সোমবার, ২৫ নভেম্বর, ২০১৩

গোলাম আযমের বিরুদ্ধে চার্জ গঠন সঠিক হয়নি-যুক্তি উপস্থাপনের শুরুতে ব্যারিস্টার রাজ্জাক


মেহেদী হাসান, ৩১/৩/২০১৩
জামায়াতে ইসলামীর সাবেক আমির অধ্যাপক গোলাম আযমের পক্ষে যুক্তি উপস্থাপন শুরু করেছেন আসামী পক্ষের প্রধান আইনজীবী ব্যারিস্টার আব্দুর রাজ্জাক। আইনী দিক তুলে ধরে তিনি  আজ যুক্তি উপস্থাপন করেন। এর আগে অভিযোগ এবং সাক্ষীদের সাক্ষ্য বিষয়ে  যুক্তি উপস্থান করেছেন আসামী পক্ষের অপর আইনজীবী মিজানুল ইসলাম।

ব্যারিস্টার আব্দুর রাজ্জাক আজ ট্রাইব্যুনালে বলেন, অধ্যাপক গোলাম আযমের বিরুদ্ধে চার্জ গঠন সঠিক হয়নি। তার বিরুদ্ধে সুনির্দিষ্টভাবে কোন অভিযোগ নেই। টিক্কাখানের সাথে দেখা করা কোন অপরাধ হতে পারেনা।  কাউকে দোষী সাব্যস্ত করতে হলে সুনির্দিষ্টভাবে বলতে হবে তার অমুক বৈঠকের অমুক সিদ্ধান্তের কারনে বা অমুক স্থানে অমুক বক্তব্যের কারনে অমুক অমুক স্থানে এই এই অপরাধ সংঘটিত হয়েছে। কিন্তু গোলাম আযমের বিরুদ্ধে সেরকম কিছূই নেই  তাই  তাকে সম্পূর্ণ নির্দোষ ঘোষনা করা উচিত।

আইনজীবীদের  উত্তপ্ত বাক্য বিনিময় :
 আজ জামায়াতে ইসলামীর আমির মাওলানা মতিউর রহমান নিজামীর বিরুদ্ধে তৃতীয় সাক্ষীর জেরা করেন আসামী পক্ষের আইনজীবী মিজানুল ইসলাম। এসময় রাষ্ট্রপক্ষের আইনজীবী আলতাফ হোসেন সাক্ষীর একটি প্রশ্নের উত্তরে হস্তক্ষেপ করলে তিনি এবং মিজানুল ইসলামের মধ্যে উত্তপ্ত বাক্য বিনিময় চলে।  সাক্ষীর প্রশ্নের উত্তরে  আলতাফ হোসেন হস্তক্ষেপ করায়  অ্যাডভোকেট মিজানুল ইসলাম এর বিরোধীতা করে ক্ষোভ প্রকাশ করেন। তখন আলতাফ হোসেন মিজানুল ইসলামকে  বেয়াদব  আখ্যায়িত করে বলেন, আপনি আমাকে ধমক দেন কেন। আমি কি আপনার অধীনে চাকরি করেন? এখানে কি রগ কাটার জন্য এসেছেন নাকি? তখন অ্যাডভোকেট মিজানুল ইসলাম  প্রচন্ডভাবে উত্তেজিত হয়ে পড়েন এবং ক্ষোভে ফেটে পড়েন। তিনি আলতাফ হোসেনের দিকে  হাত উচিয়ে বলেন, ইউ ব্লাডি ননসেন্স, বেয়াদব। মুখ সামলে কথা বলেন।  আমি রগ কাটার জন্য আসিনি। মামলা লড়তে এসেছি।
উত্তপ্ত বাক্য বিনিময় শেষ হলে  মিজানুল ইসলাম ট্রাইব্যুনালকে বলেন, আমি আমার কমেন্টের জন্য ক্ষমা চাচ্ছি। কিন্তু সে যে আমাকে বেয়াদব বলেছে সেজন্য তাকে সতর্ক করা হোক। তখন ট্রাইব্যুনাল আলতাফ হোসেনকে লক্ষ্য করে বলেন তার এ ধরনের শব্দ ব্যবহার করা ঠিক হয়নি। ট্রাইব্যুনাল বলেন আপনারা যদি পরষ্পরকে শ্রদ্ধা না করেন এবং আদালতে এভাবে আক্রমন করেন তাহলে   তা মোটেই শোভনীয় নয়।

