মেহেদী হাসান, ৭/২/২০১২-মঙ্গলবার
মাওলানা দেলাওয়ার হোসাইন সাঈদীর বিরুদ্ধে ফের নির্ধারিত সাক্ষী হাজিরে ব্যর্থ হলেন রাষ্ট্রপক্ষের আইনজীবীরা। সাক্ষী হাজিরে ব্যর্থতা প্রসঙ্গে ট্রাইব্যুনাল জানতে চাইলে চিফ প্রসিকিউটর গোলাম আরিফ টিপু বলেন, আমরা অসহায় বোধ করছি। কি বলবো বুঝতে পারছি না। আমরা চেষ্টা অব্যাহত রাখছি।
সাক্ষী হাজিরে রাষ্ট্রপক্ষের আইনজীবীদের অব্যাহত ব্যর্থতায় আবারো তীব্র ক্ষোভ এবং অসন্তোষ প্রকাশ করলেন ট্রাইব্যুনাল। সাক্ষী আনতে না পারায় ফের মাওলানা সাঈদীর বিচার ১৩ ফেব্রুয়ারি পর্যন্ত মুলতবি ঘোষণা করা হয়েছে। এর আগে গত ২ ফেব্রুয়ারি নির্ধারিত সাক্ষী হাজির করতে না পারায় মাওলানা সাঈদীর বিচার ৭ ফেব্রুয়ারি পর্যন্ত মূলতবী ঘোষনা করা হয়েছিল।
এদিকে রাষ্ট্রপক্ষের আইনজীবীরা নির্ধারিত সাক্ষী আনতে না পারায় আজ হোসেন আলী নামে যশোরের অনির্ধারিত একজন সাক্ষী আদালতে সাক্ষ্য দিয়েছেন। সাক্ষী হোসেন আলী মাওলানা সাঈদীর বিরুদ্ধে কিছুই বলেননি তার সাক্ষ্যে। ফলে তাকে জেরা করারও প্রয়োজন বোধ করেননি মাওলানা সাঈদীর আইনজীবীরা। মাত্র চার থেকে পাঁচ মিনিটে তিনি তার জবানবন্দী শেষ করেন।
গত ১ ফেব্রুয়ারি মাওলানা সাঈদীর বিরুদ্ধে সাক্ষ্য দেন প্রবীণ সাক্ষী মধুসূদন ঘরামী। এর পরদিন ২ ফেব্রুয়ারি বৃহষ্পতিবার আদালতে তিনজন সাক্ষী হাজির করার কথা ছিল রাষ্ট্রপক্ষের আইনজীবীদের। এরা হলেন, সুমতী রানী, তার ছেলে আশিষ মন্ডল এবং অপর আরেকজন সমর মিস্ত্রি। কিন্তু বৃহষ্পতিবার রাষ্ট্রপক্ষের আইনজীবীরা ট্রাইব্যুনালে জানান সাক্ষীরা বেড়াতে গেছে। তাদের কোন খোঁজ খবর তাদের কাছে নেই। ট্রাইবুু্যুনাল সেদিনও রাষ্ট্রপক্ষের আইনজীবীদের ব্যর্থতা বিষয়ে তীব্র ক্ষোভ প্রকাশ করে লিখিত আদেশ দেন এবং মুলতবী করেন বিচার কার্যক্রম।
সকালে আবার ট্রাইব্যুনালের কার্যক্রম শুরু হলে রাষ্ট্রপক্ষের আইনজীবীদের ট্রাইব্যুনাল প্রশ্ন করেন, আজ কতজন সাক্ষী আছে। রাষ্ট্রপক্ষের আইনজীবীদের জবাবে অসন্তোষ প্রকাশ করে ট্রাইব্যুনালের চেয়ারম্যান বিচারপতি নিজামুল হক বলেন, ‘মাত্র একজন সাক্ষী! তার মানে আজো মুলতবী করতে হবে আদালত? এ সময় ট্রাইব্যুনালের চেয়ারম্যান বিচারপতি নিজামুল হক তীব্র ক্ষোভের সাথে রাষ্ট্রপক্ষের চিফ প্রসিকিউটরকে উদ্দেশ্য করে বলেন, মি. চিফ প্রসিকিউটর ‘হোয়াট শ্যাল আই ডু?’
