মেহেদী হাসান, ১২/১১/২০১২
জামায়াতে ইসলামীর সাবেক আমীর অধ্যাপক গোলাম আযমের পক্ষে তার ছেলে প্রাক্তন বিগেডিয়ার জেনারেল আব্দুল্লাহিল আমান আযমী প্রথম সাক্ষী হিসেবে ট্রাইব্যুনালে সাক্ষ্য প্রদান শুরু করেছেন।
আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনাল-১ এ সাক্ষ্য প্রদানের শুরুতে তিনি তার শিক্ষা জীবন এবং সেনাবাহিনীতে চাকরি জীবনের অভিজ্ঞতা, বিভিন্ন ঘটনা তুলে ধরেন। গোলাম আযমের ছেলে হবার কারনে কিভাবে তিনি চাকরি জীবনে বিভিন্ন সুযোগ সুবিধা, পদোন্নতি থেকে বঞ্চিত হন তা তুলে ধরেন। একই সাথে তিনি সেনাবাহিনী থেকে বরখাস্ত হবার বিষয়ও তুলে ধরেন।
আব্দুল্লাহিল আমান আযমী তার জবানবন্দীর শুরুতে বলেন, এ মামলায় সাক্ষী হিসেবে আমি চারটি বিষয়ে আলোকপাত করতে চাই। প্রথমত আমার র্দীঘ ৩০ বছরের সামরিক বাহিনীতে চাকিরর অভিজ্ঞতার আলোকে সামরিক শাসন ইন এন্ড টু সিভিল পাওয়ার এই উভয় সময়ে সামরিক বেসামরিক সম্পর্ক, কমান্ড স্ট্রাকচার, কমান্ড এন্ড কন্ট্রোল, কমান্ড স্টাটাস ইত্যাদি উদাহরনসহ তুলে ধরব। দ্বিতীয়ত অধ্যাপক গোলাম আযমের জীবন ও রাজনীতি। তৃতীয়ত বাংলাদেশের ভূকৌশলগত অবস্থানের আলোকে বাংলাদেশ- ভারত সম্পর্ক, এ অঞ্চলের ভূরাজনীতি, আন্তর্জাতিক কৌশলগত বিষয়সমূহ, ভারতের সাথে প্রতিবেশি অন্যান্য দেশের সম্পর্ক এবং এর আলোকে ভারত বিভাগ, বিভাগ উত্তর পাক ভারত রাজনীতি, বাংলাদেশের স্বাধীনতা আন্দোলনের পটভূমি এবং সর্বশেষ স্বাধীনতা উত্তর বাংলাদেশ-ভারত বিশেষ সম্পর্ক বিশ্লেষন এবং চুতর্থ কিছু ডকুমেন্ট উপস্থাপন সর্বশেষে।
আব্দুল্লাহিল আমান আযমী বলেন, আমি বাংলাদেশের রাজনীতির সাথে কখনো জড়িত ছিলামনা এবং এখনো নেই। শুধুমাত্র সুবচিারের উদ্দেশে, ন্যায় বিচার পাওয়ার লক্ষ্যে এবং সত্য প্রতিষ্ঠার তাড়নায় আমি আজ সাক্ষ্য দিতে এসেছি। আমি সেনাবাহিনীর একজন প্রাক্তন বিগ্রেডিয়ার জেনারেল। আমার ৩০ বছরের সেনাবাহিনীর চাকরি জীবনে আমার সততা, নিষ্ঠা, আন্তরিকতা ও পেশাগত দক্ষতার মান বাংলাদেশের ৪০ বছরের ইতিহাসে সর্বকালের সেরা অফিসারদের মধ্যে সেনাবাহিনীর সকল পদের অফিসার আমাকে সেরা বিবেচনা করেছে এবং এখনো করছে।
