বুধবার, ২৭ নভেম্বর, ২০১৩

স্বাধীনতা যুদ্ধ শুরুর তারিখ বলতে পারলেননা সাক্ষী

মেহেদী হাসান, ৮/১/২০১২
দশম সাক্ষী বাসুদেব মিস্ত্রি জবানবন্দী   এবং জেরায়  জানান  তার বর্তমান বয়স আনুমানিক ৫৩ অথবা ৫৪ বছর। ১৯৭১ সালে তার বয়স ছিল ১৩/১৪ বছর। মাওলানা সাঈদীর আইনজীবী তাকে প্রশ্ন করেন, ‘১৯৭১ সালের ২৬ মার্চ স্বাধীনতা যুদ্ধ শুরু হয়। এটা কি আপনার জানা আছে?’। তখন সাক্ষী বাসুদেব মিস্ত্রি বলেন, কোন তারিখে যুদ্ধ শুরু হয় তা আমার  স্মরন নেই। জানা নেই।

তবে  ৪০ বছর আগে ১৯৭১ সালের কোন তারিখে কাদের নেতৃত্বে  মানিক পসারীর বাড়ি  লুটপাট হয় এবং আগুন ধরানো   তা বলতে পেরেছেন তিনি। আবার মানিক পসারীর বাড়ি লুটপাটের তারিখ মনে রাখতে পারলেও  নিজের বাড়ি পোড়ানোর বার এবং তারিখ নির্দিষ্ট করে  বলতে পারেননি। বলেছেন মানিক পসারীর বাড়ি পোড়ানোর তিন চার দিন পর তাদের বাড়ি পোড়ানো হয়।

মাওলানা সাঈদীর বিরুদ্ধে এ মামলায় যেসব অভিযোগ রয়েছে তার মধ্যে  আলোচিত  একটি ঘটনা হল মানিক পসারীর বাড়ি লুট এবং আগুন দেয়ার ঘটনা। মানিক পসারীর বাড়িতে তখন কাজ করত  মানিক পসারীর ফুফাত ভাই  মফিজ উদ্দিন পসারী। আরেকজন কাজের লোক ছিলেন ইব্রাহীম কুট্টি। মফিজ  উদ্দিন, মানিক পসারী ছাড়াও অন্য  আরো কয়েকজন সাক্ষী বলেছেন,  মফিজ উদ্দিন  এবং ইব্রাহীম কুট্টিকে পাক আর্মি, রাজাকার ও শান্তি কমিটির লোকেরা  মানিক পসারীর বাড়ি থেকে ধরে নিয়ে যায় ৮ মে।   এর মধ্যে ইব্রাহীম কুট্টিকে মাওলানা সাঈদীর নির্দেশে পারেরহাট বাজারে  হত্যা  করে নদীতে লাশ ফেলে দেয়া  হয় ।  মফিজ উদ্দিনকে ক্যাম্পে নিয়ে যাবার পর সেখান থেকে তিনি  পালিয়ে আসতে সক্ষম হয়। সাক্ষীরা বলেন,   ইব্রাহীম কুট্টি  এবং মফিজকে ধরে নিয়ে যাবার আগে মানিক পসারীর বাড়িতে  লুটপাট করে আগুন ধরিয়ে দেয়া হয়।

রাজাকার ক্যাম্প থেকে পালিয়ে আসা মফিজ উদ্দিন  পসারী  গত ২৯ ডিসেম্বর মাওলানা সাঈদীর বিরুদ্ধে আদালতে সাক্ষ্য দিয়ে বলেছেন, ১৯৭১ সালে ৮ মে সকালে তিনি এবং অপর কাজের লোক ইব্রাহিম কুট্টি সকালে চরে গরু মহিষ চড়াইতে ছিলেন চরে।  সকাল আনুমানিক ১০/১১টার দিকে মানিক পসারীর বাড়িতে আগুনের ধোয়া দেখে গরি মহিষ নিযে বাড়িতে  আসেন।    গরু  মহিষ আতালে  রাখেন। 