তখন চিফ প্রসিকিউটর গোলাম আরিফ টিপু দাঁড়িয়ে বলেন, “আমরা অসহায় বোধ করছি।”
জবাবে বিচারপতি নিজামুল হক বলেন, “পাঁচ দিন বন্ধ দিলাম, তাও সাক্ষী আনতে পারেন নাই। মাত্র একজন সাক্ষী ম্যানেজ করলেন?”
তখন গোলাম আরিফ টিপু আবার বলেন, কি বলবো বুঝতে পারছি না। আমরা চেষ্টা অব্যাহত রাখছি। এটি একটি কঠিন কাজ।
এরপর ট্রাইব্যুনাল ক্ষিপ্ত হয়ে তদন্ত কর্মকর্তা হেলাল উদ্দিনকে পোডিয়ামের সামনে দাঁড় করিয়ে জিজ্ঞেস করেন, সমস্যা কি, সাক্ষী নাই কেন । সাক্ষী হাজির করা তদন্ত কর্মকর্তার দায়িত্ব। তখন হেলাল উদ্দিন বলেন, সাক্ষী অসুস্থ।
ট্রাইব্যুনাল চেয়ারম্যান ক্ষোভের সাথে বলেন, অসুস্থ হলে চিকিৎসা করাবেন। চিকিৎসা করিয়ে চিফ প্রসিকিউটরের কাছে দেবেন সাক্ষী। তিনি সাক্ষীদের আদালতে আনবেন।
এরপর ট্রাইব্যুনাল রাষ্ট্রপক্ষের আইনজীবীদের কাছে জানতে চান আগামীকাল সাক্ষী আনা যাবে কি-না। প্রসিকিউটর সৈয়দ হায়দার আলী বলেন, কাল তারা সাক্ষী আনতে পারবেননা।
চেয়ারম্যান আবারো প্রশ্ন করে জানতে চান পরশু বৃহষ্পতিবার আনা যাবে কি-না।
সৈয়দ হায়দার আলী বলেন, সপ্তাহখানেক সময় লাগবে।
জবাবে ট্রাইব্যুনাল চেয়ারম্যান বলেন, আমি একটা জিনিস বুঝতে চাই। সাক্ষী অসুস্থ সেজন্য না হয় কাল আনতে পারবেননা বুঝলাম। কিন্তু পরশু পারবেননা কেন। এর কোন সন্তোষজনক জবাব না দিয়ে সৈয়দ হায়দার আলী আবার বলেন, সপ্তাহ খানিক সময় লাগবে।
মাওলানা সাঈদীর আইনজীবী মিজানুল ইসলাম জানতে চান, সপ্তাহ খানিক পরে কি নতুন সাক্ষী আনা হবে না যাদের ইতোমধ্যে আনার কথা ছিল তারা আসবে।
এ প্রশ্নের উত্তরও রাষ্ট্রপক্ষের আইনজীবীরা নির্দিষ্ট করে বলতে পারেন নি।
আদালতের নিয়ম অনুযায়ী সাক্ষী হাজির করতে হলে নির্ধারিত সময়ে তাদের নাম আদলতে জমা দিতে হয়। আদালত তখন সাক্ষীদের নিরাপত্তার ব্যবস্থা ও অন্যান্য আনুসাঙ্গিক বিষয়ে ব্যবস্থা গ্রহনের নির্দেশ দেন প্রসিকিউশনকে। প্রসঙ্গটি উল্লেখ করে ট্রাইব্যুনাল চেয়ারম্যান বিচাপরপতি নিজামুল হক রাষ্ট্রপক্ষের আইনজীবীদের উদ্দেশ্য করে ক্ষোভের সাথে বলেন, ১৫ দিন পরও যখন শুনি সাক্ষী আসে নাই, তাহলে সাক্ষীদের ব্যাপারে ওই দরখাস্ত কেন করেছিলেন। তখন তিনি বনেল, ‘দ্য অর্ডার হ্যাস বিন পাসড। উই ক্যান্ট থিঙ্ক হোয়াই ইট হ্যাস নট বিন কমপ্লাইড।’ আমরা আদেশ পাশ করেছি। সে আদেশ কেন মানা হয়নি।
