মেহেদী হাসান, ৭/৬/২০১২, বৃহষ্পতিবার,
মাওলানা দেলাওয়ার হোসাইন সাঈদীর আইনজীবীদের পক্ষ থেকে ট্রাইব্যুনালে সেফ হাউজের যে ডকুমেন্ট জমা দেয়া হয়েছে তার সত্যতা যাচাইয়ে ট্রাইব্যুনাল-১ ক্যামেরা সেসন হয়েছে। ওপেন কোর্টে এ বিষয়ে শুনানী অনুষ্ঠিত হয়নি। বিচারপতির চেম্বারে এ বিষয়ে শুনানী অনুষ্ঠিত হয়েছে। বিচারপতির চেম্বারে এ বিষয়ে কি কথাবার্তা হয়েছে তা গণমাধ্যমে প্রকাশ সম্পূর্ণরুপে নিষিদ্ধ করা হয়েছে।
আজ সকাল সোয়া ১১টার দিকে ট্রাইব্যুনাল চেয়ারম্যান বিচারপতি নিজামুল হক বলেন, আমরা ওনাদের (সেফ হাউজের দায়িত্ব পালনকারী সংশ্লিষ্ট পুলিশ কর্মকর্তা এবং অন্যান্য পুলিশ কনস্টেবল) ডেকেছি ডকুমেন্ট এর ব্যাপারে আমারা সন্তুষ্ট হবার জন্য। আমারা এখন চেম্বারে বসব। রাষ্ট্রপক্ষ থেকে চিফ প্রসিকিউটর এবং অপর আরেকজন প্রসিকিউটর চেম্বারে আসবেন। আসামী পক্ষ থেকে ব্যারিস্টার আব্দুর রাজ্জাক এবং তিনি আরেকজন আইনজীবী নিয়ে চেম্বারে আসবেন এখন। এরপর সেফ হাউজের যাদের ডাকার প্রয়োজন তাদের ডাকব।
এরপর তিনি বলেন, দিস ইজ ক্যামেরা সেসন। ওপেন কোর্টে যা বলা হবেনা তার বাইরে কোন কিছু মিডিয়ায় প্রকাশ করা যাবেনা। চেম্বারের কোন কিছু মিডিয়াল লেখা যাবেনা।
এরপর সোয়া ১১টায় চেম্বারে ক্যামেরা সেশন শুরু হয়। টানা সোয়া একটা পর্যন্ত চলে। ক্যামেরা সেসন শেষে আইনজীবীরা সাংবাদিকদের জানান চেম্বারে বসে কি কথা বর্তাা হয়েছে তা প্রকাশ করার ব্যাপারে নিষেধাজ্ঞা আছে।
রাষ্ট্রপক্ষের চিফ প্রসিকিউটর গোলাম আরিফ টিপুর সাথে প্রসিকিউটর সৈয়দ হায়দার আলী এবং আসামী পক্ষের প্রধান আইনজীবী ব্যারিস্টার আব্দুর রাজ্জাকের সাথে এ্যাডভোকেট তাজুল ইসলাম চেম্বারে ক্যামেরা সেসনে যোগ দেন।
চেম্বারে তদন্ত সংস্থার সমন্বয়ক হান্নান খান এবং সেফ হাউজের পুলিশ ইনচার্জসহ আরো দুই তিনজনকে প্রবেশ করতে দেখা গেছে।
মিথ্যার প্রলয় শুরু হয়েছে-ব্যারিস্টার রাজ্জাক
চেম্বারে ক্যামেরা সেসন এবং দুপুরের বিরতির পর সোয়া দুইটার দিকে কোর্ট বসে। এসময় ব্যারিস্টার আব্দুর রাজ্জাক কোর্টে বলেন, আমরা কোর্টে ৬০০ পৃষ্ঠার যে ডকুমেন্ট জমা দিয়েছি তার প্রত্যেকটি তথ্য, প্রত্যেকটি শব্দ সত্য। এরপর ১৫ সাক্ষী বিষয়ক রিভিউ আবেদনের শুনানী আগামী সোমবার পুনরায় নির্ধারন করা হয়।
