মেহেদী হাসান, ১৪/২/২০১৩
বাংলাদেশ জামায়াতে ইসলামীর সাবেক আমির অধ্যাপক গোলাম আযমের বিরুদ্ধে মামলায় আগামী রোববার থেকে যুক্তি (আর্গুমেন্ট) উপস্থাপন শুরু হবে। প্রথমে রাষ্ট্রপক্ষ তাদের যুক্তি উপস্থাপন শুরু করবে রোববার। এরপর আসামী পক্ষ যুক্তি উপস্থাপন করবে।
আজ আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনাল-১ রাষ্ট্রপক্ষকে যুক্তি উপস্থাপন শুরুর এ নির্দেশ দিয়েছেন। আজ অধ্যাপক গোলাম আযমের বিরুদ্ধে মামলায় আসামী পক্ষের দ্বিতীয় সাক্ষীর সাক্ষ্য গ্রহনের জন্য ধার্য্য ছিল। তবে আসামী পক্ষ সাক্ষী হাজির করতে না পারায় ট্রাইব্যুনাল সাক্ষ্য গ্রহণ বন্ধ করে দিয়ে যুক্তি উপস্থাপনের জন্য তারিখ ধার্য্য করেন। বেশ কয়েকবার তারিখ দেয়া সত্ত্বেও সাক্ষী হাজির করতে না পারায় আজ আসামী পক্ষের সাক্ষ্য গ্রহণ বন্ধ করে দেন ট্রাইব্যুনাল।
অধ্যাপক গোলাম আযমের বিরুদ্ধে রাষ্ট্রপক্ষ মোট ১২ জন সাক্ষী হাজির করে। আসামী পক্ষের জন্যও ১২ জন সাক্ষীর জন্য নির্ধারন করা হয়েছিল । তবে আসামী পক্ষ মাত্র একজন সাক্ষী হাজির করেছেন এ পর্যন্ত। তিনি হলেন অধ্যাপক গোলাম আযমের ছেলে সাবেক ব্রিগেডিয়ার জেনারেল আব্দুল্লাহিল আমান আযমী। তিনি তার পিতার পক্ষে সাক্ষ্য দেন এবং আসামী পক্ষের যাবতীয় ডকুমেন্ট উপস্থাপন করেন।
রাষ্ট্রপক্ষের ১২ জন সাক্ষীর মধ্যে তিনজন ছিলেন জব্দ তালিকার সাক্ষী। একজন তদন্ত কর্মকর্তা। বাকী নয়জন নিয়মিত সাক্ষীদের মধ্যে উল্লেখযোগ্য হলেন আইন ও সালিশ কেন্দ্রের নির্বাহী পরিচালক, টিআইবি (ট্রান্সপারেন্সি ইন্টারন্যাশনাল বাংলাদেশ) চেয়ারম্যান সুলতানা কামাল, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ইতিহাস বিভাগের অধ্যাপক মুনতাসির মামুন, মাহবুব উদ্দিন আহমেদ বীর বিক্রম, সুরকার সঙ্গীত পরিচালক আহমেদ ইমতিয়াজ বুলবুল, কুমিল্লা থেকে আগত শফিউদ্দিন আহমেদ প্রমুখ। এছাড়া একজন নারী সাক্ষীর সাক্ষ্য গ্রহণ করা হয়েছে রুদ্ধদ্বার বিচার কক্ষে।
আসামী পক্ষের সাক্ষ্য গ্রহণ বন্ধের প্রেক্ষাপট :
গত বুধবার সকালে অধ্যাপক গোলাম আযমের পক্ষে দ্বিতীয় সাক্ষীর সাক্ষ্য গ্রহনের জন্য ধার্য্য ছিল। মতিঝিল এবং পল্টন এলাকায় ব্যাপক গোলাগুলির কারনে অধ্যাপক গোলাম আযমের পক্ষে নিযুক্ত মিজানুল ইসলামসহ অন্যান্য আইনজীবী বাসা থেকে বের হতে পারেননি। তাদের বাসা পল্টনে। ফলে ট্রাইব্যুনাল বেলা দুইটা পর্যন্ত মুলতবি করেন। কিন্তু দুইটার সময়ও একই কারনে মিজানুল ইসলামসহ সংশ্লিষ্ট আইনজীবী আসতে পারেননি বলে ট্রাইব্যুনালকে জানান আসামী পক্ষের আরেক আইনজীবী তাজুল ইসলাম। ট্রাইব্যুনাল মামলা মুলতিব করে বলেন, বৃহষ্পতিবার সাক্ষী আনতে না পারলে পদক্ষেপ নেয়া হবে।
আজ সকালে ট্রাইব্যুনালের কার্যক্রম শুরু হলে আসামী পক্ষের আইনজীবী মিজানুল ইসলাম এবং তাজুল ইসলাম ট্রাইব্যুনালকে বলেন, তারা নতুন কোন সাক্ষী আনতে পারেননি। একজন সাক্ষী অসুস্থ এবং আরেক সাক্ষী আগেই গ্রেফতার হয়েছে। বিদ্যমান পরিস্থিতিতে অন্য কোন সাক্ষী সাক্ষ্য দিতে আসতে চাচ্ছেনা। তাই তারা গোলাম আযমের পক্ষে নতুন সাক্ষীর তালিকা দিতে চান এবং মামলার কার্যক্রম এক সপ্তাহের জন্য মুলতবি চান। ট্রাইব্যুনাল আবেদন নাকচ করে দিয়ে সাক্ষ্য গ্রহণ বন্ধ ঘোষনা করেন এবং যুক্তি উপস্থাপনের জন্য ধার্য্য করেন।
এর আগে বিচারপতি নিজামুল হকের স্কাইপ কেলেঙ্কারি ফাঁস হবার পর বিশেষ পরিস্থিতির কারনে আসামসী পক্ষ ৯ এবং ১০ ডিসেম্বর পরপর দুই দিন অনুপস্থিত থাকেন ট্রাইব্যুনালে । ফলে ১০ ডিসেম্বর বিচারপতি নিজামুল হক শর্তসাপেক্ষে আসামী পক্ষের সাক্ষ্য গ্রহণ বন্ধ করে দিয়ে যুক্তি উপস্থাপনের জন্য ধার্য্য করেছিলেন। কিন্তু ১১ ডিসেম্বর তিনি নিজেই পদত্যাগ করেন। এরপর নতুন চেয়ারম্যান নিযুক্ত হবার পর আসামী পক্ষের দরখাস্তের প্রেক্ষিতে তাদের সাক্ষ্য গ্রহণ আবার শুরু হয়।
১৯৭১ সালে মানবতা বিরোধী অপরাধের অভিযোগে ট্রাইব্যুনালের নির্দেশে গত বছর ১১ জানুয়ারি ট্রাইব্যুনালে হাজির হন অধ্যাপক গোলাম আযম। এরপর ট্রাইব্যুনাল তার জামিন আবেদন নাকচ করে দিয়ে ওইদিনই তাকে কারাগারে পাঠানোর নির্দেশ দেন।
এদিকে আজ ট্রাইব্যুনাল-১ এ সালাহউদ্দিন কাদের চৌধুরীর পক্ষে ২০ তম সাক্ষীর সাক্ষ্য গ্রহণ শুরু হয়েছে।
কোন মন্তব্য নেই:
একটি মন্তব্য পোস্ট করুন