মেহেদী হাসান, ১৮/৩/২০১২
আজো মাওলানা দেলাওয়ার হোসাইন সাঈদীর বিরুদ্ধে কোন নতুন সাক্ষী আনতে পারলনা রাষ্ট্রপক্ষের আইনজীবীরা। নতুন সাক্ষী আনতে না পারায় আজ তারা তদন্ত কর্মকর্তা হেলাল উদ্দিন খানকে আদালতে সাক্ষ্য দেয়ার জন্য নিয়ে আসেন। কিন্তু আদালত তার সাক্ষ্য গ্রহণ করেননি। আদালত বলেছেন, আর কোন ঘটনার সাক্ষী আনা হবে কিনা সে বিষয়ে লিখিত আকারে জানাতে হবে আদালতকে। তারপর তদন্ত কর্মকর্তার সাক্ষ্য গ্রহণ বিষয়ে জানানো হবে।
গত ৭ মার্চ আদালত রাষ্ট্রপক্ষকে সাক্ষী হাজিরের বিষয়ে শেষ চান্স দিয়ে বলেছিলেন ১৮ মার্চ সাক্ষী আনতে না পারলে তারা প্রয়োজনীয় আদেশ দেবেন। কিন্তু গতকালও তারা নতুন কোন সাক্ষী হাজির করতে পারলনা। মাওলানা সাঈদীর বিরুদ্ধে বারবার সাক্ষী হাজিরে ব্যর্থতার প্রেক্ষিতে গত ৭ মার্চ ট্রাইব্যুনাল ঐ আদেশ দিয়েছিলেন।
দীর্ঘ ১৫ দিন বিরতির পরও সেদিন তারা সাক্ষী আনতে ব্যর্থ হয়। সাক্ষী আনতে না পারায় ৭ মার্চ
ট্রাইব্যুনাল রাষ্ট্রপক্ষের আইনজীবীদের বলেন “আর কোন সাক্ষী আনতে না পারলে কোজ করার চেষ্টা করেন। ”
দুপুরের বিররিত পর ট্রাইব্যুনালের কার্যক্রম শুরু হলে মাওলানা সাঈদীর বিরুদ্ধে সাক্ষী বিষয়ে জানতে চান ট্রাইব্যুনাল। রাষ্ট্রপক্ষের আইনজীবী সৈয়দ হায়দার আলী বলেন, তদন্ত কর্মকর্তা হেলাল উদ্দিন খান সাক্ষ্য দেবেন। তখন ট্রাইব্যুনালের বিচারপতি এটিএম ফজলে কবির বলেন, তিনি ছাড়া আর কোন সাক্ষী নেই? সৈয়দ হায়দার আলী তখন বলেন, তদন্ত কর্মকর্তাকে দিয়ে আজ সাক্ষ্য দেয়াতে চাই। বর্তমানে তিনি ছাড়া আর কোন সাক্ষী নেই। তদন্ত কর্মকর্তার সাক্ষ্য নেয়া হলে আর কোন সাক্ষী আনা হবে কি-না পরে জানানো হবে। তদন্ত কর্মকর্তার সাক্ষ্যের পরও অন্য সাক্ষীরা যাতে সাক্ষ্য দিতে পারেন সে পথ খোলা রখার আবেদন করেন তিনি।
তখন ট্রাইব্যুনালের চেয়ারম্যান বিচারপতি নিজামুল হক বলেন, তদন্ত কর্মকর্তার পরে তো আর কোন সাক্ষী আমরা নেবনা।
বিচারপতি এটিএম ফজলে কবির বলেন, জব্দ তালিকার সাক্ষী আনা যেতে পারে কিন্তু ঘটনার সাক্ষী আনা যাবেনা।
মাওলানা সাঈদীর আইনজীবী মিজানুল ইসলাম বলেন, তদন্ত কর্মকর্তা সাক্ষ্য দেয়ার পর আর কোন ঘটনার সাক্ষীর সাক্ষ্য দেয়ার সুযোগ নেই। প্রথমে ওনাদের বলতে হবে তারা ঘটনার সাক্ষী হাজির পর্ব কোজ করবেন কি-না। তা না হলে তদন্ত কর্মকর্তার পরে নতুন সাক্ষী আনার ক্ষেত্রে আমাদের আপত্তি আছে। তিনি বলেন, তারা ৬৮ জন ঘটনার সাক্ষীর