মেহেদী হাসান, ২/১০/২০১২ , মঙ্গলবার
মাওলানা দেলাওয়ার হোসাইন সাঈদীর পক্ষে আজ সপ্তম সাক্ষী হিসেবে সাক্ষ্য দিলেন পিরোজপুরের নলবুনিয়ার জামাল হোসেন ফকির। তিনি আলোচিত ইব্রাহিম কুট্টি হত্যাকান্ডের বিবরন তুলে ধরে জবানবন্দী প্রদান করেন।
জবানবন্দী : আমার নাম জামাল হোসেন ফকির, বয়স-৬০ বছর। আমার বাড়ি পিরোজপুর জেলার নলবুনিয়া গ্রামে অবস্থিত। আমি জমাজমি চাষাবাদ করি এবং মাঝে মধ্যে মাছ ধরি। ১৯৭১ সালে মুক্তিযুদ্ধ চলাকালীন সময়ে আমি একই কাজ করতাম। আমাদের দেশে আশ্বিন মাসে খালে বিলে প্রচুর পানি থাকে। ১৯৭১ সালে মুক্তিযুদ্ধ চলাকালীন আমি আশ্বিন মাসের মাঝামাঝি সময়ে রাত্রের প্রথম ভাগে বিলে বড়শি পেতে আসি। রাত্রের শেষ ভাগে আমি নৌকা নিয়ে বড়শি তুলে বাড়ির কাছাকাছি আসলে বিশাল একটা শব্দ শুনতে পাই। শব্দ শুনে আমি খেয়াল করি আমার পাশ লাগানো আজহার আলী হাওলাদারের বাড়িতে কান্নাকাটির শব্দ শোনা যায়। আমি ঘরে চলে আসি। আমার আব্বা বলেন, আজহার মামার বাড়ি বড় একটা শব্দ শোনা গেছে এবং কান্নাকাটিরও শব্দ শোনা যাচ্ছে । চলো গিয়ে দেখে আসি। আজহার আলীর বাড়ির উঠানের মাঝ বরাবর পূর্ব দিকের গাছের আড়ালে গিয়ে দেখি ইব্রাহিম কুট্টির লাশ আইয়ুব আলী চৌকিদার, কালাম চৌকিদার, হাকিম মুন্সি, মান্নান ও আশরাফ আলী খালের দিকে টেনে নিয়ে যায়। তার পিছে দানেশ মোল্লা, সেকান্দার শিকদার, মোসলেম মওলানা, রুহুল আমিন, মোমিনরা মিলে সাহবে আলীকে পিছমোড়া দিয়ে বেঁধে তার মাকেসহ পাড়েরহাটে দিকে নিয়ে যাচ্ছে। আমি সামনে এগিয়ে দেখি ইব্রাহিম কুট্টির লাশ নৌকায় তুলে পাড়েরহাটের দিকে নিয়ে যাচ্ছে। আমি সাহেব আলীদের ঘরে চলে আসি। ইব্রাহিম কুট্টির স্ত্রী মমতাজ বেগম গড়াগড়ি দিয়ে কাঁদতেছে এবং তার হাত দিয়ে রক্ত বেয়ে পড়ছে। তার বোন রানী বেগম মমতাজের হাত বেঁধে দিচ্ছে দেখি। তখন আমি ইব্রাহিম কুট্টির স্ত্রী মমতাজ বেগমকে জিজ্ঞাসা করলাম, ফুফু তোমার কি হয়েছে? তখন মমতাজ বেগম উত্তর দেয় যে গুলিতে ইব্রাহিম কুট্টি মারা গেছে সেই গুলি তার হাতেও লেগেছে, লাঠি দিয়ে তার আব্বার গায়েও আঘাত করেছে। ঐখানে তখন পাড়া প্রতিবেশী অনেক লোকজন জমায়েত হয়। আমরা বাড়িতে চলে যাই। বিকালে শুনতে পাই যে, সাহেব আলী ও তার আম্মাকে পিরোজপুরে নিয়ে গেছে। ইব্রাহিম কুট্টির লাশ পাড়েরহাট বাদুরা পোলের সাথে নৌকায় বেঁধে রেখেছে। তারপরদিন বেলা এগারোটার দিকে শুনতে পাই যে, সাহেব আলীর আম্মা বাড়িতে ফিরেছে। তারপর আমরা তাদের বাড়িতে যাই। জিজ্ঞাসা করি বুয়া (সাহেব আলীর আম্মা) আপনি এসেছেন, সাহেব আলী চাচা কৈ। তারপর সে বলে যে, পিরোজপুর নিয়া সাহেব আলীকে মিলিটারীরা গুলি করে মারছে। এর কিছুদিন পরে দেশ স্বাধীন হয়। দেশ স্বাধীনের পাঁচ/ছয় মাস পর মমতাজ বেগম ভাই এবং স্বামী হত্যার মামলা করে।
