মেহেদী হাসান, ২২/৬/২০১২, শুক্রবার
মাওলানা দেলাওয়ার হোসাইন সাঈদীর আইনজীবীরা বিভিন্ন সময় অভিযোগ করেছেন রাষ্ট্রপক্ষ কর্তৃক সাক্ষীদের প্রশিক্ষন বিষয়ে। অ্যডভোকেট তাজুল ইসলাম ট্রাইব্যুনালে এবং ট্রাইব্যুনালের বাইরে সাংবাদিকদের সামনে বিভিন্ন সময় অভিযোগ করেছেন মাওলানা সাঈদীর বিরুদ্ধে সাক্ষীদের প্রশিক্ষন দেয়া হচ্ছে। তাদেরকে রাষ্ট্রপক্ষ থেকে মিথ্যা কথা শিখিয়ে কোর্টে নিয়ে আসা হচ্ছে সাক্ষ্য দেয়ার জন্য।
রাষ্ট্রপক্ষের সাক্ষীদের ঢাকায় এনে যেখানে রাখা হত সেই সেফ হাউজের ডকুমেন্ট সম্প্রতি ট্রাইব্যুনালে উপস্থাপন করেছেন মাওলানা সাঈদীর আইনজীবীরা। সেফ হাউজ ডায়েরিতে এমন কিছু নোট লেখা রয়েছে যাতে সাক্ষীদের প্রশিক্ষন বিষয়ক অভিযোগের সত্যতা মেলে।
যেমন ১৮/১০/২০১১ তারিখের একটি ডায়েরি নোটে লেখা হয়েছে “পার্শ্বলিখিত সময় আমি এবং এসআই কালাচাদ ঘোষ কনকর্ড কোম্পানীর ইঞ্জিনিয়ার ইউসুফ সাহেবের সঙ্গে অত্র অফিস তদন্ত সংস্থার স্বাক্ষীদের জিজ্ঞাসাবাদের পরিবেশ উপযোগী করে তোলার জন্য প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহনের জন্য অনুরোধ করিলাম।”
ডায়েরির এই লেখাটির প্রতি মাওলানা সাঈদীর আইনজীবী তাজুল ইসলাম এবং মিজানুল ইসলামের প্রতি দৃষ্টি আকর্ষণ করলে তারা বলেন, এ থেকে বোঝা যায় সেখানে একটি প্রতিকী ট্রায়ালের আয়োজন করা হয়েছিল সাক্ষীদের জন্য।
তারিখ ১৭/১১/২০১১ সময় ২০.১৫ লিখিত আরেকটি ডায়েরি নোটে লেখা হয়েছে “পার্শ্বলিখিত সময়ে আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনালের বিজ্ঞ প্রসিকিউটরগণ অত্র সেইফ হাউজে অবস্থানরত সাক্ষীদের সবাইকে প্রসিকিউটর রুমে একত্রিত হয়ে একটি বিফ্রিংয়ে মিলিত হয় এবং সাক্ষীদেরকে মামলা সংক্রান্তে ব্রিফ করেন। বিষয়টি ভবিষ্যতের জন্য ডায়েরীভূক্ত করা হইলো।”
অ্যডভোকেট তাজুল ইসলাম এবং মিজানুল ইসলাম বলেন, সাক্ষীদের এভাবে প্রসিকিউটর রুমে একত্রিত করে ব্রিফিং করার কোন বিধান নেই।
১৭/১২/২০১১ তারিখ লিখিত সেফ হাউজের আরেকটি ডায়েরি নোটে লেখা রয়েছে “পার্শ্বলিখিত সময় অত্র সেইফ হাউজের ইনচার্জ পুলিশ পরিদর্শক মো: আমজাদ হোসেন এই সাধারন ডাইরী করিতেছি যে, আগামী ইং ১৮-১২-১১ তাং আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনাল তদন্ত সংস্থার অপরাধ রেজিষ্টারের ক্রমিক নং-০২ সংক্রান্তে স্বাক্ষীদের মনোস্তাত্তিক