তালিকা আমাদের দিয়েছেন। সেখান থেকে মাত্র ১৮ জন সাক্ষী এ পর্যন্ত আদালতে হাজির করেছেন। ভবিষ্যতে নতুন সাক্ষী পাওয়া গেলে আবার তারা কোন ঘটনার সাক্ষী আনা হবে কি-না তা জানাতে হবে আগে। তদন্ত কর্মকর্তার সাক্ষ্য গ্রহণ হয়ে যাবার পরে নতুন করে ঘটনার সাক্ষী আনার কোন যৌক্তিক কারণ নেই। মিজানুল ইসলাম বলেন, গত
শনিবার হায়দার আলী সাহেব আমাকে বলেছিলেন, পরবর্তী সাক্ষী হিসেবে তদন্ত কর্মকর্তার বিষয়ে যেন আমরা প্রস্তুতি নিয়ে রাখি। সে হিসেবে ধরে নিয়েছিলাম তিনিই হবেন সর্বশেষ সাক্ষী।
সৈয়দ হায়দার আলী তখন বলেন, তদন্ত কর্মকর্তাকে দিয়ে কোজ করতে হবে এ নিয়ম আর এখন নেই। অনেক মামলায় সাক্ষ্য গ্রহণ শুরু হয় তদন্ত কর্মকর্তার সাক্ষ্য গ্রহনের মাধ্যমে। তিনি এরশাদের একটি মামলর উদাহরন দেন। মিজানুল ইসলাম বলেন, এরশাদের মামলার উদাহরন সঠিক নয়।
এ পর্যায়ে ট্রাইব্যুনালের চেয়ারম্যান বিচারপতি নিজামুল হক বলেন, , তদন্ত কর্মকতার পরে নতুন করে ঘটনার সাক্ষী সাক্ষ্য দিতে পারে কি-না তা আমরা বিবেচনা করে দেখব। তবে আসামী পক্ষের আইনজীবী মিজান সাহেবের সাথে আমি একমত যে, তদন্ত কর্মকর্তার সাক্ষ্য গ্রহণ শেষ হলেও তাকে আবারো সাক্ষ্য দিতে আনার প্রয়োজন হতে পারে ঘটনার সাক্ষী আবার আনা হলে।
সৈয়দ হায়দার আলী বলেন, এই মুহুর্তে আমরা তদন্ত কর্মকর্তকে দিয়ে সাক্ষ্য দেয়াতে চাই। সাক্ষী আনা শেষ হবার আগে আমি নিজেই দরখাস্ত দিয়ে জানাব ট্রাইব্যুনালকে।
বিচারপতি এটিএম ফজলে কবির বলেন, আসামী পক্ষ জানিয়েছেন তদন্ত কর্মকর্তাকে এখন সাক্ষী হিসেবে আনা হলে তাদের প্রস্তুতির দরকার আছে।
বিচারপতি নিজামুল হক রাষ্ট্রপক্ষের আইনজীবীদের বলেন, তদন্ত কর্মকর্তাকে সাক্ষ্য দিতে আনার আগে আপনাদের দরখাস্ত দিতে হবে অন্য সাক্ষীদের বিষয়ে জানিয়ে। তদন্ত কর্মকর্তার পরে আর কোন সাক্ষী আনবেন কি-না, আনলে কতজন আনবেন, কাদের আনবেন এসব বিষয় জানাতে হবে। তারপর আমরা আদেশ দেব। তিনি বলেন অন্য সাক্ষীদের বিষয়ে আগামী ২০ তারিখ দরখাস্ত দিয়ে জানাতে হবে।
মাওলানা সাঈদীর আইনজীবী মিজানুল ইসলাম বলেন, ৭ মার্চ সাক্ষী আনতে না পারা বিষয়ে তারা ট্রাইব্যুনালে বলেছিলেন, আজ একটি অপ্রিয় সত্য কথা বলতে হবে। তখন ট্রাইব্যুনালও বলেছিলেন, আমাদেরও তাহলে অপ্রিয় কথা বলতে হবে। সেদিন ট্রাইব্যুনাল ১৮ মার্চ সাক্ষী হাজিরের জন্য সময় বেঁধে দিয়েছিলেন লাস্ট চান্স হিসেবে। সেজন্য তারা আজ (রোববার) তদন্ত কর্মকর্তাকে নিয়ে এসেছেন।
