৪/২/২০১৩
জামায়াতে ইসলামীর সাবেক আমির অধ্যাপক গোলাম আযমের পক্ষে প্রথম সাক্ষী তার ছেলে সাবেক ব্রিগেডিয়ার জেনারেল আব্দুল্লাহিল আমান আযমীর জেরা শুরু হয়েছে আজ থেকে। রাষ্ট্রপক্ষের আইনজীবী সৈয়দ হায়দার আলী তাকে জেরা করেন।
জেরা :
প্রশ্ন : জেনারেল মোস্তাফিজুর রহমান সাহেব আর্মি চিফ ছিলেন।
উত্তর : হ্যা।
প্রশ্ন : এলপিআরে থাকা অবস্থায় তাকে সেনা প্রধান করা হয়েছিল।
উত্তর : জেনারেল মোস্তাফিজুর রহমান সাহেব এল.পি.আর. এ থাকাকালে তাহাকে রিকল করে লেঃ জেনারেল হিসাবে পদোন্নতি দিয়ে সেনাবাহিনীর প্রধান হিসাবে নিয়োগ করা হয়। তখন বাংলাদেশ সেনাবাহিনীর কাঠামো অনুযায়ী সেনা প্রধানের পদবী লেঃ জেনারেল ছিল।
প্রশ্ন : জেনারেল মঈন কখন লেঃ জেনারেল থেকে জেনারেল হলেন বলতে পারবেন?
উত্তর : লেঃ জেনারেল মঈন সেনাপ্রধান থাকাকালীন সেনাপ্রধানের পদটিকে ফোরষ্টার জেনারেলে উন্নীত করে লেঃ জেনারেল মঈনকে পদোন্নতি দিয়ে ফোরষ্টার জেনারেল বা ফুল জেনারেল পদবী দেওয়া হয়। আমার যতদূর মনে পড়ে এটি হয়েছিল ২০০৭ অথবা ২০০৮ সালে।
প্রশ্ন : জেনারেল ওসমানী সাহেবও জেনারেল ছিলেন।
উত্তর : আমার জানামতে জেনারেল ওসমানী সাহেবকেও অনারারী ফোরাষ্টার জেনারেল পদে পদোন্নতি দেওয়া হয়েছিল। তবে, জেনারেল ওসমানী অবিভক্ত পাকিস্তানে কর্ণেল পদবীতে অবসরে গিয়েছিলেন। মুক্তিযুদ্ধের সর্বাধিনায়ক হিসাবে উনাকে সম্মান প্রদর্শনের জন্য অনারারী ফুল জেনারেল করা হয়েছিল। কর্মরত অবস্থায় নয়, সঠিক সাল মনে করতে পারছি না।
প্রশ্নঃ ইন এইড টু সিভিল পাওয়ার ও ইন এইড টু সিভিল অথরিটি এর মধ্যে পার্থক্য আছে কি?
উত্তরঃ আমরা অফিশিয়াল “ইন এইড টু সিভিল অথরিটি” এই টার্মের সাথে পরিচিত নই, আমরা ইন এইড টু সিভিল পাওয়ার টার্মের সহিত পরিচিত।
প্রশ্ন : ১৯৫৮ সালের মার্শাল ল’ এবং ১৯৬৯ সালের মার্শাল ল’ এর মধ্যে গুণগত ও কৌশলগত কোন পার্থক্য ছিল কিনা?
উত্তর : আমার জানা নাই।
প্রশ্ন : ঐ দুটি মার্শাল ল’ এর রেগুলেশন মিলিয়ে দেখেননি আপনি।
উত্তর : না।
প্রশ্ন : ১৯৭১ সালের ২৫ মার্চের অপারেশন সার্চ লাইট শুরু হওয়ার পর বাঙ্গালী সেনা অফিসার যারা তৎকালীন পূর্ব পাকিস্তানে কর্মরত ছিলেন তারা অধিকাংশই মুক্তিযুদ্ধে অংশ গ্রহণ করেছিলেন এবং তারা তখন থেকে বাংলাদেশ সেনাবাহিনীর অফিসার হিসাবে গণ্য হন।
উত্তর : হ্যা।
প্রশ্ন : মুক্তিযুদ্ধ চলাকালীন সময়ে যে সমস্ত বে-সামরিক ব্যক্তি প্রত্যক্ষভাবে মুক্তিযুদ্ধে অংশ গ্রহণ করেছিলেন তাদেরও সেনাবাহিনীর সদস্য করা হয়।
উত্তর : তাদের মধ্য হতে যোগ্যতার ভিত্তিতে দুটি ব্যাচে কমিশন দিয়ে অফিসার হিসাবে বাংলাদেশ সেনাবাহিনীতে নেওয়া হয় এবং একই পদ্ধতিতে সৈনিক পদেও নিয়োগ দেওয়া হয়।
প্রশ্ন : সশস্ত্র বাহিনী দিবস কোনটা?
উত্তর : ২১ নভেম্বর।
প্রশ্ন : কোন কোন আইন দ্বারা সেনাবাহিনী গঠিত হয় তা জানা আছে?
উত্তর : না।
প্রশ্ন : বাংলাদেশের সশস্ত্র বাহিনী সংবিধান স্বীকৃত বাহিনী।
উত্তর : হ্যা।
প্রশ্ন : ব্রিটিশ, পাকিস্তান এবং বাংলাদেশ সশস্ত্র বাহিনীর গঠন প্রক্রিয়ার মধ্যে কোন পার্থক্য আছে কি-না?
উত্তর : বৃটিশ এবং পাকিস্তান সশস্ত্র বাহিনী গঠন সম্পর্কে আমার বিস্তারিত জানা নাই। তবে বৃটিশ-ইন্ডিয়ান আর্মির একটি অংশ নিয়ে পাকিস্তান সেনাবাহিনী গঠিত হয়েছিল মর্মে আমি জানি।
প্রশ্ন : বাংলাদেশ সশস্ত্র বাহিনী বৃটিশ-ইন্ডিয়ান আর্মি এবং পাকিস্তান সশস্ত্র বাহিনীর ধারাবাহিক কোন বাহিনী নয়।
উত্তর : আপনার দাবি সত্য নয়।
প্রশ্ন : মুক্তিযুদ্ধ চলাকালীন সময় আপনার বয়স কত ছিল?
উত্তর : ১২ বছর।
প্রশ্ন : তখন আপনি কোথায় ছিলেন?
উত্তর : ঢাকা।
প্রশ্ন : পরিবারের অন্য সদস্যরা কোথায় ছিল?
উত্তর : আমার পিতা বাদে আমাদের পরিবারের সকল সদস্য ১৯৭২ সালের মাঝামাঝি সময় পর্যন্ত ঢাকায় ছিল। ১৯৭২ সালে জুলাই কিংবা আগষ্টে আমার মেঝ ভাই এবং অক্টোবর বা নভেম্বরে আমার বড় ভাই উচ্চ শিক্ষার জন্য যুক্তরাজ্যে যান। আমি এবং আমার তৃতীয় ভাই আমরা দুজনে এস.এস.সি পাশ করার পর ১৯৭৫ সালে যুক্তরাজ্যে চলে যাই। ১৯৭৬ সালে আমার আম্মা আমার ছোট দুই ভাইকে নিয়ে যুক্তরাজ্যে চলে যান।
প্রশ্ন : ল্যাবরেটরি স্কুলে কখন ভর্তি হন?
উত্তর : ১৯৬৯ সালে ৬ষ্ঠ শ্রেণীতে ভর্তি হই এবং ১৯৭২ সাল পর্যন্ত আমি ঐ স্কুলে পড়াশুনা করি। ১৯৭৪ সালে আমি সিলেট অগ্রগামী উচ্চ বিদ্যালয় হতে এস.এস.সি পাশ করি। আমি ১৯৭২ সালের সেপ্টেম্বরের দিক থেকে ১৯৭৪ সালের সেপ্টেম্বর/ অক্টোবর পর্যন্ত সিলেটে ছিলাম তৎপর ঢাকায় চলে আসি।
প্রশ্ন : ও লেভেল কোর্স কতদিনের?
উত্তর : ও লেভেল আমাদের দেশের এস.এস.সি এর সমমানের। ও লেভেল কোর্সে সিলেবাস কভার করতে কম/ বেশি দুই বৎসর সময় লাগে।
প্রশ্ন : ও লেভেল করার পর আপনি কি এ লেভেল করেছেন?
উত্তর : আমি যুক্তরাজ্যে এ লেভেল দুই বছর পড়েছি। কিন্তু পারিবারিক সিদ্ধান্তের কারণে ১৯৭৮ সালের সেপ্টেম্বর/ অক্টোবর মাসে আমি দেশে ফিরে আসি ।
প্রশ্ন : এইচএসসি কোথা থেকে পাশ করেছেন?
উত্তর : ১৯৭৯ সালে আমি আইডিয়াল কলেজ থেকে এইচ.এস.সি পাশ করি।
উত্তর : রেজাল্ট কি ছিল?
উত্তর : তৃতীয় বিভাগ। যুক্তরাজ্যে দ্ইু বছর এ লেভেল পড়ার কারনে দেশের সিলেবাসের সাথে আমি এডজাস্ট করতে পারিনি। ফলে একটি বিষয়ে ফল খারাপ হয়।
প্রশ্ন : ১৯৯১ সালে আপনার চাকরি জীবনে কোন সমস্যা হয়েছিল?
উত্তর : আমার মনে পড়েনা।
প্রশ্ন : বিদেশী নাগরিক হওয়া সত্তেও আপনার বাবা আপনার বাসায় বসে রাজনীতি করেছেন। আপনার সার্ভিস রেকর্ডে একথা আছে।
উত্তর : ১৯৯১ সালে আমার পিতা আমার সিলেটের বাসায় বেড়াতে গিয়েছিলেন। নিয়ম মেনে কর্তৃপক্ষের অনুমতি নিয়েই তিনি বাসায় ছিলেন। ঐ সময় আমার বাসায় অবস্থান করে তিনি রাজনৈতিক কর্মকান্ড করেছেন এটা সঠিক নয়। তিনি আমার বাসায় যাবার কারনে আমার চাকরিতে কোন অসুবিধা হয়নি এবং আমার সার্ভিস রেকর্ডেও এসব নেই।
প্রশ্ন : ১৯৯৪ সালে মালেশিয়ায় স্টাফ কোর্স সম্পন্নের সময় স্থানীয় ইন্টারন্যাশনাল ইসলামী ইউনিভার্সিটির প্রশিক্ষক এবং ছাত্রগণ যারা মূলতঃ বাংলাদেশের জামায়াতে ইসলামীর সদস্য তাদের সাথে নিয়মিত যোগাযোগ রাখেন আপনি।
উত্তর : এটা সত্য নয়। তবে এ মর্মে একটি মিথ্যা রিপোর্ট বাংলাদেশ দূতাবাস থেকে ডি.জি.এফ.আই হেড কোয়ার্টারে প্রেরণা করা হয়েছিল মর্মে আমি জেনেছিলাম এ নিয়ে কোন অভিযোগ বা তদন্ত হয়নি।
প্রশ্নঃ ১৯৯৮ সালের ২৪ এপ্রিল তারিখে আপনার পিতা আপনার চট্টগ্রাম সেনানিবাসের সরকারি বাসায় কয়েকজন দেহরক্ষী ও রাজনৈতিক সঙ্গী সহ গমন করেন এবং সেখানে অবস্থান করেন কিনা?
