মেহেদী হাসান, ৮/৪/২০১২, রোববার
আসামিপক্ষ আইনজীবীর সাথে বিতর্কের একপর্যায়ে ট্রাইব্যুনালের চেয়ারম্যান বিচারপতি নিজামুল হক ক্ষোভের সাথে বললেন, ‘জাস্টিস (ন্যায়বিচার) করব না আমরা।’
আজ দেলাওয়ার হোসাইন সাঈদীর বিরুদ্ধে তদন্ত কর্মকর্তা হেলাল উদ্দিন খানের সাক্ষ্য গ্রহণ শুরু হয়েছে।
তদন্ত কর্মকর্তা হেলাল উদ্দিন খান সাক্ষ্য দেয়ার সময় তার সামনে রাখা মোটা ভলিউম থেকে কিছু বিষয়ে রেফারেন্স দিচ্ছিলেন। তদন্ত কর্মকর্তা যে ভলিউম থেকে পৃষ্ঠা নম্বর উল্লেখ করে রেফারেন্স দিচ্ছিলেন সেই একই ভলিউমের কপি ট্রাইব্যুনালের তিনজন বিচারপতি এবং আসামিপক্ষের আইনজীবীদের সামনেও ছিল। কিন্তু তদন্ত কর্মকর্তা তার সামনে খোলা ভলিউম থেকে যে পৃষ্ঠা নম্বর উল্লেখ করেন তার সাথে অমিল দেখা দেয় ট্রাইব্যুনালের বিচারপতিদের সামনে রাখা ভলিউমের।
এ সময় আসামিপক্ষের আইনজীবীরাও জানান তাদেরকে যে ভলিউম দেয়া হয়েছে তার সাথেও পৃষ্ঠা নম্বরের মিল নেই। এ নিয়ে আসামিপক্ষ ও রাষ্ট্রপক্ষের আইনজীবীদের মধ্যে বিতর্ক শুরু হয়।
পৃষ্ঠা নম্বরের গরমিল নিয়ে ট্রাইব্যুনাল বারবার তদন্ত কর্মকর্তার কাছে প্রশ্ন করেন। রাষ্ট্রপক্ষের অন্যান্য আইনজীবীও চেষ্টা করেন গরমিল নিয়ে সমস্যা দূর করতে। এ নিয়ে বেশ সময় কেটে যায়।
একপর্যায়ে পৃষ্ঠা নম্বর মিলিয়ে ট্রাইব্যুনাল চেয়ারম্যান বিচারপতি নিজামুল হক দুই পক্ষের আইনজীবীদের বলেন, আমরা যেভাবে মিলিয়েছি এটার সাথে মিল রেখে আপনারাও মিলিয়ে নেন পৃষ্ঠা নম্বর। আমাদের এটা হবে মূল কপি। এর সাথে মিল রেখে আপনারাও মিলিয়ে নিন। তখন মাওলানা সাঈদীর আইনজীবী মিজানুল ইসলাম বলেন, পৃষ্ঠা নম্বর মিলিয়ে নেয়া কোনো কঠিন কাজ হবে না। কিন্তু কিছু আইনি সমস্যা আছে। আপনাদের কাছে যে কপিটা থাকবে আইন অনুযায়ী সে কপিটাই আমাদের কাছেও থাকার কথা। কিন্তু এখানে তো তা হচ্ছে না। ভিন্ন ভিন্ন কপি আপনাদের এবং আমাদের কাছে। মাওলানা সাঈদীর অপর আইনজীবী তাজুল ইসলাম বলেন, আপনাদের কপির সাথে আমাদের কপির পৃষ্ঠা নম্বর মেলালে আরগুমেন্ট পেশের সময় আমাদের সমস্যা হবে। কারণ আমরা যে রেফারেন্স উল্লেখ করব তার সাথে মিল পড়বে না তখন।
বিচারপতি নিজামুল ইসলাম আবারো অনুরোধ করেন, তাদের কপি অনুযায়ী সবার পৃষ্ঠা নম্বর মিলিয়ে নেয়ার জন্য। চিফ প্রসিকিউটর গোলাম আরিফ টিপু এ সময় পাশ থেকে তাজুল ইসলামের প্রতি একটু উষ্মা প্রকাশ করে বলেন, আপনারা আপনাদেরটা মিলিয়ে নিন। তাজুল ইসলাম চিফ প্রসিকিউটরের এ আচরণে আপত্তি জানিয়ে বলেন, আমি কি আপনার চাকরি করি। আপনাদের ভুল আমরা মিলিয়ে নেবো কেন। আপনারা মিলিয়ে দিন।