৩০ বছর চাকরি জীবনে শৃঙ্খলা বিরোধ কাজের জন্য আমার বিরুদ্ধে শাস্তিমূলক কোন ব্যবস্থা গ্রহনের কোন নজির নেই। বরং একজন সুশৃঙ্খল অফিসার হিসেবে আমি সকলের নিকট অনুকরনীয় আর্দশ ছিলাম। ২০০৯ সালের জুন মাসে কোন অভিযোগ ছাড়া, কোন তদন্ত ছাড়া, কোন কারণ না দেখিয়ে ৩০ বছরের নিষ্কলুষ চাকরি জীবন থেকে আমাকে বরখাস্ত করে।
(আব্দুল্লাহিল আমান আযমী বলেন, আমি শুধুমাত্র গোলাম আযমের ছেলে এই অভিযোগে সম্পূর্ণ বে আইনীভাবে, রাজনৈতিক প্রতিহিংসা চরিতার্থ করার জন্য আমাকে বরখাস্ত করা হয়। তবে ট্রাইব্যুনাল এ কথাগুলো রেকর্ড করেননি। অধ্যাপক গোলাম আযমের পক্ষে অ্যাডভোকেট মিজানুল ইসলাম আপত্তি জানালে ট্রাইব্যুনাল চেয়ারম্যান বিচারপতি নিজামুল হক বলেন, গোলাম আযমের ছেলে হবার কারনে বরখাস্ত করা হয়েছে এ মর্মে কোন প্রমান তো তিনি দেখাতে পারবেননা। আর বেআইনীভাবে করেছে কি করেনি তার বিচারও আমরা করবনা। সেনাবাহিনীতে কি নিয়ম আছে বা নাই সেটা তাদের বিষয়। আমরা আমাদের রেকর্ডে বেআইনী কথাটা লিখতে চাইনা। )
এরপর আব্দুল্লাহিল আমান আযমী বলেন, শুধু তাই নয় আমার পেশাজনিত অর্থসহ সমস্ত সুযোগ সুবিধা থেকে আমাকে বঞ্চিত করা হয়। বাংলাদেশের ইতিহাসে এ ধরনের ঘটনা নজিরবিহীন। আমি একথা অত্যন্ত দৃঢতার সাথে দাবি করে বলতে চাই যে, স্বাধীনতার ৪০ বছর পর আজ গোলাম আযমের বিরুদ্ধে আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনালে বিচার প্রকৃয়া শুরু করার একমাত্র কারণ ওনাকে রাজনৈতিকভাবে মোকাবেলায় ব্যর্থ হওয়া, প্রতিহিংসা চরিতার্থ করা এবং রাজনৈতিক ফায়দা হাসিল করা। বর্তমান সরকার যেভাবে রাজনৈতিক প্রতিহিংসার কারনে আমাকে বরখাস্ত করেছে ঠিক অনেকটা এভাবেই ১৯৯৬-২০০১ সময় পর্যন্ত ক্ষমতায় থাকার সময় বিনা করনে ৫ বছর মেজর পদবী থেকে লে. কর্নেল পদবীতে আমার পদোন্নতি আটকে রাখে।
আব্দুল্লাহিল আমান আযমী বলেন, আমি ১৯৮১ সালের ডিসেম্বর মাসে সেনাবাহিনীতে কমিশন্ড লাভ করি। কমিশন্ড লাভ করার সময় সর্বকালের সকল রেকর্ড ভঙ্গ করে পাঁচটি পুরস্কারের মধ্যে তিনটি শ্রেষ্ঠ পুরস্কার লাভ করি। এর মধ্যে একটি হল সোর্ড অব অনার এবং আরেকটি হল চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ের অধীনে অনুষ্ঠিত ডিগ্রী পরীক্ষায় প্রথম শ্রেণীতে প্রথম স্থন অধিকার।
