মেহেদী হাসান, ২৭/১/২০১২
মাওলানা দেলাওয়ার হোসাইন সাঈদীর বিরুদ্ধে যথাসময়ে সাক্ষী হাজিরে বারবার ব্যর্থ হচ্ছেন রাষ্ট্রপক্ষের আইনজীবীরা। এ কারনে ট্রাইব্যুনাল তাদের বিরুদ্ধে সর্বশেষ পরপর দুইবার অসন্তোষ এবং ক্ষোভ প্রকাশ করেছেন।
এর আগে জামায়াতের সাবেক আমীর অধ্যাপক গোলাম আযম, সেক্রেটারি জেনারেল আলী আহসান মো: মুজাহিদ এবং সহকারি সেক্রেটারি জেনারেল মুহম্মদ কামারুজ্জামানের বিরুদ্ধে তারা যে চার্জশিট জমা দিয়েছিলেন তা যথাযথ না হওয়ায় ট্রাইব্যুনাল তা ফেরত দিয়ে পুনরায় দাখিলের নির্দেশ দেন। পাঠিয়েছিলেন। ঘাতক দালাল নির্মুল কমিটির নেতা সাহরিয়ার কবির প্রসিকিউশনের বিরুদ্ধে ক্ষোভ প্রকাশ করে বলেছেন চিফ প্রসিকিউটরের ( গোলাম আরিফ টিপ) পদত্যাগ করা উচিত।
গত বছর ৭ ডিসেম্বর মামলার বাদী মাহবুবুল আলম হাওলাদার মাওলানা সাঈদীর বিরুদ্ধে আদালতে প্রথম সাক্ষী হিসেবে সাক্ষ্য দেন। গত বৃহষ্পতিবার ২৬ জানুয়ারি পর্যন্ত রাষ্ট্রপক্ষ মোট ১৭ জন সাক্ষী মাওলানা সাঈদীর বিরুদ্ধে হাজির করেছেন এবং তাদের জবানবন্দী ও জেরা শেষ হয়েছে। মাওলানা সাঈদীর বিরুদ্ধে শতাধিক সাক্ষীর নাম দেয়া হলেও তারা এ পর্যন্ত সাক্ষ্য দেয়া ১৭ জন সাক্ষী নিয়মিতভাবে হাজির করতে পারেননি । একজন সাক্ষীর সাক্ষ্য গ্রহণ শেষ হবার পর তারা নতুন সাক্ষী আনতে পারেননি বেশ কয়েকবার। আদালতের কাছ থেকে সময় নিয়েও যথাসময়ে সাক্ষী হাজিরে ব্যর্থ হওয়ায় আদালত ুব্ধ হয়েছেন। মাওলানা সাঈদীর আইনজীবী তাজুল ইসলাম অভিযোগ করেছেন ১৭ জন সাক্ষী হাজির করতে তারা আট বার সিরিয়াল ভঙ্গ করেছেন। তালিকার ক্রমঅনুসারে সাক্ষী হাজির করতে পারেননি। ১৭ জনের মধ্যে কোন কোন সাক্ষীর নাম তালিকায় ৬০ এরও পরে রয়েছে।
তালিকার সিরিয়াল অনুযায়ী সাক্ষী হাজির না করা বিষয়ে রাষ্ট্রপক্ষের আইনজীবীরা সাক্ষীর অসুস্থ থাকা, সঠিক সময়ে ঢাকা এসে পৌছতে না পারাকে কারণ হিসেবে উল্লেখ করেছেন আদালতে। মাওলানা সাঈদীর আইনজীবীরা এ বিষয়ে ক্ষোভ প্রকাশ করে আদালতে বলেছেন তাদেরকে অপ্রস্তুত করার জন্য এবং তারা যাতে ঠিকমত সাক্ষীকে জেরা করতে না পারেন সেজন্য ইচ্ছাকৃতভাবে সিরিয়াল ভঙ্গ করে তালিকার নিচের দিকের সাক্ষী হাজির করছেন। এতে ন্যায় বিচার বাঁধাগ্রস্ত হচ্ছে। সাক্ষীকে প্রশিক্ষন দিয়ে রেডি করতে না পারার কারনে তারা এভাবে দেরি করছেন এবং সিরিয়াল ভঙ্গ করছেন বলে আদালতে বেশ কয়েকবার অভিযোগ করেন তাজুল ইসলাম।