বডি লেংগুয়েজ, পরষ্পর কথোপকথন এবং মোবাইল ফোনের ব্যবহার প্রভৃতি পর্যালোচনা করে বিস্তারিত ভাবে আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনাল তদন্ত সংস্থার প্রধান সমন্বয়ক মহোদয়কে বিস্তারিত ভাবে তাহা মোবাইলে আলাপ করিলাম। তথা বিষয়টি মৌখিক আকারে গোপনীয় প্রতিবেদনের ন্যয় দাখিল করিলাম। আমি ইনচার্জ হিসাবে তাহাকে ইহাও বলিলাম যে, আমার এই টেলিফোনে কথোপকথন গোপনীয় প্রতিবেদন হিসাবে জানালাম। ইহার প্রতি উত্তরে জানান যে, তুমি যা রিপোর্ট করিলে আমি কিছুক্ষন আগেই অবগত হইয়াছি। এই কথোপকথনের প্রেক্ষিতে আমার প্রতি প্রয়োজনীয় আদেশ নির্দেশ প্রদান করিতে বলিলেন। আমি উহা শ্রবনের পর কার্যকরী ব্যবস্থা গ্রহন করিলে তা কার্যকরী করা সম্ভব হয় না। সম্ভব না হওয়ার বিষয়টিও প্রধান সমন্বয়ক মহোদয়কে জানালে তিনি বলেন, ঠিক আছে গোপন বিষয় নিয়ে সোচ্চার হওয়ার প্রয়োজন নেই।
বিষয়টি সংক্রান্তে সমন্বযক মহোদযের মৌখিক গৃহীত ব্যবস্থায় সন্তুষ্ট না হয়ে মামলার তদন্তকারী অফিসার সহকারী পুলিশ সুপার জনাব হেলাল উদ্দিন সাহেবকে সবকিছু জ্ঞাত করিলাম। এএসপি মহোদয়কে প্রধান সমন্বয়ক মহোদয়ের মৌখিক গৃহীত ব্যবস্থা কার্যকরী করার অনুরোধ করি। তিনি আমাকে জবাব প্রদান করেন যে, বিষয়টি আমি দেখছি। স্বাক্ষীদের স্বাক্ষের মানগত গুনাবলী বা প্রতিবন্ধকতা রোধের জন্যই উপরোক্ত পদক্ষেপ গুলি গ্রহন করি। বিষয়টি ভবিষ্যতের জন্য সাধারন ডাইরী করে রাখা হল।”
মাওলানা সাঈদীর বিরুদ্ধে ১৫ জন সাক্ষীর জবানবন্দী তাদের অনুপস্থিতিতে আদালত সাক্ষ্য হিসেবে গ্রহণ করে গত ২৯ মার্চ রায় দেন। সে রায় পুনরায় বিবেচনার জন্য গত ৯ মে রিভিউ আবেদন দাখিল করেন মাওলানা সাঈদীর আইনজীবী। গত ৩রা জুন এ বিষয়ে শুনানীর সময় আসামী পক্ষের আইনজীবীরা সেফ হাউজের (ঢাকায় যেখানে সাক্ষী এনে রাখা হত) সমস্ত কাগজপত্র ট্রাইব্যুনালে দাখিল করে বলেন, সাক্ষী হাজির করতে না পারা বিষয়ে রাষ্ট্রপক্ষ যে কারণ দেখিয়েছে তা সম্পূর্ণ মিথ্যা। তারা কোর্টে মিথ্যা তথ্য দিয়ে আদালতকে প্রতারিত করেছেন। অনেক সাক্ষী তাদের হেফাজতেই ছিল এবং সেফহাউজের এসব কাগজপত্রে তার প্রমান রয়েছে। কোন সাক্ষী কবে ঢাকায় আসে, কতদিন সেফ হাউজে ছিল, কয়বেলা খাবার খেয়েছেন, কোন কোন পুলিশ ইন্সপেক্টর, সাব-ইন্সপেক্টর এবং কনস্টেবল কোনদিন সেখানে দায়িত্ব পালন করেছেন তার