মঙ্গলবার, ২৬ নভেম্বর, ২০১৩

গোলাম আযমের জামিন আবেদন আবারো খারিজ

মেহেদী হাসান, ২৩/২/১২
জামায়াতে ইসলামীর সাবেক আমীর অধ্যাপক গোলাম আযমের জামিন আবেদন আবারো  নাকচ করে দিয়েছেন ট্রাইবু্যুনাল। এদিকে মাওলানা দেলাওয়ার হোসাইন  সাঈদীল বিরুদ্ধে  রাষ্ট্রপক্ষ  আবারো সাক্ষী হাজিরে ব্যর্থ হওয়ায় বিচার ৪ঠা মার্চ পর্যন্ত মুলতবি করা হয়েছে।

গত ১১ জানুয়ারি  প্রথম দফা জামিন আবেদন বাতিল করে অধ্যাপক গোলাম আযমকে  কারাগারে পাঠানোর নির্দেশ দেন ট্রাইব্যুনাল। সে থেকে তিনি বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিক্যাল বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রিজন সেলে আছেন।

এরপর গোলাম আযম তার আইনজীবীদের মাধ্যমে দ্বিতীয় দফা জামিনের আবেদন করলে সেটিও গতকাল বাতিল করে দেন ট্রাইব্যুনাল । গত ১৫ ফেব্রুয়ারি  গোলাম আযমের দ্বিতীয় দফা জামিন আবেদনের ওপর শুনানী হয়। শুনানীতে গোলাম আযমের পক্ষে অংশ নেন ব্যারিস্টার আব্দুর রাজ্জাক। জামিনের বিনিময়ে আদালতের দেয়া সকল শর্ত তারা মেনে নিবেন বলে প্রার্থনা করেন তিনি। আজ জামিন  আবেদনের ওপর আদেশ দানের জন্য ধার্য্য ছিল।

এদিকে গোলাম আযমকে বাসা থেকে রান্না করা  খাবার সরাবরাহ বিষয়ে আরেকটি আবেদনের জন্য আগামী রোববার নির্ধারন করা হয়েছে।

জামিন আবেদন বাতিল শেষে ব্যারিস্টার আব্দুর রাজ্জাক সাংবাদিকদের বলেন, গোলাম আযমের বয়স  প্রায় ৯০ বছর। তিনি  নানাবিধ রোগে আক্রান্ত। জামিন পাবার পক্ষে সকল পয়েন্টই আমারা তুলে ধরেছি।  কিন্তু আমাদের আবেদন রিজেক্ট করা হল। ব্যারিস্টার রাজ্জাক বলেন অধ্যাপক গোলাম আযম দেশের অন্যতম প্রবীণ এবং খ্যাতিমান একজন রাজনীতিবিদ। তিনি বঙ্গবন্ধ শেখ মুজিবুর রহমান, তাজউদ্দিন আহমেদ, ফজলুল কাদের চৌধুরীর সাথে একসাথে রাজনীতি করেছেন। তিনি এর  আগেও দুবার রাজনীতির কারনে গ্রেফতার হয়েছিলেন। তখন তাকে কারাগারে ডিভিশন দেয়া হয়েছিল। কিন্তু এবার তাও দেয়া হয়নি।
ব্যারিস্টার রাজ্জাক এর আগে   আদালতে   শুনানীর সময় বলেছেন,  তার পরিবারের পক্ষ থেকে যে কয়বার তার সাথে দেখা  করা হয়েছে প্রতিবারই তার স্বাস্থ্যের অবনতির বিষয়ে উদ্বেগ প্রকশ করেছেন তার স্ত্রী  সৈয়দা আফিফা আযম। সে বিষয়ে পত্রিকার প্রতিবেদনও পেশ করা হয়েছে আদালতে।
তিনি বলেন, হাসপাতালের প্রিজন সেলে তাকে ঠিকমত খাবার দেয়া হচ্ছেনা।
বাসা থেকে খাবার সরবরাহ বিষয়ে আবেদনের শুনানীতে ব্যারিস্টার আব্দুর রাজ্জাক ট্রাইব্যুনালে বলেন, তিনি সব ধরনের খাবার খেতে পারেননা।  হাসপাতালের প্রিজন সেলে যে খাবার  তাকে দেয়া হয়  তা তিনি অনেক সময় খেকে পারেননা। ফলে মাঝে মাঝে তিনি দীর্ঘ সময় না খেয়ে থাকেন। তার ওজন কমে যাচ্ছে। স্বাস্থ্যের অবনতি হচ্ছে। কারা কর্তৃপক্ষের বিরুদ্ধে জেল কোড ভঙ্গেরও অভিযোগ  করেন ট্রাইব্যুনালের কাছে।