গত বৃহষ্পতিবার ২৬ জানুয়ারি সকালে আদালতে নতুন সাক্ষী হাজির করার কথা ছিল রাষ্ট্রপক্ষের আইনজীবীদের। কিন্তু সকালে আদালতের কার্যক্রম শুরু হলে রাষ্ট্রপক্ষের আইনজীবী জানান, সকালে সাক্ষী পৌছেছে। আসতে একটু অসুবিধা হয়েছে। সাক্ষী দেয়ার জন্য এখনো তৈরি হতে পারেনি তারা। । দুইটায় আমরা নতুন সাক্ষী আনতে পারব।
তখন ট্রাইব্যুনালের চেয়ারম্যান বিচারপতি নিজামুল হক ক্ষোভের সাথে বলেন, আপনাদের এটা একটি নিয়মিত বিষয়ে পরিণত হয়েছে। সাক্ষী নেই, জ্যামে পড়ছে, আসছে, আসবে অজুহাত দেখাচ্ছেন। সাক্ষী না থাকলে আমাদের তো করার কিছু নেই। আমরা হয় কোর্ট রুমে বসে থাকব না হয় চেম্বারে বসে থাকব।
দুইটার সময় তারা নিয়মিত কোন সাক্ষী হাজিরের পরিবর্তে জব্দ তালিকার একজন সাক্ষী হাজির করেন। তিনি প্রেস ইনস্টিটিউট বাংলাদেশ (পিআইবি) তে একজন ক্যাটালগার হিসেবে কর্মরত। । মামলার তদন্ত কর্মকর্তা পিআইবি থেকে মাওলানা সাঈদীর বিরুদ্ধে কিছু পেপার জব্দ করেছেন। সেগুলো আদালতে উপস্থাপন এবং ঐ পেপার যে তার কাছ থেকে জব্দ করা হয়েছিল এবং তার জিম্মায় রাখা হয়েছে সে মর্মে সাক্ষ্য দেয়ার জন্য আনা হয় তাকে।
এর আগে গত ১৭ জানুয়ারি মঙ্গলবার ১২টায় ১৪তম সাক্ষী আব্দুল হালিম বাবুলের জবানবন্দী এবং জেরা শেষ হয়। এরপর সাক্ষী দেয়ার কথা ছিল মধুসূদন ঘরামীর। আদালত নতুন সাক্ষী হাজির করা বিষয়ে জানতে চান রাষ্ট্রপক্ষ আইনজীবীদের কাছে। রাষ্ট্রপক্ষের আইনজীবীরা আদালতকে জানান মধুসূদদ ঘরামী অসুস্থ। আদালত তখন জানতে চান পরের দিন বুধবার ১৮ জানুয়ারি হাজির করা যাবে কি-না। রাষ্ট্রপক্ষের আইনজীবী সৈয়দ হায়দার আলী তখন বলেন, চেষ্টা করব হাজির করতে । না পারলে ক্ষমা করতে হবে আমাদের। কিন্তু পরের দিনও তারা সাক্ষী হাজির করতে না পারায় ২৪ জানুয়ারি পর্যন্ত মাওলানা সাঈদীর বিচার মূলতবি করেন আদালত। ২৪ জানুয়ারি সকালে পুনরায় আদালতের কার্যক্রম শুরু হলে তখনো রাষ্ট্রপক্ষ সাক্ষী হাজির করতে পারেননি। সেদিনও তারা জানান, দুইটার সময় তারা সাক্ষী হাজির করতে পারবেন। কিন্তু দুইটায়ও তারা যে সাক্ষী হাজির করবেন বলেছিলেন তাকে হাজির না করে অন্য সাক্ষী হাজির করেন। আদালত এর কারণ জানতে চাইলে রাষ্ট্রপক্ষের আইনজীবীরা আবরো সাক্ষীর অসুস্থতার কথা জানান। তখন আদালত ক্ষোভ প্রকাশ করে বলেন, মাঝে মধ্যে আপনারা এমন করেন যাতে আমরা অসন্তোষ প্রকাশে বাধ্য