সমস্ত বিবরণ লেখা রয়েছে সেফ হাউজের ডায়েরিতে। আসামী পক্ষ থেকে ট্রাইব্যুনালে সে ডায়রির কপি দাখিল করা হয় কোর্টে। গত ১২ জুন আসামী পক্ষের প্রধান আইনজীবী ব্যারিস্টার আব্দুর রাজ্জাক কোর্টে সেফ হাউজের সে ডায়রি থেকে গুরুত্বপূর্ণ অংশ পড়ে শোনান। সেসময় তিনি কোর্টে উপরোক্ত মিষ্টি খাওয়ানোর বিষয়টিও উপস্থাপন করেন।
গত ৩ রা জুন আসামী পক্ষ থেকে সেফ হাউজের পায়েরি আদালতে দাখিলের সময় রাষ্ট্রপক্ষের আইনজীবী সৈয়দ হায়দার আলী বলেন, সেফ হাউজ বলতে আমাদের কিছু নেই। তারা সেফ হাউজের নামে যে রিপোর্ট জমা দিয়েছেন এই রিপোর্ট আমাদের না। এটি তাদের প্রডাকশন। হতে পারে এটি তাদের প্রডাকশন। তিনি সেফ হাউজের বদলে উইটনেস হাউজ বা সাক্ষী হাউজ লেখার দাবি জানান ট্রাইব্যুনালের প্রতি।
জগ মগ তাওয়া খুনতি কেনার তথ্যও লিখে রাখা হয়েছে সেফ হাউজ ডায়েরিতে
সেফ হাউজ ডায়েরিতে জগ মগ তাওয়া খুনতি, পাপশ, ঝাড়–, বদনা প্রভৃতি জিনিসপত্র কেনার তথ্যও লেখা রয়েছে।
রাষ্ট্রপক্ষের সাক্ষীদের ঢাকায় এনে যেখানে রাখা হত সেই সেফ হাউজের ডকুমেন্ট সম্প্রতি ট্রাইব্যুনালে উপস্থাপন করেছেন মাওলানা সাঈদীর আইনজীবীরা। তাতে দেখা যায় সেফ হাউজের যাবতীয় কর্মকান্ড এবং সেখানে যেসব সাক্ষী এনে রাখা হত তাদের খুটিনাটি যাবতীয় তথ্য লিপিবদ্ধ করে রাখা হয়েছে।
২২/১০/২০১১ তারিখে সেফ হাউজ ডায়েরির একটি নোটে লেখা রয়েছে “আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনাল হইতে নি¤œ বর্ণিত ক্রোকারিজ মালামাল অত্র সেইফ হাউজে ব্যবহারের জন্য প্রেরণ করিলে তাহা প্রাপ্ত হইয়া অত্র সংস্থার রুমে রাখা হইল। এবং উক্ত মালামাল প্রাপ্তির ব্যাপারে পুলিশ পরিদর্শক (প্র) জনাব মো: ওবায়দুল্লাহ সাহেবকে অবগত করা হইল ও অত্র সংস্থার ইনচার্জ পুলিশ পরিদর্শক জনাব মো: আমজাদ হোসেন সাহেবকে অবগত করিয়া ভবিষ্যতের জন্য নোট করিয়া রাখিলাম।
মালামালের বিবরন ঃ
প্লেট বড় (মেলামাইন) - ২৪টি, কাচের গ্লাস - ৭২টি, কাপ প্রিচ - ৩৬টি, চা-চামচ - ৩৬টি, পানির জগ (প্লাষ্টিক) - ১২টি, ভাতের হাড়ি ঢাকনা সহ - ১০টি, কড়াই - ৩টি, তরকারীর হাড়ি ঢাকনা সহ - ০৮টি, ছোট বাটি মেলামাইন - ১০০টি, মাঝারী বাটি মেলামাইন - ১০টি, ভাতের গামলা মেলামাইন - ০৬টি, বড় বাটি মেলামাইন - ১০টি, ভাতের চামচ (ষ্টিল) - ০৬টি, তরকারীর চামচ (ষ্টিল) - ০৬টি, রুটি বানানোর ফিড়ি ও বেলুন - ০৪ সেট, বদনা প্লাষ্টিক - ১২টি, জায়নামাজ - ০৪টি, তাওয়ালে মাঝারী - ৬০টি, তাওয়া খুনতী - ০৪ সেট, বটি - ০৪টি, ট্রে মেলামাইন - ০৪টি, পানির ফিল্টার - ০৪টি, বালতি প্লাষ্টিক - ১০টি, মগ - ১০টি, তোষক - ২০টি, বালিশ ২০টি।