ট্রাইব্যুনাল বলেন, জেল কোড ভঙ্গ হলে হাইকোর্টে যান। কিন্তু ব্যারিস্টার আব্দুর রাজ্জাক বলেন  সে সুযোগ আমাদের নেই। কারণ তিনি  এই ট্রাইব্যুনালের  অধীনে বন্দী আছেন। তাছাড়া বাসা থেকে

খাবার সরবরাহ করার আবেদন বিষয়ে  আদালত  পুলিশ প্রধানের  বরাবর দরখাস্ত করার পরামর্শ দিলে ব্যারিস্টার আব্দুর রাজ্জাক বলেন  এ বিষয়ে পুলিশ প্রধানেরও কোন ক্ষমতা নেই।  পুলিশ কর্তৃপক্ষ শুধু খাদ্যে কোন পয়জন আছে কি-না সেটি পরীক্ষা করবে।

এরপর ট্রাইব্যুনাল এ বিষয়ে সার্বিক  দিক বিবেচনা করে সিদ্ধান্ত নেয়ার জন্য আগামী রোববার পর্যন্ত স্থগিত রাখেন বিষয়টি।
গত ১১ জানুয়ারি  যেদিন অধ্যাপক গোলাম আযমের জামিন আবেদন নাকচ করে কারাগারে পাঠানোর নির্দেশ দেন আদালত সেদিন জামিন আবেদনের  শুনানীতে ব্যারিস্টার আব্দুর রাজ্জাক অধ্যাপক গোলাম আযমের জামিন পাবার পক্ষে যত পয়েন্ট ছিল তার সবই  তুলে ধরেন। ৮৯ বছর বয়স্ক অধ্যাপক গোলাম আযমের অসুস্থতার বিষয়টিও ডাক্তারি কাগজপত্র সহকারে তুলে ধরেন। এর পর দ্বিতীয় দফা জামিন আবেদনের শুনানীতেও গত ১৫ ফেব্রুয়ারি ব্যারিস্টার আব্দুর রাজ্জাক জামিনের জন্য মানিবক আবেদনের সাথে প্রিজন সেলে থাকা অবস্থায় তার সাস্থ্যের অবনতির বিষয়সহ  বিভিন্ন বিষয়  তুলে ধরেন।

সাক্ষীর অভাবে সাঈদীর বিচার ৪ মার্চ পর্যন্ত মুলতবি
মাওলানা দেলাওয়ার হোসাইন সাঈদীর বিরুদ্ধে  রাষ্ট্রপক্ষের সাক্ষী হাজিরে ব্যর্থতা অব্যাহত রয়েছে। আজো তারা মাওলানা সাঈদীল বিরুদ্ধে  সাক্ষী হাজির করতে পারেননি। সাক্ষীর অভাবে মাওলানা সাঈদীর বিচার ৪ মার্চ পর্যন্ত মুলতবি করা হয়েছে।

