২০/১২/২০১২
মেহেদী হাসানস্কাইপ কেলেঙ্কারির জের ধরে জামায়াতে ইসলামীর সাবেক আমীর অধ্যাপক গোলাম আযমের বিচার পনুরায় শুরুর আবেদন করা হয়েছে আসামী পক্ষ থেকে। এছাড়া জামায়াতে ইসলামীর আমির মাওলানা মতিউর রহমান নিজামী এবং নায়েবে আমির মাওলানা দেলাওয়ার হোসাইন সাঈদীর বিচারও পুনরায় শুরুর আবেদন আজ রোববার করা হবে বলে তাদের আইনজীবীরা জানান ।
পুনরায় বিচারের এ আবেদন নিয়ে বিতর্ক শুরু হয়েছে বিভিন্ন মহলে। রাষ্ট্রপক্ষের আইনজীবীদের পক্ষ থেকে দাবি করা হচ্ছে আইনে পুনর্বিচারের বিধান নেই। ট্রাইব্যুনালে বিচারপতি পরিবর্তন হলে পুনরায় বিচার শুরু করা যায়না। বিচার যেখানে চলমান ছিল সেখান থেকেই চলবে।
বিচারপতি নিজামুল হকের পদত্যাগের পর থেকে এ নিয়ে পক্ষে বিপক্ষে বিতর্ক এবং আলোচনা অব্যাহত রয়েছে। তবে আসামী পক্ষ ট্রাইব্যুনালে আনুষ্ঠানিকভাবে পুনরায় বিচারের আবেদন জমা দেয়ার পর থেকে ভিন্ন মাত্রা লাভ করেছে এ বিতর্ক।
আসামী পক্ষ থেকে এর জবাবে বলা হয়েছে বিচারক পরিবর্তনের কারনে তারা পুনরায় বিচার দাবি করেছেন এ অভিযোগ মোটেই সত্য নয়। বরং বিচার নিয়ে জালিয়াতি, প্রতারনা এবং বিচারের নামে আসামীকে ফাঁসিয়ে দেয়ার যে ষড়যন্ত্র হয়েছে সে কারনেই তারা পুনরায় বিচারের দাবি করেছেন। আসামী পক্ষের দাবি চার্জগঠন আদেশসহ বিচারের বিভিন্ন পর্যায়ের বিভিন্ন আদেশ বেলজিয়াম থেকে ড, আহমেদ জিয়াউদ্দিন লিখে পাঠিয়েছেন । বেলজিয়াম থেকে পাঠানো আদেশ বিচারপতি নিজামুল হক শুধুমাত্র ট্রাইব্যুনালে পড়ে শুনিয়েছেন । প্রসিকিউশন এবং ট্রাইব্যুনাল কেউ কারো দায়িত্ব সঠিকভাবে পালন করেনি। পুরো বিচার কার্যক্রম পরিচালিত হয়েছে বেলজিয়াম থেকে।
আসামী পক্ষের প্রধান আইনজীবী ব্যারিস্টার আব্দুর রাজ্জাক বলেন, আমাদের দাবির স্বপক্ষে আমরা ৬শ পৃষ্ঠার ডকুমেন্ট জমা দিয়েছি অধ্যাপক গোলাম আযমের বিচার পুনরায় শুরুর আবেদনের সাথে। এর মধ্যে রয়েছে দৈনিক আমার দেশ পত্রিকায় প্রকাশিত বিচারপতি নিজামুল হক নাসিমের সাথে ড. আহমেদ জিয়াউদ্দিনের স্কাইপ সংলাপ, এ দুজনের মধ্যে বিভিন্ন সময়ে আদান প্রদান করা বেশ কিছু ইমেইল।
পুনরায় বিচারের আবেদনের যৌক্তিকতা তুলে ধরে ব্যারিস্টার আব্দুর রাজ্জাক বলেন, অধ্যাপক গোলাম আযমের মামলায় চলতি বছর ১৩ মে চার্জ গঠনের আদেশ দেয়া হয়েছে ট্রাইব্যুনাল থেকে। আর ১২ তারিখ আহমেদ জিয়া উদ্দিন বেলজিয়াম থেকে চার্জ ফ্রেমিং আদেশের একটি ড্রাফট পাঠিয়েছেন। ১৩ তারিখ বিচারপতি নিজামুল হক চার্জ ফ্রেমিং গঠন করে যে আদেশ দিলেন তার সাথে হুবহু মিল রয়েছে ১২ তারিখ বেলজিয়াম থেকে ড. আহমেদ জিয়াউদ্দিনের পাঠানো ড্রাফটের সাথে। শুধু তারিখ এবং কেস নম্বর পরিবর্তন করা হয়েছে।
ব্যারিস্টার আব্দুর রাজ্জাক বলেন, আমরা আবেদনের সাথে এ দুটি ডকুমেন্ট জমা দিয়েছি। দুটি ডকুমেন্ট সামনে রেখে তুলনা করলেই যে কেউ বুঝতে পারবে এর মধ্যে কোন পার্থক্য নেই । ড. আহমেদ জিয়াউদ্দিন ১২ মে ২০১২ চার্জ গঠন বিষয়ক যে ড্রাফট পাঠালেন ইমেইল করে সেটি ৪৫ পৃষ্ঠার একটি ডকুমেন্ট। আর বিচারপতি নিজামুল হক ১৩ মে ২০১২ অধ্যাপক গোলাম আযমের বিরুদ্ধে যে চার্জ গঠনের আদেশ দিলেন সেটি ৪৯ পৃষ্ঠার । ফন্টের কারনে পৃষ্ঠার সংখ্যা কিছু বেশিকম হয়েছে দুটির ক্ষেত্রে। বস্তুত ১২ মে বেলজিয়াম থেকে যে ড্রাফট পাঠানো হয়েছে পরেদিন ১৩ মে বিচারপতি নিজামুল হক তা শুধুমাত্র পড়ে শুনিয়েছেন ওপেন কোর্টে।
