মেহেদী হাসান, ২৩/১০/২০১২, মঙ্গলবার
আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনাল-১ এ আজ চাঞ্চল্যকর ঘটনার অবতারনা হয়েছে। রাষ্ট্রপক্ষের এক সাক্ষী সাক্ষ্য দিলেন মাওলানা দেলাওয়ার হোসাইন সাঈদীর পক্ষে। সাক্ষীর নাম গণেশ চন্দ্র সাহা। ১৯৭১ সালে পিরোজপুরে বর্বরোচিত এবং নিমর্ম হত্যার শিকার শহীদ ভাগীরথীর ছেলে এই গণেশ চন্দ্র সাহা।
মাওলানা সাঈদীর বিরুদ্ধে ভাগীরথীকে হত্যায় সহযোগিতার অভিযোগ এনেছে রাষ্ট্রপক্ষ। যে ভাগীরথীকে হত্যায় সহযোগিতার অভিযোগ মাওলানা সাঈদীর বিরুদ্ধে সেই ভাগিরথীর ছেলে এসে সাক্ষ্য দিলেন মাওলানা সাঈদীর পক্ষে। তিনি বললেন মাওলানা সাঈদী তার মাকে মারেননি। পাকিস্তান আর্মিরাই তার মাকে মেরেছে।
কে এই গণেশ?
গণেশ চন্দ্র সাহা শুধু যে রাষ্ট্রপক্ষের সাক্ষী তাই নয়। যে ১৫ জন সাক্ষীর জবানবন্দী তাদের অনুপস্থিতিতে ট্রাইব্যুনাল সাক্ষ্য হিসেবে গ্রহণ করেছেন সেই ১৫ জনেরও একজন এই গণেশ চন্দ্র সাহা।
গত ২০ মার্চ রাষ্ট্রপক্ষ থেকে মাওলানা সাঈদীর বিরুদ্ধে ৪৬ জন সাক্ষীর বিষয়ে একটি দরখাস্ত দাখিল করা হয় ট্রাইব্যুনালে । দরখাস্তে নিবেদন করা হয় ৪৬ জন সাক্ষীকে ট্রাইব্যুনালে হাজির করা তাদের পক্ষে আদৌ সম্ভব নয়। তাই এসব সাক্ষী তদন্ত কর্মকর্তার কাছে যে জবানবন্দী দিয়েছে তা তাদের অনুপস্থিতিতে সাক্ষ্য হিসেবে গ্রহণ করা হোক।
৪৬ জন সাক্ষীর মধ্যে ১৪ জন সম্পর্কে দরখাস্তে রাষ্ট্রপক্ষ উল্লেখ করেছিল আসামীর (মাওলানা সাঈদী) পক্ষ অবলম্বনকারী পিরোজপুরের অস্ত্রধারী সন্ত্রাসী গ্রুপ কর্তৃক সাক্ষীদের বাড়িতে গিয়ে হুমকির প্রেক্ষিতে ভয়ে ভীত হয়ে তারা আত্মপোগন করেছে। তাদেরকে খুঁজে পাওয়া যাচ্ছেনা। তাই তাদের হাজির করা সম্ভব নয়।
যে ১৪ জন সম্পর্কে রাষ্ট্রপক্ষ এ দাবি করেছিল সেই ১৪ জনের একজন হলেন এই গণেশ চন্দ্র ।
রাষ্ট্রপক্ষের আবেদনের প্রেক্ষিতে ট্রাইব্যুনাল গত ২৯ মার্চ ১৫ জন সাক্ষী তদন্ত কর্মকর্তার কাছে যে জবানবন্দী প্রদান করেন তা তাদের অনুপস্থিতিতে সাক্ষ্য হিসেবে গ্রহণ করে আদেশ দেন। গণেশ চন্দ্রের নাম সেই ১৫ জনের তালিকায়ও রয়েছে।
রাষ্ট্রপক্ষ যে সাক্ষীর বিষয়ে বলেছিল মাওলানা সাঈদীর পক্ষাবলম্বনকারী অস্ত্রধারী সন্ত্রাসীদের ভয়ে আত গোপন করেছে, তাদের খুজে পাওয়া যাচ্ছেনা এবং আদৌ হাজির করা সম্ভব নয় সেই গণেশ গতকাল মাওলানা সাঈদীর পক্ষে হাজির হয়ে ট্রাইব্যুনালে সাক্ষ্য দিয়ে চাঞ্চল্য সৃষ্টি করলেন।
ভাগীরথী হত্যা বিষয়ে মাওলানা সাঈদীর বিরুদ্ধে অভিযোগ : মাওলানা সাঈদীর বিরুদ্ধে ২০টি অভিযোগে চার্জ গঠন করা হয়েছে। এর মধ্যে একটি হল ভাগীরথী হত্যায় সহযোগিতার অভিযোগ। এ বিষয়ক অভিযোগে উল্লেখ করা হয়েছে-ভাগীরথী নামে একটি মেয়ে পাকিস্তান সেনা ক্যাম্পে কাজ করত। সাঈদী পাকিস্তানী সেনাদের খবর দেয় যে, ভাগীরথী মুক্তিযোদ্ধাদের চর হিসেবে পাকিস্তানী সেনা ক্যাম্পের খবর মুক্তিযোদ্ধাদের পৌছে দেয়। এরপর পাকিস্তান সেনারা তাকে হত্যা করে লাশ নদীতে ভাসিয়ে দেয়।
গণেশ বিষয়ে রাষ্ট্রপক্ষের অভিযোগ : রাষ্ট্রপক্ষের আইনজীবী সৈয়দ হায়দার আলী অভিযোগ করে বলেন, সাক্ষী গণেশচন্দ্র সাহা পক্ষত্যাগকারী এবং বশিভূত। তাকে পক্ষত্যাগকারী হিসেবে জরো করতে চাই।
ট্রাইব্যুনাল বলেন, সে অনুমতি দেয়া হবেনা। তাকে আর আমরা আপনাদের সাক্ষী মানতে রাজি নই। তাকে আপনারা আনেননি। আমরা তাকে পক্ষত্যাগকারী বা হস্টাইল কোনটাই বলবনা।
এরপর সৈয়দ হায়দার আলী জেরার সময় সাজেশন দিয়ে সাক্ষীকে বলেন, আপনি অর্থের বিনিময়ে পক্ষত্যাগ করেছেন।
রাষ্ট্রপক্ষের এ অভিযোগ বিষয়ে সাংবাদিকরা ট্রাইব্যুনাল শেষে তাজুল ইসলামকে প্রশ্ন করলে তাজুল ইসলাম বলেন, রাষ্ট্রের টাকার অভাব নেই। সমস্ত রাষ্ট্রযন্ত্র তাদের পেছনে কাজ করছে। তারপরও যদি তারা বলে আমরা টাকার বিনিময়ে তাদের সাক্ষী আমাদের পক্ষে এনেছি তাহলে এর চেয়ে মিথ্যা কথা আর কি হতে পারে। তাজুল ইসলাম বলেন, সাক্ষী তাদের কথামত মিথ্যা সাক্ষ্য দিতে রাজি হয়নি সে কারনে তারা তাকে আনেনি ।
গণেশের জবানবন্দী : আমার নাম গনেশ চন্দ্র সাহা। বয়স আনুমানিক ৫১ বছর।
