বৃহস্পতিবার, ২৮ নভেম্বর, ২০১৩

এটিএন বাংলার একাত্তরের ঘাতকেরা শীর্ষক ২৪টি প্রতিবেদন দেখানো হল ট্রাইব্যুনালে

মেহেদী হাসান, ১৯/৪/২০১২, বৃহষ্পতিবার
মাওলানা সাঈদীর বিরুদ্ধে  তদন্ত কর্মকর্তা সাক্ষ্য দেয়ার সময় আজ  এটিএন বাংলার ‘একাত্তরের ঘাতকেরা’ শীর্ষক সিরিজ রিপোর্টের ২৪টি প্রতিবেদন ট্রাইব্যুনালের  পর্দায় দেখানো হয়। এছাড়া বাংলাদেশের মুক্তিযুদ্ধের ওপর ভারত সরকার নির্মিত ‘ইন্ডিয়া নিউজ রিভিউ’ এবং ‘ডায়রি অন বাংলাদেশ ১৯৭১’ শীর্ষক দুটি ডকুমেন্টারি প্রদর্শন করা হয়।

এটিএন বাংলায় যাদের বিরুদ্ধে এ রিপোর্ট প্রচার করা হয়েছে তাদের অধিকাংশ জামায়াত রাজনীতির সাথে সম্পৃক্ত।

স্বাধীনতার মাস মার্চ মাস উপলক্ষে এটিএন বাংলার খবরে  সাথে ‘একাত্তরের ঘাতকেরা’ রিপোর্ট প্রচার করত। সাধারনত   প্রতিদিন একজনের বিরুদ্ধে ১৯৭১ সালে মুক্তিযুদ্ধের সময় বিভিন্ন অপরাধের অভিযোগে অভিযুক্ত করে এ রিপোর্ট প্রচার করত  এটিএন বাংলা টিভি চ্যানেল। তবে কোন কোন দিন এক সাথে দুজনের বিরুদ্ধেও রিপোর্ট প্রচার করত। এটিএন বাংলার যে ২৪টি রিপোর্ট গতকাল আদালতে দেখানো হল তাতে মোট ২৬ জন ব্যাক্তি রয়েছেন। রিপোর্টটি কোন বছর  প্রচারিত হয়েছে তা  উল্লেখ করা হয়নি। তবে রিপোর্টে বিভিন্ন ব্যক্তির  সাক্ষাতকার এবং কথাবার্তায় বোঝা গেছে ২০০৮ সালের জাতীয় সংসদ নির্বাচনের পরের কোন এক মার্চ মাসে এ রিপোর্ট প্রচারিত হয়।

ট্রাইব্যুনালে প্রদর্শিত ২৪টি রিপোর্টে যে ২৬ জনকে ১৯৭১ সালের বিভিন্ন অপরাধের সাথে  জড়িয়ে রিপোর্ট করা হয়েছে তারা হলেন, অধ্যাপক গোলাম আযম, মাওলানা একেএম ইউসুফ, সালাহউদ্দিন কাদের চৌধুরী এবং তার পিতা ফজলুল কাদের চৌধুরী, মাওলানা মতিউর রহমান নিজামী, আলী আহসান মোহাম্মদ মুজাহিদ, মাওলানা আব্দুস সোবহান, মুহম্মদ কামারুজ্জামান, এটিএম আজহারুল ইসলাম, আব্দুল কাদের মোল্লা, মাওলানা দেলাওয়ার হোসাইন সাঈদী,   মাওলানা আবুল কালাম আযাদ, মীর কাসেম আলী,  আব্দুল আলীম, আব্দুল খালেক মন্ডল, মাওলানা রিয়াসাত আলী, মাওলানা হাবিবুর রহমান, এবিএম খালেক মজুমদার,  আশরাফ হোসেন, চৌধুরী মঈনুদ্দীন, আইনুদ্দীন এবং আফাজউদ্দীন, আলাউদ্দিন শিকদার,  এম এ হান্নান, মো: আব্দুল্লাহ এবং ইঞ্জিনিয়ার আব্দুল জব্বার,