১৬/১১/১১ তারিখের আরেকটি ডায়েরি নোটে লেখা রয়েছে “সময়ে কন্ট্রাক্টর মি. শাহ আলম সাহেবের নিকট হতে নি¤œ লিখিত সেইফ হাউজের ব্যবহৃত মালামাল বুঝিয়া পাইয়া নোট করিলাম।
মালামালের বর্ণনা ঃ- গ্যাস সহ গ্যাস সিলিন্ডার - ৩টি, গ্যাস চুরা স্টীর ফিটিং মিটার রেগুলেটর সহ - ২টি, লাক্স সাবান মধ্যম - ১ডজন, লাক্স সাবান ছোট - ১ডজন, এসিআই (মশক নিধন) - ১টি, টেবিল টিসু পেপার - ২ বক্স, টয়লেট টিসু পেপার - ১ বক্স, পাপশ -৮টি, হারপিক - ২০টি, লাক্স সাবান - ২ ডজন, ভিম পাউডার - ১ ডজন, টিসু বক্স - ৫০টি, টয়লেট পেপার - ৫০টি, পাপশ - ৪০টি, ঝুড়ি - ২০টি, ঝাড়– ফুলের - ৬টি, ঝাড়ু শলার - ৪টি, দেয়াল ঘড়ি - ৪টি, মরটিন (মশক নিধন) - ১০টি, টি ব্যাগ - ৫ বক্স, কফি - ২ কৌটা, চিনি - ৪ কেজি, চা এর নেট ছাকনি - ৪টি, কাটা চামচ - ১ ডজন, টেবিল কলমদানি - ২টি, লাক্স সাবান - ৪টি, ঝুলি ঝাড়ু - ২টি।
মাওলানা দেলাওয়ার হোসাইন সাঈদীর আইনজীবীরা বিভিন্ন সময় অভিযোগ করেছেন রাষ্ট্রপক্ষ কর্তৃক সাক্ষীদের প্রশিক্ষন বিষয়ে। অ্যডভোকেট তাজুল ইসলাম ট্রাইব্যুনালে এবং ট্রাইব্যুনালের বাইরে সাংবাদিকদের সামনে বিভিন্ন সময় অভিযোগ করেছেন মাওলানা সাঈদীর বিরুদ্ধে সাক্ষীদের প্রশিক্ষন দেয়া হচ্ছে। তাদেরকে রাষ্ট্রপক্ষ থেকে মিথ্যা কথা শিখিয়ে কোর্টে নিয়ে আসা হচ্ছে সাক্ষ্য দেয়ার জন্য।
রাষ্ট্রপক্ষের সাক্ষীদের ঢাকায় এনে যেখানে রাখা হত সেই সেফ হাউজের ডকুমেন্ট সম্প্রতি ট্রাইব্যুনালে উপস্থাপন করেছেন মাওলানা সাঈদীর আইনজীবীরা। সেফ হাউজ ডায়েরিতে এমন কিছু নোট লেখা রয়েছে যাতে সাক্ষীদের প্রশিক্ষন বিষয়ক অভিযোগের সত্যতা মেলে।
যেমন ১৮/১০/২০১১ তারিখের একটি ডায়েরি নোটে লেখা হয়েছে “পার্শ্বলিখিত সময় আমি এবং এসআই কালাচাদ ঘোষ কনকর্ড কোম্পানীর ইঞ্জিনিয়ার ইউসুফ সাহেবের সঙ্গে অত্র অফিস তদন্ত সংস্থার স্বাক্ষীদের জিজ্ঞাসাবাদের পরিবেশ উপযোগী করে তোলার জন্য প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহনের জন্য অনুরোধ করিলাম।”
