মেহেদী হাসান, ১৩/২/২০১২, সোমবার
ট্রাইব্যুনালের তদন্ত সংস্থা বাংলা একাডেমী থেকে ১৯৭০, ১৯৭১ এবং ১৯৭২ সালের বেশ কিছু পত্রিকা জব্দ করেছে। জব্দকৃত এসব পত্রিকার বিভিন্ন খবরের তালিকা মাওলানা সাঈদীর বিরুদ্ধে গতকাল আদালতে উপস্থাপন করা হয়েছে । উপস্থাপতি ৭৪ টি খবরের একটিরও শিরোনামে মাওলানা সাঈদীর নাম নেই বলে স্বীকার করেছেন জব্দ তালিকার সাক্ষী। মাওলানা সাঈদীর আইনজীবী জানান, খবরের ভেতরেও মাওলানা সাঈদীর নাম নেই।
রাষ্ট্রপক্ষ মাওলানা সাঈদীর বিরুদ্ধে জব্দ তালিকার একজন সাক্ষী হাজির করেন। তিনি হলেন বাংলা একাডেমীর ভারপ্রাপ্ত চিফ লাইব্রেরিয়ান মোবারক হোসেন। তদন্ত সংস্থা ১৯৭০, ৭১ এবং ৭২ সালের দৈনিক আজাদ, দৈনিক পাকিস্তানসহ ছয়টি পত্রিকার যেসব খবর আইটেম জব্দ করেন সেগুলো চিফ লাইব্রেরিয়ানের তত্ত্বাবধানেই রাখা হয়েছে। চিফ লাইব্রেরিয়ান সাক্ষ্য দিয়ে বলেন, এগুলো তদন্ত কর্মকর্তা হেলাল উদ্দিন খান মামলা শুরুর পর তার কাছ থেকে সংগ্রহ করেছেন এবং তার জিম্মায় এগুলো রয়েছে। আদালত চাইলে তিনি এগুলো আদালতে জমা দিতে পারবেন।
মাওলানা সাঈদীর আইনজীবী দুই তিনটি প্রশ্নের মাধ্যমে তাকে জেরা করেন। জেরায় এক প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, জব্দকৃত যেসব খবরের তালিকা আদালতে উপস্থাপন করা হয়েছে তার একটিরও শিরোনামে মাওলানা সাঈদীর নাম নেই। মাওলানা সাঈদীর আইনজীবী মনজুর আহমদ আনছারী এবং কফিল উদ্দিন চৌধুরী বলেন, শুধু শিরোনাম নয়, কোন একটি খবরের মধ্যেও মাওলানা সাঈদীর নাম নেই। এসব খবরে মাওলানা সাঈদীর অপরাধ সংশ্লিষ্ট কোন তথ্যও নেই। জব্দকৃত ৭৪টি খবরের মধ্যে দুই তিনটি খবর রয়েছে বরিশাল এবং পিরোজপুর কেন্দ্রিক। এর মধ্যে ১৯৭১ সালে ৮ মে দৈনিক আজাদ পত্রিকার একটি খবরের হেডলাইনল হল “পিরোজপুর মহকুমায় শান্তি কমিটি গঠিত” । এ খবরের মধ্যে মাওলানা সাঈদীর কোন নাম নেই। মাওলানা সাঈদী যদি সেসময় সেখানকার রাজাকার বা পিস কমিটির কেউ হতেন তাহলে তার নাম থাকার কথা এ খবরের মধ্যে। কিন্তু নেই। ১৯৭২ সালের ৩ ফেব্রুয়ারি দৈনিক আজাদ পত্রিকার আরেকটি খবরের হেডলাইন হল “বর্বতার রেকর্ড: ভাগিরথীকে নির্মমভাবে হত্যা করা হয়”। এ খবরেও মাওলানা সাঈদীর নাম নেই (ভাগিরথী হত্যায় মাওলানা সাঈদীকে জড়িয়ে বেশ কয়েকজন সাক্ষী সাক্ষ্য দিয়েছেন)।
সাক্ষী আনতে না পারায় আবারো মুলতবি