জেরা : মাওলানা নিজামীর বিরুদ্ধে তৃতীয় সাক্ষী হিসেবে সাক্ষ্য দিয়েছেন মোহাম্মদপুর ফিজিক্যাল ট্রেনিং ইনস্টিটিউটের গার্ড় রুস্তম আলী। তার পিতা ১৯৭১ সালে ওই প্রতিষ্ঠানের গার্ড ছিল। সাক্ষী তখন মাওলানা নিজামীকে সেখানে দেখেছেন বলে অভিযোগ করেছেন তার জবানবন্দীতে। আজ  সাক্ষীকে জেরা করেন অ্যাডভোকেট মিজানুল ইসলাম। তাকে সহায়তা করেন অ্যাডভোকেট মনজুর আহমদ আনসারী।

প্রশ্ন : আপনার পিতা কবে অবসরে যান?
উত্তর : ১৯৮৬ সালে।
প্রশ্ন : তিনি কবে যোগ দিয়েছিলেন?
উত্তর : বলতে পারবনা।
প্রশ্ন : আপনার জন্ম কোথায়?
উত্তর : ঢাকা।
প্রশ্ন : আপনি কোন স্কুলে পড়ালেখা করেছেন?
উত্তর : সামান্য কিছু পড়ালেখা করেছি ডামুড্যা প্রাইমারি স্কুলে। মাঝে মাঝে স্কুলে যেতাম।
প্রশ্ন : ১৯৭১ সালে ৭ মার্চ ভাষন শোনার জন্য গিয়েছিলেন?
উত্তর : হ্যা।
প্রশ্ন : ১৯৭১ সালে আপনার  এলাকায় আওয়ামী লীগ এবং ছাত্রলীগের নেতা কারা ছিল বলতে পারবেন?
উত্তর : না।
প্রশ্ন : ১৯৭০ সালের নির্বাচনের সময় কোথায় ছিলেন?
উত্তর : ঢাকা ।
প্রশ্ন : ১৯৭০ সালের নির্বাচনে আপনার এলাকায় কে জেতে এবং কে হারে মনে আছে?
উত্তর : না।
প্রশ্ন : ১৯৭১ সালে ফিজিক্যাল ট্রেনিং ইনস্টিটিউটের অধ্যক্ষ কে ছিলেন?
উত্তর : খান মজলিশ।
প্রশ্ন : এখন কে?
উত্তর : তার ছেলে তারেক খান মজলিশ।
প্রশ্ন : সেখানে তখনকার পড়াশুনা বিষয়ে কিছু বলতে পারবেন?
উত্তর : খেলাধুলার কলেজ। টেনিং দিত।
প্রশ্ন : ১৯৭১ সালে আপনি যে বাসায় থাকতেন তা কি ক্যাম্পসের মধ্যে না বাইরে?
উত্তর : ক্যাম্পাসের মধ্যে।
প্রশ্ন : যুদ্ধের সময় কাস হত সেখানে?
উত্তর : না।
প্রশ্ন :  খান মজলিশ কি বেঁচে আছেন?
উত্তর : হ্যা।
প্রশ্ন : ১৯৭১ সালে সেখানে যারা শিক্ষক ছিলেন তাদের  কারো নাম মনে আছে?
উত্তর : বাদশা মিয়া, লুৎফর রহমান, মালেক সাব, আব্দুল হক ভ্ইুয়া।
প্রশ্ন : ক্যাম্পাসের মধ্যে ২৫ মার্চ রাতে যখন  আর্মি ক্যাম্প স্থাপন করল তখন আপনি কোথায় ছিলেন?