মাওলানা সাঈদীর বিরদ্ধ মোট ১৩৮ জন সাক্ষীর তালিকা জমা দিয়েছেন রাষ্ট্রপক্ষ। এর মধ্যে ২৭ জন সাক্ষ্য দিয়েছেন। ২৭ জনের মধ্যে ১৮ জন হল ঘটনার সাক্ষী। বাকিরা জব্দ তালিকার।
নিরপেক্ষ বিচার নিয়ে শঙ্কা ব্যারিস্টার আব্দুর রাজ্জাকের:
এদিকে নিরপেক্ষ বিচার নিয়ে শঙ্কা প্রকাশ করেছেন আসামী পক্ষের প্রধান আইনজীবী ব্যারিস্টার আব্দুর রাজ্জাক। গত ১৪ মার্চ আব্দুল কাদের মোল্লার চার্জশিট বিষয়ে ট্রাইব্যুনাল প্রসিকিউশনকে যেসব প্রশ্ন করেন তার প্রতি দৃষ্টি আকর্ষণ করেন ব্যারিস্টার আব্দুর রাজ্জাক। তিনি অভিযোগ করে বলেন, প্রসিকিউশনের যেসব দুর্বলতা রয়েছে এসব প্রশ্ন তাদের সে দুর্বলতা কাটিয়ে ওঠার পক্ষে সহায়ক। এর মাধ্যমে তারা লাভবান হচ্ছেন এবং আসামী পক্ষ ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছে। আসামী পক্ষের প্রিজুডিস (অবিচার) হবার সম্ভাবনা রয়েছে। তিনি বলেন, ট্রাইব্যুনালের এসব মন্তব্য নিরপেক্ষ বিচারের ওপর প্রভাব ফেলতে পারে।
ব্যারিস্টার আব্দুর রাজ্জাক দৈনিক নয়া দিগন্তে ১৫ মার্চ প্রকাশিত “কাদের মোল্লা আল বদর নেতা মর্মে প্রমান হাজিরে ব্যর্থ প্রসিকিউশন” শীর্ষক খবর এবং দৈনিক প্রথম আলো পত্রিকায় ১৬ মার্চ প্রকাশিত
‘তদন্ত নিয়ে ট্রাইব্যুনাল আবারো অসন্তুষ্ট” শীর্ষক খবর থেকে বিচারপতিদের ১৪ মার্চের কয়েকটি প্রশ্ন এবং মন্তব্য পড়ে শোনান।
ব্যারিস্টার আব্দুর রাজ্জাক সাংবাদিকদের বলেন, আমরা শঙ্কিত ছিলাম এবং শঙ্কিত আছি। সাক্ষী আছে, সাক্ষী আনেন, অমুক তারিখের পেপারে আছে, এসব মন্তব্যের মাধ্যমে প্রসিকিউশনকে সাহায্য করা হচ্ছে। তারা লাভবান হচ্ছেন। তিনি বলেন, এটা আদালতের কাজ নয়। তাদের সামনে যা আছে তা নিয়ে তাদের কাজ করতে হবে।
আজ সকালে আদালতের কার্যক্রম শুরু হলে ব্যারিস্টার আব্দুর রাজ্জাক দৈনিক নয়া দিগন্ত থেকে ১৪ তারিখের কয়েকটি প্রশ্ন পড়ে শোনান। এর মধ্যে রয়েছে “শাহরিয়ার কবির বই লেখার জন্য যাদের কাছে গেছেন এবং তাদের কাছে যারা কথা বলেছেন তথ্য দিয়েছেন তারা কোথায়? তারা শাহরিয়ার কবিরকে বলতে পারলে আপনাদের বলবেনা কেন? শাহরিয়ার কবির যাদের কাছে গিয়েছিলেন তদন্ত কর্মকর্তা কি তাদের কাছে গিয়েছিলেন? মিরপুর ১ নম্বর থেকে টেনে একটা লোককে ১২ নম্বর পর্যন্ত নিয়ে গেল সে বিষয়ে একজন কোন সাক্ষী নেই? ২০০৭ সালের ভোরের কাগজ পেলেন আর কিছূ পেলেননা? ১৯৭২ সালের কোন পেপার খুঁজেছেন?
