মঙ্গলবার, ২৬ নভেম্বর, ২০১৩

ট্রাইব্যুনালের প্রশ্ন দলের আমীর কমান্ডার ও সুপিরিয়র অফিসারের আওতায় পরে কিভাবে

মেহেদী হাসান, ৬/৩/১২
অধ্যাপক গোলাম আযমের বিরুদ্ধে দায়ের করা চার্জশিটের ওপর আজ আর্গুমেন্ট পেশ করেছেন রাষ্ট্রপক্ষের আইনজীবী।   অধ্যাপক গোলাম আযমের নেতৃত্বে, নির্দেশে এবং প্রত্যক্ষ মদদে পাক বাহিনী ও সহযোগী বাহিনী  ১৯৭১ সালে মানবতাবিরোধী অপরাধ সংঘটিত করেছে  মর্মে যুক্তি তুলে ধরেন তারা। এসময় ট্রাইব্যুনালের চেয়ারম্যান বিচারপতি নিজামুল হক রাষ্ট্রপক্ষের আইনজীবীদের উদ্দেশ্য করে বলেন,  অধ্যাপক গোলাম আযম  তখন জামায়াতের আমীর ছিলেন । তার সুপিরিয়র স্টাটাস প্রমানের জন্য আর কিছু কি দরকার আছে?

এ বিষয়ে আলোচনার এক পর্যায়ে  ট্রাইব্যুনালের অপর বিচারপতি এটিএম ফজলে কবির প্রসিকিউটর জেয়াদ আল মালুমকে প্রশ্ন করেন, আমাদের আইনে এনি কমান্ডার বা সুপিরিয়র অফিসারের কথা বলা আছে।  অধ্যাপক গোলাম আযম ছিলেন জামায়াতের আমীর। দলের আমীর হিসেবে তিনি কমান্ডার বা সপিরিয়র অফিসারের মধ্যে পরে কিভাবে বুঝিয়ে বলেন।

জেয়াদ আল মালুম তখন  বলেন, সামরিক বা বেসামরিক বিষয় নয়। কি অপরাধ সেটা বিষয়। কমান্ডার বা সুপিরিয়র কমান্ডার  শুধু আর্মড রেজিমেন্টের ক্ষেত্রে বোঝায় না। সামরিক বেসামরিক সবাইকে বোঝায়।  তিনি এ বিষয়ে জাতিসংঘের আইনের উদাহরন পেশ করেন। তখন বিচারপতি এটিএম ফজলে কবরি বলেন, আপনি বলতে চাইছেন বেসামরিক লোকও কমান্ডার বা সুপিরিয়র কমান্ডারের আওতায় পড়েব? জেয়াদ আল মালুম এবং রাষ্ট্রপক্ষের অন্য প্রসিকিউটররা তখন হ্যা সূচক জবাব দেন।

(যুদ্ধাপরাধ বিচারের লক্ষ্যে প্রণীত ১৯৭৩ সালের আইনের ৪ (২) ধারায় বলা হয়েছে “কোন  কমান্ডার বা  উর্দ্ধতন কর্মকর্তার আদেশ,  অনুমতি,  সম্মতি বা অংশগ্রহনের মাধ্যমে সেকশন -৩ ধারায় বর্ণিত অপরাধ সংঘটিত হয় অথবা এ ধরনের অপরাধ সংঘটনের পরিকল্পনা ও কর্মকান্ডের  সাথে জড়িত থাকে,  অথবা যদি তিনি তার উপর অর্পিত দায়িত্ব পালনে এবং শৃঙ্খলা রক্ষায়  ব্যর্থ হন  অথবা তার অধীনস্তদের অপরাধ দমনে ব্যর্থ হন এবং তার অধীনস্তরা যদি এ ধরনের অপরাধ করে থাকে,  অথবা যদি অপরাধ দমনে পদক্ষেপ নিতে ব্যর্থ হন তাহলে তিনি অপরাধী হিসেবে সাব্যস্ত হবেন। )

