মেহেদী হাসান, ২০/৪/২০১২, শুক্রবার
খলিলুর রহমানের জন্ম ১৯৭২ সালের ১৩ এপ্রিল। মাওলানা দেলাওয়ার হোসাইন সাঈদীর বিরুদ্ধে খলিলুর রহমান যে জবানবন্দী দিয়েছেন তাতে মাওলানা সাঈদী কর্তৃক ১৯৭১ সালে বিভিন্ন অপরাধ সংঘটন তিনি নিজে দেখেছেন বলে উল্লেখ করেছেন।
এছাড়া ১৯৭১ সালে পাক হানাদার এবং রাজাকার বাহিনী কর্তৃক হিন্দু সম্প্রদায়, আওয়ামী লীগ এবং মুক্তিযুদ্ধ সমর্থক অনেকের দোকানপাট, বসতবাড়ি লুটপাট, অগ্নিসংযোগ, হত্যা, নির্যাতনের অনেক ঘটনাও তিনি দেখেছেন বলে জানিয়েছেন। মাওলানা সাঈদী এবং অন্যান্য রাজাকার কর্তৃক রইজ উদ্দীন পসারীর বাড়িতে আগুন ধরিয়ে ধ্বংস করা এবং লুটপাটের ঘটনার তিনি একজন প্রত্যক্ষদর্শী বলে জানান। রইজ উদ্দীনের বাড়িতে লুটপাটের ঘটনা দেখার সময় মাওলানা সাঈদী তাকে ধাওয়া দেন বলেও উল্লেখ করেন। অথচ জন্ম সনদ অনুযায়ী ১৯৭১ সালে তার জন্মই হয়নি।
মাওলানা সাঈদীর বিরুদ্ধে খলিলুর রহমান তদন্ত কর্মকর্তার কাছে যে জবাবনবন্দী দেন তাতে তিনি ১৯৭১ সালে তার বয়স উল্লেখ করেছেন ১৩/১৪ বছর। তবে খলিলুর রহমানের জন্ম সনদে জন্ম তারিখ লেখা রয়েছে ১৯৭২ সালের ১৩ এপ্রিল। ভোটার তালিকা এবং তার কর্মস্থলের তথ্য বিবরনিতেও জন্ম তারিখ একই লেখা আছে।
রাষ্ট্রপক্ষ থেকে মাওলানা সাঈদীর বিরুদ্ধে যে ৬৮ জন মূল সাক্ষীর তালিকা জমা দেয়া হয়েছিল তার মধ্যে একজন ছিলেন এই খলিলুর রহমান । তবে তার সাক্ষ্য দেয়া হয়নি শেষ পর্যন্ত।
গত ৭ ডিসেম্বর মামলার বাদী মাহবুবুল আলম হাওলাদার আদালতে সাক্ষ্য দেন মাওলানা সাঈদীর বিরুদ্ধে। ঐ সময় তিনিও সাক্ষী খলিলুর রহমানের নাম উল্লেখ করেন ১৯৭১ সালের ঘটনার একজন প্রত্যক্ষদর্শী হিসেবে।
খলিলুর রহমান সম্পর্কে তিনি বলেছিলেন “২ জুন সকাল বেলা আমি নিজ বাড়িতে ছিলাম। স্বাক্ষী খলিলুর রহমান খুব ভোরে আমার বাড়ি এসে গোপনে জানিয়ে দেয় যে, আপনি এবং আপনার ঘরে যে আওয়ামী লীগ এর নেতাকর্মী এবং মুক্তিযোদ্ধারা আছে তাদের লিস্ট হয়েছে ধরার জন্য।”
খলিলুর রহমানের বিরুদ্ধে ছয় মামলা :
খলিলুর রহমানের বিরুদ্ধে বিভিন্ন সময় চাঁদাবাজি, প্রতারনা, জমিদখলসহ বিভিন্ন অভিযোগে মামলা এবং থানায় জিডি করেন অনেক ভুক্তভোগী । তার বিরুদ্ধে মোট ছয়টি মামলার তথ্য পাওয়া গেছে।
