন্য তার এপ্রোন আনার জন্য আমাদের বাসার কাজের ছেলে শাহাদাতকে আমাদের বাসার পাশেই লন্ড্রিতে পাঠাই। কিছুক্ষণ পর শাহাদাত খালী হাতে এসে জানায় যে, লন্ড্রিতে যাওয়া যায়নি কারণ ওখানে কিছু পাকিস্তানী আর্মি এবং বেশ কিছু অস্ত্রধারী বাঙ্গালী ঐ জায়গা কারফিউ দিয়ে রেখেছে আসলে ওটা কারফিউ ছিল না কর্ডন ছিল। ঐখানে গোটা হাতিরপুর, সেন্ট্রাল রোড ও ভূতের গলি পাকিস্তানী আর্মি ও অস্ত্রধারী বাঙ্গালীরা কর্ডন করে ফেলেছিল। তখন আমার স্বামী এবং আমিও চিন্তিত হয়ে পড়েছিলাম কিভাবে আমার সস্বামী হাসপাতালে যাবে। তখন আমার স্বামী আমাদের পাশের বাড়িওয়ালার বাসায় হাসপাতালে ফোন করতে যায় যাতে এ্যাম্বুলেন্স পাঠানো হয় তাকে নিয়ে যাওয়ার জন্য। তখন আমার স্বামী বাড়িওয়ালার বাসায় গেল ফোন করার জন্য, তখন আমি বারান্দায় দাড়িয়ে অপেক্ষা করি। ঠিক তখন আমাদের সামনের পাশের বিল্ডিং থেকে শহীদ ডাঃ হুমায়ুন কবিরের ছোট বোন মোমরাজ আমাকে ডাক দিয়ে জিজ্ঞাসা করেন যে, আমার স্বামী হাসপাতালে চলে গিয়েছেন কিনা। তখন আমি বলি যে, আমার স্বামী বাড়িওয়ালার বাসায় ফোন করতে গিয়েছে হাসপাতাল থেকে এ্যাম্বুলেন্স পাঠানোর জন্য, এ্যাম্বুলেন্স এলে আমার স্বামী হাসপাতালে যাবে। এই কথা শুনার পর শহীদ ডাঃ হুমায়ুন কবির ও আমার স্বামী শহীদ ডাঃ আজহারুল হক এ্যাম্বুলেন্সের জন্য অপেক্ষা করতে থাকেন। তখন আমি শাহাদাতকে বললাম যে, উনাদেরকে তুমি ডাকো। তখন শাহাদাত ফিরে এসে আমাকে জানায় যে, কয়েকজন পাকিস্তানী আর্মি ও অস্ত্রধারী বাঙ্গালী ইউনিফর্ম পরা এবং মাথায় ক্যাপ ছিল তারা ডাক্তার সাহেবদের সাথে কি যেন বলছেন এবং তার দিকেও রাইফেল তাক করে। তারপর আবারো ওকে উনাদের ডাকতে বলি এবং আমি দৌড়িয়ে গেটের কাছে আসি, তখন দেখি যে, কয়েকজন আমার স্বামী ডাঃ আজহারের হাতে রাইফেলের বাট দিয়ে বাড়ি মারে এবং ডাঃ হুমায়ুন কবিরকেও রাইফেলের বাট দিয়ে বারি মারে। আরো দেখি যে পাকিস্তান আর্মি ও অস্ত্রধারী বাঙ্গালীরা শহীদ ডাঃ হুমায়ুন কবির ও আমার ডাঃ আজহারুল হককে গান পয়েন্টে রাস্তার দিকে নিয়ে যাচ্ছে। তখন আমি চিৎকার দিয়ে আমার স্বামীর কাছে যাইতে চাইলে তাদের মধ্যে থেকে কয়েকজন অস্ত্রধারী বাঙ্গালী আমাকেও গান পয়েন্টে বাসার ভিতরে ঢুকায়। তখন আমার ঘরের বারান্দায় আমাকে ঐ অস্ত্রধারী বাঙ্গালীরা জিজ্ঞাসা করে যে, আপনার স্বামীর কাছে কখন কারা আসতো ও যেতো এবং আপনার স্বামীও কোথায় কোথায় যেতো, কতো রাতে ফিরতো ইত্যাদি। তখন আমি তাদেরকে জিজ্ঞাসা করি “তোমরা কারা? আমার স্বামীকে কোথায় নিয়ে গেলে?”, তখন উত্তরে তারা বললো “আমরা আলবদর বাহিনীর সদস্য, আমাদের হাই কমান্ড মতিউর রহমান নিজামী সাহেবের নির্দেশে আপনার স্বামী ডাঃ আজাহারুল হক ও ডাঃ হুমায়ন কবিরকে নিতে এসেছি”। তারপর তারা আমার বেডরুমে ঢুকে বিছানা পত্র উল্টিয়ে তছনছ করে, তখন আমার মনে হয়েছিল সম্ভবত মুক্তিযুদ্ধের কাগজপত্র, বোমা-টোমা খোজছিল। তারপর তারা আমার বাসা থেকে চলে যায়। ঐ ঘটনার সময় আমার ভাই এডভোকেট সৈয়দ রফিকুস সালেহীন আমাদের বাসায়ই ছিলেন এবং যেহেতু তিনি মুক্তিযোদ্ধা ছিলেন সেহেতু তিনি ঐ মুহূর্ত্বে লুকিয়ে ছিলেন। আর্মিদের কর্ডন ঐ এলাকা থেকে উঠে যাওয়ার পর আমার সেই ভাই বাড়িওয়ালার বাসায় গিয়ে আমার আরেক ভাই ইঞ্জিনিয়ার সৈয়দ তুলুস শামস্ যিনি তখন ওয়াপদার নির্বাহী প্রকৌশলী ছিলেন তাকে ফোন করে ঘটনার কথা জানান। এর কিছুক্ষন পর আমার উক্ত ভাই তুলুস শামস্ আমার দুলাভাই (বর্তমানে মৃত) সৈয়দ সাহাব উদ্দিন সাহেবকে সঙ্গে নিয়ে আমাদের বাসায় আসেন। তখন উনারা দুইজন আমার নিকট থেকে ঘটনা শুনে রমনা থানায় যান। রমনা থানায় উনারা গিয়ে দেখেন যে, হাতিরপুর এলাকা থেকে প্রায় দুইশত লোককে ধরে রমনা থানায় নিয়ে যাওয়া হয়েছিল তাদের নাম লিস্টে আছে কিন্তু আমার স্বামী শহীদ ডাঃ আজহারুল হক ও শহীদ ডাঃ হুমায়ুন করিবের নাম ঐ লিস্টে নাই। তখন ঐ থানারই একজন লোক উনাদেরকে চুপে চুপে বলনে যে, যাদের নাম লিস্টে নাই তাদেরকে মেরে ফেলা হয়। তারপর আমার ভাইয়েরা আমার বাসায় এসে আমাকে তাদের পরিবাগের সরকারী বাসায় নিয়ে যেতে চান। আমার স্বামীর বাসা থেকে আমি যেতে না চাইলে তারা আমাকে বলে যে, তুমি একা বাসায় থাকলে তোমাকেও তারা একই ভাবে নিয়ে যেতে পারে, তখন আমি ছয়মাসের প্রথম অন্তঃস্বত্তা ছিলাম, তখন আমি তাদের সঙ্গে পরিবাগের আমার ভাইয়ের বাসায় চলে যাই। তখন আমাকে পরিবাগের বাসায় রেখে তারা বিভিন্ন স্থানে আমার স্বামীর খোঁজে বের হন।
তার পরের দিন ১৬ই নভেম্বর ১৯৭১ সাল ডাক্তার কামরুজ্জামান ডাক্তার ববি আমার ভাইয়ের পরিবাগের বাসায় এসে আমাদেরকে জানান যে, আমার স্বামীর বস্ ডাঃ শামসুদ্দিন ঢাকা মেডিকেল কলেজের হাসপাতাল মর্গে আমার স্বামী ও ডাঃ হুমায়ুন কবিরের লাশ চিনতে পেরেছেন, আপনারা ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতাল মর্গে গিয়ে সনাক্ত করেন। তারা আরো জানান যে, আপনার স্বামীর লাশ এবং ডাঃ হুমায়ুন কবিরের লাশ ঢাকা নটরডেম কলেজের পাশে যে কালভার্টের নিচে ড্রেন হাত, পা ও চোখ বাধা অবস্থায় এবং শরীরে অনেক আঘাতের চিহ্ন ছিল, সেই অবস্থায় পাওয়া যায়। তারপর আমার ভাইয়েরা ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসাপাতালের মর্গ থেকে আমার স্বামীর লাশ আমাদের পরিবাগের বাসায় নিয়ে আসে এবং ডাঃ হুমায়ুন কবিরের লাশ তারাই আজিমপুর গোরস্থানে দাফন করেন। আমার স্বামীর লাশ আমাকে দেখানোর পর আজিমপুর গোরস্থানে দাফন করে।
সেদিন যারা আমার স্বামী সহ এদেশের সেরা সন্তান বুদ্ধিজীবিদেরকে ধরে নিয়ে হত্যা করেছিল, সেদিন মতিউর রহমান নিজামী সাহেব, চৌধুরী মঈন উদ্দিন, আশরাফুজ্জামান, মোজাহিদ এবং গোলাম আযম সাহেবদের পরিকল্পনা ও নীল নকশা অনুযায়ী বাংলাদেশকে মেধা শূন্য করার, পঙ্গু করে দেওয়ার জন্য সুপরিকল্পিতভাবে এ হত্যাকান্ড ঘটিয়েছিল এবং যারা আমার স্বামীকে তার সন্তান দেখে যেতে দেয়নি এবং সন্তানও জন্ম নিয়ে তার পিতাকে দেখতে পায় নি আমি সেই হত্যাকারীদের সর্বোচ্চ শাস্তি মৃত্যুদন্ড কামনা করি। এই মামলার তদন্তকারী কর্মকর্তার নিকট আমি জবানবন্দি প্রদান করেছি। এই মামলার আসামী মতিউর রহমান নিজামী সাহেব অদ্য ট্রাইব্যুনালের কাঠগড়ায় উপস্থিত আছেন (সনাক্তকৃত)।
জেরা -
আদালতের সম্মূখভাগে যে লোকটি বসে আছেন তিনি আমার ভাই তার নাম ফুয়াদ, আমি তার সঙ্গে অদ্য ট্রাইব্যুনালে সাক্ষ্য দিতে এসেছি। (চলবে)
একটি প্রশ্নের পর জেরা আগামী বুধবার পর্যন্ত মুলতবি করা হয়।
শ্যামলী নাসরিন বিষয়ক আবেদন খারিজ :
মাওলানা নিজামীর বিরুদ্ধে রাষ্ট্রপক্ষের ১৩ তম সাক্ষী শ্যামলী নাসরিন চৌধুরী এর সাক্ষ্য প্রত্যাহারের জন্য আবেদন করেছিল আসামী পক্ষ। আবেদন শুনানী শেষে খারিজ করে দিয়েছে ট্রাইব্যুনাল।