গোলাম আযমকে বাসা থেকে খাবার দেয়া যাবে
অধ্যাপক গোলাম আযমকে বাসায় রান্না করা খাবার সরবরাহ করা যাবে। আজ ট্রাইব্যুনাল এ বিষয়ে আদেশ দেন।
১৯৭১ সালে মানবতা বিরোধী অপরাধের অভিযোগে গত ১১ জানুয়ারি থেকে অধ্যাপক গোলাম আযম বন্দী আছেন  বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিক্যালে বিশ্ববিদ্যালয় হাসপাতালের প্রিজন সেলে। অধ্যাপক গোলাম আযমের স্ত্রী সৈয়দা আফিফা আযম এর আগে কারা  এবং হাসপাতাল কর্তৃপক্ষের কাছে দরখাস্ত করেন তাকে বাসা থেকে রান্না করা খাবার সরবরাহের আবেদন জানিয়ে। কিন্তু তার সে আবেদন প্রত্যাখ্যান করা হয়। অবশেষে ট্রাইব্যুনালে গত ১৪ ফেব্রুয়ারি আবেদন জানানোর পর শুনানী শেষে গতকাল এ আদেশ দেয়া হয়।
অধ্যাপক গোলাম আযমের আইনজীবী ব্যারিস্টার আব্দুর রাজ্জাক  আদালতে বলেন, গোলাম আযমের বয়স প্রায় ৯০ বছর। তিনি নানাবিধ রোগে আক্রান্ত। এ অবস্থায় তিনি হাসপাতাল থেকে  সরাবরাহ করা
খাবার ঠিকমত খেতে পারছেননা। ফলে  তার স্বাস্থ্যের অবনতি হচ্ছে  ওজন কমে যাচ্ছে।  তার মত বয়স্ক একজন লোকের বিশেষ যত্ম দরকার এবং  বাসা থেকে বিশেষ খাবার সরবরাহ করা দরকার । 

ট্রাইব্যুনাল তার আদেশে বলেন, অধ্যাপক গোলাম আযমের বয়স, অসুস্থতা বিবেচনা করে তাকে বাসা থেকে রান্না করা খাবার দেয়া যেতে পারে। অভিযুক্ত হননি এরূপ বন্দীর ক্ষেত্রে বাসা থেকে খাবার সরাবরাহ বিষয়ে আইনে কোন বাঁধা নেই। ট্রাইব্যুনাল রায়ে বলেন, তবে বাসার খাবার খাওয়ার পর তার স্বাস্থ্যের অবনতি হলে তার দায়দায়িত্ব হাসাপাতাল বা কারা কর্তৃপক্ষ নেবেনা।
তখন ব্যারিস্টার আব্দুর রাজ্জাক বলেন, যেকোন মানুষ যেকোন সময় অসুস্থ হতে পারে বাসার খাবার খেয়েও। বাসায় অবস্থানকরা মানুষও অসুস্থ হয়।  একই মানের ভাল  খাবার খেয়ে  কারো পেটে সমস্যা হতে পারে আবার কারো কোন সমস্যা নাও হতে পারে। তাই  আদেশটি একটু পরিবর্তন করা হোক। তখন এ শর্ত নমনীয় করা হবে মর্মে আদালত আশ্বাস দেন।
ট্রাইব্যুনালের চেয়ারম্যনা বিচারপতি নিজামুল হক অপর দুই বিচারপতি এটিএম ফজলে কবির ও বিচারপতি একেএম জহির আহমেদ এর উপস্থিতিতে এ রায় দেন।

বাংলা নিউজের ওপর ক্ষোভ: গত রোববার ‘বুড়ো ঘোড়ায় দামি রেস, প্রসিকিউটরদের ভূমিকা প্রশ্নবিদ্ধ’ শীর্ষক একটি খবর প্রকাশিত হয়। আজ  আদালতের কার্যক্রম চলাকালে ট্রাইব্যুনালের চেয়ারম্যান বিচারপতি নিজামুল হক ক্ষোভের সাথে বলেন, বাংলা নিউজের জাকিয়া হোসেন আছেন?  জাকিয়া হোসেন উঠে দাড়ালে তিনি  বিচারপতি নিজামুল হক বলেন, আপনি সামনে আসেন। জাকিয়া হোসেন সামনে গেলে বিচারপতি নিজামুল হক তাকে অনেকটা ধমকের সাথে  জিজ্ঞেস করেন এই হেডলাইন কে লিখেছে? জাকিয়া বলেন, অফিসের লোক দিয়েছে। বিচারপতি নিজামুল হক ক্ষোভের সাথে  বলেন, অফিসের লোক  ডাকব?
এরপর বিচারপতি নিজামুল হক বলেন, উই আর সরি টু সে দ্যাট দি হেলাইন ওয়াজ ভেরি মাচ রং। হেডলাইন ঠিক হয়নি। আপনার রিপোট ভাল হয়েছে। রিপোর্টে সমস্যা নেই। কিন্তু হেলাইন ঠিক হয়নি। ট্রইব্যুনালের  জাজ, প্রসিকিউটর এবং ডিফেন্সের মর্যাদা রক্ষা করে হেডলাইন লিখবেন।

এদিকে জামায়াতের সহকারী সেক্রেটারি জেনারেল আব্দুল কাদের মোল্লার চার্জ হেয়ারি আগামীকাল শুরু হবার কথা রয়েছে।



কোন মন্তব্য নেই:

একটি মন্তব্য পোস্ট করুন