ইব্রাহীম কুট্টি হত্যা বিষয়ে রাষ্ট্রপক্ষের সাক্ষী যা বলেছেন :
মাওলানা দেলাওয়ার হোসাইন সাঈদীর বিরুদ্ধে যেসব অভিযোগে বর্তমানে বিচার চলছে তার মধ্যে অন্যতম আলোচিত ঘটনা হল ইব্রাহীম কুট্টিকে হত্যা। রাষ্ট্রপক্ষের বেশ কয়েকজন সাক্ষী মাওলানা সাঈদীর বিরুদ্ধে ইব্রাহীম কুট্টি হত্যার যে বিবরন দিয়েছেন সে অনুযায়ী ইব্রাহীম কুট্টিকে মাওলানা সাঈদীর নির্দেশে পাক আর্মি ১৯৭১ সালের ৮ মে পারেরহাট বাজারে গুলি করে হত্যা করে লাশ নদীতে ফেলে দেয়। রাষ্ট্রপক্ষের সাক্ষী মানিক পসারী, সুলতান হাওলাদার, মফিজ, মোস্তফা হাওলাদারসহ অনেকে এ ঘটনার চাুস সাক্ষী হিসেবে নিজেদের উপস্থান করেন।
কিন্তু আজ মাওলানা সাঈদীর পক্ষে সপ্তম সাক্ষী জামাল হোসেন ফকির সাক্ষ্য দিয়ে বললেন ১৯৭১ সালের আশ্বিন মাসের মাঝামাঝি ইব্রাহীম কুট্টিকে নলবুনিয়ায় তার শশুরবাড়িতে হত্যা করা হয়। আশ্বিন মাসের মাঝামাঝি তারিখ ইংরেজি সেপ্টেম্বরের শেষ অথবা অক্টোবরের শুরু হয়। দুই পক্ষের সাক্ষীর বর্ননায় ঘটনার তারিখ এবং স্থানের কোন মিল নেই।
গত ২৭ ডিসেম্বর আদালতে সাক্ষ্য দেয়ার সময় মানিক পসারী ইব্রাহিম কুট্টির হত্যার বিবরন দিয়ে বলেন, ১৯৭১ সালে ৮ মে পাক সেনাবাহিনী নিয়ে দেলোয়ার শিকদার বর্তমানে সাঈদী, সেকেন্দার শিকদার, দানেশ আলী মোল্লা, মোসলেম মাওলানা, রেজাকার মবিন, হাকিম কারী, সোবহান মাওলানাসহ আরো অনেকে রেজাকার আমার বাড়িতে প্রবেশ করে। তাদের আসতে দেখে আমি বাড়ির পাশে জঙ্গলে লুকিয়ে থাকি এবং সব ঘটনা দেখতে থাকি। তারা আমার বাড়িতে প্রবেশ করে আমার ফুফাত ভাই মফিজ উদ্দিন ( বাড়িতে কাজ করত) এবং অপর কাজের লোক ইব্রাহিম কুট্টিকে আর্মিরা ধরে একই দড়িতে বাঁধে। তারপর ঘরে লুটপাট করে সোনাদানা দেলু শিকদার, সেকেন্দার শিকদার, মোসলেম মাওলানা নিয়ে যায়। লুটের পর দেলোয়ার শিকদারের (একেই বর্তমান সাঈদী হিসেবে উল্লেখ করেন তিনি) নেতৃত্বে রাজাকার বাহিনী ঘরে কেরোসিন ছিটায়। তারপর দেলোয়ার শিকদার ঘরে আগন ধরিয়ে দেয়। মফিজ ও ইব্রাহিম কুট্টিকে বেঁধে পারেরহাট নিয়ে যাবার সময় আমি তাদের পেছনে পেছনে যেতে থাকি। তাকে পারের হাট বাজারের মধ্যে ব্রিজের ওপারে নিয়ে গেলে আমি এপারে বসে তাদের লক্ষ্য করি। দেলোয়ার হোসেন শিকদারকে আর্মির সাথে পরামর্শ করতে দেখি। তারপর দেলোয়ার হোসেন শিকদার, সেকেন্দার শিকদারের সাথে পরামর্শক্রমে পাক আর্মিরা ইব্রাহিম কুট্টিকে গুলি করে। ইব্রাহিম চিৎকার মারে। তারপর লাশ নদীতে ফেলে দেয়।