আসামী পক্ষের আবেদনে বলা হয়েছে গত ১০ জুলাই রাষ্ট্রপক্ষ ১৩ তম সাক্ষী হিসেবে শ্যামলী নাসরিন চৌধুরীকে হাজির করে এবং তার সাক্ষ্য গ্রহণ করা হয়। রাষ্ট্রপক্ষ দাবি করেছে তাদেরকে ট্রাইব্যুনাল অতিরিক্ত ২৮ জন সাক্ষী হাজিরের অনুমতি দিয়েছে এবং শ্যামলী নাসরিন ২৮ জনের একজন সাক্ষী। রাষ্ট্রপক্ষের দাবি ট্রাইব্যুনাল কর্তৃক ২০ ফেব্রুয়ারি যে আদেশ দেয়া হয়েছে তাতে ২৮ জন অতিরিক্ত সাক্ষীর অনুমতি দেয়া আছে। কিন্তু ২০ ফেব্রুয়ারি আদেশ পর্যালোচনা করে দেখা গেছে সেই আদেশে অতিরিক্ত কোন সাক্ষীর আবেদন ছিলনা। সেটা ছিল অতিরিক্ত কিছু ডকুমেন্ট গ্রহনের আবেদন। ট্রাইব্যুনাল রাষ্ট্রপক্ষকে সেই ডকুমেন্ট দাখিলের অনুমতি দিয়ে আদেশ দিয়েছে। কিন্তু সেই আদেশের রেফারেন্সে রাষ্ট্রপক্ষ ট্রাইব্যুনালের কাছে অতিরিক্ত সাক্ষী হাজিরের জন্য সমন চেয়ে আবেদন করে অনুমতি আদায় করেছে এবং শ্যামলী নাসরিনকে হাজির করেছে।
আসামী পক্ষের আবেদনে বলা হয় আমরা ২০ ফেব্রুয়ারির সেই আদেশের কপি পাবার জন্য তিনবার আবেদন করেছি কিন্তু পাইনি। এরপর নতুন করে আবেদনের প্রেক্ষিতে গত ৩ সেপ্টেম্বর আমরা সে কপি পেতে সক্ষম হই এবং সে আদেশ কপিতে কোথাও নতুন ২৮ সাক্ষীর অনুমতি বিষয়ে কিছূ বলা নেই।
আবেদনের ওপর শুনানীতে তাজুল ইসলাম আজ ট্রাইব্যুনালে বলেন, আসামী পক্ষ শ্যামলী নাসরিনকে সম্পূণ অবৈধভাবে ট্রাইব্যুনালে হাজির করেছে এবং এটা কোন অবস্থাতেই গ্রহণযোগ্য হতে পারেনা। সে কারনে তার সাক্ষ্য বাতিল করা উচিত ন্যায় বিচারের স্বার্থে। তাজুল ইসলাম বলেন, ট্রাইব্যুনাল ২০ ফেব্রুয়ারি যে আদেশ দিয়েছে তাতে দেখা যায় রাষ্ট্রপক্ষ কখনো অতিরিক্ত সাক্ষীর কোন আবেদনই করেনি। রাষ্ট্রপক্ষের আইনজীবী তার আবেদনে বলেছিলেন তদন্ত কর্মকর্তা এই মামলা সম্পর্কে কিছু ডকুমেন্ট জব্দ করেছিলেন কিন্তু সেগুলো প্রসিকিউশনের কাছে জমা দেয়নি । তাই সেগুলো যেন এখন গ্রহণ করা হয়।
আসামী পক্ষ আবেদনের সাথে ২০ ফেব্রুয়ারির আদেশও সরবরাহ করেন। ট্রাইব্যুনাল আসামী পক্ষের আবেদন এবং ২০ ফেব্রুয়ারি আদেশ কপি পর্যালোচনা করেন। বিচারপতি জাহাঙ্গীর হোসেন বলেন, যেকোনভাবে হোক একটা ভুল হয়েছে।
তাজুল ইসলাম তখন বলেন, রাষ্ট্রপক্ষ প্রতারনার আশ্রয় নিয়েছে।
ট্রাইব্যুনাল চেয়ারম্যান বিচারপতি ফজলে কবির বলেন, আমরা সরল বিশ্বাসে রাষ্ট্রপক্ষকে নতুন সাক্ষী হাজিরের জন্য সমন দিয়েছিলাম। তারা যে সমন আবেদন করেছে সেটা ছিল ভুল তথ্যের ওপর ভিত্তি করে।
রাষ্ট্রপক্ষে প্রসিকিউটর সৈয়দ হায়দার আলী শুনানীতে অংশ নেন। তিনি বলেন, নতুন যে ডকুমেন্ট গ্রহনের জন্য আবেদন করা হয়েছিল তাতে অতিরিক্ত ২৮ জন সাক্ষীর জবানবন্দী দেয়া ছিল।
শুনানী শেষে আসামী পক্ষের আবেদন খারিজ করে দেয়া হয়। খারিজ আদেশে ট্রাইব্যুনাল বলেন, রাষ্ট্রপক্ষের আবদেনটি যথাযথভাবে ড্রাফট করা হয়নি। তাতে অতিরিক্ত সাক্ষী বিষয়ে সুনির্দিষ্টভাবে অনুমতি চাওয়া হয়নি। তবে যেহেতু সাক্ষীর জবানবন্দী গ্রহণ করা হয়েছে এবং জেরও হয়েছে তাই তা আর বাতিল করা হলনা।
আসামী পক্ষের আবেদন
জামায়াতে ইসলামীর আমির মাওলানা মতিউর রহমান নিজামীর বিরুদ্ধে ২৩ তম সাক্ষীর জবানবন্দী গ্রহণ করা হয়েছে। সাক্ষীর নাম সৈয়দা সালমা মাহমুদ। আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনাল-১ এ গতকাল তিনি জবানবন্দী প্রদান করেন।
জবানবন্দী :
আমার নাম সৈয়দা সালমা মাহমুদ ওরফে সৈয়দা সালমা হক। আমার বয়স আনুমানিক ৬৪ বৎসর। আমার ঠিকানা- ৩৫৮ এলিফ্যান্ট রোড, ঢাকা।