। একটি ফৌজদারি মামলায় তার এক বছর ৩ মাসের সাজা হয় পিরোজপুর অতিরিক্ত মেজিস্টেট কোর্টে। পিরোজপুর সেশন জজ আদালত এবং হাইকোর্টেও সে সাজা বহালা রাখা হয়। সর্বশেষ আপিল বিভাগে আবেদন করেন খলিলুর রহমান । সাবেক প্রধান বিচারপতি রুহুল আমিন এবং অপর প্রধান বিচারপতি সৈয়দ জে আর মোদাচ্ছির হোসেনের বেঞ্চ আবেদনটি শুনানী শেষে খারিজ করে দেন। ফলে নিম্ন আদালত তাকে যে সাজা দেন তা বহাল থাকে।
রাষ্ট্রপতি বরাবর ক্ষমা প্রার্থনা :
খলিলুর রহমান ২০০৮ সালে রাষ্ট্রপতি বরাবর ক্ষমা প্রার্থনার দরখাস্ত করেন। কিন্তু তাতেও কোন ফল হয়নি। গত বছর আবারো খলিলুর রহমানসহ পাঁচজন আসামীকে ক্ষমা প্রদর্শনের জন্য রাষ্ট্রপতি বরাবর আবেদন পাঠানোর উদ্যোগ নেয়া হয়। এ উদ্যোগের প্রেক্ষিতে খলিলুর রহমানসহ পাঁচজনের বিষয়ে অবহিত করে ২০১১ সালের ২৪ জুলাই পিরোজপুর জেল সুপার (ভারপ্রাপ্ত) কারা মহাপরিদশর্ক বরাবর একটি চিঠি পাঠান। চিঠির শিরোনাম “কয়েদি নং ৪৯/এ মো: খলিলুর রহমানসহ ০৫ জনের ক্ষমা প্রদর্শনের কাগজপত্র প্রেরন প্রসঙ্গে”। চিঠিতে উল্লেখ করা হয় আবেদনকারী কয়েদীগন ২৪/০৪/১৯৯৫ তারিখে সাজাপ্রাপ্ত হয়ে কারাগারে আগমন করেন এবং ২৪/০৫/১৯৯৫ সালে জামিনে মুক্তিপান। এরপর তারা আর কারাগারে আগমন করেননি। তাদের সাথে ব্যক্তিগতভাবে যোগাযোগ করা হয়েছে এবং মামলার প্রয়োজনীয় কাগজপত্র প্রেরন করা হয়েছে এতদসঙ্গে।
পিরোজপুর জেল সুপারের চিঠিতে স্বরারাষ্ট্র মন্ত্রণালয় এবং কারা অধিদপ্তরের ২০১১ সালের জুন মাসের চিঠির সূত্র উল্লেখ করা হয় বরাত হিসেবে।
অভিযোগ রয়েছে মাওলানা সাঈদীর বিরুদ্ধে সাক্ষ্য দিতে রাজি হওয়ার বিনিময়ে খলিলুর রহমানকে রাষ্ট্রপতি কর্তৃক ক্ষমা পাইয়ের দেয়ার উদ্যোগ নেয়া হয় ২০১১ সালে। ক্ষমা পাওয়া বিষয়ে সর্বশেষ উদ্যোগের ফলাফল কি হয়েছিল সে বিষয়ে কিছু জানাতে পারেননি খলিলুর রহমান।
গত ২০ মার্চ রাষ্ট্রপক্ষের আইনজীবীদের পক্ষ থেকে ট্রাইব্যুনালে একটি আবেদন পেশ করা হয়। আবেদনে বলা হয় মাওলানা দেলাওয়ার হোসাইন সাঈদীর বিরুদ্ধে ৪৬ জন সাক্ষীকে হাজির করা আদৌ সম্ভব নয়। তাই ৪৬ জন সাক্ষী তদন্ত কর্মকর্তার কাছে যে জবানবন্দী দিয়েছেন তা তাদের অনুপস্থিতিতে আদালতে সাক্ষ্য হিসেবে গ্রহন করা হোক।
এই ৪৬ জন অনুপস্থিত সাক্ষীর মধ্যে একজন ছিলেন খলিলুর রহমান। তবে আদালত যে ১৫ জন সাক্ষীর জবানবন্দী তাদের অনুপস্থিতিতে গ্রহণ করেছেন তার মধ্যে খলিলুর রহমান নেই।
সাজা মাথায় নিয়ে চাকরি :
খলিলুর রহমান বর্তমানে পারেরহাট শেখ হাসিনা একাডেমীতে একজন নাইটগার্ড হিসেবে চাকরি করছেন। শেখ হাসিনা একাডেমীর ম্যানেজিং কমিটির সভাপতি স্থানীয় এমপি একেএমএ আউয়াল।