উত্তরঃ ১৯৯৮ সালের ১৪ এপ্রিল তারিখে আমার পিতা আমার মা এবং ফুফু সহ আমার অসুস্থ স্ত্রী ও অসুস্থ সন্তানকে দেখার জন্য আমার চট্টগ্রাম সেনানিবাসে সরকারি বাসভবনে গমন করেন। আমার বাবার কখনও কোন দেহরক্ষী ছিলেন না। তবে, উনি সফরে গেলে উনার নিরপত্তার জন্য কিছু লোক সাথে থাকতেন। ১৪ এপ্রিল আমার বাবার নিরাপত্তার জন্য যারা উনার সাথে গিয়েছিলেন তারা আমার বাবাকে বাসায় পৌছে দিয়েই চলে গিয়েছিলেন।
০৭-০২-২০১৩ ইং পূনরায় জেরা শুরু ঃ-
এদিন জেরায় তিনি যেসব উত্তর দেন তা নিম্নরূপ
সেনাবাহিনীতে সেরা অফিসার হিসাবে গণ্য করা হয় যাদের ভাল একাডেমিক কোয়ালিফিকেশন থাকে, যাদের মানবিক ভাল গুনাবলী থাকে এবং যাদের ভাল পেশাগত দক্ষতা থাকে। তবে এই বিষয়ে কোন বিধিমালা নাই। তবে মেজর, লে:কর্ণেল এবং কর্ণেলদের জন্য প্রতি বছর একটি মেরিট লিষ্ট তৈরী করা হয়। ইহা সত্য নয় যে, আমাকে সেনাবাহিনীর সেরা অফিসারদের মধ্যে একজন গণ্য করা হয় না এবং আমাকে অনুকরনীয় আদর্শ হিসেবে গণ্য করা হয় না। আমাকে সেনাবাহিনী থেকে বরখাস্ত করার চিঠি ট্রাইব্যুনালে দাখিল করিনি। সেনাবাহিনীর কোন অফিসার বা সদস্যকে বরখাস্ত করা হইলে তাতে সাধারনত সংশ্লিষ্ট আইনের ধারা উল্লেখ থাকে। আমার বরখাস্ত সংক্রান্ত প্রতিরক্ষা মন্ত্রনালয়ের প্রজ্ঞাপনে আইনের ধারা উল্লেখ আছে যাহা সেনা সদর দফতর হইতে একটি চিঠির মাধ্যমে আমাকে অবহিত করা হইয়াছে। ইহা সত্য নহে যে, সম্পূর্ণ রাজনৈতিক কারনে কোন অপরাধ ছাড়া, কোন তদন্ত ছাড়া আমাকে চাকুরী হইতে বরখাস্ত করা হয় নাই। ১৯৭৫ এবং ১৯৮২ সনের সামরিক শাসন চলাকালীন সময়ে বাংলাদেশে কোন মুক্তিযুদ্ধ ছিল না। দেশ স্বাধীন হওয়ার পরে বাংলাদেশে যতগুলি সামরিক শাসন হয়েছে সেগুলিকে বাংলাদেশের সর্বোচ্চ আদালত বে-আইনি ঘোষনা করেছে মর্মে শুনেছি। অধ্যাপক পদবী আইনের মাধ্যমে অর্জন করতে হয়। আমার পিতা কারমাইকেল কলেজে ১৯৫০ হইতে ১৯৫৫ সাল পর্যন্ত অধ্যাপনা করতেন বিধায় তাকে অধ্যাপক বলা হয়। ঐ সময় প্রভাষক পদ ছিল কিনা তাহা আমার জানা নাই। আমার জানা মতে ঐ সময় বিশ্ববিদ্যালয় ও কলেজে সকল শিক্ষককে অধ্যাপক বলা হতো, তখন শিক্ষকদের মধ্যে কোন শ্রেণী বিভাগ ছিল না। ইহা সত্য নহে যে, আমার পিতা কখনও অধ্যাপক ছিলেন না।
প্রশ্ন ঃ আপনার পিতার রাজনৈতিক দর্শনে আপনি বিশ্বাসী কিনা ?
উত্তর ঃ আমি এ বিষয়ে মতামত দিতে বাধ্য নই।
প্রশ্ন ঃ আপনি আপনার পিতার রাজনৈতিক দর্শনের অনুসারী কিনা?
উত্তর ঃ আমি কোন রাজনৈতিক দলের সহিত সম্পৃক্ত নই বিধায় আমার পিতার রাজনৈতিক দর্শনের অনুসারী হওয়ার প্রশ্নই উঠে না। সুতরাং এ প্রশ্ন অবান্তর।
আমরা ছয় ভাই, আমাদের কোন বোন নাই। আমার ভাইয়েরা কোন রাজনীতি করে না। তারা সকলেই বিদেশে অবস্থান করে। ১৯৫২ সালে আমার পিতা রংপুর কারমাইকেল কলেজে ছিলেন, ঐ সময় তিনি ঢাকায় ছিলেন না। অবিভক্ত পাকিস্তানের জামায়াতে ইসলামীর তৎকালীন আমির মাওলানা মওদূদী সাহেবের সঙ্গে আমাদের পারিবারিকভাবে কোন পরিচয় বা সম্পর্ক ছিল না। মওলানা মওদূদী সাহেবের ছেলে মেয়েরা কে কি করতেন তাহাও আমি জানি না। তার ছেলে মেয়েদের সঙ্গে আমার জীবনেও দেখা সাক্ষাত হয় নাই। আমি শুনেছি যে, ১৯৪০ দশকের শেষের দিকে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে ছাত্র সংসদে ভি,পি ও জি, এস পদে একজন মুসলমান হলে অপরজন হিন্দু হতেন, তবে নির্বাচনের মাধ্যমে হতেন। আমি আমার জবানবন্দীতে যে সমস্ত ব্যক্তিদের উদ্ধৃতি দিয়েছি তার সূত্র উল্লেখ করি নাই, তবে ট্রাইব্যুনাল চাইলে আমি সেই সকল বই দাখিল করিতে পারিব। মাওলানা মওদূদী সাহেব কতবার ঢাকায় এসেছিল তাহা আমি বলতে পারব না। আমি আমার বাবার বইয়ে পড়েছি যে, পঞ্চাশের দশকে একবার এবং ১৯৭১ সালে আরেকবার তিনি ঢাকায় এসেছিলেন। এছাড়া তিনি ঢাকায় এসেছিলেন কিনা তাহা আমার জানা নাই। ১৯৭০ সালে তিনি যখন ঢাকায় এসেছিলেন তখন তার সঙ্গে আমার দেখা হয়েছিল কিনা তাহা আমার মনে পড়ছে না। ১৯৭১ সালের ২৬শে মার্চ তারিখে আমার পিতা ঢাকার মগবাজারস্থ আমাদের বাসাতেই ছিলেন। ঐ দিন তিনি সারাদিনই বাসায় ছিলেন এবং খুব উদ্বিগ্ন ও চিন্তিত ছিলেন। ঐদিন কারফিউ বলবৎ ছিল। আমার পিতা ঐ দিন বাড়ির বাহিরে যান নাই এবং বাহির থেকেও কেউ আমাদের বাড়িতে আসে নাই। ১৯৭১ সালের ২৫শে মার্চের রাতে পাকিস্তান সামরিক বাহিনী যে হত্যাকান্ড চালিয়েছিল তার পরে সর্বপ্রথম কবে আমার পিতা বাসা থেকে বাহিরে বের হন তাহা আমার স্মরন নাই। তবে তিনি কয়েকদিন পর্যন্ত বাসা থেকে বের হন নাই। কয়েকদিন পরে তিনি যখন বাসা থেকে বের হন তখন তিনি কোথায় কখন কার কাছে গিয়েছিলেন তাহা আমি বলতে পারবো না। ৪ঠা এপ্রিল ১৯৭১ ইং তারিখে আমার পিতা পাকিস্তান সামরিক কর্তৃপক্ষের সহিত সাক্ষাত করেছেন মর্মে আমি পরে জেনেছি তবে ঐ সময়ে আমি তার সহিত ছিলাম না। ঐ সাক্ষাতের সময় তাদের মধ্যে কি আলোচনা হয়েছিল কেবল মাত্র যারা উপস্থিত ছিল তারাই জানেন, অন্য কেউ জানে না। ৪ঠা এপ্রিল ১৯৭১ইং তারিখে পূর্বে কিংবা পরে আমার পিতা সামরিক কর্তৃপক্ষের সহিত সাক্ষাত করেছিলেন কিনা তাহা আমার জানা নাই। মুক্তিযুদ্ধ চলাকালীন সময়ে আমার পিতা একাধিকবার পাকিস্তানে গিয়েছিলেন, তবে মোট কতবার গিয়েছিলেন তাহা আমার জানা নাই। আমার পিতা তৎকালীন পূর্ব পাকিস্তানের জামায়াতে ইসলামীর আমির ছিলেন বিধায় কয়েক মাস অন্তর অন্তর পাকিস্তানের লাহোরে অনুষ্ঠিত কেন্দ্রীয় জামায়াতে ইসলামীর মজলিসে শুরায় অংশগ্রহন করতে একাধিকবার সেখানে গিয়েছিলেন। ১৯৭১ সালে অবরুদ্ধ বাংলাদেশের তৎকালীন পূর্ব পাকিস্তানের জামায়াতে ইসলামীর মজলিসে শুরার বৈঠক কোথায় অনুষ্ঠিত হইতো বা আদৌ হইতো কিনা তাহা আমার জানা নাই। আমার পিতা ১৯৭১ সালে ঢাকার বাইরে গেলে আমি তার সঙ্গে যেতাম না। তবে তিনি ঐ সময় বাসার বাইরে কম যেতেন। তৎকালীন পূর্ব পাকিস্তানে ১৯৭০ সালের নির্বাচন উপলক্ষ্যে আমার পিতা ঢাকার বাইরে কয়েকবার নির্বাচনী সভায় যোগ দিয়েছিলেন মর্মে আমি শুনেছি। তবে তিনি সাধারনত সাংগঠনিক কাজের জন্য ঢাকার বাইরে যেতেন মর্মে শুনেছি। ১৯৭১ সালে মুক্তিযুদ্ধ চলাকালীন সময়ে আমার পিতা দুই/একবার ঢাকার বাইরে গিয়েছিলেন মর্মে আমি পরবর্তীতে পত্র পত্রিকার মাধ্যমে জেনেছি। ১৯৭১ সালে মুক্তিযুদ্ধ চলাকালীন সময়ে আমার পিতা বাংলাদেশের অন্যান্য রাজনৈতিক দল যেমন মুসলিম লীগ, পি.ডি.পি, নেজামী ইসলামী প্রমুখ দলের নেতাদের সঙ্গে কোন বৈঠক করেছিলেন কিনা তাহা আমার জানা নাই। ১৯৭১ সালে মুক্তিযুদ্ধ চলাকালীন সময়ে আমার পিতা বাসার বাইরে কোথায়, কখন, কার নিকট যেতেন তাহা আমি জানি না। আমার পিতার রচিত “জীবনে যা দেখলাম” নামীয় বইটি একটি আত্মজীবনী মূলক বই এবং এটি ৯ খন্ডে প্রকাশিত। এই খন্ডের মধ্যে আমি ট্রাইব্যুনালে প্রথম ও তৃতীয় খনড দাখিল করেছি যাহা প্রদর্শনী ঐ এবং ঐ-১ হিসেবে প্রদর্শিত হইয়াছে। উক্ত বইয়ের তৃতীয় খন্ডে (প্রদশর্নী ঐ১) ১৩৩ নম্বর পৃষ্ঠায় প্রথম লাইনে উল্লেখিত মুহাম্মদ আলী আমার পিতার ড্রাইভার ছিলেন। ১৯৭১ সালের ২৬ মার্চ তারিখে আমার পিতা ড্রাইভার সহ গাড়ি নিয়ে বাসার বাইরে যান এবং ঢাকা শহরের ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় এলাকা, নবাবপুর রোড, গুলিস্তান এলাকায় ১৯৭১ সালের ২৫শে মার্চ রাত্রে সংঘটিত হত্যাযজ্ঞ ও ধ্বংসযজ্ঞ নিজ চোখে দেখেন এবং মনে করেন যে, সেনাবাহিনী যেন কোন শত্রুদেশ জয় করার জন্য আক্রমন চালিয়েছে। বই বক্তব্য সমূহ উক্ত বইয়ের ১৩৩ নম্বর পৃষ্ঠায় উল্লেখ আছে। (চলবে)
০৭-০২-২০১৩ ইং পুনরায় জেরা শুরুঃ-
উক্ত বইয়ের ১৩০ নম্বর পৃষ্ঠায় উল্লেখ আছে যে, ২৫শে মার্চ ১৯৭১ তারিখে দিবাগত রাত সাড়ে দশটার সময় আমার পিতা লেখক কামানের আওয়াজ শুনতে পান এবং দেখা গেল আকাশ লাল হয়ে গেল এবং বোঝা গেল কাথাও আগুন জ্বলছে এবং তার বাসার টেলিফোন বিকল পান। ইহা ছাড়া এশার নামাজের পর থেকে লোকদের মুখে শুনতে পান যে, শহরের বহু জায়গায় বহু লোক বেরিকেড দিয়ে পথ রোধ করে আছে। রাত এগারোটার দিকে জানতে পারেন যে, নয়াবাজার কাঠের দোকানগুলির আগুন আকাশ পর্যন্ত উচুঁ হয়ে জ্বলছে। তিনি বুঝতে পারেন যে, সেনাবাহিনী উক্ত কর্মটি করিয়াছে এবং তাহার বাড়ির টিনের চালে নিপাতিত একটি মর্টার সেলের মজবুত খোসা দেখতে পান।