তখন বিচারপতি নিজামুল হক তাজুল ইসলামকে উদ্দেশ করে বলেন, মিস্টার তাজুল ইসলাম, আপনি অনেক দিন হাইকোর্টে প্র্যাকটিস করছেন। আপনি নতুন কোনো আইনজীবী নন। প্লিজ রেস্ট্রেন ইউরসেলফ। আমি এল্ডারলি ব্রাদার হিসেবে বলছি রেস্ট্রেন ইউরসেলফ। এ সময় তিনি মাওলানা সাঈদীর অপর আইনজীবী মিজানুল ইসলামকে ইঙ্গিত করে বলেন, তিনিও তো আদালতে আরগুমেন্ট করেন। আর আপনিও আরগুমেন্ট করেন। তিনি তো বলেছেন, পৃষ্ঠা নম্বর মিলিয়ে নেয়া তেমন কঠিন কাজ হবে না। আমিও সেটা বলছি।
আজ সকালে রিভিউ আবেদন দাখিল করে তদন্ত কর্মকর্তার সাক্ষ্য গ্রহণ মুলতবির আবেদন জানালে ট্রাইব্যুনাল চেয়ারম্যান বলেন, দরখাস্ত রাখেন। তদন্ত কর্মকর্তার সাক্ষ্য শুরু হয়ে যাবে আজ।
তখন তাজুল ইসলাম বলেন, তাহলে তো রিভিউ পিটিশনের কোনো মানে হয় না। কারণ যে ১৫ জন সাক্ষীর জবানবন্দী তাদের অনুপস্থিতিতে গ্রহণ করা হয়েছে সে রিভিউ আবেদনে আদেশটি পরিবতির্ত হতে পারে। আমরা যদি প্রমাণ করতে পারি প্রসিকিউশন কী ধরনের মিথ্যাচার করেছে সাক্ষীদের ব্যাপারে ট্রাইব্যুনালের কাছে তাহলে রিভিউ আদেশ পরিবর্তন হবে বলে আমরা আশা করি। আমাদের কাছে সে ধরনের প্রমাণ আছে। আমরা দেখাতে পারব যে, ওই সাক্ষীদের হাজির করা সম্ভব। কাজেই রিভিউ আবেদন শেষ না হলে এবং ওই ১৫ সাক্ষীর বিষয়ে চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত না হওয়া পর্যন্ত তদন্ত কর্মকর্তার সাক্ষ্যগ্রহণ ঠিক হবে না।
তখন বিচারপতি নিজামুল হক কিছুটা ক্ষোভের সাথে তাজুল ইসলামকে লক্ষ্য করে বলেন, ওই আদেশ যেদিন দেয়া হয়েছিল সেদিন আপনি ছিলেন না এবং আদেশে কী আমরা বলেছি তাও মনে হয় আপনি পড়েননি।
তাজুল ইসলাম বলেন, আমরা অর্ডার কপি পাইনি। নিজামুল হক বলেন, একটু আগে তো বললেন আপনি সব জানেন। তাজুল ইসলাম বলেন, এর মানে হলো আমি ফ্যাক্টস জানি।
সৈয়দ হায়দার আলী তখন বলেন, ১৫ সাক্ষীর বিষয়ে বলা হয়েছিল আদালত তাদের জবানবন্দী রিসিভ করেছেন, নট টেকেন। (আদেশে আরো বলা হয়েছিল যে ১৫ জন সাক্ষীর জবানবন্দী সাক্ষ্য হিসেবে গ্রহণ করা হলো তা জেরা ছাড়া গ্রহণ করা হয়েছে সেটি ট্রাইব্যুনাল বিবেচনায় রাখবে এবং জেরা ছাড়া এ জবানবন্দী কতটুকু মূল্য বহন করে তাও বিবেচনায় রাখা হবে।)
