Mehedy Hasan
মাওলানা সাঈদীর বিরুদ্ধে রাষ্ট্রপক্ষ থেকে ৬৮ জন মূল সাক্ষীর তালিকা দেয়া হয়েছে আসামী পক্ষের আইনজীবীদের। মাওলানা সাঈদীর আইনজীবীরা এই ৬৮ জন সাক্ষীর বিষয়ে প্রস্তুতি নেন তাদের জেরা করার জন্য। কিন্তু রাষ্ট্রপক্ষের তদন্ত সংস্থা এবং আইনজীবীরা মিলে এই ৬৮ জন সাক্ষীর মধ্য থেকে মাত্র ২০ জন সাক্ষী আদালতে হাজির করতে সাক্ষম হন। এই ২০ জন সাক্ষী হাজির করতেও তাদের অনেক কাঠখড় পোড়াতে হয়েছে। আদালতের তিরস্কার এবং বকাবাদ্য হজম করতে হয়েছে। বারবার সময় দেয়া সত্ত্বেও তারা সাক্ষী হাজির করতে ব্যর্থ হয়। সাক্ষী হাজিরে ব্যর্থতার কারনে দুইবার কোর্ট তাদের বিরুদ্ধে লিখিত আদেশ দিয়ে তিরস্কার করেন। অসংখ্যবার তাদের সময় দেয়া হয়েছে সাক্ষী হাজিরের জন্য। সাক্ষীর অভাবে পাঁচবার বিচার মুলতবির আদেশ দিতে হয়েছে।
২০১১ সালেল ৭ ডিসেম্বর মাওলানা সাঈদীর বিরুদ্ধে সাক্ষীদের জেরা শুরু হয় । জেরায় সাক্ষীদের সম্পর্কে চাঞ্চল্যকর সব তথ্য বের হয়ে আসে।
যে ২০ জন সাক্ষী রাষ্ট্রপক্ষ মাওলানা সাঈদীর বিরুদ্ধে হাজির করে তার মধ্যে পাঁচজনের বিরুদ্ধে জেল খাটার তথ্য বের হয়ে আসে। অপর আরো এক সাক্ষীর বিরুদ্ধে জেল খাটার অভিযোগ করেন মাওলানা সাঈদীর আইনজীবীরা। এ ছয়জন সাক্ষীর মধ্যে চারজনের বিরুদ্ধে চুরির মামলা হয়েছিল। একজন হত্যা প্রচেষ্টা মামলায় সাত মাস সাজাভোগ করেন। একজন সাক্ষী আদালতে নিজেই বলেছেন তিনি মোট চারবার জেলে গেছেন।
তিনজন সাক্ষী আদালতে স্বীকার করেছেন তারা মুক্তিযোদ্ধা নন। কিন্তু মামলা শুরু হবার পর তাদেরকে মুক্তিযোদ্ধা হিসেবে তালিকাভুক্ত করার জন্য স্থানীয় এমপি এম এ আউয়াল তাদের ডিও লেটার দিয়েছেন ।
কয়েকজন স্বীকার করেছেন তারা মামলা শুরুর পর সরকারের কাছ থেকে বিভিন্ন ধরনের সুযোগসুবিধা গ্রহণ করেছেন।
তাছাড়া কোন কোন সাক্ষীর বয়স ১৯৭১ সালে ৮ বছর ছিল। অন্য আরো অনেকের বয়স ছিল ১১ থেকে ১৫ বছরের মধ্যে। কোন কোন সাক্ষী স্থানীয় আওয়ামী লীগের নেতা ।
মামলার বাদীর যে পরিচয় বের হল জেরায় :
মামলার বাদী এবং প্রথম সাক্ষী মাহবুবুল আলম হাওলাদার চুরির মামলায় জেল খেটেছেন। এছাড়া স্ত্রীর যৌতুক মামলায় তার সাজা বহাল রয়েছে এবং বর্তমানে মামলাটি হাইকোর্টে বিচারাধীন রয়েছে।
সাক্ষী মাহবুবুল আলম হাওলাদার নিজেকে মুক্তিযোদ্ধা হিসেবে আদালতে দাবি করলেও তার বিরুদ্ধে ভুয়া মুুক্তিযোদ্ধার অভিযোগ আনা হয়েছে । জেরায় তিনি স্বীকার করেছেন বিএনপি আমলে তিনি মুক্তিযোদ্ধা হিসেবে তালিকাভুক্ত হয়েছেন। জিয়ানগর মুক্তিযোদ্ধা কমান্ড কাউন্সিল তাকে ভুয়া মুক্তিযোদ্ধা হিসেবে তালিকাভুক্তি করেছে বলে অভিযোগ রয়েছে। এমনকি পিরোজপুরের বর্তমান আওয়ামী লীগ এমপি এম এ আউয়ালের কাছে মাহবুবুল আলমের বিরুদ্ধে ভয়া মুক্তিযোদ্ধার অভিযোগ করা হলে তিনি তার ভাতা বন্ধের মৌখিক নির্দেশ দেন বলেও আদালতকে জানান মাওলানা সাঈদীর আইনজীবীরা।
জেরায় আরো বের হয়ে আসছে ১৯৭১ সালে সার্টিফিকেট অনুযায়ী সাক্ষী মাহবুবুল আলমের বয়স ছিল মাত্র ১২ বছর। কিন্তু সাত নভেম্বর সাক্ষ্য দেয়ার সময় তিনি তার বয়স ৬০ বছর বলে উল্লেখ করেছেন। এ হিসেবে ১৯৭১ সালে তার বয়স হয় ২০ বছর। সার্টিফিকেটে ঐ সময় তার বয়স ১২ বছর হওয়া বিষয়ে সাক্ষী মাহবুবুল আলম বলেছেন লেখাপড়ার ক্ষেত্রে বয়স এরকম হতে পারে।
