মেহেদী হাসান, ২৫.৭.২০১২ , বুধবার
মানিক পসারী ২০০৯ সালে পিরোজপুরে মাওলানা দেলাওয়ার হোসাইন সাঈদীর বিরুদ্ধে একটি মামলা করেন ১৯৭১ সালে তাদের বাড়িতে লুটপাট এবং অগ্নিসংযোগের দায়ে।
এই মানিক পসারী গত বছর ২৭ ডিসেম্বর মাওলানা সাঈদীর বিরুদ্ধে আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনালে এসে জবানবন্দী দিয়েছেন। জবানবন্দীতে তিনি উল্লেখ করেছেন ঘটনার দিন তাদের বাড়ি থেকে তাদের দুজন কাজের লোক যথা ইব্রাহিমক কুট্টি এবং অপর কাজের লোক মফিজ উদ্দিন পসারী (যিনি তার ফুফাত ভাইও বটে) পাকিস্তান সেনাবাহিনী এবং রাজাকাররা ধরে নিয়ে যায়। ইব্রাহিম কুট্টিকে হত্যা করে । মফিজউদ্দিনকে ক্যাম্পে নিয় নির্যাতনের এক পর্যায়ে সে পালিয়ে আসে। কিন্তু মানিক পসারী পিরোজপুরে মাওলানা সাঈদীর বিরুদ্ধে যে মামলা করেছেন তার এজাহারে কোথাও মফিজউদ্দিনের নাম করেননি।
মাওলানা সাঈদীর আইনজীবী মনজুর আহমদ আনসারী ট্রাইব্যুনালে বলেন, ঐ এজাহারে কোথাও মফিজউদ্দিনকে ঘটনার সাক্ষী করা হয়নি। তাকে ধরে নিয়ে যাওয়া, তার ওপর নির্যাতন করা এসব কিছুই উল্লেখ নাই।
আজ মাওলানা সাঈদীর বিরুদ্ধে তদন্ত কর্মকর্তা হেলাল উদ্দিনকে জেরার সময় এ তথ্য বের হয়ে আসে।
মনজুর আহমদ আনসারী আমাকে বলেন, মানিক পসারীর বাড়ি থেকে লুটপাট এবং অগ্নিসংযোগের দিন ধরে নিয়ে যাওয়া হল মফিজকে। ঘটনার এতবড় একজন প্রত্যক্ষদর্শীর নাম এজাহারে উল্লেখ নেই এবং তাকে পিরোজপুরের মামলায় সাক্ষীও করা হয়নি। এটা আশ্বর্যের বিষয় নয়কি? অথচ মফিজ উদ্দিন পসারীও মাওলানা সাঈদীর বিরুদ্ধে এই ট্রাইব্যুনালে এসে সাক্ষ্য দিয়েছেন।
মফিজ সম্পর্কে মানিক পসারী ট্রাইব্যুনালে যা বলেছিলেন:
২০১১ সালেল ২৭ ডিসেম্বর মঙ্গলবার আদালতে ষষ্ঠ সাক্ষী হিসেবে মাওলানা সাঈদীর বিরুদ্ধে সাক্ষ্য দেন মানিক পসারী।
মানিক পসারী বলেন, ১৯৭১ সালে ১৮ মে পাক সেনাবাহিনী নিয়ে রাজাকার বাহিনী আমাদের বড়িতে প্রবেশ করেন। তাদের দেখে আমার ফুফাত ভাই মফিজ উদ্দিন ( বাড়িতে কাজ করত) পালাতে চেষ্টা করে। তখন দৌড়াইয়া পাক সেনারা মফিজকে ধরে আনে। বাড়ির অপর কাজের লোক ইব্রাহিম কুট্টিকেও আর্মিরা ধরে তাদের দুজনকে একই দড়িতে বাঁধে। তারপর