এরপর বিচারপতি নিজামুল হক বলেন, আপনারা মুলতবি আবেদন বিষয়ে আরগুমেন্ট পেশ করেন।
তখন মিজানুল ইসলাম বলেন, ১৫ সাক্ষীর বিষয়ে যে আদেশ দেয়া হয়েছে সে বিষয়ে আদেশ বাতিল হলে এ মামলার চরিত্র বদলে যাবে। ওই আদেশ বাতিল হলে তদন্ত কর্মকর্তার জেরা এক রকম হবে আর বহাল থাকলে জেরা আরেক রকম হবে। আমাদের কাছে যে তথ্য প্রমাণ আছে তাতে আমাদের আশা, আদেশটি পরিবর্তন হতে পারে।
তখন বিচারপতি এ কে এম জহির আহমেদ বলেন, ওই ১৫ জন সাক্ষীকে আনতে পারবে না বলেই তো রাষ্ট্রপক্ষ থেকে ওই দরখাস্ত দেয়া হয়েছিল। কাজেই তাদের তো আর হাজির করার কোনো সম্ভাবনা নেই।
কাজেই ওই ১৫ জন বাদ দিয়ে বাকি সাক্ষীদের ব্যাপারে তদন্ত কর্মকর্তাকে জেরা করলেই তো হয়।
সৈয়দ হায়দার আলী তখন বলেন, যদি রিভিউ আবেদন গ্রহণও করা হয় তাহলে কী হবে। ওই ১৫ জন সাক্ষী বাদ হয়ে যাবে। তাতে তদন্ত কর্মকর্তার সাক্ষ্য শুরু করতে সমস্যা কোথায়? বিচারপতি নিজামুল হকও এ যুক্তিতে সায় দেন।
উভয়পক্ষের যুক্তি উপস্থাপন শেষ হলে মুলতবি আবেদনটি তিনি বাতিল করে দেন। আদেশে তিনি বলেন, আমরা আগেও বারবার বলেছি রিভিউ আবেদনের শুনানির সময় বিচারের স্বাভাবিক কাজ বন্ধ হবে না।
আজ তদন্ত কর্মকর্তা হেলাল উদ্দিন সাক্ষ্য প্রদানের সময় মাওলানা সাঈদীর বিরুদ্ধে বেশ কিছু নতুন ডকুমেন্ট প্রদর্শন করতে চান। কিন্তু মাওলানা সাঈদীর আইনজীবীদের পক্ষ থেকে এ বিষয়ে তীব্র আপত্তি জানিয়ে বলা হয় আমাদের যে কপি আগে দেয়া হয়নি তা কোন আইনের বলে এখন আসামির বিরুদ্ধে প্রদর্শন করা হবে?
একটি ভলিউমের ১ থেকে ১৫ নম্বর পৃষ্ঠা পর্যন্ত কিছু ডকুমেন্টের কথা উল্লেখ করলে মিজানুল ইসলাম বলেন, এগুলোও আমাদের আগে দেয়া হয়নি। তখন বিচারপতি নিজামুল হক প্রসিকিউশনের কাছে এ বিষয়ে প্রশ্ন করে জানতে চান আগে তাদের এসব কপি দেয়া হয়েছিল কি না। কিন্তু এর সদুত্তর না আসায় তিনি এসব ডকুমেন্ট বাতিল করে দেন। এমনিভাবে মাওলানা সাঈদীর বিরুদ্ধে আরো কিছু নতুন ডকুমেন্ট গ্রহণ না করা বিষয়ে আদেশ দেন তিনি।
পিরোজপুরের বেশ কিছু গণকবর, মুক্তিযুদ্ধে ক্ষতিগ্রস্তদের ঘরবাড়ির ছবি প্রদর্শনের চেষ্টা করলে মিজানুল ইসলাম বলেন, এসব তাদের আগে দেয়া হয়নি। এ নিয়ে বিতর্কের একপর্যায়ে রাষ্ট্রপক্ষের আইনজীবী জেয়াদ আল মালুম আসামি পক্ষের আইনজীবীদের বেঞ্চের সামনে এসে মনজুর আহমদ আনছারীর হাত থেকে একটি ডকুমেন্ট কপি টেনে নিয়ে উঁচু করে ট্রাইব্যুনালের সামনে তুলে ধরে বলেন, এই দেখেন তাদের কপি দেয়া হয়েছে। তখন মিজানুল ইসলাম বলেন, এটিতো একটু আগে আমাদের সামনে দিলেন আপনারা। তখন জেয়াদ আল মালুম বলেন, ও সেটি বলেন। মাওলানা সাঈদীর আইনজীবী ব্যারিস্টার তানভির আল আমিন দাঁড়িয়ে বলেন, আমার কাছ থেকে কপি কেড়ে নেয়া হয়েছে। তখন জেয়াদ আল মালুম বলেন, থামেন থামেন, ভালোই ট্রেনিং পেয়েছেন।
