বুধবার, ২৪ এপ্রিল, ২০১৩

সালাহউদ্দিন কাদের চৌধুরীর বিরুদ্ধে দুই সাক্ষীর সাক্ষ্য গ্রহণ

মেহেদী হাসান, ২৪ এপ্রিল ২০১৩, ঢাকা :
বিশিষ্ট পার্লামেন্টারিয়ান বিএনপি নেতা সালাহউদ্দিন কাদের চৌধুরীর বিরুদ্ধে আজ ২৯ এবং ৩০ তম সাক্ষীর সাক্ষ্য গ্রহন করা হয়েছে। এরা হলেন সুবল ও মো: নাজিম উদ্দিন।

সুবলের জবানবন্দী :
আমার নাম সুবল, আমার বয়স-৫১ বৎসর, আমার ঠিকানা-মধ্য গহিরা, থানা রাউজান, জেলা চট্টগ্রাম।
আমি গৃহস্থলি করি। ১৯৭১ সালে মুক্তিযুদ্ধের সময় আমার বয়স ছিল ৯ বৎসর। ১৯৭১ সালে যখন যুদ্ধ শুরু হয় তখন চারিদিকে গোলাগুলি হচ্ছিল। তখন আমার বাবা আমাদেরকে বলেন বাড়িতে থাকা নিরাপদ নয়। তখন আমরা আমার বাবার সংগে আশ্রয়ের জন্য বিনাজুড়ির দিকে যাচ্ছিলাম। কিছুদুর যাওয়ার পর গোলাগুলির শব্দ শুনতে পাই। বাবা বললেন মনে হয় আমাদের বাড়ির দিকে গোলাগুলি হচ্ছে। তখন আমরা ঝোপের আড়ালে বাবা-মা সহ আশ্রয় নিই। ঝোপের আড়ালে আমরা ঘন্টা খানেক ছিলাম। আমার বাবা বললেন বাড়িতে কি ঘটনা হয়েছে দেখে আসা দরকার। তারপর আমরা বাবার সংগে বাড়িতে যাই। বাড়িতে গিেেয় দেখি উঠানে চারজনের গুলিবিদ্ধ লাশ পড়ে আছে এবং দুইজন আহত অবস্থায় কাতরাচ্ছে। আহত দুইজনের নাম জয়ন্ত ও মাখন লাল। নিহত চারজনের নাম যথা পঞ্চবালা, সুনিল, দুলাল এবং জ্যোতিলাল। লাশগুলি দেখার পর আমরা বাড়ি থেকে চলে যাই। দেশ স্বাধীন হওয়ার পর বাড়িতে ফিরে এসে শুনেছি কাজী ফরিদ নাকি আমাদের পুকুর পাড়ে ঐ লাশগুলি মাটিচাপা দিয়েছে। আড়ি তদন্তকারী কর্মকর্তার কাছে জবানবন্দী দিয়েছি।


জেরা
জেরায় আইনজীবীর প্রশ্নের জবাবে সুবল যেসব উত্তর দিয়েছেন তা এখানে  তুলে ধরা হল।
নিহত দুলালের বাড়ি হাটহাজারী থানায়। তিনি মামা বাড়ি গহিরাতে থাকতেন। স্বাধীনতার পর আহত জয়ন্ত মারা হেছে। মাখনলাল কখন মারা যায় আমি জানিনা। ঘটনাস্থলটি উঠান। ঐ উঠান কত বড় আমি বলতে পারবনা। ঘটনার সময় আমার বয়স ছিল ৯ বৎসর। আমার জন্ম ১৯৬২ সালে, তবে কোন মাসে তাহা বলতে পারবনা। ঘটনাস্থল নাপিতপাড়ার মধ্যে অবস্থিত। রাঙ্গামাটি রোড থেকে নাপিতপাড়ার দূরত্ব আধা কিলোমিটার মত হবে। সেখানে গাড়ি চলাচলের রাস্তা আছে। গোলাগুলির শব্দ প্রায় দশ মিনিটের মত চলেছিল। আমি মেলিটারী চিনিনা, মুক্তিযোদ্ধাও চিনতামনা। ঘটনার প্রায় ঘন্টখানেক পরে আমরা ঘটনাস্থলে যাই। আমাদের নাপিত পাড়ায় অনেক ঘরবাড়ি ছিল। প্রায় ১৫০ মত লোক সেখানে বসবাস করত। ঘটনাস্থল উঠানের পূর্ব ও পশ্চিম পার্শ্বে ঘরবাড়ি ছিল। আমরা ঘটনার পর যখন ঘটনাস্থলে যাই তখন পূর্ব ও পশ্চিম পার্শ্বে বসবাসকারী কোন লোকজনকে দেখিনাই। আমরা ছাড়া সেখানে কোন লোক দেখিনাই, সকলে ভয়ে পালিয়ে গিয়েছিল। নাপিতপাড়া থেকে মুসলিম পাড়ার দূরত্ব আনুমানিক পাঁচ কানি জমি দূরে। এই ঘটনার আগে অনেক লোক প্রাণের ভয়ে ভারতে পালিয়ে যায়, ইহা সত্য। ১৯৭১ সালের ১৩ই এপ্রিল তারিখে রাঙ্গামাটি রোডে আর্মিদের গাড়ি ছাড়া অন্য গাড়ি চলাচল করেছিল কিনা তাহা আমি বলতে পারবনা। হিন্দু, বৌদ্ধ, খ্রিষ্টান ঐক্য পরিষদের প্ররোচনায় এই মিথ্যা মামলায় মিথ্যা স্যা দিলাম, ইহা সত্য নহে। আামার কথিত দিনে, কথিত সময়ে, কথিত প্রকারে কোন ঘটনা ঘটেনাই, ইহা সত্য নহে। (সমাপ্ত)