ব্যারিস্টার আব্দুর রাজ্জাক বিস্ময় প্রকাশ করে বলেন দুনিয়ার কোথাও বিচার বিভাগের ইতিহাসে এমন জালিয়াতির ঘটনা ঘটেনি।
অধ্যাপক গোলাম আযমের পুনরায় বিচারের আবেদনের সাথে জমা দেয়া আরেকটি ডকুমেন্ট তুলে ধরে ব্যারিস্টার আব্দুর রাজ্জাক বলেন, ২০১১ সালের ডিসেম্বর মাসে বিচারপতি নিজামুল হকের কাছে বেলজিয়ামের ড. আহমেদ জিয়াউদ্দিনের কাছ থেকে তিনটি মেইল আসে। আমরা তার দুটি মেইল জমা দিয়েছি। এ দুটি মেইল ফরমাল চার্জ বিষয়ে। যে ফরমাল চার্জ রাষ্ট্রপক্ষের আইনজীবীদের তৈরি করার কথা।
ব্যারিস্টার আব্দুর রাজ্জাক বলেন, এছাড়া আমাদের কাছে আরো একটি ইমেইল ডকুমেন্ট রয়েছে অধ্যাপক গোলাম আযমের বিরুদ্ধে তদন্ত রিপোর্ট প্রতিবেদন বিষয়ে। তদন্ত সংস্থা ২০১১ সালের ৩১ অক্টোবর তদন্ত প্রতিবেদন জমা দেয় প্রসিকিউশনের কাছে। প্রসিকিউশন ১২ ডিসেম্বর তা আদালতে দাখিল করে। ওই একই তারিখ ড. আহমেদ জিয়াউদ্দিনের কাছ থেকে বিচারপতি নিজামুল হকের বরারব একটি ইমেইল আসে বেলজিয়াম থেকে। ইমেইলটি ছিল ফরমাল চার্জ এবং তদন্ত প্রতিবেদন বিষয়ে।
ব্যারিস্টার আব্দুর রাজ্জাক বলেন আমাদের প্রশ্ন হল তদন্ত সংস্থার প্রতিবেদন বেলজিয়ামে গেল কিভাবে এবং সেখান থেকেই বা বিচারপতি নিজামুল হকের কাছে আসে কি করে? যেখানে আমরা ট্রাইব্যুনালের কাছে অনেক অনুরোধ করেছিলাম তদন্ত সংস্থার প্রতিবেদন পাওয়ার জন্য। কিন্তু আমাদের দেয়া হয়নি। তা বাইরে গেল কি করে? এ থেকে বোঝা যায় ফরমাল তদন্ত প্রতিবেদন তৈরি, ফরমাল চার্জ গঠন এ সবকিছুর সাথে তাদের সবার যোগসাজস ছিল।
ব্যারিস্টার আব্দুর রাজ্জাক বলেন, ১৯৯২ সালে অধ্যাপক গোলাম আযমের বিচারের জন্য জাহানারা ইমামের নেতৃত্বে গঠিত গণআদালতের বিচারের সাথে বিচারপতি নিজামুল হক আগেই জড়িত থাকায় আমরা ট্রাইব্যুনাল থেকে বিচারপতি নিজামুল হকের অপসারন চেয়ে আবেদন করেছিলাম। সে বিষয়ে তিনি যে আদেশ দিয়ে আমাদের আবেদন প্রত্যাখ্যান করেছিলেন সে আদেশটিও ১২ জুন ২০১২ তারিখ বেলজিয়াম থেকে পাঠানো হয়েছে।
ব্যারিস্টার রাজ্জাক বলেন, এভাবে মাওলানা নিজামী এবং সাঈদীর ক্ষেত্রেও আমরা চার্জ গঠন আদেশ এবং বেলজিয়াম থেকে পাঠানো চার্জ ফ্রেম আদেশের ড্রাফট জমা দেব প্রমান হিসেবে। মাওলানা সাঈদীর বিরুদ্ধে চার্জ গঠনের আদেশ দেয়া হয়েছে ২০১১ সালের ৩ অক্টোবর। আর বেলজিয়াম থেকে চার্জ গঠনের ড্রাফট বিচারপতি নিজামুল হকের কাছে পাঠানো হয়েছে ২ অক্টোবর। ৩ অক্টোবার ট্রাইব্যুনালে যেটি পড়ে শোনানো হল এবং ২ অক্টোবর যে ড্রাফট পাঠানো হল তা হুবহু এক। এমনিভাবে মাওলানা মতিউর রহমান নিজামীর বিরুদ্ধে চার্জ গঠনের আদেশ দেয়া হয়েছে ২০১২ সালের ২৮ মে। আর বেলজিয়াম থেকে ড্রাফট পাঠানো হয়েছে ২৭ মে। এ দুটিও এক।