বাসুদেব মিস্ত্রী  আদালতে  জেরার সময় বলেছেন, ইব্রাহীম ও মফিজ ঐদিন খুব সকাল থেকেই  মানিক পসারীর বাড়িতে ছিলেন। বাসুদেব মিস্ত্রি বলেন,  ৮ মে খুব সকালে হাত মুখ ধুয়ে  তিনি  তার বাবার সাথে মানিক পসারীর বাড়িতে যান।  তার বাবা মানিক পসারীর বাড়িতে কাঠ মিস্ত্রির কাজ করত। বাসুদেব  বাবার সাথে যোগালীর কাজ করত।  বাসুদেব আদালতে জানান, তিনি ঐদিন খুব সকালে গিয়ে মফিজ উদ্দিন  পসারী  এবং ইব্রাহীম কুট্টিকে মানিক পসারীর  বাড়িতে দেখতে পান। পাক আর্মি এবং রাজাকাররা তাদের ধরে নিয়ে যাবার আগ পর্যন্ত   তারা বাড়িতেই ছিল।    তাছাড়া  তাদের গরু মহিষগুলোও গোয়াল ঘরে ছিলনা  এবং গোয়াল ঘরে আগুনও দেয়া হয়নি। অথচ অন্যান্য সাক্ষীরা বলেছেন গোয়ালঘরসহ মোট পাঁচটিপ ঘর পোড়ানো হয়।  লুটপাটের সময় গরু মহিষও নিয়ে যায়   লোকজন। আর মফিজ ও ইব্রাহীম  ছিল চরে। আগুন দেখে তারা গরু নিয়ে বাড়ি আসে।
       
দশম সাক্ষীর জবানবন্দী:
১৯৭১ সালে  বাবার সাথে মিস্ত্রি কাজে যোগালী দিতাম। বয়স আনুমানিক ১৩/১৪ বছর  হবে।   বাবায় মানিক পসারীর বাড়িতে কাজ করত। আমিও তার সাথে কাজ করতাম। পশ্চিমারা যুদ্ধ শুরুর পর ২/৩ মাস পর পারেরহাট স্কুলে ক্যাম্প করল আর্মি। শান্তি বাহিনীর লোকেরা রেজাকার বাহিনী গঠন করে। দেলু শিকদার, সেকেন্দার শিকদার, মোসলেম মাওলানা, হাকিম কারীম রুহুল আমিন, মন্নান আরো অনেকে মিলে রেজাকার বাহিনী গঠন করে।
মে মাসের ৮ তারিখে পাঞ্জাবী আর্মি, রাজাকার, শান্তি বাহিনীর লোকজন মানিক পসারীর বাড়িতে আসে। তাদের আসতে দেখে বাড়ির লোকজন পালিয়ে যায়।  তারা বাড়িতে ঢুকল। ইব্রাহীম কুট্টি ও মফিজ উদ্দিন  মানিক পসারীর বাড়িতে কাজ করত। ওদের ধরে বেঁধে ফেলল। দিলু শিকদার, সেকেন্দার আলী শিকদার, মোসলেম মাওলানা, দানেশ আলী মোল্লা, রুহুল আমিন, হাকমি কারী মোমিন এদের দেখেছি তখন।  এদের চিনি। ওরা ধান চাউল সব লুটপাট করে নিয়ে  গেল ভাগ করে। আর দামি মালামাল নিল দিলু শিকদার।  এরপর দিলু আর অন্য রাজাকাররা মিলে ঘরে আগুন দিল। ইব্রাহীম আর মফিজকে নিয়ে রওয়ান দিল।  বাজারের ব্রিজের ওপর উঠল। তারপর দেলোয়ার সাঈদী হেগো লগে (পাক আর্মি) কি যেন বলল। আমরা আড়ালে বসে  দেখছি। ইব্রাহীমকে বাঁধন  খুলে ব্রিজ পার হয়ে ঘাটের দিকে নিয়ে গেল। মফিজকে নিয়ে গেল ক্যাম্পের দিকে। আর ইব্রাহীমকে গুলি দিয়ে ফেলে দেয়। তারপর আমরা দৌড়ে বাড়ি যাই।
ক্যাম্পে নিয় মফিজকে খুব নির্যাতন করে। পরে মফিক পালিয়ে এসে একথা আমাদের বলেছে।
সাক্ষী পরে বলেন, আমাদেরসহ আরো অনেক হিন্দুদের বাড়িঘর দেলোয়ার হোসেন সাঈদী ও  অন্যান্য রাজাকাররা পুড়িয়ে ফেলে।

দশম সাক্ষীর জেরা :
আইনজীবী: আপনি  রহুল আমিনের নাম বললেন। তাকে চেনেন?