ঘটনার সাক্ষী আনতে না পারায় মাওলানা দেলাওয়ার হোসাইন সাঈদীর বিচার কার্যক্রম আবারো মুলতবি করা হল। সাক্ষীর অভাবে এর আগে পরপর দুই দফা বিচার কার্যক্রম মুলতবী করা হয়। সর্বশেষ এক সপ্তাহ বিরতির পর আজ সকালে আদালতের কার্যক্রম শুরু হয়। কিন্তু মাওলানা সাঈদীর বিরুদ্ধে আজো কোন ঘটনার সাক্ষী আনতে পারেননি রাষ্ট্রপক্ষের আইনজীবীরা। ফলে
জব্দ তালিকার সাক্ষীর সাক্ষ্য গ্রহণ শেষে আবারো বৃহষ্পতিবার পর্যন্ত মুলতবি করেন আদালত। আগামী বৃহষ্পতিবার সাংবাদিক আবেদ খানের সাক্ষ্য দেয়ার কথা রয়েছে মাওলানা সাঈদীর বিরুদ্ধে।
সকালে আদালতের কার্যক্রম শুরু হলে আসামী পক্ষের আইনজীবী তাজুল ইসলাম আদালতকে বলেন, তাদের টিমের অন্যতম প্রধান আইনজীবী মিজানুল ইসলাম (যিনি মূলত মাওলানা সাঈদীর বিরুদ্ধে সাক্ষীদের জেরার কাজ করে থাকেন) রাজশাহী থেকে আসার পথে দুর্ঘটনার শিকার হয়েছেন। তার কোমরের হাড়ে ফাটল ধরা পড়েছে। তার সুস্থ হয়ে কোর্টে আসতে কমপক্ষে এক সপ্তাহ সময় লাগবে। তাই তিনি মাওলানা সাঈদীর বিচার কার্যক্রম এক সপ্তাহ পর্যন্ত মুলতবি চান। আদালত তখন বলেন আপনাদের তো আরো অনেক আইনজীবী আছেন। তখন তাজুল ইসলাম বলেন, মিজান সাহেবই জেরার কাজটা করেন প্রধানত এবং তিনিই সাক্ষীদের বিষয়ে প্রস্তুতি নিয়েছেন। অন্যদের সেভাবে প্রস্তুতি নাই। তখন আদালত বলেন, আমরা দেখব বিবেচনা করে। এরপর মাওলানা মতিউর রহমান নিজামী এবং সালাউদ্দিন কাদের চৌধুরীর মামলা বিষয়ে কার্যক্রম শুরু হয়।
মাওলানা নিজামী এবং সালাউদ্দিন কাদের চৌধুরীর মামলার কার্যক্রম শেষে মাওলানা সাঈদীর বিচার কার্যক্রম শুরু হয়। মাওলানা সাঈদীর বিরুদ্ধে রাষ্ট্রপক্ষ কোন ঘটনার সাক্ষী হাজির করতে না পারায় এবং সিজার লিস্টোর সাক্ষী হাজির করায় তার সাক্ষ্য গ্রহণ করেন আদালত। মাওলানা সাঈদীর আইনজীবী মনজুর আহমদ দুই তিনটি প্রশ্নের মাধ্যমে তার জেরা শেষ করেন। এরপর রাষ্ট্রপক্ষ আগামীকাল এবং বৃহষ্পতিবারের আগে আর কোন সাক্ষী হাজির করতে পারবেনা মর্মে জানানোর পর মাওলানা সাঈদীর আইনজীবীরা রোববার পর্যন্ত মূলতবি চান। মাওলানা সাঈদীর আইনজীবী তাজুল ইসলাম বলেন, এর আগে সাক্ষীর বেড়াতে যাওয়া, অসুস্থতাসহ নানা কারনে রাষ্ট্রপক্ষ সাক্ষী হাজির করতে পারেনি। তখন যদি বিচার বিলম্বিত হবার ঘটনা না ঘটে তাহলে আমাদের অন্যতম প্রধান আইনজীবী দুর্ঘটনার শিকার হওয়ার কারনে মুলতবি চাওয়ায়ও বিচার বিলম্বিত হবেনা আশা করি।
তবে আদালত রোববার পর্যন্ত মুলতবী করতে রাজি হননি। বৃহষ্পতিবার পর্যন্ত মুলতবি করা হয়।
