বৃহস্পতিবার, ১ আগস্ট, ২০১৩

ট্রাইব্যুনাল ভেঙ্গে দেয়ার দাবি বাংলাদেশ বার কাউন্সিলের /// বিচার যে সাজানো নাটক তা প্রমানিত হয়েছে

১০/১২/১২
মানবতা বিরোধী অপরাধের বিচারের লক্ষ্যে গঠিত আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনাল ভেঙ্গে দেয়ার দাবি জানানো হয়েছে বাংলাদেশ বার কাউন্সি এর  সংবাদ সম্মেলন থেকে। সংবাদ সম্মেলনে বলা হয়,  ট্রাইব্যুনালের বিচার যে একটি সাজানো নাটক এবং প্রহসন ছিল তা এখন প্রমানিত হয়েছে।  ট্রাইব্যুনাল চেয়ারম্যান বিচারপতি নিজামুল হক নাসিম সারা বিশ্বের  সামনে বাংলাদেশের বিচার বিভাগকে কলঙ্কিত করেছেন। বিচারকদের অপমানিত করেছেন।

ট্রাইব্যুনাল-১ এর চেয়ার‌্যাম বিচারপতি নিজামুল হক কর্তৃক বিচার প্রকৃয়া এবং বিচারের বিভিন্ন বিষয় নিয়ে বিদেশে অবস্থানরত এক ব্যক্তির সাথে দীর্ঘ  স্কাইপি সংলাপ (ভিডিও কল) ফাঁস হওয়ার প্রেক্ষিতে আজ  বাংলাদেশ বার কাউন্সিল এ সংবাদ সম্মেলনের আয়োজন করে।

সংবাদ সম্মেলনে বাংলাদেশ বার কাউন্সিলের  ভাইস চেয়ারম্যান  সুপ্রীম কোর্টের সিনিয়র আইনজীবী খন্দকার মাহবুব হোসেন, ব্যারিস্টার মওদুদ আহমদ,  ট্রাইব্যুনালের আসামী পক্ষের প্রধান আইনজীবী ব্যারিস্টার আব্দুর রাজ্জাক কথা বলেন।
সংবাদ সম্মেলনে  বলা হয়  বিচারপতি নিজামুল হক নাসিম বিচারপতিদের আচরনবিধি, সংবিধান, আইন এবং নৈতিকতার সমস্ত বিধানকে পদদলিত করেছেন, ধুলিস্যাৎ করে দিয়েছেন।   বাংলাদেশের বিচার বিভাগের ইতিহাসে এমন কলঙ্কজনক অবস্থা অতীতে আর কখনো সৃষ্টি হয়নি।  তার কারনে গোটা বিশ্বের সামনে আজ বাংলাদেশের বিচার ব্যবস্থা কলঙ্কিত হয়েছে। গোটা জাতি আজ  তার কারনে  বিস্মিত, লজ্জিত, হতভম্ব। ট্রাইব্যুনালের  বিচার এখন একটি সাজানো নাটক এবং প্রহসন ছাড়া ছাড়া আর কিছু নয় ।  এরপরে আর এক মিনিটও   বিচারপতি নিজামুল হক নাসিমের  পদে থাকা এবং বিচার চালানোর   কোন নৈতিক অধিকার এবং যোগ্যতা নেই। এ ট্রাইব্যুনাল থেকে ন্যায় বিচার পাওয়ার আশা এরপর আর করা যায়না।

সংবাদ সম্মেলনে তার বিরুদ্ধে সুপ্রীম জুড়িশিয়াল কাউন্সিল গঠন করে পদক্ষেপ গ্রহনের আহবান জানানো হয়েছে রাষ্ট্রপতি বরাবর।

সংবাদ সম্মেলনে খন্দকার মাহবুব হোসেন বলেন,  বাংলাদেশ বার কাউন্সিলের ভাইস চেয়ারম্যান হিসেবে আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনালের বিচার প্রক্রিয়ার স্বচ্ছতার ব্যাপারে গভীর উদ্বেগ এবং উৎকণ্ঠা নিয়ে আজকে আমি আপনাদের সামনে উপস্থিত হয়েছি। সম্প্রতি ব্রিটিশ পত্রিকা দি ইকোনোমিস্ট এবং তারই সূত্র ধরে বাংলাদেশের পত্রিকা আমার দেশ ট্রাইব্যুনালের চেয়ারম্যান বিচারপতি নিজামুল হক নাসিমের স্কাইপিতে কথোপকথনের যে উদ্বেগজনক তথ্য ছাপানো হয়েছে তাতে আমরা স্তম্ভিত। বাংলাদেশের বিচার বিভাগের ইতিহাসে এমন কলঙ্কজনক অবস্থা অতীতে আর কখনো সৃষ্টি হয়নি। পত্রিকায় প্রকাশিত সংলাপ থেকে এটা সুস্পষ্ট যে, বিচারপতি নাসিম বিচারকের ঈড়ফব ড়ভ পড়হফঁপঃ বা আচরনবিধি, সংবিধান, আইন এবং নৈতিকতার সমস্ত বিধানকে পদদলিত করেছেন। বিচারপতিদের যে আচরনবিধি আছে তাকে ধুলিস্যাৎ করে দিয়েছেন। তিনি বিচারকে প্রহসনে পরিণত করেছেন। বিচারকদের হেয়  এবং অপমানিত করেছেন।