এভাবে বিভিন্ন বিষয় নিয়ে গতকাল সারা দিন বিতর্ক চলে। তদন্ত কর্মকর্তা ২০০১ সালের ৫ মার্চ দৈনিক জনকণ্ঠে প্রকাশিত ‘৭১ এর রাজাকার দেইল্লা এখন মাওলানা সাঈদী’ শীর্ষক প্রতিবেদনটি ১৩ দফায় ভাগ করে উপস্থাপন করেন। ওই রিপোর্টে বর্ণিত মাওলানা সাঈদীর বিরুদ্ধে হত্যা, লুটপাট, অগ্নিসংযোগ, জ্বালাও-পোড়াওয়ের বিষয়ে বর্ণনা করা হয়। এ ছাড়া অন্য কোনো বিষয়ে তার সাক্ষ্য গতকাল খুব একটা অগ্রসর হয়নি।
আজ মাওলানা সাঈদীর পক্ষে মনজুর আহমেদ আনছারি, ব্যারিস্টার তানভীর আল আমীন, শিশির মনির, শাহজাহান কবির প্রমুখ উপস্থিত ছিলেন কোর্টে।
আসামিপক্ষ আইনজীবীর সাথে বিতর্কের একপর্যায়ে ট্রাইব্যুনালের চেয়ারম্যান বিচারপতি নিজামুল হক ক্ষোভের সাথে বললেন, ‘জাস্টিস (ন্যায়বিচার) করব না আমরা।’
আজ দেলাওয়ার হোসাইন সাঈদীর বিরুদ্ধে তদন্ত কর্মকর্তা হেলাল উদ্দিন খানের সাক্ষ্য গ্রহণ শুরু হয়েছে।
তদন্ত কর্মকর্তা হেলাল উদ্দিন খান সাক্ষ্য দেয়ার সময় তার সামনে রাখা মোটা ভলিউম থেকে কিছু বিষয়ে রেফারেন্স দিচ্ছিলেন। তদন্ত কর্মকর্তা যে ভলিউম থেকে পৃষ্ঠা নম্বর উল্লেখ করে রেফারেন্স দিচ্ছিলেন সেই একই ভলিউমের কপি ট্রাইব্যুনালের তিনজন বিচারপতি এবং আসামিপক্ষের আইনজীবীদের সামনেও ছিল। কিন্তু তদন্ত কর্মকর্তা তার সামনে খোলা ভলিউম থেকে যে পৃষ্ঠা নম্বর উল্লেখ করেন তার সাথে অমিল দেখা দেয় ট্রাইব্যুনালের বিচারপতিদের সামনে রাখা ভলিউমের।
এ সময় আসামিপক্ষের আইনজীবীরাও জানান তাদেরকে যে ভলিউম দেয়া হয়েছে তার সাথেও পৃষ্ঠা নম্বরের মিল নেই। এ নিয়ে আসামিপক্ষ ও রাষ্ট্রপক্ষের আইনজীবীদের মধ্যে বিতর্ক শুরু হয়।
পৃষ্ঠা নম্বরের গরমিল নিয়ে ট্রাইব্যুনাল বারবার তদন্ত কর্মকর্তার কাছে প্রশ্ন করেন। রাষ্ট্রপক্ষের অন্যান্য আইনজীবীও চেষ্টা করেন গরমিল নিয়ে সমস্যা দূর করতে। এ নিয়ে বেশ সময় কেটে যায়।