হই। অন্যদিকে নির্ধারিত সাক্ষীর বদলে অন্য সাক্ষী হাজির করায় মাওলানা সাঈদীর আইনজীবী তাজুল ইসলাম এর তীব্র বিরোধীতা করেন। ঐদিন দুইটায় যে সাক্ষী হাজির করা হয় রাষ্ট্র পক্ষ থেকে সরবরাহ করা ৬৮ জন সাক্ষীর তালিকায় তার নাম ছিল ৬২ নম্বরে। অন্যদিকে পরের দিন ২৫ জানুয়ারি যাকে হাজির করা হয় তার নাম ছিল ৬৬ নম্বরে।
সাক্ষীদের নিয়মিত হাজির করতে না পারার অভিযোগ বিষয়ে চিফ প্রসিকিউটর গোলাম আরিফ টিপু বলেন, নিরাপত্তা, দূর পথ, গাড়ি না পাওয়া, বাড়ি ছেড়ে ৫/৭ দিন ঢাকায় থাকা এসব সমস্যার কারনে যথা সময়ে সাক্ষী হাজিরে অসুবিধা হচ্ছে। আমরা আমাদের সাধ্য অনুযাযাী কাজ করে যাচ্ছি।
এত বিপুল সংখ্যক সাক্ষীর মধ্য থেকে সাক্ষী হাজির করতে তো অসুবিধা হবার কথা নয়। এ কথার রেশ ধরে গোলাম আরিফ টিপু বলেন, এত সাক্ষী আনা হবেনা। যে যে অভিযোগের স্বপক্ষে যে সাক্ষী দরকার হবে তাকে আনা হবে।
গোলাম আরিফ টিপু বলেন, আপনারা তো কোর্টে যান। আপনারা দেখেছেন বাদী পক্ষের সাক্ষী কত অল্প সময়ে জবানবন্দী দেন। কিন্তু তাদের দীর্ঘ সময় নিয়ে জেরা করা হয়। সেটা লক্ষ্য করেননা কেন।
গোলাম আরিফ টিপুকে তখন প্রশ্ন করা হয় লম্বা সময় নিয়ে জেরা করলে তাতে তো আপনারা বেশি সময় পেলেন নতুন সাক্ষী আনার ক্ষেত্রে। এ প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, আমরা তো জানিনা তার জেরা কখন শেষ হবে।
এদিকে গত বৃহষ্পতিবার সিজার লিস্টের সাক্ষী হাজির করা এবং জব্দকৃত পেপার বিষয়ে তার সাক্ষ্য নেয়া নিয়ে মাওলানা সাঈদীর আইনজীবীদের আপত্তির ফলে দীর্ঘ বিতর্ক চলে আদালতে।
মাওলানা সাঈদীর আইনজীবীরা জানান, রাষ্ট্রপক্ষ মাওলানা সাঈদীর বিরুদ্ধে ৬৮ জন সাক্ষীর যে তালিকা দিয়েছেন তাতে এ সাক্ষীর নাম নেই। তার নাম আছে অন্য একটি তালিকায় সিজরা লিস্টে।
মাওলানা সাঈদীর আইনজীবীরা আদালতে জানান তাদেরকে প্রথমে দুটি ভলিউম দেয়া হয়েছে সাক্ষীদের জবানবন্দী সমেত রাষ্ট্রপক্ষ থেকে। তাতে এক জায়গায় ৭০ জন, এক জায়গায় ৩০ জন এবং আরেক স্থানে ৩৮ জন সাক্ষীর তালিকা রয়েছে। ১৩৮ জন সাক্ষীর মধ্যে ৭০ জন রয়েছেন জব্দ তালিকার সাক্ষী। জব্দ তালিকার সংখ্যা বাদ দিলে নিয়মিত সাক্ষী থাকে ৬৮ জন। রাষ্ট্রপক্ষ থেকেও মাওলানা সাঈদীর আইনজীবীদের ৬৮ জন সাক্ষীর একটি তালিকা দেয়া হয়েছিল সর্বশেষ। মাওলানা সাঈদীর আইনজীবীরা এতদিন পর্যন্ত সাংবাদিকদের বলে আসছিলেন মাওলানা সাঈদীর