আব্দুল্লাহিল আমান আযমী বলেন, ১৯৮২ সালের ২৪ জানুয়ারি সামরিক শাসন জারি হয় সেসময় আমি বাংলাদেশ টেলিভিশন, রেডিও বাংলাদেশ, সোহরাওয়ার্দী উদ্যানের মাশাল ল’ কন্ট্রোল রুমে দায়িত্ব পালনসহ আরো বিভিন্ন দায়িত্ব পালন করি। এ দায়িত্ব পালনকালে ১৯৮৪ সালের সম্ভবত ফেব্রুয়ারি মাসে সামরিক কর্তৃপক্ষের অনেক রাজনৈতিক নেতৃবৃন্দকে গ্রেফতার করে। আমি তখন আমার কোম্পানী সৈনিকদেরসহ হেয়ার রোডের সুগন্ধা আর্মি ক্যাম্পে দায়িত্ব পালন করছিলাম। এ অবস্থায় বর্তমান সরকারের তিনজন গুরুত্বপূর্ণ নেত্রীকে আটককৃত অবস্থায় আমার হেফাজতে কয়েকদিনের জন্য রাখা হয়। এরা হলেন, মাননীয় প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা, কৃষিমন্ত্রী বেগম মতিয়া চৌধুরী এবং সাবেক স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী বর্তমানে ডাক ও টেলিযোগাযোগমন্ত্রী অ্যাডভোকেট সাহারা খাতুন।
আব্দুল্লাহিল আমান তার দীর্ঘ চাকরি জীবনের অভিজ্ঞতার কথা বর্ননা করে বলেন, ১৯৯৬ সালে আমি জাতিসংঘের পর্যবেক্ষক মিশনের অংশ হিসেবে জর্জিয়া যাই। সেখানে খুব অল্প সময়ে ২৭টি দেশের ১২৭ জন সেনা অফিসারদের মধ্য থেকে আমাকে ডেপুটি চিফ অব অপারেশন হিসেবে সদরদফতরে নিয়োগ দেয়া হয় একজন সুইডশ জেনারেলের অধীনে। ১৯৮৮ সালে আমি রাঙ্গামাটি জেলার বিলাইছড়ি উপজেলার ৬ ইস্ট বেঙ্গল রেজিমেন্টে উপঅধিকায়কের দায়িত্ব পালন করছিলাম। তখন আমার অসুস্থ স্ত্রী এবং শিশু পুত্রকে দেখার জন্য আমার আম্মা এবং আব্বা দেখতে যান। চট্টগ্রাম সেনা সদর দফতরের ২৪ পদাতিক ডিভিশন সদর দফতরে আমাকে ডেকে নিয়ে বলা হয় তৎকালীন সেনা প্রধান জেনারেল মোস্তাফিজুর রহমান চট্টগ্রামের জিওসি মেজর জেনারেল (অব) ফজলুল করিমকে নিদের্শ প্রদান করেছেন যে, আমার সরকারি বাসভবনে আমার আব্বা থাকতে পারবেননা। আমাকে চাকরির ভয় দেখিয়ে আমার বাবাকে আমার বাসা থেকে চলে যেতে বাধ্য করা হয়। আমার সাথে এই অমানবিক আচরনের একটাই দৃশ্যমান কারণ তাহল তখন আওয়ামী লীগ সরকার ক্ষমতায় ছিল। আমার বাবার প্রতি বিদ্বেষের কারনে আমার ওপর এই জুলুম করা হয়।
আমাকে একদিন সন্ধ্যায় সেই রাতের মধ্যেই দায়িত্ব হস্তান্তর করে পরদিন সকালে বিলাইছড়ি থেকে চলে আসতে বাধ্য করা হয়। আমার অসুস্থ স্ত্রী সন্তানের কারনে কয়েকদিনের ছুটির জন্য অনেক নিবেদন করেছি। কোন কাজ হয়নি। নতুন কর্মস্থলে যোগদানের পর পেছনের তারিখ দিয়ে সেনা সদর হতে আমার বদলির আদেশ জারি করা হয়। সেনাবাহিনীতে সকল সদস্যদের