বৃহস্পতিবার, ২১ নভেম্বর, ২০১৩

জেরায় মাহবুব উদ্দিন আহমদ বীর বিক্রম// আমি নিজে কোন রাজাকার আল বদর আল শামসের সদস্য গ্রেফতার করিনি

মেহেদী হাসান, ২৯/৭/২০১২
জামায়াতে ইসলামীর সাবেক আমীর অধ্যাপক গোলাম আযমের বিরুদ্ধে দ্বিতীয় সাক্ষীর জেরা আজ শুরু হয়েছে। গত ১৫ জুলাই দ্বিতীয় সাক্ষী  হিসেবে মাহবুব উদ্দিন আহমদ বীর বিক্রম অধ্যাপক গোলাম আযমের বিরুদ্ধে  জবানবন্দী প্রদান করেন। ১৯৭১ সালে তিনি ঝিনাইদহ মহকুমার সাবডিভিশনাল  পুলিশ অফিসার (এসডিপিও) ছিলেন এবং  ঐ অঞ্চলে মুক্তিযুদ্ধের নেতৃত্ব প্রদান করেন। 
আজ  জেরার সময় মাহবুব উদ্দিন আহমদ বীর বিক্রম জানান  আমি নিজে কোন রাজাকার, আল বদর, আল শামস বাহিনীর সদস্য গ্রেফতার করিনি।  তবে আমার অধীনে আমার অধস্তনরা কিছু গ্রেফতার করে আমার কাছে নিয়ে আসে। আমি তাদের সাথে কথা বলি।

মাহবুব উদ্দিন বীর বিক্রমকে জেরা করেন অধ্যাপক গোলাম আযমের আইনজীবী মিজানুল ইসলাম। তাকে সহায়তা করেন অ্যাডভোকেট মনজুর আহমেদ আনসারী, ব্যারিস্টার তানভীর আহমেদ আল আমিন। এসময় অন্যান্য আইনজীবীর মধ্যে উপস্থিত ছিলেন  অ্যাডভোকেট গিয়াস উদ্দিন আহমেদ মিঠু, ব্যারিস্টার এমরান এ সিদ্দিক, ব্যারিস্টার এহসান এ সিদ্দিক।

মুক্তিযুদ্ধের পর মাহবুব উদ্দিন আহমেদ বীর বিক্রম প্রথমে প্রতিরক্ষা মন্ত্রণালয়ে ডেপুটি সেক্রেটারি হিসেবে  যোগ দেন। এরপর একই পদে   স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়েও দায়িত্ব পালন করেন।
অধ্যাপক গোলাম আযমের আইনজীবী মিজানুল ইসলাম দৈনিক নয়া দিগন্তকে বলেন, আব্দুর রহিম প্রথম রাজাকার বাহিনীর পরিচালক হন এবং পরবর্তীতে তিনি বাংলাদেশ সরকারের সচিব নিযুক্ত হয়েছিলেন। কিন্তু  আব্দুর রহিম  সম্পর্কে জেরায় মাহবুব উদ্দিন বীর বিক্রম কিছু বলতে পারলেননা।