খলিলুর রহমান জানান তিনি ১৯৮৫ সালে এ স্কুলে যোগদান করেন। তবে বেসরকারি শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের শিক্ষক কর্মচারীদের মাসিক সরকারি বেতন ও অন্যান্য ভাতা উত্তোলন বিবরনী বইয়ে উল্লেখকৃত তথ্যে দেখা যায় খলিলুর রহমান ২/৩/১৯৯৬ তারিখে শেখ হাসিনা একাডেমীকে যোগদান করেন। তার ইনডেক্স নম্বর ২৯২০১৬। সখানে তার বেতন, ব্যাংক একাউন্টেসহ অন্যান্য তথ্যাদিও রয়েছে। উক্ত বইয়েও খলিলুর রহমানের জন্ম সাল উল্লেখ রয়েছে ১৯৭২। বইয়ে স্কুল পরিচালনা কমিটির চেয়ারম্যান স্থানীয় এমপি একেএমএ আউয়ালের স্বাক্ষর রয়েছে।
দণ্ডপ্রাপ্ত মামলার বিবরন :
খলিলুর রহমানের বিরুদ্ধে ইন্দুরকানী থানায় যে মামলা হয় তাতে পিরোজপুর অতিরিক্ত মেজিস্ট্রেট কোর্টে তাকে এক বছর তিন মাস সাজা দেন। ১৯৯৫ সালের ২৪ এপ্রিল মামলার রায় হয় এবং ঐদিনই তাকে কারাগারে পাঠানো হয়। এক মাস সাজাভোগের পর তিনি ২৪ মে ১৯৯৫ সালে জামিনে মুক্ত হন।
মেজিস্ট্রেট কোর্টে প্রদত্ত সাজার বিরুদ্ধে তিনি পিরোজপুর সেশন জজ এবং হাইকোর্টে যাবার পর সেখান থেকেও সাজা বহাল রাখা হয় । এরপর তিনি দেশের সর্বোচ্চ আদালতের আপীল বিভাগে লিভ টু আপিল করলে ২০০৩ সালের ১৬ নভেম্বর আপিল বিভাগ তার আবেদন খারিজ করে দেন। তবে সাজা বহাল থাকলেও মাহবুবকে পরবর্তীতে জেলে যেতে হয়নি।
যে মামলায় খলিলুর রহমানের সাজা হয় সে বিষয়ে খোঁজ নিয়ে জানা গেছে ১৯৯৩ সালেল ৯ মার্চ খলিলুর রহমান এবং অন্যরা মিলে জনৈক আবুবকর সিদ্দিক, তার ভাগিনা ও ভাতিজা কলাই ক্ষেত মাড়াইয়ের সময় তাদের ওপর হামলা চালায় এবং কুপিয়ে জখম করে।
কুপিয়ে জখম করা বিষয়ে মামলার বিবরন- ইন্দুরকানী থানা মামলা নং ০২, তারিখ ১৪/০৩/১৯৯৩, জি আর ৪৭/৯৩, ধারা ৪৪৭/৩২৩ ।
সাক্ষ্য দেয়ার জন্য দুই দফা ঢাকায় আসেন খলিল :
অনুসন্ধানে জানা গেছে মাওলানা সাঈদীর বিরদ্ধে সাক্ষ্য দেয়ার জন্য খলিলুর রহমানকে দুইদফা ঢাকায় আনা হয় । প্রথম দফায় তাকে ঢাকা আনা হয় ৪/১২/২০১১ তারিখ। ১৪/১২/২০১১ তারিখ তাকে প্রসিকিউশনে হাজির করা হয় । পরের দিন ১৫/১২/২০১১ তারিখ তাকে বাড়ি পাঠানো হয়। এরপর তাকে আবার ঢাকায় আনা হয় ৩/১/২০১২ তারিখ । ৪/১/২০১২ তারিখ তাকে অন্য সাক্ষী আলতাফ হোসেন, মাহতাব উদ্দিন এবং আব্দুল লতিফের সাথে প্রসিকিউশন কক্ষে হাজির করা হয়। কিন্তু সেদিনও তার সাক্ষ্য দেয়া হয়নি। পরের দিন ৫/১/২০১২ তারিখ তাকে আবারো বাড়ি পাঠিয়ে দেয়া হয়। পুলিশ হেফাজতেই তাকে ঢাকা আনা নেয়া এবং থাকার ব্যবস্থা করা হয়।