ডায়েরির এই লেখাটির প্রতি মাওলানা সাঈদীর আইনজীবী তাজুল ইসলাম এবং মিজানুল ইসলামের প্রতি দৃষ্টি আকর্ষণ করলে তারা বলেন, এ থেকে বোঝা যায় সেখানে একটি প্রতিকী ট্রায়ালের আয়োজন করা হয়েছিল সাক্ষীদের জন্য।
তারিখ ১৭/১১/২০১১ সময় ২০.১৫ লিখিত আরেকটি ডায়েরি নোটে লেখা হয়েছে “পার্শ্বলিখিত সময়ে আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনালের বিজ্ঞ প্রসিকিউটরগণ অত্র সেইফ হাউজে অবস্থানরত সাক্ষীদের সবাইকে প্রসিকিউটর রুমে একত্রিত হয়ে একটি বিফ্রিংয়ে মিলিত হয় এবং সাক্ষীদেরকে মামলা সংক্রান্তে ব্রিফ করেন। বিষয়টি ভবিষ্যতের জন্য ডায়েরীভূক্ত করা হইলো।”
অ্যডভোকেট তাজুল ইসলাম এবং মিজানুল ইসলাম বলেন, সাক্ষীদের এভাবে প্রসিকিউটর রুমে একত্রিত করে ব্রিফিং করার কোন বিধান নেই।
১৭/১২/২০১১ তারিখ লিখিত সেফ হাউজের আরেকটি ডায়েরি নোটে লেখা রয়েছে “পার্শ্বলিখিত সময় অত্র সেইফ হাউজের ইনচার্জ পুলিশ পরিদর্শক মো: আমজাদ হোসেন এই সাধারন ডাইরী করিতেছি যে, আগামী ইং ১৮-১২-১১ তাং আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনাল তদন্ত সংস্থার অপরাধ রেজিষ্টারের ক্রমিক নং-০২ সংক্রান্তে স্বাক্ষীদের মনোস্তাত্তিক বডি লেংগুয়েজ, পরষ্পর কথোপকথন এবং মোবাইল ফোনের ব্যবহার প্রভৃতি পর্যালোচনা করে বিস্তারিত ভাবে আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনাল তদন্ত সংস্থার প্রধান সমন্বয়ক মহোদয়কে বিস্তারিত ভাবে তাহা মোবাইলে আলাপ করিলাম। তথা বিষয়টি মৌখিক আকারে গোপনীয় প্রতিবেদনের ন্যয় দাখিল করিলাম। আমি ইনচার্জ হিসাবে তাহাকে ইহাও বলিলাম যে, আমার এই টেলিফোনে কথোপকথন গোপনীয় প্রতিবেদন হিসাবে জানালাম। ইহার প্রতি উত্তরে জানান যে, তুমি যা রিপোর্ট করিলে আমি কিছুক্ষন আগেই অবগত হইয়াছি। এই কথোপকথনের প্রেক্ষিতে আমার প্রতি প্রয়োজনীয় আদেশ নির্দেশ প্রদান করিতে বলিলেন। আমি উহা শ্রবনের পর কার্যকরী ব্যবস্থা গ্রহন করিলে তা কার্যকরী করা সম্ভব হয় না। সম্ভব না হওয়ার বিষয়টিও প্রধান সমন্বয়ক মহোদয়কে জানালে তিনি বলেন, ঠিক আছে গোপন বিষয় নিয়ে সোচ্চার হওয়ার প্রয়োজন নেই।
বিষয়টি সংক্রান্তে সমন্বযক মহোদযের মৌখিক গৃহীত ব্যবস্থায় সন্তুষ্ট না হয়ে মামলার তদন্তকারী অফিসার সহকারী পুলিশ সুপার জনাব হেলাল উদ্দিন সাহেবকে সবকিছু জ্ঞাত করিলাম। এএসপি মহোদয়কে প্রধান সমন্বয়ক মহোদয়ের মৌখিক গৃহীত ব্যবস্থা কার্যকরী করার অনুরোধ করি। তিনি আমাকে জবাব প্রদান করেন যে, বিষয়টি আমি দেখছি। স্বাক্ষীদের স্বাক্ষের মানগত গুনাবলী বা প্রতিবন্ধকতা রোধের জন্যই উপরোক্ত পদক্ষেপ গুলি গ্রহন করি। বিষয়টি ভবিষ্যতের জন্য সাধারন ডাইরী করে রাখা হল।”
