বৃহস্পতিবার, ১ আগস্ট, ২০১৩

জিয়াউদ্দিনের পেছনের চক্র খুঁজে বের করে শাস্তি দিতে হবে


৩১/১২/২০১২
বাংলাদেশ বার কাউন্সিলের  ভাইস চেয়ারম্যান স্কাইপ সংলাপ বিষয়ে বলেছেন  আহমেদ জিয়াউদ্দিনের পেছনে যে চক্র  কাজ করেছে, বিচারকে প্রহসনে পরিণত করেছে তাদের খুজে বের করে শাস্তির ব্যবস্থা করতে  হবে । কারণ জিয়াউদ্দিন এখানে একা কোন ব্যক্তি নয়। জিয়াউদ্দিনের পেছনে আরো অনেক জিয়াউদ্দিন আছে।  তার পেছনে বিরাট একটি  চক্র কাজ করেছে যারা  বিচার নিয়ে নাটক করেছে। তাদের শাস্তির আওতায় আনাতে হবে।

জামায়াতে ইসলামীর আমির মাওলানা মতিউর রহমান নিজামীর বিচার পুনরায় শুরুর আবেদনের ওপর গতকাল শুনানী পেশ করেন খন্দকার মাহবুব হোসেন। এসময় তিনি এ দাবি করেন ।  আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনাল-১ এ  পুনরায় বিচারের ওপর শুনানী চলছে।
শুনানীর সময় খন্দকার মাহবুব হোসেন বলেন, বিচারপতি নিজামুল হক বুঝতে পেরেছেন তিনি  অপরাধ করেছেন এবং সে কারনে তার দায়িত্ব স্বীকার করে পদত্যাগ করেছেন। সুতরাং তার রেখে যাওয়া কাজের ওপর ভিত্তি করে কিভাবে আপনারা এ বিচার এগিয়ে নিয়ে যাবেন? উচ্চ আদালতের মর্যাদা, সম্মান এবং ইজ্জতের স্বার্থে আবার নতুন করে বিচার শুরু করা উচিত।

তিনি বলেন, এটর্নি জেনারেল মাহবুবে আলম এখানে শুনানীতে অংশ নিয়ে বলেছেন বিচারপতি নিজামুল হক নাসিম কোন ভুল করেননি। ইকনোমিস্টের পক্ষ থেকে  বিচারপতি নিজামুল হক নাসিমকে ফোন করা হয়েছিল তখন তিনি তাদের বলেছিলেন তিনি বিচার নিয়ে বাইরের কারো সাথে আলোচনা করেননি। এমনকি বিচারপতিরা বিচারাধীন বিষয় নিয়ে তাদের স্ত্রীর সাথেও আলোচনা করেননা। কিন্তু স্কাইপ সংলাপে যা দেখা গেলো তা কি তার এই বক্তব্যকে সমর্থন করে? করেনা। খুবই লজ্জার বিষয় এটা।
খন্দকার মাহবুব উদ্দিন বলেন, চার্জ গঠনে যে  ভাষা ব্যবহার করা হয়েছে তা চেয়ারম্যানের নয়। এখানে চার্জ গঠন নিয়ে দুই পক্ষ যেসব যুক্তিতর্ক করেছেন তার ভিত্তিতে চার্জ  গঠন হয়নি। এটা বাইরে থেকে অহি আকারে নাজিল হয়েছে। এটা বাইরে থেকে এসেছে। বাইরে থেকে  আমদানি করা হয়েছে। এ চার্জশিট বিচারপতি নিজামুল হক নাসিমের নয়।  এখানে তার কোন বিচারকি বুদ্ধি বিবেচনা খাটানো হয়নি। জুড়িশিয়াল মাইন্ড প্রয়োগ করা হয়নি। তাই এ চার্জ থাকতে পারেনা। আপনারা  বাইরে থেকে পাঠানো চার্জ এবং এখানে চার্জ গঠন করে যে আদেশ দেয়া হয়েছে তা মিলিয়ে দেখলে বুঝতে পারবেন কিভাবে বাইরে থেকে চার্জ গঠনের ড্রাফট ইমেইল করে পাঠানো হয়েছে এবং তা জুড়িশিয়াল আকারে চালিয়ে দেয়া হয়েছে। জিয়া উদ্দিন এখানে আসলে বলির পাঠা মাত্র।  জিয়াউদ্দিনের পেছনে আরো অনেক জিয়া উদ্দিন আছে।  পেছনে বিরাট চক্র কাজ করেছে। তাদের সবাইকে খুজে বের করে বিচারের আওতায় আনা উচিত বিচার নিয়ে প্রহসন করার অপরাধে।