আমার মা ভাগীরথী সাহা ১৯৭১ সালে মৃত্যুবরণ করেন। আমাদের বাড়ীতে মুক্তিযোদ্ধা থাকতো। আমার মা মেলেটারী ক্যাম্পে কাজ করতো। আমার মা ক্যাম্পের খবরা-খবর মুক্তিযোদ্ধাদের পৌঁছিয়ে দিতেন। মতিউর রহমান সরদার, কালু মোল্লা, জলিল মোল্লা, হানিফ খান এরা মুক্তিযোদ্ধা ছিলেন। মতিউর রহমান সরদার বর্তমানে পিরোজপুর উপজেলা চেয়ারম্যান। মা রাতের বেলায় বাসায় আসত এবং সকাল বেলা ক্যাম্পে যেত। মুক্তিযোদ্ধাদের সাথে আমার মা কি কথা বলতেন তা আমাদের শুনতে দিতেন না। কিছুদিন পরে আমাদের গ্রাম বাগমারায় মিলিটারী আসে তখন মুক্তিবাহিনী ও মিলিটারীর মধ্যে গোলাগুলি হয়। ১০ জন মিলিটারী মারা যায়। অস্ত্র ফেলে মিলিটারীরা পিরোজপুরে পালিয়ে যায়। আমার মা ঐ দিন পিরোজপুর ক্যাম্পে ছিলেন। ঐ দিন আমার মা বাড়ীতে ফিরে আসে নাই। তারপর দিন আমরা দুই ভাই মায়ের খোঁজে যাই। আমার অপর ভাইয়ের নাম কার্তিক চন্দ্র সাহা। তিনি বর্তমানে মৃত। বারটার দিকে আমরা শুনি এক মহিলাকে ধরে নিয়ে গেছে, তিনি আমার মা, আরো শুনি মিলিটারী তার কোমরে এবং পায়ে দড়ি দিয়ে বেঁধে গাড়িতে করে টেনে নদীর ধারে নিয়ে গেছে। ওখানে গিয়ে দেখি মায়ের শরীর ক্ষত-বিক্ষত, গাড়ীতে ৫ জন লোক বসা। মাকে মেরে নদীর চড়ে ফেলে রেখেছে। ঐ ৫ জনের ভিতর ৪ জনের হাতে অস্ত্র, একজন ড্রাইভার সবাই খাকী পোশাক পরা। এই ৫ জনকে আমি চিনি না। এরা কি কথা বলতো তা বুঝতে পারি নাই। কিছুক্ষণ পরে তারা গাড়ী চালিয়ে চলে যায়। এদের সাথে কোন রাজাকারকে দেখি নাই। একজন কেও চিনতে পারি নাই।
এরপর মাওলানা সাঈদীর আইনজীবী অ্যাডভোকেট মিজানুল ইসলামের প্রশ্নের জবাবে গণেশ চন্দ্র সাহা বলেন, বছর দেড়েক আগে আমি জানতে পেরেছি এই মামলার আমি সাক্ষী। বৈশাখ মাসের শেষে আমি জানতে পেরেছি। আমার মায়ের মৃত্যুর ব্যাপারে সাংবাদিক এবং কোর্টের লোক আমার কাছে গিয়েছিল। তারা আমার কাছ থেকে এই মৃত্যুর কথা শুনে এসেছে। আমার মায়ের মৃত্যুর ব্যাপারে আজকেই আমি প্রথম সাক্ষ্য দিচ্ছি।
আরেক প্রশ্নের জবাবে গণেশ বলেন, আমি এই মামলায় সাক্ষ্য দেয়ার ব্যাপারে বৈশাখ মাসের শেষে রফিক ভাই আমার সাথে দেখা করেছে। তিনি আমাকে জিজ্ঞাসা করেছেন আপনার মাকে কারা মেরেছে । আমি বলেছি মিলিটারীরা মেরেছে। তখন তিনি বলেছেন, না আরো অন্য মানুষেরাও মেরেছে। সত্য করে বল। তখন আমি বলেছি না শুধু পাক সৈন্যরাই মেরেছে। তখন তিনি বলেন, তুমি দিব্বি করে বল, কারা মেরেছে। আমি বলেছি আমার মায়ের মৃত্যুর কাহিনী নাটক নোভেলে আছে, সবাই দেখেছে, প্রতি বছর হচ্ছে এসব। পাকিস্তানী সৈন্যরাই আমার মাকে মেরেছে। এরপর রফিক ভাই আবারো বলেন, আমার বাবা কি আপনার মাকে মেরেছে? আমি তাকে জিজ্ঞাস করি আপনার বাবা কে? উনি বলেন সাঈদী সাহেব, তখন আমি বলি না উনি আমার মাকে মারেন নি।
জেরা :
প্রশ্ন : রফিকভাইকে কতদিন ধরে রফিক ভাই ডাকেন?
উত্তর : রফিক ভাই একদিনই আমাদের বাড়িতে গিয়েছেন এবং তাকে আমি একদিনই দেখেছি।
প্রশ্ন : সেটা কবে?
উত্তর : বৈশাখ মাসের শেষ দিকে পিরোজপুরে তিনি ওয়াজ অথবা মাফেল করতে যান। তখনকার ঘটনা এটি।
প্রশ্ন : বৈশাখ মাস এখন থেকে কতদিন আগে হবে?
উত্তর : সাত মাস আগে ছিল।
প্রশ্ন : ওয়াজ শুনতে গেছেন?
উত্তর : না।
প্রশ্ন : আপনাকে পেলেন কিভাবে?
উত্তর : উনি আমাদের বাড়ি যাওয়ার পরে আমি মাঠে ছিলাম, মোবাইলে আমাকে ডেকে নিয়ে এসেছেন
প্রশ্ন : ওনার সাথে আর কেউ ছিলেন?
উত্তর : আরেকজন গিয়েছিল।
প্রশ্ন : তাকে চেনেন?
উত্তর : চিনি, তার নাম নান্না, রফিক ভাইয়ের মামা না কি হয়।
প্রশ্ন : আর কেউ গিয়েছিল?
উত্তর : ঐদিন ছাড়া আমার কাছে কেউ আর কোনদিন যায় নাই।
প্রশ্ন : কেন সে এক:থা আপনাকে জিজ্ঞাসা করছেন তা জানতে চেয়েছিলেন?
উত্তর : হ্যা। তিনি বলেনম, তোমার মাকে কে মেরেছে তাতো জানি না, তাই জানতে এসেছি, আমার জানার দরকার আছে।
প্রশ্ন : এতদিন পরে কেন জানতে আসছেন এ কথা তাকে জিজ্ঞাসা করেছেন?
উত্তর : না।
প্রশ্ন : তিনি অন্য কোন বাড়িতে গিয়েছিলেন?
উত্তর : না।
প্রশ্ন : আপনার মায়ের নামে পিরোজপুরে ভাগীরথী চত্ত্বর আছে।
উত্তর : হ্যা।
প্রশ্ন : কোর্টের লোক কদ্দিন আগে গেল আপনার কাছে?
উত্তর : গত ফাল্গুনে কোর্টের লোক আমার নিকট গিয়েছিল। গিয়ে বলেছে আমরা কোর্টের লোক, কোর্ট থেকে তদন্তের জন্য এসেছি।
প্রশ্ন : যে গিয়েছিল সে তার পরিচয় দিয়েছিল বা নাম বলেছে?
উত্তর : নাম ধাম বলেন নাই, তারা বলেছিল তারা ঢাকা থেকে এসেছেন, আমিও তাদেরকে নাম জিজ্ঞাসা করি নাই। এক সপ্তাহ পরে উনারা আবার গিয়েছিলেন।
প্রশ্ন : আপনার মাকে কাহারা মেরেছে বা কি কি ঘটনা ঘটেছিল তা আপনি কোর্টের লোকদের কাছে বলেছেন?
উত্তর : হ্যা।
প্রশ্ন : যুদ্ধের সময় রাজাকার দেখেছেন?
উত্তর : না।
প্রশ্ন : শুনেছেন?