তিনি বলেন, সকগুলো মিলিয়ে দেখলেই বিষয়টি পরিস্কার হয়ে যাবে যে, বিচার কার্যক্রম আসলে পরিচালিত হয়েছে বেলজিয়াম থেকে। তিনি সেখান থেকে যেভাবে দিক নির্দেশনা দিয়েছেন সেভাবে পরিচালিত হয়েছে বিচার। ড. আহমেদ জিয়া উদ্দিন আবার দেশের এবং বিদেশের বিভিন্ন মহলের সাথে আলোচনা করে বিচারের গতি বিধি ঠিক করতেন। স্কাইপি সংলাপ এবং দুজনের ইমেইল পর্যালোচনা করলে দেখা যায় বিচারপতি, রাষ্ট্রপক্ষের আইনজীবী এবং সাক্ষীর মধ্যে একটা গোপন আতাত হয়েছে বিচার নিয়ে।
যেমন ড. আহমেদ জিয়া উদ্দিনের সাথে স্কাইপি সংলাপের সময় বিচারপতি নিজামুল হক বলছেন, ১৯৭১ সালের ১৯ মার্চ জয়দেবপুরের ঘটনাটা সাক্ষী জেনারেল (অব) শফিউল্লাহকে দিয়ে বলাতে পারলে তার জন্য রায় লিখতে সুবিধা হবে।
এছাড়া সাক্ষী সুলতানা কামাল, মুনতাসির মামুনকে গিয়ে কোন কোন বিষয় বলাতে পারলে সুবিধা হবে তা নিয়েও তারা দুজন আলোচনা করেছেন। এ বিষয়ে রাষ্ট্রপক্ষের আইনজীবী জেয়াদ আল মালুম ভূমিকা পালন করছে বলেও তাদের আলোচনায় উঠে এসেছে। ব্যারিস্টার আব্দুর রাজ্জাক বলেন সাক্ষী কি বলবে না বলবে তা কি একজন বিচারপতি ঠিক করতে বা আলোচনা করতে পারেন?
আইন নিয়ে বিতর্ক :
আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনাল আইনের ৬ (৬) ধারায় বলা আছে ‘শুধুমাত্র ট্রাইব্যুনালের কোন সদস্যের পরিবর্তন হলে বা কোন সদস্য অনুপস্থিত থাকলে ইতোপূর্বে সাক্ষ্য দিয়ে গেছেন এমন কোন সাক্ষীকে পুনরায় সাক্ষ্য দেয়ার জন্য তলব করতে বা পুনরায় শুনানী গ্রহনে ট্রাইব্যুনাল বাধ্য থাকবেনা।’
আসামী পক্ষের আইনজীবী টিমের সদস্য মিজানুল ইসলাম বলেন, এর মানে হল শুধুমাত্র একটা কারণ অর্থাৎ ট্রাইব্যুনালের কোন সদস্য পরিবর্তন হলে পুনরায় শুনানী বা সাক্ষ্য গ্রহণ বা পুনরায় বিচার হবেনা। কিন্তু অন্য কারণ যদি ঘটে থাকে সেখানে পুনরায় বিচার হবেনা একথাতো বলা নেই। আর এখানে অন্য কারণ ঘটেছে যে কারনে পুনরায় বিচার দরকার। যেমন এখানে বিচারের নামে জালিয়াতি, প্রতারনা হয়েছে। অন্যের নির্দেশ অনুযায়ী আদেশ দেয়া হয়েছে । বেলজিয়াম থেকে ড. আহমেদ জিয়া উদ্দিনের লিখে পাঠানো চার্জ শুধুমাত্র পড়ে শুনিয়েছেন। বিচার পরিচালনা করা হয়েছে বেলজিয়ামের ব্রাসেলস থেকে। একজন বিচারপতি সমস্ত নিয়ম নীতি লঙ্ঘন করে রাষ্ট্রপক্ষের আইনজীবীদের সাথে গোপন আতাত করে প্রকাশ্য কোর্টে নাটক করেছেন বিচারের নামে। প্রতরানা এবং জালিয়াতির সুনামী হয়েছে এ বিচারের ক্ষেত্রে। যেখানে বিচারের নামে এ জাতীয় জালিয়াতি প্রতারনা এবং প্রহসন হয়েছে সেখানে আইনের এ স্বাভাবিক ধারা প্রযোজ্য হতে পারেনা। এটি বিচারের স্বাভাবিক অবস্থায় প্রযোজ্য। কারণ যেকোন কারনে একজন বিচারপতি বদলি হতে পারেন, পদোন্নতি পেয়ে চলে যেতে পারেন। তখন এ আইন কার্যকর। কিন্তু বিচারপতি নিজামুল হক সেরকম কোন স্বাভাবিক কারনে পদত্যাগ করেননি। একটি কেলেঙ্কারির দায় নিয়ে তিনি পদত্যাগ করেছেন এবং তিনি তা স্বীকার করেছেন।
তিনি বলেন পুনরায় বিচার বিষয়ে আইনের যে ধারা রয়েছে তার অপব্যাখ্যা করা হচ্ছে বিভিন্ন মহল থেকে।
