মেহেদী হাসান, ১৯.৭.২০১২ বৃহষ্পতিবার
মাওলানা দেলাওয়ার হোসাইন সাঈদীর বিরুদ্ধে তদন্ত কর্মকর্তা হেলাল উদ্দিন জবানবন্দী প্রদানের সময় বলেছেন পিরোজপুরে কয়েকশ মহিলাকে ধর্ষন করা হয়। কিন্তু তাদের একজনকেও তিনি মাওলানা সাঈদীর বিরুদ্ধে সাক্ষী করেননি এবং জিজ্ঞাসবাদও করেননি বলে আজ জেরায় স্বীকার করেছেন।
কয়েকশ মহিলার মধ্যে ২০ জনের নাম বলতে বলায় তদন্ত কর্মকর্তা সাতজনের নাম বলেন। তাদের মধ্যে একজনের বিরুদ্ধে আবার ধর্ষনের অভিযোগ নেই।
জেরা : (সংক্ষিপ্ত )
প্রশ্ন : আপনি আপনার জবানবন্দীতে পিরোজপুরে কয়েকশত মহিলাকে ধর্ষনের অভিযোগ করেছেন। তাদের একজনকেও আপনি জিজ্ঞাসাবাদ করেননি এবং তাদের কাউকে সাক্ষীও করেননি ?
উত্তর : না। কারণ পাওয়া যায়নি তাদের।
প্রশ্ন: কয়েকশত মহিলার মধ্যে ২০ জনের নাম বলেন যাদেরকে খুঁজে পাননি?
উত্তর : মহায়মায়া, অন্নরানী, কমলা রানী, ভানু সাহা, ছবি রানী, শেফালী ঘরামি, ভাগীরথী। এদের বাদে আর কারো নাম আমার নোটে নেই।
প্রশ্ন : কোন মুসলিম নারী ধর্ষনের অভিযোগ পাননি?
উত্তর : আমার নোটে নেই।
প্রশ্ন : এই সাতজন মহিলা ছাড়া অন্য কোন নারী ধর্ষনের খবর পেয়েছিলেন কি-না।
উত্তর : পেয়েছি।
প্রশ্ন : সাঈদী সাহেবের বিরুদ্ধে ধর্ষনের কোন অভিযোগ নেই। ধর্ষনের শীকার যেসব মহিলার নাম আপনি বলেছেন তাদেরকে কোর্টে হাজির করা সম্ভব হবেনা জেনে আপনি তাদের নাম বলেছেন (ধর্ষনের শীকার ঐ মহিলাদের প্রায় সবাই স্বাধীনতার পর ভারতে চলে গেছে) ।
উত্তর : সত্য নয়।
প্রশ্ন : অধ্যাপক গোলাম আযম, একেএম ইউসুফ বা খানা বাহাদুর সৈয়দ মো: আফজাল শান্তি কমিটি গঠনের নির্দেশনা দিয়ে সাঈদী সাহেবকে চিঠি দিয়েছেলেন এমন কোন ডকুমেন্ট আপনি জব্দ করেছেন?
উত্তর : কোন নির্দেশনা জব্দ করিনি । তবে পিরোজপুর শান্তি কমিটির চেয়ার্যাম ছিলেন খান বাহাদুর সৈয়দ মো: আফজাল । তার কাছে সমস্ত নির্দেশনা যেত। তার মৃত্যুা হওয়ায় আমি কোন নির্দেশনা জব্দ করতে পারিনি।
প্রশ্ন : পিরোজপুর মহকুমার শান্তি কমিটির সেক্রেটারি কে ছিলেন?
উত্তর : আমার নোটে নেই।
প্রশ্ন : পিরোজপুর থানা সভাপতি সেক্রেটারি কারা ছিলেন?
উত্তর : আমার নোটে নেই।
প্রশ্ন :পিরোজপুর মহকুমা শান্তি কমিটি কয় সদস্য বিশিষ্ট সে তথ্যও আপনার নোটে নেই?
উত্তর : নাই।
প্রশ্ন : একই কথা পিরোজপুর থানা, শহর শান্তি কমিটির বেলায়ও প্রযোজ্য?