১৯৭০ সালের ১৫ই ফেব্রুয়ারী শহীদ ডাঃ আজহারুল হকের সহিত আমার বিয়ে হয়। আমার স্বামী শহীদ ডাঃ আজহারুল হক ১৯৪০ সালের ২রা মার্চ ঢাকা সেন্ট্রাল জেল খানায় আমার শ্বশুরের সরকারী বাসভবনে জন্ম গ্রহন করেন। সেই সময় আমার শ্বশুর ঢাকা সেন্ট্রাল জেলের জেলার ছিলেন। আমার স্বামী শহীদ ডাঃ আজহারুল হক ১৯৬৮ সালে ঢাকা স্যার সলিমুল্লাহ মেডিকেল কলেজ থেকে এম,বি,বি,এস পাশ করেন। ১৯৬৯ সালে জুন মাসে ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে সহকারী সার্জন হিসাবে যোগদান করেন। আমার বিয়ের পরপরই ১৯৭০ সালে ২২নং ফ্রি স্কুল স্ট্রিট, হাতিরপুল, ঢাকায় হাকিম সাহেবের বাড়িতে বসবাস শুরু করি। ১৯৭১ সালে মহান মুক্তিযুদ্ধ চলাকালীন সময়ে আমার স্বামী ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে কর্মরত ছিলেন। ১৯৭১ সালের ২৩শে মার্চ আমি অসুস্থ হয়ে ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে ৩১ নং কেবিনে ভর্তি ছিলাম। ১৯৭১ সালের ২৫শে মার্চ দিবাগত রাত্রে অনুমান সাড়ে এগারোটার দিকে প্রচন্ড গোলাগুলির শব্দে আমার ঘুম ভেঙ্গে যায়, তখন আমি হাসপাতালের কেবিনেই ছিলাম। তখন আমি মেশিন গান, রাইফেল এবং কামানের তোপের শব্দ শুনতে পাই। এরপর আমি জানালা দিয়ে দেখতে পাই যে, ঢাকাতে চারদিকে শুধু আগুনের শিখা আর শুনতে পাই প্রচন্ড গোলাগুলির শব্দ। ২৩শে মার্চ থেকে আমার স্বামী আমার সঙ্গে কেবিনই ছিলেন। ১৯৭১ সালের ২৬শে মার্চ ভোরে আমার স্বামী কেবিন থেকে হাসপাতালের নিচে চলে যান হাসপাতালের বিভিন্ন ওয়ার্ডের খোঁজ খবর নিতে। তিনি ঐ দিন সকাল ১০/১১ টার সময় আমার কেবিনে ফিরে আসেন। তখন আসতে কেন দেরি করলেন এটা জিজ্ঞাসা করলে আমার স্বামী আমাকে জিজ্ঞাসা করেন যে, মদিরা খালার স্বামীর নাম কি? তখন আমি তাকে বলি যে, মদিরা খালার স্বামী লেঃ কমান্ডার মোয়াজ্জেম হোসেন নেভীর অফিসার ছিলেন এবং আগরতলা ষড়যন্ত্র মামলার একজন আসামী ছিলেন। তাকে ২৬শে মার্চ সকালে হত্যা করা হয়। তিনি আরো জানান যে, ইকবাল হক, জগন্নাথ হল সহ ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের অনেক শিক্ষক এবং ছাত্রদেরকে হত্যা করা হয়েছে তন্মধ্যে ড. জি,সি দেব, প্রফেসর ড. মনিরুজ্জামান, ড. জ্যোতির্ময় গূহ ঠাকুর প্রমুখ ছিলেন এবং গোটা ঢাকা শহরে অনেক সাধারন মানুষদেরকে হত্যা করা হয়েছে। ঐ মহান মুক্তিযুদ্ধ চলাকালীন সময়ে আমার স্বামী আমাদের বাসার নিকটে সাইদা ফার্মেসী নামক একটি ফার্মেসীতে প্রাইভেট প্র্যাকটিসও করতেন। আমাদের মহান মুক্তিযুদ্ধ চলাকালীন সময়ে আমার স্বামী আহত মুক্তিযোদ্ধাদেরকে উক্ত ফার্মেসীতে চিকিৎসা করতেন এবং মাঝে মাঝে মুক্তিযোদ্ধা ক্যাম্পে গিয়েও চিকিৎসা সেবা দিতেন। ঐ সাইদা ফার্মেসীর বিপরীতে আলী ফার্মেসী নামে জনৈক বিহারীর একটি ফার্মেসী ছিল। ঐ ফার্মেসীর মালিক বিহারী আলী সবসময় আমার স্বামীর গতিবিধি ও চলাফেরা লক্ষ্য রাখতো এবং কোথায় যেতেন, কি করতেন এসব তথ্য গুলো পাকিস্তান আর্মিদের দিতেস বলে আমাদের সন্দেহ হতো। বেলা ২ টার পরে ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালেও আমার স্বামী আহত মুক্তিযোদ্ধাদের গোপনে চিকিৎসা দিতেন।