উত্তর : হ্যা।
প্রশ্ন : যুদ্ধটা কিসের যুদ্ধ ছিল?
উত্তর : মুক্তিবাহিনী আর মিলিটারির মধ্যে গোলাগুলি হইছে এটা বুঝেছি।
প্রশ্ন : রাজাকারদের বিষয়ে কি শুনেছেন?
উত্তর : তারা লোকদের ধরে ধরে নিয়ে মারত (হত্যা করত) , মারতে সাহায্য করত।
প্রশ্ন : যে মামলায় সাক্ষ্য দিতে এসেছেন সে মামলার আসামী কে?
উত্তর : সাঈদী সাহেবের ছেলে বলছে তুমি আমার বাবার বিরুদ্ধে মামলা করেছ কি-না। আমি বলেছি করিনাই। তিনি বলেছেন কোর্টে গিয়ে একথা বলতে পারবা? আমি বলেছি পারব। সেকথা বলতেই আমি এসেছি।
প্রশ্ন : আপনার মায়ের হত্যা বিষয়ে পাড়েরহাটের সাঈদী সাহেবের প্রত্যক্ষ হাত ছিল।
উত্তর : এটা মিথ্যা।
প্রশ্ন : একথাগুলো না বলার জন্য রফিক এবং তার মামা আপনাকে টাকা পয়সা দিয়ে বশীভূত করে সাক্ষ্য দেয়ার জন্য নিয়ে এসেছে।
উত্তর : আপনি এটা ভুল বুঝলেন। এটা ভুল।
প্রশ্ন : আপনি অর্থের বিনিময়ে পক্ষ ত্যাগ করেছেন।
উত্তর : সত্য নয়।
তাজুল ইসলামের প্রতিকৃয়া :
গণেশচন্দ্র সাহার সাক্ষ্য গ্রহণ শেষে তাজুল ইসলাম সাংবাদিকদের বলেন, রাষ্ট্রপক্ষ সাক্ষী হাজির করতে না পারা বিষয়ে যে কারণ বলেছিল তা মিথ্যা প্রমানিত হয়েছে। তারা বলেছিল মাওলানা সাঈদীর সন্ত্রাসীদের ভয়ে সাক্ষীরা নিখোঁজ। সেই সাক্ষী আজ ট্রইব্যুনালে এসে তার মায়ের মৃত্যুর ব্যাপারে সাক্ষ্য দিয়ে গেলেন অত্যন্ত সাহসের সাথে। মায়ের নির্মম হত্যার বিবরন দিতে গিয়ে তিনি কান্নায় ভেঙ্গে পড়লেন।
তাজুল ইসলামকে সাংবাদিকরা প্রশ্ন করেন, রাষ্ট্রপক্ষ থেকে অভিযোগ করা হয়েছে আপনারা তাকে টাকার বিনিয়ে পক্ষ ত্যাগ করিয়েছেন।
জবাবে তাজুল ইসলাম বলেন, রাষ্ট্রের কোটি কোটি টাকা আছে। সমস্ত রাষ্ট্রযন্ত্র কাজ করছে তাদের পক্ষে। তারপরও আমরা তাদের সাক্ষী টাকার বিনিময়ে এনেছি এর চেয়ে মিথ্যা ভিত্তিহীন অভিযোগ আর কি হতে পারে। আমরা আগেও বলেছি মাওলানা সাঈদীর বিরুদ্ধে অভিযোগ শতাব্দীর শ্রেষ্ঠ মিথ্যাচার।
তাজুল ইসলামকে প্রশ্ন করা হয় তদন্ত কর্মকর্তার কাছে তিনি তার মায়ের হত্যার বিষয়ে সাঈদী সাহেব জড়িত বলে জবানবন্দী দিয়েছেন মর্মে রেকর্ড করা আছে । সেটি তাহলে কি।
তাজুল ইসলাম বলেন, গণেশচন্দ্র সাহা তার মায়ের হত্যা বিষয়ে তদন্ত কর্মকর্তার কাছে সত্য সাক্ষ্য দিয়েছিলেন । কিন্তু সে কথা সেভাবে লেখা হয়নি। তিনি তার মায়ের হত্যা বিষয়ে সত্য সাক্ষ্য দিতে চেয়েছিলেন কোর্টে এসে। তাকে মিথ্যা সাক্ষ্য দেয়ার জন্য চাপ দেয়া হয়েছিল সাঈদী সাহেবকে জড়িয়ে । কিন্তু তাতে তিনি রাজী হননি বিধায় তাকে রাষ্ট্রপক্ষ কোর্টে আনেনি এবং বলেছে তাকে পাওয়া যাচ্ছেনা। সাঈদীর সন্ত্রাসীর ভয়ে সে নিখোঁজ।
ভাগীরথী হত্যাকান্ড এবং স্বাধীনতাযুদ্ধের দলিলপত্র :
ভাগীরথীর হত্যাকান্ড বিষয়ে স্বাধীনতার পর ১৯৭৩ সালে দৈনিক আজাদ পত্রিকায় একটি রিপোর্ট ছাপা হয় “বর্বরতার রেকর্ড” শিরোনামে । সে রিপোর্টটি কবি হাসান হাফিজুর রহমান সম্পাদিত বাংলাদেশের স্বাধীনতা যুদ্ধের দলিলপত্র নামক মুক্তিযুদ্ধের ওপর প্রমান্য গ্রন্থে হুবহু স্থান পায়। রিপোর্টটি নিচে তুলে ধরা হল হেডলাইনসহ।
বর্বরতার রেকর্ড
॥ রহিম আজাদ প্রদত্ত ॥
বরিশাল : ‘মহাদেবের জটা থেকে ‘নয় বাংলা মায়ের নাড়ী ছিঁড়ে জন্ম দিয়েছিলেন যে সোনার মেয়ে সে ভাগীরথীকে ওরা জ্যান্ত জীপে বেঁধে শহরের রাস্তায় টেনে টেনে হত্যা করেছে। খান দস্যুরা হয়তো পরখ করতে চেয়েছিল ওরা কতখানি নৃশংস হতে পারে। বলতে হয় সেক্ষেত্রে ওরা শুধু সফলই হয়নি, বর্বরতার সব রেকর্ড ছাড়িয়ে গেছে। অষ্টাদশী ভাগীরথী ছিল বরিশাল জেলার পিরোজপুর থানার বাঘমারা কদতলীর এক বিধবা পল্লীবালা। বিয়ের এক পর পর একটি পুত্র সন্তান কোলে নিয়েই তাকে বরণ করে নিতে হয় সুকঠিন বৈধব্য।
স্বাীর বিয়োগব্যথা তাঁর তখনও কাটেনি। এরই মধ্যে দেশে নেমে এল ইয়াহিয়ার ঝটিকা বাহিনী। গত মে মাসের এক বিকেলে ওরা চড়াও হলো ভাগীরথীদের গ্রামে। হত্যা করলো অনেককে যাকে সেখানে যেভাবে পেলো। এ নির্বিচার হত্যাযজ্ঞের মধ্যেও ভাগীরথীকে ওরা মারতে পাররো না। ওর দেহলাবণ্য দস্যুদের মনে যে লালসা জাগিয়েছিল তাতেই হার মানল তাদের রক্তপিপাসা। ওকে ট্রাকে তুলে নিয়ে এল পিরোজপুরে। তারপর ক্যাম্পে তার উপর চালানো হলো হিংস্র পাশবিক অত্যাচার।
সথী নারী ভাগীরথী। এ পরিস্থিতিতে মৃত্যকে তিনি একমাত্র পরিত্রাণের উপায় বলে ভাবতে লাগলেন। ভাবতে ভাবতেই এক সময় এল নতুন চিন্তাÑ হ্যাঁ মৃত্যুই যদি বরণ করতে হয় ওদেরইবা রেহাই দেবো কেনো? ভাগীরথী কৌশলের আশ্রয় নিল এবার। এখন আর অবাধ্য মেয়ে নয় দম্ভরমত খানদের খুশী করতে শুরু করলো, ওদের আস্থা অর্জনের আপ্রাণ চেষ্টা চালাতে লাগলো।