খন্দকার মাহবুব  হোসেন বলেন, জনাব নাসিম সম্পূর্ণ নিলর্জ্জভাবে আদালতের কার্যক্রমের সমস্ত ব্যাপারে অন্যজনের পরামর্শ এবং নির্দেশনা নিয়েছেন এমনকি আদালতের বিভিন্ন আদেশ এবং রায়সমূহ বাইরে থেকে তৈরি করে পাঠানো হয়েছে বলে সুস্পষ্ট প্রমাণ পাওয়া যাচ্ছে। কিভাবে আদেশ দেয়া হবে, কিভাবে আদেশ লেখা হবে সব বিষয় সম্পর্কেই ওহী নাজিল হয় ওখান  (ব্রাসেলস) থেকে। আদেশের বিনিময়ে প্রতিদানে তিনি কি পাবেন তাও উল্লেখ আছে তার সংলাপে। তার সংলাপের  ভিডিও কপিও আমরা পেয়েছি। এখানে বিচারের নামে যে প্রহসন চলছে বলে আগে থেকে যে দাবি করে আসছিলাম তা এখন প্রমানিত হয়েছে। এরপরও কি আসা করা যায় এই ট্রাইব্যুনাল ন্যায় বিচার করবে?
তিনি বলেন, এছাড়াও সরকার কর্তৃক মামলায় দ্রুত রায় দেয়ার ব্যাপারে প্রভাব বিস্তার, সুপ্রিম কোর্টের জনৈক বিচারপতি কর্তৃক জনাব নাসিমকে অঢ়ঢ়বষষধঃব উরারংরড়হ এ নিয়ে যাওয়ার প্রলোভন, প্রসিকিউটরদের সাথে আরোচনা করে সিদ্ধান্ত গ্রহণ ইত্যাদি থেকে এটা সুস্পষ্ট যুদ্ধাপরাধের চলমান প্রক্রিয়াটি এখন একটি সাজানো নাটক ছাড়া আর কিছু নই। বাংলাদেশের আইনজীবী সমাজের প্রতিনিধি হিসেবে আমার সুস্পষ্ট বক্তব্য হচ্ছে, উদ্ভত পরিস্থিতিতে জনাব নিজামুল হক নাসিমের বিচারক পদে অধিষ্ঠিত থাকার আর কোনো নৈতিক অধিকার নেই এবং তার কর্তৃক এই বিচার প্রক্রিয়া চালিয়ে নেওয়ার ও আর কোনো সুযোগ নেই। তা না হলে আমরা মাননীয় প্রধান বিচারপতিকে অনুরোধ করবো, তার বিরুদ্ধে সুপ্রিম জুডিশিয়াল কাউন্সিলের মাধ্যমে তদন্ত পূর্বক দ্রুত শাস্তিমূরক ব্যবস্থা গ্রহণ করার জন্য। তিনি পদত্যাগ না করলে অথবা সুপ্রিম জুডিশিয়াল কাউন্সিলের মাধ্যমে তার বিরুদ্ধে ব্যবস্থা না নিলে বাংলাদেশের আইনজীবী সমাজ সম্মিলিতভাবে বিচারের নামে এই প্রহসন রুখে দাঁড়াবে।

ব্যারিস্টার মওদুদ আহমদ  বলেন,  দৈনিক আমার দেশ পত্রিকায় যে তথ্য বেরিয়েছে তারপর এই ট্রাইব্যুনালের  আর কোন গ্রহণযোগ্যতা থাকেনা। যেসব তথ্য প্রকাশিত হয়েছে তা জাতিতে বিস্মিতম লজ্জিত এ্বং হতভম্ব করেছে।

যারা উচ্চস্বরে এখনো এই ট্রাইব্যুনাল কর্তৃক যুদ্ধাপরাধীদের বিচারের কথা বলছেন তাদের মুখ এখন স্তব্ধ  হয়ে যাওয়ার কথা। আশা করি তারা এই ব্যাপারে আর কোন কথা বলবেননা। কি ধরনের বিচার হচ্ছে তা আজ সারা জাতি জেনে গেছে।
সরকার, ট্রাইব্যুনালের চেয়ারম্যান এবং বাদী পক্ষের যোগসাজসে যে বিচার কার্য পরিচালনা করা হচ্ছে তা এখন প্রহসনে পরিণত হয়েছে।  এরপর এক মিনিটের জন্যও বিচারপতি নিজামুল হকের  উচিত হবেনা এই বিচার কার্য পরিচালনা করা।
আদালত এবং বিচারকদের সম্মান, মর্যাদা এবং ভাবমূর্তি রক্ষার জন্য  শুধু নৈতিক কারনেই নয়, সাংবিধানিক কারনে বিচারপতি নিজামুল হকের অবিলম্বে পদত্যাগ করা উচিত। আর তা না হলে সরকারের উচিত হবে এই ট্রাইব্যুনাল ভেঙ্গে দেয়া।