গত ২রা ফেব্রুয়ারি মাওলানা সাঈদীর বিরুদ্ধে তিনজন সাক্ষী হাজির করার কথা থাকলেও একজনকেও হাজির করতে পারেননি রাষ্ট্রপক্ষ। ফলে ৭ ফেব্রুয়ারি পর্যন্ত মাওলানা সাঈদীর বিচার মুলতবী করা হয়। ৭ ফেব্রুয়ারি আবার আদালতের কার্যক্রম শুরু হলে সেদিনও রাষ্ট্রপক্ষ নির্ধারিত সাক্ষী হাজিরে ব্যর্থ হয়। হোসেন আলী নামে যশোরের একজন অনির্ধারিত সাক্ষী হাজির করা হয় এবং তিনি তার তিন/চার মিনিটের সাক্ষ্যে মাওলানা সাঈদীর বিরুদ্ধে কিছুই বলেননি। সাক্ষীর অভাবে ঐদিন আবার ১৩ ফেব্রুয়ারি পর্যন্ত মাওলানা সাঈদীর বিচার মুলতবি করতে বাধ্য হয় ট্রাইব্যুনাল। গতকাল আবার আদালতের কার্যক্রম শুরু হলে রাষ্ট্রপক্ষ কোন ঘটনার সাক্ষী আনতে পারেনি। রাষ্ট্রপক্ষের আইনজীবীরা আদালতে জানান, তাদের পরবর্তী সাক্ষী সাংবাদিক আবেদ খান। তিনি অত্যন্ত ব্যস্ত মানুষ। বৃহষ্পতিবার তিনি আসতে পারবেন। ফলে বৃহষ্পতিবার পর্যন্ত আদালত মুলতবি করা হয়।
জব্দ তালিকার সাক্ষীর জবানবন্দী
আমার নাম মোঃ মোবারক হোসেন, বয়স ৪৭ বৎসর। আমি বাংলা একাডেমীতে প্রধান গ্রন্থাগারিক (ভারপ্রাপ্ত) হিসাবে কর্মরত আছি। ৩০/০৩/২০১১ইং তারিখে আমি একই প্রতিষ্ঠানে একই পদে কর্মরত ছিলাম। ৩০/০৩/২০১১ইং তারিখে অত্র মামলার তদন্তকারী কর্মকর্তা হেলাল উদ্দিন সাহেব আমার
অফিসে গিয়ে কিছু কাগজপত্র জব্দ করে আমার জিম্মায় প্রদান করেন। এই সেই জিম্মানামা, প্রদর্শনী- ২৯ । উক্ত জিম্মানামায় মোট ১ হতে ২৪ আইটেমগুলি ১৯৭২ সালের বিভিন্ন পত্রিকার। সিজকৃত আলামতগুলি অদ্য আদালতে এনেছি। ট্রাইব্যুনালের আদেশ মোতাবেক পুনরায় ট্রাইব্যুনালে উপস্থাপন করতে পারব।
২৮/০৩/২০১১ইং তারিখে তদন্তকারী কর্মকর্তা হেলাল উদ্দিন সাহেব আমার অফিসে গিয়ে কিছু কাগজপত্র জব্দ করে আমার জিম্মায় রাখেন। এই সেই জিম্মানামা প্রদর্শনী ৩০/১ (ঠড়ষ-১-চ-৫৫)। এই জিম্মানামায় ১-১৬ নম্বর আইটেম আছে। সিজকৃত আলামতগুলি ১৯৭০-১৯৭১ সালের বিভিন্ন দৈনিক পত্রিকার।
২৯/০৩/২০১১ইং তারিখে তদন্তকারী কর্মকর্তা আমার অফিসে গিয়ে কিছু কাগজপত্র জব্দ করে আমার জিম্মায় দিয়ে আসেন। এই সেই জিম্মানামা প্রদর্শনী-৩১ এবং জিম্মানায় এই আমার দস্তখত প্রদর্শনী-৩১/১ (ঠড়ষ-১-চ-৮৪)। জিম্মানামার আলামতগুলি ১৯৭১-১৯৭২ সালের বিভিন্ন দৈনিক পত্রিকার। এ জিম্মানামায় ১২টি আইটেম রয়েছে।