ঘরে লুটপাট এবং করে সোনাদানা দেলু শিকদার, সেকেন্দার শিকদার, মোসলেম মাওলানা নিয়ে যায়। লুটের পর দেলোয়ার শিকদারের (একেই বর্তমান সাঈদী হিসেবে উল্লেখ করেন তিনি) নেতৃত্বে রাজাকার বাহিনী ঘরে কেরোসিন ছিটায়। তারপর দেলোয়ার শিকদার ঘরে আগুন ধরিয়ে দেয়। মফিজ ও ইব্রাহিম কুট্টিকে বেঁধে পারেরহাট নিয়ে যাবার সময় আমি তাদের পেছনে পেছনে যেতে থাকি। তাকে পারের হাট বাজারের
মধ্যে ব্রিজের ওপারে নিয়ে গেলে আমি এপারে বসে তাদের লক্ষ্য করি। দেলোয়ার হোসেন শিকদারকে আর্মির সাথে পরামর্শ করতে দেখি। তারপর দেলোয়ার হোসেন শিকদার, সেকেন্দার শিকদারের সাথে পরামর্শক্রমে পাক আর্মিরা ইব্রাহিম কুট্টিকে গুলি করে। ইব্রাহিম চিৎকার মারে। তারপর লাশ নদীতে ফেলে দেয়। এরপর মফিজউদ্দিনকে নিয়ে ক্যাম্পের দিকে যায় । আমি লোকমুখে শুনতে পাই মফিজউদ্দিনের ওপর অত্যাচার নির্যাতন চালাইতেছে। রাত দেড়টা দুইটার দিকে মফিজ ক্যাম্প থেকে আমাদের বাড়িতে পালিয়ে আসে। তার সমস্ত শরীরে রক্ত এবং পেটানোর দাগ দেখতে পাই।
গত ২৯ ডিসেম্বর আদালতে সাক্ষ্য দেন মফিজউদ্দিন পসারী। তাকে মানিক পসারীর বাড়ি থেকে ধরে নেয়া, ক্যাম্পে নির্যাতন করা এবং পালিয়ে আসার দীর্ঘ বর্ননা দেন।
মাওলানা সাঈদীর পক্ষে ৬ আবেদনের চারটি খারিজ
২৯/৭/২০১২
মাওলানা দেলাওয়ার হোসাইন সাঈদীর পক্ষে ছয়টি আবেদন করা হয়েছিল। এর মধ্যে চারটি আজ খারিজ করা হয়েছে। একটি রেকর্ডে রাখা হয়েছে এবং অপর একটি আজ আদেশ প্রদানের জন্য ধার্য্য করা হয়েছে।
সর্বশেষ বিভিন্ন সময়ে যে ছয়টি আবেদন করা হয়েছিল সেগুলো হল (১) সেফ হাউজে দায়িত্বরত পুলিশ কর্মকর্তা, পুলিশ সদস্য, অন্যান্য বেসামরিক স্টাফসহ মোট ৩৮ জনকে কোর্ট সাক্ষী হিসেবে ডেকে এনে জিজ্ঞাসাবাদ করার আবেদন। এ আবেদনটি খারিজ না করে রেকর্ডে রাখা হয়েছে।
(২) সেফ হাউজ ডায়েরিতে পুলিশ সদস্যদেরসহ অন্যান্য যেসব টেলিফোন নম্বর উল্লেখ রয়েছে সেসব টেলিফোন নম্বরের কললিস্ট তলব করার আবেদন। অর্থাৎ উল্লেখিত ঐসব নম্বর থেকে কবে কার নম্বরে ফোন করা হয়েছে তার রেকর্ড তলব করা এবং যাচাই করা। এ আবেদনটি খারিজ করা হয়েছে।