১৯৭১ সালের ১৫ই ফেব্রুয়ারী, পরে বলেন ১৫ ই নভেম্বর ভোর ৬টার আমার স্বামী হাসপাতালে যাবেন সেই জন্য তার এপ্রোন আনার জন্য আমাদের বাসার কাজের ছেলে শাহাদাতকে আমাদের বাসার পাশেই লন্ড্রিতে পাঠাই। কিছুক্ষণ পর শাহাদাত খালী হাতে এসে জানায় যে, লন্ড্রিতে যাওয়া যায়নি কারণ ওখানে কিছু পাকিস্তানী আর্মি এবং বেশ কিছু অস্ত্রধারী বাঙ্গালী ঐ জায়গা কারফিউ দিয়ে রেখেছে আসলে ওটা কারফিউ ছিল না কর্ডন ছিল। ঐখানে গোটা হাতিরপুর, সেন্ট্রাল রোড ও ভূতের গলি পাকিস্তানী আর্মি ও অস্ত্রধারী বাঙ্গালীরা কর্ডন করে ফেলেছিল। তখন আমার স্বামী এবং আমিও চিন্তিত হয়ে পড়েছিলাম কিভাবে আমার সস্বামী হাসপাতালে যাবে। তখন আমার স্বামী আমাদের পাশের বাড়িওয়ালার বাসায় হাসপাতালে ফোন করতে যায় যাতে এ্যাম্বুলেন্স পাঠানো হয় তাকে নিয়ে যাওয়ার জন্য। তখন আমার স্বামী বাড়িওয়ালার বাসায় গেল ফোন করার জন্য, তখন আমি বারান্দায় দাড়িয়ে অপেক্ষা করি। ঠিক তখন আমাদের সামনের পাশের বিল্ডিং থেকে শহীদ ডাঃ হুমায়ুন কবিরের ছোট বোন মোমরাজ আমাকে ডাক দিয়ে জিজ্ঞাসা করেন যে, আমার স্বামী হাসপাতালে চলে গিয়েছেন কিনা। তখন আমি বলি যে, আমার স্বামী বাড়িওয়ালার বাসায় ফোন করতে গিয়েছে হাসপাতাল থেকে এ্যাম্বুলেন্স পাঠানোর জন্য, এ্যাম্বুলেন্স এলে আমার স্বামী হাসপাতালে যাবে। এই কথা শুনার পর শহীদ ডাঃ হুমায়ুন কবির ও আমার স্বামী শহীদ ডাঃ আজহারুল হক এ্যাম্বুলেন্সের জন্য অপেক্ষা করতে থাকেন। তখন আমি শাহাদাতকে বললাম যে, উনাদেরকে তুমি ডাকো। তখন শাহাদাত ফিরে এসে আমাকে জানায় যে, কয়েকজন পাকিস্তানী আর্মি ও অস্ত্রধারী বাঙ্গালী ইউনিফর্ম পরা এবং মাথায় ক্যাপ ছিল তারা ডাক্তার সাহেবদের সাথে কি যেন বলছেন এবং তার দিকেও রাইফেল তাক করে। তারপর আবারো ওকে উনাদের ডাকতে বলি এবং আমি দৌড়িয়ে গেটের কাছে আসি, তখন দেখি যে, কয়েকজন আমার স্বামী ডাঃ আজহারের হাতে রাইফেলের বাট দিয়ে বাড়ি মারে এবং ডাঃ হুমায়ুন কবিরকেও রাইফেলের বাট দিয়ে বারি মারে। আরো দেখি যে পাকিস্তান আর্মি ও অস্ত্রধারী বাঙ্গালীরা শহীদ ডাঃ হুমায়ুন কবির ও আমার ডাঃ আজহারুল হককে গান পয়েন্টে রাস্তার দিকে নিয়ে যাচ্ছে। তখন আমি চিৎকার দিয়ে আমার স্বামীর কাছে যাইতে চাইলে তাদের মধ্যে থেকে কয়েকজন অস্ত্রধারী বাঙ্গালী আমাকেও গান পয়েন্টে বাসার ভিতরে ঢুকায়। তখন আমার ঘরের বারান্দায় আমাকে ঐ অস্ত্রধারী বাঙ্গালীরা জিজ্ঞাসা করে যে, আপনার স্বামীর কাছে কখন কারা আসতো ও যেতো এবং আপনার স্বামীও কোথায় কোথায় যেতো, কতো রাতে ফিরতো ইত্যাদি। তখন আমি তাদেরকে জিজ্ঞাসা করি “তোমরা কারা? আমার স্বামীকে কোথায় নিয়ে গেলে?”, তখন উত্তরে তারা বললো “আমরা আলবদর বাহিনীর সদস্য, আমাদের হাই কমান্ড মতিউর রহমান নিজামী সাহেবের নির্দেশে আপনার স্বামী ডাঃ আজাহারুল হক ও ডাঃ হুমায়ন কবিরকে নিতে এসেছি”। তারপর তারা আমার বেডরুমে ঢুকে বিছানা পত্র উল্টিয়ে তছনছ করে, তখন আমার মনে হয়েছিল সম্ভবত মুক্তিযুদ্ধের কাগজপত্র, বোমা-টোমা খোজছিল। তারপর তারা আমার বাসা থেকে চলে যায়। ঐ ঘটনার সময় আমার ভাই এডভোকেট সৈয়দ রফিকুস সালেহীন আমাদের বাসায়ই ছিলেন এবং যেহেতু তিনি মুক্তিযোদ্ধা ছিলেন সেহেতু তিনি ঐ মুহূর্ত্বে লুকিয়ে ছিলেন। আর্মিদের কর্ডন ঐ এলাকা থেকে উঠে যাওয়ার পর আমার সেই ভাই বাড়িওয়ালার বাসায় গিয়ে আমার আরেক ভাই ইঞ্জিনিয়ার সৈয়দ তুলুস শামস্ যিনি তখন ওয়াপদার নির্বাহী প্রকৌশলী ছিলেন তাকে ফোন করে ঘটনার কথা জানান। এর কিছুক্ষন পর আমার উক্ত ভাই তুলুস শামস্ আমার দুলাভাই (বর্তমানে মৃত) সৈয়দ সাহাব উদ্দিন সাহেবকে সঙ্গে নিয়ে আমাদের বাসায় আসেন। তখন উনারা দুইজন আমার নিকট থেকে ঘটনা শুনে রমনা থানায় যান। রমনা থানায় উনারা গিয়ে দেখেন যে, হাতিরপুর এলাকা থেকে প্রায় দুইশত লোককে ধরে রমনা থানায় নিয়ে যাওয়া হয়েছিল