৫ সাক্ষী নিখোঁজ, ১৪ জন খুঁজে পাওয়া যাচ্ছেনা
অনুপস্থিত তালিকায় শাহরিয়ার কবির, জাফর ইকবাল, জুয়েল আইচ, মেজার জিয়া উদ্দিনের নামও রয়েছে
২০/৩/২০১২ মঙ্গলবার
মেহেদী হাসান
মাওলানা দেলাওয়ার হোসাইন সাঈদীর বিরুদ্ধে ৪৬ জন সাক্ষীর জবানবন্দী তাদের অনুপস্থিতিতে আদালতে সাক্ষ্য হিসেবে গ্রহনের আবেদন জানিয়েছেন রাষ্ট্রপক্ষের আইনজীবীরা। আজ প্রসিকিউশনের পক্ষ থেকে এ আবেদন জানানো হয়। আগামী ২৫ মার্চ এ বিষয়ে শুনানীর জন্য ধার্য্য করা হয়েছে।
রাষ্ট্রপক্ষের আইনজীবীদের দরখাস্তে বলা হয়েছে ৪৬ জন সাক্ষীকে হাজির করা আদৌ সম্ভব নয়। এদের মধ্যে পাঁচজনকে হাজির করতে না পারা বিষয়ে বলা হয়েছে তারা নিখোঁজ। ১৪জনকে খুঁজে পাওয়া যাচ্ছেনা। নিখেঁাঁজ পাঁচ জনের তিনজন গোপনে ভারতে পালিয়ে গেছে।
আদৌ হাজির করা সম্ভব নয় হিসেবে যে ৪৬ জনের তালিকা দেয়া হয়েছে তাদের মধ্যে ঘাতক দালাল নির্মুল কমিটির সভাপতি শাহরিয়ার কবির, লেখক প্রফেসর জাফর ইকবাল (হুমায়ুন আহমেদের ভাই), খ্যাতিমান জাদুশিল্পী জুয়েল আইচ, পিরোজপুর সাবসেক্টর কমান্ডার মেজর (অব) জিয়াউদ্দিন আহমেদের নামও রয়েছে।
৪৬ জন সাক্ষী বিষয়ে আবেদনে বলা হয়েছে “সাক্ষীগণকে নিম্নবর্নিত কারনে সাক্ষ্য প্রদানের নিমিত্তে হাজির করা দুরুহ, সময়সাপেক্ষ, ব্যায়বহুল ও আদৌ সম্ভব নয় বিধায় তদন্তকারী কর্মকর্তার লিপিবদ্ধ জবানবন্দী সাক্ষ্য হিসেবে গ্রহণ করা ন্যায় বিচারের স্বার্থে আবশ্যক”
যে ৪৬ জন সাক্ষীর অনুপস্থিতিতে তাদের সাক্ষ্য গ্রহনের আবেদন জানানো হয়েছে তাদের সবার নামের তালিকা দেয়া হয়েছে এবং ১৯ জন সাক্ষী হাজির করতে না পারার কারণ তাদের নামের পাশে উল্লেখ করা হয়েছে। তালিকার এক নম্বরে থাকা ঊষারানী মালাকারকে হাজির করতে না পারা বিষয়ে বলা হয়েছে তিনি অসুস্থ, স্মরনশক্তি লোপ, ভ্রমনে মুত্যু ঝুকি রয়েছে।
তালিকায় দ্বিতীয় স্থানে থাকা সুখরঞ্জন বালী সম্পর্কে বলা হয়েছে চার মাস আগে নিজ বাড়ি থেকে বের হবার পর নিখোঁজ। তালিকার ৩ থেকে পাচ নম্বরে থাকা আশিষ কুমার মন্ডল, সুমীত রানী মন্ডল এবং সমর মিস্ত্রী সম্পর্কে বলা হয়েছে তারা ফেব্রুয়ারির প্রথম সপ্তাহ থেকে নিখোঁজ। সম্ভবত তারা গোপনে ভারতে পালিয়ে গেছে।
তালিকায় ৬ থেকে ১৯ নম্বর মোট ১৪ জন সাক্ষী সম্পর্কে বলা হয়েছে তাদের খুঁজে পাওয়া যাচ্ছেনা। আসামীর পক্ষ অবলম্বনকারী পিরোজপুরের অস্ত্রধারী সন্ত্রাসী গ্রুপ কর্তৃক সাক্ষীদের বাড়িতে গিয়ে হুমকির