আর যদি তা না করা হয় তাহলে বিগত ৯ ডিসেম্বর ২০১২  তারিখ আমার দেশ পত্রিকায় এই ট্রাইব্যুনাল চেয়ারম্যান বিচারপতি নিজামুল হকের বিরুদ্ধে যেসব সুনির্দিষ্ট অভিযোগ উত্থাপিত হয়েছে তার উপর ভিত্তি করে সংবিধানের ৯৬ অনুচ্ছেদের ৫ (খ) এবঙ ৬ বিধান অনুযায়ী গুরুতর অসদাচরনের দায়ে তাকে অবিলম্বে অপসারন করার ব্যবস্থা গ্রহণ করার জন্য প্রজাতন্ত্রের রাষ্ট্রপতির কাছে আমরা জোর দাবি জানাচ্ছি।

সংবাদ সম্মেলনে আরো উপস্থিত ছিলেন বার কাউন্সিলের এক্সিকিউটিভ কমিটির চেয়ারম্যান সাবেক এটর্নি জেনারেল এজে মোহাম্মদ আলী, বার কাউন্সিলের মেম্বার গোলাম মোস্তফা খান, বার কাউন্সিলের এনরোলমেন্ট কমিটির চেয়ারম্যান মাহবুব হোসেন খোকন এমপি।

ব্যারিস্টার আব্দুর রাজ্জাক বলেন,  ৮ ডিসেম্বর ব্রিটিশ সাময়িকী দি ইকনোমিস্ট এ যুদ্ধাপরাধ বিচার ট্রাইব্যুনালের   মাননীয় চেয়ারম্যান জনাব নিজামুল হক নাসিম সম্পর্কে যে তথ্য প্রকাশ করেছে বিশ্বের তা বিশ্বের আইনজীবী সম্প্রদায়কে  স্তম্ভিত করেছে। পরবর্তীতে দৈনিক আমার দেশ এর প্রকাশিত রিপোর্ট থেকে জানা যায় বিচারপতি জনাব নাসিম বিচার কার্য সম্পর্কে বিদেশে অবস্থানরত  তৃতীয় একজন ব্যাক্তির সাথে আলোচনা করেছেন। তার আলোচনার বিষয়বস্তু ছিল : কোন মামলার শুনানী কখন হবে, কোন মামলার রায় আগে হবে, কোনটার  পরে  হবে, কোন ট্রাইব্যুনালে কোন মামলায় কতজন সাক্ষী আসামী পক্ষকে আনতে দেয়া হবে, রায়ের কাঠামো কি হবে। তাছাড়া তিনি আপত্তিকর  মন্তব্য করেছেন  ট্রাইব্যুনালের আরেকজন সদস্য বিচারপতি সম্পর্কে। একজন প্রসিকিউটরের সাথে তার খাস কামরায় আসামী পক্ষের অনুপস্থিতিতে মামলার কার্যক্রম   সম্পর্কে আলোচনা করেছেন। এরপর এই  ট্রাইব্যুনালের আর কোন গ্রহণযোগ্যতা এবং বিশ্বাসযোগ্যতা থাকতে পারেনা, নেই। এমতাবস্থায় বিচারপতি নিজামুল হক নাসিম বাংলাদেশ এর সংবিধান, সংবিধানের অধীনে প্রণীত বিচারপতিদের আচরনবিধি, সুপ্রীম কোর্টের বিচারপতি হিসেবে তার শপথ ভঙ্গ করেছেন। ট্রাইব্যুনালের চেয়ারম্যান হিসেবে এবং সুপ্রীম কোর্টের বিচপরপতি হিসেবে তার অনতিবিলম্বে পদত্যাগ  দাবি করছি।  যত তাড়াতাড়ি তিনি পদত্যাগ করবেন দেশ জাতি বিচার বিভাগ এবং তার নিজের জন্য ততই মঙ্গল।

সংবাদ সম্মেলনে আরো উপস্থিত ছিলেন বার কাউন্সিলের এক্সিকিউটিভ কমিটির চেয়ারম্যান সাবেক এটর্নি জেনারেল এজে মোহাম্মদ আলী, বার কাউন্সিলের মেম্বার গোলাম মোস্তফা খান, বার কাউন্সিলের এনরোলমেন্ট কমিটির চেয়ারম্যান মাহবুব হোসেন খোকন এমপি।

কোন মন্তব্য নেই:

একটি মন্তব্য পোস্ট করুন