সাক্ষী: হ্যা।
আইনজীবী উনি বেঁচে আছেন?
সাক্ষী: হ্যা। পিরোজপুরে ওকালতি করে।
আইনজীবী: রুহুল আমিনের বাড়ি কোথায় জানেন?
সাক্ষী: গাজিপুর গ্রামে।
আইনজীবী: ১৯৭১ রুহুল আমিন রাজাকার ছিল। এখন ওকালতি করে।
সাক্ষী: ১৯৭১ সালে আল বদর ছিল সে।
আইনজীবী: ১৯৭১ সালের আগে রুহুল আমিন কি করত?
সাক্ষী: জানা নেই।
আইনজীবী: ৮ মে বাড়ি পোড়ানোর কতদিন আগে মানিক পসারীর মা বাবা বাড়ি  ছেড়ে গেলেন?
সাক্ষী: ঐ দিনই।
আইনজীবী: কতজন পালিয়ে গেলেন?
সাক্ষী: তা জানা নেই। যত লোক ছিল সব পালিয়ে গেল।
আইনজীবী: কয়টার দিকে পালিয়েছে অনুমান?
সাক্ষী: আটটা নয়টার দিকে অনুমান। আগুন দেছে দুপুরে।
আইনজীবী: মানিক পসারীর বাবা সইজুদ্দীন এবং অন্যরা পালিয়ে যাবার সময় ইব্রাহীম ও মফিজ বাড়িতে ছিল?
সাক্ষী: হ্যা।
আইনজীবীধ আপনার ঐদিন কয়টায় মানিক পসারীর বাড়িতে কাজে আসেন?
সাক্ষী: সকালে মুখ টুখ ধুয়ে চলে আসি।
আইনজীবী: আপনারা এসে সইজুদ্দীন এবং অন্যদের বাড়িতে দেখেছেন?
সাক্ষী: হ্যা।
আইনজীবী: ইব্রাহীম কুট্টি  এবং মফিজ  দুজনকেই তখন বাড়িতে দেখেছেন?
সাক্ষী: হ্যা। সবাইকে দেখেছি।
আইনজীবী: আপনারা সকালে ঐ বাড়িতে যাবার পর থেকে পাক আর্মি   ধরে নিয়ে যাবার আগ পর্যন্ত ইব্রাহিম এবং মফিজ ঐ বাড়িতেই ছিল?
সাক্ষী: হ্যা।
আইনজীবী: ইব্রাহীম কুট্টি  মানিক পসারীর বাড়িতে যে  ঘরে  থাকত সেটা দেখেছেন?
সাক্ষী: হ্যা।
আইনজীবী: ঘরটা   মূল  ঘরের মধ্যে না বাইরেরর কোন ঘর।
সাক্ষী: বলতে পারবনা।
আইনজীবী: মফিজ উদ্দিন পসারীর বাড়ি চিনতেন?
সাক্ষী: আগে নিজের বাড়িতে থাকত। কাজের সময় মানিক পসারীর বাড়ি  থাকত।
আইনজীবী: মফিজের বাড়ি কোথায় বলতে পারেন?
সাক্ষী: চিথলিয়া।
আইনজীবী: তার শ্বশুর বাড়ি চিনতেন?