উক্ত বইয়ে এর পরেই উল্লেখ আছে যে, তখনকার চলমান সংলাপ প্রক্রিয়া ফেল হলে কিছু একটা অঘটন ঘটবে বলে তিনি আশংকা করেছিলেন এবং ঘটনার বর্ণনায় উনি ধারণা করলেন সেনাবাহিনী শহর দখল করার জন্য শক্তি প্রয়োগ করছে। বিদ্রোহীদের দমন করার জন্য রীতিমত যুদ্ধ বাধিয়ে দিয়েছে।
উক্ত বইয়ের ১৩১ পৃষ্ঠায় আরও উল্লেখ আছে যে, “আমাদের বাড়ির সারিতে ৮/১০ টি বাড়ি। এই বাড়িগুলোর উত্তর দিকে ইস্পাহানি কলোনীর দীর্ঘ দেয়াল। রাত ১টার সময় খবর পেলাম, ঐ দেয়াল টপকিয়ে দুজন পুলিশ আশ্রয় নিয়েছে। তারা নাকি রাজাকার পুলিশ লাইন থেকে পালিয়ে এসেছে। সেনাবাহিনী পুলিশ লাইন আক্রমন করে হত্যাকান্ড চালাচ্ছে। পুলিশেরা যে দিকে সম্ভব পালানোর চেষ্টা করছে।”
উক্ত বইয়ের ২০৭ পৃষ্ঠায় “প্রেসিডেন্ট ইয়াহিয়ার সাথে সাক্ষাত” শিরোনামে তৃতীয় অনুচ্ছেদে উল্লেখ আছে যে, “প্রথমে জিজ্ঞাসা করলেন যে, পূর্ব পাকিস্তান থেকে কবে এসেছেন ? সেখানকার অবস্থা কেমন ? জাববে বললাম যে, ৫/৬ দিন আগে লাহোর পৌছেছি। সেখানকার অবস্থা আপনাকে অবগত করানোর জন্যেই পিন্ডি এসেছি। তা না হলে ওয়ার্কিং কমিটির বৈঠক শেষে ঢাকা ফিরে যেতাম। তারপর বললাম, “ আপনি তো পূর্ব পাকিস্তানেরও প্রেসিডেন্ট ২৫শে মার্চ জেনারেল টিক্কা খান সামরিক অপারেশন শুরু করার পর গত ৮ মাসের মধ্যে আপনি একবারও সেখানকার অবস্থা সরেজমিনে দেখার জন্য গেলেন না। জনগনের পক্ষ থেকে তার রাজনৈতিক নেতৃবৃন্দ আপনার সাক্ষাতের সুযোগ পেলেন না। সেখানে গেলে জনগনের প্রতিক্রিয়া স্বচক্ষে দেখে আসতে পারতেন।”
উক্ত বইয়ের ১৫৪ পৃষ্ঠায় শেষ অনুচ্ছেদে নূরুল আমিন সাহেবের বাড়িতে খাজা খয়রুদ্দিন এবং মৌলভী ফরিদ আহম্মেদ সাহেবের উদ্দোগে ১৯৭১ সালের এপিল মাসের শেষের দিকে একটি বৈঠক হয়। সেই বৈঠকে আমন্ত্রিতদের মধ্যে আমার পিতা অধ্যাপক গোলাম আযম সাহেব সহ বিভিন্ন রাজনৈতিক দলের (আওয়ামী লীগের দুইজন নেতা সহ) প্রতিনিধি উপস্থিত ছিলেন। উক্ত বইয়ের ১৫৭ পৃষ্ঠায় দ্বিতীয় অনুচ্ছেদে উল্লেখ আছে যে, সর্ব সম্মতিক্রমে মুসলীম লীগ নেতা খাজা খয়রুদ্দিন সাহেবকে আহ্বায়ক করে শান্তি কমিটি নামে একটি কমিটি গঠন করা হয়।
আমার অধ্যয়নের মাধ্যমে পরবর্তীতে যতদূর জেনেছি তাতে আমার যতদূর মনে পড়ে ১৯৭১ সালে মুক্তিযুদ্ধ চলাকলীন সময়ে পাকিস্তান সামরিক সরকার একটি আদেশের মাধ্যমে আওয়ামী লীগকে নিষিদ্ধ ঘোষনা করে। আমি আমার অধ্যায়নে যতটুকু জানতে পেরেছি ১৯৭০ সালের নির্বাচনে নির্বাচিত এম.এন.এ. দের মধ্য হতে অনেকেই পাকিস্তান সরকারের অনুগত্য ও সহানূভূতি প্রকাশ করেছিল এবং সেই মর্মে একটি গেজেট নটিফিকেশন বের হয়েছিল। যারা অনুগত্য প্রকাশ করেনাই তাদের পদগুলি শুন্য ঘোষনা করে সেই আসনগুলেতে পরবর্তীতে উপ-নির্বাচন অনুষ্ঠিত হয়েছিল। এই উপনির্বাচনে সম্ভবত জামায়াতে ইসলামী অংশগ্রহন করেছিল। ১৯৭১ সালে অধ্যাপক গোলাম আযম দুষ্কৃতিকারী বলতে সশস্ত্র প্রতিপক্ষকে বুঝিয়েছেন বলে আমি জানতে পেরেছি। তিনি কোন অবস্থাতেই নিরস্ত্র, নিরীহ জনসাধারনকে বোঝান নাই বা কোন বিশেষ ধর্ম শ্রেনী, গোত্র বা দলকে বোঝান নাই যারা অখন্ড পাকিস্তানে বিশ্বাসী ছিলেন তাদের সশস্ত্র প্রতিপক্ষকে দুষ্কৃতিকারী হিসাবে আমার পিতা আখ্যায়িত করেছিলেন।
১৯৭১ সালে অখন্ড পাকিস্তানে বিশ্বাসীদের মধ্যে রাজনৈতিক নেতৃবৃন্দ বে-সামরিক ও নিরস্ত্র ছিলেন। তৎকালীন রাজনৈতিক নেতৃবৃন্দ কেন্দ্রীয় শান্তি কমিটি গঠন করেছিলেন। ১৯৭১ সালে শান্তি কমিটি কি করেছিল সে সম্পর্কে আমার সুষ্পষ্ট ধারনা নাই। সারা দেশে জেলা, মহকুমা, থানা এবং ইউনিয়নে শান্তি কমিটির কার্যক্রম তৎকালীন মুসলিম লীগের নেতাদের অধীনে পরিচালিত হতো। তবে এ সকল কমিটি কেন্দ্রীয় শান্তি কমিটির অধীনে পরিচালিত হতো কিনা তাহা আমার জানা নাই। মুক্তিযুদ্ধ চলাকলীন সময়ে আমার পিতা ৪ঠা ডিসেম্বর পাকিস্তান থেকে বিমানযোগে ঢাকা বিমান বন্দরে এসে নামতে না পেরে বাধ্য হয়ে সৌদিআরব যান, সেখানে কয়েকদিন অবস্থান করার পর পাকিস্তানে ফিরে যান। মুক্তিযুদ্ধ চলাকালীন সময়ে আমার পিতা কোন বিদেশী নাগরিক বা নেতৃবৃন্দ বা সাংবাদিকদের সংগে দেখা সাক্ষাত করেছিলেন কিনা তাহা আমার জানা নাই। দৈনিক সংগ্রাম প্রত্রিকা পাকিস্তান আমল থেকেই প্রকাশিত হতো মর্মে আমি জেনেছি। তবে জামায়াতে ইসলামীর মুখপাত্র ছিল কিনা তাহা আমার জানা নাই। কোন পত্রিকাই কোন দলের মুখপাত্র হিসাবে প্রকাশিত হয় কিনা তাহা আমার জানা নাই। (চলবে)
১০-০২-২০১৩ পুনরায় জেরা শুরুঃ-
দৈনিক সংগ্রাম পত্রিকা সম্ভবত সর্বপ্রথম ১৯৭০ সালের জানুয়ারী মাসে প্রকাশ হয়। তবে ঐ সময় উহার প্রতিষ্ঠাতা সম্পাদক ও প্রকাশক কে ছিলেন তাহা আমার জানা নাই। ‘জীবনে যা দেখলাম’ বইয়ের তৃতীয় খন্ডের (প্রর্দশনী- ঐ১) ৯৬ পৃষ্ঠার তৃতীয় অনুচ্ছেদে ‘পত্রিকার সহযোগীতার কোন আশা না থাকায় মুরাদ সাহেবের কয়েক মাস ব্যাপী অকান্ত প্রচেষ্টায় জনসভার পূর্বদিন ১৭ জানুয়ারী থেকে দৈনিক সংগ্রাম পত্রিকা প্রকাশের ব্যবস্থা করা সম্ভব হয়’ উল্লেখ আছে। আমার বাবার লেখা কোন বই দেশে বা দেশের বাইরে কোন পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়ে পাঠ্যসূচীর অন্তর্ভূক্ত আছে কিনা তাহা আমার জানা নাই। আমাদের দেশের ধর্মীয় সংগঠনগুলোর উপর সামান্য ধারনা আছে। জামায়াতে ইসলামী একটি রাজনৈতিক সংগঠন বলে মনে করি। বৃটিশ ভারত বিভক্ত হওয়া এবং পাকিস্তান থেকে বাংলাদেশ স্বাধীন হওয়া দুইটি ভিন্ন প্রেক্ষাপটে হয়েছে। আওয়ামলী লীগ এবং জামায়াতে ইসলমাী কখনও একই জোটবদ্ধ হয়ে আন্দোলন করেছ বলে আমার জানা নাই। তবে উক্ত দুটি দলসহ অন্যান্য দল ও জোটের নেতৃবৃন্দ একত্রে বৈঠক করে একই কর্মসূচি প্রনয়ন করে যুগপৎ আন্দোলন করেছে। ১৯৯১ সালের জাতীয় নির্বাচনে আওয়ামলী লীগ সম্ভবত ৮৬টি আসন পেয়েছিল। ঐ নির্বাচনে জামায়াতে ইসলামী সম্ভবত ১৮টি আসন পেয়েছিল। দেশ স্বাধীন হওয়ার পর ১৯৭৮ সালের আগে আমার পিতার নাগরিকত্ব ফিরে পাওয়ার আবেদন সংক্রান্ত কাগজপত্র আমি ট্রাইব্যুনালে দাখিল করি নাই। বাংলাদেশ স্বাধীন হওয়ার পর আমার পিতাসহ যাদের নাগরিকত্ব বাতিল করা হয়েছিল তাহা কি প্রক্রিয়ায় হয়েছিল তাহা আমার জানা নাই। বিচারপতি বদরুল হায়দার চৌধুরী রাষ্ট্রপতি নির্বাচনে কতভোট পেয়েছিলেন তাহা আমার জানা নাই। আমার পিতা পাকিস্তানি পাসপোর্ট নিয়ে বাংলাদেশে আসার পরও তিনি বাংলাদেশের নাগরিক ছিলেন। আমার পিতা দেশ স্বাধীন হওয়ার পর লন্ডনে থাকা অবস্থায় বেশ কয়েকবার সৌদি আরবে গিয়েছিলেন, তবে সঠিক সংখ্যা মনে নাই। আমাদের আত্মীয় স্বজন যাহারা হজ্জ্ব করতে গিয়েছিলেন তাদের মধ্যে কারো কারো সংগে আমার পিতার সৌদি আরবে দেখা হয়েছিল। উল্লেখ্য তখন কয়েকজন আত্মীয়ের সংগেও আমার পিতার দেখা হয়েছিল মর্মে আমার পিতার লিখিত বইয়ে লেখা আছে বলে আমার মনে পড়ে। সৌদি আরবে সফরকালে আমার পিতা সৌদি বাদশার সাথে দেখা করেছেন মর্মে শুনেছি, তবে কতবার দেখা হয়েছে তাহা বলতে পারব না। পাকিস্তান আমলে সৌদি বাদশার সংগে সম্ভবত আমার পিতার দেখা হয় নাই।