উত্তর : হ্যা।
প্রশ্ন : খান বাহাদুর সৈয়দ মো: আফজালকে স্বাধীনতার পর গ্রেফতার করা হয়।
উত্তর : আমার নোটে নেই।
প্রশ্ন : তিনি কোন সালে মারা যান জানা আছে?
উত্তর : আমার নোটে নেই।
প্রশ্ন : আপনি কি কাগজপত্র জব্দ করার জন্য তার বাড়ি গিয়েছিলেন?
উত্তর : না।
প্রশ্ন হুলারহাট গিয়েছিলেন?
উত্তর : হ্যা।
প্রশ্ন : পাকিস্তান আর্মি আগমনের বিষয়ে হুলারহাটের কোন প্রত্যক্ষদর্শী পেয়েছিলেন?
উত্তর : প্রত্যক্ষদর্শীর কোন নাম আমার নোটে নেই।
প্রশ্ন : হুলারহাটের কাউকে জিজ্ঞাসাবাদ করেছিলেন?
উত্তর : না।
এ পর্যায়ে ট্রাইব্যুনাল চেয়ারম্যান বিচারপতি নিজামুল হক হুলারহাট বিষয়ে এসব প্রশ্নের সাথে অপরাধের অভিযোগের সম্পর্ক কি জানতে চাইলে মিজানুল ইসলাম বলেন, পারেরহাটের একজন তেল নুন লবন বিক্রেতা হুলারহাটে গিয়ে পাকিস্তান আর্মিকে স্বাগত জানিয়েছেন বলা হয়েছে। আর এ বিষয়ে আমি প্রশ্ন করবনা?
এরপর এ বিষয়ে আরো কিছু প্রশ্ন করা হয়।
প্রশ্ন : গণেশ চন্দ্র সাহা ভাগীরথী হত্যার প্রত্যক্ষদর্শী নন।
উত্তর : জি।
প্রশ্ন : ভাগীরথীকে এক স্থান থেকে আরেক স্থানে টেনে নিয়ে যাবার দূরত্ব কত?
উত্তর : তদন্তে পেয়েছি তাকে পুরো শহরে টেনে হিচড়ে ঘুরিয়ে ভাগীরথী চত্তরে হত্যা করা হয়।
প্রশ্ন : গনেশের বয়স ১৯৭১ সালে কত ছিল?
উত্তর : ৫ বছর।
প্রশ্ন: ওনার জবানবন্দী রেকর্ড করেছেন?
উত্তর : হ্যা।
প্রশ্ন : ভাগীরথীর সন্তান আছে এ তথ্য প্রথম কে কবে দিল?
উত্তর : স্থানীয়ভাবে তদন্তে পেয়েছি। ৫/৪/২০১১ তারিখ।
প্রশ্ন : ঐ তারিখ কোথায় ছিলেন?
উত্তর : পিরোজপুর সার্কিট হাউজে।
প্রশ্ন : ঐ তারিখ গনেশের সাথে দেখা হয়?
উত্তর : না । পরের দিন।
প্রশ্ন : তাকে সার্কিট হাউজে ডেকে পাঠান না আপনি তার বাড়িতে গিয়েছিলেন?
উত্তর : তাকে ডেকে পাঠানো হয়।
প্রশ্ন : তার কাকা জীবিত আছে কি-না সে তথ্য পেয়েছিলেন?