ব্যারিস্টার আব্দুর রাজ্জাক আইনের বিধান বিষয়ে বলেন, আইনের ৬(৬) ধারা এখানে কাভার করেনা। ওটা বিচারের স্বাভাবিক অবস্থায় প্রযোজ্য। কিন্তু এখানো তো একটি মহা কেলেঙ্কারি এবং জালিয়াতির কারনে তিনি পদত্যাগ করেছেন। আইন যখন তৈরি করা হয় তখন এ ধরনের জালিয়াতি ঘটবে তা তো তারা জানতেননা। আর জালিয়াতির ঘটতে পারে মাথায় রেখে কোন বিধানও রাখা হয়ন। কাজেই আইনের স্বাভাবিক ধারা এখানে প্রযোজ্য হবেনা। বরং আইনের ৪৬ (এ) বিধিতে বলা আছে ন্যায় বিচারের স্বার্থে ট্রাইব্যুনাল যেকোন আদেশ দিতে পারেন। এটা ট্রাইব্যুনালের সহজাত ক্ষমতা। যেদিন ট্রাইব্যুনাল গঠন হয়েছে সেদিন থেকেই এ ক্ষমতা তারা লাভ করেছেন। কাজেই পুনরায় বিচার শুরু করতে আইনে কোন বাঁধা নেই। বরং সেটাই ন্যায় বিচারের দাবি।
তিনি বলেন, বিচারপতি নিজামুল হক যদি পদত্যাগ নাও করতেন তবু আমরা পুনরায় বিচারের আবেদন করতাম। কারণ এটা এখন আর কোন ব্যক্তির থাকা বা না থাকার বিষয় নয়। বিচারপতি নিজামুল হক বিচারের নামে যা করেছেন তার মাধ্যমে তিনি ট্রাইব্যুনালের বিচার কার্যক্রমকে কলুষিত করেছেন।
আবেদনের সাথে জমা দেয়া স্কাইপ সংলাপ বিষয়ে ব্যারিস্টার আব্দুর রাজ্জাক বলেন, এ সংলাপের বিষয়ও বিচারপতি নিজাুল হক ৬ ডিসেম্বর ইকনোমিস্টের বিরুদ্ধে রুল স্বীকার করেছেন। এ সংলাপ থেকেও এটি স্পষ্ট যে, সাক্ষী, রাষ্ট্রপক্ষের আইনজীবী, বেলজিয়ামের ড. আহেমদ জিয়া উদ্দিন, সরকারের মন্ত্রী, নির্বাহী বিভাগসহ আরো বিভিন্ন মহলের গোপন আতাত এবং যোগসাজসে পরিচালিত হচ্ছিল এ বিচার। বিচারের সব কিছু পেছন থেকে ঠিক করে তারা প্রকাশ্য কোর্টে নাটক করেছেন দিনের পর দিন। আর দেশের এবং বিদেশের মানুষকে দেখানোর চেষ্টা করেছেন যে এখানে তারা ন্যায় বিচার করছেন। কোন মামলার রায় আগে হবে, কোনটার রায় পরে হবে, কোন ট্রাইব্যুনালে কোন মামলায় কতজন সাক্ষী আসামী পক্ষকে আনতে দেয়া হবে, রায়ের কাঠামো কি হবে সে বিষয়েও বিচারপতি নিজামুল হক এবং বেলজিয়ামের ড. আহমেদ জিয়া উদ্দিনের সাথে আলোচনা হয়েছে। রাষ্ট্রপক্ষের আইনজীবী জেয়াদ আল মালূম এবং বিচারপতি নিজামুল হক নাসিম তার চেম্বারে বসে ঠিক করেছেন প্রকাশ্য কোর্টে তারা এমন আচরন করবেন যেন কোন লোক বুঝতে না পারে তাদের মধ্যে কোন খাতির আছে।
মানুষের জীবন মরনের প্রশ্ন জড়িত যেখানে সেখানে বিচারের নামে এমন প্রহসনের নজির আর নেই দুনিয়ার ইতিহাসে।
১৯৭১ সালে মানবতা বিরোধী অপরাধের বিচারের লক্ষ্যে গঠিত আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনালের বিচার বিষয়ে বিচারপতি নিজামুল হক বেলজিয়ামে অবস্থানরত ড. আহমেদ জিয়া উদ্দিনের সাথে স্কাইপি সংলাপ বা ভিডিও কথোপকথন করেছেন বিভিন্ন সময়ে। ইমেইলেও বিচারের বিভিন্ন বিষয় আদান প্রদান করেছেন। তার সকল ভিডিও কথোপকথনের রেকর্ড এবং ইমেইল ডকুমেন্ট বিশ্বখ্যাত ব্রিটিশ সাময়িকী দি ইকনোমিস্টের কাছে চলে যায়। দৈনিক আমার দেশ গত ৯ ডিসেম্বর থেকে স্কাইপি সংলাপ প্রকাশ শুরু করে। এ নিয়ে দেশে বিদেশে তুমুল ঝড় ওঠে। বিচারপতি নিজামুল হকের কথোপোকথনের বিষয়বস্তু পড়ে স্তম্ভিত হয়ে পড়ে গোটা জাতি। ১১ ডিসেম্বর বিচারপতি নিজামুল হক পদত্যাগ করেন। এরপর ট্রাইব্যুনাল-১ এ নতুন চেয়ারম্যান নিয়োগ দেয়া হয় বিচারপতি এটিএম ফজলে কবির। গত বুধ”বার থেকে আসামী পক্ষ পুনরায় বিচার শুরুর আবেদন জানিয়ে দরখাস্ত প্রদান শুরু করেছে।
