বৃহস্পতিবার, ২৮ নভেম্বর, ২০১৩

সাক্ষী না আনতে পারলে কোজ করার চেষ্টা করেন

মেহেদী হাসান, ৭/৩/২০১২ বুধবার
দীর্ঘ ১৫ দিন বিরতির পরও মাওলানা দেলাওয়ার হোসাইন সাঈদীর বিরুদ্ধে নতুন কোন সাক্ষী হাজির করতে পারলনা রাাষ্ট্রপক্ষের আইনজীবীরা। কবে হাজির করতে পারবে তাও নির্দিষ্ট করে জানাতে  ব্যর্থ হন তারা।  তখন ট্রাইব্যুনাল  বলেন “আর কোন সাক্ষী  আনতে  না পারলে  কোজ করার চেষ্টা করেন। ”
আজ মাওলানা সাঈদীর বিরুদ্ধে ২৮ তম সাক্ষী  হাজির করার কথা ছিল রাষ্ট্রপক্ষের। সাক্ষী হাজিরে ব্যর্থতার কারনে ট্রাইব্যুনাল তাদের প্রতি ক্ষোভ প্রকাশ করে লিখিত  একটি আদেশ দিয়েছেন। আদেশে বলা হয়  “১৮  মার্চ আপনাদের শেষ চান্স দেয়া হল সাক্ষী হাজির করার জন্য। ঐদিন সাক্ষী হাজির করতে না পারলে আমরা ঐদিন যথাযথ  (এপ্রোপিরিয়েট) অর্ডার পাস করব।”
ট্রাইব্যুনালের চেয়ারম্যান বিচারপতি নিজামুল হক  আদেশ লেখার পর ক্ষোভের সাথে রাষ্ট্রপক্ষের আইনজীবীর প্রতি লক্ষ্য করে বলেন, এপ্রোপ্রিয়েট অর্ডার মানে কি বুঝে নিবেন।

মাওলানা সাঈদীর আইনজীবী তাজুল ইসলাম সাংবাদিকদকের বলেন,  ঐদিনও যদি রাষ্ট্রপক্ষ সাক্ষী  হাজির করতে না পারে তাহলে হয়ত আদালত বলবেন, তাদের সাক্ষী হাজির পর্ব শেষ। এরপর আসামী পক্ষের সাক্ষী হাজিরের পালা আসবে।

আজ  সকালে আদালতের কার্যক্রম শুরু হলে রাষ্ট্রপক্ষের  আইনজীবী মোখলেছুর রহমান বাদল দাড়িয়ে বলেন,  আজ একটি অপ্রিয় সত্য কথা বলতে হবে মাইলর্ড। তখন ট্রাইব্যুনাল বলেন, তাহলে আমাদেরও কিছু অপ্রিয়  কথা বলতে  হবে।

এপর প্রসিকিউটর মোখলেছুর রহমান বলেন,  আজো আমরা সাক্ষী আনতে পারিনি। সাক্ষী ভীষনভাবে অসুস্থ। সাক্ষী হাজিরের জন্য সবরকম চেষ্টা   করে যাচ্ছি আমরা।   তদন্ত কর্মকর্তা ঢাকায় নেই। তিনিও সাক্ষী আনার কাজেই আছেন। কাজেই সাক্ষী হাজিরের জন্য আমাদের সময় দেয়া হোক।

ট্রাইব্যুনালের চেয়ারম্যান বিচারপতি নিজামুল হক তখন  ক্ষোভের সাথে বলেন, আপনারা সর্বশেষ কবে সাক্ষী এনেছিলেন?
রাষ্ট্রপক্ষের আইনজীবী বলেন, গত ৪ মার্চ। বিচারপতি নিজামুল হক বলেন, তিনিতো (আবেদ খান) জব্দ  তালিকার সাক্ষী। মূল সাক্ষী নন। এরপর নিজামুল হক ফাইল দেখে বলেন, গত ২০ ফেব্রুয়ারি আপনারা সাইফ  হাফিজুর রহমান নামে একজন সাক্ষী আদালতে আনেন এবং তার সাক্ষ্য নেয়া হয়। এরপর আর কোন সাক্ষী আনতে পারেননি।
এ পর্যায়ে ট্রাইব্যুনালের অপর বিচারপতি এটিএম ফজলে কবির  রাষ্ট্রপক্ষের প্রসিকিউটরকে লক্ষ্য করে বলেন, কত তারিখে আপনারা নতুন সাক্ষী আনতে পারবেন তা নির্দিষ্ট করে বলতে পারবেন?
প্রসিকিউটর জবাবে বলেন, ১০ তারিখের পরে জানাতে পারব মাইলর্ড। নির্দিষ্ট তারিখ বলতে পারবনা।


ট্রাইব্যুনালের চেয়ারম্যান বিচারপতি নিজামুল হক বলেন, একবার, দুইবার সুযোগ দেয়া যায়। কিন্তু........। 
প্রসিকিউটর তখন  অসহায়ত্ত প্রকাশ করে আবারো বলেন, আমরা সব রকম চেষ্টা করে যাচ্ছি।
বিচারপতি নিজামুল হক বলেন, আপনারা চেষ্টা করতে থাকেন। তদন্ত কর্মকর্তা থাকবেনা, বাইরে থাকবে। আমরা কতদিন অপেক্ষা করব?