উত্তর : আমার নোটে নেই।
প্রশ্ন : গনেশের বয়স ১৯৭১ সালে ৫ বছর ছিল এরকম কোন তথ্য সে দেয়নি। সে বলেছিল তার বয়স ১৯৭১ সালে ছিল ৩/৪ বছর। তার জবানবন্দী যা প্রদর্শনী ২৬৮ হিসেবে প্রদর্শন করা হয়েছে তাতে একথা লেখা আছে।
উত্তর : তিনি বলেছেন ১৯৭১ সালে তার বয়স ৩/৪ বছর ছিল। বর্তমানে তার বয়স অনুমান ৪৫ বছর একথাও বলেছেন।
প্রশ্ন : যে মুক্তিযোদ্ধাদের ভাগীরথী পাকিস্তানী আর্মিদের বিষয়ে খবর দিয়েছিল এবং ৫০ জনের মত পাকিস্তানী আর্মি হত্যা করে সেই মুক্তিযোদ্ধাদের কাউকে আপনি জিজ্ঞাসাবাদ করেননি।
উত্তর : রেকর্ডে নেই। তবে কাউকে সাক্ষী করিনি।
প্রশ্ন : গনেশ তার জবানবন্দীতে বলছে যে, তার মা ভাগীরথীকে মটর সাইকেলে বেধে টেনে হিচড়ে নিয়ে গিয়েছিল।
উত্তর : হ্যা।
প্রশ্ন ভাগীরথীকে বলেশ্বর নদীর ঘাটে গুলি করে হত্যা করা হয় একথাও গনেশের জবানবন্দীতে উল্লেখ আছে।
উত্তর : হ্যা।
জেরায় প্রশ্ন নিয় ট্রাইব্যুনাল বিচারপতিদের মধ্যে মতপার্থক্য:
আজ তদন্ত কর্মকর্তাকে জেরার এক পর্যায়ে ট্রাইব্যুনালের তিনজন বিচারপতির মধ্যে বেশ মতপার্থক্য সৃষ্টি হয়। একটি ইস্যুতে বিচারপতি একেএম জহির আহমেদের সাথে ট্রাইব্যুনাল চেয়ারম্যান বিচারপতি নিজামুল এবং সদস্য বিচারপতি আনোয়ারুল হক ভিন্ন মত পোষন করায় এ মতপার্থক্য দেখা দেয়। শেষে বিচারপতি নিজামুল হক এবং আনোয়ারুল হক দুজন একদিকে থাকায় এবং তারা সংখ্যাগরিষ্ঠ হওয়ায় একটি প্রশ্ন জেরা থেকে বাদ দেয়া হয়।
মাওলানা সাঈদীর আইনজীবী মিজানুল ইসলাম তদন্ত কর্মকর্তা হেলাল উদ্দিনকে প্রশ্ন করেন “আপনি নিজে গনেশকে হাজিরের জন্য প্রসিকিউশন বরাবর কোন প্রসেস ইস্যুর আবেদন করেছিলেন কি-না।”
তদন্ত কর্মকর্তা জবাব দেন “আমার নোটে নেই” বলে।
তখন বিচারপতি একেএম জহির আহমেদ বলেন, অন্যসব প্রশ্নের মত এটাতেও নোটে নেই বললেতো হবেনা। আপনাকে বলতে হবে আপনি কোন আবেদন করেছিলেন কি-না। ইয়েস অর নো। এটা তো নোটে থাকা না থাকার বিষয় নয়।
এখান থেকে মতপাথ্যর্ক্যরে সূত্রপাত।
মাওলানা সাঈদীর বিরুদ্ধে যে ১৫ জন সাক্ষীর জবানবন্দী তাদের অনুপস্থিতিতে সাক্ষ্য হিসেবে গ্রহণ করা হয়েছে তার মধ্যে গণেশ চন্দ্র সাহা রয়েছে।
বিচারপতি নিজামুল হক বলেন, সাক্ষী পাওয়া যাচ্ছেনা বিষয়ে আপনি (তদন্ত কর্মকর্তা) রিপোর্ট দিলেন । তার ওপর ভিত্তি করে প্রসিকিউশন থেকে আবেদন দেয়া হল এবং আমরা একটি অর্ডার দিলাম।
এরপর সাক্ষীকে সমন ইস্যু, সাক্ষী হাজিরের নিয়ম নিয়ে তিনজন বিচারপতির মধ্যে কথপোকথন চলে।
বিচারপতি আনোয়ারুল হকও এ সংক্রান্ত বিষয়ে বিচারপতি একেএম জহির আহমেদের সাথে ভিন্ন মত পোষনের কথা প্রকাশ করেন এবং বিচারপতি নিজামুল হককে সমর্থন করেন।
কথপোকথন শেষে বিচারপতি একেএম জহির আহমেদ তদন্ত কর্মকর্তাকে বলেন আপনি আমার প্রশ্নের জবাব দেন। আমাকে আপনি কিয়ার করেন।
এরপর তিনি পরপর তিনটি প্রশ্ন করেন।
প্রথম প্রশ্ন : গণেশকে সাক্ষ্য দেয়ার জন্য উপস্থিক করতে ট্রাইব্যুনালের কোন প্রসেস পেয়েছিলেন কি-না।
উত্তর : হ্যা।
দ্বিতীয় প্রশ্ন : গনেশের বাড়ি গিয়েছিলেন কি-না প্রসেস বাস্তবায়নের জন্য?