সকালে আদালতের কার্যক্রম   শুরু হলে সাক্ষী আনতে না পারা বিষেয় আদালতে অবহিত করার জন্য দাড়ান প্রসিকিউটর সৈয়দ হায়দার আলী। সাথে সাথে ট্রাইব্যুনালের চেয়ারম্যান বিচারপতি নিজামুল হক  সৈয়দ হায়তার আলীকে উদ্দেশ্য করে বলেন,  সাক্ষী আসে নাই তাইতো? এটাতো আপনাদের কমন সাবমিশন হয়ে  দাড়িয়েছে।  দয়া করে   নির্দিষ্ট করে বলেন অমুক দিন সাক্ষী থাকবে। তাহলে ঐ ভদ্র লোকদের (মাওলানা সাঈদীর আইনজীবী) কষ্ট করতে হবেনা। তাদের বিপদে ফেলবেননা আমরা সেটা চাই। এরপর বিচারপতি নিজামুল হক সৈয়দ হায়দার আলীকে বলেন রোববার সাক্ষী হাজির করতে পারবেন? তখন সৈয়দ হায়দার বলেন “না” ।
বিচারপতি নিজামুলক হক তখন সৈয়দ হায়দার আলীকে বলেন “প্লিজ গিভ দেম এ কনফার্ম ডেট।”  সৈয়দ হায়দার আলী বলেন, “ফিক্সড ডেট দিতে পারছিনা। চেষ্টা করব অল্প সময়ে সাক্ষী  হাজির করতে ।  আপনারা একটা ডেট দেন । আমরা সে ডেটে সাক্ষী  আনতে চেষ্টা করব।”
এ পর্যায়ে বিচারপতি নিজামুল হক বলেন “আবার চেষ্টা করব বলছেন? আমরা ডেট দিতে চাইনা।  ডেট দিয়েও আপনারা সাক্ষী  হাজির করতে পারেননি। এবার আপনারাই বলেন কবে সাক্ষী আনতে পারবেন। সেটা ঠিক করে আপনারাই ডেট দেন।  আপনারা বলেন অমুক দিন আমরা সাক্ষী আনতে পারব। আমরা সে অনুযায়ী ডেট দেব। ” ট্রাইব্যুনালের অপর দুই বিচারপতি  এটিএম ফজলে কবির এবং একেএম জহির আহমেদও  এ প্রস্তাব করেন রাষ্ট্রপক্ষের  আইনজীবীদের।
সৈয়দ হায়দার আলী  তদন্ত কর্মকর্তা হেলাল উদ্দিন খানের কাছে পরামর্শ করে বলেন “মঙ্গলবার  তারিখ   দেন। ঐ দিন সাক্ষী   আনতে পারব।”

এরপর ট্রাইব্যুনাল   অন্যান্য মামলার তারিখ  যাচাই করে ৪ মার্চ পর্যন্ত  মাওলানা সাঈদীর বিচার কার্যক্রম মুলতবি করেন।

মুজাহিদের চার্জ শুনানী ১১ মার্চ নির্ধারন:
জামায়াতে ইসলামীর সহকারী সেক্রেটারি জেনারেল আলী আহসান মো: মুজাহিদের চার্জ  শুনানী ১১ মার্চ নির্ধারন করা হয়েছে। মুজাহিদের আইনজীবী  ব্যারিস্টার মুন্সি আহসান কবির মুলতবি আবেদন করে বলেন এই প্রথম আমি মুলতবি আবেদন করলাম। গত ১ তারিখ  ৬ হাজার ৬৮০ পৃষ্ঠার চার্জশিট আমরা পেয়েছি। এরপর মেসগুলো ফটোকপি করার পর আট ফেব্রুয়ারি  হাতে পাই। এত বিশাল



কাগজপত্র দেখার জন্য সময় প্রয়োজন। তিনি ২০ মার্চ পর্যন্ত সময় চান। তখন আদালত ১১ মার্চ পর্যন্ত মুলতবি  করেন।

অধ্যাপক গোলাম আযমের পক্ষে  ব্যারিস্টার আব্দুর রাজ্জাক ছাড়াও তাজুল ইসলাম, ফরিদ উদ্দিন খান, ব্যারিস্টার এহসান সিদ্দিক, ব্যারিস্টার ইমরান সিদ্দিক, ব্যারিস্টার তানভির আল আমিন,  শাহজাহান কবির, ব্যারিস্টার মীর আহমেদ, শিশির মনির প্রমুখ উপস্থিত ছিলেন।

জনকণ্ঠের বিরুদ্ধে  মিথ্যাচারের অভিযোগ:
দৈনিক জনকন্ঠের বিরুদ্ধে আবারো  মাওলানা সাঈদীর নামে মিথ্যা খবর পরিবেশনের অভিযোগ এনেছেন মাওলানা সাঈদীর আইনজীবীরা। এ বিষয়ে আগামী রোববার সিদ্ধান্ত নেয়া হবে বলে জানান আদালত। ঐদিন জনকণ্ঠের প্রতিবেদক বিকাশ দত্তকে আদালতে হাজির থাকতে বলা হয়েছে। আজ তিনি কোর্টে আসেননি। 