মাওলানা সাঈদীর বিরুদ্ধে ১৫ জন সাক্ষীর জবানবন্দী তাদের অনুপস্থিতিতে আদালত সাক্ষ্য হিসেবে গ্রহণ করে গত ২৯ মার্চ রায় দেন। সে রায় পুনরায় বিবেচনার জন্য গত ৯ মে রিভিউ আবেদন দাখিল করেন মাওলানা সাঈদীর আইনজীবী। গত ৩রা জুন এ বিষয়ে শুনানীর সময় আসামী পক্ষের আইনজীবীরা সেফ হাউজের (ঢাকায় যেখানে সাক্ষী এনে রাখা হত) সমস্ত কাগজপত্র ট্রাইব্যুনালে দাখিল করে বলেন, সাক্ষী হাজির করতে না পারা বিষয়ে রাষ্ট্রপক্ষ যে কারণ দেখিয়েছে তা সম্পূর্ণ মিথ্যা। তারা কোর্টে মিথ্যা তথ্য দিয়ে আদালতকে প্রতারিত করেছেন। অনেক সাক্ষী তাদের হেফাজতেই ছিল এবং সেফহাউজের এসব কাগজপত্রে তার প্রমান রয়েছে। কোন সাক্ষী কবে ঢাকায় আসে, কতদিন সেফ হাউজে ছিল, কয়বেলা খাবার খেয়েছেন, কোন কোন পুলিশ ইন্সপেক্টর, সাব-ইন্সপেক্টর এবং কনস্টেবল কোনদিন সেখানে দায়িত্ব পালন করেছেন তার সমস্ত বিবরণ লেখা রয়েছে সেফ হাউজের ডায়েরিতে। আসামী পক্ষ থেকে ট্রাইব্যুনালে সে ডায়রির কপি দাখিল করা হয় কোর্টে। গত ১২ জুন আসামী পক্ষের প্রধান আইনজীবী ব্যারিস্টার আব্দুর রাজ্জাক কোর্টে সেফ হাউজের সে ডায়রি থেকে গুরুত্বপূর্ণ অংশ পড়ে শোনান। সেসময় তিনি কোর্টে উপরোক্ত মিষ্টি খাওয়ানোর বিষয়টিও উপস্থাপন করেন।
গত ৩ রা জুন আসামী পক্ষ থেকে সেফ হাউজের পায়েরি আদালতে দাখিলের সময় রাষ্ট্রপক্ষের আইনজীবী সৈয়দ হায়দার আলী বলেন, সেফ হাউজ বলতে আমাদের কিছু নেই। তারা সেফ হাউজের নামে যে রিপোর্ট জমা দিয়েছেন এই রিপোর্ট আমাদের না। এটি তাদের প্রডাকশন। হতে পারে এটি তাদের প্রডাকশন। তিনি সেফ হাউজের বদলে উইটনেস হাউজ বা সাক্ষী হাউজ লেখার দাবি জানান ট্রাইব্যুনালের প্রতি।
জগ মগ তাওয়া খুনতি কেনার তথ্যও লিখে রাখা হয়েছে সেফ হাউজ ডায়েরিতে
সেফ হাউজ ডায়েরিতে জগ মগ তাওয়া খুনতি, পাপশ, ঝাড়–, বদনা প্রভৃতি জিনিসপত্র কেনার তথ্যও লেখা রয়েছে।
রাষ্ট্রপক্ষের সাক্ষীদের ঢাকায় এনে যেখানে রাখা হত সেই সেফ হাউজের ডকুমেন্ট সম্প্রতি ট্রাইব্যুনালে উপস্থাপন করেছেন মাওলানা সাঈদীর আইনজীবীরা। তাতে দেখা যায় সেফ হাউজের যাবতীয় কর্মকান্ড এবং সেখানে যেসব সাক্ষী এনে রাখা হত তাদের খুটিনাটি যাবতীয় তথ্য লিপিবদ্ধ করে রাখা হয়েছে।