ট্রাইব্যুানেলর অপর বিচারপতি সাক্ষী হাজির করতে না পারা বিষয়ে রাষ্ট্রপক্ষের আইনজীবীদের উদ্দেশ্য করে বলেন, এটা আপনাদের কেস এবং আপনাদের দায়িত্ব অভিযোগ প্রমান করা। সাক্ষী কেন আনতে পারেননি তার ব্যাখ্যা দেয়ার বিষয় নয় এটি। তিনি বলেন, আপনারা কয়জন সাক্ষী আনতে পারবেন সে বিষয়ে নির্দিষ্ট করে জানাতে পারলে আমাদের জন্য সুবিধা হয়। কাকে আনবেন সে বিষয়ে স্ক্রুটিনি করলে ভাল। আর কোনদিন কোন সাক্ষী আনবেন সে বিষয়ে আসামী পক্ষকে জানিয়ে দিলে তা ওনাদের জন্যও ভাল হয়।
মাওলানা সাঈদীর বিরুদ্ধে কিছুই বললেননা সাক্ষী
আজ অনির্ধারিতভাবে সাক্ষ্য দেন যশোরের হোসেন আলী। বয়স ৬৬/৬৭। রাষ্ট্রপক্ষের আইনজীবী সাক্ষীকে প্রশ্ন করেন, ১৯৭০ সালে বাঘারপাড়া নির্বাচনী জনসভা সম্পর্কে কিছু বলেন।
সাক্ষী বলেন, ১৯৭০ সালের নির্বাচনের সময় বাগারপাড়া স্কুল মাঠে একটি সভা হয়। সেখানে আমি উপস্থিত ছিলাম না। তাই সভা সম্পর্কে কোনো কিছু আমার জানা নেই। আমি শুনেছি একটি সভা হয়েছিলো।
তখন রাষ্ট্রপক্ষের আইনজীবীরা প্রশ্ন করেন, কি শুনেছেন তাই বলেন।
জবাবে সাক্ষী বলেন, শুনেছি সভা হয়েছে। কিন্তু এর বেশি কিছু জানি না।
রাষ্ট্রপক্ষের আইনজীবীরা আবার প্রশ্ন করেন, সভায় কারা ছিলো?
সাক্ষী হোসনে আলী তখন বলেন, সভায় আমি ছিলামনা । কারা ছিল জানিনা।
এরপর এ বিষয়ে আরো প্রশ্ন করতে চাইলে ট্রাইব্যুনাল বলেন, সাক্ষী বলেছেন কিছু জানেননা।
এরপর অপর এক প্রশ্নের জবাবে সাক্ষী বলেন, দখেছি রওশন আলীর বাড়িতে সাঈদী সাহেব আসা-যাওয়া করতেন। তবে যুদ্ধের আগে না পরে তা খেয়াল নেই।
মাওলানা সাঈদীর আইনজীবী মিজানুল ইসলাম আদালতের কার্যক্রম শেষে সাংবাদিকদের বলেন, রাষ্ট্রপক্ষের আইনজীবীরা সাক্ষীদের দিয়ে যা বলাতে চেয়েছিল সাক্ষী তা সমর্থন করেন নাই। তিনি অভিযোগ করেন, ট্রাইব্যুনালের কাছে জমা দেয়া হোসেন আলীর প্রাথমিক জবানবন্দীতে বলা হযেছে, যুদ্ধের পর মাওলানা সাঈদী গোপনে যশোরে পালিয়ে গিয়ে আত্মপোগন করে ছিলেন।
কিন্তু আজকের জবানবন্দীতে হোসেন আলী তা স্বীকার করেন নি । অথচ রাষ্ট্রপক্ষের আইনজীবীরা তাকে দিয়ে ‘সাঈদী স্বাধীনতার পর যশোরে পালিয়ে গিয়েছিলেন’ বলে বলাতে চেয়েছেন।
জনকণ্ঠের বিরুদ্ধে অভিযোগ :গত ২ ফেব্রুয়ারি দৈনিক জনকণ্ঠে প্রকাশিত রিপোর্ট সম্পর্কে আজ মাওলানা সাঈদীর আইনজীবীরা ট্রাইব্যুনালে অভিযোগ করেছেন।