জেরা (সংক্ষিপ্ত)
প্রশ্ন : আপনার জন্ম কোথায়?
উত্তর : বরিশাল।
প্রশ্ন : আপনি অবসর নেন কতসালে?
উত্তর : এরশাদ সাহেব আমার চাকরি ডিসমিস করে সম্ভবত ১৯৮৮ সালে।
প্রশ্ন : ওই সময় কোন পদে ছিলেন?
উত্তর : ওএসডি স্টাবলিশমেন্ট। তার আগে ঢাকার এসপি ছিলাম।
প্রশ্ন : আপনি ছাত্র রাজনীতি করতেন?
উত্তর : হ্যা।
প্রশ্ন : ছাত্রলীগ করতেন?
উত্তর : হ্যা।
প্রশ্ন : এখন আওয়ামী লীগের রাজনীতির সাথে জড়িত?
উত্তর : মোটামুটি।
প্রশ্ন : আপনি ১৯৯১ সালে বরিশাল সদর আসন থেকে আওয়ামী লীগের প্রার্থী হিসেবে আব্দুর রহমান বিশ্বাসের সাথে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করেছেন।
উত্তর : হ্যা।
প্রশ্ন : এরপরও আপনি নির্বাচনে একই দল থেকে  একই আসনে নির্বাচন করছেন।
উত্তর : হ্যা।
প্রশ্ন : আপনি খুলনার এসপি ছিলেন?
উত্তর : না।
প্রশ্ন : খুলনায় কোন সময় দায়িত্ব পালন করেছেন?
উত্তর : না।
প্রশ্ন :  আপনি  কোন সেক্টরে যুদ্ধ করেছেন এবং আপনার দায়িত্ব কি ছিল?
উত্তর : আট নং সেক্টরের সাব সেক্টর নম্বর এ (আলফা) দায়িত্বে ছিলাম আমি।
প্রশ্ন : স্বাধীনতার ঘোষনা প্রথম কখন শুনতে পান?
উত্তর : কোন স্বাধীনতার ঘোষনা?
প্রশ্ন : ইপিআর ওয়ারলেস এর মাধ্যমে স্বাধীনতার ঘোষনা ।
উত্তর :   মনে নেই।
প্রশ্ন : কালুরঘাট বেতার কেন্ত্র থেকে প্রচারিত স্বাধীনতার ঘোষনা  শুনেছেন?
উত্তর : মনে নেই।
প্রশ্ন : যুদ্ধের সময় গ্রেফতার করে রাজাকার আল বদর সদস্যদের কোথায় রাখতেন?
উত্তর : কখন কোথায় কাকে রেখেছি তা মনে নেই।
প্রশ্ন : পাকিস্তান সৈন্য ছাড়া অন্য যুদ্ধবন্দীদের কার কাছে হস্তান্তর করেন?
উত্তর : অন্য যুদ্ধবন্দীদের আমি গ্রেফতার করিনি। আমার অধীনস্ত সৈন্যরা কেউ গ্রেফতার করলে তাদের জেলখানায় রাখা হত।
প্রশ্ন : আলফা কোম্পানীর দায়িত্ব কবে পান?
উত্তর : মে মাসে।
প্রশ্ন : যুদ্ধবন্দীদের প্রতি কি ধরনের আচরন করতে হবে, কিভাবে রাখতে হবে এ বিষয়ে সরকারি কি নির্দেশনা ছিল আপনার প্রতি?
উত্তর : নির্দেশনা ছিল তাদের বিচার করা হবে।
প্রশ্ন : ১৬ ডিসেম্বর পর্যন্ত আপনি আপনার এলাকার যুদ্ধবন্দীদের বিচারের জন্য  কোন সামরিক আদালত বা কোর্ট মার্শাল গঠনের আদেশ দিয়েছিলেন কিনা?
উত্তর : এরকম কোন ঘটনা ঘটেছে বলে আমার জানা নেই।
প্রশ্ন : ১৯৭১ সালের মে মাস থেকে ১৬ ডিসেম্বর পর্যন্ত আপনার এলাকায় আপনার অধীনে কোন রাজাকার আল বদর আল শামস বাহিনীর কেউ গ্রেফতার হয়নি?