মেহেদী হাসানস্কাইপ কেলেঙ্কারির জের ধরে জামায়াতে ইসলামীর সাবেক আমীর অধ্যাপক গোলাম আযমের বিচার পনুরায় শুরুর আবেদন করা হয়েছে আসামী পক্ষ থেকে। এছাড়া জামায়াতে ইসলামীর আমির মাওলানা মতিউর রহমান নিজামী এবং নায়েবে আমির মাওলানা দেলাওয়ার হোসাইন সাঈদীর বিচারও পুনরায় শুরুর আবেদন আজ রোববার করা হবে বলে তাদের আইনজীবীরা জানান ।
পুনরায় বিচারের এ আবেদন নিয়ে বিতর্ক শুরু হয়েছে বিভিন্ন মহলে। রাষ্ট্রপক্ষের আইনজীবীদের পক্ষ থেকে দাবি করা হচ্ছে আইনে পুনর্বিচারের বিধান নেই। ট্রাইব্যুনালে বিচারপতি পরিবর্তন হলে পুনরায় বিচার শুরু করা যায়না। বিচার যেখানে চলমান ছিল সেখান থেকেই চলবে।
বিচারপতি নিজামুল হকের পদত্যাগের পর থেকে এ নিয়ে পক্ষে বিপক্ষে বিতর্ক এবং আলোচনা অব্যাহত রয়েছে। তবে আসামী পক্ষ ট্রাইব্যুনালে আনুষ্ঠানিকভাবে পুনরায় বিচারের আবেদন জমা দেয়ার পর থেকে ভিন্ন মাত্রা লাভ করেছে এ বিতর্ক।
আসামী পক্ষ থেকে এর জবাবে বলা হয়েছে বিচারক পরিবর্তনের কারনে তারা পুনরায় বিচার দাবি করেছেন এ অভিযোগ মোটেই সত্য নয়। বরং বিচার নিয়ে জালিয়াতি, প্রতারনা এবং বিচারের নামে আসামীকে ফাঁসিয়ে দেয়ার যে ষড়যন্ত্র হয়েছে সে কারনেই তারা পুনরায় বিচারের দাবি করেছেন। আসামী পক্ষের দাবি চার্জগঠন আদেশসহ বিচারের বিভিন্ন পর্যায়ের বিভিন্ন আদেশ বেলজিয়াম থেকে ড, আহমেদ জিয়াউদ্দিন লিখে পাঠিয়েছেন । বেলজিয়াম থেকে পাঠানো আদেশ বিচারপতি নিজামুল হক শুধুমাত্র ট্রাইব্যুনালে পড়ে শুনিয়েছেন । প্রসিকিউশন এবং ট্রাইব্যুনাল কেউ কারো দায়িত্ব সঠিকভাবে পালন করেনি। পুরো বিচার কার্যক্রম পরিচালিত হয়েছে বেলজিয়াম থেকে।
আসামী পক্ষের প্রধান আইনজীবী ব্যারিস্টার আব্দুর রাজ্জাক বলেন, আমাদের দাবির স্বপক্ষে আমরা ৬শ পৃষ্ঠার ডকুমেন্ট জমা দিয়েছি অধ্যাপক গোলাম আযমের বিচার পুনরায় শুরুর আবেদনের সাথে। এর মধ্যে রয়েছে দৈনিক আমার দেশ পত্রিকায় প্রকাশিত বিচারপতি নিজামুল হক নাসিমের সাথে ড. আহমেদ জিয়াউদ্দিনের স্কাইপ সংলাপ, এ দুজনের মধ্যে বিভিন্ন সময়ে আদান প্রদান করা বেশ কিছু ইমেইল।
পুনরায় বিচারের আবেদনের যৌক্তিকতা তুলে ধরে ব্যারিস্টার আব্দুর রাজ্জাক বলেন, অধ্যাপক গোলাম আযমের মামলায় চলতি বছর ১৩ মে চার্জ গঠনের আদেশ দেয়া হয়েছে ট্রাইব্যুনাল থেকে। আর ১২ তারিখ আহমেদ জিয়া উদ্দিন বেলজিয়াম থেকে চার্জ ফ্রেমিং আদেশের একটি ড্রাফট পাঠিয়েছেন। ১৩ তারিখ বিচারপতি নিজামুল হক চার্জ ফ্রেমিং গঠন করে যে আদেশ দিলেন তার সাথে হুবহু মিল রয়েছে ১২ তারিখ বেলজিয়াম থেকে ড. আহমেদ জিয়াউদ্দিনের পাঠানো ড্রাফটের সাথে। শুধু তারিখ এবং কেস নম্বর পরিবর্তন করা হয়েছে।
ব্যারিস্টার আব্দুর রাজ্জাক বলেন, আমরা আবেদনের সাথে এ দুটি ডকুমেন্ট জমা দিয়েছি। দুটি ডকুমেন্ট সামনে রেখে তুলনা করলেই যে কেউ বুঝতে পারবে এর মধ্যে কোন পার্থক্য নেই । ড. আহমেদ জিয়াউদ্দিন ১২ মে ২০১২ চার্জ গঠন বিষয়ক যে ড্রাফট পাঠালেন ইমেইল করে সেটি ৪৫ পৃষ্ঠার একটি ডকুমেন্ট। আর বিচারপতি নিজামুল হক ১৩ মে ২০১২ অধ্যাপক গোলাম আযমের বিরুদ্ধে যে চার্জ গঠনের আদেশ দিলেন সেটি ৪৯ পৃষ্ঠার । ফন্টের কারনে পৃষ্ঠার সংখ্যা কিছু বেশিকম হয়েছে দুটির ক্ষেত্রে। বস্তুত ১২ মে বেলজিয়াম থেকে যে ড্রাফট পাঠানো হয়েছে পরেদিন ১৩ মে বিচারপতি নিজামুল হক তা শুধুমাত্র পড়ে শুনিয়েছেন ওপেন কোর্টে।