বেশি দিন লাগলো না অল্প ক’দিনেই নারীলোলুপ ইয়াহিয়া বাহিনৗ ওর প্রতি দারুণ আকর্ষণ অনুভব করলো। আর এই সুযোগে ভাগীরথী ওদের কাছ থেকে জেনে নিতে শুরু করলো পাক বাহিনীর সব গোপন তথ্য। এক পর্যায়ৈ বিশ্বাসভাজন ভাগীরথীকে ওরা নিজের ঘরেও যেতে দিলো। আর কোনো বাধা নেই। ভাগীরথী এখন নিয়মিত সামরিক ক্যাম্পে যায় আবার ফিরে আসে নিজ গ্রামে।
এরই মধ্যে চতুরা ভাগীরথী তার মূল লক্ষ্য অর্জনের পথেও এগিয়ে গেল অনেকখানি। গোপনে মুক্তিবাহিনীর সাথে গড়ে তুলল ঘনিষ্ঠ যোগাযোগ।
এরপরই এল আলস সুযোগ। জুন মাসের একদিন ভাগীরথী খান সেনাদের নিমন্ত্রণ করলো তার নিজ গ্রামে। এদিকে মুক্তিবাহিনীকেও তৈরি রাখা হলো যথারীতি। ৪৫ জন খান সেনা সেদিন হাসতে হাসতে বাগমারা কদমতলা এসেছিল কিন্তু তার মধ্যে ৪/৫ জন ক্যাম্পে ফিরতে পেরেছে বুলেটের ক্ষত নিয়ে কাঁদতে কাঁদতে। বাকিরা ভাগীরথীর গ্রামেই শিয়াল কুকুর শকুনের খোরাক হয়েছে। এরপর আর ভাগীরথী ওদের ক্যাম্পে যায়নি। ওরা বুঝেছে, এটা তারই কীর্তি। কীর্তিমানরা তাই হুকুম দিল জীবিত অথবা মৃত ভাগীরথীকে যে ধরিয়ে দিতে পারবে তাকে নগদ এক হাজার টাকা পুরস্কার দেয়া হবে।
কিন্তু ভাগীরথী তখনও জানতো না ওর জন্য আরো দুঃসহ ভবিষ্যৎ অপেক্ষা করছে। একদিন হাটবারে তাকে শহরের রাস্তায় এনে দাঁড় করানো হলো জনবহুল চৌমাখায়। সেখানে প্রকাশ্যে তার অঙ্গাবরণ খুলে ফেলল কয়েকজন খান সেনা। তারপর দু’গাছি দড়ি ওর দু’পায়ে বেঁধে একটি জীপে বেঁধে জ্যান্তে শহরের রাস্তায় টেনে বেড়াল ওরা মহাউৎসবে। ঘণ্টাখানেক রাজপথ পরিক্রমার পর আবার যখন ফিরে এল সেই চৌমাথায় তখনও রর দেহে প্রাণের স্পন্দন রয়েছে।
এবার তারা দু’টি পা দু’টি জীপের সাথে বেঁধে নিল এবং জী দু’টিকে চালিয়ে দিল বিপরীত দিকে। ভাগীরথী দু’ভাগ হয়ে গেল। সেই দু’ভাগে দু’জীপে আবার শহর পরিক্রমা শেষ করে জল্লাদ খানরা আবার ফিরে এল সেই চৌমাথায় এবং এখানেই ফেরে রেখে গেল ওর বিকৃত মাংশগুলো।
একদিন দু’দিন পরে মাংসগুলো ঐ রাস্তার মাটির সাথেই একাকার হয়ে গেল এক সময়। বাংলামায়ের ভাগীরথী এমনিভাবে আবার মিশে গেল বাংলার ধূলিকণার সাথে। কেবল ভাগীরথী নয়, আরো দু’জন মুক্তিযোদ্ধাকেও রা এমনি করে পিরোজপুর শহরে হত্যা করে।
১৫ সাক্ষী থেকে সেফ হাউজ ডায়েরি : মাওলানা সাঈদীর বিরুদ্ধে গণেশ চন্দ্রসাহাসহ ১৫ জন সাক্ষীর জবানবন্দী তাদের অনুপস্থিতিতে সাক্ষ্য হিসেবে গ্রহনের পর থেকে সে আদেশ পুনরায় বিবেচনার জন্য আসামী পক্ষ দীর্ঘ আইনী লড়াই করেছেন। সর্বশেষ তারা সেফ হাউজের ডকুমেন্ট হাতে পাবার পর গত
৯ মে রিভিউ আবেদন দাখিল করেন। গত ৩রা জুন এ বিষয়ে শুনানীর সময় আসামী পক্ষের আইনজীবীরা সেফ হাউজের সমস্ত কাগজপত্র ট্রাইব্যুনালে দাখিল করে বলেন, রাষ্ট্রপক্ষ সাক্ষী হাজির করতে না পারা বিষয়ে কারণ দাবি করছেন তা সম্পূর্ণ মিথ্যা। যে ১৫ জনের জবানবন্দী গ্রহণ করা হয়েছে তাদের মধ্যকার বেশ কয়েকজন সাক্ষীসহ রাষ্ট্রপক্ষের আরো অনেক সাক্ষী হেফাহাউজে (ঢাকায় যেখানে সাক্ষী এনে রাখা হত) রাখা হয়েছিল। কিন্তু তারা তাদের শেখানো মতে মিথ্যা সাক্ষ্য দিতে রাজি না হওয়ায় তাদেরকে কোর্টে আনেনি তারা ।
গত ১২ জুলাই ট্রাইব্যুনাল রিভিউ আবেদন খারিজ করে দেন ।
তাজুল ইসলাম আমাকে বলেন, আমরা প্রমানসহ বলেছিলাম রাষ্ট্রপক্ষ সাক্ষী হাজির করতে না পারা বিষয়ে যেসব কারণ এবং অভিযোগ উল্লেখ করেছে তা মিথ্যা। আজ আমরা সেই ১৫ সাক্ষীর একজন গণেশকে হাজির করে আরো একবার তাদের দাবি মিথ্যা প্রমান করলাম। মাওলানা সাঈদীল পক্ষে আরো অনেকে সাক্ষ্য দিতে চান। কিন্তু নিরাপত্তার কারনে তারা সময়মত আসতে পারছেননা। সময় এবং সুযোগ পেলে মাওলানা সাঈদীর বিরুদ্ধে সব অভিযোগ মিথ্যা প্রমান করতে পারব।
মাওলানা সাঈদীর পক্ষে সাক্ষী হাজিরের আজই ছিল শেষ সুযোগ। ১৭ তম সাক্ষীর সাক্ষ্য গ্রহন শেষে ট্রাইব্যুনাল বলেন, আসামী পক্ষের সাক্ষ্য গ্রহণ কোজড।
ট্রাইব্যুনাল চেয়ারম্যান বিচারপতি নিজামুল হক, সদস্য বিচারপতি জাহাঙ্গীর হোসেন, বিচারপতি আনোয়ারুল হক বিচার কার্যক্রম পরিচালনা করেন।
মাওলানা সাঈদীর পক্ষে অ্যাডভোকেট মিজানুল ইসলাম, তাজুল ইসলাম, মনজুর আহমেদ আনসারী প্রমুখ উপস্থিত ছিলেন।
আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনাল-১ এ আজ চাঞ্চল্যকর ঘটনার অবতারনা হয়েছে। রাষ্ট্রপক্ষের এক সাক্ষী সাক্ষ্য দিলেন মাওলানা দেলাওয়ার হোসাইন সাঈদীর পক্ষে। সাক্ষীর নাম গণেশ চন্দ্র সাহা। ১৯৭১ সালে পিরোজপুরে বর্বরোচিত এবং নিমর্ম হত্যার শিকার শহীদ ভাগীরথীর ছেলে এই গণেশ চন্দ্র সাহা।
মাওলানা সাঈদীর বিরুদ্ধে ভাগীরথীকে হত্যায় সহযোগিতার অভিযোগ এনেছে রাষ্ট্রপক্ষ। যে ভাগীরথীকে হত্যায় সহযোগিতার অভিযোগ মাওলানা সাঈদীর বিরুদ্ধে সেই ভাগিরথীর ছেলে এসে সাক্ষ্য দিলেন মাওলানা সাঈদীর পক্ষে। তিনি বললেন মাওলানা সাঈদী তার মাকে মারেননি। পাকিস্তান আর্মিরাই তার মাকে মেরেছে।
কে এই গণেশ?