(৩) মাওলানা সাঈদীর বিপক্ষে যে ৪৬ জন সাক্ষী আদৌ হাজির করা সম্ভব নয় বলে আবেদন করা হয়েছিল রাষ্ট্রপক্ষ থেকে সেই সাক্ষীদের প্রতি সমন ইস্যুর তথ্য চেয়ে আবেদন। অর্থাৎ ট্রাইব্যুনালে হাজিরের জন্য কবে কার নামে সমন ইস্যু হয়েছিল সে তথ্য। এটিও খারিজ করা হয়েছে।
(৪) ৪৬ জন সাক্ষীকে হাজির করা সম্ভব নয় মর্মে তদন্ত কর্মকর্তার পক্ষ থেকে প্রসিকিউশনের কাছে দুটি রিপোর্ট দাখিল করা হয়েছিল। সাক্ষী কেন হাজির করা সম্ভব নয় সে বিষয়ে কারণ বর্ণিত করা হয়েছে এ রিপোর্টে। সেই রিপোর্ট চেয়ে আবেদন করা হয়েছে। এ বিষয়ে আজ আদেশ প্রদান করা হবে।
(৫) মানিক পসারী জিয়াগর থানায় ২০০৯ সালে তাদের বাড়ি লুট বিষয়ে মাওলানা সাঈদীর বিরুদ্ধে মামলা দায়ের করেছিল। এছাড়া মাহবুবুল আলম হাওলাদার নামে আরেকজন মাওলানা সাঈদীর বিরুদ্ধে পিরোজপুর আদালতে মামলা করেছেন। সে মামলা এখনো বিচাররাধীন রয়েছে পিরোজপুরে। একই অভিযোগে একই ব্যক্তির বিরুদ্ধে দুই জায়গায় দুটি মামলা চলতে পারেনা। কাজেই যে অভিযোগে পিরোজপুরে দুটি মামলা হয়েছে সে অভিযোগগুলো এখানকার মামলা থেকে বাদ দেয়া হোক। ব্যারিস্টার আব্দুর রাজ্জাক ট্রাইব্যুনালে বিস্ময় প্রকাশ করে বলেন, এ মামলা দুটি এখানে কে আনল, কারা আনল, কিভাবে আসল সে প্রশ্ন আমাদের। এ আবেদনটিও খারিজ করা হয়েছে।
(৬) যেসব ডকুমেন্ট পূর্বে আসামী পক্ষকে সরবরাহ করা হয়নি কিন্তু পরে সেগুলো প্রদর্শন করা হয়েছে সেগুলো প্রদর্শনী থেকে বাদ দেয়ার আবেদন।
আবেদনগুলোর ওপর আংশিক শুনানী অনুষ্ঠিত হয়। ব্যারিস্টার আব্দুর রাজ্জাক শুনানীর আবেদন জানালে ট্রাইব্যুনাল চেয়য়ারম্যান বিচারপতি নিজামুল হক বলেন, শুনানীর দরকার নেই। আপনাদের বক্তব্য তো আবেদনের সাথে আছে। আমরা শুনানীর প্রয়োজন হলে আপনাদের বলব।
তখন ব্যারিস্টার আব্দু রাজ্জাক ৩৮ জন সেফ হাউজের লোকজনকে কোর্ট সাক্ষী হিসেবে ডেকে জিজ্ঞাসাবাদ সংক্রান্ত আবেদন বিষয়ে বলেন, এতবড় একটি আবেদন না শুনেই আদেশ দিয়ে দেবেন? আপনারা এর আগে আদেশে বলেছিলেন আমারা পরে প্রমানের সুযোগ পাব। আমরা সে সুযোগ চাচ্ছি। তাদের ডেকে জিজ্ঞাসাবাদ করা হোক। আমরা এখনই এর প্রমান করতে চাচ্ছি। এর আগে তাদের কয়েকজনকে ডাকলেন। তাদের রুমে নিলেন। কিন্তু আমরা তার ফল কি পেলাম?