ব্যারিস্টার আব্দুর রাজ্জাক বিস্ময় প্রকাশ করে বলেন দুনিয়ার কোথাও বিচার বিভাগের ইতিহাসে এমন জালিয়াতির ঘটনা ঘটেনি।
অধ্যাপক গোলাম আযমের পুনরায় বিচারের আবেদনের সাথে জমা দেয়া আরেকটি ডকুমেন্ট তুলে ধরে ব্যারিস্টার আব্দুর রাজ্জাক বলেন, ২০১১ সালের ডিসেম্বর মাসে বিচারপতি নিজামুল হকের কাছে বেলজিয়ামের ড. আহমেদ জিয়াউদ্দিনের কাছ থেকে তিনটি মেইল আসে। আমরা তার দুটি মেইল জমা দিয়েছি। এ দুটি মেইল ফরমাল চার্জ বিষয়ে। যে ফরমাল চার্জ রাষ্ট্রপক্ষের আইনজীবীদের তৈরি করার কথা।
ব্যারিস্টার আব্দুর রাজ্জাক বলেন, এছাড়া আমাদের কাছে আরো একটি ইমেইল ডকুমেন্ট রয়েছে অধ্যাপক গোলাম আযমের বিরুদ্ধে তদন্ত রিপোর্ট প্রতিবেদন বিষয়ে। তদন্ত সংস্থা ২০১১ সালের ৩১ অক্টোবর তদন্ত প্রতিবেদন জমা দেয় প্রসিকিউশনের কাছে। প্রসিকিউশন ১২ ডিসেম্বর তা আদালতে দাখিল করে। ওই একই তারিখ ড. আহমেদ জিয়াউদ্দিনের কাছ থেকে বিচারপতি নিজামুল হকের বরারব একটি ইমেইল আসে বেলজিয়াম থেকে। ইমেইলটি ছিল ফরমাল চার্জ এবং তদন্ত প্রতিবেদন বিষয়ে।
ব্যারিস্টার আব্দুর রাজ্জাক বলেন আমাদের প্রশ্ন হল তদন্ত সংস্থার প্রতিবেদন বেলজিয়ামে গেল কিভাবে এবং সেখান থেকেই বা বিচারপতি নিজামুল হকের কাছে আসে কি করে? যেখানে আমরা ট্রাইব্যুনালের কাছে অনেক অনুরোধ করেছিলাম তদন্ত সংস্থার প্রতিবেদন পাওয়ার জন্য। কিন্তু আমাদের দেয়া হয়নি। তা বাইরে গেল কি করে? এ থেকে বোঝা যায় ফরমাল তদন্ত প্রতিবেদন তৈরি, ফরমাল চার্জ গঠন এ সবকিছুর সাথে তাদের সবার যোগসাজস ছিল।
ব্যারিস্টার আব্দুর রাজ্জাক বলেন, ১৯৯২ সালে অধ্যাপক গোলাম আযমের বিচারের জন্য জাহানারা ইমামের নেতৃত্বে গঠিত গণআদালতের বিচারের সাথে বিচারপতি নিজামুল হক আগেই জড়িত থাকায় আমরা ট্রাইব্যুনাল থেকে বিচারপতি নিজামুল হকের অপসারন চেয়ে আবেদন করেছিলাম। সে বিষয়ে তিনি যে আদেশ দিয়ে আমাদের আবেদন প্রত্যাখ্যান করেছিলেন সে আদেশটিও ১২ জুন ২০১২ তারিখ বেলজিয়াম থেকে পাঠানো হয়েছে।
ব্যারিস্টার রাজ্জাক বলেন, এভাবে মাওলানা নিজামী এবং সাঈদীর ক্ষেত্রেও আমরা চার্জ গঠন আদেশ এবং বেলজিয়াম থেকে পাঠানো চার্জ ফ্রেম আদেশের ড্রাফট জমা দেব প্রমান হিসেবে। মাওলানা সাঈদীর বিরুদ্ধে চার্জ গঠনের আদেশ দেয়া হয়েছে ২০১১ সালের ৩ অক্টোবর। আর বেলজিয়াম থেকে চার্জ গঠনের ড্রাফট বিচারপতি নিজামুল হকের কাছে পাঠানো হয়েছে ২ অক্টোবর। ৩ অক্টোবার ট্রাইব্যুনালে যেটি পড়ে শোনানো হল এবং ২ অক্টোবর যে ড্রাফট পাঠানো হল তা হুবহু এক। এমনিভাবে মাওলানা মতিউর রহমান নিজামীর বিরুদ্ধে চার্জ গঠনের আদেশ দেয়া হয়েছে ২০১২ সালের ২৮ মে। আর বেলজিয়াম থেকে ড্রাফট পাঠানো হয়েছে ২৭ মে। এ দুটিও এক।