সাজা বহালা থাকা অবস্থায় পলাতক আসামীর প্রকাশ্যে একটি প্রতিষ্ঠানে চাকরিতে যোগদান এবং চাকির চালিয়ে যাওয়া, তাকে আবার সাক্ষী নির্বাচন করা এবং রাষ্ট্রীয় হেফাজতে ঢাকায় আনার বিষয়টি অনেকের কাছে বিস্ময়কর।
খলিলুর রহমানের বক্তব্য :
খলিলুর রহমান দৈনিক নয়া দিগন্তকে বলেন, ২০০৩ সালের আপিল বিভাগে আবেদন খারিজ হওয়ার পর রাষ্ট্রপতির কাছে দায়ের করা মার্সি পিটিশনের একটি কপি থানায় জমা দেয়া হয়। ফলে তাকে আর গ্রেফকতার করা হয়নি। তিনি ক্ষমা পেয়েছিলেন কি-না এ প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, এ বিষয়ে পরবর্তীতে কোন কিছু জানতে পারিনি আর। আপিল বিভাগে আবেদন বাতিল হবার পর তিনি জেল এড়াতে কখনো পালিয়ে ছিলেন কি-না জানতে চাইলে বলেন তিনি পালাননি। তিনি বর্তমানেও বাড়িতেই আছেন।
তার বিরুদ্ধে ছয়/সাতটি মামলা এবং জিডি বিষয়ে প্রশ্ন করা হলে খলিলুর রহমান জানান এগুলো সব নিষ্পত্তি হয়েছে এবং আমার পক্ষে রায় পেয়েছি। এরপর টেলিফোন লাইন কেটে দেন তিনি। লাইন কেটে দেয়ার দুই দিন পর আবার তার সাথে সাংবাদিক পরিচয় দিয়ে কথা বলতে চাইলে সাথে সাথে আবারো লাইন কেটে দেন খলিলুর রহমান।
খলিলুর রহমানের জন্ম ১৯৭২ সালের ১৩ এপ্রিল। মাওলানা দেলাওয়ার হোসাইন সাঈদীর বিরুদ্ধে খলিলুর রহমান যে জবানবন্দী দিয়েছেন তাতে মাওলানা সাঈদী কর্তৃক ১৯৭১ সালে বিভিন্ন অপরাধ সংঘটন তিনি নিজে দেখেছেন বলে উল্লেখ করেছেন।
এছাড়া ১৯৭১ সালে পাক হানাদার এবং রাজাকার বাহিনী কর্তৃক হিন্দু সম্প্রদায়, আওয়ামী লীগ এবং মুক্তিযুদ্ধ সমর্থক অনেকের দোকানপাট, বসতবাড়ি লুটপাট, অগ্নিসংযোগ, হত্যা, নির্যাতনের অনেক ঘটনাও তিনি দেখেছেন বলে জানিয়েছেন। মাওলানা সাঈদী এবং অন্যান্য রাজাকার কর্তৃক রইজ উদ্দীন পসারীর বাড়িতে আগুন ধরিয়ে ধ্বংস করা এবং লুটপাটের ঘটনার তিনি একজন প্রত্যক্ষদর্শী বলে জানান। রইজ উদ্দীনের বাড়িতে লুটপাটের ঘটনা দেখার সময় মাওলানা সাঈদী তাকে ধাওয়া দেন বলেও উল্লেখ করেন। অথচ জন্ম সনদ অনুযায়ী ১৯৭১ সালে তার জন্মই হয়নি।
মাওলানা সাঈদীর বিরুদ্ধে খলিলুর রহমান তদন্ত কর্মকর্তার কাছে যে জবাবনবন্দী দেন তাতে তিনি ১৯৭১ সালে তার বয়স উল্লেখ করেছেন ১৩/১৪ বছর। তবে খলিলুর রহমানের জন্ম সনদে জন্ম তারিখ লেখা রয়েছে ১৯৭২ সালের ১৩ এপ্রিল। ভোটার তালিকা এবং তার কর্মস্থলের তথ্য বিবরনিতেও জন্ম তারিখ একই লেখা আছে।