উত্তর : হ্যা।
তৃতীয় প্রশ্ন : গনেশকে পাননি সে মর্মে প্রসেস রিপোর্ট লিখিতভাবে ফেরত পাঠিয়েছিলেন কি-না?
উত্তর : ২টি রিপোর্ট দিয়েছিলাম।
প্রশ্ন তিনটি করার পর বিচারপতি একেএম জহির আহমেদ বলেন এগুলো আমার প্রশ্ন হিসেবে যাক। বিচারপতি নিজামুল হক বলেন, আপনার প্রশ্ন হিসেবে কেন যাবে । গেলে ট্রাইব্যুনালের প্রশ্ন হিসেবে যাবে।
এ পর্যায়ে বিচারপতি নিজামুল হক বেশ ক্ষোভের সাথে বিচারপতি একেএম জহির আহমেদকে বলেন, আপনি দয়া করে অর্ডারটা পড়েনা। আপনি উত্তেজিত হয়ে এমনসব প্রশ্ন করছেন যাতে মনে হয় এ বিষয়ে কোন অর্ডার নেই। তৃতীয় প্রশ্নটি অর্ডার অনুযায়ী হয়নি।
বিচারপতি একেএম জহির আহমেদ বলেন ঠিক আছে তৃতীয় প্রশ্ন বাদ দেয়া হোক।
তখন মাওলানা সাঈদীর আইনজীবী মিজানুল ইসলাম বলেন, যেহেতু প্রশ্ন রেকর্ড হয়ে গেছে তাই এখন বাদ দিতে হলে আদেশ পাশ করতে হবে। তখন বিচারপতি আনোয়ারুল হক বলেন আমরা বলছি বাদ যাবে। আদেশ লাগবে কেন। বিচারপতি নিজামুল হক তখন বলেন, সংখ্যাগরিষ্ঠ মত গ্রহণ করা হবে। আমরা বলছি বাদ যাবে। তখন প্রশ্নটি বাদ দেয়া হয়।
মাওলানা দেলাওয়ার হোসাইন সাঈদীর বিরুদ্ধে তদন্ত কর্মকর্তা হেলাল উদ্দিন জবানবন্দী প্রদানের সময় বলেছেন পিরোজপুরে কয়েকশ মহিলাকে ধর্ষন করা হয়। কিন্তু তাদের একজনকেও তিনি মাওলানা সাঈদীর বিরুদ্ধে সাক্ষী করেননি এবং জিজ্ঞাসবাদও করেননি বলে আজ জেরায় স্বীকার করেছেন।
কয়েকশ মহিলার মধ্যে ২০ জনের নাম বলতে বলায় তদন্ত কর্মকর্তা সাতজনের নাম বলেন। তাদের মধ্যে একজনের বিরুদ্ধে আবার ধর্ষনের অভিযোগ নেই।
জেরা : (সংক্ষিপ্ত )
প্রশ্ন : আপনি আপনার জবানবন্দীতে পিরোজপুরে কয়েকশত মহিলাকে ধর্ষনের অভিযোগ করেছেন। তাদের একজনকেও আপনি জিজ্ঞাসাবাদ করেননি এবং তাদের কাউকে সাক্ষীও করেননি ?
উত্তর : না। কারণ পাওয়া যায়নি তাদের।
প্রশ্ন: কয়েকশত মহিলার মধ্যে ২০ জনের নাম বলেন যাদেরকে খুঁজে পাননি?
উত্তর : মহায়মায়া, অন্নরানী, কমলা রানী, ভানু সাহা, ছবি রানী, শেফালী ঘরামি, ভাগীরথী। এদের বাদে আর কারো নাম আমার নোটে নেই।
প্রশ্ন : কোন মুসলিম নারী ধর্ষনের অভিযোগ পাননি?