০৩/০৪/২০১১ইং তারিখে তদন্তকারী কর্মকর্তা আমার অফিসে গিয়া ১৯৭১ সালের বিভিন্ন দৈনিক পত্রিকার জব্দ করে আমার জিম্মায় দিয়ে আসেন। এই সেই জিম্মানামা প্রদর্শনী-৩২ । এই জিম্মানামায় মোট ১-৯টি আইটেম আছে। সিজকৃত আলামতগুলি অদ্য আমি ট্রাইব্যুনালে এনেছি। ট্রাইব্যুনালের আদেশ মোতাবেক আলামতগুলি আমি পুনরায় ট্রাইব্যুনালে উপস্থাপন করিতে পারব।
০১/০৩/২০১১ইং তারিখে তদন্তকারী কর্মকর্তা আমার অফিসে গিয়ে কিছু দৈনিক পত্রিকা আমার জিম্মায় দিয়ে আসেন। এই সেই জিম্মানামা প্রদর্শনী-৩৩ এবং ইহাতে এই আমার দস্তখত প্রদর্শনী-৩৩/১ (ঠড়ষ-২চ-১৯৭)। এই জিম্মানামায় ১৯৭১-১৯৭২ সালের বিভিন্ন পত্রিকার বিভিন্ন তারিখের মোট ১৩টি আইটেম আছে। সিজকৃত আইটেমগুলি অদ্য আমি ট্রাইব্যুনালে এনেছি। ট্রাইব্যুনালের আদেশ মোতাবেক আলামতগুলি আমি পুনরায় ট্রাইব্যুনালে উপস্থাপন করিতে পারিব।
জেরা
আইনজীবী : পত্রিকাগুলোর খবরের বস্তুনিষ্ঠতা সম্পর্কে আপনার কোন ধারণা নেই।
সাক্ষী : না।
আইনজীবী : বিভিন্ন পত্রিকার যে ৫টি জিম্মানামা এবং আপনার জিম্মায় থাকা জব্দকৃত পত্রিকার কোন খবরের শিরোনামেই মাওলানা সাঈদী সাহেবের নাম নেই।
সাক্ষী : জিম্মানামার বর্ণিত কোন পত্রিকার শিরোনামেই দেলাওয়ার হোসেন সাঈদী সাহেবের নাম নাই।
ট্রাইব্যুনালের তদন্ত সংস্থা বাংলা একাডেমী থেকে ১৯৭০, ১৯৭১ এবং ১৯৭২ সালের বেশ কিছু পত্রিকা জব্দ করেছে। জব্দকৃত এসব পত্রিকার বিভিন্ন খবরের তালিকা মাওলানা সাঈদীর বিরুদ্ধে গতকাল আদালতে উপস্থাপন করা হয়েছে । উপস্থাপতি ৭৪ টি খবরের একটিরও শিরোনামে মাওলানা সাঈদীর নাম নেই বলে স্বীকার করেছেন জব্দ তালিকার সাক্ষী। মাওলানা সাঈদীর আইনজীবী জানান, খবরের ভেতরেও মাওলানা সাঈদীর নাম নেই।
রাষ্ট্রপক্ষ মাওলানা সাঈদীর বিরুদ্ধে জব্দ তালিকার একজন সাক্ষী হাজির করেন। তিনি হলেন বাংলা একাডেমীর ভারপ্রাপ্ত চিফ লাইব্রেরিয়ান মোবারক হোসেন। তদন্ত সংস্থা ১৯৭০, ৭১ এবং ৭২ সালের দৈনিক আজাদ, দৈনিক পাকিস্তানসহ ছয়টি পত্রিকার যেসব খবর আইটেম জব্দ করেন সেগুলো চিফ লাইব্রেরিয়ানের তত্ত্বাবধানেই রাখা হয়েছে। চিফ লাইব্রেরিয়ান সাক্ষ্য দিয়ে বলেন, এগুলো তদন্ত কর্মকর্তা হেলাল উদ্দিন খান মামলা শুরুর পর তার কাছ থেকে সংগ্রহ করেছেন এবং তার জিম্মায় এগুলো রয়েছে। আদালত চাইলে তিনি এগুলো আদালতে জমা দিতে পারবেন।