সাক্ষী: এখন সে শ্বশুরবাড়িতে থাকে।
আইনজীবী: মফিজের নিজ বাড়ি  এবং শ্বশুর বাড়ি ১৯৭১ সালে পোড়ানো হয়?
সাক্ষী: জানা নেই।
আইনজীবী: মফিক পালিয়ে আসার পর প্রথম কবে দেখা হয়?
সাক্ষী: স্বাধীনের পর।
আইনজীবী: মফিজকে অত্যাচারের কথা স্বাধীনের পর শুনেছেন?
সাক্ষী: হ্যা।
আইনজীবী: ১৯৭১ সালে আপনারা দেশেই ছিলেন। ভারতে পালিয়ে যাননি।
সাক্ষী: না। দেশে ছিলাম। পালিয়ে পালিয়ে ছিলাম।
আইনজীবী: যুদ্ধ শুরুর কতদিন পর আপনারা পালিয়ে যান?
সাক্ষী:  আমাদের ঘর পোড়ানোর পর।
আইনজীবী: মানিক পসারীর বাড়ি পোড়ানোর কতদিন পর তার সাথে আপনার দেখা হয়?
সাক্ষী: সে জঙ্গলে  জঙ্গলে পালিয়ে থাকত। মাঝে মাঝে দেখা হত তখন।
আইনজীবী: ১৯৭১ সালের ২৬ মার্চ স্বাধীনতা যুদ্ধ শুরু হয়। এটা জানা আছে আপনার?
সাক্ষী: কোন তারিখে যুদ্ধ শুরু হয় তা স্মরন নেই। জানা নেই।
আইনজীবী:  মে মাসের পরের মাস কোনটা?
সাক্ষী: জুন।
আইনজীবী: মে মাসের আগের মাস কোনটা  জানা আছে?
সাক্ষী: বলতে পারবনা।
আইনজীবী: ৮ মে তারিখের ঘটনা কিভাবে জানলেন
সাক্ষী: মনে আছে।
আইনজীবী: পিরোজপুর শহরে পাক আর্মি কবে আসেন তা জানেন?
সাক্ষী: না।
আইনজীবী: আপনাদের এলাকায় কবে  আসে?
সাক্ষী: জানা নেই।
আইনজীবী: পাক আর্মি আসার কতদিন পর পিস কমিটি গঠন হয়?
সাক্ষী: আসার পর হয়। তবে কতদিন পর হয় তা বলতে পারবনা।
আইনজীবী: ৮ মে ঘটনার দিন সইজুদ্দীন পসারীর ( মানিক পসারীর পিতা) বাড়ির পাঁচটি ঘর পোড়ানো ছাড়া চিথলিয়ায় অন্য কোন  বাড়ি ঘর পোড়ানো হয়নি।
সাক্ষী: না। অন্য ঘরবাড়ি পোড়ানো হয়নি।
আইনজীবী: ঐ দিন সইজুদ্দীন পসারীর অন্য কোন ভাইয়ের ঘর পোড়ানো হয়?
সাক্ষী: না।
আইনজীবী:সইজুদ্দীন পসারীর বাড়ি পোড়ানোর কতদিন পর আপনাদের বাড়ি পোড়ানো হয়?
সাক্ষী:  তিন/চারদিন পর।
আইনজীবী: আপনাদের বাড়িতে কতজন লোক ছিল?
সাক্ষী: জনা ১৫।
আইনজীবী: আপনাদের এলাকায় কয়টি বাড়ি পোড়ায়?
সাক্ষী: হিমাংশু  মাস্টার, যাদব, হিতাংশু ।
আইনজীবী: আপনার বাড়ি পোড়ানোর বিষয়টি মানিক পসারী জানতেন?
সাক্ষী: হ্যা।
আইনজীবী: পিরোজপুর আদালতে মানকি পসারী বাড়ি পোড়ানো বিষয়ে  মাওলানা দেলাওয়ার হোসাইন সাঈদীর বিরুদ্ধে মামলা করেছিলেন তা জানেন?