প্রকাশিত রিপোর্টের হেড লাইন ছিলো- “ঘরে ফিরেই জানতে পারি সাঈদী আমার স্ত্রীকে ধর্ষণ করেছে।”
মাওলানা সাঈদীর আইনজীবী মিজানুল ইসলাম আদালতে দাবি করেন, সাক্ষী এ জাতীয় কোনো কথা বলেন নাই। এ ধরনের রিপোর্ট সাংবাদিকতা এবং নীতি নৈতিকতা বিরোধী। তিনি এ বিষয়ে ব্যবস্থা গ্রহনের দাবি জানান আদালতে। ট্রাইব্যুনালের চেয়ারম্যান বিচারপতি নিজামুল হক বলেন, আমরা সংবাদটি দেখেছি । তিনি বলেন, বিষয়টি অনাকাক্সিত। এটি উচিত হয়নি। বিচারপতি নিজামুল হক বলেন, ‘আমার ঠিক কোন শব্দ প্রয়োগ করা উচিত ?’
এরপর তিনি বলেন “আনওয়ারর্যানটেড”।
মাওলানা সাঈদীর আইনজীবী পত্রিকাটির প্রতি সংশোধনী ছাপার অনুরোধ জানান আদালতে। বিচারপতি নিজামুল হক তখন বলেন, আমরা এ বিষয়ে বিবেচনা করবো কি করা যায়।
বিচারপতি নিজামুল হক সাংবাদিকদের উদ্দেশ্য করে বলেন, আপনারা কোন কিছু লেখার সময় সন্দেহজনক হলে তা বাদ দিবেন। কিন্তু ভুল লিখবেননা।
মাওলানা দেলাওয়ার হোসাইন সাঈদীর বিরুদ্ধে ফের নির্ধারিত সাক্ষী হাজিরে ব্যর্থ হলেন রাষ্ট্রপক্ষের আইনজীবীরা। সাক্ষী হাজিরে ব্যর্থতা প্রসঙ্গে ট্রাইব্যুনাল জানতে চাইলে চিফ প্রসিকিউটর গোলাম আরিফ টিপু বলেন, আমরা অসহায় বোধ করছি। কি বলবো বুঝতে পারছি না। আমরা চেষ্টা অব্যাহত রাখছি।
সাক্ষী হাজিরে রাষ্ট্রপক্ষের আইনজীবীদের অব্যাহত ব্যর্থতায় আবারো তীব্র ক্ষোভ এবং অসন্তোষ প্রকাশ করলেন ট্রাইব্যুনাল। সাক্ষী আনতে না পারায় ফের মাওলানা সাঈদীর বিচার ১৩ ফেব্রুয়ারি পর্যন্ত মুলতবি ঘোষণা করা হয়েছে। এর আগে গত ২ ফেব্রুয়ারি নির্ধারিত সাক্ষী হাজির করতে না পারায় মাওলানা সাঈদীর বিচার ৭ ফেব্রুয়ারি পর্যন্ত মূলতবী ঘোষনা করা হয়েছিল।
এদিকে রাষ্ট্রপক্ষের আইনজীবীরা নির্ধারিত সাক্ষী আনতে না পারায় আজ হোসেন আলী নামে যশোরের অনির্ধারিত একজন সাক্ষী আদালতে সাক্ষ্য দিয়েছেন। সাক্ষী হোসেন আলী মাওলানা সাঈদীর বিরুদ্ধে কিছুই বলেননি তার সাক্ষ্যে। ফলে তাকে জেরা করারও প্রয়োজন বোধ করেননি মাওলানা সাঈদীর আইনজীবীরা। মাত্র চার থেকে পাঁচ মিনিটে তিনি তার জবানবন্দী শেষ করেন।