মার্শাল ল’ রেগুলেটেড হয় মার্শাল ল’ রেগুলেশন দ্বারা। মার্শাল ল’ জারী করার পর সামরিক সরকার তাদের প্রয়োজনে মার্শাল ল’ রেগুলেশন ও রুলস প্রনয়ন করে। মার্শাল ল’ এর জন্য কোন নির্ধারিত রুলস রেগুলেশন নাই। তবে একই ধরনের সাংগঠনিক কাঠামো বা একই ধরনের দর্শন থাকলে বিধি বিধানগুলি একই রকমের হয় (প্রসিকিউশনের আপত্তি সহকারে)। ১৯৫৮ সালের মার্শাল ল’ এর সময় রাজনৈতিক দল নিষিদ্ধ করা হয়েছিল তবে ১৯৬৯ সালের মার্শাল ল’ এর সময় কোন রাজনৈতিক দল নিষিদ্ধ করা হয়েছিল কিনা তাহা আমার জানা নাই। প্রদর্শনী- অ, ই, ঈ কোন সময়ের মার্শাল ল’ এর উপর ভিত্তি করে প্রনয়ন করা হয়েছিল তাহা প্রদর্শনীতে উল্লেখ নাই। ঐ প্রদর্শনীগুলিতে কোন আইন বা সূত্র উল্লেখ নাই। আমি ১২ নভেম্বর ২০১২ ইং তারিখে এই মামলায় প্রথম সাক্ষ্য প্রদান শুরু করি এবং ঐ প্রদর্শনীগুলিতে ১৮ ই নভেম্বর ২০১২ তারিখে দস্তখত করি। প্রদর্শনী- উ তে এর রানিং পৃষ্ঠা ১৮ এর তৃতীয় অনুচ্ছেদে “ঝুবফ গড়ঁফঁফর ংবষবপঃবফ ঢ়ৎড়ভ. এযঁষধস অুধস ধং ড়হব ড়ভ ঃযব ৫ গবসনবৎ ঃবধস ভড়ৎ ষড়ননুরহম রহ ঃযব অংংবসনষু ভড়ৎ ভৎধসরহম ওংষধসরপ পড়হংঃরঃঁঃরড়হ” উল্লেখ আছে। ঐ একই প্রদর্শনীর একই পৃষ্ঠায় বাম পাশে “ঐড়ি যব নবমধহ ড়িৎশ ধহফ নবপধসব ধ ঃড়ঢ় সধহ?” এ শিরোনামে উল্লেখিত “যব” বলতে আমার পিতা প্রফেসর গোলাম আযম সাহেবকে বোঝানো হয়েছে। প্রদর্শনী- উ বইটি জনৈক মুহাম্মদ নূরুজ্জামান কর্তৃক লিখিত আমার পিতার জীবনীর উপর লিখিত একটি বই। উল্লেখিত বইয়ে লেখকের পরিচিতি উল্লেখ নাই। উক্ত লেখকের পরিচিতি সম্পর্কে আমি নিশ্চিত নই। উক্ত প্রদর্শনীর রানিং পৃষ্ঠা ২ এ “চৎবভধপব” এর সপ্তম অনুচ্ছেদে “ও বীঢ়ৎবংং সু ঃযধহশং ঃড় ঔধসধধঃ ষবধফবৎ গঁযধসসধফ কধসধৎুুঁধসধহ ভড়ৎ যরং ংরহপবৎব পড়-ড়ঢ়বৎধঃরড়হ ধহফ ঔধসধধঃ-ব- ওংষধসর ইধহমষধফবংয ভড়ৎ ধষষড়রিহম সব ঃড় মড় ঃযৎড়ঁময ঃযব ৎবপড়ৎফং ধহফ ভরষবং”. উল্লেখ রহিয়াছে। ঐ প্রদর্শনী বইটি ০৭-১১-১৯৯২ ইং তারিখে প্রথম প্রকাশিত হয় মর্মে সেখানে উল্লেখ রহিয়াছে। ঐ সময় আমার পিতা জামায়াতে ইসলামীর আমির ছিলেন। প্রদর্শনী- ঊ শেখ আখতার হোসেন কর্তৃক লিখিত “জননেতা গোলাম আযম” নামক বইয়ে রানিং পৃষ্ঠা ১০৩ (মূল বইয়ের ২০ পৃষ্ঠা) এর বাম পাশে দ্বিতীয় অনুচ্ছেদে “১৯৭৩ সালের জানুয়ারীতে সৌদি আরবের বাদশা ফয়সালের সাথে তিনি প্রথম দেখা করেন। বাংলাদেশের সংবিধানে ধর্মনিরপেক্ষতাবাদ ও সমাজতন্ত্রকে জাতীয় আদর্শ বলে ঘোষণা করায় বাংলাদেশের মুসলিম জনগণের পক্ষ থেকে বক্তব্য নিয়ে গোলাম আজম সৌদি বাদশাহ ফয়সালের সাহায্য চান এবং বাংলাদেশ সরকারের উপর নৈতিক চাপ সৃষ্টি করার জন্য অনুরোধ জানান, যাতে ইসলামের বিরুদ্ধে দাঁড় করানো শাসনতান্ত্রিক প্রতিবন্ধকতা অপসারিত হয়।’ উল্লেখ রহিয়াছে। লেখকের পরিচিতি উক্ত বইয়ে উল্লেখ নাই এবং আমারও জানা নাই। প্রদর্শনী- ঊ বইটি আমি অনেক আগে পড়েছি। উক্ত বইয়ের ১৯ পৃষ্ঠায় (রানিং পৃষ্ঠা ১০২) ৫ নম্বর অনুচ্ছেদে “(১) ১৯৭৩ সালে জুলাই মাসে লিবিয়ার ত্রিপলিতে অনুষ্ঠিত আন্তর্জাতিক ইসলামী যুব সম্মেলনে ভাষণ দেন” উল্লেখ রহিয়াছে। আমার পিতা ভাষণ দেওয়ার বিষয়ে উল্লেখ রহিয়াছে। তবে সম্মেলনটি কি বিষয়ে ছিল এবং কি বক্তব্য দিয়েছিলেন তাহা আমার জানা নাই। উক্ত অনুচ্ছেদে “(৪) ১৯৭৭ সালে জুলাইতে ইস্তাম্বুলে অনুষ্ঠিত টঋঝঙ- এর বার্ষিক সম্মেলনে ভাষণ দেন” উল্লেখ রহিয়াছে।
আমার পিতার ভাষণ দেওয়ার বিষয়ে উল্লেখ রহিয়াছে। তবে সম্মেলনটি কি বিষয়ে ছিল এবং কি বক্তব্য দিয়েছিলেন তাহাও আমার জানা নাই। ঐ সময় আমার পিতা বাধ্য হয়ে পাকিস্তানী পাসপোর্ট নিয়ে ঐ সকল দেশ ভ্রমণ করেন। উক্ত বইতে প্রকাশকাল উল্লেখ নাই। এ বইটি ৬৪ পৃষ্ঠা সম্বলিত এবং বইটির মূল্য হিসাবে নিউজপ্রিন্ট কাগজে ১০/- এবং সাদা কাগজে ১৫/- টাকা উল্লেখ রহিয়াছে। জামায়াতে ইসলমাীর প্রচারমূলক বই কিনা আমার জানা নাই এবং বইটির নামমাত্র মূল্য নির্ধারণ করা হয়েছে ইহা সঠিক নহে। (চলবে)
গালাম আযমের মামলায় আসামী পক্ষের সাক্ষ্য গ্রহণ বন্ধ ঘোষনা : ১০/১২/২০১২
জামায়াতে ইসলামীর সাবেক আমীর অধ্যাপক গোলাম আযমের বিরুদ্ধে মামলায় আসামী পক্ষের সাক্ষ্য গ্রহণ বন্ধ ঘোষনা করেছেন ট্রাইব্যুনাল-১। আগামী ১২ তারিখ রাষ্ট্রপক্ষের আর্গুমেন্ট পেশের জন্য ধার্য্য করা হয়েছে।
পরপর দুই দিন গোলাম আযমের মামলায় আসামী পক্ষের সংশ্লিষ্ট আইনজীবী এবং সাক্ষী হাজির না হওয়ায় আজ ট্রাইব্যুনাল এ আদেশ দেন। তবে আদেশে ট্রাইব্যুনাল বলেছেন, ১২ তারিখ যদি আসামী পক্ষ তাদের সাক্ষীদের সাক্ষ্য গ্রহনের জন্য আবেদন করে এবং পরপর দুই দিন সাক্ষী হাজির করতে না পারা বিষয়ে সন্তোষজনক কারণ দেখাতে পারে এবং ট্রাইব্যুনাল যদি সন্তুষ্ট হয় হবে তাদের সাক্ষীদের সাক্ষ্য গ্রহণ করা হতে পারে।
গত রোববার অবরোধের কারনে সকালে আসামী পক্ষের আইনজীবী এবং সাক্ষী হাজির হয়নি। অবরোধ শেষে বিকালে ট্রাইব্যুনাল সাক্ষী হাজিরের জন্য নির্দেশ দিলেও আনা হয়নি। এরপর রোববার ট্রাইব্যুনাল এক আদেশে বলেন এরপর যদি তারা সাক্ষী হাজিরে ব্যর্থ হয় তাহলে তাদের সাক্ষ্য গ্রহণ তক্ষনাৎ বন্ধ করে দেয়া হবে। আজ সোমবারও আসামী পক্ষের আইনজীবী আসেননি এবং সাক্ষী হাজির করা হয়নি। আসামী পক্ষে মিজানুর রহমান নামে একজন আইনজীবী পাঠিয়ে মামলার কার্যক্রম দুই দিনের জন্য মুলতবি চাওয়া হয়। মুলতবি দরখাস্তে অধ্যাপক গোলাম আযমের আইনজীবী মিজানুল ইসলামের ব্যক্তিগত সমস্যার কথা উল্লেখ করা হয়েছে।
দরখাস্তের শুনানী শেষে ট্রাইব্যুনাল আসামী পক্ষের সাক্ষ্য গ্রহণ বন্ধ করে দিয়ে আদেশ দেন। আদেশে ট্রাইব্যুনাল বলেন, আসামী পক্ষের সাক্ষ্য গ্রহণ বিষয়ে রোববার যে আদেশ দেয়া হয়েছে তা বহাল থাকবে। তবে এর সাথে আসামী পক্ষের জন্য একটি সুযোগ খোলা রাখা হয়। অর্থাৎ তারা আবেদন করলে তা বিবেচনা করা হবে।
আসামী পক্ষের মুলতবি আবেদনের বিরোধীতা করে রাষ্ট্রপক্ষে যুক্তি পেশ করেন প্রসিকিউটর গোলাম জেয়াদ আল মালুম।
ট্রাইব্যুনাল চেয়ারম্যান বিচারপতি নিজামুল হকের স্কাইপি সংলাপ দৈনিক আমার দেশে ফাঁস হওয়ার পর থেকে ট্রাইব্যুনাল -১ আসামী পক্ষের কোন মামলা চলেনি আজ পর্যন্ত। আজও অধ্যাপক গোলাম আযমকে ট্রাইব্যুনালে হাজির করা হয়নি।
ট্রাইব্যুনাল চেয়ারম্যান বিচারপতি নিজামুল হক ছাড়াও অপর দুই সদস্য বিচারপতি জাহাঙ্গীর হোসেন, বিচারপতি আনোয়ারুল হক উপস্থিত ছিলেন।
গোলাম আযমের পক্ষে সাক্ষ্য গ্রহণ বিষয়ে শুনানী কাল, ৭/১/২০১৩,
জামায়াতে ইসলামীর সাবেক আমীর অধ্যাপক গোলাম আযমের পক্ষে পুনরায় সাক্ষ্য গ্রহণ শুরু বিষয়ে কাল শুনানী অনুষ্ঠিত হবে। বিচারপতি নিজামুল হকের স্কাইপ কেলেঙ্কারি দৈনিক আমার দেশ পত্রিকায় প্রকাশের পর দুই তিনদিন ট্রাইব্যুনালে হাজির হওয়া থেকে বিরত থাকে আসামী পক্ষ। এ অবস্থায় বিচারপতি নিজামুল হক গত ১০ ডিসেম্বর অধ্যাপক গোলাম আযমের পক্ষে সাক্ষ্য গ্রহণ বন্ধ ঘোষনা করে আদেশ দেন। একই সাথে রাষ্ট্রপক্ষের যুক্তি উপস্থাপনের জন্য তারিখ নির্ধারন করে দেন। আদেশে বলা হয় আসামী পক্ষ যদি তাদের সাক্ষী হাজিরের জন্য দরখাস্ত করে এবং সন্তোষজনক জবাব দিতে পারে তাহলে পুনরায় তাদের সাক্ষ্য গ্রহণ করা হতে পারে। অধ্যাপক গোলাম আযমের পক্ষে প্রথম সাক্ষী হিসেবে তার ছেলে সাবেক ব্রিগেডিয়ার জেনারেল আব্দুল্লাহিল আমান আজমীর জবানবন্দী গ্রহণ চলছিল। এ অবস্থায় অধ্যাপক গোলাম আযমের পক্ষে সাক্ষ্য গ্রহণ বন্ধ করে দেয়া হয়।
আদেশ অনুযায়ী আজ অধ্যাপক গোলাম আযমের মামলায় রাষ্ট্রপক্ষের যুক্তি উপস্থাপনের জন্য নির্ধারিত ছিল। কিন্তু আসামী পক্ষ থেকে দরখাস্ত করে বলা হয় তারা আগামীকাল থেকে তাদের পক্ষে সাক্ষী আনতে পারবে। সেজন্য একদিন মুলতবি চেয়ে দরখাস্ত করেন তারা। আগামীকাল এ বিষয়ে শুনানীর জন্য ধার্য্য করা হয়েছে।
অ্যডভোকেট মিজানুল ইসলাম ট্রাইবুনালে বলেছেন তারা যেকোন উপায়ে আজ প্রথম সাক্ষী আব্দুল্লাহিল আমান আযমীকে হাজির করবেন।
ট্রাইব্যুনাল সদস্য বিচারপতি জাহাঙ্গীর হোসেন, বিচারপতি আনোয়ারুল হক বিচার কার্যক্রম পরিচালনা করেন। চেয়ারম্যান বিচারপতি এটিএম ফজলে কবির গতকাল অনুপস্থিত ছিলেন। তিনি ছুটিতে রয়েছেন।
আসামী পক্ষে অন্যান্যের মধ্যে উপস্থিত ছিলেন অ্যাডভোকেট তাজুল ইসলাম, মনজুর আহমেদ আনসারীম, ব্যারিস্টার ইমরান সিদ্দিক ।
রাষ্ট্রপক্ষে চিফ প্রসিকিউটর গোলাম আরিফ টিপু অন্যান্যের মধ্যে উপস্থিত ছিলেন।
জামায়াতে ইসলামীর সাবেক আমির অধ্যাপক গোলাম আযমের পক্ষে প্রথম সাক্ষী তার ছেলে সাবেক ব্রিগেডিয়ার জেনারেল আব্দুল্লাহিল আমান আযমীর জেরা শুরু হয়েছে আজ থেকে। রাষ্ট্রপক্ষের আইনজীবী সৈয়দ হায়দার আলী তাকে জেরা করেন।
জেরা :
প্রশ্ন : জেনারেল মোস্তাফিজুর রহমান সাহেব আর্মি চিফ ছিলেন।
উত্তর : হ্যা।
প্রশ্ন : এলপিআরে থাকা অবস্থায় তাকে সেনা প্রধান করা হয়েছিল।
উত্তর : জেনারেল মোস্তাফিজুর রহমান সাহেব এল.পি.আর. এ থাকাকালে তাহাকে রিকল করে লেঃ জেনারেল হিসাবে পদোন্নতি দিয়ে সেনাবাহিনীর প্রধান হিসাবে নিয়োগ করা হয়। তখন বাংলাদেশ সেনাবাহিনীর কাঠামো অনুযায়ী সেনা প্রধানের পদবী লেঃ জেনারেল ছিল।
প্রশ্ন : জেনারেল মঈন কখন লেঃ জেনারেল থেকে জেনারেল হলেন বলতে পারবেন?