২২/১০/২০১১ তারিখে সেফ হাউজ ডায়েরির একটি নোটে লেখা রয়েছে “আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনাল হইতে নি¤œ বর্ণিত ক্রোকারিজ মালামাল অত্র সেইফ হাউজে ব্যবহারের জন্য প্রেরণ করিলে তাহা প্রাপ্ত হইয়া অত্র সংস্থার রুমে রাখা হইল। এবং উক্ত মালামাল প্রাপ্তির ব্যাপারে পুলিশ পরিদর্শক (প্র) জনাব মো: ওবায়দুল্লাহ সাহেবকে অবগত করা হইল ও অত্র সংস্থার ইনচার্জ পুলিশ পরিদর্শক জনাব মো: আমজাদ হোসেন সাহেবকে অবগত করিয়া ভবিষ্যতের জন্য নোট করিয়া রাখিলাম।
মালামালের বিবরন ঃ
প্লেট বড় (মেলামাইন) - ২৪টি, কাচের গ্লাস - ৭২টি, কাপ প্রিচ - ৩৬টি, চা-চামচ - ৩৬টি, পানির জগ (প্লাষ্টিক) - ১২টি, ভাতের হাড়ি ঢাকনা সহ - ১০টি, কড়াই - ৩টি, তরকারীর হাড়ি ঢাকনা সহ - ০৮টি, ছোট বাটি মেলামাইন - ১০০টি, মাঝারী বাটি মেলামাইন - ১০টি, ভাতের গামলা মেলামাইন - ০৬টি, বড় বাটি মেলামাইন - ১০টি, ভাতের চামচ (ষ্টিল) - ০৬টি, তরকারীর চামচ (ষ্টিল) - ০৬টি, রুটি বানানোর ফিড়ি ও বেলুন - ০৪ সেট, বদনা প্লাষ্টিক - ১২টি, জায়নামাজ - ০৪টি, তাওয়ালে মাঝারী - ৬০টি, তাওয়া খুনতী - ০৪ সেট, বটি - ০৪টি, ট্রে মেলামাইন - ০৪টি, পানির ফিল্টার - ০৪টি, বালতি প্লাষ্টিক - ১০টি, মগ - ১০টি, তোষক - ২০টি, বালিশ ২০টি।
১৬/১১/১১ তারিখের আরেকটি ডায়েরি নোটে লেখা রয়েছে “সময়ে কন্ট্রাক্টর মি. শাহ আলম সাহেবের নিকট হতে নি¤œ লিখিত সেইফ হাউজের ব্যবহৃত মালামাল বুঝিয়া পাইয়া নোট করিলাম।
মালামালের বর্ণনা ঃ- গ্যাস সহ গ্যাস সিলিন্ডার - ৩টি, গ্যাস চুরা স্টীর ফিটিং মিটার রেগুলেটর সহ - ২টি, লাক্স সাবান মধ্যম - ১ডজন, লাক্স সাবান ছোট - ১ডজন, এসিআই (মশক নিধন) - ১টি, টেবিল টিসু পেপার - ২ বক্স, টয়লেট টিসু পেপার - ১ বক্স, পাপশ -৮টি, হারপিক - ২০টি, লাক্স সাবান - ২ ডজন, ভিম পাউডার - ১ ডজন, টিসু বক্স - ৫০টি, টয়লেট পেপার - ৫০টি, পাপশ - ৪০টি, ঝুড়ি - ২০টি, ঝাড়– ফুলের - ৬টি, ঝাড়ু শলার - ৪টি, দেয়াল ঘড়ি - ৪টি, মরটিন (মশক নিধন) - ১০টি, টি ব্যাগ - ৫ বক্স, কফি - ২ কৌটা, চিনি - ৪ কেজি, চা এর নেট ছাকনি - ৪টি, কাটা চামচ - ১ ডজন, টেবিল কলমদানি - ২টি, লাক্স সাবান - ৪টি, ঝুলি ঝাড়ু - ২টি।
কোন মন্তব্য নেই:
একটি মন্তব্য পোস্ট করুন