প্রেক্ষিতে ভয়ে ভীত হয়ে তারা আত্মপোগন করেছে। এদের মধ্যে রয়েছে সুরেষ চন্দ্র মন্ডল, গণেশ চন্দ্র সাহা, শহিদুল ইসলাম খান সেলিম, আইউব আলী হাওলাদার, গোপাল কৃষ্ণ মন্ডল, বজলুর রহমান, সিতারা বেগম, রানী বেগম, মো: মোস্তফা, আব্দুল লতিফ হাওলাদার, অনিল চন্দ্র মন্ডল, অজিত কুমার
শীল, খলিলুর রহমান শেখ এবং এছহাক আলী খান। উক্ত ১৯ জন সাক্ষী সম্পর্কে বলা হয়েছে তারা সকলেই মাওলানা সাঈদীর বিরুদ্ধে মামলায় বর্ণিত ঘটনার চাুস সাক্ষী।
বাকী ২০ থেকে ৪৬ জন সাক্ষী সম্পর্কে বলা হয়েছে তারা ঘটনার প্রত্যক্ষ সাক্ষী নন। তবে তদন্তকারী কর্মকর্তা কর্তৃক লিপিবদ্ধকৃত তাদের জবানবন্দীসমূহ মামলার জন্য গুরুত্বপূর্ণ। মাওলানা সাঈদীর বিরুদ্ধে পূর্বে যে ১৮ জন ঘটনার সাক্ষী সাক্ষ্য দিয়েছেন তাদের কয়েকজন বলেছেন, মাওলানা সাঈদীর নির্দেশে জাফর ইকবাল ও হুমায়ূন আহমেদের পিতা ফয়েজ আহমেদকে হত্যা করা হয়েছে। কিন্তু আদৌ হাজির করা সম্ভব নয় মর্মে উল্লিখিত ৪৬ জনের তালিকায় জাফর ইকবালসহ আরো অনেক পরিচিতদের নাম রয়েছে। তাদের জবানবন্দীও পূর্বে জমা দেয়া হয়েছে।
দরখাস্তের তালিকায় ২০ থেকে ৪৬ নম্বরে যাদের নাম রয়েছে তারা হলেন, সৈয়দ শারাফৎ আলী, কাদির ব্যাপারী, রুহুল আমিন হাওলাদার, বঙ্কিম সাহা তালুকদার, চান মিয়া পশারী, বিমল চন্দ্র হাওলাদার, আব্দুল হালিম, গোলাম হোসেন তালুকদার, রামপোগাল সাহা তালুকদার, হোজাম্মেল হোসেন, সদর উদ্দিন, জাফর ইকবাল, সুফিয়া কামাল, আফরোজা পারভীন, মুকুন্দ চক্রবর্তী, মেজর জিয়াউদ্দিন, জ্যোৎসনা বিশ্বাস, পুলক চৌধুরী, আল হায়দার খান, ফসিউল ইসলাম বাচ্চু, একেএম জগলুল হায়দার আফরিক, জুয়েল আইচ, শাহরিয়ার কবির, মোখলেস পশারী, খন্দকার শহিদুল্লাহ এবং আইউব আলী তালুকদার।
মাওলানা সাঈদীর বিরুদ্ধে রাষ্ট্রপক্ষ থেকে বারবার সাক্ষী হাজিরে ব্যর্থতার পর ট্রাইব্যুনাল তাদেরকে সাক্ষী হাজির বিষয়ে ১৮ ডিসেম্বর লাস্ট চান্স দিয়েছিলেন। কিন্তু ঐদিন তারা নতুন কোন সাক্ষী হাজির না করে তদন্ত কর্মকর্তা হেলাল উদ্দিন খানকে সাক্ষী দেয়ার জন্য আদালতে পেশ করেন। কিন্তু ট্রাইব্যুনাল তার সাক্ষী গ্রহণ না করে বলেন, তদন্ত কর্মকর্তার পরেও আর কোন সাক্ষী আনা হবে কি-না সে বিষয়ে লিখিত আকারে জানাতে হবে আগে। তারপর তদন্ত কর্মকর্তার