উত্তর : লেঃ জেনারেল মঈন সেনাপ্রধান থাকাকালীন সেনাপ্রধানের পদটিকে ফোরষ্টার জেনারেলে উন্নীত করে লেঃ জেনারেল মঈনকে পদোন্নতি দিয়ে ফোরষ্টার জেনারেল বা ফুল জেনারেল পদবী দেওয়া হয়। আমার যতদূর মনে পড়ে এটি হয়েছিল ২০০৭ অথবা ২০০৮ সালে।
প্রশ্ন : জেনারেল ওসমানী সাহেবও জেনারেল ছিলেন।
উত্তর : আমার জানামতে জেনারেল ওসমানী সাহেবকেও অনারারী ফোরাষ্টার জেনারেল পদে পদোন্নতি দেওয়া হয়েছিল। তবে, জেনারেল ওসমানী অবিভক্ত পাকিস্তানে কর্ণেল পদবীতে অবসরে গিয়েছিলেন। মুক্তিযুদ্ধের সর্বাধিনায়ক হিসাবে উনাকে সম্মান প্রদর্শনের জন্য অনারারী ফুল জেনারেল করা হয়েছিল। কর্মরত অবস্থায় নয়, সঠিক সাল মনে করতে পারছি না।
প্রশ্নঃ ইন এইড টু সিভিল পাওয়ার ও ইন এইড টু সিভিল অথরিটি এর মধ্যে পার্থক্য আছে কি?
উত্তরঃ আমরা অফিশিয়াল “ইন এইড টু সিভিল অথরিটি” এই টার্মের সাথে পরিচিত নই, আমরা ইন এইড টু সিভিল পাওয়ার টার্মের সহিত পরিচিত।
প্রশ্ন : ১৯৫৮ সালের মার্শাল ল’ এবং ১৯৬৯ সালের মার্শাল ল’ এর মধ্যে গুণগত ও কৌশলগত কোন পার্থক্য ছিল কিনা?
উত্তর : আমার জানা নাই।
প্রশ্ন : ঐ দুটি মার্শাল ল’ এর রেগুলেশন মিলিয়ে দেখেননি আপনি।
উত্তর : না।
প্রশ্ন : ১৯৭১ সালের ২৫ মার্চের অপারেশন সার্চ লাইট শুরু হওয়ার পর বাঙ্গালী সেনা অফিসার যারা তৎকালীন পূর্ব পাকিস্তানে কর্মরত ছিলেন তারা অধিকাংশই মুক্তিযুদ্ধে অংশ গ্রহণ করেছিলেন এবং তারা তখন থেকে বাংলাদেশ সেনাবাহিনীর অফিসার হিসাবে গণ্য হন।
উত্তর : হ্যা।
প্রশ্ন : মুক্তিযুদ্ধ চলাকালীন সময়ে যে সমস্ত বে-সামরিক ব্যক্তি প্রত্যক্ষভাবে মুক্তিযুদ্ধে অংশ গ্রহণ করেছিলেন তাদেরও সেনাবাহিনীর সদস্য করা হয়।
উত্তর : তাদের মধ্য হতে যোগ্যতার ভিত্তিতে দুটি ব্যাচে কমিশন দিয়ে অফিসার হিসাবে বাংলাদেশ সেনাবাহিনীতে নেওয়া হয় এবং একই পদ্ধতিতে সৈনিক পদেও নিয়োগ দেওয়া হয়।
প্রশ্ন : সশস্ত্র বাহিনী দিবস কোনটা?
উত্তর : ২১ নভেম্বর।
প্রশ্ন : কোন কোন আইন দ্বারা সেনাবাহিনী গঠিত হয় তা জানা আছে?
উত্তর : না।
প্রশ্ন : বাংলাদেশের সশস্ত্র বাহিনী সংবিধান স্বীকৃত বাহিনী।
উত্তর : হ্যা।
প্রশ্ন : ব্রিটিশ, পাকিস্তান এবং বাংলাদেশ সশস্ত্র বাহিনীর গঠন প্রক্রিয়ার মধ্যে কোন পার্থক্য আছে কি-না?
উত্তর : বৃটিশ এবং পাকিস্তান সশস্ত্র বাহিনী গঠন সম্পর্কে আমার বিস্তারিত জানা নাই। তবে বৃটিশ-ইন্ডিয়ান আর্মির একটি অংশ নিয়ে পাকিস্তান সেনাবাহিনী গঠিত হয়েছিল মর্মে আমি জানি।
প্রশ্ন : বাংলাদেশ সশস্ত্র বাহিনী বৃটিশ-ইন্ডিয়ান আর্মি এবং পাকিস্তান সশস্ত্র বাহিনীর ধারাবাহিক কোন বাহিনী নয়।
উত্তর : আপনার দাবি সত্য নয়।
প্রশ্ন : মুক্তিযুদ্ধ চলাকালীন সময় আপনার বয়স কত ছিল?
উত্তর : ১২ বছর।
প্রশ্ন : তখন আপনি কোথায় ছিলেন?
উত্তর : ঢাকা।
প্রশ্ন : পরিবারের অন্য সদস্যরা কোথায় ছিল?
উত্তর : আমার পিতা বাদে আমাদের পরিবারের সকল সদস্য ১৯৭২ সালের মাঝামাঝি সময় পর্যন্ত ঢাকায় ছিল। ১৯৭২ সালে জুলাই কিংবা আগষ্টে আমার মেঝ ভাই এবং অক্টোবর বা নভেম্বরে আমার বড় ভাই উচ্চ শিক্ষার জন্য যুক্তরাজ্যে যান। আমি এবং আমার তৃতীয় ভাই আমরা দুজনে এস.এস.সি পাশ করার পর ১৯৭৫ সালে যুক্তরাজ্যে চলে যাই। ১৯৭৬ সালে আমার আম্মা আমার ছোট দুই ভাইকে নিয়ে যুক্তরাজ্যে চলে যান।
প্রশ্ন : ল্যাবরেটরি স্কুলে কখন ভর্তি হন?
উত্তর : ১৯৬৯ সালে ৬ষ্ঠ শ্রেণীতে ভর্তি হই এবং ১৯৭২ সাল পর্যন্ত আমি ঐ স্কুলে পড়াশুনা করি। ১৯৭৪ সালে আমি সিলেট অগ্রগামী উচ্চ বিদ্যালয় হতে এস.এস.সি পাশ করি। আমি ১৯৭২ সালের সেপ্টেম্বরের দিক থেকে ১৯৭৪ সালের সেপ্টেম্বর/ অক্টোবর পর্যন্ত সিলেটে ছিলাম তৎপর ঢাকায় চলে আসি।
প্রশ্ন : ও লেভেল কোর্স কতদিনের?
উত্তর : ও লেভেল আমাদের দেশের এস.এস.সি এর সমমানের। ও লেভেল কোর্সে সিলেবাস কভার করতে কম/ বেশি দুই বৎসর সময় লাগে।
প্রশ্ন : ও লেভেল করার পর আপনি কি এ লেভেল করেছেন?
উত্তর : আমি যুক্তরাজ্যে এ লেভেল দুই বছর পড়েছি। কিন্তু পারিবারিক সিদ্ধান্তের কারণে ১৯৭৮ সালের সেপ্টেম্বর/ অক্টোবর মাসে আমি দেশে ফিরে আসি ।
প্রশ্ন : এইচএসসি কোথা থেকে পাশ করেছেন?
উত্তর : ১৯৭৯ সালে আমি আইডিয়াল কলেজ থেকে এইচ.এস.সি পাশ করি।
উত্তর : রেজাল্ট কি ছিল?
উত্তর : তৃতীয় বিভাগ। যুক্তরাজ্যে দ্ইু বছর এ লেভেল পড়ার কারনে দেশের সিলেবাসের সাথে আমি এডজাস্ট করতে পারিনি। ফলে একটি বিষয়ে ফল খারাপ হয়।
প্রশ্ন : ১৯৯১ সালে আপনার চাকরি জীবনে কোন সমস্যা হয়েছিল?
উত্তর : আমার মনে পড়েনা।
প্রশ্ন : বিদেশী নাগরিক হওয়া সত্তেও আপনার বাবা আপনার বাসায় বসে রাজনীতি করেছেন। আপনার সার্ভিস রেকর্ডে একথা আছে।
উত্তর : ১৯৯১ সালে আমার পিতা আমার সিলেটের বাসায় বেড়াতে গিয়েছিলেন। নিয়ম মেনে কর্তৃপক্ষের অনুমতি নিয়েই তিনি বাসায় ছিলেন। ঐ সময় আমার বাসায় অবস্থান করে তিনি রাজনৈতিক কর্মকান্ড করেছেন এটা সঠিক নয়। তিনি আমার বাসায় যাবার কারনে আমার চাকরিতে কোন অসুবিধা হয়নি এবং আমার সার্ভিস রেকর্ডেও এসব নেই।
প্রশ্ন : ১৯৯৪ সালে মালেশিয়ায় স্টাফ কোর্স সম্পন্নের সময় স্থানীয় ইন্টারন্যাশনাল ইসলামী ইউনিভার্সিটির প্রশিক্ষক এবং ছাত্রগণ যারা মূলতঃ বাংলাদেশের জামায়াতে ইসলামীর সদস্য তাদের সাথে নিয়মিত যোগাযোগ রাখেন আপনি।
উত্তর : এটা সত্য নয়। তবে এ মর্মে একটি মিথ্যা রিপোর্ট বাংলাদেশ দূতাবাস থেকে ডি.জি.এফ.আই হেড কোয়ার্টারে প্রেরণা করা হয়েছিল মর্মে আমি জেনেছিলাম এ নিয়ে কোন অভিযোগ বা তদন্ত হয়নি।
প্রশ্নঃ ১৯৯৮ সালের ২৪ এপ্রিল তারিখে আপনার পিতা আপনার চট্টগ্রাম সেনানিবাসের সরকারি বাসায় কয়েকজন দেহরক্ষী ও রাজনৈতিক সঙ্গী সহ গমন করেন এবং সেখানে অবস্থান করেন কিনা?