সাক্ষী মাহবুবুল আলম স্বীকার করেছেন ২০০৪ সালে প্রধানমন্ত্রীর কাছে এবং ২০০৫ সালে পিরোজপুর জেলার ডিসির কাছে একজন অসহায় বেকার মুক্তিযোদ্ধা হিসেবে আর্থিক সাহায্য চেয়ে যে আবেদন করেন তাতে তিনি মাওলানা দেলাওয়ার হোসাইন সাঈদীর সুপারিশ গ্রহণ করেন। এ বিষয়ক প্রশ্নের
জবাবে তিনি আদালতে বলেন ব্যক্তি সাঈদী নয় একজন এমপি হিসেবে তখন তার কাছ থেকে সুপারিশ নেয়া হয়।
মাওলানা সাঈদীর আইনজীবীরা সাক্ষী মাহবুবুল আলমকে প্রশ্ন করেন মুক্তিযোদ্ধা তালিকা থেকে নাম বাদ দেয়া এবং হিসেবে ভাতা বন্ধ করে দেয়ার হুমকিতে তিনি এমপির কাছে গিয়ে কাকুতি মিনতি করেণ এবং তার কথামত চলার অঙ্গীকার করেন। এমপির চাপেই তিনি মাওলানা সাঈদীর বিরুদ্ধে মিথ্যা মামলা করেছেন । সাক্ষ্য দেয়ার বিনিময়ে তিনি পাকা বাড়ি করেছেন। সাক্ষী মাহবুবুল আলম এসব অভিযোগ সত্য নয় বলে দাবি করেণ। তবে দ্বিতীয় স্ত্রী সরকারী সুযোগ পাচ্ছে বলে স্বীকার করেণ।
তবে মাহবুবুল আলম হাওলাদারের বিরুদ্ধেও রাষ্ট্রপক্ষ থেকে আর্থিক সুবিধা গ্রহণের অভিযোগ করেছেন মাওলানা সাঈদীর আইনজীবীরা।
দ্বিতীয় সাক্ষী রুহুল আমিন নবিনের পরিচয়:
মাওলানা সাঈদীর বিরুদ্ধে দ্বিতীয় সাক্ষী ছিলেন রুহুল আমিন নবিন। মাওলানা সাঈদীর আইনজীবীরা সাক্ষী রুহুল আমিনের বিরুদ্ধে বিদ্যুতের মিটার টেম্পারিংয়ের কারনে বিদ্যুৎ চুরির মামলায় জেল খাটার অভিযোগ আনেন। এছাড়া তিনি পূবালী ব্যাংক থেকে লোন নিয়ে বরফ কল স্থাপন করেন এবং ব্যাংক লোন শোধ না করার কারনে তার বিরুদ্ধে মামলা হয়। তার বরফ কল নিলামে তুলে পারেরহাট বাজারে ঢোল পেটানো হয়। বর্তমান মামলায় সাক্ষী দেয়ার বিনিময়ে সাক্ষী রুহুল আমিনের বিপুল অংকের সুদ মওকুফ করা হয়েছে এবং সরকারের কাছ থেকে আর্থিক সুবিধা পেয়ে চলতি মাসেই তিনি ব্যাংকের আসল লোন শোধ করেছেন বলে আদালতকে জানান মাওলানা সাঈদীর আইনজীবীরা। এছাড়া বিদ্যুৎ বিলের মামলায় অপরাধ স্বীকার করে জরিমানা দিয়ে তিনি মুক্তি পান বলেও জানানো হয়।
মামলা এবং সাজাপ্রাপ্ত অন্যান্য সাক্ষীদের বিবরন :
জেরায় বের হয়ে আসে সুলতান আহমদ নামে এক সাক্ষী তিনটি চুরির মামলার আসামী । কলা চুরির মামলায় পিরোজপুর মেজিস্ট্রেট আদালত জেল দেন সুলতান আহমদকে। পিরোজপুর জজ কোর্ট সে সাজা বহাল রাখেন। বর্তমান হাইকোর্টে বিচারাধীন রয়েছে মামলাটি। এছাড়া সুলতান আহমদের বিরুদ্ধে ট্রলার চুরির দায়ে অপর দুটি মামলা বিচারাধীন রয়েছে বরিশালে।
অষ্টম সাক্ষী মোস্তফা হাওলাদার ও চুরির দায়ে তিন মাস সাজা ভোগ করেন। পিরোজপুর দ্বিতীয় শ্রেণীর মেজিস্ট্রেট আদালত সাক্ষী মোস্তফা হাওলাদারকে তিন মাসের সশ্রম কারাদণ্ড দেন। তিনি ১৯৭১ সালে পারেরহাট বাজারে বুটমুড়ির/ছোলামুড়ির বিক্রি করতেন ফেরি করে। জেরার সময় তিনি স্বীকার করেছেন তার ভাইয়ের পরিবারে হামলার কারনে তার ভাবী তার বিরুদ্ধে মামলা করেছিল। তবে সে মামলা থেকে তিনি খালাস পেয়েছেন। অন্যদিকে জন্ম সনদ অনুযায়ী ১৯৭১ সালে সাক্ষীর বয়স ছিল ১৩ বছর । জেরায় অষ্টম সাক্ষী মোস্তফা হাওলাদার একাধিক স্ত্রী থাকার কথা স্বীকার করেছেন ।