সাক্ষ্য গ্রহণ বিষয়ে জানানো হবে। আজ ২০ মার্চ রাষ্ট্রপক্ষকে বাকী সাক্ষী বিষয়ে জানানোর জন্য তারিখ নির্ধারণ করে দেন আদালতে। আজ দুপুরে রাষ্ট্রপক্ষের আইনজীবী সৈয়দ হায়দার আলী ৪৬ জন সাক্ষীর অনুপস্থিতিতে তদন্ত কর্মকর্তার কাছে প্রদত্ত তাদের জবনাবন্দী সাক্ষ্য হিসেবে গ্রহনের আবেদন জানান। যুদ্ধাপরাধ আইনের ১৯ (২) ধারা মোতাবেক দরখাস্তটি করা হয়েছে।
আইনের ১৯ (২) ধারায় বলা হয়েছে বিচার চলাকলে কোন ব্যক্তি মৃত হলে, তাকে হাজির করা যদি কালপেক্ষন এবং ব্যাবহুল হয় এবং ট্রাইব্যুনাল যদি মনে করেন এভাবে সময় এবং অর্থ ব্যায় করে কাইকে হাজির করা যুক্তিসঙ্গত নয় তাহলে মেজিস্ট্রেট বা তদন্ত কর্মকর্তার কাছে উক্ত ব্যক্তিদের প্রদত্ত জবানবন্দী আদালত এভিডেন্স আকারে গ্রহণ করতে পারেন।
মাওলানা সাঈদীর আইনজীবী মিজানুল ইসলাম বলেন, শাহরিয়ার কবির, জাফর ইকবাল, জুয়েল আইচ, মেজর জিয়া উদ্দিন তাদের ক্ষেত্রে আইনের এ ধারা কি করে গ্রহণযোগ্য হতে পারে? তাদের কেন তারা আনতে পারবেননা? তাদের জবাবন্দী কেন তাদের অনুপস্থিতিতে সাক্ষ্য হিসেবে গ্রহণ করতে হবে?
মিজানুল ইসলাম বলেন, দরখাস্তটি অতিশয় মারাত্মক। বিশ্বের কোন আইনে এমন নজীর আছে বলে আমার জানা নেই। এটা হবে ফ্রান্সের গিলোটিনের মত আসামীকে জবাই করার শামীল।
মিজানুল ইসলাম বলেন, ট্রাইব্যুনাল রাষ্ট্রপক্ষকে বলেছিলেন আর কোন সাক্ষী তারা আনতে পারবেন কি-না, আনলে কাদের আনবেন সে বিষয়ে তাদের দরখাস্ত দিয়ে জানানোর জন্য। কিন্তু তারা সে বিষয়ে কিছু না বলে গতকাল সকালে বলল দুইটায় তারা দরখাস্ত দেবেন। কিন্তু দুইটার পর দরখাস্ত দিয়ে
জানালেন তারা ৪৬ জন সাক্ষী আনতে পারবেননা। কিন্তু তদন্ত কর্মকর্তা লিখিত সাক্ষীদের জবানবন্দী তাদের অনুপস্থিতিতে সাক্ষ্য হিসেবে গ্রহণ করার আবেদন জানানো হয়েছে।
রাষ্ট্রপক্ষের দরখাস্তের বিষয় হিসেবে উল্লেখ করা হয়েছে “আন্তর্জাতিক অপরাধ (ট্রাইব্যুনাল) আইন ১৯৭৩-র ১৯ (২) ধারা মোতাবেক অত্র মামলার তদন্তকালে তদন্তকারী কর্মকর্তা কর্তৃক সাক্ষীদের লিপিবদ্ধ জবানবন্দী উক্ত সাক্ষীদের অনুপস্থিতিতে সাক্ষ্য হিসেবে গ্রহণ করার নিমিত্তে আবেদন”