উত্তর : আমার নোটে নেই।
প্রশ্ন : এই সাতজন মহিলা ছাড়া অন্য কোন নারী ধর্ষনের খবর পেয়েছিলেন কি-না।
উত্তর : পেয়েছি।
প্রশ্ন : সাঈদী সাহেবের বিরুদ্ধে ধর্ষনের কোন অভিযোগ নেই। ধর্ষনের শীকার যেসব মহিলার নাম আপনি বলেছেন তাদেরকে কোর্টে হাজির করা সম্ভব হবেনা জেনে আপনি তাদের নাম বলেছেন (ধর্ষনের শীকার ঐ মহিলাদের প্রায় সবাই স্বাধীনতার পর ভারতে চলে গেছে) ।
উত্তর : সত্য নয়।
প্রশ্ন : অধ্যাপক গোলাম আযম, একেএম ইউসুফ বা খানা বাহাদুর সৈয়দ মো: আফজাল শান্তি কমিটি গঠনের নির্দেশনা দিয়ে সাঈদী সাহেবকে চিঠি দিয়েছেলেন এমন কোন ডকুমেন্ট আপনি জব্দ করেছেন?
উত্তর : কোন নির্দেশনা জব্দ করিনি । তবে পিরোজপুর শান্তি কমিটির চেয়ার্যাম ছিলেন খান বাহাদুর সৈয়দ মো: আফজাল । তার কাছে সমস্ত নির্দেশনা যেত। তার মৃত্যুা হওয়ায় আমি কোন নির্দেশনা জব্দ করতে পারিনি।
প্রশ্ন : পিরোজপুর মহকুমার শান্তি কমিটির সেক্রেটারি কে ছিলেন?
উত্তর : আমার নোটে নেই।
প্রশ্ন : পিরোজপুর থানা সভাপতি সেক্রেটারি কারা ছিলেন?
উত্তর : আমার নোটে নেই।
প্রশ্ন :পিরোজপুর মহকুমা শান্তি কমিটি কয় সদস্য বিশিষ্ট সে তথ্যও আপনার নোটে নেই?
উত্তর : নাই।
প্রশ্ন : একই কথা পিরোজপুর থানা, শহর শান্তি কমিটির বেলায়ও প্রযোজ্য?
উত্তর : হ্যা।
প্রশ্ন : খান বাহাদুর সৈয়দ মো: আফজালকে স্বাধীনতার পর গ্রেফতার করা হয়।
উত্তর : আমার নোটে নেই।
প্রশ্ন : তিনি কোন সালে মারা যান জানা আছে?
উত্তর : আমার নোটে নেই।
প্রশ্ন : আপনি কি কাগজপত্র জব্দ করার জন্য তার বাড়ি গিয়েছিলেন?
উত্তর : না।
প্রশ্ন হুলারহাট গিয়েছিলেন?
উত্তর : হ্যা।
প্রশ্ন : পাকিস্তান আর্মি আগমনের বিষয়ে হুলারহাটের কোন প্রত্যক্ষদর্শী পেয়েছিলেন?
উত্তর : প্রত্যক্ষদর্শীর কোন নাম আমার নোটে নেই।
প্রশ্ন : হুলারহাটের কাউকে জিজ্ঞাসাবাদ করেছিলেন?
উত্তর : না।
এ পর্যায়ে ট্রাইব্যুনাল চেয়ারম্যান বিচারপতি নিজামুল হক হুলারহাট বিষয়ে এসব প্রশ্নের সাথে অপরাধের অভিযোগের সম্পর্ক কি জানতে চাইলে মিজানুল ইসলাম বলেন, পারেরহাটের একজন তেল নুন লবন বিক্রেতা হুলারহাটে গিয়ে পাকিস্তান আর্মিকে স্বাগত জানিয়েছেন বলা হয়েছে। আর এ বিষয়ে আমি প্রশ্ন করবনা?
এরপর এ বিষয়ে আরো কিছু প্রশ্ন করা হয়।
প্রশ্ন : গণেশ চন্দ্র সাহা ভাগীরথী হত্যার প্রত্যক্ষদর্শী নন।
উত্তর : জি।
প্রশ্ন : ভাগীরথীকে এক স্থান থেকে আরেক স্থানে টেনে নিয়ে যাবার দূরত্ব কত?
উত্তর : তদন্তে পেয়েছি তাকে পুরো শহরে টেনে হিচড়ে ঘুরিয়ে ভাগীরথী চত্তরে হত্যা করা হয়।
প্রশ্ন : গনেশের বয়স ১৯৭১ সালে কত ছিল?