এরপর প্রথম আলোর উদ্ধৃতি দিয়ে ব্যারিস্টার আব্দুর রাজ্জাক বলেন, মিরপুরে পল্লব হত্যা বিষয়ে ট্রাইব্যুনাল মন্তব্য করেছেন, সাক্ষী তো অবশ্যই আছে। আপনারা আনতে পারেননি।
কাদের মোল্লা ছাত্রসংঘের যেহেতু সভাপতি ছিলেন কাজেই তার প্রভাব ছিল। সেটা প্রমান করেন। আল বদর প্রমানে যাবার দরকার কি? ছাত্রসংঘের ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় সভাপতি ছিলেন এটাই তো যথেষ্ঠ।
ব্যারিস্টার আব্দুর রাজ্জাক এসব কথপোকথন তুলে ধরে বলেন, এসব মন্তব্য প্রসিকিউশনের দুর্বলতা কাটিয়ে ওঠার পক্ষে সহায়ক।
এ অভিযোগের জবাবে ট্রাইব্যুনালের চেয়ারম্যান বিচারপতি নিজামুল হক বলেন, মি আব্দুর রাজ্জাক আপনার ধারণা এবং উপলব্ধি ঠিক নয়। আমরা চাইনা কোন পক্ষই প্রিজুডিস হোক। আমরা যা কিছু করছি তা সত্য বের করে আনার জন্য।
তিনি বলেন, আমরা বলেছি একটা লোককে তিন মাইল টেনে নিয়ে গেল আর তার কোন সাক্ষী কেন নেই সে প্রশ্ন আমরা করতে পারবনা? চার্জশিটে যেসব সমস্যা আছে সেসব বিষয়ে প্রশ্ন করা হয়েছে। তিনি ব্যারিস্টার আব্দুর রাজ্জাকের উদ্দেশে বলেন, আপনি কি চান আমরা চুপ করে থাকি?
ব্যারিস্টার রাজ্জাক বলেন, অবশ্যই না। প্রশ্ন আপনারা করবেন। আপনারা হয়ত ভাল উদ্দেশেই এসব প্রশ্ন করেছেন। কিন্তু আমরা এতে ক্ষতির সম্মুখীন হচ্ছি বলে মনে করছি।
আজো মাওলানা দেলাওয়ার হোসাইন সাঈদীর বিরুদ্ধে কোন নতুন সাক্ষী আনতে পারলনা রাষ্ট্রপক্ষের আইনজীবীরা। নতুন সাক্ষী আনতে না পারায় আজ তারা তদন্ত কর্মকর্তা হেলাল উদ্দিন খানকে আদালতে সাক্ষ্য দেয়ার জন্য নিয়ে আসেন। কিন্তু আদালত তার সাক্ষ্য গ্রহণ করেননি। আদালত বলেছেন, আর কোন ঘটনার সাক্ষী আনা হবে কিনা সে বিষয়ে লিখিত আকারে জানাতে হবে আদালতকে। তারপর তদন্ত কর্মকর্তার সাক্ষ্য গ্রহণ বিষয়ে জানানো হবে।
গত ৭ মার্চ আদালত রাষ্ট্রপক্ষকে সাক্ষী হাজিরের বিষয়ে শেষ চান্স দিয়ে বলেছিলেন ১৮ মার্চ সাক্ষী আনতে না পারলে তারা প্রয়োজনীয় আদেশ দেবেন। কিন্তু গতকালও তারা নতুন কোন সাক্ষী হাজির করতে পারলনা। মাওলানা সাঈদীর বিরুদ্ধে বারবার সাক্ষী হাজিরে ব্যর্থতার প্রেক্ষিতে গত ৭ মার্চ ট্রাইব্যুনাল ঐ আদেশ দিয়েছিলেন।
দীর্ঘ ১৫ দিন বিরতির পরও সেদিন তারা সাক্ষী আনতে ব্যর্থ হয়। সাক্ষী আনতে না পারায় ৭ মার্চ
ট্রাইব্যুনাল রাষ্ট্রপক্ষের আইনজীবীদের বলেন “আর কোন সাক্ষী আনতে না পারলে কোজ করার চেষ্টা করেন। ”