গণেশ চন্দ্র সাহা শুধু যে রাষ্ট্রপক্ষের সাক্ষী তাই নয়। যে ১৫ জন সাক্ষীর জবানবন্দী তাদের অনুপস্থিতিতে ট্রাইব্যুনাল সাক্ষ্য হিসেবে গ্রহণ করেছেন সেই ১৫ জনেরও একজন এই গণেশ চন্দ্র সাহা।
গত ২০ মার্চ রাষ্ট্রপক্ষ থেকে মাওলানা সাঈদীর বিরুদ্ধে ৪৬ জন সাক্ষীর বিষয়ে একটি দরখাস্ত দাখিল করা হয় ট্রাইব্যুনালে । দরখাস্তে নিবেদন করা হয় ৪৬ জন সাক্ষীকে ট্রাইব্যুনালে হাজির করা তাদের পক্ষে আদৌ সম্ভব নয়। তাই এসব সাক্ষী তদন্ত কর্মকর্তার কাছে যে জবানবন্দী দিয়েছে তা তাদের অনুপস্থিতিতে সাক্ষ্য হিসেবে গ্রহণ করা হোক।
৪৬ জন সাক্ষীর মধ্যে ১৪ জন সম্পর্কে দরখাস্তে রাষ্ট্রপক্ষ উল্লেখ করেছিল আসামীর (মাওলানা সাঈদী) পক্ষ অবলম্বনকারী পিরোজপুরের অস্ত্রধারী সন্ত্রাসী গ্রুপ কর্তৃক সাক্ষীদের বাড়িতে গিয়ে হুমকির প্রেক্ষিতে ভয়ে ভীত হয়ে তারা আত্মপোগন করেছে। তাদেরকে খুঁজে পাওয়া যাচ্ছেনা। তাই তাদের হাজির করা সম্ভব নয়।
যে ১৪ জন সম্পর্কে রাষ্ট্রপক্ষ এ দাবি করেছিল সেই ১৪ জনের একজন হলেন এই গণেশ চন্দ্র ।
রাষ্ট্রপক্ষের আবেদনের প্রেক্ষিতে ট্রাইব্যুনাল গত ২৯ মার্চ ১৫ জন সাক্ষী তদন্ত কর্মকর্তার কাছে যে জবানবন্দী প্রদান করেন তা তাদের অনুপস্থিতিতে সাক্ষ্য হিসেবে গ্রহণ করে আদেশ দেন। গণেশ চন্দ্রের নাম সেই ১৫ জনের তালিকায়ও রয়েছে।
রাষ্ট্রপক্ষ যে সাক্ষীর বিষয়ে বলেছিল মাওলানা সাঈদীর পক্ষাবলম্বনকারী অস্ত্রধারী সন্ত্রাসীদের ভয়ে আত গোপন করেছে, তাদের খুজে পাওয়া যাচ্ছেনা এবং আদৌ হাজির করা সম্ভব নয় সেই গণেশ গতকাল মাওলানা সাঈদীর পক্ষে হাজির হয়ে ট্রাইব্যুনালে সাক্ষ্য দিয়ে চাঞ্চল্য সৃষ্টি করলেন।
ভাগীরথী হত্যা বিষয়ে মাওলানা সাঈদীর বিরুদ্ধে অভিযোগ : মাওলানা সাঈদীর বিরুদ্ধে ২০টি অভিযোগে চার্জ গঠন করা হয়েছে। এর মধ্যে একটি হল ভাগীরথী হত্যায় সহযোগিতার অভিযোগ। এ বিষয়ক অভিযোগে উল্লেখ করা হয়েছে-ভাগীরথী নামে একটি মেয়ে পাকিস্তান সেনা ক্যাম্পে কাজ করত। সাঈদী পাকিস্তানী সেনাদের খবর দেয় যে, ভাগীরথী মুক্তিযোদ্ধাদের চর হিসেবে পাকিস্তানী সেনা ক্যাম্পের খবর মুক্তিযোদ্ধাদের পৌছে দেয়। এরপর পাকিস্তান সেনারা তাকে হত্যা করে লাশ নদীতে ভাসিয়ে দেয়।
গণেশ বিষয়ে রাষ্ট্রপক্ষের অভিযোগ : রাষ্ট্রপক্ষের আইনজীবী সৈয়দ হায়দার আলী অভিযোগ করে বলেন, সাক্ষী গণেশচন্দ্র সাহা পক্ষত্যাগকারী এবং বশিভূত। তাকে পক্ষত্যাগকারী হিসেবে জরো করতে চাই।
ট্রাইব্যুনাল বলেন, সে অনুমতি দেয়া হবেনা। তাকে আর আমরা আপনাদের সাক্ষী মানতে রাজি নই। তাকে আপনারা আনেননি। আমরা তাকে পক্ষত্যাগকারী বা হস্টাইল কোনটাই বলবনা।
এরপর সৈয়দ হায়দার আলী জেরার সময় সাজেশন দিয়ে সাক্ষীকে বলেন, আপনি অর্থের বিনিময়ে পক্ষত্যাগ করেছেন।
রাষ্ট্রপক্ষের এ অভিযোগ বিষয়ে সাংবাদিকরা ট্রাইব্যুনাল শেষে তাজুল ইসলামকে প্রশ্ন করলে তাজুল ইসলাম বলেন, রাষ্ট্রের টাকার অভাব নেই। সমস্ত রাষ্ট্রযন্ত্র তাদের পেছনে কাজ করছে। তারপরও যদি তারা বলে আমরা টাকার বিনিময়ে তাদের সাক্ষী আমাদের পক্ষে এনেছি তাহলে এর চেয়ে মিথ্যা কথা আর কি হতে পারে। তাজুল ইসলাম বলেন, সাক্ষী তাদের কথামত মিথ্যা সাক্ষ্য দিতে রাজি হয়নি সে কারনে তারা তাকে আনেনি ।
গণেশের জবানবন্দী : আমার নাম গনেশ চন্দ্র সাহা। বয়স আনুমানিক ৫১ বছর।
আমার মা ভাগীরথী সাহা ১৯৭১ সালে মৃত্যুবরণ করেন। আমাদের বাড়ীতে মুক্তিযোদ্ধা থাকতো। আমার মা মেলেটারী ক্যাম্পে কাজ করতো। আমার মা ক্যাম্পের খবরা-খবর মুক্তিযোদ্ধাদের পৌঁছিয়ে দিতেন। মতিউর রহমান সরদার, কালু মোল্লা, জলিল মোল্লা, হানিফ খান এরা মুক্তিযোদ্ধা ছিলেন। মতিউর রহমান সরদার বর্তমানে পিরোজপুর উপজেলা চেয়ারম্যান। মা রাতের বেলায় বাসায় আসত এবং সকাল বেলা ক্যাম্পে যেত। মুক্তিযোদ্ধাদের সাথে আমার মা কি কথা বলতেন তা আমাদের শুনতে দিতেন না। কিছুদিন পরে আমাদের গ্রাম বাগমারায় মিলিটারী আসে তখন মুক্তিবাহিনী ও মিলিটারীর মধ্যে গোলাগুলি হয়। ১০ জন মিলিটারী মারা যায়। অস্ত্র ফেলে মিলিটারীরা পিরোজপুরে