মাওলানা সাঈদীর আইনজীবী দুই তিনটি প্রশ্নের মাধ্যমে তাকে জেরা করেন। জেরায় এক প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, জব্দকৃত যেসব খবরের তালিকা আদালতে উপস্থাপন করা হয়েছে তার একটিরও শিরোনামে মাওলানা সাঈদীর নাম নেই। মাওলানা সাঈদীর আইনজীবী মনজুর আহমদ আনছারী এবং কফিল উদ্দিন চৌধুরী বলেন, শুধু শিরোনাম নয়, কোন একটি খবরের মধ্যেও মাওলানা সাঈদীর নাম নেই। এসব খবরে মাওলানা সাঈদীর অপরাধ সংশ্লিষ্ট কোন তথ্যও নেই। জব্দকৃত ৭৪টি খবরের মধ্যে দুই তিনটি খবর রয়েছে বরিশাল এবং পিরোজপুর কেন্দ্রিক। এর মধ্যে ১৯৭১ সালে ৮ মে দৈনিক আজাদ পত্রিকার একটি খবরের হেডলাইনল হল “পিরোজপুর মহকুমায় শান্তি কমিটি গঠিত” । এ খবরের মধ্যে মাওলানা সাঈদীর কোন নাম নেই। মাওলানা সাঈদী যদি সেসময় সেখানকার রাজাকার বা পিস কমিটির কেউ হতেন তাহলে তার নাম থাকার কথা এ খবরের মধ্যে। কিন্তু নেই। ১৯৭২ সালের ৩ ফেব্রুয়ারি দৈনিক আজাদ পত্রিকার আরেকটি খবরের হেডলাইন হল “বর্বতার রেকর্ড: ভাগিরথীকে নির্মমভাবে হত্যা করা হয়”। এ খবরেও মাওলানা সাঈদীর নাম নেই (ভাগিরথী হত্যায় মাওলানা সাঈদীকে জড়িয়ে বেশ কয়েকজন সাক্ষী সাক্ষ্য দিয়েছেন)।
সাক্ষী আনতে না পারায় আবারো মুলতবি
ঘটনার সাক্ষী আনতে না পারায় মাওলানা দেলাওয়ার হোসাইন সাঈদীর বিচার কার্যক্রম আবারো মুলতবি করা হল। সাক্ষীর অভাবে এর আগে পরপর দুই দফা বিচার কার্যক্রম মুলতবী করা হয়। সর্বশেষ এক সপ্তাহ বিরতির পর আজ সকালে আদালতের কার্যক্রম শুরু হয়। কিন্তু মাওলানা সাঈদীর বিরুদ্ধে আজো কোন ঘটনার সাক্ষী আনতে পারেননি রাষ্ট্রপক্ষের আইনজীবীরা। ফলে
জব্দ তালিকার সাক্ষীর সাক্ষ্য গ্রহণ শেষে আবারো বৃহষ্পতিবার পর্যন্ত মুলতবি করেন আদালত। আগামী বৃহষ্পতিবার সাংবাদিক আবেদ খানের সাক্ষ্য দেয়ার কথা রয়েছে মাওলানা সাঈদীর বিরুদ্ধে।
সকালে আদালতের কার্যক্রম শুরু হলে আসামী পক্ষের আইনজীবী তাজুল ইসলাম আদালতকে বলেন, তাদের টিমের অন্যতম প্রধান আইনজীবী মিজানুল ইসলাম (যিনি মূলত মাওলানা সাঈদীর বিরুদ্ধে সাক্ষীদের জেরার কাজ করে থাকেন) রাজশাহী থেকে আসার পথে দুর্ঘটনার শিকার হয়েছেন। তার কোমরের হাড়ে ফাটল ধরা পড়েছে। তার সুস্থ হয়ে কোর্টে আসতে কমপক্ষে এক সপ্তাহ সময় লাগবে। তাই তিনি মাওলানা সাঈদীর বিচার কার্যক্রম এক সপ্তাহ পর্যন্ত মুলতবি চান। আদালত তখন বলেন আপনাদের তো আরো অনেক আইনজীবী আছেন। তখন তাজুল ইসলাম বলেন, মিজান সাহেবই জেরার কাজটা করেন প্রধানত এবং তিনিই সাক্ষীদের বিষয়ে প্রস্তুতি নিয়েছেন। অন্যদের সেভাবে প্রস্তুতি নাই। তখন আদালত বলেন, আমরা দেখব বিবেচনা করে। এরপর মাওলানা মতিউর রহমান নিজামী এবং সালাউদ্দিন কাদের চৌধুরীর মামলা বিষয়ে কার্যক্রম শুরু হয়।
