মেহেদী হাসান, ২৬/৯/২০১২
জামায়াতে ইসলামীর সাবেক আমীর অধ্যাপক গোলাম আযমের বিরুদ্ধে আজ সাক্ষ্য দিয়েছেন শফিউদ্দিন আহমেদ। তিনি গোলাম আযমের বিরুদ্ধে চতুর্থ নিয়মিত সাক্ষী হিসেবে সাক্ষ্য দিলেন।
জবানবন্দী :
আমার নাম শফিউদ্দিন আহমেদ। বয়স ৫৮। গ্রাম রানমনগর, থানা হোমনা, জেলা কুমিল্ল। ১৯৬৯ সালে রামকৃষ্ণপুর কে কে আর উচ্চ বিদ্যালয় থেকে এসএসসি পাশ করি। ১৯৭০ সালে করাচি সরকারি বাংলা মহাবিদ্যালয়ে একাদশ শ্রেণীতে ভর্তি হই। ১৯৭১ সালের জুন মাসে তদানিন্তন পূর্ব পাকিস্তানে আসি। আমার পাশের গ্রাম রামকৃষ্ণপুর শহীদ সিরু মিয়া দারোগার বাড়িতে অস্থায়ী মুক্তিযোদ্ধা ক্যাম্পে যোগাযোগ করে। ওখানে আমি মুক্তিযুদ্ধের পক্ষে কাজ শুরু করি। আমার কাজের মধ্যে উল্লেখযোগ্য ছিল ওই ক্যাম্প থেকে মুজিবনগর সরকারের প্রধানমন্ত্রী তাজউদ্দিন আহমেদের স্ত্রী জোহরা তাজউদ্দিনকে ভারতে নিয়ে যাওয়া। এর কিছু দিন পর সাবেক রাষ্ট্রপতি বদরুদ্দোজা চৌধুরীরকে তার পরিবারসহ ভারতে পাঠাই একইভাবে।
এ ক্যাম্প থেকে সিরু মিয়া দারোগার সাথে আমিসহ ছয় জন ২৫ অক্টোবর রাতে ভারতে রওয়ান হই। অন্যরা ছিল সিরু মিয়ার সন্তান শহীদ আনোয়ার কামাল, দাউদিকান্দি থানা মুজিবাহিনী কমান্ডার শহীদ নজরুল ইসলাম, ডেপুটি কমান্ডার শহীদ আবুল কাসেম এবং জাহাঙ্গীর সেলিম।
আমরা নৌকাযোগে রওয়ানা হই। সীমান্তবর্তী এলাকায় সতরা গ্রামে পৌছে সেখানে ২৬ অক্টোবর অবস্থান করি। ২৭ তারিখ সীমান্তের দিকে রওয়ান দেই। আমাদের সাথে গাইড ছিল তালেব। সে খবর দিল রাস্তা কিয়ার। তারপর আমরা রাস্তা ধরে রওয়ানা দেই। রওয়ানার পর রাস্তায় ওঠার সাথে সাথে রাজাকার চেকপোস্টে তন্তর পৌছলে হঠাৎ করে ২০/২৫ জন রাজাকার আমাদের ঘিরে ফেলে। ২ জন করে আমাদের একসাথে বাঁধে। ৫/১০ মিনিট পর ইউলার দিক থেকে পাকিস্তান আর্মির একটি গাড়ি আসে। ৫/৬ জন আর্মি নামে। নুজরুল এবং সিরু মিয়ার কাছে দুটি রিভলভার ছিল। তা তারা নিয়ে নিল। এরপর আমাদের বিবাড়িয়াগামী একটি চাউলের ট্রাকে তোলা হয়। সাথে ৫/৭ জন রাজাকার দেয় পাহারার জন্য। ব্রাèনবাড়িয়া শহরের প্রথম প্রান্তে আমাদের নামিয়ে দেয়া হয়। পায়ে হাটিয়ে কোর্ট বিল্ডিং পর্যন্ত নিয়ে যায়। আমাদের মাঠে রাখা হয়। অনেক লোকজন দেখতে আসে। এর মধ্যে সাদা পাঞ্জাবী পরা বেত হাতে একজন এসে গালাগালি করতে থাকে। নাম জিজ্ঞাসা করে জানতে পারি তার নাম পেয়ারা মিয়া। পেয়ারা মিয়ার সাথে ৫/৭ জন যুবক ছিল। তারা আমাদের হাত থেকে ঘড়ি এবং আংটি ছিনিয়ে নেয়। এরপর আমাদের শহরের অন্নদা স্কুলের কালি মন্দিরের সামনে