বিরুদ্ধে মোট সাক্ষীর সংখ্যা ৬৮ জন। কিন্তু গত বৃহষ্পতিবার সাক্ষীর তালিকা নিয়ে বিতর্কের পর জানা যায় মাওলানা সাঈদীর বিরুদ্ধে সিজার লিস্ট মিলিয়ে মোট সাক্ষীর সংখ্যা ১৩৮ জন। সাক্ষীর তালিকা নিয়ে বিভ্রান্তি বিষয়ে মাওলানা সাঈদীর আইনজীবীরা আদালতকে বলেন, রাষ্ট্রপক্ষ ৬৮ জনের একটি ফাইনাল তালিকা দেয়ায় স্বাভাবিকভাবে তারা ধরে নিয়েছেন মোট সাক্ষীর সংখ্যা ৬৮ জন। তারা ৬৮ জন সাক্ষীর বিষয়ে প্রস্ততি নিয়ে আগাচ্ছেন। ট্রাইব্যুনাল মাওলানা সাঈদীর আইনজীবীদের বলেন, ৬৮ জনের তালিকা বাদ দিয়ে পূর্বের দুটি ভলিউমের সাক্ষীদের সংখ্যা বিবেচনা করতে হবে। তাদের মধ্যে যাদের জবানবন্দী রয়েছে তাদের বিষয়ে আপনারা প্রস্তুতি নেবেন। এর বাইরে যদি অন্য কিছু হয় তাহলে সেটি আদালত বিবেচনা করবেন।
দুটি ভলিউমের বাইরে কেন এবং কোন আইনে ৬৮ জন সাক্ষীর আরেকটি তালিকা আসামী পক্ষকে দেয়া হল তার জবাব চান আদালত রাষ্ট্রপক্ষের আইনজীবীদের কাছে। তখন রাষ্ট্রপক্ষের আইনজীবী জেয়াদ আল মালুম বলেন, আমাদের ভুল হতে পারে। আমরা কখনো দাবি করিনি যে, আমরা ভুলের উর্ধ্বে। এটা নতুন কেস। আমরা কেউ জেনে আসিনি। আমরা জানাশোনার মধ্য দিয়ে শিখছি।
মাওলানা দেলাওয়ার হোসাইন সাঈদীর বিরুদ্ধে যথাসময়ে সাক্ষী হাজিরে বারবার ব্যর্থ হচ্ছেন রাষ্ট্রপক্ষের আইনজীবীরা। এ কারনে ট্রাইব্যুনাল তাদের বিরুদ্ধে সর্বশেষ পরপর দুইবার অসন্তোষ এবং ক্ষোভ প্রকাশ করেছেন।
এর আগে জামায়াতের সাবেক আমীর অধ্যাপক গোলাম আযম, সেক্রেটারি জেনারেল আলী আহসান মো: মুজাহিদ এবং সহকারি সেক্রেটারি জেনারেল মুহম্মদ কামারুজ্জামানের বিরুদ্ধে তারা যে চার্জশিট জমা দিয়েছিলেন তা যথাযথ না হওয়ায় ট্রাইব্যুনাল তা ফেরত দিয়ে পুনরায় দাখিলের নির্দেশ দেন। পাঠিয়েছিলেন। ঘাতক দালাল নির্মুল কমিটির নেতা সাহরিয়ার কবির প্রসিকিউশনের বিরুদ্ধে ক্ষোভ প্রকাশ করে বলেছেন চিফ প্রসিকিউটরের ( গোলাম আরিফ টিপ) পদত্যাগ করা উচিত।
গত বছর ৭ ডিসেম্বর মামলার বাদী মাহবুবুল আলম হাওলাদার মাওলানা সাঈদীর বিরুদ্ধে আদালতে প্রথম সাক্ষী হিসেবে সাক্ষ্য দেন। গত বৃহষ্পতিবার ২৬ জানুয়ারি পর্যন্ত রাষ্ট্রপক্ষ মোট ১৭ জন সাক্ষী মাওলানা সাঈদীর বিরুদ্ধে হাজির করেছেন এবং তাদের জবানবন্দী ও জেরা শেষ হয়েছে। মাওলানা সাঈদীর বিরুদ্ধে শতাধিক সাক্ষীর নাম দেয়া হলেও তারা এ পর্যন্ত সাক্ষ্য দেয়া ১৭ জন সাক্ষী নিয়মিতভাবে হাজির করতে