দুপুরের বিররিত পর ট্রাইব্যুনালের কার্যক্রম শুরু হলে মাওলানা সাঈদীর বিরুদ্ধে সাক্ষী বিষয়ে জানতে চান ট্রাইব্যুনাল। রাষ্ট্রপক্ষের আইনজীবী সৈয়দ হায়দার আলী বলেন, তদন্ত কর্মকর্তা হেলাল উদ্দিন খান সাক্ষ্য দেবেন। তখন ট্রাইব্যুনালের বিচারপতি এটিএম ফজলে কবির বলেন, তিনি ছাড়া আর কোন সাক্ষী নেই? সৈয়দ হায়দার আলী তখন বলেন, তদন্ত কর্মকর্তাকে দিয়ে আজ সাক্ষ্য দেয়াতে চাই। বর্তমানে তিনি ছাড়া আর কোন সাক্ষী নেই। তদন্ত কর্মকর্তার সাক্ষ্য নেয়া হলে আর কোন সাক্ষী আনা হবে কি-না পরে জানানো হবে। তদন্ত কর্মকর্তার সাক্ষ্যের পরও অন্য সাক্ষীরা যাতে সাক্ষ্য দিতে পারেন সে পথ খোলা রখার আবেদন করেন তিনি।
তখন ট্রাইব্যুনালের চেয়ারম্যান বিচারপতি নিজামুল হক বলেন, তদন্ত কর্মকর্তার পরে তো আর কোন সাক্ষী আমরা নেবনা।
বিচারপতি এটিএম ফজলে কবির বলেন, জব্দ তালিকার সাক্ষী আনা যেতে পারে কিন্তু ঘটনার সাক্ষী আনা যাবেনা।
মাওলানা সাঈদীর আইনজীবী মিজানুল ইসলাম বলেন, তদন্ত কর্মকর্তা সাক্ষ্য দেয়ার পর আর কোন ঘটনার সাক্ষীর সাক্ষ্য দেয়ার সুযোগ নেই। প্রথমে ওনাদের বলতে হবে তারা ঘটনার সাক্ষী হাজির পর্ব কোজ করবেন কি-না। তা না হলে তদন্ত কর্মকর্তার পরে নতুন সাক্ষী আনার ক্ষেত্রে আমাদের আপত্তি আছে। তিনি বলেন, তারা ৬৮ জন ঘটনার সাক্ষীর তালিকা আমাদের দিয়েছেন। সেখান থেকে মাত্র ১৮ জন সাক্ষী এ পর্যন্ত আদালতে হাজির করেছেন। ভবিষ্যতে নতুন সাক্ষী পাওয়া গেলে আবার তারা কোন ঘটনার সাক্ষী আনা হবে কি-না তা জানাতে হবে আগে। তদন্ত কর্মকর্তার সাক্ষ্য গ্রহণ হয়ে যাবার পরে নতুন করে ঘটনার সাক্ষী আনার কোন যৌক্তিক কারণ নেই। মিজানুল ইসলাম বলেন, গত
শনিবার হায়দার আলী সাহেব আমাকে বলেছিলেন, পরবর্তী সাক্ষী হিসেবে তদন্ত কর্মকর্তার বিষয়ে যেন আমরা প্রস্তুতি নিয়ে রাখি। সে হিসেবে ধরে নিয়েছিলাম তিনিই হবেন সর্বশেষ সাক্ষী।
সৈয়দ হায়দার আলী তখন বলেন, তদন্ত কর্মকর্তাকে দিয়ে কোজ করতে হবে এ নিয়ম আর এখন নেই। অনেক মামলায় সাক্ষ্য গ্রহণ শুরু হয় তদন্ত কর্মকর্তার সাক্ষ্য গ্রহনের মাধ্যমে। তিনি এরশাদের একটি মামলর উদাহরন দেন। মিজানুল ইসলাম বলেন, এরশাদের মামলার উদাহরন সঠিক নয়।
এ পর্যায়ে ট্রাইব্যুনালের চেয়ারম্যান বিচারপতি নিজামুল হক বলেন, , তদন্ত কর্মকতার পরে নতুন করে ঘটনার সাক্ষী সাক্ষ্য দিতে পারে কি-না তা আমরা বিবেচনা করে দেখব। তবে আসামী পক্ষের আইনজীবী মিজান সাহেবের সাথে আমি একমত যে, তদন্ত কর্মকর্তার সাক্ষ্য গ্রহণ শেষ হলেও তাকে আবারো সাক্ষ্য দিতে আনার প্রয়োজন হতে পারে ঘটনার সাক্ষী আবার আনা হলে।