ইব্রাহিক কুট্টিকে মাওলানা সাঈদীর নেতৃত্বে ধরে এবং তারই নির্দেশে হত্যার বিষয়ে এর আগে গত ২১ ডিসেম্বর আদালতে সাক্ষ্য দেন চতুর্থ সাক্ষী সুলতান আহমদ হাওলাদার। তিনিও ইব্রাহিম কুট্টির হত্যার বিষয়ে মানিক পসারীর মত ঘটনার বিবরন দিয়ে বলেন, মানিক পসারীর বাড়ির কাছাকাছি গিয়ে দেখি দানেশ আলী মোল্লা, দেলোয়ার হোসেন শিকদার বর্তমান সাঈদী, মোসলেম মাওলানাসহ অনেক রাজাকার বাহিনী মানিক পসারীর কর্মচারী ইব্রাহিম কুট্টিকে ধরে নিয়ে যাচ্ছে বাজারের দিকে। আমি তাদের পিছু পিছু যেতে থাকি। বাজারের ব্রিজ পার হয়ে পশ্চিম দিকে যাবার পর আমি এপার বসে থাকি। উত্তর দিকে থানার ঘাট পর্যন্ত নিয়ে যাবার পর দেলোয়ার হোসেন শিকদার বর্তমানে সাঈদী সাহেব পাক আর্মির সাথে কি যেন বলাবলি করছে দেখতে পাই। তখনই বিকট গুলির শব্দ এবং চিৎকার শুনতে পাই। এরপর ভয়ে সেখান থেকে পালিয়ে আসার পর পরের দিন শুনতে পাই মানিক পসারীর বাড়ির কাজের লোক ইব্রাহিম কুট্টিকে হত্যা করে পানিতে ফেলে দিয়েছে।
ঠিক একইভাবে ইব্রাহীমের সাথে ধরে নিয়ে যাওয়া এবং পরে নির্যাতনের শীকার হয়ে পালিয়ে আসা মফিজ, অপর মোস্তফা হাওলাদারও মাওলানা সাঈদীর বিরুদ্ধে ইব্রাহীম কুট্টি হত্যার বিবরন দিয়ে বলেন, ৮ মে পারেরহাটে তাকে হত্যা করা হয়।
মাওলানা সাঈদীর আইনজীবীরা আদালতে তথ্য প্রমান উপস্থাপন করে দেখিয়েছেন ইব্রাহীম কুট্টি পারের হাট বাজারে ৮ মে নিহত হননি। তিনি তার শ্বশুর বাড়িতে থাকা অবস্থায় ১ অক্টোবর ১৯৭১ সালে নিহত হন । ইব্রাহীম কুট্টির স্ত্রী মমতাজ বেগম দেশ স্বাধীন হবার পর ১৯৭২ সালের ১৬ জুলাই পিরোজপুর আদালতে ১৩ জনকে আসামী করে হত্যা মামলা দায়ের করেন। ১৩ জন আসামীর মধ্যে মাওলানা দেলোয়ার হোসাইন সাঈদীর নাম নেই। মামলার এজাহারে তিনি উল্লেখ করেন ১৯৭১ সালের ১ অক্টোবর তিনি তার বাপেরবাড়ি নলবুনিয়া থাকা অবস্থায় তাদেরই বাড়িদে তার স্বামী ইব্রাহীম কুট্টিকে হত্যা করা হয।
মমতাজ বেগম তার স্বামীর হত্যা মামলায় যাদের আসামী করেছেন তারা হলেন, দানেশ মোল্লা, আতাহার আল, আশ্রাব আলী, আব্দুল মান্নান, আইউব আলী কালাম চৌধুরী, রুহুল আমিন, আব্দুল হাকিম মুন্সি, মমিন উদ্দিন, সেকোন্দার আলী শিকদার, শামসুর রহমান এসআই, মোসলেম মাওলানা। আসামীদের তালিকায় মাওলানা সাঈদীর নাম নেই। যারা আসামী তাদের প্রায় সকলেই কুখ্যাত রাজাকার এবং পিস কমিটির নেতা ছিল বলে স্বাীকার করেছেন মাওলানা সাঈদীর বিরুদ্ধে সাক্ষ্য দিতে আসা সাক্ষীরা।