পারেননি । একজন সাক্ষীর সাক্ষ্য গ্রহণ শেষ হবার পর তারা নতুন সাক্ষী আনতে পারেননি বেশ কয়েকবার। আদালতের কাছ থেকে সময় নিয়েও যথাসময়ে সাক্ষী হাজিরে ব্যর্থ হওয়ায় আদালত ুব্ধ হয়েছেন। মাওলানা সাঈদীর আইনজীবী তাজুল ইসলাম অভিযোগ করেছেন ১৭ জন সাক্ষী হাজির করতে তারা আট বার সিরিয়াল ভঙ্গ করেছেন। তালিকার ক্রমঅনুসারে সাক্ষী হাজির করতে পারেননি। ১৭ জনের মধ্যে কোন কোন সাক্ষীর নাম তালিকায় ৬০ এরও পরে রয়েছে।
তালিকার সিরিয়াল অনুযায়ী সাক্ষী হাজির না করা বিষয়ে রাষ্ট্রপক্ষের আইনজীবীরা সাক্ষীর অসুস্থ থাকা, সঠিক সময়ে ঢাকা এসে পৌছতে না পারাকে কারণ হিসেবে উল্লেখ করেছেন আদালতে। মাওলানা সাঈদীর আইনজীবীরা এ বিষয়ে ক্ষোভ প্রকাশ করে আদালতে বলেছেন তাদেরকে অপ্রস্তুত করার জন্য এবং তারা যাতে ঠিকমত সাক্ষীকে জেরা করতে না পারেন সেজন্য ইচ্ছাকৃতভাবে সিরিয়াল ভঙ্গ করে তালিকার নিচের দিকের সাক্ষী হাজির করছেন। এতে ন্যায় বিচার বাঁধাগ্রস্ত হচ্ছে। সাক্ষীকে প্রশিক্ষন দিয়ে রেডি করতে না পারার কারনে তারা এভাবে দেরি করছেন এবং সিরিয়াল ভঙ্গ করছেন বলে আদালতে বেশ কয়েকবার অভিযোগ করেন তাজুল ইসলাম।
গত বৃহষ্পতিবার ২৬ জানুয়ারি সকালে আদালতে নতুন সাক্ষী হাজির করার কথা ছিল রাষ্ট্রপক্ষের আইনজীবীদের। কিন্তু সকালে আদালতের কার্যক্রম শুরু হলে রাষ্ট্রপক্ষের আইনজীবী জানান, সকালে সাক্ষী পৌছেছে। আসতে একটু অসুবিধা হয়েছে। সাক্ষী দেয়ার জন্য এখনো তৈরি হতে পারেনি তারা। । দুইটায় আমরা নতুন সাক্ষী আনতে পারব।
তখন ট্রাইব্যুনালের চেয়ারম্যান বিচারপতি নিজামুল হক ক্ষোভের সাথে বলেন, আপনাদের এটা একটি নিয়মিত বিষয়ে পরিণত হয়েছে। সাক্ষী নেই, জ্যামে পড়ছে, আসছে, আসবে অজুহাত দেখাচ্ছেন। সাক্ষী না থাকলে আমাদের তো করার কিছু নেই। আমরা হয় কোর্ট রুমে বসে থাকব না হয় চেম্বারে বসে থাকব।
দুইটার সময় তারা নিয়মিত কোন সাক্ষী হাজিরের পরিবর্তে জব্দ তালিকার একজন সাক্ষী হাজির করেন। তিনি প্রেস ইনস্টিটিউট বাংলাদেশ (পিআইবি) তে একজন ক্যাটালগার হিসেবে কর্মরত। । মামলার তদন্ত কর্মকর্তা পিআইবি থেকে মাওলানা সাঈদীর বিরুদ্ধে কিছু পেপার জব্দ করেছেন। সেগুলো আদালতে উপস্থাপন এবং ঐ পেপার যে তার কাছ থেকে জব্দ করা হয়েছিল এবং তার জিম্মায় রাখা হয়েছে সে মর্মে সাক্ষ্য দেয়ার জন্য আনা হয় তাকে।