এক স্থান থেকে অন্য স্থানে যাবার জন্য লিখিত গমনাদেশ দেয়া হয়। কিন্তু আমার বেলায় কোন লিখিত গমনাদেশ, জয়েনিং টাইম, জার্নি টাইম কিছুই দেয়া হয়নি। পরবর্তীতে লোক মারফত ব্যাকডেট দিয়ে আমার কর্মস্থলে চিঠি পাঠানো হয়। আমার পদোন্নতির সময় আমাকে পদোন্নতি না দিয়ে আমাকে সুপারসিড করে আমার চেয়ে চার ব্যস জুনিয়রদের প্রমোশন দেয়া হয়েছে।
আজ দুইটায় আব্দুল্লাহিল আমান আযমীর জবানবন্দী শুরু হয়। বিকাল চারটা পর্যন্ত তার জবানবন্দী গ্রহণ চলে। আগামীকাল দুইটার পর আবার তার জবানবন্দী গ্রহনের কথা রয়েছে।
সকালে মাওলানা সাঈদীর মামলায় রাষ্ট্রপক্ষের আইনজীবী সৈয়দ হায়দার আলী যুক্তি উপস্থাপন করেন।
ট্রাইব্যুনাল চেয়ারম্যান বিচারপতি নিজামুল হক, সদস্য বিচারপতি জাহাঙ্গীর হোসেন, বিচারপতি আনোয়ারুল হক বিচার কার্যক্রম পরিচালনা করেন।
রাষ্ট্রপক্ষে চিফ প্রসিকিউটর গোলাম আরিফ টিপু, প্রসিকিউটর জেয়াদ আল মালুম অন্যন্যের মধ্যে উপস্থিত ছিলেন।
আসামী পক্ষে প্রধান আইনজীবী ব্যারিস্টার আব্দুর রাজ্জাক, অ্যাডভোকেট মিজানুল ইসলাম, অ্যাডভোকেট মনজুর আহমদ আনসারী উপস্থিত ছিলেন।
জামায়াতে ইসলামীর সাবেক আমীর অধ্যাপক গোলাম আযমের পক্ষে তার ছেলে প্রাক্তন বিগেডিয়ার জেনারেল আব্দুল্লাহিল আমান আযমী প্রথম সাক্ষী হিসেবে ট্রাইব্যুনালে সাক্ষ্য প্রদান শুরু করেছেন।
আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনাল-১ এ সাক্ষ্য প্রদানের শুরুতে তিনি তার শিক্ষা জীবন এবং সেনাবাহিনীতে চাকরি জীবনের অভিজ্ঞতা, বিভিন্ন ঘটনা তুলে ধরেন। গোলাম আযমের ছেলে হবার কারনে কিভাবে তিনি চাকরি জীবনে বিভিন্ন সুযোগ সুবিধা, পদোন্নতি থেকে বঞ্চিত হন তা তুলে ধরেন। একই সাথে তিনি সেনাবাহিনী থেকে বরখাস্ত হবার বিষয়ও তুলে ধরেন।
আব্দুল্লাহিল আমান আযমী তার জবানবন্দীর শুরুতে বলেন, এ মামলায় সাক্ষী হিসেবে আমি চারটি বিষয়ে আলোকপাত করতে চাই। প্রথমত আমার র্দীঘ ৩০ বছরের সামরিক বাহিনীতে চাকিরর অভিজ্ঞতার আলোকে সামরিক শাসন ইন এন্ড টু সিভিল পাওয়ার এই উভয় সময়ে সামরিক বেসামরিক সম্পর্ক, কমান্ড স্ট্রাকচার, কমান্ড এন্ড কন্ট্রোল, কমান্ড স্টাটাস ইত্যাদি উদাহরনসহ তুলে ধরব। দ্বিতীয়ত অধ্যাপক গোলাম আযমের জীবন ও রাজনীতি। তৃতীয়ত বাংলাদেশের ভূকৌশলগত অবস্থানের আলোকে