গত ১ ফেব্রুয়ারি মাওলানা সাঈদীর বিরুদ্ধে সাক্ষ্য দেন প্রবীণ সাক্ষী মধুসূদন ঘরামী। এর পরদিন ২ ফেব্রুয়ারি বৃহষ্পতিবার আদালতে তিনজন সাক্ষী হাজির করার কথা ছিল রাষ্ট্রপক্ষের আইনজীবীদের। এরা হলেন, সুমতী রানী, তার ছেলে আশিষ মন্ডল এবং অপর আরেকজন সমর মিস্ত্রি। কিন্তু বৃহষ্পতিবার রাষ্ট্রপক্ষের আইনজীবীরা ট্রাইব্যুনালে জানান সাক্ষীরা বেড়াতে গেছে। তাদের কোন খোঁজ খবর তাদের কাছে নেই। ট্রাইবুু্যুনাল সেদিনও রাষ্ট্রপক্ষের আইনজীবীদের ব্যর্থতা বিষয়ে তীব্র ক্ষোভ প্রকাশ করে লিখিত আদেশ দেন এবং মুলতবী করেন বিচার কার্যক্রম।
সকালে আবার ট্রাইব্যুনালের কার্যক্রম শুরু হলে রাষ্ট্রপক্ষের আইনজীবীদের ট্রাইব্যুনাল প্রশ্ন করেন, আজ কতজন সাক্ষী আছে। রাষ্ট্রপক্ষের আইনজীবীদের জবাবে অসন্তোষ প্রকাশ করে ট্রাইব্যুনালের চেয়ারম্যান বিচারপতি নিজামুল হক বলেন, ‘মাত্র একজন সাক্ষী! তার মানে আজো মুলতবী করতে হবে আদালত? এ সময় ট্রাইব্যুনালের চেয়ারম্যান বিচারপতি নিজামুল হক তীব্র ক্ষোভের সাথে রাষ্ট্রপক্ষের চিফ প্রসিকিউটরকে উদ্দেশ্য করে বলেন, মি. চিফ প্রসিকিউটর ‘হোয়াট শ্যাল আই ডু?’
তখন চিফ প্রসিকিউটর গোলাম আরিফ টিপু দাঁড়িয়ে বলেন, “আমরা অসহায় বোধ করছি।”
জবাবে বিচারপতি নিজামুল হক বলেন, “পাঁচ দিন বন্ধ দিলাম, তাও সাক্ষী আনতে পারেন নাই। মাত্র একজন সাক্ষী ম্যানেজ করলেন?”
তখন গোলাম আরিফ টিপু আবার বলেন, কি বলবো বুঝতে পারছি না। আমরা চেষ্টা অব্যাহত রাখছি। এটি একটি কঠিন কাজ।
এরপর ট্রাইব্যুনাল ক্ষিপ্ত হয়ে তদন্ত কর্মকর্তা হেলাল উদ্দিনকে পোডিয়ামের সামনে দাঁড় করিয়ে জিজ্ঞেস করেন, সমস্যা কি, সাক্ষী নাই কেন । সাক্ষী হাজির করা তদন্ত কর্মকর্তার দায়িত্ব। তখন হেলাল উদ্দিন বলেন, সাক্ষী অসুস্থ।
ট্রাইব্যুনাল চেয়ারম্যান ক্ষোভের সাথে বলেন, অসুস্থ হলে চিকিৎসা করাবেন। চিকিৎসা করিয়ে চিফ প্রসিকিউটরের কাছে দেবেন সাক্ষী। তিনি সাক্ষীদের আদালতে আনবেন।
এরপর ট্রাইব্যুনাল রাষ্ট্রপক্ষের আইনজীবীদের কাছে জানতে চান আগামীকাল সাক্ষী আনা যাবে কি-না। প্রসিকিউটর সৈয়দ হায়দার আলী বলেন, কাল তারা সাক্ষী আনতে পারবেননা।
চেয়ারম্যান আবারো প্রশ্ন করে জানতে চান পরশু বৃহষ্পতিবার আনা যাবে কি-না।
সৈয়দ হায়দার আলী বলেন, সপ্তাহখানেক সময় লাগবে।
জবাবে ট্রাইব্যুনাল চেয়ারম্যান বলেন, আমি একটা জিনিস বুঝতে চাই। সাক্ষী অসুস্থ সেজন্য না হয় কাল আনতে পারবেননা বুঝলাম। কিন্তু পরশু পারবেননা কেন। এর কোন সন্তোষজনক জবাব না দিয়ে সৈয়দ হায়দার আলী আবার বলেন, সপ্তাহ খানিক সময় লাগবে।