মাওলানা দেলাওয়ার হোসাইন সাঈদীর পক্ষে আজ সপ্তম সাক্ষী হিসেবে সাক্ষ্য দিলেন পিরোজপুরের নলবুনিয়ার জামাল হোসেন ফকির। তিনি আলোচিত ইব্রাহিম কুট্টি হত্যাকান্ডের বিবরন তুলে ধরে জবানবন্দী প্রদান করেন।
জবানবন্দী : আমার নাম জামাল হোসেন ফকির, বয়স-৬০ বছর। আমার বাড়ি পিরোজপুর জেলার নলবুনিয়া গ্রামে অবস্থিত। আমি জমাজমি চাষাবাদ করি এবং মাঝে মধ্যে মাছ ধরি। ১৯৭১ সালে মুক্তিযুদ্ধ চলাকালীন সময়ে আমি একই কাজ করতাম। আমাদের দেশে আশ্বিন মাসে খালে বিলে প্রচুর পানি থাকে। ১৯৭১ সালে মুক্তিযুদ্ধ চলাকালীন আমি আশ্বিন মাসের মাঝামাঝি সময়ে রাত্রের প্রথম ভাগে বিলে বড়শি পেতে আসি। রাত্রের শেষ ভাগে আমি নৌকা নিয়ে বড়শি তুলে বাড়ির কাছাকাছি আসলে বিশাল একটা শব্দ শুনতে পাই। শব্দ শুনে আমি খেয়াল করি আমার পাশ লাগানো আজহার আলী হাওলাদারের বাড়িতে কান্নাকাটির শব্দ শোনা যায়। আমি ঘরে চলে আসি। আমার আব্বা বলেন, আজহার মামার বাড়ি বড় একটা শব্দ শোনা গেছে এবং কান্নাকাটিরও শব্দ শোনা যাচ্ছে । চলো গিয়ে দেখে আসি। আজহার আলীর বাড়ির উঠানের মাঝ বরাবর পূর্ব দিকের গাছের আড়ালে গিয়ে দেখি ইব্রাহিম কুট্টির লাশ আইয়ুব আলী চৌকিদার, কালাম চৌকিদার, হাকিম মুন্সি, মান্নান ও আশরাফ আলী খালের দিকে টেনে নিয়ে যায়। তার পিছে দানেশ মোল্লা, সেকান্দার শিকদার, মোসলেম মওলানা, রুহুল আমিন, মোমিনরা মিলে সাহবে আলীকে পিছমোড়া দিয়ে বেঁধে তার মাকেসহ পাড়েরহাটে দিকে নিয়ে যাচ্ছে। আমি সামনে এগিয়ে দেখি ইব্রাহিম কুট্টির লাশ নৌকায় তুলে পাড়েরহাটের দিকে নিয়ে যাচ্ছে। আমি সাহেব আলীদের ঘরে চলে আসি। ইব্রাহিম কুট্টির স্ত্রী মমতাজ বেগম গড়াগড়ি দিয়ে কাঁদতেছে এবং তার হাত দিয়ে রক্ত বেয়ে পড়ছে। তার বোন রানী বেগম মমতাজের হাত বেঁধে দিচ্ছে দেখি। তখন আমি ইব্রাহিম কুট্টির স্ত্রী মমতাজ বেগমকে জিজ্ঞাসা করলাম, ফুফু তোমার কি হয়েছে? তখন মমতাজ বেগম উত্তর দেয় যে গুলিতে ইব্রাহিম কুট্টি মারা গেছে সেই গুলি তার হাতেও লেগেছে, লাঠি দিয়ে তার আব্বার গায়েও আঘাত করেছে। ঐখানে তখন পাড়া প্রতিবেশী অনেক লোকজন জমায়েত হয়। আমরা বাড়িতে চলে যাই। বিকালে শুনতে পাই যে, সাহেব আলী ও তার আম্মাকে পিরোজপুরে নিয়ে গেছে। ইব্রাহিম কুট্টির লাশ পাড়েরহাট বাদুরা পোলের সাথে নৌকায় বেঁধে রেখেছে। তারপরদিন বেলা এগারোটার দিকে শুনতে পাই যে, সাহেব আলীর আম্মা বাড়িতে ফিরেছে। তারপর আমরা তাদের বাড়িতে যাই। জিজ্ঞাসা করি বুয়া (সাহেব আলীর আম্মা) আপনি এসেছেন, সাহেব আলী চাচা কৈ। তারপর সে বলে যে, পিরোজপুর নিয়া সাহেব আলীকে মিলিটারীরা গুলি করে মারছে। এর কিছুদিন পরে দেশ স্বাধীন হয়। দেশ স্বাধীনের পাঁচ/ছয় মাস পর মমতাজ বেগম ভাই এবং স্বামী হত্যার মামলা করে।