বিচারপতি এটিএম ফজলে কবির এরপর  বলেন, “সাক্ষী আনতে না পারলে কোজ করার চেষ্টা করেন।”
এরপর প্রসিকিউটর  আবারো বলেন, ১০ তারিখ জানাতে পারব পরবর্তী সাক্ষী কবে আনতে পারব।
তখন বিচারপতি নিজামুল হক তাদের তিরস্কার করে  বলেন, ১০ তারিখ জানাতে হবেনা আপনাদের। আমারা যেদিন ডেট দেব সেদিন জানাবেন। আপনারা ডেট নিয়ে জানাতে পারবেননা।

এরপর বিচারপতি নিজামুল হক ক্ষোভের সাথে বেঞ্চ অফিসারকে ডাকেন অর্ডার লেখা বিষয়ে  ডিকটেট করার জন্য।
লিখিত আদেশে তিনি বলেন, আজ সকালে  প্রসিকিউটর জানান তাদের কাছে সাক্ষী এসে পৌছেনি। তাই তারা মুলতবির আবেদন করেন। এটি তাদের একটি নিয়মিত বিষয় হয়ে দাড়িয়েছে। বারবার তারা একই অজুহাত দেখাচ্ছে সাক্ষী আনতে না পারা বিষয়ে। এ পর্যন্ত তারা ২৭ জন সাক্ষী  হাজির করেছে। সব শেষ ১৫ দিন আগে তারা সাক্ষী এনেছে ট্রাইব্যুনালে। কিন্তু তারপরও তারা নতুন কোন সাক্ষী আনতে পারেনি এবং  একের পর এক সময় চাচ্ছে। আমরা তাদেরকে ১৮  মার্চ পুনরায় সাক্ষী  হাজিরের জন্য সময় দিলাম। এটাই শেষ চান্স। এদিন যদি সাক্ষী  আনতে না পারেন তাহলে আমরা ঐদিন প্রয়োজনীয় আদেশ  দেব।

এর আগেও বহুবার সময় নিয়েও সাক্ষী হাজির করতে পারেনি রাষ্ট্রপক্ষ। সেজন্য বেশ কয়েকবার তাদের তিরস্কার করেছেন ট্রাইব্যুনাল।  তীব্র ক্ষোভ প্রকাশ করে লিখিত  আদেশও দিয়েছেন।

মাওলানা সাঈদীর বিচার কার্যক্রম শুরু দিকে বিভিন্ন  বিষয়ে সুরাহার জন্য  যখনই কোন আবেদন আদালতে পেশ করা হয়েছে তখনই রাষ্ট্রপক্ষের আইনজীবীদের পক্ষ থেকে বলা হয়েছে বিচারকে বাঁধাগ্রস্ত করতে এবং বিলম্বিত করার জন্যই এসব আবেদন দেয়া হচ্ছে । একের পর এক তারা আবেদন দিচ্ছে ইচ্ছা করে বিচারকে দীর্ঘায়িত করার জন্য। কিন্তু এখন তারা নিজেরাই সময়মত সাক্ষী হাজিরে বারবার ব্যর্থ হওয়ায় বিব্রতকর অবস্থায় পড়েছেন।  বিভিন্ন মহল থেকে নানা প্রশ্নের মুখোমুখি হতে হচ্ছে তাদের।

আজ সাক্ষী আনতে না পারায়  প্রসিকিউটরদের ব্যথর্তা বিষয়ে অর্ডার লেখার পূর্বে মাওলানা সাঈদীর আইনজীবী মিজানুল ইসলাম আগামী পুরো সপ্তাহ মুলতবির আবেদন জানান। তিনি বলেন, যেহেতু তারা নির্দিষ্ট করে তারিখ বলতে পারছেননা তাই পুরো  সপ্তাহ মুলতবি চান তিনি।
এ সময় ট্রাইব্যুনালের অপর  বিচারপতি একেএম জহির আহমেদ রাষ্ট্রপক্ষের আইনজীবীদের উদ্দেশ্য করে বলেন, মিজান সাহেব আপনাদের হেল্প করার চষ্টা করছেন। তিনিও  সময় চাচ্ছেন। এতে আপনাদেরও লাভ হবে।
তখন প্রসিকিউটর মোখলেছুর রহমান বাদল বলেন, তিনি আমাদের সমস্যা বোঝেন। তিনি জানেন সাক্ষী হাজির করা কত কঠিন কাজ। এসময় বিচারপতি একেএম জহির আহমেদ বলেন, আপনারাও তার প্রতি খেয়াল রাখবেন মাঝে মাঝে। 

কোন মন্তব্য নেই:

একটি মন্তব্য পোস্ট করুন