বাংলাদেশ- ভারত সম্পর্ক, এ অঞ্চলের ভূরাজনীতি, আন্তর্জাতিক কৌশলগত বিষয়সমূহ, ভারতের সাথে প্রতিবেশি অন্যান্য দেশের সম্পর্ক এবং এর আলোকে ভারত বিভাগ, বিভাগ উত্তর পাক ভারত রাজনীতি, বাংলাদেশের স্বাধীনতা আন্দোলনের পটভূমি এবং সর্বশেষ স্বাধীনতা উত্তর বাংলাদেশ-ভারত বিশেষ সম্পর্ক বিশ্লেষন এবং চুতর্থ কিছু ডকুমেন্ট উপস্থাপন সর্বশেষে।
আব্দুল্লাহিল আমান আযমী বলেন, আমি বাংলাদেশের রাজনীতির সাথে কখনো জড়িত ছিলামনা এবং এখনো নেই। শুধুমাত্র সুবচিারের উদ্দেশে, ন্যায় বিচার পাওয়ার লক্ষ্যে এবং সত্য প্রতিষ্ঠার তাড়নায় আমি আজ সাক্ষ্য দিতে এসেছি। আমি সেনাবাহিনীর একজন প্রাক্তন বিগ্রেডিয়ার জেনারেল। আমার ৩০ বছরের সেনাবাহিনীর চাকরি জীবনে আমার সততা, নিষ্ঠা, আন্তরিকতা ও পেশাগত দক্ষতার মান বাংলাদেশের ৪০ বছরের ইতিহাসে সর্বকালের সেরা অফিসারদের মধ্যে সেনাবাহিনীর সকল পদের অফিসার আমাকে সেরা বিবেচনা করেছে এবং এখনো করছে।
৩০ বছর চাকরি জীবনে শৃঙ্খলা বিরোধ কাজের জন্য আমার বিরুদ্ধে শাস্তিমূলক কোন ব্যবস্থা গ্রহনের কোন নজির নেই। বরং একজন সুশৃঙ্খল অফিসার হিসেবে আমি সকলের নিকট অনুকরনীয় আর্দশ ছিলাম। ২০০৯ সালের জুন মাসে কোন অভিযোগ ছাড়া, কোন তদন্ত ছাড়া, কোন কারণ না দেখিয়ে ৩০ বছরের নিষ্কলুষ চাকরি জীবন থেকে আমাকে বরখাস্ত করে।
(আব্দুল্লাহিল আমান আযমী বলেন, আমি শুধুমাত্র গোলাম আযমের ছেলে এই অভিযোগে সম্পূর্ণ বে আইনীভাবে, রাজনৈতিক প্রতিহিংসা চরিতার্থ করার জন্য আমাকে বরখাস্ত করা হয়। তবে ট্রাইব্যুনাল এ কথাগুলো রেকর্ড করেননি। অধ্যাপক গোলাম আযমের পক্ষে অ্যাডভোকেট মিজানুল ইসলাম আপত্তি জানালে ট্রাইব্যুনাল চেয়ারম্যান বিচারপতি নিজামুল হক বলেন, গোলাম আযমের ছেলে হবার কারনে বরখাস্ত করা হয়েছে এ মর্মে কোন প্রমান তো তিনি দেখাতে পারবেননা। আর বেআইনীভাবে করেছে কি করেনি তার বিচারও আমরা করবনা। সেনাবাহিনীতে কি নিয়ম আছে বা নাই সেটা তাদের বিষয়। আমরা আমাদের রেকর্ডে বেআইনী কথাটা লিখতে চাইনা। )