২৪টি রিপোর্ট দেখাতে মোট এক ঘন্টা ৩৫ মিনিট সময় লেগেছে।
দুটি রিপোর্টে ইসলামী ঐক্যজোটের চেয়ারম্যান মেছবাহুর রহমানের  বক্তব্য প্রচার করা হয়েছে জামায়াত নেতাদের বিরুদ্ধে ।
ভারত সরকার   কর্তৃক প্রস্তুতকৃত যে ডকুমেন্টারি দেখানো হল তাতে স্বাধীনতার  পর বিভিন্ন গণকবর আবিষ্কার, মানুষের কঙ্কাল, যুদ্ধবিধ্বস্ত স্থাপনা এবং  বিভিন্ন এলাকার ছবি, স্বজনহারানোর বেদনা প্রাধান্য পায়।


তদন্ত কর্মকর্তার জবানবন্দী:
তদন্ত কর্মকর্তা হেলাল উদ্দিন আজ  অষ্টম দিনের মত মাওলানা সাঈদীর বিরুদ্ধে সাক্ষ্য দিলেন। আগামী সোমবার তার আবার সাক্ষ্য দেয়ার কথা রয়েছে। আজ  তিনি যে জবানবন্দী দিয়েছেন তা এখানে তুলে ধরা হল।
১৬ ডিসেম্বর ১৯৭১,  বাংলাদেশ পাকিস্তানী দখলদার বাহিনী হতে মুক্ত হওয়ার পর সারা দেশব্যাপী মুক্তিযোদ্ধারা পাকিস্তান দখলদার বাহিনীর সহযোগী বাহিনী তথা শান্তি কমিটি, আল বদর, আল শামস বাহিনীর লোকদের গ্রেফতার করতে থাকে। পিরোজপুরে মুক্তিযোদ্ধারা নিজ এলাকায় ফেরত এসে   শান্তি কমিটি, আল বদর, আল শামস বাহিনীর সদস্যদের অনুসন্ধান শুরু করে। অত্র মামলার আসামী দেলাওয়ার হোসাইন সাঈদী ওরফে দেলু ওরফে দেইল্লা  পিতা মৃত ইউসুফ শিকদার সাং সাউথ খালি, থানা ইন্দুরকানী (জিয়ানগর) মুক্তিবাহিনী ও জনগণের আক্রমনের আশঙ্কা করে নিজের  জীবন বাঁচানোর জন্য আত্মসমর্পন না করে নিজ বাড়ি ও এলাকা হতে পালিয়ে যায়। সে মো: রওশন আলী (৭০) পিতা মৃত সুফী দাউদ  বিশ্বাস সাং দোহাকোলা থানা বাঘারপাড়া যশোর এর বাড়িতে শেল্টার নিয়ে দীর্ঘদিন আত্মপোগন করে থাকে।  তিনি সেখানে রওশনের বাড়িতে থাকা গরু মাঠে চড়াইতেন (এসময় বিচারপতি একেএম জহির আহমেদ বলেন ছাগলগুলো বাদ  গেল? )। অনেক দিন সেখানে  থাকার পর তার রাজাকার পরিচয় এবং মুুক্তিযুদ্ধের সময় গনহত্যা, হত্যা, ধর্ষন অগ্নিসংযোগ লুণ্ঠন এবং অন্যান্য অপরাধের সাথে জড়িত থাকার বিষয়টি ঐ এলাকায় জানাজানি হয়ে গেলে তিনি সেখান থেকে পরিবারবর্গসহ একটি গরুরগাড়িতে করে পালিয়ে অন্যত্র চলে যান। দীর্ঘদিন  আত্মগোপনে থাকার পর পিরোজপুর  এসে ওয়াজ মাহফিল করা এবং দুইবার জাতীয় সংসদ সদস্য নির্বাচিত হয়ে  প্রচার প্রচারনার মাধ্যমে মুক্তিযুদ্ধের সময় নিজের কৃত অপরাধ আড়াল করার চেষ্টা করেন।

কোন মন্তব্য নেই:

একটি মন্তব্য পোস্ট করুন