সৈয়দ হায়দার আলী বলেন, এই মুহুর্তে আমরা তদন্ত কর্মকর্তকে দিয়ে সাক্ষ্য দেয়াতে চাই। সাক্ষী আনা শেষ হবার আগে আমি নিজেই দরখাস্ত দিয়ে জানাব ট্রাইব্যুনালকে।
বিচারপতি এটিএম ফজলে কবির বলেন, আসামী পক্ষ জানিয়েছেন তদন্ত কর্মকর্তাকে এখন সাক্ষী হিসেবে আনা হলে তাদের প্রস্তুতির দরকার আছে।
বিচারপতি নিজামুল হক রাষ্ট্রপক্ষের আইনজীবীদের বলেন, তদন্ত কর্মকর্তাকে সাক্ষ্য দিতে আনার আগে আপনাদের দরখাস্ত দিতে হবে অন্য সাক্ষীদের বিষয়ে জানিয়ে। তদন্ত কর্মকর্তার পরে আর কোন সাক্ষী আনবেন কি-না, আনলে কতজন আনবেন, কাদের আনবেন এসব বিষয় জানাতে হবে। তারপর আমরা আদেশ দেব। তিনি বলেন অন্য সাক্ষীদের বিষয়ে আগামী ২০ তারিখ দরখাস্ত দিয়ে জানাতে হবে।
মাওলানা সাঈদীর আইনজীবী মিজানুল ইসলাম বলেন, ৭ মার্চ সাক্ষী আনতে না পারা বিষয়ে তারা ট্রাইব্যুনালে বলেছিলেন, আজ একটি অপ্রিয় সত্য কথা বলতে হবে। তখন ট্রাইব্যুনালও বলেছিলেন, আমাদেরও তাহলে অপ্রিয় কথা বলতে হবে। সেদিন ট্রাইব্যুনাল ১৮ মার্চ সাক্ষী হাজিরের জন্য সময় বেঁধে দিয়েছিলেন লাস্ট চান্স হিসেবে। সেজন্য তারা আজ (রোববার) তদন্ত কর্মকর্তাকে নিয়ে এসেছেন।
মাওলানা সাঈদীর বিরদ্ধ মোট ১৩৮ জন সাক্ষীর তালিকা জমা দিয়েছেন রাষ্ট্রপক্ষ। এর মধ্যে ২৭ জন সাক্ষ্য দিয়েছেন। ২৭ জনের মধ্যে ১৮ জন হল ঘটনার সাক্ষী। বাকিরা জব্দ তালিকার।
নিরপেক্ষ বিচার নিয়ে শঙ্কা ব্যারিস্টার আব্দুর রাজ্জাকের:
এদিকে নিরপেক্ষ বিচার নিয়ে শঙ্কা প্রকাশ করেছেন আসামী পক্ষের প্রধান আইনজীবী ব্যারিস্টার আব্দুর রাজ্জাক। গত ১৪ মার্চ আব্দুল কাদের মোল্লার চার্জশিট বিষয়ে ট্রাইব্যুনাল প্রসিকিউশনকে যেসব প্রশ্ন করেন তার প্রতি দৃষ্টি আকর্ষণ করেন ব্যারিস্টার আব্দুর রাজ্জাক। তিনি অভিযোগ করে বলেন, প্রসিকিউশনের যেসব দুর্বলতা রয়েছে এসব প্রশ্ন তাদের সে দুর্বলতা কাটিয়ে ওঠার পক্ষে সহায়ক। এর মাধ্যমে তারা লাভবান হচ্ছেন এবং আসামী পক্ষ ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছে। আসামী পক্ষের প্রিজুডিস (অবিচার) হবার সম্ভাবনা রয়েছে। তিনি বলেন, ট্রাইব্যুনালের এসব মন্তব্য নিরপেক্ষ বিচারের ওপর প্রভাব ফেলতে পারে।
ব্যারিস্টার আব্দুর রাজ্জাক দৈনিক নয়া দিগন্তে ১৫ মার্চ প্রকাশিত “কাদের মোল্লা আল বদর নেতা মর্মে প্রমান হাজিরে ব্যর্থ প্রসিকিউশন” শীর্ষক খবর এবং দৈনিক প্রথম আলো পত্রিকায় ১৬ মার্চ প্রকাশিত