ইব্রাহীম কুট্টি হত্যা বিষয়ে রাষ্ট্রপক্ষের সাক্ষী যা বলেছেন :
মাওলানা দেলাওয়ার হোসাইন সাঈদীর বিরুদ্ধে যেসব অভিযোগে বর্তমানে বিচার চলছে তার মধ্যে অন্যতম আলোচিত ঘটনা হল ইব্রাহীম কুট্টিকে হত্যা। রাষ্ট্রপক্ষের বেশ কয়েকজন সাক্ষী মাওলানা সাঈদীর বিরুদ্ধে ইব্রাহীম কুট্টি হত্যার যে বিবরন দিয়েছেন সে অনুযায়ী ইব্রাহীম কুট্টিকে মাওলানা সাঈদীর নির্দেশে পাক আর্মি ১৯৭১ সালের ৮ মে পারেরহাট বাজারে গুলি করে হত্যা করে লাশ নদীতে ফেলে দেয়। রাষ্ট্রপক্ষের সাক্ষী মানিক পসারী, সুলতান হাওলাদার, মফিজ, মোস্তফা হাওলাদারসহ অনেকে এ ঘটনার চাুস সাক্ষী হিসেবে নিজেদের উপস্থান করেন।
কিন্তু আজ মাওলানা সাঈদীর পক্ষে সপ্তম সাক্ষী জামাল হোসেন ফকির সাক্ষ্য দিয়ে বললেন ১৯৭১ সালের আশ্বিন মাসের মাঝামাঝি ইব্রাহীম কুট্টিকে নলবুনিয়ায় তার শশুরবাড়িতে হত্যা করা হয়। আশ্বিন মাসের মাঝামাঝি তারিখ ইংরেজি সেপ্টেম্বরের শেষ অথবা অক্টোবরের শুরু হয়। দুই পক্ষের সাক্ষীর বর্ননায় ঘটনার তারিখ এবং স্থানের কোন মিল নেই।
গত ২৭ ডিসেম্বর আদালতে সাক্ষ্য দেয়ার সময় মানিক পসারী ইব্রাহিম কুট্টির হত্যার বিবরন দিয়ে বলেন, ১৯৭১ সালে ৮ মে পাক সেনাবাহিনী নিয়ে দেলোয়ার শিকদার বর্তমানে সাঈদী, সেকেন্দার শিকদার, দানেশ আলী মোল্লা, মোসলেম মাওলানা, রেজাকার মবিন, হাকিম কারী, সোবহান মাওলানাসহ আরো অনেকে রেজাকার আমার বাড়িতে প্রবেশ করে। তাদের আসতে দেখে আমি বাড়ির পাশে জঙ্গলে লুকিয়ে থাকি এবং সব ঘটনা দেখতে থাকি। তারা আমার বাড়িতে প্রবেশ করে আমার ফুফাত ভাই মফিজ উদ্দিন ( বাড়িতে কাজ করত) এবং অপর কাজের লোক ইব্রাহিম কুট্টিকে আর্মিরা ধরে একই দড়িতে বাঁধে। তারপর ঘরে লুটপাট করে সোনাদানা দেলু শিকদার, সেকেন্দার শিকদার, মোসলেম মাওলানা নিয়ে যায়। লুটের পর দেলোয়ার শিকদারের (একেই বর্তমান সাঈদী হিসেবে উল্লেখ করেন তিনি) নেতৃত্বে রাজাকার বাহিনী ঘরে কেরোসিন ছিটায়। তারপর দেলোয়ার শিকদার ঘরে আগন ধরিয়ে দেয়। মফিজ ও ইব্রাহিম কুট্টিকে বেঁধে পারেরহাট নিয়ে যাবার সময় আমি তাদের পেছনে পেছনে যেতে থাকি। তাকে পারের হাট বাজারের মধ্যে ব্রিজের ওপারে নিয়ে গেলে আমি এপারে বসে তাদের লক্ষ্য করি। দেলোয়ার হোসেন শিকদারকে আর্মির সাথে পরামর্শ করতে দেখি। তারপর দেলোয়ার হোসেন শিকদার, সেকেন্দার শিকদারের সাথে পরামর্শক্রমে পাক আর্মিরা ইব্রাহিম কুট্টিকে গুলি করে। ইব্রাহিম চিৎকার মারে। তারপর লাশ নদীতে ফেলে দেয়।