সাক্ষী: হ্যা।
আইনজীবী: আপনি ঐ মামলায় পিরোজপুর আদালতে সাক্ষ্য দিয়েছেন?
সাক্ষী: হ্যা।
আইনজীবী:  পিরোজপুর আদালতে সাক্ষ্য দেয়ার সময় আপনার বাড়ি পোড়ানোর কথা, ইব্রাহীম কুট্টিকে হত্যা করতে দেখার কথা, মালামাল লুটের কথা বলেননি।
সাক্ষী: জানিনা। মনে নেই।
আইনজীবী:  ঐ সাক্ষ্য দেয়ার সময় মাওলানা সাঈদী রাজাকার বা শান্তি কমিটি গঠন করে সেকথাও বলেননি।
সাক্ষী: মনে  নেই।
আইনজীবী: কবি সুফিয়া কামাল, জাহানারা ইমাম, ড. আহমেদ শরিফ, মেজবাহ উদ্দিন, শাহরিয়ার কবির (আরো প্রায়ং ৩০ জনের নাম  জিজ্ঞেস করা হয় যারা ১৯৯৩ সালে ঘাতক দালাল নির্মূল কমিটি  গঠিত গণতদন্ত কমিশনের সেক্রেটারিয়েট মেম্বার ছিলেন) এদের নাম শুনেছেন?
সাক্ষী: না। এদের নাম জানা নেই।
আইনজীবী: ১৯৭১ সালের ঘটনা বিষয়ে আপনি আজকে আদালতে দেয়া সাক্ষ্য, পিরোজপুর আদালতে দেয়া সাক্ষ্য  এবং এই মামলার তদন্ত কর্মকর্তার কাছে সাক্ষ্য দেয়া ছাড়া আর কোথায় কখনো বলেননি এবং আপনাকে কেউ জিজ্ঞেসও করেননি?
সাক্ষী:  না।
আইনজীবী: এই মামলার তদন্ত কর্মকর্তা হেলাল সাহেব এখানে  উপস্থিত আছেন?
সাক্ষী: হ্যা।
আইনজীবী: ওনার কাছে কবে জবানবন্দী দিয়েছেন মনে আছে?
সাক্ষী: স্মরন নেই।
আইনজীবী: কোন বছর বা কোন মাস তা অনুমান করে বলতে পারবেন?
সাক্ষী: না।
আইনজীবী: আপনার বাড়ির পোড়া কোন আলামত এখন আছে?
সাক্ষী: কত বছর আগের কথা! সেটা কি এখনো থাকতে পারে আপনি বলেন?
আইনজীবী: অন্য কোন বাড়ির পোড়া কোন  আলাতম আছে কি-না তা জানেন?
সাক্ষী: কার কি আছে বা না আছে তা আমি কি করে বলব?

আইনজীবী: গত ২ বছরে ১৯৭১ সালে পোড়া কোন আলামত দেখেছেন?
সাক্ষী: কার কি আছে  বা না আছে তা আমি জানব কি করে?
আইনজীবী: ইব্রাহীম কুট্টির বাড়ি কোন গ্রামে জানা আছে?
সাক্ষী: বলতে পারবনা।
আইনজীবী: সে বিবাহিত ছিল কি-না তাও বলতে পারবেননা।
সাক্ষী: না বলতে পারবনা।
আইনজীবী: ইব্রাহীমের সাথে কতদিন ধরে পরিচয় ছিল ১৯৭১ সালের আগে?
সাক্ষী:  বলতে পারবনা। ছোট বেলা থেকে তাকে ঐ বাড়িতে কাজ করতে দেখেছি।
আইনজীবী: আপনি মানিক পসারীর বাড়ি  কতদিন আগে থেকে যেতেন বা প্রথম কবে যান ঐ বাড়িতে কাজ করতে?
সাক্ষী: ১৯৭১ সাল থেকেই।
আইনজীবী: মফিজকে কতদিন ধরে চিনতেন?