এদিকে সপ্তম সাক্ষী মফিজ উদ্দিন স্বীকার করেছেন তার শাশুড়ি ভিক্ষা করে। মাওলানা সাঈদীর আইনজীবী বলেন তার স্ত্রীও ভিক্ষা করে। কিন্তু তিনি তা অস্বীকার করেন। মফিজ উদ্দিন ১৯৭১ সালের আগে মানকি পসারীদের বাড়ি কাজ করত। জেরায় বের হয়ে আসে তিনি ছিলেন নি:স্ব অসহায় একজন মানুষ। বিয়ের পর তিনি স্ত্রী নিয়ে শ্বশুর বাড়িতে একটি ঘরে বাস করতেন। শ্বশুর তাকে এক টুকরা জমিও দেন। কিন্তু সেই জমি বিক্রি করে প্রথম স্ত্রীকে ফেলে রেখে আরেকটি বিয়ে করেছেন এবং নতুন স্ত্রীর সাথে তিনি বসবাস করেন।
১৫ তম সাক্ষী সোলায়মান হোসেন বলেন, তিনি চারবার জেল খেটেছেন। ১৬ তম সাক্ষী জুলফিকার আলীর নাম পাওয়া গেছে একটি বইয়ের রাজাকার তালিকায়।
যশোরে গত ৪০ বছর ধরে দৈনিক সংবাদ পত্রিকার প্রতিনিধি হিসেবে কর্মরত যশোরের পরিরিচত সাংবাদিক লেখক এবং মুক্তিযোদ্ধা রুকুনউদ্দৌলাহ লিখিত ‘মুক্তিযুদ্ধে যশোর’ শীর্ষক বই আদালতকে দেখান মাওলানা সাঈদীর আইনজীবীরা। বইয়ের ১৬৮ পৃষ্ঠায় রাজাকারদের তালিকায় সাক্ষী জুলফিকার আলীর নাম রয়েছে বলে জানান তারা।
১৬ তম সাক্ষী জুলফিকার আলী বর্তমানে বাঘারপাড়া থানা আওয়ামী লীগের সাধারন সম্পাদক। ১৫ তম সাক্ষী সোলায়মান হোসেনও দীর্ঘদিন একই থানার আওয়ামী লীগের সেক্রেটারি ছিলেন।
১১তম সাক্ষী আব্দুল জলিল শেখ জেরায় স্বীকার করেছেন তিনি তার দ্বিতীয় স্ত্রীকে জবাই করে হত্যা প্রচেষ্টা মামলায় সাত মাস হাজত খেটেছেন।
এছাড়া সাক্ষী আব্দুল জলিলের দ্বিতীয় স্ত্রীকে যৌতুকের জন্য অত্যাচারের কারনে তার বিরুদ্ধে যৌতুক মামলা হয়। সে মামলায় তিনি যৌতুকের জন্য স্ত্রীকে আর নির্যাতন করবেননা, যৌতুক দাবি করবেননা, স্ত্রীকে স্ত্রীর মর্যাদা দেবেন এবং খোরপোষ দেবেন এই মর্মে আদালতে হাজির হয়ে বন্ড সই করে তিনি মামলা নিষ্পত্তি করেন বলে জানিয়েছেন জেরার সময়।
যৌতুক মামলা থেকে অব্যাহতি পাবার পর সাক্ষী আব্দুল জলিল তার দ্বিতীয় স্ত্রী গোলেনুরকে চাকু দিয়ে গলা কেটে হত্যার চেষ্টা চালান বলে তার বিরুদ্ধে ৩০৭ এবং ৩২৬ ধারায় মামলা হয়।
সাক্ষী আব্দুল জলিল শেখের দ্বিতীয় স্ত্রীর নাম গোলেনুর বেগম। গোলেনুর বেগমের মা মতিজান বিবি। দ্বিতীয় স্ত্রীকে জবাই করে হত্যা প্রচেষ্টার অভিযোগে আব্দুল জলিলের বিরুদ্ধে ৩০৭ এবং ৩২৬ ধারায় মামলা করেন গোলেনুরের মা মতিজান বিবি। মামলার তারিখ ১৪/১১/১৯৯১।
শ্বাশুড়ীর মামলার পর সাক্ষী আব্দুল জলিল তার দ্বিতীয় স্ত্রী গোলেনুর বেগম, গোলেনুর বেগমের মা মতিজান বিবি, শ্যালক, শ্বশুর এবং অপর দুই ভায়রার বিরুদ্ধে হত্যা মামলা দায়ের করেন পিরোজপুর সদর থানায়। পিরোজপুর থানার দারোগা আদালতে দাখিল করা তদন্ত প্রতিবেদনে উল্লেখ করেন, আব্দুল জলিল তার স্ত্রী এবং শ্বাশুড়ীসহ অন্যান্যদের বিরুদ্ধে যে মামলা করেছেন তা একটি মিথ্যা মামলা । শত্রুতার কারনে আব্দুল জলিল তার দ্বিতীয় স্ত্রী, শ্বাশুড়ী এবং অন্যান্যদের বিরুদ্ধে এ মিথ্যা মামলা দায়ের করেন । জেরার সময় সাক্ষী আব্দুল জলিলও বলেছেন তার মামলাটিকে মিথ্যা মামলা আখ্যায়িত করে দারোগা চার্জশিট দিয়েছে।