তাদের নাম লিস্টে আছে কিন্তু আমার স্বামী শহীদ ডাঃ আজহারুল হক ও শহীদ ডাঃ হুমায়ুন করিবের নাম ঐ লিস্টে নাই। তখন ঐ থানারই একজন লোক উনাদেরকে চুপে চুপে বলনে যে, যাদের নাম লিস্টে নাই তাদেরকে মেরে ফেলা হয়। তারপর আমার ভাইয়েরা আমার বাসায় এসে আমাকে তাদের পরিবাগের সরকারী বাসায় নিয়ে যেতে চান। আমার স্বামীর বাসা থেকে আমি যেতে না চাইলে তারা আমাকে বলে যে, তুমি একা বাসায় থাকলে তোমাকেও তারা একই ভাবে নিয়ে যেতে পারে, তখন আমি ছয়মাসের প্রথম অন্তঃস্বত্তা ছিলাম, তখন আমি তাদের সঙ্গে পরিবাগের আমার ভাইয়ের বাসায় চলে যাই। তখন আমাকে পরিবাগের বাসায় রেখে তারা বিভিন্ন স্থানে আমার স্বামীর খোঁজে বের হন।
তার পরের দিন ১৬ই নভেম্বর ১৯৭১ সাল ডাক্তার কামরুজ্জামান ডাক্তার ববি আমার ভাইয়ের পরিবাগের বাসায় এসে আমাদেরকে জানান যে, আমার স্বামীর বস্ ডাঃ শামসুদ্দিন ঢাকা মেডিকেল কলেজের হাসপাতাল মর্গে আমার স্বামী ও ডাঃ হুমায়ুন কবিরের লাশ চিনতে পেরেছেন, আপনারা ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতাল মর্গে গিয়ে সনাক্ত করেন। তারা আরো জানান যে, আপনার স্বামীর লাশ এবং ডাঃ হুমায়ুন কবিরের লাশ ঢাকা নটরডেম কলেজের পাশে যে কালভার্টের নিচে ড্রেন হাত, পা ও চোখ বাধা অবস্থায় এবং শরীরে অনেক আঘাতের চিহ্ন ছিল, সেই অবস্থায় পাওয়া যায়। তারপর আমার ভাইয়েরা ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসাপাতালের মর্গ থেকে আমার স্বামীর লাশ আমাদের পরিবাগের বাসায় নিয়ে আসে এবং ডাঃ হুমায়ুন কবিরের লাশ তারাই আজিমপুর গোরস্থানে দাফন করেন। আমার স্বামীর লাশ আমাকে দেখানোর পর আজিমপুর গোরস্থানে দাফন করে।
সেদিন যারা আমার স্বামী সহ এদেশের সেরা সন্তান বুদ্ধিজীবিদেরকে ধরে নিয়ে হত্যা করেছিল, সেদিন মতিউর রহমান নিজামী সাহেব, চৌধুরী মঈন উদ্দিন, আশরাফুজ্জামান, মোজাহিদ এবং গোলাম আযম সাহেবদের পরিকল্পনা ও নীল নকশা অনুযায়ী বাংলাদেশকে মেধা শূন্য করার, পঙ্গু করে দেওয়ার জন্য সুপরিকল্পিতভাবে এ হত্যাকান্ড ঘটিয়েছিল এবং যারা আমার স্বামীকে তার সন্তান দেখে যেতে দেয়নি এবং সন্তানও জন্ম নিয়ে তার পিতাকে দেখতে পায় নি আমি সেই হত্যাকারীদের সর্বোচ্চ শাস্তি মৃত্যুদন্ড কামনা করি। এই মামলার তদন্তকারী কর্মকর্তার নিকট আমি জবানবন্দি প্রদান করেছি। এই মামলার আসামী মতিউর রহমান নিজামী সাহেব অদ্য ট্রাইব্যুনালের কাঠগড়ায় উপস্থিত আছেন (সনাক্তকৃত)।
জেরা -
আদালতের সম্মূখভাগে যে লোকটি বসে আছেন তিনি আমার ভাই তার নাম ফুয়াদ, আমি তার সঙ্গে অদ্য ট্রাইব্যুনালে সাক্ষ্য দিতে এসেছি। (চলবে)
একটি প্রশ্নের পর জেরা আগামী বুধবার পর্যন্ত মুলতবি করা হয়।
শ্যামলী নাসরিন বিষয়ক আবেদন খারিজ :
মাওলানা নিজামীর বিরুদ্ধে রাষ্ট্রপক্ষের ১৩ তম সাক্ষী শ্যামলী নাসরিন চৌধুরী এর সাক্ষ্য প্রত্যাহারের জন্য আবেদন করেছিল আসামী পক্ষ। আবেদন শুনানী শেষে খারিজ করে দিয়েছে ট্রাইব্যুনাল।
আসামী পক্ষের আবেদনে বলা হয়েছে গত ১০ জুলাই রাষ্ট্রপক্ষ ১৩ তম সাক্ষী হিসেবে শ্যামলী নাসরিন চৌধুরীকে হাজির করে এবং তার সাক্ষ্য গ্রহণ করা হয়। রাষ্ট্রপক্ষ দাবি করেছে তাদেরকে ট্রাইব্যুনাল অতিরিক্ত ২৮ জন সাক্ষী হাজিরের অনুমতি দিয়েছে এবং শ্যামলী নাসরিন ২৮ জনের একজন সাক্ষী। রাষ্ট্রপক্ষের দাবি ট্রাইব্যুনাল কর্তৃক ২০ ফেব্রুয়ারি যে আদেশ দেয়া হয়েছে তাতে ২৮ জন অতিরিক্ত সাক্ষীর অনুমতি দেয়া আছে। কিন্তু ২০ ফেব্রুয়ারি আদেশ পর্যালোচনা করে দেখা গেছে সেই আদেশে অতিরিক্ত কোন সাক্ষীর আবেদন ছিলনা। সেটা ছিল অতিরিক্ত কিছু ডকুমেন্ট গ্রহনের আবেদন। ট্রাইব্যুনাল রাষ্ট্রপক্ষকে সেই ডকুমেন্ট দাখিলের অনুমতি দিয়ে আদেশ দিয়েছে। কিন্তু সেই আদেশের রেফারেন্সে রাষ্ট্রপক্ষ ট্রাইব্যুনালের কাছে অতিরিক্ত সাক্ষী হাজিরের জন্য সমন চেয়ে আবেদন করে অনুমতি আদায় করেছে এবং শ্যামলী নাসরিনকে হাজির করেছে।