নিয়ে যায়। সেটি তখন রাজাকার মন্দির হয়। সেখানে হাটিয়ে নিয়ে যাবার পথে হ্যান্ড মাইকে ঘোষনা করা হয় স্পেশাল বাহিনীর ছয়জন অস্ত্রসহ ধরা পড়েছে। তখন আমাদের দেখার জন্য প্রচুর লোকসমাগম হয়। ওই রাতে আমাদের রাজাকার মন্দিরে রাখা হয়। পরদিন সকাল ১০টায় আগে পিছে আর্মি স্কট দিয়ে পায়ে হাটিয়ে ব্রাèনবাড়িয়া কলেজের সামনে দানা মিয়ার বাড়ির সামনে নেয়া হয়। সেটা ছিল আর্মির নির্যাতন কেন্দ্র। আমাদের ছয়জনকে একরুমে নেয়া হয়।
পাকিস্তান আর্মি ক্যাপ্টেন আলী রেজা, ব্রিগেডিয়ার সাদ উল্লাহ, হাবিলদার বশিরউদ্দিন আসেন। আমাদের নির্যাতন শুরু করেন। এক পর্যায়ে আমরা অজ্ঞান হয়ে পড়লে বাহির থেকে দরজা বন্ধ করে চলে যায়। সন্ধ্যার দিকে আমাদের জ্ঞান ফিরলে ব্রাèনবাড়িয়া থানা হাজতে পাঠানো হয়। পরের দিন সকালে আবার দানা মিয়ার বাড়িতে নেয়া হয়। এভাবে ২/৩ দিন নির্যাতন করা হয়। এরপর আমি ছাড়া বাকি পাঁচ জনকে ব্রাèনবাড়িয়া কারাগারে পাঠানো হয়। ২ দিন পর আমাকেও কারাগারে পাঠানো হয়।
হঠাৎ একদিন আর্মির গাড়ি আসে। জেলের গেট খুলে দেয়া হয়। আমিসহ ৩০/৩৫ জন মুক্তিবাহিনীর লোকদের শহরের হাসপাতালে নেয়া হয়। আমাদের সারিবদ্ধভাবে বসিয়ে রেখে প্রত্যেকের শরীর থেকে সিরিঞ্জের মাধ্যমে রক্ত নেয়া হয়। এরপর আমাদের আবার জেলখানায় পাঠানো হয়।
তার কিছুদিন পর ২১ নভেম্বর রোজার ঈদের দিন রাতে পাকিস্তান আর্মির গাড়ি আসে। জেলের গেট খোলা হল। নাম ডেকে ডেকে ৪০ জন বন্দীকে রশি দিয়ে বাঁধা হয়। সাবইকে আর্মির গাড়িতে তোলা হল। এক পর্যায়ে ব্রিগেডিয়ার সাদউল্লাহ আমাকে ডেকে বলে “ফেরেশতাও ছোড় দাও।” এরপর আমাকে বাঁধন খুলে দিয়ে ৪ নং সেলে পাঠানো হয়। সেলের ভেতর একজনকে দেখতে পাই। পরিচয় জিজ্ঞেস করে জানতে পারি তার নাম মেজর অনন্ত সেন। ভারতীয় সেনাবাহিনীর সদস্য। সীমান্ত থেকে তাকে পাকিস্তান আর্মি গ্রেফতার করে। পরেরদিন সকালে জেল গেঠে শুনতে পাই যে ৩৯ জনকে রাতে নেয়া হয়েছিল তাদের হত্যা করা হয়েছে। এরপর ব্রাèনবাড়িয়া স্বাধীন হলে আমি জেল থেকে মুক্ত হই। অসুস্থ অবস্থায় আমার এক সাথী মুক্তিযোদ্ধা নবীনগর ক্যাম্পে পাঠায়। সেখান থেকে আমি গ্রামের বাড়ি ফিরে যাই। যে ৩৯ জনকে হত্যা করা হয় বলে বলেছি তার মধ্য থেকে ১ জন বেঁচে যায় বলে পরে জানতে পারি। তার নাম চিনু। অনুমান চার/পাঁচ মাস পরে তার সাথে আমার ঢাকায় দেখা হয়। তার বাম পাজরে গুলির চিহ্ন দেখায় আমাকে। সে কিভাবে বেঁচে যায় সে ঘটনার পুরো বিবরন দেয়। ৩৮ জনকে গুলি করে হত্যার পর মাটি চাপা দেয়া হয় কৈরতলায়। ওই ৩৮ জনের মধ্যে আমার সাথে থাকা যে চারজন ছিলেন তারা হলেন শহীদ সিরা মিয়া দারোগা, তার ছেলে শহীদ আনোয়ার কামাল, শহীদ নজরুল ইসলাম এবং শহীদ আবুল কাসেম।