সাক্ষী আব্দুল জলিল জেরার সময় জানান, তার দ্বিতীয় স্ত্রীর মা মতিজান বিবির মামলায় তিনি হাজতে থাকা অবস্থায় এলাকার চেয়ারম্যান মেম্বার এবং গন্যমান্য ব্যক্তিরা বসে একটি আপোস মীমামংসা করেন। সে অনুযায়ী দুই পক্ষ মামলা উঠিয়ে নিয়ে নিষ্পত্তি করে এবং তিনি হত্যা প্রচেষ্টা মামলা থেকে অব্যাহতি পান।
সাক্ষী জেরার সময় আরো স্বীকার করেছেন তিনি তিনটি বিয়ে করেছেন। মুক্তিযোদ্ধা হিসেবে তালিকাভুক্ত হওয়ার জন্য দরখাস্ত করেছেন। গত এক বছর ধরে তিনি বর্তমান সরকারের একটি বাড়ি একটি খামার প্রকল্পের একজন সুবিধাভোগী সদস্য।
মামলার বাদী এবং প্রথম সাক্ষী মাহবুবুল আলম হাওলদারও চুরির দায়ে জেল খেটেছেন। দ্বিতীয় সাক্ষী রুহুল আমিন নবিনের বিরুদ্ধেও জেলা খাটার অভিযোগ রয়েছে।
সাক্ষ্য দেয়ার বিনিময়ে মুক্তিযোদ্ধা হলেন তারা:
যে তিনজন সাক্ষী মুক্তিযোদ্ধা না হওয়া সত্ত্বেও মামলা শুরুর পর মুক্তিযোদ্ধা হিসেবে তালিকাভুক্ত করার জন্য স্থানীয় এমপি ডিও লেটার দিয়েছেন তারা হলেন, চতুর্থ সাক্ষী সুলতান আহমেদ হাওলাদার, ষষ্ঠ সাক্ষী মানিক পসারী এবং সপ্তম সাক্ষী মফিজ উদ্দিন পসারী। জেরার সময় এরা প্রত্যেকেই স্বীকার করেছেন তারা কখনো মুক্তিযুদ্ধে অংশগ্রহণ করেননি। অথচ এমপি এ. কে. এম. এ. আউয়াল তাদের মুক্তিযোদ্ধা আখ্যায়িত করে যে সার্টিফিকেট দিয়েছেন তাতে এ তিনজনের প্রত্যেকের ক্ষেত্রে লেখা রয়েছে “সে একজন প্রকৃত মুক্তিযোদ্ধা। ১৯৭১ সালে স্বাধীনতা যুদ্ধে সক্রিয়ভাবে অংশগ্রহণ করিয়া আমার সাথে থাকিয়া সুন্দরবন এলাকায় বীরত্বের সাথে পাক হানাদার বাহিনীর বিরুদ্ধে সম্মুখ যুদ্ধ করিয়াছে। ” প্রত্যেককেই ১৩/৯/২০১০ তারিখে সার্টিফিকেট ইস্যু করা হয়েছে।
সাক্ষীদের বয়স কেলেঙ্কারী :
১৩ তম সাক্ষী গৌরাঙ্গ চন্দ্র সাহা সাক্ষ্য দেয়ার সময় বলেন, ১৯৭১ সালে তার বয়স ছিল ২৭ বছর। তবে মাওলানা সাঈদীর আইনজীবীরা জেরার সময় ভোটার লিস্টের সূত্র উল্লেখ করে আদালতে বলেন সাক্ষী ভোটার লিস্টে তার জন্ম তারিখ উল্লেখ করেছেন ১৯৬৩ সালের ৮ জুলাই। সে হিসেবে ১৯৭১ সালে মুক্তিযুদ্ধ শুরুর সময় তার বয়স দাড়ায় ৭ বছর আট মাস ।
গৌরাঙ্গ চন্দ্রের বাড়ি পারেরহাটে। স্বাধীনতার পূর্ব থেকেই পারেরহাট বাজারে তাদের মুদি দোকানের ব্যবসা।
মামলার বাদী এবং প্রথম সাক্ষী মাহবুবুল আলম হাওলাদারের বয়স ১৯৭১ সালে ছিল ১২ বছর। মাওলানা সাঈদীর আইনজীবীর জেরার জবাবে তিনি জানান এসএসসির নিবন্ধনে তার জন্ম তারিখ ছিল ২০ মার্চ ১৯৫৯ সাল। অথচ গত সাত ডিসেম্বর নভেম্বর তিনি যখন আদালতে সাক্ষ্য দেন তখন তিনি তার বয়স উল্লেখ করেছিলেন ৬০ বছর। সে হিসেবে ১৯৭১ সালে তার বয়স হয় ২০ বছর এবং জন্ম তারিখ হওয়ার কথা ১৯৫১ সাল। কিন্তু এসএসসি নিবন্ধন অনুযায়ী ১৯৭১ সালে তার বয়স ছিল ১২ বছর।
এভাবে বেশ কয়েকজন সাক্ষীর বয়স দেখা যায় ১৯৭১ সালে ছিল ১২ থেকে ১৩ বছর। কিন্তু তারা নিজেরাই ট্রাইব্যুনালে সাক্ষ্য দেয়ার সময় বেশি বয়স দাবি করেছেন যা জেরায় বের হয়ে আসে।