মাওলানা সাঈদীর আইনজীবী মিজানুল ইসলাম জানতে চান, সপ্তাহ খানিক পরে কি নতুন সাক্ষী আনা হবে না যাদের ইতোমধ্যে আনার কথা ছিল তারা আসবে।
এ প্রশ্নের উত্তরও রাষ্ট্রপক্ষের আইনজীবীরা নির্দিষ্ট করে বলতে পারেন নি।
আদালতের নিয়ম অনুযায়ী সাক্ষী হাজির করতে হলে নির্ধারিত সময়ে তাদের নাম আদলতে জমা দিতে হয়। আদালত তখন সাক্ষীদের নিরাপত্তার ব্যবস্থা ও অন্যান্য আনুসাঙ্গিক বিষয়ে ব্যবস্থা গ্রহনের নির্দেশ দেন প্রসিকিউশনকে। প্রসঙ্গটি উল্লেখ করে ট্রাইব্যুনাল চেয়ারম্যান বিচাপরপতি নিজামুল হক রাষ্ট্রপক্ষের আইনজীবীদের উদ্দেশ্য করে ক্ষোভের সাথে বলেন, ১৫ দিন পরও যখন শুনি সাক্ষী আসে নাই, তাহলে সাক্ষীদের ব্যাপারে ওই দরখাস্ত কেন করেছিলেন। তখন তিনি বনেল, ‘দ্য অর্ডার হ্যাস বিন পাসড। উই ক্যান্ট থিঙ্ক হোয়াই ইট হ্যাস নট বিন কমপ্লাইড।’ আমরা আদেশ পাশ করেছি। সে আদেশ কেন মানা হয়নি।
ট্রাইব্যুানেলর অপর বিচারপতি সাক্ষী হাজির করতে না পারা বিষয়ে রাষ্ট্রপক্ষের আইনজীবীদের উদ্দেশ্য করে বলেন, এটা আপনাদের কেস এবং আপনাদের দায়িত্ব অভিযোগ প্রমান করা। সাক্ষী কেন আনতে পারেননি তার ব্যাখ্যা দেয়ার বিষয় নয় এটি। তিনি বলেন, আপনারা কয়জন সাক্ষী আনতে পারবেন সে বিষয়ে নির্দিষ্ট করে জানাতে পারলে আমাদের জন্য সুবিধা হয়। কাকে আনবেন সে বিষয়ে স্ক্রুটিনি করলে ভাল। আর কোনদিন কোন সাক্ষী আনবেন সে বিষয়ে আসামী পক্ষকে জানিয়ে দিলে তা ওনাদের জন্যও ভাল হয়।
মাওলানা সাঈদীর বিরুদ্ধে কিছুই বললেননা সাক্ষী
আজ অনির্ধারিতভাবে সাক্ষ্য দেন যশোরের হোসেন আলী। বয়স ৬৬/৬৭। রাষ্ট্রপক্ষের আইনজীবী সাক্ষীকে প্রশ্ন করেন, ১৯৭০ সালে বাঘারপাড়া নির্বাচনী জনসভা সম্পর্কে কিছু বলেন।
সাক্ষী বলেন, ১৯৭০ সালের নির্বাচনের সময় বাগারপাড়া স্কুল মাঠে একটি সভা হয়। সেখানে আমি উপস্থিত ছিলাম না। তাই সভা সম্পর্কে কোনো কিছু আমার জানা নেই। আমি শুনেছি একটি সভা হয়েছিলো।
তখন রাষ্ট্রপক্ষের আইনজীবীরা প্রশ্ন করেন, কি শুনেছেন তাই বলেন।
জবাবে সাক্ষী বলেন, শুনেছি সভা হয়েছে। কিন্তু এর বেশি কিছু জানি না।
রাষ্ট্রপক্ষের আইনজীবীরা আবার প্রশ্ন করেন, সভায় কারা ছিলো?