উত্তরঃ ১৯৯৮ সালের ১৪ এপ্রিল তারিখে আমার পিতা আমার মা এবং ফুফু সহ আমার অসুস্থ স্ত্রী ও অসুস্থ সন্তানকে দেখার জন্য আমার চট্টগ্রাম সেনানিবাসে সরকারি বাসভবনে গমন করেন। আমার বাবার কখনও কোন দেহরক্ষী ছিলেন না। তবে, উনি সফরে গেলে উনার নিরপত্তার জন্য কিছু লোক সাথে থাকতেন। ১৪ এপ্রিল আমার বাবার নিরাপত্তার জন্য যারা উনার সাথে গিয়েছিলেন তারা আমার বাবাকে বাসায় পৌছে দিয়েই চলে গিয়েছিলেন।
০৭-০২-২০১৩ ইং পূনরায় জেরা শুরু ঃ-
এদিন জেরায় তিনি যেসব উত্তর দেন তা নিম্নরূপ
সেনাবাহিনীতে সেরা অফিসার হিসাবে গণ্য করা হয় যাদের ভাল একাডেমিক কোয়ালিফিকেশন থাকে, যাদের মানবিক ভাল গুনাবলী থাকে এবং যাদের ভাল পেশাগত দক্ষতা থাকে। তবে এই বিষয়ে কোন বিধিমালা নাই। তবে মেজর, লে:কর্ণেল এবং কর্ণেলদের জন্য প্রতি বছর একটি মেরিট লিষ্ট তৈরী করা হয়। ইহা সত্য নয় যে, আমাকে সেনাবাহিনীর সেরা অফিসারদের মধ্যে একজন গণ্য করা হয় না এবং আমাকে অনুকরনীয় আদর্শ হিসেবে গণ্য করা হয় না। আমাকে সেনাবাহিনী থেকে বরখাস্ত করার চিঠি ট্রাইব্যুনালে দাখিল করিনি। সেনাবাহিনীর কোন অফিসার বা সদস্যকে বরখাস্ত করা হইলে তাতে সাধারনত সংশ্লিষ্ট আইনের ধারা উল্লেখ থাকে। আমার বরখাস্ত সংক্রান্ত প্রতিরক্ষা মন্ত্রনালয়ের প্রজ্ঞাপনে আইনের ধারা উল্লেখ আছে যাহা সেনা সদর দফতর হইতে একটি চিঠির মাধ্যমে আমাকে অবহিত করা হইয়াছে। ইহা সত্য নহে যে, সম্পূর্ণ রাজনৈতিক কারনে কোন অপরাধ ছাড়া, কোন তদন্ত ছাড়া আমাকে চাকুরী হইতে বরখাস্ত করা হয় নাই। ১৯৭৫ এবং ১৯৮২ সনের সামরিক শাসন চলাকালীন সময়ে বাংলাদেশে কোন মুক্তিযুদ্ধ ছিল না। দেশ স্বাধীন হওয়ার পরে বাংলাদেশে যতগুলি সামরিক শাসন হয়েছে সেগুলিকে বাংলাদেশের সর্বোচ্চ আদালত বে-আইনি ঘোষনা করেছে মর্মে শুনেছি। অধ্যাপক পদবী আইনের মাধ্যমে অর্জন করতে হয়। আমার পিতা কারমাইকেল কলেজে ১৯৫০ হইতে ১৯৫৫ সাল পর্যন্ত অধ্যাপনা করতেন বিধায় তাকে অধ্যাপক বলা হয়। ঐ সময় প্রভাষক পদ ছিল কিনা তাহা আমার জানা নাই। আমার জানা মতে ঐ সময় বিশ্ববিদ্যালয় ও কলেজে সকল শিক্ষককে অধ্যাপক বলা হতো, তখন শিক্ষকদের মধ্যে কোন শ্রেণী বিভাগ ছিল না। ইহা সত্য নহে যে, আমার পিতা কখনও অধ্যাপক ছিলেন না।
প্রশ্ন ঃ আপনার পিতার রাজনৈতিক দর্শনে আপনি বিশ্বাসী কিনা ?
উত্তর ঃ আমি এ বিষয়ে মতামত দিতে বাধ্য নই।
প্রশ্ন ঃ আপনি আপনার পিতার রাজনৈতিক দর্শনের অনুসারী কিনা?
উত্তর ঃ আমি কোন রাজনৈতিক দলের সহিত সম্পৃক্ত নই বিধায় আমার পিতার রাজনৈতিক দর্শনের অনুসারী হওয়ার প্রশ্নই উঠে না। সুতরাং এ প্রশ্ন অবান্তর।
আমরা ছয় ভাই, আমাদের কোন বোন নাই। আমার ভাইয়েরা কোন রাজনীতি করে না। তারা সকলেই বিদেশে অবস্থান করে। ১৯৫২ সালে আমার পিতা রংপুর কারমাইকেল কলেজে ছিলেন, ঐ সময় তিনি ঢাকায় ছিলেন না। অবিভক্ত পাকিস্তানের জামায়াতে ইসলামীর তৎকালীন আমির মাওলানা মওদূদী সাহেবের সঙ্গে আমাদের পারিবারিকভাবে কোন পরিচয় বা সম্পর্ক ছিল না। মওলানা মওদূদী সাহেবের ছেলে মেয়েরা কে কি করতেন তাহাও আমি জানি না। তার ছেলে মেয়েদের সঙ্গে আমার জীবনেও দেখা সাক্ষাত হয় নাই। আমি শুনেছি যে, ১৯৪০ দশকের শেষের দিকে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে ছাত্র সংসদে ভি,পি ও জি, এস পদে একজন মুসলমান হলে অপরজন হিন্দু হতেন, তবে নির্বাচনের মাধ্যমে হতেন। আমি আমার জবানবন্দীতে যে সমস্ত ব্যক্তিদের উদ্ধৃতি দিয়েছি তার সূত্র উল্লেখ করি নাই, তবে ট্রাইব্যুনাল চাইলে আমি সেই সকল বই দাখিল করিতে পারিব। মাওলানা মওদূদী সাহেব কতবার ঢাকায় এসেছিল তাহা আমি বলতে পারব না। আমি আমার বাবার বইয়ে পড়েছি যে, পঞ্চাশের দশকে একবার এবং ১৯৭১ সালে আরেকবার তিনি ঢাকায় এসেছিলেন। এছাড়া তিনি ঢাকায় এসেছিলেন কিনা তাহা আমার জানা নাই। ১৯৭০ সালে তিনি যখন ঢাকায় এসেছিলেন তখন তার সঙ্গে আমার দেখা হয়েছিল কিনা তাহা আমার মনে পড়ছে না। ১৯৭১ সালের ২৬শে মার্চ তারিখে আমার পিতা ঢাকার মগবাজারস্থ আমাদের বাসাতেই ছিলেন। ঐ দিন তিনি সারাদিনই বাসায় ছিলেন এবং খুব উদ্বিগ্ন ও চিন্তিত ছিলেন। ঐদিন কারফিউ বলবৎ ছিল। আমার পিতা ঐ দিন বাড়ির বাহিরে যান নাই এবং বাহির থেকেও কেউ আমাদের বাড়িতে আসে নাই। ১৯৭১ সালের ২৫শে মার্চের রাতে পাকিস্তান সামরিক বাহিনী যে হত্যাকান্ড চালিয়েছিল তার পরে সর্বপ্রথম কবে আমার পিতা বাসা থেকে বাহিরে বের হন তাহা আমার স্মরন নাই। তবে তিনি কয়েকদিন পর্যন্ত বাসা থেকে বের হন নাই। কয়েকদিন পরে তিনি যখন বাসা থেকে বের হন তখন তিনি কোথায় কখন কার কাছে গিয়েছিলেন তাহা আমি বলতে পারবো না। ৪ঠা এপ্রিল ১৯৭১ ইং তারিখে আমার পিতা পাকিস্তান সামরিক কর্তৃপক্ষের সহিত সাক্ষাত করেছেন মর্মে আমি পরে জেনেছি তবে ঐ সময়ে আমি তার সহিত ছিলাম না। ঐ সাক্ষাতের সময় তাদের মধ্যে কি আলোচনা হয়েছিল কেবল মাত্র যারা উপস্থিত ছিল তারাই জানেন, অন্য কেউ জানে না। ৪ঠা এপ্রিল ১৯৭১ইং তারিখে পূর্বে কিংবা পরে আমার পিতা সামরিক কর্তৃপক্ষের সহিত সাক্ষাত করেছিলেন কিনা তাহা আমার জানা নাই। মুক্তিযুদ্ধ চলাকালীন সময়ে আমার পিতা একাধিকবার পাকিস্তানে গিয়েছিলেন, তবে মোট কতবার গিয়েছিলেন তাহা আমার জানা নাই। আমার পিতা তৎকালীন পূর্ব পাকিস্তানের জামায়াতে ইসলামীর আমির ছিলেন বিধায় কয়েক মাস অন্তর অন্তর পাকিস্তানের লাহোরে অনুষ্ঠিত কেন্দ্রীয় জামায়াতে ইসলামীর মজলিসে শুরায় অংশগ্রহন করতে একাধিকবার সেখানে গিয়েছিলেন। ১৯৭১ সালে অবরুদ্ধ বাংলাদেশের তৎকালীন পূর্ব পাকিস্তানের জামায়াতে ইসলামীর মজলিসে শুরার বৈঠক কোথায় অনুষ্ঠিত হইতো বা আদৌ হইতো কিনা তাহা আমার জানা নাই। আমার পিতা ১৯৭১ সালে ঢাকার বাইরে গেলে আমি তার সঙ্গে যেতাম না। তবে তিনি ঐ সময় বাসার বাইরে কম যেতেন। তৎকালীন পূর্ব পাকিস্তানে ১৯৭০ সালের নির্বাচন উপলক্ষ্যে আমার পিতা ঢাকার বাইরে কয়েকবার নির্বাচনী সভায় যোগ দিয়েছিলেন মর্মে আমি শুনেছি। তবে তিনি সাধারনত সাংগঠনিক কাজের জন্য ঢাকার বাইরে যেতেন মর্মে শুনেছি। ১৯৭১ সালে মুক্তিযুদ্ধ চলাকালীন সময়ে আমার পিতা দুই/একবার ঢাকার বাইরে গিয়েছিলেন মর্মে আমি পরবর্তীতে পত্র পত্রিকার মাধ্যমে জেনেছি। ১৯৭১ সালে মুক্তিযুদ্ধ চলাকালীন সময়ে আমার পিতা বাংলাদেশের অন্যান্য রাজনৈতিক দল যেমন মুসলিম লীগ, পি.ডি.পি, নেজামী ইসলামী প্রমুখ দলের নেতাদের সঙ্গে কোন বৈঠক করেছিলেন কিনা তাহা আমার জানা নাই। ১৯৭১ সালে মুক্তিযুদ্ধ চলাকালীন সময়ে আমার পিতা বাসার বাইরে কোথায়, কখন, কার নিকট যেতেন তাহা আমি জানি না। আমার পিতার রচিত “জীবনে যা দেখলাম” নামীয় বইটি একটি আত্মজীবনী মূলক বই এবং এটি ৯ খন্ডে প্রকাশিত। এই খন্ডের মধ্যে আমি ট্রাইব্যুনালে প্রথম ও তৃতীয় খনড দাখিল করেছি যাহা প্রদর্শনী ঐ এবং ঐ-১ হিসেবে প্রদর্শিত হইয়াছে। উক্ত বইয়ের তৃতীয় খন্ডে (প্রদশর্নী ঐ১) ১৩৩ নম্বর পৃষ্ঠায় প্রথম লাইনে উল্লেখিত মুহাম্মদ আলী আমার পিতার ড্রাইভার ছিলেন। ১৯৭১ সালের ২৬ মার্চ তারিখে আমার পিতা ড্রাইভার সহ গাড়ি নিয়ে বাসার বাইরে যান এবং ঢাকা শহরের ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় এলাকা, নবাবপুর রোড, গুলিস্তান এলাকায় ১৯৭১ সালের ২৫শে মার্চ রাত্রে সংঘটিত হত্যাযজ্ঞ ও ধ্বংসযজ্ঞ নিজ চোখে দেখেন এবং মনে করেন যে, সেনাবাহিনী যেন কোন শত্রুদেশ জয় করার জন্য আক্রমন চালিয়েছে। বই বক্তব্য সমূহ উক্ত বইয়ের ১৩৩ নম্বর পৃষ্ঠায় উল্লেখ আছে। (চলবে)
০৭-০২-২০১৩ ইং পুনরায় জেরা শুরুঃ-
উক্ত বইয়ের ১৩০ নম্বর পৃষ্ঠায় উল্লেখ আছে যে, ২৫শে মার্চ ১৯৭১ তারিখে দিবাগত রাত সাড়ে দশটার সময় আমার পিতা লেখক কামানের আওয়াজ শুনতে পান এবং দেখা গেল আকাশ লাল হয়ে গেল এবং বোঝা গেল কাথাও আগুন জ্বলছে এবং তার বাসার টেলিফোন বিকল পান। ইহা ছাড়া এশার নামাজের পর থেকে লোকদের মুখে শুনতে পান যে, শহরের বহু জায়গায় বহু লোক বেরিকেড দিয়ে পথ রোধ করে আছে। রাত এগারোটার দিকে জানতে পারেন যে, নয়াবাজার কাঠের দোকানগুলির আগুন আকাশ পর্যন্ত উচুঁ হয়ে জ্বলছে। তিনি বুঝতে পারেন যে, সেনাবাহিনী উক্ত কর্মটি করিয়াছে এবং তাহার বাড়ির টিনের চালে নিপাতিত একটি মর্টার সেলের মজবুত খোসা দেখতে পান।