‘তদন্ত নিয়ে ট্রাইব্যুনাল আবারো অসন্তুষ্ট” শীর্ষক খবর থেকে বিচারপতিদের ১৪ মার্চের কয়েকটি প্রশ্ন এবং মন্তব্য পড়ে শোনান।
ব্যারিস্টার আব্দুর রাজ্জাক সাংবাদিকদের বলেন, আমরা শঙ্কিত ছিলাম এবং শঙ্কিত আছি। সাক্ষী আছে, সাক্ষী আনেন, অমুক তারিখের পেপারে আছে, এসব মন্তব্যের মাধ্যমে প্রসিকিউশনকে সাহায্য করা হচ্ছে। তারা লাভবান হচ্ছেন। তিনি বলেন, এটা আদালতের কাজ নয়। তাদের সামনে যা আছে তা নিয়ে তাদের কাজ করতে হবে।
আজ সকালে আদালতের কার্যক্রম শুরু হলে ব্যারিস্টার আব্দুর রাজ্জাক দৈনিক নয়া দিগন্ত থেকে ১৪ তারিখের কয়েকটি প্রশ্ন পড়ে শোনান। এর মধ্যে রয়েছে “শাহরিয়ার কবির বই লেখার জন্য যাদের কাছে গেছেন এবং তাদের কাছে যারা কথা বলেছেন তথ্য দিয়েছেন তারা কোথায়? তারা শাহরিয়ার কবিরকে বলতে পারলে আপনাদের বলবেনা কেন? শাহরিয়ার কবির যাদের কাছে গিয়েছিলেন তদন্ত কর্মকর্তা কি তাদের কাছে গিয়েছিলেন? মিরপুর ১ নম্বর থেকে টেনে একটা লোককে ১২ নম্বর পর্যন্ত নিয়ে গেল সে বিষয়ে একজন কোন সাক্ষী নেই? ২০০৭ সালের ভোরের কাগজ পেলেন আর কিছূ পেলেননা? ১৯৭২ সালের কোন পেপার খুঁজেছেন?
এরপর প্রথম আলোর উদ্ধৃতি দিয়ে ব্যারিস্টার আব্দুর রাজ্জাক বলেন, মিরপুরে পল্লব হত্যা বিষয়ে ট্রাইব্যুনাল মন্তব্য করেছেন, সাক্ষী তো অবশ্যই আছে। আপনারা আনতে পারেননি।
কাদের মোল্লা ছাত্রসংঘের যেহেতু সভাপতি ছিলেন কাজেই তার প্রভাব ছিল। সেটা প্রমান করেন। আল বদর প্রমানে যাবার দরকার কি? ছাত্রসংঘের ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় সভাপতি ছিলেন এটাই তো যথেষ্ঠ।
ব্যারিস্টার আব্দুর রাজ্জাক এসব কথপোকথন তুলে ধরে বলেন, এসব মন্তব্য প্রসিকিউশনের দুর্বলতা কাটিয়ে ওঠার পক্ষে সহায়ক।
এ অভিযোগের জবাবে ট্রাইব্যুনালের চেয়ারম্যান বিচারপতি নিজামুল হক বলেন, মি আব্দুর রাজ্জাক আপনার ধারণা এবং উপলব্ধি ঠিক নয়। আমরা চাইনা কোন পক্ষই প্রিজুডিস হোক। আমরা যা কিছু করছি তা সত্য বের করে আনার জন্য।
তিনি বলেন, আমরা বলেছি একটা লোককে তিন মাইল টেনে নিয়ে গেল আর তার কোন সাক্ষী কেন নেই সে প্রশ্ন আমরা করতে পারবনা? চার্জশিটে যেসব সমস্যা আছে সেসব বিষয়ে প্রশ্ন করা হয়েছে। তিনি ব্যারিস্টার আব্দুর রাজ্জাকের উদ্দেশে বলেন, আপনি কি চান আমরা চুপ করে থাকি?
ব্যারিস্টার রাজ্জাক বলেন, অবশ্যই না। প্রশ্ন আপনারা করবেন। আপনারা হয়ত ভাল উদ্দেশেই এসব প্রশ্ন করেছেন। কিন্তু আমরা এতে ক্ষতির সম্মুখীন হচ্ছি বলে মনে করছি।
কোন মন্তব্য নেই:
একটি মন্তব্য পোস্ট করুন