পালিয়ে যায়। আমার মা ঐ দিন পিরোজপুর ক্যাম্পে ছিলেন। ঐ দিন আমার মা বাড়ীতে ফিরে আসে নাই। তারপর দিন আমরা দুই ভাই মায়ের খোঁজে যাই। আমার অপর ভাইয়ের নাম কার্তিক চন্দ্র সাহা। তিনি বর্তমানে মৃত। বারটার দিকে আমরা শুনি এক মহিলাকে ধরে নিয়ে গেছে, তিনি আমার মা, আরো শুনি মিলিটারী তার কোমরে এবং পায়ে দড়ি দিয়ে বেঁধে গাড়িতে করে টেনে নদীর ধারে নিয়ে গেছে। ওখানে গিয়ে দেখি মায়ের শরীর ক্ষত-বিক্ষত, গাড়ীতে ৫ জন লোক বসা। মাকে মেরে নদীর চড়ে ফেলে রেখেছে। ঐ ৫ জনের ভিতর ৪ জনের হাতে অস্ত্র, একজন ড্রাইভার সবাই খাকী পোশাক পরা। এই ৫ জনকে আমি চিনি না। এরা কি কথা বলতো তা বুঝতে পারি নাই। কিছুক্ষণ পরে তারা গাড়ী চালিয়ে চলে যায়। এদের সাথে কোন রাজাকারকে দেখি নাই। একজন কেও চিনতে পারি নাই।
এরপর মাওলানা সাঈদীর আইনজীবী অ্যাডভোকেট মিজানুল ইসলামের প্রশ্নের জবাবে গণেশ চন্দ্র সাহা বলেন, বছর দেড়েক আগে আমি জানতে পেরেছি এই মামলার আমি সাক্ষী। বৈশাখ মাসের শেষে আমি জানতে পেরেছি। আমার মায়ের মৃত্যুর ব্যাপারে সাংবাদিক এবং কোর্টের লোক আমার কাছে গিয়েছিল। তারা আমার কাছ থেকে এই মৃত্যুর কথা শুনে এসেছে। আমার মায়ের মৃত্যুর ব্যাপারে আজকেই আমি প্রথম সাক্ষ্য দিচ্ছি।
আরেক প্রশ্নের জবাবে গণেশ বলেন, আমি এই মামলায় সাক্ষ্য দেয়ার ব্যাপারে বৈশাখ মাসের শেষে রফিক ভাই আমার সাথে দেখা করেছে। তিনি আমাকে জিজ্ঞাসা করেছেন আপনার মাকে কারা মেরেছে । আমি বলেছি মিলিটারীরা মেরেছে। তখন তিনি বলেছেন, না আরো অন্য মানুষেরাও মেরেছে। সত্য করে বল। তখন আমি বলেছি না শুধু পাক সৈন্যরাই মেরেছে। তখন তিনি বলেন, তুমি দিব্বি করে বল, কারা মেরেছে। আমি বলেছি আমার মায়ের মৃত্যুর কাহিনী নাটক নোভেলে আছে, সবাই দেখেছে, প্রতি বছর হচ্ছে এসব। পাকিস্তানী সৈন্যরাই আমার মাকে মেরেছে। এরপর রফিক ভাই আবারো বলেন, আমার বাবা কি আপনার মাকে মেরেছে? আমি তাকে জিজ্ঞাস করি আপনার বাবা কে? উনি বলেন সাঈদী সাহেব, তখন আমি বলি না উনি আমার মাকে মারেন নি।
জেরা :
প্রশ্ন : রফিকভাইকে কতদিন ধরে রফিক ভাই ডাকেন?
উত্তর : রফিক ভাই একদিনই আমাদের বাড়িতে গিয়েছেন এবং তাকে আমি একদিনই দেখেছি।
প্রশ্ন : সেটা কবে?
উত্তর : বৈশাখ মাসের শেষ দিকে পিরোজপুরে তিনি ওয়াজ অথবা মাফেল করতে যান। তখনকার ঘটনা এটি।
প্রশ্ন : বৈশাখ মাস এখন থেকে কতদিন আগে হবে?
উত্তর : সাত মাস আগে ছিল।
প্রশ্ন : ওয়াজ শুনতে গেছেন?
উত্তর : না।
প্রশ্ন : আপনাকে পেলেন কিভাবে?
উত্তর : উনি আমাদের বাড়ি যাওয়ার পরে আমি মাঠে ছিলাম, মোবাইলে আমাকে ডেকে নিয়ে এসেছেন
প্রশ্ন : ওনার সাথে আর কেউ ছিলেন?
উত্তর : আরেকজন গিয়েছিল।
প্রশ্ন : তাকে চেনেন?
উত্তর : চিনি, তার নাম নান্না, রফিক ভাইয়ের মামা না কি হয়।
প্রশ্ন : আর কেউ গিয়েছিল?
উত্তর : ঐদিন ছাড়া আমার কাছে কেউ আর কোনদিন যায় নাই।
প্রশ্ন : কেন সে এক:থা আপনাকে জিজ্ঞাসা করছেন তা জানতে চেয়েছিলেন?
উত্তর : হ্যা। তিনি বলেনম, তোমার মাকে কে মেরেছে তাতো জানি না, তাই জানতে এসেছি, আমার জানার দরকার আছে।
প্রশ্ন : এতদিন পরে কেন জানতে আসছেন এ কথা তাকে জিজ্ঞাসা করেছেন?
উত্তর : না।
প্রশ্ন : তিনি অন্য কোন বাড়িতে গিয়েছিলেন?
উত্তর : না।
প্রশ্ন : আপনার মায়ের নামে পিরোজপুরে ভাগীরথী চত্ত্বর আছে।
উত্তর : হ্যা।
প্রশ্ন : কোর্টের লোক কদ্দিন আগে গেল আপনার কাছে?
উত্তর : গত ফাল্গুনে কোর্টের লোক আমার নিকট গিয়েছিল। গিয়ে বলেছে আমরা কোর্টের লোক, কোর্ট থেকে তদন্তের জন্য এসেছি।
প্রশ্ন : যে গিয়েছিল সে তার পরিচয় দিয়েছিল বা নাম বলেছে?
উত্তর : নাম ধাম বলেন নাই, তারা বলেছিল তারা ঢাকা থেকে এসেছেন, আমিও তাদেরকে নাম জিজ্ঞাসা করি নাই। এক সপ্তাহ পরে উনারা আবার গিয়েছিলেন।
প্রশ্ন : আপনার মাকে কাহারা মেরেছে বা কি কি ঘটনা ঘটেছিল তা আপনি কোর্টের লোকদের কাছে বলেছেন?
উত্তর : হ্যা।
প্রশ্ন : যুদ্ধের সময় রাজাকার দেখেছেন?
উত্তর : না।
প্রশ্ন : শুনেছেন?
উত্তর : হ্যা।
প্রশ্ন : যুদ্ধটা কিসের যুদ্ধ ছিল?