দরখাস্তের ৩ নম্বর পয়েন্টে বলা হয়েছে “যেহেতু মামলার তদন্তকালে তদন্তকারী কর্মকর্তার নিকট অন্যান্য যে সাক্ষীগন সাক্ষ্য প্রদান করিয়াছেন তাহাদের মাননীয় আদালতে প্রদত্ত বক্তব্য এবং যে সমস্ত সাক্ষীগণ, আদালতে উপস্থিত হন নাই তদন্তকারী কর্মকর্তার নিকটে তাহাদের প্রদত্ত বক্তব্যসমূহ একই মানের এবং একই প্রকারের বিধায় উহা সাক্ষ্য হিসেবে গ্রহণ করিতে আইনগত কোন অসুবিধা নাই। উক্ত সাক্ষীদের মাননীয় ট্রাইব্যুনালে উপস্থিত করানোর চেষ্টা শুধুমাত্র কালক্ষেপন ও ব্যায়বহুল হইবে এবং আদৌ তাহাদের হাজির করা সম্ভব হইবেনা সেই কারনে উক্তরূপ প্রচেষ্টা যুক্তিসঙ্গত নয়” ।
৪ এবং ৫ দফায় বলা হয়েছে “যেহেতু তদন্তকারী কর্মকর্তা অনুপস্থিত সাক্ষীদের ট্রাইব্যুনালে হাজির করানোর জন্য স্বাক্ষীদের উল্লেখিত তথ্যাদি প্রাপ্ত হইয়াছে। উল্লেখিত সাক্ষীদের জবানবন্দী, যাহা তদন্তকারী কর্মকর্তা লিপিবদ্ধ করিয়াছেন তাহা, সাক্ষ্য হিসেবে গ্রহণ না করিলে ন্যায় বিচার ব্যহত হইবে এবং প্রসিকিউশন ক্ষতিগ্রস্ত হইবে।”
মাওলানা সাঈদীর বিরুদ্ধে রাষ্ট্রপক্ষ থেকে মোট ১৩৮ জন সাক্ষীর তালিকা দেয়া হয়েছে। এর মধ্যে ৬৮ জন সাক্ষীর জবানবন্দী রয়েছে। বাকীরা হলেন জব্দ তালিকার সাক্ষী।
যে ৬৮ জন সাক্ষীর জবানবন্দী রয়েছে তাদের মধ্য থেকে মাত্র ১৮ জন সাক্ষী আদালতে হাজির করা হয়েছে এ পর্যন্ত। তাদের সাক্ষ্য শেষে জেরাও হয়েছে। উক্ত ১৮ জন সাক্ষীও নিয়মিত হাজির করতে বারবার ব্যর্থ হয় প্রসিকিউশন। ট্রাইব্যুনাল দুইবার লিখিত আদেশ দিয়েছেন সাক্ষী হাজিরে ব্যর্থতার কারনে। মোট পাঁচবার মাওলানা সাঈদীর বিচার কার্যক্রম মুলতবি করতে বাধ্য হয়েছেন ট্রাইব্যুনাল। তাছাড়া ৩/ ৪ দিন করে গ্যাপ রাখা হয় বেশ কয়েকবার।
সর্বশেষ গত সাত মার্চ সাক্ষী হাজিরের জন্য ধার্য ছিল। কিন্তু ১৫ দিন বিরতির পর ঐদিনও সাক্ষী হাজিরে ব্যর্থ হওয়ায় ট্রাইব্যুনাল তাদেরকে শেষবারের মত আরেকটি সুযোগ দিয়েছেন সাক্ষী হাজির করা বিষয়ে। ট্রাইব্যুনাল লিখিত আদেশে বলেছেন ১৮ মার্চ সাক্ষী হাজিরে ব্যর্থ হলে ঐদিন যথাযথ আদেশ দেবেন। ট্রাইব্যুনাল রাষ্ট্রপক্ষের আইনজীবীদের বলেছেন আর কোন সাক্ষী আনতে না পারলে কোজ করার চেষ্টা করেন। কিন্তু ১৮ মার্চও তারা কোন নতুন সাক্ষী হাজির করতে পারেনি এবং তদন্ত কর্মকতার সাক্ষ্য গ্রহনের অনুরোধ জানায়।
গত বছর ৭ ডিসেম্বর মাওলানা সাঈদীর বিরুদ্ধে প্রথম সাক্ষীর সাক্ষ্য গ্রহণ করা হয়। সর্বশেষ গত এক মাসে রাষ্ট্রপক্ষ মাওলানা সাঈদীর বিরুদ্ধে মাত্র একজন ঘটনার সাক্ষী (নড়াইলের সাইফ হাফিজুর রহমান) হাজির করতে সক্ষম হন।