উক্ত বইয়ে এর পরেই উল্লেখ আছে যে, তখনকার চলমান সংলাপ প্রক্রিয়া ফেল হলে কিছু একটা অঘটন ঘটবে বলে তিনি আশংকা করেছিলেন এবং ঘটনার বর্ণনায় উনি ধারণা করলেন সেনাবাহিনী শহর দখল করার জন্য শক্তি প্রয়োগ করছে। বিদ্রোহীদের দমন করার জন্য রীতিমত যুদ্ধ বাধিয়ে দিয়েছে।
উক্ত বইয়ের ১৩১ পৃষ্ঠায় আরও উল্লেখ আছে যে, “আমাদের বাড়ির সারিতে ৮/১০ টি বাড়ি। এই বাড়িগুলোর উত্তর দিকে ইস্পাহানি কলোনীর দীর্ঘ দেয়াল। রাত ১টার সময় খবর পেলাম, ঐ দেয়াল টপকিয়ে দুজন পুলিশ আশ্রয় নিয়েছে। তারা নাকি রাজাকার পুলিশ লাইন থেকে পালিয়ে এসেছে। সেনাবাহিনী পুলিশ লাইন আক্রমন করে হত্যাকান্ড চালাচ্ছে। পুলিশেরা যে দিকে সম্ভব পালানোর চেষ্টা করছে।”
উক্ত বইয়ের ২০৭ পৃষ্ঠায় “প্রেসিডেন্ট ইয়াহিয়ার সাথে সাক্ষাত” শিরোনামে তৃতীয় অনুচ্ছেদে উল্লেখ আছে যে, “প্রথমে জিজ্ঞাসা করলেন যে, পূর্ব পাকিস্তান থেকে কবে এসেছেন ? সেখানকার অবস্থা কেমন ? জাববে বললাম যে, ৫/৬ দিন আগে লাহোর পৌছেছি। সেখানকার অবস্থা আপনাকে অবগত করানোর জন্যেই পিন্ডি এসেছি। তা না হলে ওয়ার্কিং কমিটির বৈঠক শেষে ঢাকা ফিরে যেতাম। তারপর বললাম, “ আপনি তো পূর্ব পাকিস্তানেরও প্রেসিডেন্ট ২৫শে মার্চ জেনারেল টিক্কা খান সামরিক অপারেশন শুরু করার পর গত ৮ মাসের মধ্যে আপনি একবারও সেখানকার অবস্থা সরেজমিনে দেখার জন্য গেলেন না। জনগনের পক্ষ থেকে তার রাজনৈতিক নেতৃবৃন্দ আপনার সাক্ষাতের সুযোগ পেলেন না। সেখানে গেলে জনগনের প্রতিক্রিয়া স্বচক্ষে দেখে আসতে পারতেন।”
উক্ত বইয়ের ১৫৪ পৃষ্ঠায় শেষ অনুচ্ছেদে নূরুল আমিন সাহেবের বাড়িতে খাজা খয়রুদ্দিন এবং মৌলভী ফরিদ আহম্মেদ সাহেবের উদ্দোগে ১৯৭১ সালের এপিল মাসের শেষের দিকে একটি বৈঠক হয়। সেই বৈঠকে আমন্ত্রিতদের মধ্যে আমার পিতা অধ্যাপক গোলাম আযম সাহেব সহ বিভিন্ন রাজনৈতিক দলের (আওয়ামী লীগের দুইজন নেতা সহ) প্রতিনিধি উপস্থিত ছিলেন। উক্ত বইয়ের ১৫৭ পৃষ্ঠায় দ্বিতীয় অনুচ্ছেদে উল্লেখ আছে যে, সর্ব সম্মতিক্রমে মুসলীম লীগ নেতা খাজা খয়রুদ্দিন সাহেবকে আহ্বায়ক করে শান্তি কমিটি নামে একটি কমিটি গঠন করা হয়।
আমার অধ্যয়নের মাধ্যমে পরবর্তীতে যতদূর জেনেছি তাতে আমার যতদূর মনে পড়ে ১৯৭১ সালে মুক্তিযুদ্ধ চলাকলীন সময়ে পাকিস্তান সামরিক সরকার একটি আদেশের মাধ্যমে আওয়ামী লীগকে নিষিদ্ধ ঘোষনা করে। আমি আমার অধ্যায়নে যতটুকু জানতে পেরেছি ১৯৭০ সালের নির্বাচনে নির্বাচিত এম.এন.এ. দের মধ্য হতে অনেকেই পাকিস্তান সরকারের অনুগত্য ও সহানূভূতি প্রকাশ করেছিল এবং সেই মর্মে একটি গেজেট নটিফিকেশন বের হয়েছিল। যারা অনুগত্য প্রকাশ করেনাই তাদের পদগুলি শুন্য ঘোষনা করে সেই আসনগুলেতে পরবর্তীতে উপ-নির্বাচন অনুষ্ঠিত হয়েছিল। এই উপনির্বাচনে সম্ভবত জামায়াতে ইসলামী অংশগ্রহন করেছিল। ১৯৭১ সালে অধ্যাপক গোলাম আযম দুষ্কৃতিকারী বলতে সশস্ত্র প্রতিপক্ষকে বুঝিয়েছেন বলে আমি জানতে পেরেছি। তিনি কোন অবস্থাতেই নিরস্ত্র, নিরীহ জনসাধারনকে বোঝান নাই বা কোন বিশেষ ধর্ম শ্রেনী, গোত্র বা দলকে বোঝান নাই যারা অখন্ড পাকিস্তানে বিশ্বাসী ছিলেন তাদের সশস্ত্র প্রতিপক্ষকে দুষ্কৃতিকারী হিসাবে আমার পিতা আখ্যায়িত করেছিলেন।
১৯৭১ সালে অখন্ড পাকিস্তানে বিশ্বাসীদের মধ্যে রাজনৈতিক নেতৃবৃন্দ বে-সামরিক ও নিরস্ত্র ছিলেন। তৎকালীন রাজনৈতিক নেতৃবৃন্দ কেন্দ্রীয় শান্তি কমিটি গঠন করেছিলেন। ১৯৭১ সালে শান্তি কমিটি কি করেছিল সে সম্পর্কে আমার সুষ্পষ্ট ধারনা নাই। সারা দেশে জেলা, মহকুমা, থানা এবং ইউনিয়নে শান্তি কমিটির কার্যক্রম তৎকালীন মুসলিম লীগের নেতাদের অধীনে পরিচালিত হতো। তবে এ সকল কমিটি কেন্দ্রীয় শান্তি কমিটির অধীনে পরিচালিত হতো কিনা তাহা আমার জানা নাই। মুক্তিযুদ্ধ চলাকলীন সময়ে আমার পিতা ৪ঠা ডিসেম্বর পাকিস্তান থেকে বিমানযোগে ঢাকা বিমান বন্দরে এসে নামতে না পেরে বাধ্য হয়ে সৌদিআরব যান, সেখানে কয়েকদিন অবস্থান করার পর পাকিস্তানে ফিরে যান। মুক্তিযুদ্ধ চলাকালীন সময়ে আমার পিতা কোন বিদেশী নাগরিক বা নেতৃবৃন্দ বা সাংবাদিকদের সংগে দেখা সাক্ষাত করেছিলেন কিনা তাহা আমার জানা নাই। দৈনিক সংগ্রাম প্রত্রিকা পাকিস্তান আমল থেকেই প্রকাশিত হতো মর্মে আমি জেনেছি। তবে জামায়াতে ইসলামীর মুখপাত্র ছিল কিনা তাহা আমার জানা নাই। কোন পত্রিকাই কোন দলের মুখপাত্র হিসাবে প্রকাশিত হয় কিনা তাহা আমার জানা নাই। (চলবে)
১০-০২-২০১৩ পুনরায় জেরা শুরুঃ-
দৈনিক সংগ্রাম পত্রিকা সম্ভবত সর্বপ্রথম ১৯৭০ সালের জানুয়ারী মাসে প্রকাশ হয়। তবে ঐ সময় উহার প্রতিষ্ঠাতা সম্পাদক ও প্রকাশক কে ছিলেন তাহা আমার জানা নাই। ‘জীবনে যা দেখলাম’ বইয়ের তৃতীয় খন্ডের (প্রর্দশনী- ঐ১) ৯৬ পৃষ্ঠার তৃতীয় অনুচ্ছেদে ‘পত্রিকার সহযোগীতার কোন আশা না থাকায় মুরাদ সাহেবের কয়েক মাস ব্যাপী অকান্ত প্রচেষ্টায় জনসভার পূর্বদিন ১৭ জানুয়ারী থেকে দৈনিক সংগ্রাম পত্রিকা প্রকাশের ব্যবস্থা করা সম্ভব হয়’ উল্লেখ আছে। আমার বাবার লেখা কোন বই দেশে বা দেশের বাইরে কোন পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়ে পাঠ্যসূচীর অন্তর্ভূক্ত আছে কিনা তাহা আমার জানা নাই। আমাদের দেশের ধর্মীয় সংগঠনগুলোর উপর সামান্য ধারনা আছে। জামায়াতে ইসলামী একটি রাজনৈতিক সংগঠন বলে মনে করি। বৃটিশ ভারত বিভক্ত হওয়া এবং পাকিস্তান থেকে বাংলাদেশ স্বাধীন হওয়া দুইটি ভিন্ন প্রেক্ষাপটে হয়েছে। আওয়ামলী লীগ এবং জামায়াতে ইসলমাী কখনও একই জোটবদ্ধ হয়ে আন্দোলন করেছ বলে আমার জানা নাই। তবে উক্ত দুটি দলসহ অন্যান্য দল ও জোটের নেতৃবৃন্দ একত্রে বৈঠক করে একই কর্মসূচি প্রনয়ন করে যুগপৎ আন্দোলন করেছে। ১৯৯১ সালের জাতীয় নির্বাচনে আওয়ামলী লীগ সম্ভবত ৮৬টি আসন পেয়েছিল। ঐ নির্বাচনে জামায়াতে ইসলামী সম্ভবত ১৮টি আসন পেয়েছিল। দেশ স্বাধীন হওয়ার পর ১৯৭৮ সালের আগে আমার পিতার নাগরিকত্ব ফিরে পাওয়ার আবেদন সংক্রান্ত কাগজপত্র আমি ট্রাইব্যুনালে দাখিল করি নাই। বাংলাদেশ স্বাধীন হওয়ার পর আমার পিতাসহ যাদের নাগরিকত্ব বাতিল করা হয়েছিল তাহা কি প্রক্রিয়ায় হয়েছিল তাহা আমার জানা নাই। বিচারপতি বদরুল হায়দার চৌধুরী রাষ্ট্রপতি নির্বাচনে কতভোট পেয়েছিলেন তাহা আমার জানা নাই। আমার পিতা পাকিস্তানি পাসপোর্ট নিয়ে বাংলাদেশে আসার পরও তিনি বাংলাদেশের নাগরিক ছিলেন। আমার পিতা দেশ স্বাধীন হওয়ার পর লন্ডনে থাকা অবস্থায় বেশ কয়েকবার সৌদি আরবে গিয়েছিলেন, তবে সঠিক সংখ্যা মনে নাই। আমাদের আত্মীয় স্বজন যাহারা হজ্জ্ব করতে গিয়েছিলেন তাদের মধ্যে কারো কারো সংগে আমার পিতার সৌদি আরবে দেখা হয়েছিল। উল্লেখ্য তখন কয়েকজন আত্মীয়ের সংগেও আমার পিতার দেখা হয়েছিল মর্মে আমার পিতার লিখিত বইয়ে লেখা আছে বলে আমার মনে পড়ে। সৌদি আরবে সফরকালে আমার পিতা সৌদি বাদশার সাথে দেখা করেছেন মর্মে শুনেছি, তবে কতবার দেখা হয়েছে তাহা বলতে পারব না। পাকিস্তান আমলে সৌদি বাদশার সংগে সম্ভবত আমার পিতার দেখা হয় নাই।
মার্শাল ল’ রেগুলেটেড হয় মার্শাল ল’ রেগুলেশন দ্বারা। মার্শাল ল’ জারী করার পর সামরিক সরকার তাদের প্রয়োজনে মার্শাল ল’ রেগুলেশন ও রুলস প্রনয়ন করে। মার্শাল ল’ এর জন্য কোন নির্ধারিত রুলস রেগুলেশন নাই। তবে একই ধরনের সাংগঠনিক কাঠামো বা একই ধরনের দর্শন থাকলে বিধি বিধানগুলি একই রকমের হয় (প্রসিকিউশনের আপত্তি সহকারে)। ১৯৫৮ সালের মার্শাল ল’ এর সময় রাজনৈতিক দল নিষিদ্ধ করা হয়েছিল তবে ১৯৬৯ সালের মার্শাল ল’ এর সময় কোন রাজনৈতিক দল নিষিদ্ধ করা হয়েছিল কিনা তাহা আমার জানা নাই। প্রদর্শনী- অ, ই, ঈ কোন সময়ের মার্শাল ল’ এর উপর ভিত্তি করে প্রনয়ন করা হয়েছিল তাহা প্রদর্শনীতে উল্লেখ নাই। ঐ প্রদর্শনীগুলিতে কোন আইন বা সূত্র উল্লেখ নাই। আমি ১২ নভেম্বর ২০১২ ইং তারিখে এই মামলায় প্রথম সাক্ষ্য প্রদান শুরু করি এবং ঐ প্রদর্শনীগুলিতে ১৮ ই নভেম্বর ২০১২ তারিখে দস্তখত করি। প্রদর্শনী- উ তে এর রানিং পৃষ্ঠা ১৮ এর তৃতীয় অনুচ্ছেদে “ঝুবফ গড়ঁফঁফর ংবষবপঃবফ ঢ়ৎড়ভ. এযঁষধস অুধস ধং ড়হব ড়ভ ঃযব ৫ গবসনবৎ ঃবধস ভড়ৎ ষড়ননুরহম রহ ঃযব অংংবসনষু ভড়ৎ ভৎধসরহম ওংষধসরপ পড়হংঃরঃঁঃরড়হ” উল্লেখ আছে। ঐ একই প্রদর্শনীর একই পৃষ্ঠায় বাম পাশে “ঐড়ি যব নবমধহ ড়িৎশ ধহফ নবপধসব ধ ঃড়ঢ় সধহ?” এ শিরোনামে উল্লেখিত “যব” বলতে আমার পিতা প্রফেসর গোলাম আযম সাহেবকে বোঝানো হয়েছে। প্রদর্শনী- উ বইটি জনৈক মুহাম্মদ নূরুজ্জামান কর্তৃক লিখিত আমার পিতার জীবনীর উপর লিখিত একটি বই। উল্লেখিত বইয়ে লেখকের পরিচিতি উল্লেখ নাই। উক্ত লেখকের পরিচিতি সম্পর্কে আমি নিশ্চিত নই। উক্ত প্রদর্শনীর রানিং পৃষ্ঠা ২ এ “চৎবভধপব” এর সপ্তম অনুচ্ছেদে “ও বীঢ়ৎবংং সু ঃযধহশং ঃড় ঔধসধধঃ ষবধফবৎ গঁযধসসধফ কধসধৎুুঁধসধহ ভড়ৎ যরং ংরহপবৎব পড়-ড়ঢ়বৎধঃরড়হ ধহফ ঔধসধধঃ-ব- ওংষধসর ইধহমষধফবংয ভড়ৎ ধষষড়রিহম সব ঃড় মড় ঃযৎড়ঁময ঃযব ৎবপড়ৎফং ধহফ ভরষবং”. উল্লেখ রহিয়াছে। ঐ প্রদর্শনী বইটি ০৭-১১-১৯৯২ ইং তারিখে প্রথম প্রকাশিত হয় মর্মে সেখানে উল্লেখ রহিয়াছে। ঐ সময় আমার পিতা জামায়াতে ইসলামীর আমির ছিলেন। প্রদর্শনী- ঊ শেখ আখতার হোসেন কর্তৃক লিখিত “জননেতা গোলাম আযম” নামক বইয়ে রানিং পৃষ্ঠা ১০৩ (মূল বইয়ের ২০ পৃষ্ঠা) এর বাম পাশে দ্বিতীয় অনুচ্ছেদে “১৯৭৩ সালের জানুয়ারীতে সৌদি আরবের বাদশা ফয়সালের সাথে তিনি প্রথম দেখা করেন। বাংলাদেশের সংবিধানে ধর্মনিরপেক্ষতাবাদ ও সমাজতন্ত্রকে জাতীয় আদর্শ বলে ঘোষণা করায় বাংলাদেশের মুসলিম জনগণের পক্ষ থেকে বক্তব্য নিয়ে গোলাম আজম সৌদি বাদশাহ ফয়সালের সাহায্য চান এবং বাংলাদেশ সরকারের উপর নৈতিক চাপ সৃষ্টি করার জন্য অনুরোধ জানান, যাতে ইসলামের বিরুদ্ধে দাঁড় করানো শাসনতান্ত্রিক প্রতিবন্ধকতা অপসারিত হয়।’ উল্লেখ রহিয়াছে। লেখকের পরিচিতি উক্ত বইয়ে উল্লেখ নাই এবং আমারও জানা নাই। প্রদর্শনী- ঊ বইটি আমি অনেক আগে পড়েছি। উক্ত বইয়ের ১৯ পৃষ্ঠায় (রানিং পৃষ্ঠা ১০২) ৫ নম্বর অনুচ্ছেদে “(১) ১৯৭৩ সালে জুলাই মাসে লিবিয়ার ত্রিপলিতে অনুষ্ঠিত আন্তর্জাতিক ইসলামী যুব সম্মেলনে ভাষণ দেন” উল্লেখ রহিয়াছে। আমার পিতা ভাষণ দেওয়ার বিষয়ে উল্লেখ রহিয়াছে। তবে সম্মেলনটি কি বিষয়ে ছিল এবং কি বক্তব্য দিয়েছিলেন তাহা আমার জানা নাই। উক্ত অনুচ্ছেদে “(৪) ১৯৭৭ সালে জুলাইতে ইস্তাম্বুলে অনুষ্ঠিত টঋঝঙ- এর বার্ষিক সম্মেলনে ভাষণ দেন” উল্লেখ রহিয়াছে।
আমার পিতার ভাষণ দেওয়ার বিষয়ে উল্লেখ রহিয়াছে। তবে সম্মেলনটি কি বিষয়ে ছিল এবং কি বক্তব্য দিয়েছিলেন তাহাও আমার জানা নাই। ঐ সময় আমার পিতা বাধ্য হয়ে পাকিস্তানী পাসপোর্ট নিয়ে ঐ সকল দেশ ভ্রমণ করেন। উক্ত বইতে প্রকাশকাল উল্লেখ নাই। এ বইটি ৬৪ পৃষ্ঠা সম্বলিত এবং বইটির মূল্য হিসাবে নিউজপ্রিন্ট কাগজে ১০/- এবং সাদা কাগজে ১৫/- টাকা উল্লেখ রহিয়াছে। জামায়াতে ইসলমাীর প্রচারমূলক বই কিনা আমার জানা নাই এবং বইটির নামমাত্র মূল্য নির্ধারণ করা হয়েছে ইহা সঠিক নহে। (চলবে)
গালাম আযমের মামলায় আসামী পক্ষের সাক্ষ্য গ্রহণ বন্ধ ঘোষনা : ১০/১২/২০১২
জামায়াতে ইসলামীর সাবেক আমীর অধ্যাপক গোলাম আযমের বিরুদ্ধে মামলায় আসামী পক্ষের সাক্ষ্য গ্রহণ বন্ধ ঘোষনা করেছেন ট্রাইব্যুনাল-১। আগামী ১২ তারিখ রাষ্ট্রপক্ষের আর্গুমেন্ট পেশের জন্য ধার্য্য করা হয়েছে।
পরপর দুই দিন গোলাম আযমের মামলায় আসামী পক্ষের সংশ্লিষ্ট আইনজীবী এবং সাক্ষী হাজির না হওয়ায় আজ ট্রাইব্যুনাল এ আদেশ দেন। তবে আদেশে ট্রাইব্যুনাল বলেছেন, ১২ তারিখ যদি আসামী পক্ষ তাদের সাক্ষীদের সাক্ষ্য গ্রহনের জন্য আবেদন করে এবং পরপর দুই দিন সাক্ষী হাজির করতে না পারা বিষয়ে সন্তোষজনক কারণ দেখাতে পারে এবং ট্রাইব্যুনাল যদি সন্তুষ্ট হয় হবে তাদের সাক্ষীদের সাক্ষ্য গ্রহণ করা হতে পারে।
গত রোববার অবরোধের কারনে সকালে আসামী পক্ষের আইনজীবী এবং সাক্ষী হাজির হয়নি। অবরোধ শেষে বিকালে ট্রাইব্যুনাল সাক্ষী হাজিরের জন্য নির্দেশ দিলেও আনা হয়নি। এরপর রোববার ট্রাইব্যুনাল এক আদেশে বলেন এরপর যদি তারা সাক্ষী হাজিরে ব্যর্থ হয় তাহলে তাদের সাক্ষ্য গ্রহণ তক্ষনাৎ বন্ধ করে দেয়া হবে। আজ সোমবারও আসামী পক্ষের আইনজীবী আসেননি এবং সাক্ষী হাজির করা হয়নি। আসামী পক্ষে মিজানুর রহমান নামে একজন আইনজীবী পাঠিয়ে মামলার কার্যক্রম দুই দিনের জন্য মুলতবি চাওয়া হয়। মুলতবি দরখাস্তে অধ্যাপক গোলাম আযমের আইনজীবী মিজানুল ইসলামের ব্যক্তিগত সমস্যার কথা উল্লেখ করা হয়েছে।
দরখাস্তের শুনানী শেষে ট্রাইব্যুনাল আসামী পক্ষের সাক্ষ্য গ্রহণ বন্ধ করে দিয়ে আদেশ দেন। আদেশে ট্রাইব্যুনাল বলেন, আসামী পক্ষের সাক্ষ্য গ্রহণ বিষয়ে রোববার যে আদেশ দেয়া হয়েছে তা বহাল থাকবে। তবে এর সাথে আসামী পক্ষের জন্য একটি সুযোগ খোলা রাখা হয়। অর্থাৎ তারা আবেদন করলে তা বিবেচনা করা হবে।
আসামী পক্ষের মুলতবি আবেদনের বিরোধীতা করে রাষ্ট্রপক্ষে যুক্তি পেশ করেন প্রসিকিউটর গোলাম জেয়াদ আল মালুম।
ট্রাইব্যুনাল চেয়ারম্যান বিচারপতি নিজামুল হকের স্কাইপি সংলাপ দৈনিক আমার দেশে ফাঁস হওয়ার পর থেকে ট্রাইব্যুনাল -১ আসামী পক্ষের কোন মামলা চলেনি আজ পর্যন্ত। আজও অধ্যাপক গোলাম আযমকে ট্রাইব্যুনালে হাজির করা হয়নি।
ট্রাইব্যুনাল চেয়ারম্যান বিচারপতি নিজামুল হক ছাড়াও অপর দুই সদস্য বিচারপতি জাহাঙ্গীর হোসেন, বিচারপতি আনোয়ারুল হক উপস্থিত ছিলেন।
গোলাম আযমের পক্ষে সাক্ষ্য গ্রহণ বিষয়ে শুনানী কাল, ৭/১/২০১৩,
জামায়াতে ইসলামীর সাবেক আমীর অধ্যাপক গোলাম আযমের পক্ষে পুনরায় সাক্ষ্য গ্রহণ শুরু বিষয়ে কাল শুনানী অনুষ্ঠিত হবে। বিচারপতি নিজামুল হকের স্কাইপ কেলেঙ্কারি দৈনিক আমার দেশ পত্রিকায় প্রকাশের পর দুই তিনদিন ট্রাইব্যুনালে হাজির হওয়া থেকে বিরত থাকে আসামী পক্ষ। এ অবস্থায় বিচারপতি নিজামুল হক গত ১০ ডিসেম্বর অধ্যাপক গোলাম আযমের পক্ষে সাক্ষ্য গ্রহণ বন্ধ ঘোষনা করে আদেশ দেন। একই সাথে রাষ্ট্রপক্ষের যুক্তি উপস্থাপনের জন্য তারিখ নির্ধারন করে দেন। আদেশে বলা হয় আসামী পক্ষ যদি তাদের সাক্ষী হাজিরের জন্য দরখাস্ত করে এবং সন্তোষজনক জবাব দিতে পারে তাহলে পুনরায় তাদের সাক্ষ্য গ্রহণ করা হতে পারে। অধ্যাপক গোলাম আযমের পক্ষে প্রথম সাক্ষী হিসেবে তার ছেলে সাবেক ব্রিগেডিয়ার জেনারেল আব্দুল্লাহিল আমান আজমীর জবানবন্দী গ্রহণ চলছিল। এ অবস্থায় অধ্যাপক গোলাম আযমের পক্ষে সাক্ষ্য গ্রহণ বন্ধ করে দেয়া হয়।
আদেশ অনুযায়ী আজ অধ্যাপক গোলাম আযমের মামলায় রাষ্ট্রপক্ষের যুক্তি উপস্থাপনের জন্য নির্ধারিত ছিল। কিন্তু আসামী পক্ষ থেকে দরখাস্ত করে বলা হয় তারা আগামীকাল থেকে তাদের পক্ষে সাক্ষী আনতে পারবে। সেজন্য একদিন মুলতবি চেয়ে দরখাস্ত করেন তারা। আগামীকাল এ বিষয়ে শুনানীর জন্য ধার্য্য করা হয়েছে।
অ্যডভোকেট মিজানুল ইসলাম ট্রাইবুনালে বলেছেন তারা যেকোন উপায়ে আজ প্রথম সাক্ষী আব্দুল্লাহিল আমান আযমীকে হাজির করবেন।
ট্রাইব্যুনাল সদস্য বিচারপতি জাহাঙ্গীর হোসেন, বিচারপতি আনোয়ারুল হক বিচার কার্যক্রম পরিচালনা করেন। চেয়ারম্যান বিচারপতি এটিএম ফজলে কবির গতকাল অনুপস্থিত ছিলেন। তিনি ছুটিতে রয়েছেন।
আসামী পক্ষে অন্যান্যের মধ্যে উপস্থিত ছিলেন অ্যাডভোকেট তাজুল ইসলাম, মনজুর আহমেদ আনসারীম, ব্যারিস্টার ইমরান সিদ্দিক ।
রাষ্ট্রপক্ষে চিফ প্রসিকিউটর গোলাম আরিফ টিপু অন্যান্যের মধ্যে উপস্থিত ছিলেন।
কোন মন্তব্য নেই:
একটি মন্তব্য পোস্ট করুন