এরপর আব্দুল্লাহিল আমান আযমী বলেন, শুধু তাই নয় আমার পেশাজনিত অর্থসহ সমস্ত সুযোগ সুবিধা থেকে আমাকে বঞ্চিত করা হয়। বাংলাদেশের ইতিহাসে এ ধরনের ঘটনা নজিরবিহীন। আমি একথা অত্যন্ত দৃঢতার সাথে দাবি করে বলতে চাই যে, স্বাধীনতার ৪০ বছর পর আজ গোলাম আযমের বিরুদ্ধে আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনালে বিচার প্রকৃয়া শুরু করার একমাত্র কারণ ওনাকে রাজনৈতিকভাবে মোকাবেলায় ব্যর্থ হওয়া, প্রতিহিংসা চরিতার্থ করা এবং রাজনৈতিক ফায়দা হাসিল করা। বর্তমান সরকার যেভাবে রাজনৈতিক প্রতিহিংসার কারনে আমাকে বরখাস্ত করেছে ঠিক অনেকটা এভাবেই ১৯৯৬-২০০১ সময় পর্যন্ত ক্ষমতায় থাকার সময় বিনা করনে ৫ বছর মেজর পদবী থেকে লে. কর্নেল পদবীতে আমার পদোন্নতি আটকে রাখে।
আব্দুল্লাহিল আমান আযমী বলেন, আমি ১৯৮১ সালের ডিসেম্বর মাসে সেনাবাহিনীতে কমিশন্ড লাভ করি। কমিশন্ড লাভ করার সময় সর্বকালের সকল রেকর্ড ভঙ্গ করে পাঁচটি পুরস্কারের মধ্যে তিনটি শ্রেষ্ঠ পুরস্কার লাভ করি। এর মধ্যে একটি হল সোর্ড অব অনার এবং আরেকটি হল চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ের অধীনে অনুষ্ঠিত ডিগ্রী পরীক্ষায় প্রথম শ্রেণীতে প্রথম স্থন অধিকার।
আব্দুল্লাহিল আমান আযমী বলেন, ১৯৮২ সালের ২৪ জানুয়ারি সামরিক শাসন জারি হয় সেসময় আমি বাংলাদেশ টেলিভিশন, রেডিও বাংলাদেশ, সোহরাওয়ার্দী উদ্যানের মাশাল ল’ কন্ট্রোল রুমে দায়িত্ব পালনসহ আরো বিভিন্ন দায়িত্ব পালন করি। এ দায়িত্ব পালনকালে ১৯৮৪ সালের সম্ভবত ফেব্রুয়ারি মাসে সামরিক কর্তৃপক্ষের অনেক রাজনৈতিক নেতৃবৃন্দকে গ্রেফতার করে। আমি তখন আমার কোম্পানী সৈনিকদেরসহ হেয়ার রোডের সুগন্ধা আর্মি ক্যাম্পে দায়িত্ব পালন করছিলাম। এ অবস্থায় বর্তমান সরকারের তিনজন গুরুত্বপূর্ণ নেত্রীকে আটককৃত অবস্থায় আমার হেফাজতে কয়েকদিনের জন্য রাখা হয়। এরা হলেন, মাননীয় প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা, কৃষিমন্ত্রী বেগম মতিয়া চৌধুরী এবং সাবেক স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী বর্তমানে ডাক ও টেলিযোগাযোগমন্ত্রী অ্যাডভোকেট সাহারা খাতুন।
আব্দুল্লাহিল আমান তার দীর্ঘ চাকরি জীবনের অভিজ্ঞতার কথা বর্ননা করে বলেন, ১৯৯৬ সালে আমি জাতিসংঘের পর্যবেক্ষক মিশনের অংশ হিসেবে জর্জিয়া যাই। সেখানে খুব অল্প সময়ে ২৭টি দেশের ১২৭ জন সেনা অফিসারদের মধ্য থেকে আমাকে ডেপুটি চিফ অব অপারেশন হিসেবে সদরদফতরে নিয়োগ দেয়া হয় একজন সুইডশ জেনারেলের অধীনে। ১৯৮৮ সালে আমি রাঙ্গামাটি জেলার বিলাইছড়ি উপজেলার ৬ ইস্ট বেঙ্গল