তিনি বলেন, আপনারা ট্রাইব্যুনালের পবিত্রতা রক্ষা   করেন। আমরা এর পবিত্রতা নিয়ে উদ্বিগ্ন। সারা বিশ্ব এর দিকে তাকিয়ে আছে।  ট্রাইব্যুনালে যা হয়েছে তাতে একজন আইনজীবী হিসেবে আমি এবং আমার বন্ধুরা  উদ্বিগ্ন।
খন্দকার মাহবুব হোসেন বলেন, আইনের  ২ ধারায় বলা আছে ট্রাইব্যুনাল স্বাধীন হবে এবং বিচারপতিরা স্বাধীনভাবে ন্যায় বিচার নিশ্চিত করবেন।
আামার প্রশ্ন এখানে যে চার্জ গঠন করা হয়েছে তা কি স্বাধীনভাবে করা হয়েছে? এটা স্বাধীনভাবে করা হয়নি। যদি স্বাধীনভাবে চার্জ গঠিত না হয়ে থাকে  তাহলে সেখানে জুড়িশিয়াল মাইন্ডের কোন প্রতিফলন হয়নি। বাংলাদেশ জামায়াতে ইসলামী একটি নিবন্ধিত বৈধ রাজনৈতিক দল। কিন্তু চার্জে সেই দলকেও অভিযুক্তি করা হয়েছে।

স্কাইপ সংলাপ বিষয়ে খন্দকার মাহবুব হোসেন বলেন বিচারপতি নিজামুল হক তার বিচারপতিদেরও অপমান করে কথা বলেছেন। রাষ্ট্রপক্ষের আইনজীবীদেরও অপমান করেছেন।

খন্দকার মাহবুব হোসেন বলেন, আপানরা এমন একটা ব্যবস্থা করুন যাতে আমাদের পরবর্তী প্রজন্ম গর্ববোধ করতে পারে আমাদের রেখে যাওয়া বিচার ব্যবস্থা সম্পর্কে। তাদের মাথা নত না হয় এবং তারা লজ্জিত হয় এমন কিছু যেন আমরা রেখে না যাই।
তিনি বলেন, ট্রাইব্যুনাল আইনের ৬ (৬) ধারায় বলা আছে শুধুমাত্র  বা নিছক ট্রাইব্যুনালের  কোন সদস্য পরিবর্তন হলে পুনরায় শুনানী বা সাক্ষ্য গ্রহনের বাধ্য থাকবেনা ট্রাইব্যুনাল। কিন্তু আপনারা বিবেচনা   করে দেখেন  বিচারপতি নিজামুল হক নাসিমের চলে যাওয়া  কোন নিছক পরিবর্তন কি-না।  কোন পরিস্থিতিতে এ পরিবর্তন হয়েছে। আমাদের মতে চেয়ারম্যন যে কারনে চলে গেলেন  তা কোন নিছক কারনে নয়। এর পেছনে ভয়াবহ ঘটনা রয়েছে। সে কারনে  এ বিচার পুনরায় শুরু করা দরকার।

আজ যাদের বিচার হচ্ছে তারা দালাল  আইনে অভিযুক্ত নন :
খন্দকার মাহবুব হোসেন তার যুক্তি পেশ শেষ করার পর রাষ্ট্রপক্ষে এটর্নি জেনারেল মাহবুবে আলম বলেন,  ১৯৭২ সালে দেশীয় সহযোগীদের বিচারের জন্য যে দালাল আইন হয়েছিল তার অধীনে   গঠিত ট্রাইব্যুনালের চিফ প্রসিকিউটর ছিলেন খন্দকার মাহবুব হোসেন। বঙ্গবন্ধ শেখ মুজিবুর রহমান অত্যন্ত বড় দায়িত্ব দিয়ে  তাকে এ পদে নিযুক্ত করেছিলেন। খন্দকার মাহবুব সাহেব বেশ ভালভাবে সে দায়িত্ব পালন করেছিলেন এবং তখন অনেক দালালের সাজাও হয়েছিল। কিন্তু যে মাহবুব হোসেন ১৯৭২ সালে দালালদের বিচারের জন্য গঠিত ট্রাইব্যুনালে রাষ্ট্রপক্ষের চিফ প্রসিকিউটর ছিলেন সেই মাহবুব সাহেব আজ আবার সেই তাদেরই পক্ষ হয়ে এখানে এসেছেন কথা বলার জন্য। তিনি কি এটা করতে পারেন? এটা কি পেশাগত আচরনের মধ্যে পড়ে?

এর জবাবে খন্দকার মাহবুব হোসেন বলেন, ১৯৭২ সালে আমরা ৬২ হাজার পাকিস্তানী সৈনিকদের মধ্য থেকে ১৯৫ জনকে যুদ্ধাপরাধী হিসেবে চিহ্নিত করেছিলাম। কিন্তু তাদের  ছেড়ে দেয়া হল।  এরপর দালাল আইনে কিছু লোককে সাজা দেয়ার পর এ বিচার নিয়ে একটি কঠিন অবস্থার সৃষ্টি হল। দেখা গেল ছেলে মুক্তিযোদ্ধা বাবা পিস কমিটির চেয়ারম্যান।  অবশেষে বঙ্গবন্ধু সাধারন ক্ষমা ঘোষনা করলেন।  তবে হত্যা, ধর্ষণ, অগ্নিসংযোগের মত বড় বড় অপরাধের বিচার চালু ছিল।
খন্দকার মাহবুব হোসনে বলেন, ১৯৭২ সালের দালাল আইনে বর্তমান দেলাওয়ার হোসাইন সাঈদী, মতিউর রহমান নিজামী এবং গোলাম আযম অভিযুক্ত হননি।