উত্তর : ৫ বছর।
প্রশ্ন: ওনার জবানবন্দী রেকর্ড করেছেন?
উত্তর : হ্যা।
প্রশ্ন : ভাগীরথীর সন্তান আছে এ তথ্য প্রথম কে কবে দিল?
উত্তর : স্থানীয়ভাবে তদন্তে পেয়েছি। ৫/৪/২০১১ তারিখ।
প্রশ্ন : ঐ তারিখ কোথায় ছিলেন?
উত্তর : পিরোজপুর সার্কিট হাউজে।
প্রশ্ন : ঐ তারিখ গনেশের সাথে দেখা হয়?
উত্তর : না । পরের দিন।
প্রশ্ন : তাকে সার্কিট হাউজে ডেকে পাঠান না আপনি তার বাড়িতে গিয়েছিলেন?
উত্তর : তাকে ডেকে পাঠানো হয়।
প্রশ্ন : তার কাকা জীবিত আছে কি-না সে তথ্য পেয়েছিলেন?
উত্তর : আমার নোটে নেই।
প্রশ্ন : গনেশের বয়স ১৯৭১ সালে ৫ বছর ছিল এরকম কোন তথ্য সে দেয়নি। সে বলেছিল তার বয়স ১৯৭১ সালে ছিল ৩/৪ বছর। তার জবানবন্দী যা প্রদর্শনী ২৬৮ হিসেবে প্রদর্শন করা হয়েছে তাতে একথা লেখা আছে।
উত্তর : তিনি বলেছেন ১৯৭১ সালে তার বয়স ৩/৪ বছর ছিল। বর্তমানে তার বয়স অনুমান ৪৫ বছর একথাও বলেছেন।
প্রশ্ন : যে মুক্তিযোদ্ধাদের ভাগীরথী পাকিস্তানী আর্মিদের বিষয়ে খবর দিয়েছিল এবং ৫০ জনের মত পাকিস্তানী আর্মি হত্যা করে সেই মুক্তিযোদ্ধাদের কাউকে আপনি জিজ্ঞাসাবাদ করেননি।
উত্তর : রেকর্ডে নেই। তবে কাউকে সাক্ষী করিনি।
প্রশ্ন : গনেশ তার জবানবন্দীতে বলছে যে, তার মা ভাগীরথীকে মটর সাইকেলে বেধে টেনে হিচড়ে নিয়ে গিয়েছিল।
উত্তর : হ্যা।
প্রশ্ন ভাগীরথীকে বলেশ্বর নদীর ঘাটে গুলি করে হত্যা করা হয় একথাও গনেশের জবানবন্দীতে উল্লেখ আছে।
উত্তর : হ্যা।
জেরায় প্রশ্ন নিয় ট্রাইব্যুনাল বিচারপতিদের মধ্যে মতপার্থক্য:
আজ তদন্ত কর্মকর্তাকে জেরার এক পর্যায়ে ট্রাইব্যুনালের তিনজন বিচারপতির মধ্যে বেশ মতপার্থক্য সৃষ্টি হয়। একটি ইস্যুতে বিচারপতি একেএম জহির আহমেদের সাথে ট্রাইব্যুনাল চেয়ারম্যান বিচারপতি নিজামুল এবং সদস্য বিচারপতি আনোয়ারুল হক ভিন্ন মত পোষন করায় এ মতপার্থক্য দেখা দেয়। শেষে বিচারপতি নিজামুল হক এবং আনোয়ারুল হক দুজন একদিকে থাকায় এবং তারা সংখ্যাগরিষ্ঠ হওয়ায় একটি প্রশ্ন জেরা থেকে বাদ দেয়া হয়।
মাওলানা সাঈদীর আইনজীবী মিজানুল ইসলাম তদন্ত কর্মকর্তা হেলাল উদ্দিনকে প্রশ্ন করেন “আপনি নিজে গনেশকে হাজিরের জন্য প্রসিকিউশন বরাবর কোন প্রসেস ইস্যুর আবেদন করেছিলেন কি-না।”
তদন্ত কর্মকর্তা জবাব দেন “আমার নোটে নেই” বলে।