ট্রাইব্যুনাল বলেন, আপনাদের বা রাষ্ট্রপক্ষের কারো দরখাস্তে কোর্ট সাক্ষী ডাকা হবেনা। আমরা প্রয়োজন মনে করলে ডাকা হবে। তাদের ডাকার জন্য কারো পক্ষ থেকে দরখাস্তের প্রয়োজন নেই। আমরা একটা জিনিস বুঝেছি আপনারা সেফ হাউজের ওইসব ডকুমেন্টের সত্যতা প্রমান করতে চান। প্রসিকিউশনও চায়। আমরা বলছি আমরা আপনাদের চেয়ে বেশি সিরিয়াসলি চাচ্ছি কে এটি ঘটিয়েছে তা বের করতে। বিচারপতি নিজামুল হক বলেন কোর্ট সাক্ষী বিষয়ে কোন আদেশ হবেনা।
এরপরও ব্যারিস্টার আব্দুর রাজ্জাক আবেদনের ওপর শুনানীর অনুরোধ জানালে বিচারপতি নিজামুল হক বলেন, আপনারা বলতে চাইলে আমরা শুনতে বাধ্য। কিন্তু আমাদের যদি শুনকে বাধ্য করেন তাহলে এরপর আর আবেদন কোর্টে নিয়ে আসা হবেনা। বিকল্প ব্যবস্থা হবে। এত আবেদন জমা পড়ছে যে, ওই রুল প্রয়োগ করতে হবে।
তিনি বলেন, আমরা ইচ্ছা করলে চেম্বারে বসে এগুলো বিষয়ে আদেশ দিতে পারতাম। কিন্তু একটা দায়িত্ব নিয়ে কোর্টে নিয়ে এসেছি আবেদনগুলো। কিন্তু বেশি জোরাজুরি করলে চেম্বারে বসে আদেশ দেব। ওদিকে চলে যাব।
আবেদন প্রাথমিকভাবে একজন বিচারপতি কর্তৃক চেম্বারে বসে বাছাই এবং কোর্টে না এনে সেখানেই সুরাহা করার ব্যবস্থা সংবলিত রুল প্রনয়ন করা হয়েছে সম্প্রতি।
আবেদন শুনানীতে আসামী পক্ষে ব্যারিস্টার আব্দুর রাজ্জাকের সাথে আরো যারা উপস্থিত ছিলেন তাদের মধ্যে রয়েছেন মিজানুল ইসলাম, গিয়াস উদ্দিন আহমেদ মিঠু, ব্যারিস্টার তানভির আহমেদ আল আমিন, ব্যারিস্টার এমরান এ সিদ্দিক, ব্যারিস্টার এহসান এ সিদ্দিক প্রমুখ।
মানিক পসারী ২০০৯ সালে পিরোজপুরে মাওলানা দেলাওয়ার হোসাইন সাঈদীর বিরুদ্ধে একটি মামলা করেন ১৯৭১ সালে তাদের বাড়িতে লুটপাট এবং অগ্নিসংযোগের দায়ে।
এই মানিক পসারী গত বছর ২৭ ডিসেম্বর মাওলানা সাঈদীর বিরুদ্ধে আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনালে এসে জবানবন্দী দিয়েছেন। জবানবন্দীতে তিনি উল্লেখ করেছেন ঘটনার দিন তাদের বাড়ি থেকে তাদের দুজন কাজের লোক যথা ইব্রাহিমক কুট্টি এবং অপর কাজের লোক মফিজ উদ্দিন পসারী (যিনি তার ফুফাত ভাইও বটে) পাকিস্তান সেনাবাহিনী এবং রাজাকাররা ধরে নিয়ে যায়। ইব্রাহিম কুট্টিকে হত্যা করে । মফিজউদ্দিনকে ক্যাম্পে নিয় নির্যাতনের এক পর্যায়ে সে পালিয়ে আসে। কিন্তু মানিক পসারী পিরোজপুরে মাওলানা সাঈদীর বিরুদ্ধে যে মামলা করেছেন তার এজাহারে কোথাও মফিজউদ্দিনের নাম করেননি।