মাওলানা সাঈদীর বিরুদ্ধে রাষ্ট্রপক্ষ থেকে ৬৮ জন মূল সাক্ষীর তালিকা দেয়া হয়েছে আসামী পক্ষের আইনজীবীদের। মাওলানা সাঈদীর আইনজীবীরা এই ৬৮ জন সাক্ষীর বিষয়ে প্রস্তুতি নেন তাদের জেরা করার জন্য। কিন্তু রাষ্ট্রপক্ষের তদন্ত সংস্থা এবং আইনজীবীরা মিলে এই ৬৮ জন সাক্ষীর মধ্য থেকে মাত্র ২০ জন সাক্ষী আদালতে হাজির করতে সাক্ষম হন। এই ২০ জন সাক্ষী হাজির করতেও তাদের অনেক কাঠখড় পোড়াতে হয়েছে। আদালতের তিরস্কার এবং বকাবাদ্য হজম করতে হয়েছে। বারবার সময় দেয়া সত্ত্বেও তারা সাক্ষী হাজির করতে ব্যর্থ হয়। সাক্ষী হাজিরে ব্যর্থতার কারনে দুইবার কোর্ট তাদের বিরুদ্ধে লিখিত আদেশ দিয়ে তিরস্কার করেন। অসংখ্যবার তাদের সময় দেয়া হয়েছে সাক্ষী হাজিরের জন্য। সাক্ষীর অভাবে পাঁচবার বিচার মুলতবির আদেশ দিতে হয়েছে।
২০১১ সালেল ৭ ডিসেম্বর মাওলানা সাঈদীর বিরুদ্ধে সাক্ষীদের জেরা শুরু হয় । জেরায় সাক্ষীদের সম্পর্কে চাঞ্চল্যকর সব তথ্য বের হয়ে আসে।
যে ২০ জন সাক্ষী রাষ্ট্রপক্ষ মাওলানা সাঈদীর বিরুদ্ধে হাজির করে তার মধ্যে পাঁচজনের বিরুদ্ধে জেল খাটার তথ্য বের হয়ে আসে। অপর আরো এক সাক্ষীর বিরুদ্ধে জেল খাটার অভিযোগ করেন মাওলানা সাঈদীর আইনজীবীরা। এ ছয়জন সাক্ষীর মধ্যে চারজনের বিরুদ্ধে চুরির মামলা হয়েছিল। একজন হত্যা প্রচেষ্টা মামলায় সাত মাস সাজাভোগ করেন। একজন সাক্ষী আদালতে নিজেই বলেছেন তিনি মোট চারবার জেলে গেছেন।
তিনজন সাক্ষী আদালতে স্বীকার করেছেন তারা মুক্তিযোদ্ধা নন। কিন্তু মামলা শুরু হবার পর তাদেরকে মুক্তিযোদ্ধা হিসেবে তালিকাভুক্ত করার জন্য স্থানীয় এমপি এম এ আউয়াল তাদের ডিও লেটার দিয়েছেন ।
কয়েকজন স্বীকার করেছেন তারা মামলা শুরুর পর সরকারের কাছ থেকে বিভিন্ন ধরনের সুযোগসুবিধা গ্রহণ করেছেন।
তাছাড়া কোন কোন সাক্ষীর বয়স ১৯৭১ সালে ৮ বছর ছিল। অন্য আরো অনেকের বয়স ছিল ১১ থেকে ১৫ বছরের মধ্যে। কোন কোন সাক্ষী স্থানীয় আওয়ামী লীগের নেতা ।
মামলার বাদীর যে পরিচয় বের হল জেরায় :
মামলার বাদী এবং প্রথম সাক্ষী মাহবুবুল আলম হাওলাদার চুরির মামলায় জেল খেটেছেন। এছাড়া স্ত্রীর যৌতুক মামলায় তার সাজা বহাল রয়েছে এবং বর্তমানে মামলাটি হাইকোর্টে বিচারাধীন রয়েছে।
সাক্ষী মাহবুবুল আলম হাওলাদার নিজেকে মুক্তিযোদ্ধা হিসেবে আদালতে দাবি করলেও তার বিরুদ্ধে ভুয়া মুুক্তিযোদ্ধার অভিযোগ আনা হয়েছে । জেরায় তিনি স্বীকার করেছেন বিএনপি আমলে তিনি মুক্তিযোদ্ধা হিসেবে তালিকাভুক্ত হয়েছেন। জিয়ানগর মুক্তিযোদ্ধা কমান্ড কাউন্সিল তাকে ভুয়া মুক্তিযোদ্ধা হিসেবে তালিকাভুক্তি করেছে বলে অভিযোগ রয়েছে। এমনকি পিরোজপুরের বর্তমান আওয়ামী লীগ এমপি এম এ আউয়ালের কাছে মাহবুবুল আলমের বিরুদ্ধে ভয়া মুক্তিযোদ্ধার অভিযোগ করা হলে তিনি তার ভাতা বন্ধের মৌখিক নির্দেশ দেন বলেও আদালতকে জানান মাওলানা সাঈদীর আইনজীবীরা।
জেরায় আরো বের হয়ে আসছে ১৯৭১ সালে সার্টিফিকেট অনুযায়ী সাক্ষী মাহবুবুল আলমের বয়স ছিল মাত্র ১২ বছর। কিন্তু সাত নভেম্বর সাক্ষ্য দেয়ার সময় তিনি তার বয়স ৬০ বছর বলে উল্লেখ করেছেন। এ হিসেবে ১৯৭১ সালে তার বয়স হয় ২০ বছর। সার্টিফিকেটে ঐ সময় তার বয়স ১২ বছর হওয়া বিষয়ে সাক্ষী মাহবুবুল আলম বলেছেন লেখাপড়ার ক্ষেত্রে বয়স এরকম হতে পারে।