একপর্যায়ে পৃষ্ঠা নম্বর মিলিয়ে ট্রাইব্যুনাল চেয়ারম্যান বিচারপতি নিজামুল হক দুই পক্ষের আইনজীবীদের বলেন, আমরা যেভাবে মিলিয়েছি এটার সাথে মিল রেখে আপনারাও মিলিয়ে নেন পৃষ্ঠা নম্বর। আমাদের এটা হবে মূল কপি। এর সাথে মিল রেখে আপনারাও মিলিয়ে নিন। তখন মাওলানা সাঈদীর আইনজীবী মিজানুল ইসলাম বলেন, পৃষ্ঠা নম্বর মিলিয়ে নেয়া কোনো কঠিন কাজ হবে না। কিন্তু কিছু আইনি সমস্যা আছে। আপনাদের কাছে যে কপিটা থাকবে আইন অনুযায়ী সে কপিটাই আমাদের কাছেও থাকার কথা। কিন্তু এখানে তো তা হচ্ছে না। ভিন্ন ভিন্ন কপি আপনাদের এবং আমাদের কাছে। মাওলানা সাঈদীর অপর আইনজীবী তাজুল ইসলাম বলেন, আপনাদের কপির সাথে আমাদের কপির পৃষ্ঠা নম্বর মেলালে আরগুমেন্ট পেশের সময় আমাদের সমস্যা হবে। কারণ আমরা যে রেফারেন্স উল্লেখ করব তার সাথে মিল পড়বে না তখন।
বিচারপতি নিজামুল ইসলাম আবারো অনুরোধ করেন, তাদের কপি অনুযায়ী সবার পৃষ্ঠা নম্বর মিলিয়ে নেয়ার জন্য। চিফ প্রসিকিউটর গোলাম আরিফ টিপু এ সময় পাশ থেকে তাজুল ইসলামের প্রতি একটু উষ্মা প্রকাশ করে বলেন, আপনারা আপনাদেরটা মিলিয়ে নিন। তাজুল ইসলাম চিফ প্রসিকিউটরের এ আচরণে আপত্তি জানিয়ে বলেন, আমি কি আপনার চাকরি করি। আপনাদের ভুল আমরা মিলিয়ে নেবো কেন। আপনারা মিলিয়ে দিন।
তখন বিচারপতি নিজামুল হক তাজুল ইসলামকে উদ্দেশ করে বলেন, মিস্টার তাজুল ইসলাম, আপনি অনেক দিন হাইকোর্টে প্র্যাকটিস করছেন। আপনি নতুন কোনো আইনজীবী নন। প্লিজ রেস্ট্রেন ইউরসেলফ। আমি এল্ডারলি ব্রাদার হিসেবে বলছি রেস্ট্রেন ইউরসেলফ। এ সময় তিনি মাওলানা সাঈদীর অপর আইনজীবী মিজানুল ইসলামকে ইঙ্গিত করে বলেন, তিনিও তো আদালতে আরগুমেন্ট করেন। আর আপনিও আরগুমেন্ট করেন। তিনি তো বলেছেন, পৃষ্ঠা নম্বর মিলিয়ে নেয়া তেমন কঠিন কাজ হবে না। আমিও সেটা বলছি।
আজ সকালে রিভিউ আবেদন দাখিল করে তদন্ত কর্মকর্তার সাক্ষ্য গ্রহণ মুলতবির আবেদন জানালে ট্রাইব্যুনাল চেয়ারম্যান বলেন, দরখাস্ত রাখেন। তদন্ত কর্মকর্তার সাক্ষ্য শুরু হয়ে যাবে আজ।
তখন তাজুল ইসলাম বলেন, তাহলে তো রিভিউ পিটিশনের কোনো মানে হয় না। কারণ যে ১৫ জন সাক্ষীর জবানবন্দী তাদের অনুপস্থিতিতে গ্রহণ করা হয়েছে সে রিভিউ আবেদনে আদেশটি পরিবতির্ত হতে পারে। আমরা যদি প্রমাণ করতে পারি প্রসিকিউশন কী ধরনের মিথ্যাচার করেছে সাক্ষীদের ব্যাপারে ট্রাইব্যুনালের কাছে তাহলে রিভিউ আদেশ পরিবর্তন হবে বলে আমরা আশা করি। আমাদের কাছে সে ধরনের প্রমাণ আছে। আমরা দেখাতে পারব যে, ওই সাক্ষীদের হাজির করা সম্ভব। কাজেই রিভিউ আবেদন শেষ না হলে এবং ওই ১৫ সাক্ষীর বিষয়ে চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত না হওয়া পর্যন্ত তদন্ত কর্মকর্তার সাক্ষ্যগ্রহণ ঠিক হবে না।