অনুপস্থিত তালিকায় শাহরিয়ার কবির, জাফর ইকবাল, জুয়েল আইচ, মেজার জিয়া উদ্দিনের নামও রয়েছে
২০/৩/২০১২ মঙ্গলবার
মেহেদী হাসান
মাওলানা দেলাওয়ার হোসাইন সাঈদীর বিরুদ্ধে ৪৬ জন সাক্ষীর জবানবন্দী তাদের অনুপস্থিতিতে আদালতে সাক্ষ্য হিসেবে গ্রহনের আবেদন জানিয়েছেন রাষ্ট্রপক্ষের আইনজীবীরা। আজ প্রসিকিউশনের পক্ষ থেকে এ আবেদন জানানো হয়। আগামী ২৫ মার্চ এ বিষয়ে শুনানীর জন্য ধার্য্য করা হয়েছে।
রাষ্ট্রপক্ষের আইনজীবীদের দরখাস্তে বলা হয়েছে ৪৬ জন সাক্ষীকে হাজির করা আদৌ সম্ভব নয়। এদের মধ্যে পাঁচজনকে হাজির করতে না পারা বিষয়ে বলা হয়েছে তারা নিখোঁজ। ১৪জনকে খুঁজে পাওয়া যাচ্ছেনা। নিখেঁাঁজ পাঁচ জনের তিনজন গোপনে ভারতে পালিয়ে গেছে।
আদৌ হাজির করা সম্ভব নয় হিসেবে যে ৪৬ জনের তালিকা দেয়া হয়েছে তাদের মধ্যে ঘাতক দালাল নির্মুল কমিটির সভাপতি শাহরিয়ার কবির, লেখক প্রফেসর জাফর ইকবাল (হুমায়ুন আহমেদের ভাই), খ্যাতিমান জাদুশিল্পী জুয়েল আইচ, পিরোজপুর সাবসেক্টর কমান্ডার মেজর (অব) জিয়াউদ্দিন আহমেদের নামও রয়েছে।
৪৬ জন সাক্ষী বিষয়ে আবেদনে বলা হয়েছে “সাক্ষীগণকে নিম্নবর্নিত কারনে সাক্ষ্য প্রদানের নিমিত্তে হাজির করা দুরুহ, সময়সাপেক্ষ, ব্যায়বহুল ও আদৌ সম্ভব নয় বিধায় তদন্তকারী কর্মকর্তার লিপিবদ্ধ জবানবন্দী সাক্ষ্য হিসেবে গ্রহণ করা ন্যায় বিচারের স্বার্থে আবশ্যক”
যে ৪৬ জন সাক্ষীর অনুপস্থিতিতে তাদের সাক্ষ্য গ্রহনের আবেদন জানানো হয়েছে তাদের সবার নামের তালিকা দেয়া হয়েছে এবং ১৯ জন সাক্ষী হাজির করতে না পারার কারণ তাদের নামের পাশে উল্লেখ করা হয়েছে। তালিকার এক নম্বরে থাকা ঊষারানী মালাকারকে হাজির করতে না পারা বিষয়ে বলা হয়েছে তিনি অসুস্থ, স্মরনশক্তি লোপ, ভ্রমনে মুত্যু ঝুকি রয়েছে।
তালিকায় দ্বিতীয় স্থানে থাকা সুখরঞ্জন বালী সম্পর্কে বলা হয়েছে চার মাস আগে নিজ বাড়ি থেকে বের হবার পর নিখোঁজ। তালিকার ৩ থেকে পাচ নম্বরে থাকা আশিষ কুমার মন্ডল, সুমীত রানী মন্ডল এবং সমর মিস্ত্রী সম্পর্কে বলা হয়েছে তারা ফেব্রুয়ারির প্রথম সপ্তাহ থেকে নিখোঁজ। সম্ভবত তারা গোপনে ভারতে পালিয়ে গেছে।
তালিকায় ৬ থেকে ১৯ নম্বর মোট ১৪ জন সাক্ষী সম্পর্কে বলা হয়েছে তাদের খুঁজে পাওয়া যাচ্ছেনা। আসামীর পক্ষ অবলম্বনকারী পিরোজপুরের অস্ত্রধারী সন্ত্রাসী গ্রুপ কর্তৃক সাক্ষীদের বাড়িতে গিয়ে হুমকির