এরপর রাষ্ট্রপক্ষের আইনজীবী সুলতান মাহমুদের এক প্রশ্নের জবাবে সাক্ষী বলেন, স্বাধীনতার পর শহীদ সিরু মিয়ার দারোগার স্ত্রীর কাছঠ থেকে জানতে পারি তার ছেলে এবং স্বামীকে বাঁচানোর জন্য গোলাম আযম সাহেবের কাছ থেকে একটি চিঠি নিয়ে এসেছিলেন।
জবানবন্দী শেষে সাক্ষীকে জেরা করেন অধ্যাপক গোলাম আযমের আইনজীবী মিজানুল ইসলাম। মাত্র দশ মিনিটে শেষ হয়ে যায় জেরা। তাকে চার থেকে পাঁচটি প্রশ্ন করা হয়।
এর মধ্যে আইনজীবী মিজানুল ইসলামের একটি সাজেশন ছিল “ দেশ স্বাধীন হওয়ার পর শহীদ সিরু মিয়া দারোগার স্ত্রীর নিকট থেকে আমি জানতে পারি যে, তিনি তার স্বামী এবং সন্তানকে বাঁচাবার জন্য অধ্যাপক গোলাম আযম সাহেবের নিকট থেকে একটি চিঠি নিয়ে এসেছিলেন। একথা আপনি তদন্ত কর্মকর্তার কাছে বলেননি।”
জবাবে সাক্ষী বলেন, আমি তদন্তকারী কর্মকর্তার নিকট একথা বলিনাই এটা সত্য। তবে অদ্য আদালতে আমি সত্য কথাই বলেছি।”
এরপর মিজানুল ইসলাম সাজেশন দিয়ে বলেন, “একথাগুলি প্রসিকিউশনের শিখানো মতে আপনি বলেছেন। ”
সাক্ষী বলেন, “শিখিয়ে দেই নাই।”
জামায়াতে ইসলামীর সাবেক আমীর অধ্যাপক গোলাম আযমের বিরুদ্ধে আজ সাক্ষ্য দিয়েছেন শফিউদ্দিন আহমেদ। তিনি গোলাম আযমের বিরুদ্ধে চতুর্থ নিয়মিত সাক্ষী হিসেবে সাক্ষ্য দিলেন।
জবানবন্দী :
আমার নাম শফিউদ্দিন আহমেদ। বয়স ৫৮। গ্রাম রানমনগর, থানা হোমনা, জেলা কুমিল্ল। ১৯৬৯ সালে রামকৃষ্ণপুর কে কে আর উচ্চ বিদ্যালয় থেকে এসএসসি পাশ করি। ১৯৭০ সালে করাচি সরকারি বাংলা মহাবিদ্যালয়ে একাদশ শ্রেণীতে ভর্তি হই। ১৯৭১ সালের জুন মাসে তদানিন্তন পূর্ব পাকিস্তানে আসি। আমার পাশের গ্রাম রামকৃষ্ণপুর শহীদ সিরু মিয়া দারোগার বাড়িতে অস্থায়ী মুক্তিযোদ্ধা ক্যাম্পে যোগাযোগ করে। ওখানে আমি মুক্তিযুদ্ধের পক্ষে কাজ শুরু করি। আমার কাজের মধ্যে উল্লেখযোগ্য ছিল ওই ক্যাম্প থেকে মুজিবনগর সরকারের প্রধানমন্ত্রী তাজউদ্দিন আহমেদের স্ত্রী জোহরা তাজউদ্দিনকে ভারতে নিয়ে যাওয়া। এর কিছু দিন পর সাবেক রাষ্ট্রপতি বদরুদ্দোজা চৌধুরীরকে তার পরিবারসহ ভারতে পাঠাই একইভাবে।
এ ক্যাম্প থেকে সিরু মিয়া দারোগার সাথে আমিসহ ছয় জন ২৫ অক্টোবর রাতে ভারতে রওয়ান হই। অন্যরা ছিল সিরু মিয়ার সন্তান শহীদ আনোয়ার কামাল, দাউদিকান্দি থানা মুজিবাহিনী কমান্ডার শহীদ নজরুল ইসলাম, ডেপুটি কমান্ডার শহীদ আবুল কাসেম এবং জাহাঙ্গীর সেলিম।