এর আগে গত ১৭ জানুয়ারি মঙ্গলবার ১২টায় ১৪তম সাক্ষী আব্দুল হালিম বাবুলের জবানবন্দী এবং জেরা শেষ হয়। এরপর সাক্ষী দেয়ার কথা ছিল মধুসূদন ঘরামীর। আদালত নতুন সাক্ষী হাজির করা বিষয়ে জানতে চান রাষ্ট্রপক্ষ আইনজীবীদের কাছে। রাষ্ট্রপক্ষের আইনজীবীরা আদালতকে জানান মধুসূদদ ঘরামী অসুস্থ। আদালত তখন জানতে চান পরের দিন বুধবার ১৮ জানুয়ারি হাজির করা যাবে কি-না। রাষ্ট্রপক্ষের আইনজীবী সৈয়দ হায়দার আলী তখন বলেন, চেষ্টা করব হাজির করতে । না পারলে ক্ষমা করতে হবে আমাদের। কিন্তু পরের দিনও তারা সাক্ষী হাজির করতে না পারায় ২৪ জানুয়ারি পর্যন্ত মাওলানা সাঈদীর বিচার মূলতবি করেন আদালত। ২৪ জানুয়ারি সকালে পুনরায় আদালতের কার্যক্রম শুরু হলে তখনো রাষ্ট্রপক্ষ সাক্ষী হাজির করতে পারেননি। সেদিনও তারা জানান, দুইটার সময় তারা সাক্ষী হাজির করতে পারবেন। কিন্তু দুইটায়ও তারা যে সাক্ষী হাজির করবেন বলেছিলেন তাকে হাজির না করে অন্য সাক্ষী হাজির করেন। আদালত এর কারণ জানতে চাইলে রাষ্ট্রপক্ষের আইনজীবীরা আবরো সাক্ষীর অসুস্থতার কথা জানান। তখন আদালত ক্ষোভ প্রকাশ করে বলেন, মাঝে মধ্যে আপনারা এমন করেন যাতে আমরা অসন্তোষ প্রকাশে বাধ্য হই। অন্যদিকে নির্ধারিত সাক্ষীর বদলে অন্য সাক্ষী হাজির করায় মাওলানা সাঈদীর আইনজীবী তাজুল ইসলাম এর তীব্র বিরোধীতা করেন। ঐদিন দুইটায় যে সাক্ষী হাজির করা হয় রাষ্ট্র পক্ষ থেকে সরবরাহ করা ৬৮ জন সাক্ষীর তালিকায় তার নাম ছিল ৬২ নম্বরে। অন্যদিকে পরের দিন ২৫ জানুয়ারি যাকে হাজির করা হয় তার নাম ছিল ৬৬ নম্বরে।
সাক্ষীদের নিয়মিত হাজির করতে না পারার অভিযোগ বিষয়ে চিফ প্রসিকিউটর গোলাম আরিফ টিপু বলেন, নিরাপত্তা, দূর পথ, গাড়ি না পাওয়া, বাড়ি ছেড়ে ৫/৭ দিন ঢাকায় থাকা এসব সমস্যার কারনে যথা সময়ে সাক্ষী হাজিরে অসুবিধা হচ্ছে। আমরা আমাদের সাধ্য অনুযাযাী কাজ করে যাচ্ছি।
এত বিপুল সংখ্যক সাক্ষীর মধ্য থেকে সাক্ষী হাজির করতে তো অসুবিধা হবার কথা নয়। এ কথার রেশ ধরে গোলাম আরিফ টিপু বলেন, এত সাক্ষী আনা হবেনা। যে যে অভিযোগের স্বপক্ষে যে সাক্ষী দরকার হবে তাকে আনা হবে।
গোলাম আরিফ টিপু বলেন, আপনারা তো কোর্টে যান। আপনারা দেখেছেন বাদী পক্ষের সাক্ষী কত অল্প সময়ে জবানবন্দী দেন। কিন্তু তাদের দীর্ঘ সময় নিয়ে জেরা করা হয়। সেটা লক্ষ্য করেননা কেন।