প্রেক্ষিতে ভয়ে ভীত হয়ে তারা আত্মপোগন করেছে। এদের মধ্যে রয়েছে সুরেষ চন্দ্র মন্ডল, গণেশ চন্দ্র সাহা, শহিদুল ইসলাম খান সেলিম, আইউব আলী হাওলাদার, গোপাল কৃষ্ণ মন্ডল, বজলুর রহমান, সিতারা বেগম, রানী বেগম, মো: মোস্তফা, আব্দুল লতিফ হাওলাদার, অনিল চন্দ্র মন্ডল, অজিত কুমার
শীল, খলিলুর রহমান শেখ এবং এছহাক আলী খান। উক্ত ১৯ জন সাক্ষী সম্পর্কে বলা হয়েছে তারা সকলেই মাওলানা সাঈদীর বিরুদ্ধে মামলায় বর্ণিত ঘটনার চাুস সাক্ষী।
বাকী ২০ থেকে ৪৬ জন সাক্ষী সম্পর্কে বলা হয়েছে তারা ঘটনার প্রত্যক্ষ সাক্ষী নন। তবে তদন্তকারী কর্মকর্তা কর্তৃক লিপিবদ্ধকৃত তাদের জবানবন্দীসমূহ মামলার জন্য গুরুত্বপূর্ণ। মাওলানা সাঈদীর বিরুদ্ধে পূর্বে যে ১৮ জন ঘটনার সাক্ষী সাক্ষ্য দিয়েছেন তাদের কয়েকজন বলেছেন, মাওলানা সাঈদীর নির্দেশে জাফর ইকবাল ও হুমায়ূন আহমেদের পিতা ফয়েজ আহমেদকে হত্যা করা হয়েছে। কিন্তু আদৌ হাজির করা সম্ভব নয় মর্মে উল্লিখিত ৪৬ জনের তালিকায় জাফর ইকবালসহ আরো অনেক পরিচিতদের নাম রয়েছে। তাদের জবানবন্দীও পূর্বে জমা দেয়া হয়েছে।
দরখাস্তের তালিকায় ২০ থেকে ৪৬ নম্বরে যাদের নাম রয়েছে তারা হলেন, সৈয়দ শারাফৎ আলী, কাদির ব্যাপারী, রুহুল আমিন হাওলাদার, বঙ্কিম সাহা তালুকদার, চান মিয়া পশারী, বিমল চন্দ্র হাওলাদার, আব্দুল হালিম, গোলাম হোসেন তালুকদার, রামপোগাল সাহা তালুকদার, হোজাম্মেল হোসেন, সদর উদ্দিন, জাফর ইকবাল, সুফিয়া কামাল, আফরোজা পারভীন, মুকুন্দ চক্রবর্তী, মেজর জিয়াউদ্দিন, জ্যোৎসনা বিশ্বাস, পুলক চৌধুরী, আল হায়দার খান, ফসিউল ইসলাম বাচ্চু, একেএম জগলুল হায়দার আফরিক, জুয়েল আইচ, শাহরিয়ার কবির, মোখলেস পশারী, খন্দকার শহিদুল্লাহ এবং আইউব আলী তালুকদার।
মাওলানা সাঈদীর বিরুদ্ধে রাষ্ট্রপক্ষ থেকে বারবার সাক্ষী হাজিরে ব্যর্থতার পর ট্রাইব্যুনাল তাদেরকে সাক্ষী হাজির বিষয়ে ১৮ ডিসেম্বর লাস্ট চান্স দিয়েছিলেন। কিন্তু ঐদিন তারা নতুন কোন সাক্ষী হাজির না করে তদন্ত কর্মকর্তা হেলাল উদ্দিন খানকে সাক্ষী দেয়ার জন্য আদালতে পেশ করেন। কিন্তু ট্রাইব্যুনাল তার সাক্ষী গ্রহণ না করে বলেন, তদন্ত কর্মকর্তার পরেও আর কোন সাক্ষী আনা হবে কি-না সে বিষয়ে লিখিত আকারে জানাতে হবে আগে। তারপর তদন্ত কর্মকর্তার সাক্ষ্য গ্রহণ বিষয়ে জানানো হবে। আজ ২০ মার্চ রাষ্ট্রপক্ষকে বাকী সাক্ষী বিষয়ে জানানোর জন্য তারিখ নির্ধারণ করে দেন আদালতে। আজ দুপুরে রাষ্ট্রপক্ষের আইনজীবী সৈয়দ হায়দার আলী ৪৬ জন সাক্ষীর অনুপস্থিতিতে তদন্ত কর্মকর্তার কাছে প্রদত্ত তাদের জবনাবন্দী সাক্ষ্য হিসেবে গ্রহনের আবেদন জানান। যুদ্ধাপরাধ আইনের ১৯ (২) ধারা মোতাবেক দরখাস্তটি করা হয়েছে।
আইনের ১৯ (২) ধারায় বলা হয়েছে বিচার চলাকলে কোন ব্যক্তি মৃত হলে, তাকে হাজির করা যদি কালপেক্ষন এবং ব্যাবহুল হয় এবং ট্রাইব্যুনাল যদি মনে করেন এভাবে সময় এবং অর্থ ব্যায় করে কাইকে হাজির করা যুক্তিসঙ্গত নয় তাহলে মেজিস্ট্রেট বা তদন্ত কর্মকর্তার কাছে উক্ত ব্যক্তিদের প্রদত্ত জবানবন্দী আদালত এভিডেন্স আকারে গ্রহণ করতে পারেন।
মাওলানা সাঈদীর আইনজীবী মিজানুল ইসলাম বলেন, শাহরিয়ার কবির, জাফর ইকবাল, জুয়েল আইচ, মেজর জিয়া উদ্দিন তাদের ক্ষেত্রে আইনের এ ধারা কি করে গ্রহণযোগ্য হতে পারে? তাদের কেন তারা আনতে পারবেননা? তাদের জবাবন্দী কেন তাদের অনুপস্থিতিতে সাক্ষ্য হিসেবে গ্রহণ করতে হবে?
মিজানুল ইসলাম বলেন, দরখাস্তটি অতিশয় মারাত্মক। বিশ্বের কোন আইনে এমন নজীর আছে বলে আমার জানা নেই। এটা হবে ফ্রান্সের গিলোটিনের মত আসামীকে জবাই করার শামীল।
মিজানুল ইসলাম বলেন, ট্রাইব্যুনাল রাষ্ট্রপক্ষকে বলেছিলেন আর কোন সাক্ষী তারা আনতে পারবেন কি-না, আনলে কাদের আনবেন সে বিষয়ে তাদের দরখাস্ত দিয়ে জানানোর জন্য। কিন্তু তারা সে বিষয়ে কিছু না বলে গতকাল সকালে বলল দুইটায় তারা দরখাস্ত দেবেন। কিন্তু দুইটার পর দরখাস্ত দিয়ে
জানালেন তারা ৪৬ জন সাক্ষী আনতে পারবেননা। কিন্তু তদন্ত কর্মকর্তা লিখিত সাক্ষীদের জবানবন্দী তাদের অনুপস্থিতিতে সাক্ষ্য হিসেবে গ্রহণ করার আবেদন জানানো হয়েছে।
রাষ্ট্রপক্ষের দরখাস্তের বিষয় হিসেবে উল্লেখ করা হয়েছে “আন্তর্জাতিক অপরাধ (ট্রাইব্যুনাল) আইন ১৯৭৩-র ১৯ (২) ধারা মোতাবেক অত্র মামলার তদন্তকালে তদন্তকারী কর্মকর্তা কর্তৃক সাক্ষীদের লিপিবদ্ধ জবানবন্দী উক্ত সাক্ষীদের অনুপস্থিতিতে সাক্ষ্য হিসেবে গ্রহণ করার নিমিত্তে আবেদন”