ট্রাইব্যুনালে যুক্তি পেশ শেষে  ট্রাইব্যুনালের সামনে অপেক্ষমান সাংবাদিকরা এটর্নি জেনারেল মাহবুবে আলমের অভিযোগের সূত্র ধরে খন্দকার মাহবুব হোসেনকে   প্রশ্ন করেন আপনি ১৯৭২ সালে রাষ্ট্রপক্ষে চিফ প্রসিকিউটর ছিলেন দালালদের বিচারের জন্য। এখন সেই তাদের পক্ষে কথা বলতে এসেছেন এটা কতটা নৈতিকতার পর্যায়ে পড়ে?
জবাবে খন্দকার মাহবুব হোসেন বলেন, একথা যদি বলতে হয় তাহলে বলব আজ যাদের  এখানে বিচার চলছে তাদের কেউ তখন সেই দালাল আইনে অভিযুক্ত হননি। আজ যাদের বিচার হচ্ছে সেটা  বিচারের নামে অবিচার হচ্ছে। রাজনৈতিক কারনে এদের বিচার হচ্ছে। ফৌজদারি আইনের মৌলিক বিধান হল মূল অপরাধীদের ছেড়ে দিয়ে সহযোগীদের বিচার করা যায়না। যে খুন করল তার যদি বিচার  না করা হয়  তাহলে তার সহযোগীর বিচার করা যায়না।  যুদ্ধাপরাধ করল পাকিস্তানী সৈন্যরা। আমরা ৬২ হাজার  পাকিস্তানী সৈন্যদের মধ্য থেকে অনেক যাচাই বাছাই করে ১৯৫ জন যুদ্ধাপরাধীকে চিহ্নিত করলাম। তাদের বিচারের জন্য  ১৯৭৩ সালে আইন করা হল।  কিন্তু তাদের ছেড়ে দেয়া হল। যারা আমাদের মা বোনদের ইজ্জত নিল, নির্যাতন করল, হত্যা লুন্ঠন অগি সংযোগ করল তাদের ছেড়ে দেয়া হল। তাদের ছেড়ে দেয়ার পর  তাদের বিচারের জন্য ১৯৭৩ সালের আইন আর থাকতে পারেনা। আইন করা হয়েছিল ১৯৫ জন পাকিস্তানী যুদ্ধাপরাধীদের বিচারের জন্য।

এরপর রাষ্ট্রপক্ষের আইনজীবী সৈয়দ হায়দার আলী পুনরায় বিচার শুরুর আবেদনের বিরোধীতা     করে যুক্তি পেশ শুরু করেন। এসময় স্কাইপ নিয়ে দুই পক্ষের আইনজীবীদের মধ্যে উত্তেজনাকর বাগি¦তন্ডা চলে কিছুক্ষন।
সৈয়দ হায়দার আলী স্কাইপ সংলাপ বিষয়ে বলেন, চুরি করা জিনিস ব্যবহার করা কতটা নিরাপদ? তিনি বলেন এটা নিরাপদ নয়। বিচারপতি নিজামুল হকের স্কাইপ কথোপথন পড়লে দেখা যায় সেখানে তারা দুজনে শুধুমাত্র গল্পগুজব করেছেন। এছাড়া  আর কিছু নেই। এই বিচারে রায় কি হবে বা না হবে তা নিয়ে একটি কথাও নেই। তিনি সরকারের বিরুদ্ধেও কথা বলেছেন। এ থেকে বোঝা যায় সরকারের প্রতি তার কোন পক্ষপাতিত্ব ছিলনা।

ট্রাইব্যুনাল  চেয়ারম্যান বিচারপতি  এটিএম ফজলে কবির, সদস্য বিচারপতি জাহাঙ্গীর হোসেন, বিচারপতি আনোয়ারুল হক শুনানী গ্রহণ করেন।  এসময় আসামী পক্ষের  প্রধান আইনজীবী ব্যারিস্টার আব্দুর রাজ্জাক, সাবেক সহকারি এটর্নি জেনারেল গিয়াসউদ্দিন আহমেদ মিঠু, অ্যাডভোকেট মিজানুল ইসলাম, তাজুল ইসলাম, মনজুর  আহমেদ আনসারী, মতিউর রহমান আকন্দ, আবু বকর সিদ্দিক  প্রমুখ উপস্থিত ছিলেন।
রাষ্ট্রপক্ষে অন্যান্যের মধ্যে উপস্থিত ছিলেন চিফ প্রসিকিউটর গোলাম আরিফ টিপু।

কোন মন্তব্য নেই:

একটি মন্তব্য পোস্ট করুন