গত ২১ ফেব্রুয়ারি দৈনিক জনকন্ঠে প্রকাশিত “সাঈদীর উপস্থিতিতে পাকি সৈন্যরা  আমার ভাইকে খুঁচিয়ে খুঁচিয়ে হত্যা করেছে” শীর্ষক  খবর বিষয়ে মাওলানা সাঈদীর আইনজীবী তাজুল ইসলাম  ট্রাইব্যুনালে লিখিত অভিযোগ করেন। তাজুল ইসলাম বলেন সাক্ষী  একথা বলেননি।
এর আগে গত ২ ফেব্রুয়ারি দৈনিক জনকন্ঠে প্রকাশিত “ “ঘরে ফিরেই জানতে পারি সাঈদী আমার স্ত্রীকে ধর্ষণ করেছে।” শীর্ষক খবর বিষয়ে  ট্রাইব্যুনালে মৌখিক অভিযোগ করেন  মাওলানা সাঈদীর আইনজীবী মিজানুল ইসলাম । তিনি আদালতে দাবি করেন, সাক্ষী  মধুসূদন ঘরামী  জাতীয় কোনো কথা বলেন নাই।

লিখিত অভিযোগে তাজুল ইসলাম ২ ফেব্রুয়ারির রিপোর্টের বিষয়টিও তুলে ধরেন উদাহরন হিসেবে। ট্রাইব্যুনালের বিচারপতি এটিএম ফজলে কবির বলেন ঐ রিপোটটি  প্রকৃত অবমাননাকর ছিল। ওটি  মারাত্মক ছিল।

আজ  দৈনিক জনকন্ঠের  বিরুদ্ধে  লিখিত অভিযোগ  উত্থাপন করে তাজুল ইসলাম বলেন, আমরা ব্যক্তিগতভাবে  কোন মিডিয়ার বিরুদ্ধে  নই। নিতান্ত বাধ্য না হলে কোন অভিযোগ  আনিনা। এর আগে জনকণ্ঠ সাক্ষী  মধুসূদন ঘরামীর নাম করে মাওলানা সাঈদীর বিরুদ্ধে মিথ্যা রিপোর্ট প্রকাশ করেছে। এরপর আবার তারা একই কাজ করল অন্য  আরেক সাক্ষীর  সাক্ষ্য নিয়ে।  এ থেকে বোঝা যায় এটি তারা ইচ্ছাকৃতভাবে করছে। এতে আমরা মারাত্মকভাবে প্রিজুডিশের  (অবিচার) শিকার হচ্ছি।

তখন ট্রাইব্যুনালের চেয়ারম্যান বিচারপতি নিজামুল হক  তাজুল ইসলামকে বলেন, আপনারা কি একটা মেচের কাঠির মাধ্যমে পুরো গ্রাম    জ্বালিয়ে দিতে চান?  তাজুল ইসলাম এর জবাবে বলেন, আমরা পুরো গ্রাম রক্ষা করতে চাই। বিচারপতি নিজামুল হক বলেন, তাহলে আমিও বলব এ জাতীয় ভুরি ভুরি রিপোর্ট করা হচ্ছে। কিন্তু আমরা সেসব রিপোর্ট উপেক্ষা করছি। আমরা চামড়া মোটা করেছি।
তাজুল ইসলাম বলেন এর আগে নিউ এজ এবং দৈনিক নয়া দিগন্তের বিরুদ্ধে সতর্কতার আদেশ দেয়া হয়েছে।
এরপর বিচারপতি নিজামুল হক জনকণ্ঠের সংশ্লিষ্ট প্রতিবেদককে উদ্দেশ্য করে বলেন, “বিকাশ দত্ত আছেন?” কিন্তু   কোন সাড়া না পাওয়া যাওয়ায় তিনি বলেন, “জনকণ্ঠের অন্য কোন রিপোর্টার আছেন?” কিন্তু এ  পর্যায়েও কোন সাড়া না পাওয়ায় তিনি বলেন আমরা সংশ্লিষ্ট প্রতিবেদকের উপস্থিতিতে  আগামী রোববার এ বিষয়ে সিদ্ধান্ত  জানাবো। ঐদিন পর্যন্ত মুলতবি রাখা হল বিষয়টি। তিনি ঐদিন জনকণ্ঠের প্রতিবেদককে  উপস্থিত থাকার জন্য বলেন।

কোন মন্তব্য নেই:

একটি মন্তব্য পোস্ট করুন