উত্তর : আমার জানা নেই। আমি যুদ্ধে রত ছিলাম। আমি নিজে কোন গ্রেফতার করিনি। তবে আমার অধীনে আমার অধস্তনরা কিছু গ্রেফতার করে আমার কাছে নিয়ে আসে। আমি তাদের সাথে কথা বলি।
প্রশ্ন : স্বাধীনতার বিরোধী যারা গ্রেফতার হয় তাদের দুয়েকজনের নাম বলতে পারবেন?
উত্তর : মনে নেই।
প্রশ্ন :  ডিআইজি আব্দুর রহিম কে চিনতেন?
উত্তর : আব্দুর রহিম নামে কোন ডিআইজি ছিল কি-না মনে নেই।
প্রশ্ন : আনসার বাহিনী বিলুপ্ত হবার সময় এর প্রধান কে ছিলেন?
উত্তর :  জানা নেই।
প্রশ্ন রাজাকার বাহিনীর প্রথম পরিচালক কে ছিলেন?
উত্তর : জানা নেই।
প্রশ্ন ১৩/১৪ ডিসেম্বর পর্যন্ত এ পদে কে ছিলেন?
উত্তর : জানা নেই। 
প্রশ্ন : আপনি ডেপুটি সেক্রেটারি পদ থেকে পুনরায় পুলিশ বাহিনীতে  কবে ফেরত গেলেন।
উত্তর : ১৯৭৩ সালে পুনরায় পুলিশ বাহিনীতে যোগ দেই ঢাকার এসপি হিসেবে।
প্রশ্ন : আপনি প্রথম কোন মন্ত্রণালয়ে ডিএস ছিলেন?
উত্তর :  প্রথমে প্রতিরক্ষা,  তারপর স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ে ডেপুটি সেক্রেটারি ছিলাম। তারপর স্বরাষ্ট্র   মন্ত্রীর পিএস ছিলাম।
প্রশ্ন : স্বাধীনতার পর অধ্যাপক গোলাম আযমের বিরুদ্ধে দালাল আইনে কোন মামলা হয়েছিল কিনা জানেন?
উত্তর : অনেকের সাথে তার বিরুদ্ধেও দুটি মামলা হয়েছিল বলে শুনেছি।
প্রশ্ন : তার একটি হয় ঢাকায়।
উত্তর :  মনে নেই।
প্রশ্ন : ১৯৭৩ সালে ১৭ এপ্রিল যুদ্ধাপরাধীদের বিচার হবে মর্মে একটি প্রেসরিলিজ জারি হয়।
উত্তর : জানা নেই।
প্রশ্ন : ১৯৭৩ সালের ১৭ এপ্রিল থেকে ১৯৭৫ সালের ১৫ আগস্ট পর্যন্ত অধ্যাপক  গোলাম আযমের বিরুদ্ধে যুদ্ধাপরাধ বা মানবতার বিরুদ্ধে অপরাধের কোন অভিযোগ  আনা হয়েছে কি-না  জানা আছে?
উত্তর : জানা নেই।
প্রশ্ন : ১৯৯২ সালের গণতদন্ত কমিশন সম্পর্কে ধারণা আছে?
উত্তর : শুনেছি।
প্রশ্ন : আপনি সেই কমিশনে কোন অভিযোগ দিয়েছিলেন গোলাম আযমের বিরুদ্ধে ?
উত্তর : না।
প্রশ্ন : গণ আদালতে কোন অভিযোগ দিয়েছিলেন?
উত্তর : না।
প্রশ্ন : তদন্ত কর্মকর্তার সাথে কবে দেখা হয়?
উত্তর : মনে নেই।
প্রশ্ন : কোথায় দেখা হয়?
উত্তর : তাও মনে নেই।
প্রশ্ন : এই ট্রাইব্যুনালে এসে জবানবন্দী প্রদানের আগে আপনি অন্য কোথাও এই মামলা বিষয়ে কোন বক্তব্য দেননি।
উত্তর : মামলা বিষয়ে তদন্ত  কর্মকর্তার সাথে আলাপ আলোচনা হয়েছে। (এ প্রশ্ন  এবং উত্তর নিয়ে বেশ কিছুক্ষন বিতর্ক চলে। তবে সাক্ষী  তদন্ত কর্মকর্তার কাছে সাক্ষ্য দিয়েছেন মর্মে  উত্তর রেকর্ড করা হয়।
(চলবে)

কোন মন্তব্য নেই:

একটি মন্তব্য পোস্ট করুন