গোলাম আরিফ টিপুকে তখন প্রশ্ন করা হয় লম্বা সময় নিয়ে জেরা করলে তাতে তো আপনারা বেশি সময় পেলেন নতুন সাক্ষী আনার ক্ষেত্রে। এ প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, আমরা তো জানিনা তার জেরা কখন শেষ হবে।
এদিকে গত বৃহষ্পতিবার সিজার লিস্টের সাক্ষী হাজির করা এবং জব্দকৃত পেপার বিষয়ে তার সাক্ষ্য নেয়া নিয়ে মাওলানা সাঈদীর আইনজীবীদের আপত্তির ফলে দীর্ঘ বিতর্ক চলে আদালতে।
মাওলানা সাঈদীর আইনজীবীরা জানান, রাষ্ট্রপক্ষ মাওলানা সাঈদীর বিরুদ্ধে ৬৮ জন সাক্ষীর যে তালিকা দিয়েছেন তাতে এ সাক্ষীর নাম নেই। তার নাম আছে অন্য একটি তালিকায় সিজরা লিস্টে।
মাওলানা সাঈদীর আইনজীবীরা আদালতে জানান তাদেরকে প্রথমে দুটি ভলিউম দেয়া হয়েছে সাক্ষীদের জবানবন্দী সমেত রাষ্ট্রপক্ষ থেকে। তাতে এক জায়গায় ৭০ জন, এক জায়গায় ৩০ জন এবং আরেক স্থানে ৩৮ জন সাক্ষীর তালিকা রয়েছে। ১৩৮ জন সাক্ষীর মধ্যে ৭০ জন রয়েছেন জব্দ তালিকার সাক্ষী। জব্দ তালিকার সংখ্যা বাদ দিলে নিয়মিত সাক্ষী থাকে ৬৮ জন। রাষ্ট্রপক্ষ থেকেও মাওলানা সাঈদীর আইনজীবীদের ৬৮ জন সাক্ষীর একটি তালিকা দেয়া হয়েছিল সর্বশেষ। মাওলানা সাঈদীর আইনজীবীরা এতদিন পর্যন্ত সাংবাদিকদের বলে আসছিলেন মাওলানা সাঈদীর বিরুদ্ধে মোট সাক্ষীর সংখ্যা ৬৮ জন। কিন্তু গত বৃহষ্পতিবার সাক্ষীর তালিকা নিয়ে বিতর্কের পর জানা যায় মাওলানা সাঈদীর বিরুদ্ধে সিজার লিস্ট মিলিয়ে মোট সাক্ষীর সংখ্যা ১৩৮ জন। সাক্ষীর তালিকা নিয়ে বিভ্রান্তি বিষয়ে মাওলানা সাঈদীর আইনজীবীরা আদালতকে বলেন, রাষ্ট্রপক্ষ ৬৮ জনের একটি ফাইনাল তালিকা দেয়ায় স্বাভাবিকভাবে তারা ধরে নিয়েছেন মোট সাক্ষীর সংখ্যা ৬৮ জন। তারা ৬৮ জন সাক্ষীর বিষয়ে প্রস্ততি নিয়ে আগাচ্ছেন। ট্রাইব্যুনাল মাওলানা সাঈদীর আইনজীবীদের বলেন, ৬৮ জনের তালিকা বাদ দিয়ে পূর্বের দুটি ভলিউমের সাক্ষীদের সংখ্যা বিবেচনা করতে হবে। তাদের মধ্যে যাদের জবানবন্দী রয়েছে তাদের বিষয়ে আপনারা প্রস্তুতি নেবেন। এর বাইরে যদি অন্য কিছু হয় তাহলে সেটি আদালত বিবেচনা করবেন।
দুটি ভলিউমের বাইরে কেন এবং কোন আইনে ৬৮ জন সাক্ষীর আরেকটি তালিকা আসামী পক্ষকে দেয়া হল তার জবাব চান আদালত রাষ্ট্রপক্ষের আইনজীবীদের কাছে। তখন রাষ্ট্রপক্ষের আইনজীবী জেয়াদ আল মালুম বলেন, আমাদের ভুল হতে পারে। আমরা কখনো দাবি করিনি যে, আমরা ভুলের উর্ধ্বে। এটা নতুন কেস। আমরা কেউ জেনে আসিনি। আমরা জানাশোনার মধ্য দিয়ে শিখছি।
কোন মন্তব্য নেই:
একটি মন্তব্য পোস্ট করুন