সাক্ষী হোসনে আলী তখন বলেন, সভায় আমি ছিলামনা । কারা ছিল জানিনা।
এরপর এ বিষয়ে আরো প্রশ্ন করতে চাইলে ট্রাইব্যুনাল বলেন, সাক্ষী বলেছেন কিছু জানেননা।
এরপর অপর এক প্রশ্নের জবাবে সাক্ষী বলেন, দখেছি রওশন আলীর বাড়িতে সাঈদী সাহেব আসা-যাওয়া করতেন। তবে যুদ্ধের আগে না পরে তা খেয়াল নেই।
মাওলানা সাঈদীর আইনজীবী মিজানুল ইসলাম আদালতের কার্যক্রম শেষে সাংবাদিকদের বলেন, রাষ্ট্রপক্ষের আইনজীবীরা সাক্ষীদের দিয়ে যা বলাতে চেয়েছিল সাক্ষী তা সমর্থন করেন নাই। তিনি অভিযোগ করেন, ট্রাইব্যুনালের কাছে জমা দেয়া হোসেন আলীর প্রাথমিক জবানবন্দীতে বলা হযেছে, যুদ্ধের পর মাওলানা সাঈদী গোপনে যশোরে পালিয়ে গিয়ে আত্মপোগন করে ছিলেন।
কিন্তু আজকের জবানবন্দীতে হোসেন আলী তা স্বীকার করেন নি । অথচ রাষ্ট্রপক্ষের আইনজীবীরা তাকে দিয়ে ‘সাঈদী স্বাধীনতার পর যশোরে পালিয়ে গিয়েছিলেন’ বলে বলাতে চেয়েছেন।
জনকণ্ঠের বিরুদ্ধে অভিযোগ :গত ২ ফেব্রুয়ারি দৈনিক জনকণ্ঠে প্রকাশিত রিপোর্ট সম্পর্কে আজ মাওলানা সাঈদীর আইনজীবীরা ট্রাইব্যুনালে অভিযোগ করেছেন।
প্রকাশিত রিপোর্টের হেড লাইন ছিলো- “ঘরে ফিরেই জানতে পারি সাঈদী আমার স্ত্রীকে ধর্ষণ করেছে।”
মাওলানা সাঈদীর আইনজীবী মিজানুল ইসলাম আদালতে দাবি করেন, সাক্ষী এ জাতীয় কোনো কথা বলেন নাই। এ ধরনের রিপোর্ট সাংবাদিকতা এবং নীতি নৈতিকতা বিরোধী। তিনি এ বিষয়ে ব্যবস্থা গ্রহনের দাবি জানান আদালতে। ট্রাইব্যুনালের চেয়ারম্যান বিচারপতি নিজামুল হক বলেন, আমরা সংবাদটি দেখেছি । তিনি বলেন, বিষয়টি অনাকাক্সিত। এটি উচিত হয়নি। বিচারপতি নিজামুল হক বলেন, ‘আমার ঠিক কোন শব্দ প্রয়োগ করা উচিত ?’
এরপর তিনি বলেন “আনওয়ারর্যানটেড”।
মাওলানা সাঈদীর আইনজীবী পত্রিকাটির প্রতি সংশোধনী ছাপার অনুরোধ জানান আদালতে। বিচারপতি নিজামুল হক তখন বলেন, আমরা এ বিষয়ে বিবেচনা করবো কি করা যায়।
বিচারপতি নিজামুল হক সাংবাদিকদের উদ্দেশ্য করে বলেন, আপনারা কোন কিছু লেখার সময় সন্দেহজনক হলে তা বাদ দিবেন। কিন্তু ভুল লিখবেননা।
কোন মন্তব্য নেই:
একটি মন্তব্য পোস্ট করুন