রেজিমেন্টে উপঅধিকায়কের দায়িত্ব পালন করছিলাম। তখন আমার অসুস্থ স্ত্রী এবং শিশু পুত্রকে দেখার জন্য আমার আম্মা এবং আব্বা দেখতে যান। চট্টগ্রাম সেনা সদর দফতরের ২৪ পদাতিক ডিভিশন সদর দফতরে আমাকে ডেকে নিয়ে বলা হয় তৎকালীন সেনা প্রধান জেনারেল মোস্তাফিজুর রহমান চট্টগ্রামের জিওসি মেজর জেনারেল (অব) ফজলুল করিমকে নিদের্শ প্রদান করেছেন যে, আমার সরকারি বাসভবনে আমার আব্বা থাকতে পারবেননা। আমাকে চাকরির ভয় দেখিয়ে আমার বাবাকে আমার বাসা থেকে চলে যেতে বাধ্য করা হয়। আমার সাথে এই অমানবিক আচরনের একটাই দৃশ্যমান কারণ তাহল তখন আওয়ামী লীগ সরকার ক্ষমতায় ছিল। আমার বাবার প্রতি বিদ্বেষের কারনে আমার ওপর এই জুলুম করা হয়।
আমাকে একদিন সন্ধ্যায় সেই রাতের মধ্যেই দায়িত্ব হস্তান্তর করে পরদিন সকালে বিলাইছড়ি থেকে চলে আসতে বাধ্য করা হয়। আমার অসুস্থ স্ত্রী সন্তানের কারনে কয়েকদিনের ছুটির জন্য অনেক নিবেদন করেছি। কোন কাজ হয়নি। নতুন কর্মস্থলে যোগদানের পর পেছনের তারিখ দিয়ে সেনা সদর হতে আমার বদলির আদেশ জারি করা হয়। সেনাবাহিনীতে সকল সদস্যদের এক স্থান থেকে অন্য স্থানে যাবার জন্য লিখিত গমনাদেশ দেয়া হয়। কিন্তু আমার বেলায় কোন লিখিত গমনাদেশ, জয়েনিং টাইম, জার্নি টাইম কিছুই দেয়া হয়নি। পরবর্তীতে লোক মারফত ব্যাকডেট দিয়ে আমার কর্মস্থলে চিঠি পাঠানো হয়। আমার পদোন্নতির সময় আমাকে পদোন্নতি না দিয়ে আমাকে সুপারসিড করে আমার চেয়ে চার ব্যস জুনিয়রদের প্রমোশন দেয়া হয়েছে।
আজ দুইটায় আব্দুল্লাহিল আমান আযমীর জবানবন্দী শুরু হয়। বিকাল চারটা পর্যন্ত তার জবানবন্দী গ্রহণ চলে। আগামীকাল দুইটার পর আবার তার জবানবন্দী গ্রহনের কথা রয়েছে।
সকালে মাওলানা সাঈদীর মামলায় রাষ্ট্রপক্ষের আইনজীবী সৈয়দ হায়দার আলী যুক্তি উপস্থাপন করেন।
ট্রাইব্যুনাল চেয়ারম্যান বিচারপতি নিজামুল হক, সদস্য বিচারপতি জাহাঙ্গীর হোসেন, বিচারপতি আনোয়ারুল হক বিচার কার্যক্রম পরিচালনা করেন।
রাষ্ট্রপক্ষে চিফ প্রসিকিউটর গোলাম আরিফ টিপু, প্রসিকিউটর জেয়াদ আল মালুম অন্যন্যের মধ্যে উপস্থিত ছিলেন।
আসামী পক্ষে প্রধান আইনজীবী ব্যারিস্টার আব্দুর রাজ্জাক, অ্যাডভোকেট মিজানুল ইসলাম, অ্যাডভোকেট মনজুর আহমদ আনসারী উপস্থিত ছিলেন।
কোন মন্তব্য নেই:
একটি মন্তব্য পোস্ট করুন