সাক্ষী মাহবুবুল আলম স্বীকার করেছেন ২০০৪ সালে প্রধানমন্ত্রীর কাছে এবং ২০০৫ সালে পিরোজপুর জেলার ডিসির কাছে একজন অসহায় বেকার মুক্তিযোদ্ধা হিসেবে আর্থিক সাহায্য চেয়ে যে আবেদন করেন তাতে তিনি মাওলানা দেলাওয়ার হোসাইন সাঈদীর সুপারিশ গ্রহণ করেন। এ বিষয়ক প্রশ্নের
জবাবে তিনি আদালতে বলেন ব্যক্তি সাঈদী নয় একজন এমপি হিসেবে তখন তার কাছ থেকে সুপারিশ নেয়া হয়।
মাওলানা সাঈদীর আইনজীবীরা সাক্ষী মাহবুবুল আলমকে প্রশ্ন করেন মুক্তিযোদ্ধা তালিকা থেকে নাম বাদ দেয়া এবং হিসেবে ভাতা বন্ধ করে দেয়ার হুমকিতে তিনি এমপির কাছে গিয়ে কাকুতি মিনতি করেণ এবং তার কথামত চলার অঙ্গীকার করেন। এমপির চাপেই তিনি মাওলানা সাঈদীর বিরুদ্ধে মিথ্যা মামলা করেছেন । সাক্ষ্য দেয়ার বিনিময়ে তিনি পাকা বাড়ি করেছেন। সাক্ষী মাহবুবুল আলম এসব অভিযোগ সত্য নয় বলে দাবি করেণ। তবে দ্বিতীয় স্ত্রী সরকারী সুযোগ পাচ্ছে বলে স্বীকার করেণ।
তবে মাহবুবুল আলম হাওলাদারের বিরুদ্ধেও রাষ্ট্রপক্ষ থেকে আর্থিক সুবিধা গ্রহণের অভিযোগ করেছেন মাওলানা সাঈদীর আইনজীবীরা।
দ্বিতীয় সাক্ষী রুহুল আমিন নবিনের পরিচয়:
মাওলানা সাঈদীর বিরুদ্ধে দ্বিতীয় সাক্ষী ছিলেন রুহুল আমিন নবিন। মাওলানা সাঈদীর আইনজীবীরা সাক্ষী রুহুল আমিনের বিরুদ্ধে বিদ্যুতের মিটার টেম্পারিংয়ের কারনে বিদ্যুৎ চুরির মামলায় জেল খাটার অভিযোগ আনেন। এছাড়া তিনি পূবালী ব্যাংক থেকে লোন নিয়ে বরফ কল স্থাপন করেন এবং ব্যাংক লোন শোধ না করার কারনে তার বিরুদ্ধে মামলা হয়। তার বরফ কল নিলামে তুলে পারেরহাট বাজারে ঢোল পেটানো হয়। বর্তমান মামলায় সাক্ষী দেয়ার বিনিময়ে সাক্ষী রুহুল আমিনের বিপুল অংকের সুদ মওকুফ করা হয়েছে এবং সরকারের কাছ থেকে আর্থিক সুবিধা পেয়ে চলতি মাসেই তিনি ব্যাংকের আসল লোন শোধ করেছেন বলে আদালতকে জানান মাওলানা সাঈদীর আইনজীবীরা। এছাড়া বিদ্যুৎ বিলের মামলায় অপরাধ স্বীকার করে জরিমানা দিয়ে তিনি মুক্তি পান বলেও জানানো হয়।
মামলা এবং সাজাপ্রাপ্ত অন্যান্য সাক্ষীদের বিবরন :
জেরায় বের হয়ে আসে সুলতান আহমদ নামে এক সাক্ষী তিনটি চুরির মামলার আসামী । কলা চুরির মামলায় পিরোজপুর মেজিস্ট্রেট আদালত জেল দেন সুলতান আহমদকে। পিরোজপুর জজ কোর্ট সে সাজা বহাল রাখেন। বর্তমান হাইকোর্টে বিচারাধীন রয়েছে মামলাটি। এছাড়া সুলতান আহমদের বিরুদ্ধে ট্রলার চুরির দায়ে অপর দুটি মামলা বিচারাধীন রয়েছে বরিশালে।
অষ্টম সাক্ষী মোস্তফা হাওলাদার ও চুরির দায়ে তিন মাস সাজা ভোগ করেন। পিরোজপুর দ্বিতীয় শ্রেণীর মেজিস্ট্রেট আদালত সাক্ষী মোস্তফা হাওলাদারকে তিন মাসের সশ্রম কারাদণ্ড দেন। তিনি ১৯৭১ সালে পারেরহাট বাজারে বুটমুড়ির/ছোলামুড়ির বিক্রি করতেন ফেরি করে। জেরার সময় তিনি স্বীকার করেছেন তার ভাইয়ের পরিবারে হামলার কারনে তার ভাবী তার বিরুদ্ধে মামলা করেছিল। তবে সে মামলা থেকে তিনি খালাস পেয়েছেন। অন্যদিকে জন্ম সনদ অনুযায়ী ১৯৭১ সালে সাক্ষীর বয়স ছিল ১৩ বছর । জেরায় অষ্টম সাক্ষী মোস্তফা হাওলাদার একাধিক স্ত্রী থাকার কথা স্বীকার করেছেন ।