তখন বিচারপতি একেএম জহির আহমেদ বলেন, অন্যসব প্রশ্নের মত এটাতেও নোটে নেই বললেতো হবেনা। আপনাকে বলতে হবে আপনি কোন আবেদন করেছিলেন কি-না। ইয়েস অর নো। এটা তো নোটে থাকা না থাকার বিষয় নয়।
এখান থেকে মতপাথ্যর্ক্যরে সূত্রপাত।
মাওলানা সাঈদীর বিরুদ্ধে যে ১৫ জন সাক্ষীর জবানবন্দী তাদের অনুপস্থিতিতে সাক্ষ্য হিসেবে গ্রহণ করা হয়েছে তার মধ্যে গণেশ চন্দ্র সাহা রয়েছে।
বিচারপতি নিজামুল হক বলেন, সাক্ষী পাওয়া যাচ্ছেনা বিষয়ে আপনি (তদন্ত কর্মকর্তা) রিপোর্ট দিলেন । তার ওপর ভিত্তি করে প্রসিকিউশন থেকে আবেদন দেয়া হল এবং আমরা একটি অর্ডার দিলাম।
এরপর সাক্ষীকে সমন ইস্যু, সাক্ষী হাজিরের নিয়ম নিয়ে তিনজন বিচারপতির মধ্যে কথপোকথন চলে।
বিচারপতি আনোয়ারুল হকও এ সংক্রান্ত বিষয়ে বিচারপতি একেএম জহির আহমেদের সাথে ভিন্ন মত পোষনের কথা প্রকাশ করেন এবং বিচারপতি নিজামুল হককে সমর্থন করেন।
কথপোকথন শেষে বিচারপতি একেএম জহির আহমেদ তদন্ত কর্মকর্তাকে বলেন আপনি আমার প্রশ্নের জবাব দেন। আমাকে আপনি কিয়ার করেন।
এরপর তিনি পরপর তিনটি প্রশ্ন করেন।
প্রথম প্রশ্ন : গণেশকে সাক্ষ্য দেয়ার জন্য উপস্থিক করতে ট্রাইব্যুনালের কোন প্রসেস পেয়েছিলেন কি-না।
উত্তর : হ্যা।
দ্বিতীয় প্রশ্ন : গনেশের বাড়ি গিয়েছিলেন কি-না প্রসেস বাস্তবায়নের জন্য?
উত্তর : হ্যা।
তৃতীয় প্রশ্ন : গনেশকে পাননি সে মর্মে প্রসেস রিপোর্ট লিখিতভাবে ফেরত পাঠিয়েছিলেন কি-না?
উত্তর : ২টি রিপোর্ট দিয়েছিলাম।
প্রশ্ন তিনটি করার পর বিচারপতি একেএম জহির আহমেদ বলেন এগুলো আমার প্রশ্ন হিসেবে যাক। বিচারপতি নিজামুল হক বলেন, আপনার প্রশ্ন হিসেবে কেন যাবে । গেলে ট্রাইব্যুনালের প্রশ্ন হিসেবে যাবে।
এ পর্যায়ে বিচারপতি নিজামুল হক বেশ ক্ষোভের সাথে বিচারপতি একেএম জহির আহমেদকে বলেন, আপনি দয়া করে অর্ডারটা পড়েনা। আপনি উত্তেজিত হয়ে এমনসব প্রশ্ন করছেন যাতে মনে হয় এ বিষয়ে কোন অর্ডার নেই। তৃতীয় প্রশ্নটি অর্ডার অনুযায়ী হয়নি।
বিচারপতি একেএম জহির আহমেদ বলেন ঠিক আছে তৃতীয় প্রশ্ন বাদ দেয়া হোক।
তখন মাওলানা সাঈদীর আইনজীবী মিজানুল ইসলাম বলেন, যেহেতু প্রশ্ন রেকর্ড হয়ে গেছে তাই এখন বাদ দিতে হলে আদেশ পাশ করতে হবে। তখন বিচারপতি আনোয়ারুল হক বলেন আমরা বলছি বাদ যাবে। আদেশ লাগবে কেন। বিচারপতি নিজামুল হক তখন বলেন, সংখ্যাগরিষ্ঠ মত গ্রহণ করা হবে। আমরা বলছি বাদ যাবে। তখন প্রশ্নটি বাদ দেয়া হয়।
কোন মন্তব্য নেই:
একটি মন্তব্য পোস্ট করুন