মাওলানা সাঈদীর আইনজীবী মনজুর আহমদ আনসারী ট্রাইব্যুনালে বলেন, ঐ এজাহারে কোথাও মফিজউদ্দিনকে ঘটনার সাক্ষী করা হয়নি। তাকে ধরে নিয়ে যাওয়া, তার ওপর নির্যাতন করা এসব কিছুই উল্লেখ নাই।
আজ মাওলানা সাঈদীর বিরুদ্ধে তদন্ত কর্মকর্তা হেলাল উদ্দিনকে জেরার সময় এ তথ্য বের হয়ে আসে।
মনজুর আহমদ আনসারী আমাকে বলেন, মানিক পসারীর বাড়ি থেকে লুটপাট এবং অগ্নিসংযোগের দিন ধরে নিয়ে যাওয়া হল মফিজকে। ঘটনার এতবড় একজন প্রত্যক্ষদর্শীর নাম এজাহারে উল্লেখ নেই এবং তাকে পিরোজপুরের মামলায় সাক্ষীও করা হয়নি। এটা আশ্বর্যের বিষয় নয়কি? অথচ মফিজ উদ্দিন পসারীও মাওলানা সাঈদীর বিরুদ্ধে এই ট্রাইব্যুনালে এসে সাক্ষ্য দিয়েছেন।
মফিজ সম্পর্কে মানিক পসারী ট্রাইব্যুনালে যা বলেছিলেন:
২০১১ সালেল ২৭ ডিসেম্বর মঙ্গলবার আদালতে ষষ্ঠ সাক্ষী হিসেবে মাওলানা সাঈদীর বিরুদ্ধে সাক্ষ্য দেন মানিক পসারী।
মানিক পসারী বলেন, ১৯৭১ সালে ১৮ মে পাক সেনাবাহিনী নিয়ে রাজাকার বাহিনী আমাদের বড়িতে প্রবেশ করেন। তাদের দেখে আমার ফুফাত ভাই মফিজ উদ্দিন ( বাড়িতে কাজ করত) পালাতে চেষ্টা করে। তখন দৌড়াইয়া পাক সেনারা মফিজকে ধরে আনে। বাড়ির অপর কাজের লোক ইব্রাহিম কুট্টিকেও আর্মিরা ধরে তাদের দুজনকে একই দড়িতে বাঁধে। তারপর ঘরে লুটপাট এবং করে সোনাদানা দেলু শিকদার, সেকেন্দার শিকদার, মোসলেম মাওলানা নিয়ে যায়। লুটের পর দেলোয়ার শিকদারের (একেই বর্তমান সাঈদী হিসেবে উল্লেখ করেন তিনি) নেতৃত্বে রাজাকার বাহিনী ঘরে কেরোসিন ছিটায়। তারপর দেলোয়ার শিকদার ঘরে আগুন ধরিয়ে দেয়। মফিজ ও ইব্রাহিম কুট্টিকে বেঁধে পারেরহাট নিয়ে যাবার সময় আমি তাদের পেছনে পেছনে যেতে থাকি। তাকে পারের হাট বাজারের
মধ্যে ব্রিজের ওপারে নিয়ে গেলে আমি এপারে বসে তাদের লক্ষ্য করি। দেলোয়ার হোসেন শিকদারকে আর্মির সাথে পরামর্শ করতে দেখি। তারপর দেলোয়ার হোসেন শিকদার, সেকেন্দার শিকদারের সাথে পরামর্শক্রমে পাক আর্মিরা ইব্রাহিম কুট্টিকে গুলি করে। ইব্রাহিম চিৎকার মারে। তারপর লাশ নদীতে ফেলে দেয়। এরপর মফিজউদ্দিনকে নিয়ে ক্যাম্পের দিকে যায় । আমি লোকমুখে শুনতে পাই মফিজউদ্দিনের ওপর অত্যাচার নির্যাতন চালাইতেছে। রাত দেড়টা দুইটার দিকে মফিজ ক্যাম্প থেকে আমাদের বাড়িতে পালিয়ে আসে। তার সমস্ত শরীরে রক্ত এবং পেটানোর দাগ দেখতে পাই।