ট্রাইব্যুনাল থেকে বের হয়ে ব্যারিস্টার আব্দুর রাজ্জাক সাংবাদিকদের বলেন, আমরা আজ ট্রাইব্যুনালে তিনটি দরখাস্ত দিয়েছে । তাতে চারটি বিষয় রয়েছে। দুটি দরখাস্ত ট্রাইব্যুনাল গ্রহণ করেছেন। একটির বিষয়ে বলেছেন এটি আমাদের হাতে রাখতে। প্রয়োজন হলে তারা নেবেন।
ব্যারিস্টার রাজ্জাক বলেন, একটি দরখাস্ত করা হয়েছে তদন্ত কর্মকর্তার বিরুদ্ধে প্রতারানার দায়ে আদালত অবমাননার অভিযোগ এনে। তদন্ত সংস্থার সব কিছু মিথ্যার ওপর দাড়িয়ে আছে। মিথ্যার প্রলয় শুরু হয়েছে এবং তা ধরা পড়েছে। তদন্ত কর্মকর্তা আদালতে মিথ্যা তথ্য দিয়ে আদালতকে প্রতারিত করেছেন এবং আদালতা অবমাননা করেছেন। তাই তার বিরুদ্ধে ট্রাইব্যুনাল আইনের ১১ (এ) ধারায় ব্যবস্থা গ্রহনের জন্য আবেদন জানানো হয়েছে।
অপর আরেকটি আবেদন বিষয়ে ব্যারিস্টার রাজ্জাক বলেন, মাওলানা সাঈদীকে মামলা থেকে অব্যাহতির আবদেন জানানো হয়েছে। তদন্ত সংস্থার তথ্য যদি আমরা মিথ্যা প্রমান করতে পারি তাহলে মাওলানা সাঈদীর বিরুদ্ধে আর এ মামলা চলতে পারেনা। এ মামলা চালাতে হলে সম্পূর্ণ নতুন ভাবে তদন্ত করতে হবে।
তবে এ আবেদনটি ট্রাইব্যুনাল গ্রহণ না করে বলেছেন আমাদের হাতে রাখতে। ট্রাইব্যুনাল বলেছেন এর প্রয়োজন নাও হতে পারে।
অপর আবেদন বিষয়ে ব্যারিস্টার রাজ্জাক বলেন, সেফ হাউজের কিছু রেকর্ড তলবের আবেদন জানানো হয়েছে। সেফ হাউজে দায়িত্বরত কয়েকজন পুলিশ বিষয়ে আমরা বলেছি তাদের বিষয়ে বিভিন্ন রেকর্ড তলবের জন্য। যেমন একজন পুলিশ বিষয়ে ডায়েরিতে উল্লেখ আছে তিনি একদিন জজকোর্টে গেছেন একটি মামলায় সাক্ষ্য দিতে। তিনি জজকোর্টে সাক্ষ্য দিতে গেছেন কিনা তার প্রমান তো জজকোর্টে রয়ে গেছে। কাজেই জজকোটের তথ্য তলব করলেই তো বের হয়ে আসবে ঘটনা। তিনি কোনদিন সাক্ষ্য দিতে গেছেন কিনা তা তো আমাদের জানার কথা নয়। ডায়েরিতে উল্লেখ আছে। আমরা তার সত্যতা যাচাইয়ের জন্য বলেছি।
ব্যারিস্টার আব্দুর রাজ্জাক বলেন, আমরা যে ডকুমেন্ট জমা দিয়েছি তার সত্যতা প্রমানের জন্য আমরা এক পায়ে দাড়িয়ে আছি। আগামী সোমবার এ বিষয়ে পুনরায় শুনানী হবে। সেদিনও আমরা প্রমান দেব।