তিনি বলেন, সকগুলো মিলিয়ে দেখলেই বিষয়টি পরিস্কার হয়ে যাবে যে, বিচার কার্যক্রম আসলে পরিচালিত হয়েছে বেলজিয়াম থেকে। তিনি সেখান থেকে যেভাবে দিক নির্দেশনা দিয়েছেন সেভাবে পরিচালিত হয়েছে বিচার। ড. আহমেদ জিয়া উদ্দিন আবার দেশের এবং বিদেশের বিভিন্ন মহলের সাথে আলোচনা করে বিচারের গতি বিধি ঠিক করতেন। স্কাইপি সংলাপ এবং দুজনের ইমেইল পর্যালোচনা করলে দেখা যায় বিচারপতি, রাষ্ট্রপক্ষের আইনজীবী এবং সাক্ষীর মধ্যে একটা গোপন আতাত হয়েছে বিচার নিয়ে।
যেমন ড. আহমেদ জিয়া উদ্দিনের সাথে স্কাইপি সংলাপের সময় বিচারপতি নিজামুল হক বলছেন, ১৯৭১ সালের ১৯ মার্চ জয়দেবপুরের ঘটনাটা সাক্ষী জেনারেল (অব) শফিউল্লাহকে দিয়ে বলাতে পারলে তার জন্য রায় লিখতে সুবিধা হবে।
এছাড়া সাক্ষী সুলতানা কামাল, মুনতাসির মামুনকে গিয়ে কোন কোন বিষয় বলাতে পারলে সুবিধা হবে তা নিয়েও তারা দুজন আলোচনা করেছেন। এ বিষয়ে রাষ্ট্রপক্ষের আইনজীবী জেয়াদ আল মালুম ভূমিকা পালন করছে বলেও তাদের আলোচনায় উঠে এসেছে। ব্যারিস্টার আব্দুর রাজ্জাক বলেন সাক্ষী কি বলবে না বলবে তা কি একজন বিচারপতি ঠিক করতে বা আলোচনা করতে পারেন?
আইন নিয়ে বিতর্ক :
আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনাল আইনের ৬ (৬) ধারায় বলা আছে ‘শুধুমাত্র ট্রাইব্যুনালের কোন সদস্যের পরিবর্তন হলে বা কোন সদস্য অনুপস্থিত থাকলে ইতোপূর্বে সাক্ষ্য দিয়ে গেছেন এমন কোন সাক্ষীকে পুনরায় সাক্ষ্য দেয়ার জন্য তলব করতে বা পুনরায় শুনানী গ্রহনে ট্রাইব্যুনাল বাধ্য থাকবেনা।’
আসামী পক্ষের আইনজীবী টিমের সদস্য মিজানুল ইসলাম বলেন, এর মানে হল শুধুমাত্র একটা কারণ অর্থাৎ ট্রাইব্যুনালের কোন সদস্য পরিবর্তন হলে পুনরায় শুনানী বা সাক্ষ্য গ্রহণ বা পুনরায় বিচার হবেনা। কিন্তু অন্য কারণ যদি ঘটে থাকে সেখানে পুনরায় বিচার হবেনা একথাতো বলা নেই। আর এখানে অন্য কারণ ঘটেছে যে কারনে পুনরায় বিচার দরকার। যেমন এখানে বিচারের নামে জালিয়াতি, প্রতারনা হয়েছে। অন্যের নির্দেশ অনুযায়ী আদেশ দেয়া হয়েছে । বেলজিয়াম থেকে ড. আহমেদ জিয়া উদ্দিনের লিখে পাঠানো চার্জ শুধুমাত্র পড়ে শুনিয়েছেন। বিচার পরিচালনা করা হয়েছে বেলজিয়ামের ব্রাসেলস থেকে। একজন বিচারপতি সমস্ত নিয়ম নীতি লঙ্ঘন করে রাষ্ট্রপক্ষের আইনজীবীদের সাথে গোপন আতাত করে প্রকাশ্য কোর্টে নাটক করেছেন বিচারের নামে। প্রতরানা এবং জালিয়াতির সুনামী হয়েছে এ বিচারের ক্ষেত্রে। যেখানে বিচারের নামে এ জাতীয় জালিয়াতি প্রতারনা এবং প্রহসন হয়েছে সেখানে আইনের এ স্বাভাবিক ধারা প্রযোজ্য হতে পারেনা। এটি বিচারের স্বাভাবিক অবস্থায় প্রযোজ্য। কারণ যেকোন কারনে একজন বিচারপতি বদলি হতে পারেন, পদোন্নতি পেয়ে চলে যেতে পারেন। তখন এ আইন কার্যকর। কিন্তু বিচারপতি নিজামুল হক সেরকম কোন স্বাভাবিক কারনে পদত্যাগ করেননি। একটি কেলেঙ্কারির দায় নিয়ে তিনি পদত্যাগ করেছেন এবং তিনি তা স্বীকার করেছেন।
তিনি বলেন পুনরায় বিচার বিষয়ে আইনের যে ধারা রয়েছে তার অপব্যাখ্যা করা হচ্ছে বিভিন্ন মহল থেকে।