গত ২৯ ডিসেম্বর আদালতে সাক্ষ্য দেন মফিজউদ্দিন পসারী। তাকে মানিক পসারীর বাড়ি থেকে ধরে নেয়া, ক্যাম্পে নির্যাতন করা এবং পালিয়ে আসার দীর্ঘ বর্ননা দেন।
মাওলানা সাঈদীর পক্ষে ৬ আবেদনের চারটি খারিজ
২৯/৭/২০১২
মাওলানা দেলাওয়ার হোসাইন সাঈদীর পক্ষে ছয়টি আবেদন করা হয়েছিল। এর মধ্যে চারটি আজ খারিজ করা হয়েছে। একটি রেকর্ডে রাখা হয়েছে এবং অপর একটি আজ আদেশ প্রদানের জন্য ধার্য্য করা হয়েছে।
সর্বশেষ বিভিন্ন সময়ে যে ছয়টি আবেদন করা হয়েছিল সেগুলো হল (১) সেফ হাউজে দায়িত্বরত পুলিশ কর্মকর্তা, পুলিশ সদস্য, অন্যান্য বেসামরিক স্টাফসহ মোট ৩৮ জনকে কোর্ট সাক্ষী হিসেবে ডেকে এনে জিজ্ঞাসাবাদ করার আবেদন। এ আবেদনটি খারিজ না করে রেকর্ডে রাখা হয়েছে।
(২) সেফ হাউজ ডায়েরিতে পুলিশ সদস্যদেরসহ অন্যান্য যেসব টেলিফোন নম্বর উল্লেখ রয়েছে সেসব টেলিফোন নম্বরের কললিস্ট তলব করার আবেদন। অর্থাৎ উল্লেখিত ঐসব নম্বর থেকে কবে কার নম্বরে ফোন করা হয়েছে তার রেকর্ড তলব করা এবং যাচাই করা। এ আবেদনটি খারিজ করা হয়েছে।
(৩) মাওলানা সাঈদীর বিপক্ষে যে ৪৬ জন সাক্ষী আদৌ হাজির করা সম্ভব নয় বলে আবেদন করা হয়েছিল রাষ্ট্রপক্ষ থেকে সেই সাক্ষীদের প্রতি সমন ইস্যুর তথ্য চেয়ে আবেদন। অর্থাৎ ট্রাইব্যুনালে হাজিরের জন্য কবে কার নামে সমন ইস্যু হয়েছিল সে তথ্য। এটিও খারিজ করা হয়েছে।
(৪) ৪৬ জন সাক্ষীকে হাজির করা সম্ভব নয় মর্মে তদন্ত কর্মকর্তার পক্ষ থেকে প্রসিকিউশনের কাছে দুটি রিপোর্ট দাখিল করা হয়েছিল। সাক্ষী কেন হাজির করা সম্ভব নয় সে বিষয়ে কারণ বর্ণিত করা হয়েছে এ রিপোর্টে। সেই রিপোর্ট চেয়ে আবেদন করা হয়েছে। এ বিষয়ে আজ আদেশ প্রদান করা হবে।
(৫) মানিক পসারী জিয়াগর থানায় ২০০৯ সালে তাদের বাড়ি লুট বিষয়ে মাওলানা সাঈদীর বিরুদ্ধে মামলা দায়ের করেছিল। এছাড়া মাহবুবুল আলম হাওলাদার নামে আরেকজন মাওলানা সাঈদীর বিরুদ্ধে পিরোজপুর আদালতে মামলা করেছেন। সে মামলা এখনো বিচাররাধীন রয়েছে পিরোজপুরে। একই অভিযোগে একই ব্যক্তির বিরুদ্ধে দুই জায়গায় দুটি মামলা চলতে পারেনা। কাজেই যে অভিযোগে পিরোজপুরে দুটি মামলা হয়েছে সে অভিযোগগুলো এখানকার মামলা থেকে বাদ দেয়া হোক। ব্যারিস্টার আব্দুর রাজ্জাক ট্রাইব্যুনালে বিস্ময় প্রকাশ করে বলেন, এ মামলা দুটি এখানে কে আনল, কারা আনল, কিভাবে আসল সে প্রশ্ন আমাদের। এ আবেদনটিও খারিজ করা হয়েছে।
(৬) যেসব ডকুমেন্ট পূর্বে আসামী পক্ষকে সরবরাহ করা হয়নি কিন্তু পরে সেগুলো প্রদর্শন করা হয়েছে সেগুলো প্রদর্শনী থেকে বাদ দেয়ার আবেদন।
