মঙ্গলবার, ২৬ নভেম্বর, ২০১৩

গোলাম আযমের পক্ষে ন্যাটোর জেনারেলসহ ২৯৩৯ সাক্ষীর তালিকা

মেহেদী হাসান, ১/৭/২০১২
জামায়াতে ইসলামীর সাবেক আমীর অধ্যাপক গোলাম আযমের পক্ষে ন্যাটোর একজন সাবেক জেনারেলসহ মোট দুই হাজার ৯৩৯ জন সাক্ষীর তালিকা জমা দেয়া হয়েছে ট্রাইব্যুনালে।  আজ সকালে আসামী পক্ষের আইনজীবী তাজুল ইসলাম এ তালিকা জমা দেন।

সাক্ষীর  তালিকায় ন্যাটোর সাবেক  কমান্ডার ইন চিফ (এলাইড ফোর্স নর্দার্ন রিজিয়ন) জেনারেল স্যার জ্যাক ডেভারেল এর নাম রয়েছে। এছাড়া আয়ারল্যান্ডের ন্যাশনাল ইউনিভার্সিটির (গ্যালওয়ে) আইন অনুষদের প্রফেসর উইলিয়াম এ সাবাজের নামও রয়েছে।

এ্যডভোকেট তাজুল ইসলাম ট্রাইব্যুনালের  সামনে সাংবাদিকদের  বলেন,  নিরাপত্তার  খাতিরে অন্য কোন সাক্ষীর নাম প্রকাশ করা যাচ্ছেনা। এ দুজন সাক্ষী বিদেশী এবং তাদের নিরাপত্তা বিঘিœত হবেনা ভেবেই আমরা তাদের নাম বললাম আপনাদের। অন্যান্য সাক্ষীদের বিষয়ে তাজুল ইসলাম বলেন,  খ্যাতিমান মুক্তিযোদ্ধা, দেশী বিদেশী বিভিন্ন বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রফেসর, সাংবাদিক, ইতিহাসবিদ, যুদ্ধাপরাধ আইন বিশেষজ্ঞ, সামরিক আইন বিশেষজ্ঞরাও রয়েছেন।

ন্যাটোর সাবেক জেনারেল স্যার জ্যাক ডেভারেল এর বিস্তারিক পরিচয় দিয়ে তাজুল ইসলাম জানান তিনি বর্তমানে  আন্তর্জাতিক আদালতে যুদ্ধাপরাধ বিচার বিষয়ে ডিফেন্স টিমের একজন সদস্য। তার জন্ম  বার্মিংহামে। তিনি ১৯৬৫ সালে কর্নওয়াল লাইট ইনফ্যান্ট্রিতে  (রয়াল মিলিটারি একাডেমী) কমিশনড প্রাপ্ত হন।
উইলিয়াম এ সাবাজের পরিচয় বিষয়ে তাজুল ইসলাম জানান তিনি বেলফাস্টের কুইন্স ইউনিভার্সিটিসহ বিভিন্ন বিশ্ববিদ্যালয়ে প্রফেসর ছিলেন। এছাড়া সিয়েরলিওনে ট্রুথ এন্ড রিকনসিলিয়েশন কমিশনের সদস্য ছিলেন।

আসামী পক্ষ থেকে সাক্ষীর যে তালিকা দেয়া হয়েছে তাতে  কিছু কিছু নাম সংক্ষিপ্ত আকারে লেখা রয়েছে। আজ দুপুরের বিরতির পর  ট্রাইব্যুনালের কার্যক্রম শুরু হলে রাষ্ট্রপক্ষের আইনজীবী জেয়াদ আল মালুম   এ বিষয়ে কয়েকজনের নামের প্রতি  ট্রাইব্যুনালে  দৃষ্টি আর্কষন করে বলেন, আমরা ইতোর্পূর্বে এভাবে  কিছু নামের তালিকা দেয়ায় অনেক গাল মন্দ  শুনেছি। কিন্তু এখন তারাই এভাবে নাম জমা দিয়েছেন। আমরা এটি গ্রহণ করবনা।  তখন ট্রাইব্যুনালের চেয়ারম্যান নিজামুল হক বলেন,  গ্রহণ করবনা এটি বলিয়েননা। বলেন যে পুরো নাম লিখে  এদের বিষয়ে আরেকটি তালিকা দেন।
এরপর বিচারপতি নিজামুল হক বলেন, সাক্ষীর সংখ্যা দেখেছেন? দুই হাজার  ৯০০! এরপর  জেয়াদ আল মালুম সাক্ষীদের সংক্ষিপ্ত নামের  বিষয়ে যে তালিকা  তার কাছে দিয়েছিলেন সেটি সজোরে সামনের টেবিলে রেখে তিনি বলেন “কোর্টের সঙ্গে মকারি!”

এ বিষয়ে তাজুল ইসলাম কোর্টের বাইরে বলেন, ১৯৭১ সালে সারা দেশে যত হত্যা, ধর্ষণ, লুটপাট, অগ্নিসংযোগ এবং অন্যান্য অপরাধ হয়েছে তার সব দায় চাপানো হয়েছে অধ্যাপক গোলাম আযমের বিরুদ্ধে। তার বিরুদ্ধে যে অভিযোগ তার ব্যাপ্তি সারাদেশব্যাপী। সুতরাং তার বিরুদ্ধে তো সাক্ষী হওয়া দরকার ছিল তিন লাখ।

আজ গোলাম আযমের বিরুদ্ধে প্রথম সাক্ষী মুনতাসির মামুনের জবানবন্দী গ্রহণ এবং জেরা শুরু হয়েছে। আসামী পক্ষেরও সাক্ষীদের তালিকা এবং ডকুমেন্ট জমা  দেয়ার কথা ছিল। তাজুল ইসলাম বলেন, আমরা ১২ খন্ডে মোট ছয় হাজার পৃষ্ঠার ডকুমেন্ট জমা দিয়েছি। এছাড়া আরো কিছু ডকুমেন্ট প্রকৃয়াধীন রয়েছে। সেগুলো পরে জমা দেয়া হবে।

আসামী পক্ষে  ট্রাইব্যুনালে তাজুল ইসলাম ছাড়া  অ্যডভোকেট মিজানুল ইসলাম, নজরুল ইসলাম,  মনজুর আহমদ আনছারি, ব্যারিস্টার এমরান এ সিদ্দিক, শিশির মো: মনির, আবু বকর সিদ্দিক, হাসানুল বান্না সোহাগ  প্রমুখ আইনজীবী উপস্থিত ছিলেন।

কোন মন্তব্য নেই:

একটি মন্তব্য পোস্ট করুন