আসামী পক্ষের আবেদনে বলা হয় আমরা ২০ ফেব্রুয়ারির সেই আদেশের কপি পাবার জন্য তিনবার আবেদন করেছি কিন্তু পাইনি। এরপর নতুন করে আবেদনের প্রেক্ষিতে গত ৩ সেপ্টেম্বর আমরা সে কপি পেতে সক্ষম হই এবং সে আদেশ কপিতে কোথাও নতুন ২৮ সাক্ষীর অনুমতি বিষয়ে কিছূ বলা নেই।
আবেদনের ওপর শুনানীতে তাজুল ইসলাম আজ ট্রাইব্যুনালে বলেন, আসামী পক্ষ শ্যামলী নাসরিনকে সম্পূণ অবৈধভাবে ট্রাইব্যুনালে হাজির করেছে এবং এটা কোন অবস্থাতেই গ্রহণযোগ্য হতে পারেনা। সে কারনে তার সাক্ষ্য বাতিল করা উচিত ন্যায় বিচারের স্বার্থে। তাজুল ইসলাম বলেন, ট্রাইব্যুনাল ২০ ফেব্রুয়ারি যে আদেশ দিয়েছে তাতে দেখা যায় রাষ্ট্রপক্ষ কখনো অতিরিক্ত সাক্ষীর কোন আবেদনই করেনি। রাষ্ট্রপক্ষের আইনজীবী তার আবেদনে বলেছিলেন তদন্ত কর্মকর্তা এই মামলা সম্পর্কে কিছু ডকুমেন্ট জব্দ করেছিলেন কিন্তু সেগুলো প্রসিকিউশনের কাছে জমা দেয়নি । তাই সেগুলো যেন এখন গ্রহণ করা হয়।
আসামী পক্ষ আবেদনের সাথে ২০ ফেব্রুয়ারির আদেশও সরবরাহ করেন। ট্রাইব্যুনাল আসামী পক্ষের আবেদন এবং ২০ ফেব্রুয়ারি আদেশ কপি পর্যালোচনা করেন। বিচারপতি জাহাঙ্গীর হোসেন বলেন, যেকোনভাবে হোক একটা ভুল হয়েছে।
তাজুল ইসলাম তখন বলেন, রাষ্ট্রপক্ষ প্রতারনার আশ্রয় নিয়েছে।
ট্রাইব্যুনাল চেয়ারম্যান বিচারপতি ফজলে কবির বলেন, আমরা সরল বিশ্বাসে রাষ্ট্রপক্ষকে নতুন সাক্ষী হাজিরের জন্য সমন দিয়েছিলাম। তারা যে সমন আবেদন করেছে সেটা ছিল ভুল তথ্যের ওপর ভিত্তি করে।
রাষ্ট্রপক্ষে প্রসিকিউটর সৈয়দ হায়দার আলী শুনানীতে অংশ নেন। তিনি বলেন, নতুন যে ডকুমেন্ট গ্রহনের জন্য আবেদন করা হয়েছিল তাতে অতিরিক্ত ২৮ জন সাক্ষীর জবানবন্দী দেয়া ছিল।
শুনানী শেষে আসামী পক্ষের আবেদন খারিজ করে দেয়া হয়। খারিজ আদেশে ট্রাইব্যুনাল বলেন, রাষ্ট্রপক্ষের আবদেনটি যথাযথভাবে ড্রাফট করা হয়নি। তাতে অতিরিক্ত সাক্ষী বিষয়ে সুনির্দিষ্টভাবে অনুমতি চাওয়া হয়নি। তবে যেহেতু সাক্ষীর জবানবন্দী গ্রহণ করা হয়েছে এবং জেরও হয়েছে তাই তা আর বাতিল করা হলনা।
আসামী পক্ষের আবেদন
IN
THE INTERNATIONAL CRIMES TRIBUNAL-1, DHAKA
ICT-BD. CASE NO. 03 OF 2011
IN THE MATTER OF:
An application for exclusion of testimony of pw-13,
Shyamoli Nasrin Chowdhury from the record.
AND
IN
THE MATTER OF:
The
Chief Prosecutor, International Crimes Tribunal, Dhaka.
…Petitioner.
-VERSUS-
Motiur Rahman Nizami.
…Accused.
The
humble petition on behalf of the Accused above named most respectfully-
S H E W E T H:
1.
That on 11.02.2013 the Prosecution filed an
application under section 9 (4) of the International
Crimes (Tribunals) Act, 1973 (hereinafter referred to as the said
Act) for seeking permission to submit additional prosecution documents, books
and CDs in relation to the case.
2.