রাষ্ট্রপক্ষ থেকে মাওলানা সাঈদীর বিরুদ্ধে যে ৬৮ জন মূল সাক্ষীর তালিকা জমা দেয়া হয়েছিল তার মধ্যে একজন ছিলেন এই খলিলুর রহমান । তবে তার সাক্ষ্য দেয়া হয়নি শেষ পর্যন্ত।
গত ৭ ডিসেম্বর মামলার বাদী মাহবুবুল আলম হাওলাদার আদালতে সাক্ষ্য দেন মাওলানা সাঈদীর বিরুদ্ধে। ঐ সময় তিনিও সাক্ষী খলিলুর রহমানের নাম উল্লেখ করেন ১৯৭১ সালের ঘটনার একজন প্রত্যক্ষদর্শী হিসেবে।
খলিলুর রহমান সম্পর্কে তিনি বলেছিলেন “২ জুন সকাল বেলা আমি নিজ বাড়িতে ছিলাম। স্বাক্ষী খলিলুর রহমান খুব ভোরে আমার বাড়ি এসে গোপনে জানিয়ে দেয় যে, আপনি এবং আপনার ঘরে যে আওয়ামী লীগ এর নেতাকর্মী এবং মুক্তিযোদ্ধারা আছে তাদের লিস্ট হয়েছে ধরার জন্য।”
খলিলুর রহমানের বিরুদ্ধে ছয় মামলা :
খলিলুর রহমানের বিরুদ্ধে বিভিন্ন সময় চাঁদাবাজি, প্রতারনা, জমিদখলসহ বিভিন্ন অভিযোগে মামলা এবং থানায় জিডি করেন অনেক ভুক্তভোগী । তার বিরুদ্ধে মোট ছয়টি মামলার তথ্য পাওয়া গেছে।
। একটি ফৌজদারি মামলায় তার এক বছর ৩ মাসের সাজা হয় পিরোজপুর অতিরিক্ত মেজিস্টেট কোর্টে। পিরোজপুর সেশন জজ আদালত এবং হাইকোর্টেও সে সাজা বহালা রাখা হয়। সর্বশেষ আপিল বিভাগে আবেদন করেন খলিলুর রহমান । সাবেক প্রধান বিচারপতি রুহুল আমিন এবং অপর প্রধান বিচারপতি সৈয়দ জে আর মোদাচ্ছির হোসেনের বেঞ্চ আবেদনটি শুনানী শেষে খারিজ করে দেন। ফলে নিম্ন আদালত তাকে যে সাজা দেন তা বহাল থাকে।
রাষ্ট্রপতি বরাবর ক্ষমা প্রার্থনা :
খলিলুর রহমান ২০০৮ সালে রাষ্ট্রপতি বরাবর ক্ষমা প্রার্থনার দরখাস্ত করেন। কিন্তু তাতেও কোন ফল হয়নি। গত বছর আবারো খলিলুর রহমানসহ পাঁচজন আসামীকে ক্ষমা প্রদর্শনের জন্য রাষ্ট্রপতি বরাবর আবেদন পাঠানোর উদ্যোগ নেয়া হয়। এ উদ্যোগের প্রেক্ষিতে খলিলুর রহমানসহ পাঁচজনের বিষয়ে অবহিত করে ২০১১ সালের ২৪ জুলাই পিরোজপুর জেল সুপার (ভারপ্রাপ্ত) কারা মহাপরিদশর্ক বরাবর একটি চিঠি পাঠান। চিঠির শিরোনাম “কয়েদি নং ৪৯/এ মো: খলিলুর রহমানসহ ০৫ জনের ক্ষমা প্রদর্শনের কাগজপত্র প্রেরন প্রসঙ্গে”। চিঠিতে উল্লেখ করা হয় আবেদনকারী কয়েদীগন ২৪/০৪/১৯৯৫ তারিখে সাজাপ্রাপ্ত হয়ে কারাগারে আগমন করেন এবং ২৪/০৫/১৯৯৫ সালে জামিনে মুক্তিপান। এরপর তারা আর কারাগারে আগমন করেননি। তাদের সাথে ব্যক্তিগতভাবে যোগাযোগ করা হয়েছে এবং মামলার প্রয়োজনীয় কাগজপত্র প্রেরন করা হয়েছে এতদসঙ্গে।
পিরোজপুর জেল সুপারের চিঠিতে স্বরারাষ্ট্র মন্ত্রণালয় এবং কারা অধিদপ্তরের ২০১১ সালের জুন মাসের চিঠির সূত্র উল্লেখ করা হয় বরাত হিসেবে।