উত্তর : ক্যাম্পাসের মধ্যে কোয়ার্টারের বাসায়।
প্রশ্ন : ভবন কাঠামো কি আগের মতই আছে?
উত্তর : হ্যা, একই রকম আছে।
প্রশ্ন : তখন আপনি ক্যাম্পাসের বাইরে যেতেন?
উত্তর : যেতাম।
প্রশ্ন : আপনার আব্বা ছাড়া তখন আর কোন বাঙ্গালী কর্মচারি ছিল?
উত্তর : ছিল। সুরুজ মিয়া,  হানিফের নাম মনে আছে।
প্রশ্ন : ক্যাম্পাসের বন্দীশালা আপনার বাসা থেকে কতদূর ছিল?
উত্তর : একশ/দেড়শ গুজ দূরে অনুমান।
প্রশ্ন : আপনি আপনার জবানবন্দীতে বলেছেন বুদ্ধিজীবী, শিল্পী, ডাক্তার সাধারন মানুষকে ধরে আনা হত বন্দীশালায়।  ধরে আনা হয়েছিল এরকম দুয়েকজন বুদ্ধিজীবী, ডাক্তার বা শিল্পীর নাম বলতে পারবেন?
উত্তর : না।
প্রশ্ন : যেসব মহিলাদের ধরে আনা  হয়েছিল তাদের কারো সাথে আপনার কথা  হয়েছিল?
উত্তর : না।
প্রশ্ন : রাজাকার শব্দটা প্রথম কবে শুনলেন?
উত্তর : যুদ্ধ শুরুর  তিন/চার মাস পর ট্রেনিং শুরু হলে রাজাকার নাম শুনতে পাই।
প্রশ্ন : সেখানে প্রথম রাজাকার প্রশিক্ষক কে ছিল?
উত্তর : একজন পাঞ্জাবী।
প্রশ্ন : যারা ট্রেনিং নিত তাদের কারো নাম বলতে পারবেন?
উত্তর : না।
প্রশ্ন : কতদিন ট্রেনিং দিত?
উত্তর : এক ব্যাসে ১৫/২০ দিন ট্রেনিং দেয়া হত।
প্রশ্ন : এক ব্যাসে কয়জন ট্রেনিং নিত?
উত্তর : দুই/তিন হাজার।
প্রশ্ন : এরা থাকত কোথায়?
উত্তর : মাঠে তাবু এবং হোস্টেলের  নিচতলায়।
প্রশ্ন : কয়টি ব্যাস টেনিং নিয়েছিল?
উত্তর : বলতে পারবনা।
প্রশ্ন : যুদ্ধ শুরুর তিন চার মাস পরে মোহাম্মদপুর বাজারে কোন বাঙ্গালী ছিল?
উত্তর : কিছু ছিল।
প্রশ্ন : আপনি এবং আপনার পিতা বিটিভি ওয়ার্ল্ড এর কাছে সাক্ষাৎকার দিয়েছেন?
উত্তর : হ্যা।
প্রশ্ন : আপনার উপস্থিতিতে আপনার পিতা দিগন্ত টিভিতে সাক্ষাৎকার দিয়েছে?
উত্তর : জানা নেই।
প্রশ্ন : আপনার বর্তমান অধ্যক্ষ টিভিতে এ বিষয়ে কোন সাক্ষাৎকার দিয়েছেন?
উত্তর : জানা নেই।
এ পর্যন্ত জেরা করার পর  সোমবার পর্যন্ত জেরা মুলতবি করা হয়।


কোন মন্তব্য নেই:

একটি মন্তব্য পোস্ট করুন