উত্তর : মুক্তিবাহিনী আর মিলিটারির মধ্যে গোলাগুলি হইছে এটা বুঝেছি।
প্রশ্ন : রাজাকারদের বিষয়ে কি শুনেছেন?
উত্তর : তারা লোকদের ধরে ধরে নিয়ে মারত (হত্যা করত) , মারতে সাহায্য করত।
প্রশ্ন : যে মামলায় সাক্ষ্য দিতে এসেছেন সে মামলার আসামী কে?
উত্তর : সাঈদী সাহেবের ছেলে বলছে তুমি আমার বাবার বিরুদ্ধে মামলা করেছ কি-না। আমি বলেছি করিনাই। তিনি বলেছেন কোর্টে গিয়ে একথা বলতে পারবা? আমি বলেছি পারব। সেকথা বলতেই আমি এসেছি।
প্রশ্ন : আপনার মায়ের হত্যা বিষয়ে পাড়েরহাটের সাঈদী সাহেবের প্রত্যক্ষ হাত ছিল।
উত্তর : এটা মিথ্যা।
প্রশ্ন : একথাগুলো না বলার জন্য রফিক এবং তার মামা আপনাকে টাকা পয়সা দিয়ে বশীভূত করে সাক্ষ্য দেয়ার জন্য নিয়ে এসেছে।
উত্তর : আপনি এটা ভুল বুঝলেন। এটা ভুল।
প্রশ্ন : আপনি অর্থের বিনিময়ে পক্ষ ত্যাগ করেছেন।
উত্তর : সত্য নয়।
তাজুল ইসলামের প্রতিকৃয়া :
গণেশচন্দ্র সাহার সাক্ষ্য গ্রহণ শেষে তাজুল ইসলাম সাংবাদিকদের বলেন, রাষ্ট্রপক্ষ সাক্ষী হাজির করতে না পারা বিষয়ে যে কারণ বলেছিল তা মিথ্যা প্রমানিত হয়েছে। তারা বলেছিল মাওলানা সাঈদীর সন্ত্রাসীদের ভয়ে সাক্ষীরা নিখোঁজ। সেই সাক্ষী আজ ট্রইব্যুনালে এসে তার মায়ের মৃত্যুর ব্যাপারে সাক্ষ্য দিয়ে গেলেন অত্যন্ত সাহসের সাথে। মায়ের নির্মম হত্যার বিবরন দিতে গিয়ে তিনি কান্নায় ভেঙ্গে পড়লেন।
তাজুল ইসলামকে সাংবাদিকরা প্রশ্ন করেন, রাষ্ট্রপক্ষ থেকে অভিযোগ করা হয়েছে আপনারা তাকে টাকার বিনিয়ে পক্ষ ত্যাগ করিয়েছেন।
জবাবে তাজুল ইসলাম বলেন, রাষ্ট্রের কোটি কোটি টাকা আছে। সমস্ত রাষ্ট্রযন্ত্র কাজ করছে তাদের পক্ষে। তারপরও আমরা তাদের সাক্ষী টাকার বিনিময়ে এনেছি এর চেয়ে মিথ্যা ভিত্তিহীন অভিযোগ আর কি হতে পারে। আমরা আগেও বলেছি মাওলানা সাঈদীর বিরুদ্ধে অভিযোগ শতাব্দীর শ্রেষ্ঠ মিথ্যাচার।
তাজুল ইসলামকে প্রশ্ন করা হয় তদন্ত কর্মকর্তার কাছে তিনি তার মায়ের হত্যার বিষয়ে সাঈদী সাহেব জড়িত বলে জবানবন্দী দিয়েছেন মর্মে রেকর্ড করা আছে । সেটি তাহলে কি।
তাজুল ইসলাম বলেন, গণেশচন্দ্র সাহা তার মায়ের হত্যা বিষয়ে তদন্ত কর্মকর্তার কাছে সত্য সাক্ষ্য দিয়েছিলেন । কিন্তু সে কথা সেভাবে লেখা হয়নি। তিনি তার মায়ের হত্যা বিষয়ে সত্য সাক্ষ্য দিতে চেয়েছিলেন কোর্টে এসে। তাকে মিথ্যা সাক্ষ্য দেয়ার জন্য চাপ দেয়া হয়েছিল সাঈদী সাহেবকে জড়িয়ে । কিন্তু তাতে তিনি রাজী হননি বিধায় তাকে রাষ্ট্রপক্ষ কোর্টে আনেনি এবং বলেছে তাকে পাওয়া যাচ্ছেনা। সাঈদীর সন্ত্রাসীর ভয়ে সে নিখোঁজ।
ভাগীরথী হত্যাকান্ড এবং স্বাধীনতাযুদ্ধের দলিলপত্র :
ভাগীরথীর হত্যাকান্ড বিষয়ে স্বাধীনতার পর ১৯৭৩ সালে দৈনিক আজাদ পত্রিকায় একটি রিপোর্ট ছাপা হয় “বর্বরতার রেকর্ড” শিরোনামে । সে রিপোর্টটি কবি হাসান হাফিজুর রহমান সম্পাদিত বাংলাদেশের স্বাধীনতা যুদ্ধের দলিলপত্র নামক মুক্তিযুদ্ধের ওপর প্রমান্য গ্রন্থে হুবহু স্থান পায়। রিপোর্টটি নিচে তুলে ধরা হল হেডলাইনসহ।
বর্বরতার রেকর্ড
॥ রহিম আজাদ প্রদত্ত ॥
বরিশাল : ‘মহাদেবের জটা থেকে ‘নয় বাংলা মায়ের নাড়ী ছিঁড়ে জন্ম দিয়েছিলেন যে সোনার মেয়ে সে ভাগীরথীকে ওরা জ্যান্ত জীপে বেঁধে শহরের রাস্তায় টেনে টেনে হত্যা করেছে। খান দস্যুরা হয়তো পরখ করতে চেয়েছিল ওরা কতখানি নৃশংস হতে পারে। বলতে হয় সেক্ষেত্রে ওরা শুধু সফলই হয়নি, বর্বরতার সব রেকর্ড ছাড়িয়ে গেছে। অষ্টাদশী ভাগীরথী ছিল বরিশাল জেলার পিরোজপুর থানার বাঘমারা কদতলীর এক বিধবা পল্লীবালা। বিয়ের এক পর পর একটি পুত্র সন্তান কোলে নিয়েই তাকে বরণ করে নিতে হয় সুকঠিন বৈধব্য।
স্বাীর বিয়োগব্যথা তাঁর তখনও কাটেনি। এরই মধ্যে দেশে নেমে এল ইয়াহিয়ার ঝটিকা বাহিনী। গত মে মাসের এক বিকেলে ওরা চড়াও হলো ভাগীরথীদের গ্রামে। হত্যা করলো অনেককে যাকে সেখানে যেভাবে পেলো। এ নির্বিচার হত্যাযজ্ঞের মধ্যেও ভাগীরথীকে ওরা মারতে পাররো না। ওর দেহলাবণ্য দস্যুদের মনে যে লালসা জাগিয়েছিল তাতেই হার মানল তাদের রক্তপিপাসা। ওকে ট্রাকে তুলে নিয়ে এল পিরোজপুরে। তারপর ক্যাম্পে তার উপর চালানো হলো হিংস্র পাশবিক অত্যাচার।
সথী নারী ভাগীরথী। এ পরিস্থিতিতে মৃত্যকে তিনি একমাত্র পরিত্রাণের উপায় বলে ভাবতে লাগলেন। ভাবতে ভাবতেই এক সময় এল নতুন চিন্তাÑ হ্যাঁ মৃত্যুই যদি বরণ করতে হয় ওদেরইবা রেহাই দেবো কেনো? ভাগীরথী কৌশলের আশ্রয় নিল এবার। এখন আর অবাধ্য মেয়ে নয় দম্ভরমত খানদের খুশী করতে শুরু করলো, ওদের আস্থা অর্জনের আপ্রাণ চেষ্টা চালাতে লাগলো।