ইব্রাহিক কুট্টিকে মাওলানা সাঈদীর নেতৃত্বে ধরে এবং তারই নির্দেশে হত্যার বিষয়ে এর আগে গত ২১ ডিসেম্বর আদালতে সাক্ষ্য দেন চতুর্থ সাক্ষী সুলতান আহমদ হাওলাদার। তিনিও ইব্রাহিম কুট্টির হত্যার বিষয়ে মানিক পসারীর মত ঘটনার বিবরন দিয়ে বলেন, মানিক পসারীর বাড়ির কাছাকাছি গিয়ে দেখি দানেশ আলী মোল্লা, দেলোয়ার হোসেন শিকদার বর্তমান সাঈদী, মোসলেম মাওলানাসহ অনেক রাজাকার বাহিনী মানিক পসারীর কর্মচারী ইব্রাহিম কুট্টিকে ধরে নিয়ে যাচ্ছে বাজারের দিকে। আমি তাদের পিছু পিছু যেতে থাকি। বাজারের ব্রিজ পার হয়ে পশ্চিম দিকে যাবার পর আমি এপার বসে থাকি। উত্তর দিকে থানার ঘাট পর্যন্ত নিয়ে যাবার পর দেলোয়ার হোসেন শিকদার বর্তমানে সাঈদী সাহেব পাক আর্মির সাথে কি যেন বলাবলি করছে দেখতে পাই। তখনই বিকট গুলির শব্দ এবং চিৎকার শুনতে পাই। এরপর ভয়ে সেখান থেকে পালিয়ে আসার পর পরের দিন শুনতে পাই মানিক পসারীর বাড়ির কাজের লোক ইব্রাহিম কুট্টিকে হত্যা করে পানিতে ফেলে দিয়েছে।
ঠিক একইভাবে ইব্রাহীমের সাথে ধরে নিয়ে যাওয়া এবং পরে নির্যাতনের শীকার হয়ে পালিয়ে আসা মফিজ, অপর মোস্তফা হাওলাদারও মাওলানা সাঈদীর বিরুদ্ধে ইব্রাহীম কুট্টি হত্যার বিবরন দিয়ে বলেন, ৮ মে পারেরহাটে তাকে হত্যা করা হয়।
মাওলানা সাঈদীর আইনজীবীরা আদালতে তথ্য প্রমান উপস্থাপন করে দেখিয়েছেন ইব্রাহীম কুট্টি পারের হাট বাজারে ৮ মে নিহত হননি। তিনি তার শ্বশুর বাড়িতে থাকা অবস্থায় ১ অক্টোবর ১৯৭১ সালে নিহত হন । ইব্রাহীম কুট্টির স্ত্রী মমতাজ বেগম দেশ স্বাধীন হবার পর ১৯৭২ সালের ১৬ জুলাই পিরোজপুর আদালতে ১৩ জনকে আসামী করে হত্যা মামলা দায়ের করেন। ১৩ জন আসামীর মধ্যে মাওলানা দেলোয়ার হোসাইন সাঈদীর নাম নেই। মামলার এজাহারে তিনি উল্লেখ করেন ১৯৭১ সালের ১ অক্টোবর তিনি তার বাপেরবাড়ি নলবুনিয়া থাকা অবস্থায় তাদেরই বাড়িদে তার স্বামী ইব্রাহীম কুট্টিকে হত্যা করা হয।
মমতাজ বেগম তার স্বামীর হত্যা মামলায় যাদের আসামী করেছেন তারা হলেন, দানেশ মোল্লা, আতাহার আল, আশ্রাব আলী, আব্দুল মান্নান, আইউব আলী কালাম চৌধুরী, রুহুল আমিন, আব্দুল হাকিম মুন্সি, মমিন উদ্দিন, সেকোন্দার আলী শিকদার, শামসুর রহমান এসআই, মোসলেম মাওলানা। আসামীদের তালিকায় মাওলানা সাঈদীর নাম নেই। যারা আসামী তাদের প্রায় সকলেই কুখ্যাত রাজাকার এবং পিস কমিটির নেতা ছিল বলে স্বাীকার করেছেন মাওলানা সাঈদীর বিরুদ্ধে সাক্ষ্য দিতে আসা সাক্ষীরা।
কোন মন্তব্য নেই:
একটি মন্তব্য পোস্ট করুন