এর আগে ট্রইব্যুনালের নির্দেশে সেফ হাউজ বা সাক্ষী হাউজে দায়িত্বরত পুলিশ কর্মকর্তা এবং অন্যান্য কনস্টেবল হাজির হন। সকাল সাড়ে দশটায় ট্রাইব্যুনালের কার্যক্রম শুরু হয়। অধ্যাপক গোলাম আযমের চার্জফ্রেম অর্ডার রিভিউ আবেদনের বিপক্ষে রাষ্ট্রপক্ষের আইনজীবী জেয়াদ আল মালুম যুক্তি উপস্থাপনের পর মাওলানা সাঈদীর মামলা শুরু হয় সকাল সোয়া ১১টা ১০ মিনিটের দিকে। এরপর সোয়া ১১টায় ট্রাইব্যুনালের বিচারপতিরা এজলাস ছেড়ে চেম্বারে যান ক্যামেরা সেসনের জন্য ডকুমেন্ট বিষয়ে সত্যতা যাচাইয়ের লক্ষ্যে।
মাওলানা সাঈদীর বিরুদ্ধে ১৫ জন সাক্ষীর জবানবন্দী তাদের অনুপস্থিতিতে সাক্ষ্য হিসেবে গ্রহনের আদেশের বিরুদ্ধে রিভিউ আবেদন করা হয়েছিল মাওলানা সাঈদীর আইনজীবীদের পক্ষ থেকে। গত ২২ মে এ বিষয়ে প্রথম শুনানী অনুষ্ঠিত হয়। গত ৩রা জুন পুনরায় শুনানীর সময় আসামী পক্ষের আইনজীবীরা সেফ হাউজের (ঢাকায় যেখানে সাক্ষী এনে রাখা হত) সমস্ত কাগজপত্র ট্রাইব্যুনালে দাখিল করে বলেন, সাক্ষী হাজির করতে না পারা বিষয়ে রাষ্ট্রপক্ষ যে কারণ দেখিয়েছে তা সম্পূর্ণ মিথ্যা। তারা কার্টে মিথ্যা তথ্য দিয়ে আদালতকে প্রতারিত করেছেন। অনেক সাক্ষী তাদের হেফাজতেই ছিল এবং সেফহাউজের এসব কাগজপত্রে তার প্রমান রয়েছে। কোন সাক্ষী কবে ঢাকায় আসে, কতদিন সেফ হাউজে ছিল, কয়বেলা খাবার খেয়েছেন, কোন কোন পুলিশ ইন্সপেক্ট, সাব-ইন্সপেক্টর এবং কনস্টেবল কোনদিন সেখানে দায়িত্ব পালন করেছেন তার সমস্ত কাগজপত্র আসামী পক্ষ থেকে ট্রাইব্যুনালে হাজির করা হয়।
রাষ্ট্রপক্ষের আইনজীবী সৈয়দ হায়দার আলী এসময় বলেন, সেফ হাউজ বলতে আমাদের কিছু নেই। তারা সেফ হাউজের নামে যে রিপোর্ট জমা দিয়েছেন এই রিপোর্ট আমাদের না। এটি তাদের প্রডাকশন। হতে পারে এটি তাদের প্রডাকশন।
সৈয়দ হায়দার আলী সেফ হাউজের কথা অস্বীকার করার আগে ঐদিন ট্রাইব্যুনাল চেয়ারম্যান বিচারপতি নিজামুল হক আসামী পক্ষের প্রধান আইনজীবী ব্যারিস্টার আব্দুর রাজ্জাকের কাছে জানতে চান সেফ হাউজটি কোথায়। তখন ব্যারিস্টার রাজ্জাক ৬৪৫, অতীশ দিপঙ্কর রোড, পুলিশ টাওয়ার বির্ল্ডি, গোলাপবাগ ঢাকা পড়ে শোনান। এরপর এ ঠিকানা নিয়ে