That on 20.02.2013 the Hon’ble Tribunal heard and allowed the prosecution
application filed under section 9 (4) of the Act vide its Order No. 78.
3.
That thereafter
the Defense filed 3 (three) separate applications for certified copy of the
said Order in different dates. But somehow the Defense did not get the same.
That thereafter on 11.07.2013 the Defence filed an application for inspection of the Order
sheets of this case except ex-party
Orders and to allow them to take necessary notes and that application was
allowed by this Hon’ble Tribunal.
4.
That after inspection of the Order sheets of the Hon’ble Tribunal
the Defense filed an application for certified copy of the said Order and got
the same on 03.09.2013.
5.
That after
getting the certified copy of the order No. 78 dated 20.02.13 it is detected that by that Order this Hon’ble Tribunal
allowed the prosecution to submit some additional documents only but did not
allow them to produce any additional PWs.
Certified copy of the
Order date 20.02.13 is
annexed herewith and marked as ANNEXURE-
A.
6.
That it appears
from the application filed by the prosecution under section 9 (4) of the Act
that no such prayer was made in that application though there are some
statement that they intend to examine some new PWs.
7.
That on 10.07.13
pw-13 Shyamoli Nasrin Chowdhury, listed in the additional witness list, was
examined as an additional prosecution witness though it appears from the Order
dated 20.02.13 she was not allowed to be examined.
8.
That since no
Order was passed allowing PW-13, Shyamoli Nasrin Chowdhury to depose before the
Tribunal her testimony made before the Tribunal is absolutely illegal and unacceptable
and as such the same needs to be excluded from the evidence for the ends of
Justice.
9.
That it is
submitted that since Shyamoli Nasrin Chowdhury was not at all permitted by the
Tribunal to depose before the Tribunal her examination in chief and examination
of cross and recording of her testimony by the Tribunal is absolutely without
jurisdiction and against the principles of administration of Justice and as
such her testimony needs to be excluded from the record for the ends of
Justice.
10.
That for the abovementioned reasons in this
application, the Accused humbly prays that this Hon’ble Tribunal may pass an Order
for exclusion of the testimony of pw-13, Shyamoli Nasrin Chowdhury for the ends of Justice, otherwise the
accused will be highly prejudiced.
Wherefore, it is most humbly prayed that the Hon’ble
Tribunal would graciously be pleased to pass
an Order for exclusion of the
testimony of pw-13, Shyamoli Nasrin Chowdhury from the record and/or pass such
other or further order or orders as may deem fit and proper.
And for this act of kindness the Accused, as in duty
bound, shall ever pray.
কোন মন্তব্য নেই:
একটি মন্তব্য পোস্ট করুন