আবেদনগুলোর ওপর আংশিক শুনানী অনুষ্ঠিত হয়। ব্যারিস্টার আব্দুর রাজ্জাক শুনানীর আবেদন জানালে ট্রাইব্যুনাল চেয়য়ারম্যান বিচারপতি নিজামুল হক বলেন, শুনানীর দরকার নেই। আপনাদের বক্তব্য তো আবেদনের সাথে আছে। আমরা শুনানীর প্রয়োজন হলে আপনাদের বলব।
তখন ব্যারিস্টার আব্দু রাজ্জাক ৩৮ জন সেফ হাউজের লোকজনকে কোর্ট সাক্ষী হিসেবে ডেকে জিজ্ঞাসাবাদ সংক্রান্ত আবেদন বিষয়ে বলেন, এতবড় একটি আবেদন না শুনেই আদেশ দিয়ে দেবেন? আপনারা এর আগে আদেশে বলেছিলেন আমারা পরে প্রমানের সুযোগ পাব। আমরা সে সুযোগ চাচ্ছি। তাদের ডেকে জিজ্ঞাসাবাদ করা হোক। আমরা এখনই এর প্রমান করতে চাচ্ছি। এর আগে তাদের কয়েকজনকে ডাকলেন। তাদের রুমে নিলেন। কিন্তু আমরা তার ফল কি পেলাম?
ট্রাইব্যুনাল বলেন, আপনাদের বা রাষ্ট্রপক্ষের কারো দরখাস্তে কোর্ট সাক্ষী ডাকা হবেনা। আমরা প্রয়োজন মনে করলে ডাকা হবে। তাদের ডাকার জন্য কারো পক্ষ থেকে দরখাস্তের প্রয়োজন নেই। আমরা একটা জিনিস বুঝেছি আপনারা সেফ হাউজের ওইসব ডকুমেন্টের সত্যতা প্রমান করতে চান। প্রসিকিউশনও চায়। আমরা বলছি আমরা আপনাদের চেয়ে বেশি সিরিয়াসলি চাচ্ছি কে এটি ঘটিয়েছে তা বের করতে। বিচারপতি নিজামুল হক বলেন কোর্ট সাক্ষী বিষয়ে কোন আদেশ হবেনা।
এরপরও ব্যারিস্টার আব্দুর রাজ্জাক আবেদনের ওপর শুনানীর অনুরোধ জানালে বিচারপতি নিজামুল হক বলেন, আপনারা বলতে চাইলে আমরা শুনতে বাধ্য। কিন্তু আমাদের যদি শুনকে বাধ্য করেন তাহলে এরপর আর আবেদন কোর্টে নিয়ে আসা হবেনা। বিকল্প ব্যবস্থা হবে। এত আবেদন জমা পড়ছে যে, ওই রুল প্রয়োগ করতে হবে।
তিনি বলেন, আমরা ইচ্ছা করলে চেম্বারে বসে এগুলো বিষয়ে আদেশ দিতে পারতাম। কিন্তু একটা দায়িত্ব নিয়ে কোর্টে নিয়ে এসেছি আবেদনগুলো। কিন্তু বেশি জোরাজুরি করলে চেম্বারে বসে আদেশ দেব। ওদিকে চলে যাব।
আবেদন প্রাথমিকভাবে একজন বিচারপতি কর্তৃক চেম্বারে বসে বাছাই এবং কোর্টে না এনে সেখানেই সুরাহা করার ব্যবস্থা সংবলিত রুল প্রনয়ন করা হয়েছে সম্প্রতি।
আবেদন শুনানীতে আসামী পক্ষে ব্যারিস্টার আব্দুর রাজ্জাকের সাথে আরো যারা উপস্থিত ছিলেন তাদের মধ্যে রয়েছেন মিজানুল ইসলাম, গিয়াস উদ্দিন আহমেদ মিঠু, ব্যারিস্টার তানভির আহমেদ আল আমিন, ব্যারিস্টার এমরান এ সিদ্দিক, ব্যারিস্টার এহসান এ সিদ্দিক প্রমুখ।
কোন মন্তব্য নেই:
একটি মন্তব্য পোস্ট করুন