আমরা নৌকাযোগে রওয়ানা হই। সীমান্তবর্তী এলাকায় সতরা গ্রামে পৌছে সেখানে ২৬ অক্টোবর অবস্থান করি। ২৭ তারিখ সীমান্তের দিকে রওয়ান দেই। আমাদের সাথে গাইড ছিল তালেব। সে খবর দিল রাস্তা কিয়ার। তারপর আমরা রাস্তা ধরে রওয়ানা দেই। রওয়ানার পর রাস্তায় ওঠার সাথে সাথে রাজাকার চেকপোস্টে তন্তর পৌছলে হঠাৎ করে ২০/২৫ জন রাজাকার আমাদের ঘিরে ফেলে। ২ জন করে আমাদের একসাথে বাঁধে। ৫/১০ মিনিট পর ইউলার দিক থেকে পাকিস্তান আর্মির একটি গাড়ি আসে। ৫/৬ জন আর্মি নামে। নুজরুল এবং সিরু মিয়ার কাছে দুটি রিভলভার ছিল। তা তারা নিয়ে নিল। এরপর আমাদের বিবাড়িয়াগামী একটি চাউলের ট্রাকে তোলা হয়। সাথে ৫/৭ জন রাজাকার দেয় পাহারার জন্য। ব্রাèনবাড়িয়া শহরের প্রথম প্রান্তে আমাদের নামিয়ে দেয়া হয়। পায়ে হাটিয়ে কোর্ট বিল্ডিং পর্যন্ত নিয়ে যায়। আমাদের মাঠে রাখা হয়। অনেক লোকজন দেখতে আসে। এর মধ্যে সাদা পাঞ্জাবী পরা বেত হাতে একজন এসে গালাগালি করতে থাকে। নাম জিজ্ঞাসা করে জানতে পারি তার নাম পেয়ারা মিয়া। পেয়ারা মিয়ার সাথে ৫/৭ জন যুবক ছিল। তারা আমাদের হাত থেকে ঘড়ি এবং আংটি ছিনিয়ে নেয়। এরপর আমাদের শহরের অন্নদা স্কুলের কালি মন্দিরের সামনে নিয়ে যায়। সেটি তখন রাজাকার মন্দির হয়। সেখানে হাটিয়ে নিয়ে যাবার পথে হ্যান্ড মাইকে ঘোষনা করা হয় স্পেশাল বাহিনীর ছয়জন অস্ত্রসহ ধরা পড়েছে। তখন আমাদের দেখার জন্য প্রচুর লোকসমাগম হয়। ওই রাতে আমাদের রাজাকার মন্দিরে রাখা হয়। পরদিন সকাল ১০টায় আগে পিছে আর্মি স্কট দিয়ে পায়ে হাটিয়ে ব্রাèনবাড়িয়া কলেজের সামনে দানা মিয়ার বাড়ির সামনে নেয়া হয়। সেটা ছিল আর্মির নির্যাতন কেন্দ্র। আমাদের ছয়জনকে একরুমে নেয়া হয়।
পাকিস্তান আর্মি ক্যাপ্টেন আলী রেজা, ব্রিগেডিয়ার সাদ উল্লাহ, হাবিলদার বশিরউদ্দিন আসেন। আমাদের নির্যাতন শুরু করেন। এক পর্যায়ে আমরা অজ্ঞান হয়ে পড়লে বাহির থেকে দরজা বন্ধ করে চলে যায়। সন্ধ্যার দিকে আমাদের জ্ঞান ফিরলে ব্রাèনবাড়িয়া থানা হাজতে পাঠানো হয়। পরের দিন সকালে আবার দানা মিয়ার বাড়িতে নেয়া হয়। এভাবে ২/৩ দিন নির্যাতন করা হয়। এরপর আমি ছাড়া বাকি পাঁচ জনকে ব্রাèনবাড়িয়া কারাগারে পাঠানো হয়। ২ দিন পর আমাকেও কারাগারে পাঠানো হয়।
হঠাৎ একদিন আর্মির গাড়ি আসে। জেলের গেট খুলে দেয়া হয়। আমিসহ ৩০/৩৫ জন মুক্তিবাহিনীর লোকদের শহরের হাসপাতালে নেয়া হয়। আমাদের সারিবদ্ধভাবে বসিয়ে রেখে প্রত্যেকের শরীর থেকে সিরিঞ্জের মাধ্যমে রক্ত নেয়া হয়। এরপর আমাদের আবার জেলখানায় পাঠানো হয়।