মাওলানা নিজামী এবং সালাউদ্দিন কাদের চৌধুরীর মামলার কার্যক্রম শেষে মাওলানা সাঈদীর বিচার কার্যক্রম শুরু হয়। মাওলানা সাঈদীর বিরুদ্ধে রাষ্ট্রপক্ষ কোন ঘটনার সাক্ষী হাজির করতে না পারায় এবং সিজার লিস্টোর সাক্ষী হাজির করায় তার সাক্ষ্য গ্রহণ করেন আদালত। মাওলানা সাঈদীর আইনজীবী মনজুর আহমদ দুই তিনটি প্রশ্নের মাধ্যমে তার জেরা শেষ করেন। এরপর রাষ্ট্রপক্ষ আগামীকাল এবং বৃহষ্পতিবারের আগে আর কোন সাক্ষী হাজির করতে পারবেনা মর্মে জানানোর পর মাওলানা সাঈদীর আইনজীবীরা রোববার পর্যন্ত মূলতবি চান। মাওলানা সাঈদীর আইনজীবী তাজুল ইসলাম বলেন, এর আগে সাক্ষীর বেড়াতে যাওয়া, অসুস্থতাসহ নানা কারনে রাষ্ট্রপক্ষ সাক্ষী হাজির করতে পারেনি। তখন যদি বিচার বিলম্বিত হবার ঘটনা না ঘটে তাহলে আমাদের অন্যতম প্রধান আইনজীবী দুর্ঘটনার শিকার হওয়ার কারনে মুলতবি চাওয়ায়ও বিচার বিলম্বিত হবেনা আশা করি।
তবে আদালত রোববার পর্যন্ত মুলতবী করতে রাজি হননি। বৃহষ্পতিবার পর্যন্ত মুলতবি করা হয়।
গত ২রা ফেব্রুয়ারি মাওলানা সাঈদীর বিরুদ্ধে তিনজন সাক্ষী হাজির করার কথা থাকলেও একজনকেও হাজির করতে পারেননি রাষ্ট্রপক্ষ। ফলে ৭ ফেব্রুয়ারি পর্যন্ত মাওলানা সাঈদীর বিচার মুলতবী করা হয়। ৭ ফেব্রুয়ারি আবার আদালতের কার্যক্রম শুরু হলে সেদিনও রাষ্ট্রপক্ষ নির্ধারিত সাক্ষী হাজিরে ব্যর্থ হয়। হোসেন আলী নামে যশোরের একজন অনির্ধারিত সাক্ষী হাজির করা হয় এবং তিনি তার তিন/চার মিনিটের সাক্ষ্যে মাওলানা সাঈদীর বিরুদ্ধে কিছুই বলেননি। সাক্ষীর অভাবে ঐদিন আবার ১৩ ফেব্রুয়ারি পর্যন্ত মাওলানা সাঈদীর বিচার মুলতবি করতে বাধ্য হয় ট্রাইব্যুনাল। গতকাল আবার আদালতের কার্যক্রম শুরু হলে রাষ্ট্রপক্ষ কোন ঘটনার সাক্ষী আনতে পারেনি। রাষ্ট্রপক্ষের আইনজীবীরা আদালতে জানান, তাদের পরবর্তী সাক্ষী সাংবাদিক আবেদ খান। তিনি অত্যন্ত ব্যস্ত মানুষ। বৃহষ্পতিবার তিনি আসতে পারবেন। ফলে বৃহষ্পতিবার পর্যন্ত আদালত মুলতবি করা হয়।
জব্দ তালিকার সাক্ষীর জবানবন্দী
আমার নাম মোঃ মোবারক হোসেন, বয়স ৪৭ বৎসর। আমি বাংলা একাডেমীতে প্রধান গ্রন্থাগারিক (ভারপ্রাপ্ত) হিসাবে কর্মরত আছি। ৩০/০৩/২০১১ইং তারিখে আমি একই প্রতিষ্ঠানে একই পদে কর্মরত ছিলাম। ৩০/০৩/২০১১ইং তারিখে অত্র মামলার তদন্তকারী কর্মকর্তা হেলাল উদ্দিন সাহেব আমার