প্রশ্ন ওঠায় বিচারপতি নিজামুল হক তদন্ত কর্মকর্তা হেলাল উদ্দিনের কাছে সেফ হাউজের ঠিকানা দাবি করেন। বিচারপতি নিজামুল হক সেফ হাউজের দায়িত্বরত প্রত্যেক ব্যক্তিবর্গ এবং নথিপত্র তলব করেন। আজ বৃহষ্পতিবার তাদের ট্রাইব্যুনালে হাজির করার জন্য তদন্ত কর্মকর্তা হেলাল উদ্দিনকে ব্যবস্থা গ্রহনের নির্দেশ দেন। নির্দেশ অনুযায়ী তদন্ত সংস্থার প্রধান সমন্বয়ক হান্নান খান, দুজন পুলিশ ইন্সপেক্টর, দুজন সাব ইন্সপেক্টর এবং পুলিশ কনস্টেবলসহ মোট ১১ জন হাজির হন । তবে তাদের ওপেন কোর্টে আনা হয়নি এবং ডকুমেন্ট বিষয়ে ওপেন কোর্টে শুনানীও হয়নি গতকাল।
এ্যাডভোকেট জসিম উদ্দিন সরকার, নজরুল ইসলাম, ব্যারিস্টার তানভির আহমেদ আল আমিন, ব্যারিস্টার মুন্সি আহসান কবির, ব্যারিস্টার এমরান সিদ্দিক, ব্যারিস্টার এহসান সিদ্দিক, শিশির মোহাম্মদ মনির, শাহজাহান কবির, আবু বকর সিদ্দিক প্রমুখ আইনজীবী গতকাল উপস্থিত ছিলেন আসামী পক্ষে।
রাষ্ট্রপক্ষে রানাদাস গুপ্ত, জেয়াদ আল মালুম, নূর জাহান বেগম মুক্তা প্রমুখ আইনজীবী উপস্থিত ছিলেন অন্যান্যের মধ্যে।
মাওলানা দেলাওয়ার হোসাইন সাঈদীর আইনজীবীদের পক্ষ থেকে ট্রাইব্যুনালে সেফ হাউজের যে ডকুমেন্ট জমা দেয়া হয়েছে তার সত্যতা যাচাইয়ে ট্রাইব্যুনাল-১ ক্যামেরা সেসন হয়েছে। ওপেন কোর্টে এ বিষয়ে শুনানী অনুষ্ঠিত হয়নি। বিচারপতির চেম্বারে এ বিষয়ে শুনানী অনুষ্ঠিত হয়েছে। বিচারপতির চেম্বারে এ বিষয়ে কি কথাবার্তা হয়েছে তা গণমাধ্যমে প্রকাশ সম্পূর্ণরুপে নিষিদ্ধ করা হয়েছে।
আজ সকাল সোয়া ১১টার দিকে ট্রাইব্যুনাল চেয়ারম্যান বিচারপতি নিজামুল হক বলেন, আমরা ওনাদের (সেফ হাউজের দায়িত্ব পালনকারী সংশ্লিষ্ট পুলিশ কর্মকর্তা এবং অন্যান্য পুলিশ কনস্টেবল) ডেকেছি ডকুমেন্ট এর ব্যাপারে আমারা সন্তুষ্ট হবার জন্য। আমারা এখন চেম্বারে বসব। রাষ্ট্রপক্ষ থেকে চিফ প্রসিকিউটর এবং অপর আরেকজন প্রসিকিউটর চেম্বারে আসবেন। আসামী পক্ষ থেকে ব্যারিস্টার আব্দুর রাজ্জাক এবং তিনি আরেকজন আইনজীবী নিয়ে চেম্বারে আসবেন এখন। এরপর সেফ হাউজের যাদের ডাকার প্রয়োজন তাদের ডাকব।