তখন বিচারপতি নিজামুল হক কিছুটা ক্ষোভের সাথে তাজুল ইসলামকে লক্ষ্য করে বলেন, ওই আদেশ যেদিন দেয়া হয়েছিল সেদিন আপনি ছিলেন না এবং আদেশে কী আমরা বলেছি তাও মনে হয় আপনি পড়েননি।
তাজুল ইসলাম বলেন, আমরা অর্ডার কপি পাইনি। নিজামুল হক বলেন, একটু আগে তো বললেন আপনি সব জানেন। তাজুল ইসলাম বলেন, এর মানে হলো আমি ফ্যাক্টস জানি।
সৈয়দ হায়দার আলী তখন বলেন, ১৫ সাক্ষীর বিষয়ে বলা হয়েছিল আদালত তাদের জবানবন্দী রিসিভ করেছেন, নট টেকেন। (আদেশে আরো বলা হয়েছিল যে ১৫ জন সাক্ষীর জবানবন্দী সাক্ষ্য হিসেবে গ্রহণ করা হলো তা জেরা ছাড়া গ্রহণ করা হয়েছে সেটি ট্রাইব্যুনাল বিবেচনায় রাখবে এবং জেরা ছাড়া এ জবানবন্দী কতটুকু মূল্য বহন করে তাও বিবেচনায় রাখা হবে।)
এরপর বিচারপতি নিজামুল হক বলেন, আপনারা মুলতবি আবেদন বিষয়ে আরগুমেন্ট পেশ করেন।
তখন মিজানুল ইসলাম বলেন, ১৫ সাক্ষীর বিষয়ে যে আদেশ দেয়া হয়েছে সে বিষয়ে আদেশ বাতিল হলে এ মামলার চরিত্র বদলে যাবে। ওই আদেশ বাতিল হলে তদন্ত কর্মকর্তার জেরা এক রকম হবে আর বহাল থাকলে জেরা আরেক রকম হবে। আমাদের কাছে যে তথ্য প্রমাণ আছে তাতে আমাদের আশা, আদেশটি পরিবর্তন হতে পারে।
তখন বিচারপতি এ কে এম জহির আহমেদ বলেন, ওই ১৫ জন সাক্ষীকে আনতে পারবে না বলেই তো রাষ্ট্রপক্ষ থেকে ওই দরখাস্ত দেয়া হয়েছিল। কাজেই তাদের তো আর হাজির করার কোনো সম্ভাবনা নেই।
কাজেই ওই ১৫ জন বাদ দিয়ে বাকি সাক্ষীদের ব্যাপারে তদন্ত কর্মকর্তাকে জেরা করলেই তো হয়।
সৈয়দ হায়দার আলী তখন বলেন, যদি রিভিউ আবেদন গ্রহণও করা হয় তাহলে কী হবে। ওই ১৫ জন সাক্ষী বাদ হয়ে যাবে। তাতে তদন্ত কর্মকর্তার সাক্ষ্য শুরু করতে সমস্যা কোথায়? বিচারপতি নিজামুল হকও এ যুক্তিতে সায় দেন।
উভয়পক্ষের যুক্তি উপস্থাপন শেষ হলে মুলতবি আবেদনটি তিনি বাতিল করে দেন। আদেশে তিনি বলেন, আমরা আগেও বারবার বলেছি রিভিউ আবেদনের শুনানির সময় বিচারের স্বাভাবিক কাজ বন্ধ হবে না।
আজ তদন্ত কর্মকর্তা হেলাল উদ্দিন সাক্ষ্য প্রদানের সময় মাওলানা সাঈদীর বিরুদ্ধে বেশ কিছু নতুন ডকুমেন্ট প্রদর্শন করতে চান। কিন্তু মাওলানা সাঈদীর আইনজীবীদের পক্ষ থেকে এ বিষয়ে তীব্র আপত্তি জানিয়ে বলা হয় আমাদের যে কপি আগে দেয়া হয়নি তা কোন আইনের বলে এখন আসামির বিরুদ্ধে প্রদর্শন করা হবে?