নাজিম উদ্দিনের জবানবন্দী :
আমার নাম মোঃ নাজিমুদ্দিন, আমার বয়স-৫৭ বৎসর, আমার ঠিকানা-কাশেম ফকিরের বাড়ি,  মধ্যম মাদার্শা, থানা হাটহাজারী, জেলা চট্টগ্রাম।
১৯৭১ সালে আমি ৮ম শ্রেণীর ছাত্র ছিলাম। ১৯৭০ সালে আমার ফুফু নূর বেগমের সাথে রাউজান থানাধীন কর্তার দীঘির পাড় পথের হাট গ্রামের হানিফের বিবাহ হয়।  ১৯৭১ সালে মুক্তিযুদ্ধ শুরু হল আমার ফুফা আমার ফুফুকে নিয়ে আমাদের বাড়িতে  চলে আসেন। মুন্সি ও ফয়েজ নামে ফুফার দুইজন বন্ধু আমাদের বাড়িতে আসা যাওয়া করতোএবং তার সংগে কথাবার্তা বলত। কথাবার্তা বলার পরে একদিন আমার ফুফা আমার ফুফুকে নিয়ে তার নিজ বাড়িতে চলে যান। ১৯৭১ সালের মে মাসের ২০ তারিখের দিকে আমরা খবর পাই যে আমার ফুপাকে পাকিস্তান আর্মিরা ধরে নিয়ে গেছে। এই সংবাদ পাওয়ার পরে পরের দিন আমার নান আব্দুল কুদ্দুস, চাচা আব্দুল করিম সহ ফুফুকে আনতে ফুফার বাড়িতে যাই। সেখানে যাওয়ার পরে শুনলাম ফয়েজ আহম্মদ এবং মুন্সি মিয়া রাজাকার ও  পাকিস্তান আর্মি সহ এসে আমার  ফুপাকে ধরে নিয়ে গেছে। আমি আরো শুনেছি  আমার  ফুপাকে ধরে নিয়ে যাওয়ার সময় রাজাকার ও আর্মিদের সংগে সালাউদ্দিন কাদের চৌধুরী সাহেব গাড়িতে ছিলেন। ফুফা হানিফের পিতা সোনা মিয়া সওদাগর আন্ধার মানিকের জনৈক নাজমা বেগমকে গুডস হিলে পাঠান আমার ফুফাকে উদ্ধার করার জন্য। অনেক চেষ্টা করার পর সেই মহিলা আমার ফুফাকে উদ্ধার করতে পারেননাই, তিনি গুডস হিলে আমার ফুফাকে অত্যাচার করতে দেখেছেন। আমার ফুফা আর কোনদিন ফেরত আসেননাই।  আমি অত্র মামলার তদন্তকারী কর্মকর্তার নিকট জবানবন্দী করেছি। সালাউদ্দিন কাদের চৌধুরী সাহেবকে আমি চিনি, তিনি অদ্য ট্রাইব্যুনালের ডকে উপস্থিত আছেন।
আজ নাজিম উদ্দিনকে একটি প্রশ্নের মাধ্যমে জেরা শুরু করেন সালাহউদ্দিন কাদের চৌধুরীর আইনজীবী। এরপর বিচার কার্যক্রম মুলতবি করা  হয়।






কোন মন্তব্য নেই:

একটি মন্তব্য পোস্ট করুন