এরপর তিনি বলেন, দিস ইজ ক্যামেরা সেসন। ওপেন কোর্টে যা বলা হবেনা তার বাইরে কোন কিছু মিডিয়ায় প্রকাশ করা যাবেনা। চেম্বারের কোন কিছু মিডিয়াল লেখা যাবেনা।
এরপর সোয়া ১১টায় চেম্বারে ক্যামেরা সেশন শুরু হয়। টানা সোয়া একটা পর্যন্ত চলে। ক্যামেরা সেসন শেষে আইনজীবীরা সাংবাদিকদের জানান চেম্বারে বসে কি কথা বর্তাা হয়েছে তা প্রকাশ করার ব্যাপারে নিষেধাজ্ঞা আছে।
রাষ্ট্রপক্ষের চিফ প্রসিকিউটর গোলাম আরিফ টিপুর সাথে প্রসিকিউটর সৈয়দ হায়দার আলী এবং আসামী পক্ষের প্রধান আইনজীবী ব্যারিস্টার আব্দুর রাজ্জাকের সাথে এ্যাডভোকেট তাজুল ইসলাম চেম্বারে ক্যামেরা সেসনে যোগ দেন।
চেম্বারে তদন্ত সংস্থার সমন্বয়ক হান্নান খান এবং সেফ হাউজের পুলিশ ইনচার্জসহ আরো দুই তিনজনকে প্রবেশ করতে দেখা গেছে।
মিথ্যার প্রলয় শুরু হয়েছে-ব্যারিস্টার রাজ্জাক
চেম্বারে ক্যামেরা সেসন এবং দুপুরের বিরতির পর সোয়া দুইটার দিকে কোর্ট বসে। এসময় ব্যারিস্টার আব্দুর রাজ্জাক কোর্টে বলেন, আমরা কোর্টে ৬০০ পৃষ্ঠার যে ডকুমেন্ট জমা দিয়েছি তার প্রত্যেকটি তথ্য, প্রত্যেকটি শব্দ সত্য। এরপর ১৫ সাক্ষী বিষয়ক রিভিউ আবেদনের শুনানী আগামী সোমবার পুনরায় নির্ধারন করা হয়।
ট্রাইব্যুনাল থেকে বের হয়ে ব্যারিস্টার আব্দুর রাজ্জাক সাংবাদিকদের বলেন, আমরা আজ ট্রাইব্যুনালে তিনটি দরখাস্ত দিয়েছে । তাতে চারটি বিষয় রয়েছে। দুটি দরখাস্ত ট্রাইব্যুনাল গ্রহণ করেছেন। একটির বিষয়ে বলেছেন এটি আমাদের হাতে রাখতে। প্রয়োজন হলে তারা নেবেন।
ব্যারিস্টার রাজ্জাক বলেন, একটি দরখাস্ত করা হয়েছে তদন্ত কর্মকর্তার বিরুদ্ধে প্রতারানার দায়ে আদালত অবমাননার অভিযোগ এনে। তদন্ত সংস্থার সব কিছু মিথ্যার ওপর দাড়িয়ে আছে। মিথ্যার প্রলয় শুরু হয়েছে এবং তা ধরা পড়েছে। তদন্ত কর্মকর্তা আদালতে মিথ্যা তথ্য দিয়ে আদালতকে প্রতারিত করেছেন এবং আদালতা অবমাননা করেছেন। তাই তার বিরুদ্ধে ট্রাইব্যুনাল আইনের ১১ (এ) ধারায় ব্যবস্থা গ্রহনের জন্য আবেদন জানানো হয়েছে।
অপর আরেকটি আবেদন বিষয়ে ব্যারিস্টার রাজ্জাক বলেন, মাওলানা সাঈদীকে মামলা থেকে অব্যাহতির আবদেন জানানো হয়েছে। তদন্ত সংস্থার তথ্য যদি আমরা মিথ্যা প্রমান করতে পারি তাহলে মাওলানা সাঈদীর বিরুদ্ধে আর এ মামলা চলতে পারেনা। এ মামলা চালাতে হলে সম্পূর্ণ নতুন ভাবে তদন্ত করতে হবে।