একটি ভলিউমের ১ থেকে ১৫ নম্বর পৃষ্ঠা পর্যন্ত কিছু ডকুমেন্টের কথা উল্লেখ করলে মিজানুল ইসলাম বলেন, এগুলোও আমাদের আগে দেয়া হয়নি। তখন বিচারপতি নিজামুল হক প্রসিকিউশনের কাছে এ বিষয়ে প্রশ্ন করে জানতে চান আগে তাদের এসব কপি দেয়া হয়েছিল কি না। কিন্তু এর সদুত্তর না আসায় তিনি এসব ডকুমেন্ট বাতিল করে দেন। এমনিভাবে মাওলানা সাঈদীর বিরুদ্ধে আরো কিছু নতুন ডকুমেন্ট গ্রহণ না করা বিষয়ে আদেশ দেন তিনি।
পিরোজপুরের বেশ কিছু গণকবর, মুক্তিযুদ্ধে ক্ষতিগ্রস্তদের ঘরবাড়ির ছবি প্রদর্শনের চেষ্টা করলে মিজানুল ইসলাম বলেন, এসব তাদের আগে দেয়া হয়নি। এ নিয়ে বিতর্কের একপর্যায়ে রাষ্ট্রপক্ষের আইনজীবী জেয়াদ আল মালুম আসামি পক্ষের আইনজীবীদের বেঞ্চের সামনে এসে মনজুর আহমদ আনছারীর হাত থেকে একটি ডকুমেন্ট কপি টেনে নিয়ে উঁচু করে ট্রাইব্যুনালের সামনে তুলে ধরে বলেন, এই দেখেন তাদের কপি দেয়া হয়েছে। তখন মিজানুল ইসলাম বলেন, এটিতো একটু আগে আমাদের সামনে দিলেন আপনারা। তখন জেয়াদ আল মালুম বলেন, ও সেটি বলেন। মাওলানা সাঈদীর আইনজীবী ব্যারিস্টার তানভির আল আমিন দাঁড়িয়ে বলেন, আমার কাছ থেকে কপি কেড়ে নেয়া হয়েছে। তখন জেয়াদ আল মালুম বলেন, থামেন থামেন, ভালোই ট্রেনিং পেয়েছেন।
এভাবে বিভিন্ন বিষয় নিয়ে গতকাল সারা দিন বিতর্ক চলে। তদন্ত কর্মকর্তা ২০০১ সালের ৫ মার্চ দৈনিক জনকণ্ঠে প্রকাশিত ‘৭১ এর রাজাকার দেইল্লা এখন মাওলানা সাঈদী’ শীর্ষক প্রতিবেদনটি ১৩ দফায় ভাগ করে উপস্থাপন করেন। ওই রিপোর্টে বর্ণিত মাওলানা সাঈদীর বিরুদ্ধে হত্যা, লুটপাট, অগ্নিসংযোগ, জ্বালাও-পোড়াওয়ের বিষয়ে বর্ণনা করা হয়। এ ছাড়া অন্য কোনো বিষয়ে তার সাক্ষ্য গতকাল খুব একটা অগ্রসর হয়নি।
আজ মাওলানা সাঈদীর পক্ষে মনজুর আহমেদ আনছারি, ব্যারিস্টার তানভীর আল আমীন, শিশির মনির, শাহজাহান কবির প্রমুখ উপস্থিত ছিলেন কোর্টে।
কোন মন্তব্য নেই:
একটি মন্তব্য পোস্ট করুন