বেশি দিন লাগলো না অল্প ক’দিনেই নারীলোলুপ ইয়াহিয়া বাহিনৗ ওর প্রতি দারুণ আকর্ষণ অনুভব করলো। আর এই সুযোগে ভাগীরথী ওদের কাছ থেকে জেনে নিতে শুরু করলো পাক বাহিনীর সব গোপন তথ্য। এক পর্যায়ৈ বিশ্বাসভাজন ভাগীরথীকে ওরা নিজের ঘরেও যেতে দিলো। আর কোনো বাধা নেই। ভাগীরথী এখন নিয়মিত সামরিক ক্যাম্পে যায় আবার ফিরে আসে নিজ গ্রামে।
এরই মধ্যে চতুরা ভাগীরথী তার মূল লক্ষ্য অর্জনের পথেও এগিয়ে গেল অনেকখানি। গোপনে মুক্তিবাহিনীর সাথে গড়ে তুলল ঘনিষ্ঠ যোগাযোগ।
এরপরই এল আলস সুযোগ। জুন মাসের একদিন ভাগীরথী খান সেনাদের নিমন্ত্রণ করলো তার নিজ গ্রামে। এদিকে মুক্তিবাহিনীকেও তৈরি রাখা হলো যথারীতি। ৪৫ জন খান সেনা সেদিন হাসতে হাসতে বাগমারা কদমতলা এসেছিল কিন্তু তার মধ্যে ৪/৫ জন ক্যাম্পে ফিরতে পেরেছে বুলেটের ক্ষত নিয়ে কাঁদতে কাঁদতে। বাকিরা ভাগীরথীর গ্রামেই শিয়াল কুকুর শকুনের খোরাক হয়েছে। এরপর আর ভাগীরথী ওদের ক্যাম্পে যায়নি। ওরা বুঝেছে, এটা তারই কীর্তি। কীর্তিমানরা তাই হুকুম দিল জীবিত অথবা মৃত ভাগীরথীকে যে ধরিয়ে দিতে পারবে তাকে নগদ এক হাজার টাকা পুরস্কার দেয়া হবে।
কিন্তু ভাগীরথী তখনও জানতো না ওর জন্য আরো দুঃসহ ভবিষ্যৎ অপেক্ষা করছে। একদিন হাটবারে তাকে শহরের রাস্তায় এনে দাঁড় করানো হলো জনবহুল চৌমাখায়। সেখানে প্রকাশ্যে তার অঙ্গাবরণ খুলে ফেলল কয়েকজন খান সেনা। তারপর দু’গাছি দড়ি ওর দু’পায়ে বেঁধে একটি জীপে বেঁধে জ্যান্তে শহরের রাস্তায় টেনে বেড়াল ওরা মহাউৎসবে। ঘণ্টাখানেক রাজপথ পরিক্রমার পর আবার যখন ফিরে এল সেই চৌমাথায় তখনও রর দেহে প্রাণের স্পন্দন রয়েছে।
এবার তারা দু’টি পা দু’টি জীপের সাথে বেঁধে নিল এবং জী দু’টিকে চালিয়ে দিল বিপরীত দিকে। ভাগীরথী দু’ভাগ হয়ে গেল। সেই দু’ভাগে দু’জীপে আবার শহর পরিক্রমা শেষ করে জল্লাদ খানরা আবার ফিরে এল সেই চৌমাথায় এবং এখানেই ফেরে রেখে গেল ওর বিকৃত মাংশগুলো।
একদিন দু’দিন পরে মাংসগুলো ঐ রাস্তার মাটির সাথেই একাকার হয়ে গেল এক সময়। বাংলামায়ের ভাগীরথী এমনিভাবে আবার মিশে গেল বাংলার ধূলিকণার সাথে। কেবল ভাগীরথী নয়, আরো দু’জন মুক্তিযোদ্ধাকেও রা এমনি করে পিরোজপুর শহরে হত্যা করে।
১৫ সাক্ষী থেকে সেফ হাউজ ডায়েরি : মাওলানা সাঈদীর বিরুদ্ধে গণেশ চন্দ্রসাহাসহ ১৫ জন সাক্ষীর জবানবন্দী তাদের অনুপস্থিতিতে সাক্ষ্য হিসেবে গ্রহনের পর থেকে সে আদেশ পুনরায় বিবেচনার জন্য আসামী পক্ষ দীর্ঘ আইনী লড়াই করেছেন। সর্বশেষ তারা সেফ হাউজের ডকুমেন্ট হাতে পাবার পর গত
৯ মে রিভিউ আবেদন দাখিল করেন। গত ৩রা জুন এ বিষয়ে শুনানীর সময় আসামী পক্ষের আইনজীবীরা সেফ হাউজের সমস্ত কাগজপত্র ট্রাইব্যুনালে দাখিল করে বলেন, রাষ্ট্রপক্ষ সাক্ষী হাজির করতে না পারা বিষয়ে কারণ দাবি করছেন তা সম্পূর্ণ মিথ্যা। যে ১৫ জনের জবানবন্দী গ্রহণ করা হয়েছে তাদের মধ্যকার বেশ কয়েকজন সাক্ষীসহ রাষ্ট্রপক্ষের আরো অনেক সাক্ষী হেফাহাউজে (ঢাকায় যেখানে সাক্ষী এনে রাখা হত) রাখা হয়েছিল। কিন্তু তারা তাদের শেখানো মতে মিথ্যা সাক্ষ্য দিতে রাজি না হওয়ায় তাদেরকে কোর্টে আনেনি তারা ।
গত ১২ জুলাই ট্রাইব্যুনাল রিভিউ আবেদন খারিজ করে দেন ।
তাজুল ইসলাম আমাকে বলেন, আমরা প্রমানসহ বলেছিলাম রাষ্ট্রপক্ষ সাক্ষী হাজির করতে না পারা বিষয়ে যেসব কারণ এবং অভিযোগ উল্লেখ করেছে তা মিথ্যা। আজ আমরা সেই ১৫ সাক্ষীর একজন গণেশকে হাজির করে আরো একবার তাদের দাবি মিথ্যা প্রমান করলাম। মাওলানা সাঈদীল পক্ষে আরো অনেকে সাক্ষ্য দিতে চান। কিন্তু নিরাপত্তার কারনে তারা সময়মত আসতে পারছেননা। সময় এবং সুযোগ পেলে মাওলানা সাঈদীর বিরুদ্ধে সব অভিযোগ মিথ্যা প্রমান করতে পারব।
মাওলানা সাঈদীর পক্ষে সাক্ষী হাজিরের আজই ছিল শেষ সুযোগ। ১৭ তম সাক্ষীর সাক্ষ্য গ্রহন শেষে ট্রাইব্যুনাল বলেন, আসামী পক্ষের সাক্ষ্য গ্রহণ কোজড।
ট্রাইব্যুনাল চেয়ারম্যান বিচারপতি নিজামুল হক, সদস্য বিচারপতি জাহাঙ্গীর হোসেন, বিচারপতি আনোয়ারুল হক বিচার কার্যক্রম পরিচালনা করেন।
মাওলানা সাঈদীর পক্ষে অ্যাডভোকেট মিজানুল ইসলাম, তাজুল ইসলাম, মনজুর আহমেদ আনসারী প্রমুখ উপস্থিত ছিলেন।
কোন মন্তব্য নেই:
একটি মন্তব্য পোস্ট করুন