তবে এ আবেদনটি ট্রাইব্যুনাল গ্রহণ না করে বলেছেন আমাদের হাতে রাখতে। ট্রাইব্যুনাল বলেছেন এর প্রয়োজন নাও হতে পারে।
অপর আবেদন বিষয়ে ব্যারিস্টার রাজ্জাক বলেন, সেফ হাউজের কিছু রেকর্ড তলবের আবেদন জানানো হয়েছে। সেফ হাউজে দায়িত্বরত কয়েকজন পুলিশ বিষয়ে আমরা বলেছি তাদের বিষয়ে বিভিন্ন রেকর্ড তলবের জন্য। যেমন একজন পুলিশ বিষয়ে ডায়েরিতে উল্লেখ আছে তিনি একদিন জজকোর্টে গেছেন একটি মামলায় সাক্ষ্য দিতে। তিনি জজকোর্টে সাক্ষ্য দিতে গেছেন কিনা তার প্রমান তো জজকোর্টে রয়ে গেছে। কাজেই জজকোটের তথ্য তলব করলেই তো বের হয়ে আসবে ঘটনা। তিনি কোনদিন সাক্ষ্য দিতে গেছেন কিনা তা তো আমাদের জানার কথা নয়। ডায়েরিতে উল্লেখ আছে। আমরা তার সত্যতা যাচাইয়ের জন্য বলেছি।
ব্যারিস্টার আব্দুর রাজ্জাক বলেন, আমরা যে ডকুমেন্ট জমা দিয়েছি তার সত্যতা প্রমানের জন্য আমরা এক পায়ে দাড়িয়ে আছি। আগামী সোমবার এ বিষয়ে পুনরায় শুনানী হবে। সেদিনও আমরা প্রমান দেব।
এর আগে ট্রইব্যুনালের নির্দেশে সেফ হাউজ বা সাক্ষী হাউজে দায়িত্বরত পুলিশ কর্মকর্তা এবং অন্যান্য কনস্টেবল হাজির হন। সকাল সাড়ে দশটায় ট্রাইব্যুনালের কার্যক্রম শুরু হয়। অধ্যাপক গোলাম আযমের চার্জফ্রেম অর্ডার রিভিউ আবেদনের বিপক্ষে রাষ্ট্রপক্ষের আইনজীবী জেয়াদ আল মালুম যুক্তি উপস্থাপনের পর মাওলানা সাঈদীর মামলা শুরু হয় সকাল সোয়া ১১টা ১০ মিনিটের দিকে। এরপর সোয়া ১১টায় ট্রাইব্যুনালের বিচারপতিরা এজলাস ছেড়ে চেম্বারে যান ক্যামেরা সেসনের জন্য ডকুমেন্ট বিষয়ে সত্যতা যাচাইয়ের লক্ষ্যে।
মাওলানা সাঈদীর বিরুদ্ধে ১৫ জন সাক্ষীর জবানবন্দী তাদের অনুপস্থিতিতে সাক্ষ্য হিসেবে গ্রহনের আদেশের বিরুদ্ধে রিভিউ আবেদন করা হয়েছিল মাওলানা সাঈদীর আইনজীবীদের পক্ষ থেকে। গত ২২ মে এ বিষয়ে প্রথম শুনানী অনুষ্ঠিত হয়। গত ৩রা জুন পুনরায় শুনানীর সময় আসামী পক্ষের আইনজীবীরা সেফ হাউজের (ঢাকায় যেখানে সাক্ষী এনে রাখা হত) সমস্ত কাগজপত্র ট্রাইব্যুনালে দাখিল করে বলেন, সাক্ষী হাজির করতে না পারা বিষয়ে রাষ্ট্রপক্ষ যে কারণ দেখিয়েছে তা সম্পূর্ণ মিথ্যা। তারা