অফিসে গিয়ে কিছু কাগজপত্র জব্দ করে আমার জিম্মায় প্রদান করেন। এই সেই জিম্মানামা, প্রদর্শনী- ২৯ । উক্ত জিম্মানামায় মোট ১ হতে ২৪ আইটেমগুলি ১৯৭২ সালের বিভিন্ন পত্রিকার। সিজকৃত আলামতগুলি অদ্য আদালতে এনেছি। ট্রাইব্যুনালের আদেশ মোতাবেক পুনরায় ট্রাইব্যুনালে উপস্থাপন করতে পারব।
২৮/০৩/২০১১ইং তারিখে তদন্তকারী কর্মকর্তা হেলাল উদ্দিন সাহেব আমার অফিসে গিয়ে কিছু কাগজপত্র জব্দ করে আমার জিম্মায় রাখেন। এই সেই জিম্মানামা প্রদর্শনী ৩০/১ (ঠড়ষ-১-চ-৫৫)। এই জিম্মানামায় ১-১৬ নম্বর আইটেম আছে। সিজকৃত আলামতগুলি ১৯৭০-১৯৭১ সালের বিভিন্ন দৈনিক পত্রিকার।
২৯/০৩/২০১১ইং তারিখে তদন্তকারী কর্মকর্তা আমার অফিসে গিয়ে কিছু কাগজপত্র জব্দ করে আমার জিম্মায় দিয়ে আসেন। এই সেই জিম্মানামা প্রদর্শনী-৩১ এবং জিম্মানায় এই আমার দস্তখত প্রদর্শনী-৩১/১ (ঠড়ষ-১-চ-৮৪)। জিম্মানামার আলামতগুলি ১৯৭১-১৯৭২ সালের বিভিন্ন দৈনিক পত্রিকার। এ জিম্মানামায় ১২টি আইটেম রয়েছে।
০৩/০৪/২০১১ইং তারিখে তদন্তকারী কর্মকর্তা আমার অফিসে গিয়া ১৯৭১ সালের বিভিন্ন দৈনিক পত্রিকার জব্দ করে আমার জিম্মায় দিয়ে আসেন। এই সেই জিম্মানামা প্রদর্শনী-৩২ । এই জিম্মানামায় মোট ১-৯টি আইটেম আছে। সিজকৃত আলামতগুলি অদ্য আমি ট্রাইব্যুনালে এনেছি। ট্রাইব্যুনালের আদেশ মোতাবেক আলামতগুলি আমি পুনরায় ট্রাইব্যুনালে উপস্থাপন করিতে পারব।
০১/০৩/২০১১ইং তারিখে তদন্তকারী কর্মকর্তা আমার অফিসে গিয়ে কিছু দৈনিক পত্রিকা আমার জিম্মায় দিয়ে আসেন। এই সেই জিম্মানামা প্রদর্শনী-৩৩ এবং ইহাতে এই আমার দস্তখত প্রদর্শনী-৩৩/১ (ঠড়ষ-২চ-১৯৭)। এই জিম্মানামায় ১৯৭১-১৯৭২ সালের বিভিন্ন পত্রিকার বিভিন্ন তারিখের মোট ১৩টি আইটেম আছে। সিজকৃত আইটেমগুলি অদ্য আমি ট্রাইব্যুনালে এনেছি। ট্রাইব্যুনালের আদেশ মোতাবেক আলামতগুলি আমি পুনরায় ট্রাইব্যুনালে উপস্থাপন করিতে পারিব।
জেরা
আইনজীবী : পত্রিকাগুলোর খবরের বস্তুনিষ্ঠতা সম্পর্কে আপনার কোন ধারণা নেই।
সাক্ষী : না।
আইনজীবী : বিভিন্ন পত্রিকার যে ৫টি জিম্মানামা এবং আপনার জিম্মায় থাকা জব্দকৃত পত্রিকার কোন খবরের শিরোনামেই মাওলানা সাঈদী সাহেবের নাম নেই।
সাক্ষী : জিম্মানামার বর্ণিত কোন পত্রিকার শিরোনামেই দেলাওয়ার হোসেন সাঈদী সাহেবের নাম নাই।
কোন মন্তব্য নেই:
একটি মন্তব্য পোস্ট করুন