ব্যারিস্টার আব্দুর রাজ্জাক আইনের বিধান বিষয়ে বলেন, আইনের ৬(৬) ধারা এখানে কাভার করেনা। ওটা বিচারের স্বাভাবিক অবস্থায় প্রযোজ্য। কিন্তু এখানো তো একটি মহা কেলেঙ্কারি এবং জালিয়াতির কারনে তিনি পদত্যাগ করেছেন। আইন যখন তৈরি করা হয় তখন এ ধরনের জালিয়াতি ঘটবে তা তো তারা জানতেননা। আর জালিয়াতির ঘটতে পারে মাথায় রেখে কোন বিধানও রাখা হয়ন। কাজেই আইনের স্বাভাবিক ধারা এখানে প্রযোজ্য হবেনা। বরং আইনের ৪৬ (এ) বিধিতে বলা আছে ন্যায় বিচারের স্বার্থে ট্রাইব্যুনাল যেকোন আদেশ দিতে পারেন। এটা ট্রাইব্যুনালের সহজাত ক্ষমতা। যেদিন ট্রাইব্যুনাল গঠন হয়েছে সেদিন থেকেই এ ক্ষমতা তারা লাভ করেছেন। কাজেই পুনরায় বিচার শুরু করতে আইনে কোন বাঁধা নেই। বরং সেটাই ন্যায় বিচারের দাবি।
তিনি বলেন, বিচারপতি নিজামুল হক যদি পদত্যাগ নাও করতেন তবু আমরা পুনরায় বিচারের আবেদন করতাম। কারণ এটা এখন আর কোন ব্যক্তির থাকা বা না থাকার বিষয় নয়। বিচারপতি নিজামুল হক বিচারের নামে যা করেছেন তার মাধ্যমে তিনি ট্রাইব্যুনালের বিচার কার্যক্রমকে কলুষিত করেছেন।
আবেদনের সাথে জমা দেয়া স্কাইপ সংলাপ বিষয়ে ব্যারিস্টার আব্দুর রাজ্জাক বলেন, এ সংলাপের বিষয়ও বিচারপতি নিজাুল হক ৬ ডিসেম্বর ইকনোমিস্টের বিরুদ্ধে রুল স্বীকার করেছেন। এ সংলাপ থেকেও এটি স্পষ্ট যে, সাক্ষী, রাষ্ট্রপক্ষের আইনজীবী, বেলজিয়ামের ড. আহেমদ জিয়া উদ্দিন, সরকারের মন্ত্রী, নির্বাহী বিভাগসহ আরো বিভিন্ন মহলের গোপন আতাত এবং যোগসাজসে পরিচালিত হচ্ছিল এ বিচার। বিচারের সব কিছু পেছন থেকে ঠিক করে তারা প্রকাশ্য কোর্টে নাটক করেছেন দিনের পর দিন। আর দেশের এবং বিদেশের মানুষকে দেখানোর চেষ্টা করেছেন যে এখানে তারা ন্যায় বিচার করছেন। কোন মামলার রায় আগে হবে, কোনটার রায় পরে হবে, কোন ট্রাইব্যুনালে কোন মামলায় কতজন সাক্ষী আসামী পক্ষকে আনতে দেয়া হবে, রায়ের কাঠামো কি হবে সে বিষয়েও বিচারপতি নিজামুল হক এবং বেলজিয়ামের ড. আহমেদ জিয়া উদ্দিনের সাথে আলোচনা হয়েছে। রাষ্ট্রপক্ষের আইনজীবী জেয়াদ আল মালূম এবং বিচারপতি নিজামুল হক নাসিম তার চেম্বারে বসে ঠিক করেছেন প্রকাশ্য কোর্টে তারা এমন আচরন করবেন যেন কোন লোক বুঝতে না পারে তাদের মধ্যে কোন খাতির আছে।
মানুষের জীবন মরনের প্রশ্ন জড়িত যেখানে সেখানে বিচারের নামে এমন প্রহসনের নজির আর নেই দুনিয়ার ইতিহাসে।
১৯৭১ সালে মানবতা বিরোধী অপরাধের বিচারের লক্ষ্যে গঠিত আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনালের বিচার বিষয়ে বিচারপতি নিজামুল হক বেলজিয়ামে অবস্থানরত ড. আহমেদ জিয়া উদ্দিনের সাথে স্কাইপি সংলাপ বা ভিডিও কথোপকথন করেছেন বিভিন্ন সময়ে। ইমেইলেও বিচারের বিভিন্ন বিষয় আদান প্রদান করেছেন। তার সকল ভিডিও কথোপকথনের রেকর্ড এবং ইমেইল ডকুমেন্ট বিশ্বখ্যাত ব্রিটিশ সাময়িকী দি ইকনোমিস্টের কাছে চলে যায়। দৈনিক আমার দেশ গত ৯ ডিসেম্বর থেকে স্কাইপি সংলাপ প্রকাশ শুরু করে। এ নিয়ে দেশে বিদেশে তুমুল ঝড় ওঠে। বিচারপতি নিজামুল হকের কথোপোকথনের বিষয়বস্তু পড়ে স্তম্ভিত হয়ে পড়ে গোটা জাতি। ১১ ডিসেম্বর বিচারপতি নিজামুল হক পদত্যাগ করেন। এরপর ট্রাইব্যুনাল-১ এ নতুন চেয়ারম্যান নিয়োগ দেয়া হয় বিচারপতি এটিএম ফজলে কবির। গত বুধ”বার থেকে আসামী পক্ষ পুনরায় বিচার শুরুর আবেদন জানিয়ে দরখাস্ত প্রদান শুরু করেছে।
কোন মন্তব্য নেই:
একটি মন্তব্য পোস্ট করুন