কার্টে মিথ্যা তথ্য দিয়ে আদালতকে প্রতারিত করেছেন। অনেক সাক্ষী তাদের হেফাজতেই ছিল এবং সেফহাউজের এসব কাগজপত্রে তার প্রমান রয়েছে। কোন সাক্ষী কবে ঢাকায় আসে, কতদিন সেফ হাউজে ছিল, কয়বেলা খাবার খেয়েছেন, কোন কোন পুলিশ ইন্সপেক্ট, সাব-ইন্সপেক্টর এবং কনস্টেবল কোনদিন সেখানে দায়িত্ব পালন করেছেন তার সমস্ত কাগজপত্র আসামী পক্ষ থেকে ট্রাইব্যুনালে হাজির করা হয়।
রাষ্ট্রপক্ষের আইনজীবী সৈয়দ হায়দার আলী এসময় বলেন, সেফ হাউজ বলতে আমাদের কিছু নেই। তারা সেফ হাউজের নামে যে রিপোর্ট জমা দিয়েছেন এই রিপোর্ট আমাদের না। এটি তাদের প্রডাকশন। হতে পারে এটি তাদের প্রডাকশন।
সৈয়দ হায়দার আলী সেফ হাউজের কথা অস্বীকার করার আগে ঐদিন ট্রাইব্যুনাল চেয়ারম্যান বিচারপতি নিজামুল হক আসামী পক্ষের প্রধান আইনজীবী ব্যারিস্টার আব্দুর রাজ্জাকের কাছে জানতে চান সেফ হাউজটি কোথায়। তখন ব্যারিস্টার রাজ্জাক ৬৪৫, অতীশ দিপঙ্কর রোড, পুলিশ টাওয়ার বির্ল্ডি, গোলাপবাগ ঢাকা পড়ে শোনান। এরপর এ ঠিকানা নিয়ে প্রশ্ন ওঠায় বিচারপতি নিজামুল হক তদন্ত কর্মকর্তা হেলাল উদ্দিনের কাছে সেফ হাউজের ঠিকানা দাবি করেন। বিচারপতি নিজামুল হক সেফ হাউজের দায়িত্বরত প্রত্যেক ব্যক্তিবর্গ এবং নথিপত্র তলব করেন। আজ বৃহষ্পতিবার তাদের ট্রাইব্যুনালে হাজির করার জন্য তদন্ত কর্মকর্তা হেলাল উদ্দিনকে ব্যবস্থা গ্রহনের নির্দেশ দেন। নির্দেশ অনুযায়ী তদন্ত সংস্থার প্রধান সমন্বয়ক হান্নান খান, দুজন পুলিশ ইন্সপেক্টর, দুজন সাব ইন্সপেক্টর এবং পুলিশ কনস্টেবলসহ মোট ১১ জন হাজির হন । তবে তাদের ওপেন কোর্টে আনা হয়নি এবং ডকুমেন্ট বিষয়ে ওপেন কোর্টে শুনানীও হয়নি গতকাল।
এ্যাডভোকেট জসিম উদ্দিন সরকার, নজরুল ইসলাম, ব্যারিস্টার তানভির আহমেদ আল আমিন, ব্যারিস্টার মুন্সি আহসান কবির, ব্যারিস্টার এমরান সিদ্দিক, ব্যারিস্টার এহসান সিদ্দিক, শিশির মোহাম্মদ মনির, শাহজাহান কবির, আবু বকর সিদ্দিক প্রমুখ আইনজীবী গতকাল উপস্থিত ছিলেন আসামী পক্ষে।
রাষ্ট্রপক্ষে রানাদাস গুপ্ত, জেয়াদ আল মালুম, নূর জাহান বেগম মুক্তা প্রমুখ আইনজীবী উপস্থিত ছিলেন অন্যান্যের মধ্যে।
কোন মন্তব্য নেই:
একটি মন্তব্য পোস্ট করুন