তার কিছুদিন পর ২১ নভেম্বর রোজার ঈদের দিন রাতে পাকিস্তান আর্মির গাড়ি আসে। জেলের গেট খোলা হল। নাম ডেকে ডেকে ৪০ জন বন্দীকে রশি দিয়ে বাঁধা হয়। সাবইকে আর্মির গাড়িতে তোলা হল। এক পর্যায়ে ব্রিগেডিয়ার সাদউল্লাহ আমাকে ডেকে বলে “ফেরেশতাও ছোড় দাও।” এরপর আমাকে বাঁধন খুলে দিয়ে ৪ নং সেলে পাঠানো হয়। সেলের ভেতর একজনকে দেখতে পাই। পরিচয় জিজ্ঞেস করে জানতে পারি তার নাম মেজর অনন্ত সেন। ভারতীয় সেনাবাহিনীর সদস্য। সীমান্ত থেকে তাকে পাকিস্তান আর্মি গ্রেফতার করে। পরেরদিন সকালে জেল গেঠে শুনতে পাই যে ৩৯ জনকে রাতে নেয়া হয়েছিল তাদের হত্যা করা হয়েছে। এরপর ব্রাèনবাড়িয়া স্বাধীন হলে আমি জেল থেকে মুক্ত হই। অসুস্থ অবস্থায় আমার এক সাথী মুক্তিযোদ্ধা নবীনগর ক্যাম্পে পাঠায়। সেখান থেকে আমি গ্রামের বাড়ি ফিরে যাই। যে ৩৯ জনকে হত্যা করা হয় বলে বলেছি তার মধ্য থেকে ১ জন বেঁচে যায় বলে পরে জানতে পারি। তার নাম চিনু। অনুমান চার/পাঁচ মাস পরে তার সাথে আমার ঢাকায় দেখা হয়। তার বাম পাজরে গুলির চিহ্ন দেখায় আমাকে। সে কিভাবে বেঁচে যায় সে ঘটনার পুরো বিবরন দেয়। ৩৮ জনকে গুলি করে হত্যার পর মাটি চাপা দেয়া হয় কৈরতলায়। ওই ৩৮ জনের মধ্যে আমার সাথে থাকা যে চারজন ছিলেন তারা হলেন শহীদ সিরা মিয়া দারোগা, তার ছেলে শহীদ আনোয়ার কামাল, শহীদ নজরুল ইসলাম এবং শহীদ আবুল কাসেম।
এরপর রাষ্ট্রপক্ষের আইনজীবী সুলতান মাহমুদের এক প্রশ্নের জবাবে সাক্ষী বলেন, স্বাধীনতার পর শহীদ সিরু মিয়ার দারোগার স্ত্রীর কাছঠ থেকে জানতে পারি তার ছেলে এবং স্বামীকে বাঁচানোর জন্য গোলাম আযম সাহেবের কাছ থেকে একটি চিঠি নিয়ে এসেছিলেন।
জবানবন্দী শেষে সাক্ষীকে জেরা করেন অধ্যাপক গোলাম আযমের আইনজীবী মিজানুল ইসলাম। মাত্র দশ মিনিটে শেষ হয়ে যায় জেরা। তাকে চার থেকে পাঁচটি প্রশ্ন করা হয়।
এর মধ্যে আইনজীবী মিজানুল ইসলামের একটি সাজেশন ছিল “ দেশ স্বাধীন হওয়ার পর শহীদ সিরু মিয়া দারোগার স্ত্রীর নিকট থেকে আমি জানতে পারি যে, তিনি তার স্বামী এবং সন্তানকে বাঁচাবার জন্য অধ্যাপক গোলাম আযম সাহেবের নিকট থেকে একটি চিঠি নিয়ে এসেছিলেন। একথা আপনি তদন্ত কর্মকর্তার কাছে বলেননি।”
জবাবে সাক্ষী বলেন, আমি তদন্তকারী কর্মকর্তার নিকট একথা বলিনাই এটা সত্য। তবে অদ্য আদালতে আমি সত্য কথাই বলেছি।”
এরপর মিজানুল ইসলাম সাজেশন দিয়ে বলেন, “একথাগুলি প্রসিকিউশনের শিখানো মতে আপনি বলেছেন। ”
সাক্ষী বলেন, “শিখিয়ে দেই নাই।”
কোন মন্তব্য নেই:
একটি মন্তব্য পোস্ট করুন