অভিযোগ রয়েছে মাওলানা সাঈদীর বিরুদ্ধে সাক্ষ্য দিতে রাজি হওয়ার বিনিময়ে খলিলুর রহমানকে রাষ্ট্রপতি কর্তৃক ক্ষমা পাইয়ের দেয়ার উদ্যোগ নেয়া হয় ২০১১ সালে। ক্ষমা পাওয়া বিষয়ে সর্বশেষ উদ্যোগের ফলাফল কি হয়েছিল সে বিষয়ে কিছু জানাতে পারেননি খলিলুর রহমান।
গত ২০ মার্চ রাষ্ট্রপক্ষের আইনজীবীদের পক্ষ থেকে ট্রাইব্যুনালে একটি আবেদন পেশ করা হয়। আবেদনে বলা হয় মাওলানা দেলাওয়ার হোসাইন সাঈদীর বিরুদ্ধে ৪৬ জন সাক্ষীকে হাজির করা আদৌ সম্ভব নয়। তাই ৪৬ জন সাক্ষী তদন্ত কর্মকর্তার কাছে যে জবানবন্দী দিয়েছেন তা তাদের অনুপস্থিতিতে আদালতে সাক্ষ্য হিসেবে গ্রহন করা হোক।
এই ৪৬ জন অনুপস্থিত সাক্ষীর মধ্যে একজন ছিলেন খলিলুর রহমান। তবে আদালত যে ১৫ জন সাক্ষীর জবানবন্দী তাদের অনুপস্থিতিতে গ্রহণ করেছেন তার মধ্যে খলিলুর রহমান নেই।
সাজা মাথায় নিয়ে চাকরি :
খলিলুর রহমান বর্তমানে পারেরহাট শেখ হাসিনা একাডেমীতে একজন নাইটগার্ড হিসেবে চাকরি করছেন। শেখ হাসিনা একাডেমীর ম্যানেজিং কমিটির সভাপতি স্থানীয় এমপি একেএমএ আউয়াল।
খলিলুর রহমান জানান তিনি ১৯৮৫ সালে এ স্কুলে যোগদান করেন। তবে বেসরকারি শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের শিক্ষক কর্মচারীদের মাসিক সরকারি বেতন ও অন্যান্য ভাতা উত্তোলন বিবরনী বইয়ে উল্লেখকৃত তথ্যে দেখা যায় খলিলুর রহমান ২/৩/১৯৯৬ তারিখে শেখ হাসিনা একাডেমীকে যোগদান করেন। তার ইনডেক্স নম্বর ২৯২০১৬। সখানে তার বেতন, ব্যাংক একাউন্টেসহ অন্যান্য তথ্যাদিও রয়েছে। উক্ত বইয়েও খলিলুর রহমানের জন্ম সাল উল্লেখ রয়েছে ১৯৭২। বইয়ে স্কুল পরিচালনা কমিটির চেয়ারম্যান স্থানীয় এমপি একেএমএ আউয়ালের স্বাক্ষর রয়েছে।
দণ্ডপ্রাপ্ত মামলার বিবরন :
খলিলুর রহমানের বিরুদ্ধে ইন্দুরকানী থানায় যে মামলা হয় তাতে পিরোজপুর অতিরিক্ত মেজিস্ট্রেট কোর্টে তাকে এক বছর তিন মাস সাজা দেন। ১৯৯৫ সালের ২৪ এপ্রিল মামলার রায় হয় এবং ঐদিনই তাকে কারাগারে পাঠানো হয়। এক মাস সাজাভোগের পর তিনি ২৪ মে ১৯৯৫ সালে জামিনে মুক্ত হন।
মেজিস্ট্রেট কোর্টে প্রদত্ত সাজার বিরুদ্ধে তিনি পিরোজপুর সেশন জজ এবং হাইকোর্টে যাবার পর সেখান থেকেও সাজা বহাল রাখা হয় । এরপর তিনি দেশের সর্বোচ্চ আদালতের আপীল বিভাগে লিভ টু আপিল করলে ২০০৩ সালের ১৬ নভেম্বর আপিল বিভাগ তার আবেদন খারিজ করে দেন। তবে সাজা বহাল থাকলেও মাহবুবকে পরবর্তীতে জেলে যেতে হয়নি।