সাক্ষী: ছোট বেলা থেকেই। ৭/৮ বছর বয়স থেকে।
আইনজীবী: মফিজ মানিক পসারীর বাড়িতে কাজ করার আগে কি করত?
সাক্ষী: জানা নেই।
আইনজীবী: নল বুনিয়ার নাম শুনেছেন?
সাক্ষী: হ্যা।
আইনজীবী: ১৯৭১ সালেই নাম শুনেছেন?
সাক্ষী: হ্যা।
আইনজীবী: ঐ গ্রামের সাহেব আলী ওরফে সিরাজ  স্থানীয় রাজাকারদের সহায়তায় পাক আমির হাতে নিহত হয় তা জানতেন?
সাক্ষী: না।
আইনজীবী: দানেশ মোল্লাকে চেনেন?
সাক্ষী: চিনি।
আইনজীবী: আতাহার আলী পিতা আইনুদ্দীন বারইখালি। তাকে চেনেন?
সাক্ষী: না।
আইনজীবী: আশ্রাফ আলী টেংরাটিলা।
সাক্ষী: চিনিনা।
আইনজীবী: আব্দুল মান্নান পিতা হাশেম আলী হাওলাদার বাদুরা।
সাক্ষী: চিনিনা।
আইনজীবী: আইউব আলী।
সাক্ষী: চিনিনা।
আইনজীবী: কালাম চকিদার
সাক্ষী: চিনিনা।
আইনজবিী: রুহুল আমিন রাজাকার পিতা আনোয়ার হোসেন।
সাক্ষী: চিনিনা।
আইনজীবী: মমিন রাজাকার।
সাক্ষী: চিনি।
আইনজীবী: সেকেন্দার আলী শিকদার, পিতা মনসুর আলী হোগলাবুনিয়া।
সাক্ষী: চিনি।
আইনজীবী: মোসলেম মাওলানা।
সাক্ষী: চিনি।
 আইনজীবী: তিনি পার্টি করেন?
সাক্ষী: জানা নেই।
আইনজীবী:  তৎকালীন এএসআই শামসুর রহমান ।
সাক্ষী: চিনিনা।
আইনজীবী: এরা এবং পাক হানাদার বাহিনী মিলে ১৯৭১ সালের ! অক্টোবর মাসে  ইব্রাহীম কুট্টির  শ্বশরবাড়িতে ইব্রাহিম কুট্টি এবং ইব্রাহীমের শ্যালক সাহেব আলী ওরফে সিরাজকে হত্যা করে। এ ঘটনা জেনেও আপনি গোপন করছেন।
সাক্ষী: আমি জানিনা।
আইনজীবী: মাওলানা সাঈদীকে কবে থেকে চিনতেন?
সাক্ষী: ১৯৭১ সালের মেলা আগে থেকে।
আইনজীবী: ১৯৭১ সালের আগে উনি কি করতেন?
সাক্ষী: বাজারে তেল নুন বিক্রি করতেন।
আইনজীবী: বাজারে তার দোকান ছিল?
সাক্ষী: দোকান দিয়া বেঁচত?
আইনজীবী: কেমন দোকান ছিল?
সাক্ষী: ফুটপাথে বিক্রি করত।
আইনজীবী: প্রতিদিন বিক্রি করত?.
সাক্ষী: না হাটের দিন।
আইনজীবী: অন্য দিন কি করত?
সাক্ষী: জানা নেই।
আইনজীবী: যুদ্ধের কতদিন আগে থেকে তাকে তেল নুন বিক্রি করতে দেখেছেন?
সাক্ষী: মনে  নেই।
আইনজীবী: দেশ স্বাধীন হবার পর প্রথম তাকে কবে দেখলেন?
সাক্ষী: বলতে পাবরনা।
আইনজীবী: যে মে মাসের কথা বললেন সেটা কি ইংরেজি না বাংলা মাসের তারিখ?
সাক্ষী: ইংরেজি।
আইনজীবী: ৮ তারিখ কি বার ছিল?
সাক্ষী: বলতে পারবনা।
আইনজীবী: আপনার ঘর কিবার পোড়ানো হয় মনে আছে?