এদিকে সপ্তম সাক্ষী মফিজ উদ্দিন স্বীকার করেছেন তার শাশুড়ি ভিক্ষা করে। মাওলানা সাঈদীর আইনজীবী বলেন তার স্ত্রীও ভিক্ষা করে। কিন্তু তিনি তা অস্বীকার করেন। মফিজ উদ্দিন ১৯৭১ সালের আগে মানকি পসারীদের বাড়ি কাজ করত। জেরায় বের হয়ে আসে তিনি ছিলেন নি:স্ব অসহায় একজন মানুষ। বিয়ের পর তিনি স্ত্রী নিয়ে শ্বশুর বাড়িতে একটি ঘরে বাস করতেন। শ্বশুর তাকে এক টুকরা জমিও দেন। কিন্তু সেই জমি বিক্রি করে প্রথম স্ত্রীকে ফেলে রেখে আরেকটি বিয়ে করেছেন এবং নতুন স্ত্রীর সাথে তিনি বসবাস করেন।
১৫ তম সাক্ষী সোলায়মান হোসেন বলেন, তিনি চারবার জেল খেটেছেন। ১৬ তম সাক্ষী জুলফিকার আলীর নাম পাওয়া গেছে একটি বইয়ের রাজাকার তালিকায়।
যশোরে গত ৪০ বছর ধরে দৈনিক সংবাদ পত্রিকার প্রতিনিধি হিসেবে কর্মরত যশোরের পরিরিচত সাংবাদিক লেখক এবং মুক্তিযোদ্ধা রুকুনউদ্দৌলাহ লিখিত ‘মুক্তিযুদ্ধে যশোর’ শীর্ষক বই আদালতকে দেখান মাওলানা সাঈদীর আইনজীবীরা। বইয়ের ১৬৮ পৃষ্ঠায় রাজাকারদের তালিকায় সাক্ষী জুলফিকার আলীর নাম রয়েছে বলে জানান তারা।
১৬ তম সাক্ষী জুলফিকার আলী বর্তমানে বাঘারপাড়া থানা আওয়ামী লীগের সাধারন সম্পাদক। ১৫ তম সাক্ষী সোলায়মান হোসেনও দীর্ঘদিন একই থানার আওয়ামী লীগের সেক্রেটারি ছিলেন।
১১তম সাক্ষী আব্দুল জলিল শেখ জেরায় স্বীকার করেছেন তিনি তার দ্বিতীয় স্ত্রীকে জবাই করে হত্যা প্রচেষ্টা মামলায় সাত মাস হাজত খেটেছেন।
এছাড়া সাক্ষী আব্দুল জলিলের দ্বিতীয় স্ত্রীকে যৌতুকের জন্য অত্যাচারের কারনে তার বিরুদ্ধে যৌতুক মামলা হয়। সে মামলায় তিনি যৌতুকের জন্য স্ত্রীকে আর নির্যাতন করবেননা, যৌতুক দাবি করবেননা, স্ত্রীকে স্ত্রীর মর্যাদা দেবেন এবং খোরপোষ দেবেন এই মর্মে আদালতে হাজির হয়ে বন্ড সই করে তিনি মামলা নিষ্পত্তি করেন বলে জানিয়েছেন জেরার সময়।
যৌতুক মামলা থেকে অব্যাহতি পাবার পর সাক্ষী আব্দুল জলিল তার দ্বিতীয় স্ত্রী গোলেনুরকে চাকু দিয়ে গলা কেটে হত্যার চেষ্টা চালান বলে তার বিরুদ্ধে ৩০৭ এবং ৩২৬ ধারায় মামলা হয়।
সাক্ষী আব্দুল জলিল শেখের দ্বিতীয় স্ত্রীর নাম গোলেনুর বেগম। গোলেনুর বেগমের মা মতিজান বিবি। দ্বিতীয় স্ত্রীকে জবাই করে হত্যা প্রচেষ্টার অভিযোগে আব্দুল জলিলের বিরুদ্ধে ৩০৭ এবং ৩২৬ ধারায় মামলা করেন গোলেনুরের মা মতিজান বিবি। মামলার তারিখ ১৪/১১/১৯৯১।
শ্বাশুড়ীর মামলার পর সাক্ষী আব্দুল জলিল তার দ্বিতীয় স্ত্রী গোলেনুর বেগম, গোলেনুর বেগমের মা মতিজান বিবি, শ্যালক, শ্বশুর এবং অপর দুই ভায়রার বিরুদ্ধে হত্যা মামলা দায়ের করেন পিরোজপুর সদর থানায়। পিরোজপুর থানার দারোগা আদালতে দাখিল করা তদন্ত প্রতিবেদনে উল্লেখ করেন, আব্দুল জলিল তার স্ত্রী এবং শ্বাশুড়ীসহ অন্যান্যদের বিরুদ্ধে যে মামলা করেছেন তা একটি মিথ্যা মামলা । শত্রুতার কারনে আব্দুল জলিল তার দ্বিতীয় স্ত্রী, শ্বাশুড়ী এবং অন্যান্যদের বিরুদ্ধে এ মিথ্যা মামলা দায়ের করেন । জেরার সময় সাক্ষী আব্দুল জলিলও বলেছেন তার মামলাটিকে মিথ্যা মামলা আখ্যায়িত করে দারোগা চার্জশিট দিয়েছে।