যে মামলায় খলিলুর রহমানের সাজা হয় সে বিষয়ে খোঁজ নিয়ে জানা গেছে ১৯৯৩ সালেল ৯ মার্চ খলিলুর রহমান এবং অন্যরা মিলে জনৈক আবুবকর সিদ্দিক, তার ভাগিনা ও ভাতিজা কলাই ক্ষেত মাড়াইয়ের সময় তাদের ওপর হামলা চালায় এবং কুপিয়ে জখম করে।
কুপিয়ে জখম করা বিষয়ে মামলার বিবরন- ইন্দুরকানী থানা মামলা নং ০২, তারিখ ১৪/০৩/১৯৯৩, জি আর ৪৭/৯৩, ধারা ৪৪৭/৩২৩ ।
সাক্ষ্য দেয়ার জন্য দুই দফা ঢাকায় আসেন খলিল :
অনুসন্ধানে জানা গেছে মাওলানা সাঈদীর বিরদ্ধে সাক্ষ্য দেয়ার জন্য খলিলুর রহমানকে দুইদফা ঢাকায় আনা হয় । প্রথম দফায় তাকে ঢাকা আনা হয় ৪/১২/২০১১ তারিখ। ১৪/১২/২০১১ তারিখ তাকে প্রসিকিউশনে হাজির করা হয় । পরের দিন ১৫/১২/২০১১ তারিখ তাকে বাড়ি পাঠানো হয়। এরপর তাকে আবার ঢাকায় আনা হয় ৩/১/২০১২ তারিখ । ৪/১/২০১২ তারিখ তাকে অন্য সাক্ষী আলতাফ হোসেন, মাহতাব উদ্দিন এবং আব্দুল লতিফের সাথে প্রসিকিউশন কক্ষে হাজির করা হয়। কিন্তু সেদিনও তার সাক্ষ্য দেয়া হয়নি। পরের দিন ৫/১/২০১২ তারিখ তাকে আবারো বাড়ি পাঠিয়ে দেয়া হয়। পুলিশ হেফাজতেই তাকে ঢাকা আনা নেয়া এবং থাকার ব্যবস্থা করা হয়।
সাজা বহালা থাকা অবস্থায় পলাতক আসামীর প্রকাশ্যে একটি প্রতিষ্ঠানে চাকরিতে যোগদান এবং চাকির চালিয়ে যাওয়া, তাকে আবার সাক্ষী নির্বাচন করা এবং রাষ্ট্রীয় হেফাজতে ঢাকায় আনার বিষয়টি অনেকের কাছে বিস্ময়কর।
খলিলুর রহমানের বক্তব্য :
খলিলুর রহমান দৈনিক নয়া দিগন্তকে বলেন, ২০০৩ সালের আপিল বিভাগে আবেদন খারিজ হওয়ার পর রাষ্ট্রপতির কাছে দায়ের করা মার্সি পিটিশনের একটি কপি থানায় জমা দেয়া হয়। ফলে তাকে আর গ্রেফকতার করা হয়নি। তিনি ক্ষমা পেয়েছিলেন কি-না এ প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, এ বিষয়ে পরবর্তীতে কোন কিছু জানতে পারিনি আর। আপিল বিভাগে আবেদন বাতিল হবার পর তিনি জেল এড়াতে কখনো পালিয়ে ছিলেন কি-না জানতে চাইলে বলেন তিনি পালাননি। তিনি বর্তমানেও বাড়িতেই আছেন।
তার বিরুদ্ধে ছয়/সাতটি মামলা এবং জিডি বিষয়ে প্রশ্ন করা হলে খলিলুর রহমান জানান এগুলো সব নিষ্পত্তি হয়েছে এবং আমার পক্ষে রায় পেয়েছি। এরপর টেলিফোন লাইন কেটে দেন তিনি। লাইন কেটে দেয়ার দুই দিন পর আবার তার সাথে সাংবাদিক পরিচয় দিয়ে কথা বলতে চাইলে সাথে সাথে আবারো লাইন কেটে দেন খলিলুর রহমান।
কোন মন্তব্য নেই:
একটি মন্তব্য পোস্ট করুন