সাক্ষী: বার তারিখ মনে নেই।
আইনজীবী: মানিক পসারীর বাড়িতে যে ৮ মে গেলেন, সেদিন সকালের খাবার কোথায় খেয়েছিলেন?
সাক্ষী: নিজের বাড়িতে।
আইনজীবী: মানিক পসারীর বাড়ির গোয়াল ঘর পোড়ানো হয়েছিল?
সাক্ষী: না।
আইনজীবী: তাদের বাড়ির  গরু মহিষ মিলিটারি রাজাকাররা নিয়ে যায়?
সাক্ষী: না। গরু মহিষ চরে ছিল। সেজন্য নিতে পারেনাই।
আইনজীবী: মোসলেম মাওলানা ঢাকা রেসিডেনসিয়াল মডেল স্কুলের ধর্মীয় বিষয়ের শিক্ষক ছিলেন।
সাক্ষী: জানা নেই।
আইনজীবী: তিনি এখন এলাকায় আছেন?
সাক্ষী: জানা নেই।
আইনজীবী: আপনার এলাকায় মুক্তিযোদ্ধা কমান্ডার কে ছিলেন  জানা আছে?
সাক্ষী: জানা নেই।
আইনজীবী: রাজাকার ক্যাম্পে গিয়েছিলেন কখনো?
সাক্ষী: না।
আইনজীবী: আপনার এলাকা কবে শত্রুমুক্ত হয় তা মনে আছে?
সাক্ষী: না।
আইনজীবী: আপনি যে মামলায় সাক্ষী দিচ্ছেন তার বাদী কে জাননে?
সাক্ষী: মানিক পসারী।
আইনজীবী: মুক্তিযুদ্ধের সময় শামসুল আলম তালুকদারের নাম শুনেছেন?
সাক্ষী: কত লোকের নামই তো শোনা যায়।
আইনজীবী: তিনি রাজাকার না মুক্তিযোদ্ধা।
সাক্ষী: জানা নেই।
আইনজীবী: আপনি এই মামলার তদন্ত কর্মকর্তার কাছে জবানবন্দীতে মুক্তিযুদ্ধের সময় বাবার সাথে মানিক পসারীর বাড়িতে গিয়ে যোগালী কাজ করার কথা বলেননি।
সাক্ষী: সত্য নয়।
আইনজীবী: মাওলানা সাঈদী শান্তি কমিটি বা রাজাকার বাহিনী গঠন করেন তাও বলেননি।
সাক্ষী: বলেছি।
আইনজীবী: মে মাসের ৮ তারিখের কথাও বলেননি।
সাক্ষী: বলেছি।
আইনজীবী: দিলু শিকদার, সেকেন্দার আলী শিকদার, মোসলেম মাওলানা, দানেশ আলী মোল্লা, রুহুল আমিন, হাকমি কারী মোমিন  ওরা ধান চাউল  সব লুটপাট করে নিয়ে  গেল ভাগ করে। আর দামি মালামাল নিল দিলু শিকদার।  তারপর দেলু শিকদার ও অন্যান্য রাজাকাররা মিলে আগুন দিল বলে আদালতে যে সাক্ষ্য দিলেন একথাও আগে তদন্ত কর্মকর্তার কাছে বলেননি।
সাক্ষী: সত্য নয়।
আইনজীবী:  ব্রিজের ওপর  উঠে দেলোয়ার সাঈদী হেগো লগে (পাক আর্মি) কি যেন বলল। আমরা আড়ালে বসে  দেখছি। একথাও বলেননি ।
সাক্ষী: সত্য নয়।
আইনজীবী: আমার বাড়ি ও অন্যান্য হিন্দুদের ঘরবাড়ি দেলু শিকদার ও অন্যান্য রাজাকারা আগুন দিয়ে পুড়িয়ে দেয় একথাও বলেননি।
সাক্ষী : সত্য নয়।

কোন মন্তব্য নেই:

একটি মন্তব্য পোস্ট করুন