সাক্ষী আব্দুল জলিল জেরার সময় জানান, তার দ্বিতীয় স্ত্রীর মা মতিজান বিবির মামলায় তিনি হাজতে থাকা অবস্থায় এলাকার চেয়ারম্যান মেম্বার এবং গন্যমান্য ব্যক্তিরা বসে একটি আপোস মীমামংসা করেন। সে অনুযায়ী দুই পক্ষ মামলা উঠিয়ে নিয়ে নিষ্পত্তি করে এবং তিনি হত্যা প্রচেষ্টা মামলা থেকে অব্যাহতি পান।
সাক্ষী জেরার সময় আরো স্বীকার করেছেন তিনি তিনটি বিয়ে করেছেন। মুক্তিযোদ্ধা হিসেবে তালিকাভুক্ত হওয়ার জন্য দরখাস্ত করেছেন। গত এক বছর ধরে তিনি বর্তমান সরকারের একটি বাড়ি একটি খামার প্রকল্পের একজন সুবিধাভোগী সদস্য।
মামলার বাদী এবং প্রথম সাক্ষী মাহবুবুল আলম হাওলদারও চুরির দায়ে জেল খেটেছেন। দ্বিতীয় সাক্ষী রুহুল আমিন নবিনের বিরুদ্ধেও জেলা খাটার অভিযোগ রয়েছে।
সাক্ষ্য দেয়ার বিনিময়ে মুক্তিযোদ্ধা হলেন তারা:
যে তিনজন সাক্ষী মুক্তিযোদ্ধা না হওয়া সত্ত্বেও মামলা শুরুর পর মুক্তিযোদ্ধা হিসেবে তালিকাভুক্ত করার জন্য স্থানীয় এমপি ডিও লেটার দিয়েছেন তারা হলেন, চতুর্থ সাক্ষী সুলতান আহমেদ হাওলাদার, ষষ্ঠ সাক্ষী মানিক পসারী এবং সপ্তম সাক্ষী মফিজ উদ্দিন পসারী। জেরার সময় এরা প্রত্যেকেই স্বীকার করেছেন তারা কখনো মুক্তিযুদ্ধে অংশগ্রহণ করেননি। অথচ এমপি এ. কে. এম. এ. আউয়াল তাদের মুক্তিযোদ্ধা আখ্যায়িত করে যে সার্টিফিকেট দিয়েছেন তাতে এ তিনজনের প্রত্যেকের ক্ষেত্রে লেখা রয়েছে “সে একজন প্রকৃত মুক্তিযোদ্ধা। ১৯৭১ সালে স্বাধীনতা যুদ্ধে সক্রিয়ভাবে অংশগ্রহণ করিয়া আমার সাথে থাকিয়া সুন্দরবন এলাকায় বীরত্বের সাথে পাক হানাদার বাহিনীর বিরুদ্ধে সম্মুখ যুদ্ধ করিয়াছে। ” প্রত্যেককেই ১৩/৯/২০১০ তারিখে সার্টিফিকেট ইস্যু করা হয়েছে।
সাক্ষীদের বয়স কেলেঙ্কারী :
১৩ তম সাক্ষী গৌরাঙ্গ চন্দ্র সাহা সাক্ষ্য দেয়ার সময় বলেন, ১৯৭১ সালে তার বয়স ছিল ২৭ বছর। তবে মাওলানা সাঈদীর আইনজীবীরা জেরার সময় ভোটার লিস্টের সূত্র উল্লেখ করে আদালতে বলেন সাক্ষী ভোটার লিস্টে তার জন্ম তারিখ উল্লেখ করেছেন ১৯৬৩ সালের ৮ জুলাই। সে হিসেবে ১৯৭১ সালে মুক্তিযুদ্ধ শুরুর সময় তার বয়স দাড়ায় ৭ বছর আট মাস ।
গৌরাঙ্গ চন্দ্রের বাড়ি পারেরহাটে। স্বাধীনতার পূর্ব থেকেই পারেরহাট বাজারে তাদের মুদি দোকানের ব্যবসা।
মামলার বাদী এবং প্রথম সাক্ষী মাহবুবুল আলম হাওলাদারের বয়স ১৯৭১ সালে ছিল ১২ বছর। মাওলানা সাঈদীর আইনজীবীর জেরার জবাবে তিনি জানান এসএসসির নিবন্ধনে তার জন্ম তারিখ ছিল ২০ মার্চ ১৯৫৯ সাল। অথচ গত সাত ডিসেম্বর নভেম্বর তিনি যখন আদালতে সাক্ষ্য দেন তখন তিনি তার বয়স উল্লেখ করেছিলেন ৬০ বছর। সে হিসেবে ১৯৭১ সালে তার বয়স হয় ২০ বছর এবং জন্ম তারিখ হওয়ার কথা ১৯৫১ সাল। কিন্তু এসএসসি নিবন্ধন অনুযায়ী ১৯৭১ সালে তার বয়স ছিল ১২ বছর।
এভাবে বেশ কয়েকজন সাক্ষীর বয়স দেখা যায় ১৯৭১ সালে ছিল ১২ থেকে ১৩ বছর। কিন্তু তারা নিজেরাই ট্রাইব্যুনালে সাক্ষ্য দেয়ার সময় বেশি বয়স দাবি করেছেন যা জেরায় বের হয়ে আসে।
কোন মন্তব্য নেই:
একটি মন্তব্য পোস্ট করুন