দরখাস্তের ৩ নম্বর পয়েন্টে বলা হয়েছে “যেহেতু মামলার তদন্তকালে তদন্তকারী কর্মকর্তার নিকট অন্যান্য যে সাক্ষীগন সাক্ষ্য প্রদান করিয়াছেন তাহাদের মাননীয় আদালতে প্রদত্ত বক্তব্য এবং যে সমস্ত সাক্ষীগণ, আদালতে উপস্থিত হন নাই তদন্তকারী কর্মকর্তার নিকটে তাহাদের প্রদত্ত বক্তব্যসমূহ একই মানের এবং একই প্রকারের বিধায় উহা সাক্ষ্য হিসেবে গ্রহণ করিতে আইনগত কোন অসুবিধা নাই। উক্ত সাক্ষীদের মাননীয় ট্রাইব্যুনালে উপস্থিত করানোর চেষ্টা শুধুমাত্র কালক্ষেপন ও ব্যায়বহুল হইবে এবং আদৌ তাহাদের হাজির করা সম্ভব হইবেনা সেই কারনে উক্তরূপ প্রচেষ্টা যুক্তিসঙ্গত নয়” ।
৪ এবং ৫ দফায় বলা হয়েছে “যেহেতু তদন্তকারী কর্মকর্তা অনুপস্থিত সাক্ষীদের ট্রাইব্যুনালে হাজির করানোর জন্য স্বাক্ষীদের উল্লেখিত তথ্যাদি প্রাপ্ত হইয়াছে। উল্লেখিত সাক্ষীদের জবানবন্দী, যাহা তদন্তকারী কর্মকর্তা লিপিবদ্ধ করিয়াছেন তাহা, সাক্ষ্য হিসেবে গ্রহণ না করিলে ন্যায় বিচার ব্যহত হইবে এবং প্রসিকিউশন ক্ষতিগ্রস্ত হইবে।”
মাওলানা সাঈদীর বিরুদ্ধে রাষ্ট্রপক্ষ থেকে মোট ১৩৮ জন সাক্ষীর তালিকা দেয়া হয়েছে। এর মধ্যে ৬৮ জন সাক্ষীর জবানবন্দী রয়েছে। বাকীরা হলেন জব্দ তালিকার সাক্ষী।
যে ৬৮ জন সাক্ষীর জবানবন্দী রয়েছে তাদের মধ্য থেকে মাত্র ১৮ জন সাক্ষী আদালতে হাজির করা হয়েছে এ পর্যন্ত। তাদের সাক্ষ্য শেষে জেরাও হয়েছে। উক্ত ১৮ জন সাক্ষীও নিয়মিত হাজির করতে বারবার ব্যর্থ হয় প্রসিকিউশন। ট্রাইব্যুনাল দুইবার লিখিত আদেশ দিয়েছেন সাক্ষী হাজিরে ব্যর্থতার কারনে। মোট পাঁচবার মাওলানা সাঈদীর বিচার কার্যক্রম মুলতবি করতে বাধ্য হয়েছেন ট্রাইব্যুনাল। তাছাড়া ৩/ ৪ দিন করে গ্যাপ রাখা হয় বেশ কয়েকবার।
সর্বশেষ গত সাত মার্চ সাক্ষী হাজিরের জন্য ধার্য ছিল। কিন্তু ১৫ দিন বিরতির পর ঐদিনও সাক্ষী হাজিরে ব্যর্থ হওয়ায় ট্রাইব্যুনাল তাদেরকে শেষবারের মত আরেকটি সুযোগ দিয়েছেন সাক্ষী হাজির করা বিষয়ে। ট্রাইব্যুনাল লিখিত আদেশে বলেছেন ১৮ মার্চ সাক্ষী হাজিরে ব্যর্থ হলে ঐদিন যথাযথ আদেশ দেবেন। ট্রাইব্যুনাল রাষ্ট্রপক্ষের আইনজীবীদের বলেছেন আর কোন সাক্ষী আনতে না পারলে কোজ করার চেষ্টা করেন। কিন্তু ১৮ মার্চও তারা কোন নতুন সাক্ষী হাজির করতে পারেনি এবং তদন্ত কর্মকতার সাক্ষ্য গ্রহনের অনুরোধ জানায়।
গত বছর ৭ ডিসেম্বর মাওলানা সাঈদীর বিরুদ্ধে প্রথম সাক্ষীর সাক্ষ্য গ্রহণ করা হয়। সর্বশেষ গত এক মাসে রাষ্ট্রপক্ষ মাওলানা সাঈদীর বিরুদ্ধে মাত্র একজন ঘটনার সাক্ষী (নড়াইলের সাইফ হাফিজুর রহমান) হাজির করতে সক্ষম হন।
কোন মন্তব্য নেই:
একটি মন্তব্য পোস্ট করুন